#কালো_মেঘের_আভাস
[তৃতীয় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
বিয়ের আসরে বসতেই ফোন বেজে ওঠে নীলার। নীলা ফোনে দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘলার নাম্বার। নীলা আর দেরি না করে সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে।
— হ্যালো মেঘলা তুই কোথায়? তোকে আমি কখন থেকে ফোন দিচ্ছি তুই ফোন রিসিভ করছিস না কেন?
— এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি।
মেঘলার ফোনে পুরুষের কণ্ঠ শুনে হতবাক হয়ে যায় নীলা।
— কে আপনি? আর মেঘলার ফোন আপনার কাছে কেন? মেঘলার ফোন মেঘলার কাছে দিন।
— হাহাহা, মেঘলা আমাদের কাছে সুরক্ষিত আছে। আর সে আমাদের কাছে জিম্মি অবস্থায় আছে।
— আপনার মেঘলাকে আঁটকে রেখেছেন কেন? কী চাই আপনাদের?
— তেমন কিছু চাইনা আমার। আমাদের শুধুই ৫লক্ষ্য টাকা হলেই চলবে। তাও আজকের মধ্যেই। বায় একটু পরে আবার ফোন দেবো। তখন জানাবেন। নাহলে কাল সকালে মেঘলার লাশ পাবেন। আর হে পুলিশকে জানিয়ে ভুল করবেন না।
এই কথা বলে ছেলেটা ফোন কেটে দেয়। নীলা আবার ফোন করে। এইবার ফোন অফ। ছেলেটা মেঘলার ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। নীলা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। অর্ণব মেঘলার কাছে এসে বলল — কী হয়েছে নীলা? কে ফোন দিয়েছে?
— কে ফোন দিয়েছে জানিনা। কিন্তু মেঘলার ফোন থেকে একটা ছেলে ফোন দিয়ে বলছে মেঘলাকে আঁটকে রেখেছে। তারা ৫লক্ষ্য টাকা চাইছে। নাহলে কাল সকালে নাকি মেঘলাকে মে’রে ফেলবে।
— কী বলছ তুমি এসব? আমাদের এই ব্যপারে পুলিশকে জানানো উচিৎ।
— পুলিশকে জানাতে না করছে। এখন কি করব বুঝতে পারছিনা।
অর্ণবের বাবা মাঝখানে বলে উঠল — আমার তো মনে হচ্ছে সব কিছুই মেয়েটার সাজানো নাটক। প্রথমে প্রমাণের কথা বলে গায়েব হয়ে গেলো। এখন নতুন করে কিডন্যাপের নাটক করছে। আমার তো মনে হচ্ছে এই মেয়ের কোনো একটা বাজে মতলব আছে। নাহলে এখনকার যুগে কেউ মানুষ কিডন্যাপ করে? ওর বাসায় ফোন দিয়ে খোঁজ নাও হয়তো ও বাসায় গিয়ে এসব নাটক সাজিয়েছে।
অর্ণবের বাবা কথা গুলো শুনে নীলা চুপচাপ হয়ে গেলো।
— কি হলো ফোন দাও ওর বাসায়!
— কাকে ফোন দেব? কে আছে ওর? মেয়েটার তো এই দুনিয়াতে এখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই।
অর্ণব — কেউ নেই মানে? ওনার মা-বাবা?
— মেঘলার মা-বাবা দু’জনেই মৃত। মেঘলা তার ছোট ভাইকে নিয়ে বাসায় থাকে। মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে। এক দিকে নিজের স্বামীকে হারিয়েছে অন্য দিকে মা-বাবা। মেঘলার বাবা-মা একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে মেঘলার পাশে আমিই ছিলাম। মেয়েটা পুরো ভেঙে পড়েছে।
নীলার মুখে এসব কথা শুনে অর্ণবের মন খারাপ হয়ে যায়। তখনই অর্ণবের বাবা বলে উঠে — এতক্ষণে সব বুঝতে পারছি আমি।
— কী বুঝলেন আপনি?
— এই সব কিছুই মেয়েটার সাজানো নাটক। সব টাকা হাতানোর ধান্ধা করছে।
অর্ণবের বাবার কথা শুনে অর্ণব এবার রেগে গিয়ে বলল — বাবা তুমি এবার চুপ থাকো। একটা মেয়ে বিপদের মধ্যে আছে সেটা না ভেবে আবল তাবল কথা বলছেন তখন থেকে।
নীলা — আংকেল কারোর ব্যাপারে না জেনে কথা বলা ঠিক না। আমাদের এখন উচিৎ মেঘলাকে সাহায্য করা।
অর্ণবের বাবা বলল — বুঝতে পারছি। আচ্ছা যাইহোক আগে বিয়েটা হয়ে যাক তারপর এই বিষয় নিয়ে কথা হবে।
— বাবা একটা মেয়ে বিপদে আছে তাকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় সেটা না ভেবে তুমি বিয়ে নিয়ে পড়ে আছো। নীলা লোকটা কী বলছে তোমাকে? ওরা কোথায় মেঘলাকে আঁটকে রেখেছে?
— সেসব কিছু তো বলেনি। বলেছে একটু পরে ফোন দিবে। কিন্তু এখনও ফোন দিচ্ছেনা।
— তুমি ফোন দিয়ে দেখো।
— দিয়েছি অনেকবার কিন্তু ফোন অফ বলছে।
— কি আর করার। পরবর্তী ফোনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। শুনো নীলা! ওরা যদি ফোন দেয় তুমি বলবে আমরা টাকা রেডি করছি। কোথায় আসতে হবে বলুন। তারপর কী করতে হয় সেটা আমিই করব।
অর্ণবের কথা শুনে নীলা অনেক বেশিই খুশি হয়ে যায়। কারণ সে বুঝতে পারে অর্ণব তার সাথে থাকলে মেঘলাকে উদ্ধার করা সহজ হয়ে যাবে।
এইদিকে কাজী সাহেব রাগ করে চলে গেলো সবার থেকে বিদায় নিয়ে। এবার সবাই ফোন কলের অপেক্ষা করে বসে আছে। কিন্তু ফোন তো আর আসছেনা। এবার সবাই নীলার উপরে বিরক্ত হতে থাকে। হঠাৎ করে নীলার ফোন বেজে ওঠে। নীলা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘলার নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। নীলা দেরি না করে ফোন রিসিভ করে।
— হ্যালো এতক্ষণ আপনি ফোন অফ করে কেন রেখেছেন?
— সেটা আমার ব্যাপার! আমি তো বলছি আমি আবার ফোন দেবো। যাইহোক এতো কথা বলতে চাইনা। তখন যে বললাম টাকার ব্যবস্থা হয়েছে?
— হুম আমাদের কথায় আসতে হবে?
— আমি ঠিকানা মেসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি ওখানে এসে কল দিবেন। আবারও বলছি চালাকি করে পুলিশকে জানিয়ে ভুল করবেন না। নাহলে মেঘলাকে আর জীবিত ফিরে পাবেন না।
এই কথা বলে লোকটা ফোন কেটে দেয়। নীলার ফোনে একটা মেসেজ চলে আসে। মেসেজে ঠিকানা দেওয়া হলো।
— নীলা ওরা কী ঠিকানা পাঠিয়েছে?
— হুম, এই-যে।
— তাহলে আমাদের আর দেরি করা উচিৎ হবেনা।
— কিন্তু এখন এতো টাকা আমরা কোথায় পাবো?
— আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
— কীসের প্ল্যান আছে তোমার কাছে?
এবার অর্ণব সবার কাছে তার প্ল্যানের কথা বলে। এখানে সবাই উপস্থিত আছে শুধুই অর্ণবের বাবা নেই। হেলাল সাহেব কোথায় চলে গেলো! কিছুক্ষণের মধ্যেই হেলাল সাহেব আসে।
অর্ণব তার বাবার কাছে গিয়ে বলল — বাবা তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে?
— একটা ফোন দিতে গিয়েছিলাম। এখানে ভালো নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না। আর আমাদের তো টাকাও ম্যানেজ করতে হবে। হাতে তো আর বেশি সময় নেই।
— টাকার কোনো প্রয়োজন নেই। সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।
— কী বলিস! এর মধ্যেই এতো টাকা যোগাড় কীভাবে হলো।
— টাকার দরকার নেই আমাদের। আমি একটা প্ল্যান তৈরি করেছি। এখন শুধুই প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হলেই হবে।
— কী প্ল্যান করছিস তোরা আমাকে বাদ দিয়ে?
— বাবা তুমি এখন আপাতত বাড়ি চলে যাও। পরে তোমাকে আমি বাসায় গিয়ে বলব।
— আমি বাড়ি চলে যাবো মানে? বিয়ে কী আজ হবেনা নাকি?
— তুমি এখনও সেই বিয়ে নিয়ে পড়ে আছো? আগে ঐ মেয়েটাকে উদ্ধার করব তারপর বিয়ে। তুমি এখন বাসায় চলে যাও। আমি বাসায় ফিরে তোমার সাথে কথা বলব।
হেলাল সাহেবের চোখেমুখে রাগ দেখা যাচ্ছিলো। হেলাল সাহেব আর কোনো কথা না বলে চলে গেলেন বের হয়ে।
এবার নীলা আর অর্ণব বেরিয়ে পড়ে বাসা থেকে। দু’জন মিলে একটা রিকশার মধ্যে উঠলো।
— অর্ণব আমার খুব ভয় হচ্ছে যদি উল্টো পালটা কিছু হয়ে যায়?
— এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি তো আছি। আমি সব ঠিক করে নেব।
— মেঘলার জন্য আমার চিন্তা হচ্ছে। ওরা মেঘলার সাথে খারাপ কিছু করবেনা তো? আমার খুব খারাপ লাগছে অর্ণব।
— আরে এতো চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
— অর্ণব তুমি সত্যি করে বলবে তুমি কি আসলেই মেঘলাকে চেনো না?
— নীলা আমি কী তোমার সাথে কখনও মিথ্যা কথা বলছি? আমি আজকেই প্রথম ওনাকে দেখেছি। এর আগে কোথাও দেখেছি বলে আমার মনেও হচ্ছেনা।
কথা বলতে বলতে কিছুক্ষণের মধ্যেই কিডন্যাপারের দেওয়া ঠিকানায় পৌছে যায় দুজনেই।
চলবে??