#কালো_মেঘের_আভাস
[দ্বিতীয় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
কবুল বলার ঠিক আগমুহূর্তে মেঘলা বিয়ের আসরের সামনে চলে গেলো।
— এই বিয়ে বন্ধ করুন কাজি সাহেব।
মেঘলার মুখে এমন কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেলো। সবাই মেঘলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। অর্নবের বাবা মেঘলাকে দেখে খুব বেশি অবাক হয়ে গেলো। উনি থ হয়ে তাকিয়ে রইলেন মেঘলার দিকে।
— এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারেনা। এই বিয়ে বন্ধ করুন আপনারা।
নীলার আব্বু বসা থেকে উঠে মেঘলার কাছে গিয়ে বলল — কী হয়েছে মা তোমার? আর বিয়ে কেন বন্ধ করতে বলছ?
— সেটা আপনি হেলাল সাহেবকে কে জিজ্ঞেস করুন। তাহলেই আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আংকেল।
মেঘলার কথা শুনে হেলাল সাহেব থতমত খেয়ে বসে।
— আমি কী বলব? আর তুমি কে? তোমাকে তো আমি চিনতে পারলাম না। তুমিই বা আমার নাম কীভাবে জানো?
— বাবা আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না? আপনি কেন এমন করছেন অর্নবের মতো। অর্নব ও আমাকে চিনতে পারছেনা।
মেঘলার মুখে হেলাল সাহেবকে বাবা ডাকতে দেখে নীলা ও খুব বেশি অবাক হয়ে গেলো। নীলা এবার বিয়ের আসর থেকে উঠে এসে মেঘলাকে বলল।
–মেঘলা কি হয়েছে তোর? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। তুই অর্নবের বাবাকে বাবা কেন বলছিস? উনি কী তোর পূর্বের পরিচিত নাকি?
— নীলা উনি আমার শ্বশুর আর অর্নব আমার হাসবেন্ড।
কথাটা শোনা মাত্রই নীলা পিছনে সরে যায়। নীলার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে৷
— তুই এসব কি বলছিস? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? তুই ওনাদের চিনিস?
— নীলা তুই আমাকে বিশ্বাস কর। অর্নব আমার স্বামী। তখন তোকে আমি এটা বলার জন্য ডেকেছি। অর্নব আমাকে চিনেও না চেনার অভিনয় করছে।
অর্নব এবার বিয়ের আসর থেকে উঠে যায় আর সে মেঘলার সামনে চলে আসে।
— আপনি তখন থেকেই কীসব বলেই যাচ্ছেন।
মেঘলা অর্নবের হাত ধরে বলে — অর্নব আমি তোমার মেঘলা। তুমি আমাকে ভুলে গেলে? তুমিনা আমাকে বলতে তুমি সারাজীবন আমার পাশে থাকবে। তাহলে আজ কেন এমন করছ?
অর্নব মেঘলার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল — আপনাকে তো আমি আজ প্রথম দেখলাম। আমার তো মনে হচ্ছেনা যে এর আগে আপনাকে কখনও দেখেছি কিনা।
অর্নব এবার তার বাবার কাছে গিয়ে বলল — বাবা এই মেয়েটা কখন থেকে আবল তাবল কথা বলে যাচ্ছে তুমি কিছু বলছ না কেন?
মেঘলা এবার অর্নবের বাবার কাছে গিয়ে বলল — বাবা আপনি আর চুপ করে থাকবেন না প্লিজ।
— আজব মেয়ে তো তুমি! তোমাকে তো আমি চিনিই না৷ আর তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে তুমি আমার ছেলের বউ?
— প্রমাণ তো আছেই। আমাদের বিয়ের কাবিননামা আছে।
নীলা — মেঘলা তুই যা বলছিস সব কি সত্যিই?
— আমি মিথ্যা কেন বলব বল? কেউ কি নিজের স্বামীকে নিয়ে মিথ্যা বলে?
— তুই না বলছিলি তোমার স্বামী চার বছর আগে মারা গেছে। তাহলে এখন অর্নব তোর স্বামী কীভাবে হয়? নাকি তুই আমার বিয়ে ভেঙে দিতে এসব নাটক শুরু করলি? আমি তোর কী ক্ষতি করেছি? যে তুই এমন করছিস?
নীলার কথা শুনে মেঘলার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। মেঘলার সাথে নীলা দুই বছরের ফ্রেন্ডশিপ। দুজন দু’জনকে অনেক বেশি ভালোবাসে। দুই বছর আগে মেঘলা আর নীলার পরিচয় হয়। কীভাবে পরিচয় হয়েছে সেটা গল্পের সাথে থাকলেই জানতে পারবেন। মেঘলার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
— নীলা আমি তোর বিয়ে ভেঙে দিতে আসিনি। তুই আমার কথা বিশ্বাস কর। অর্নব আমার স্বামী।
— তোর কথা বিশ্বাস কীভাবে করব! যেখানে ওনারা তোকে চিনেও না। তাহলে তুই কীভাবে এসব বলিস? আমি তোর কথা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু তুই প্রমাণ কর যে অর্নব তোর স্বামী।
— হ্যাঁ আমি প্রমাণ করব।
অর্নব — নীলা তুমি এই মেয়ের কথা কেন শুনছ? এই মেয়ের মাথায় কোনো সমস্যা আছে। কাজি সাহেব আপনি বিয়ের কাজ শুরু করুন।
নীলা — না আগে মেঘলাকে প্রমাণ করার সময় দেওয়া হোক।
মেঘলা তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। আর সে তার নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মেঘলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু রাস্তায় একটা গাড়িও আজ নেই। মেঘলা এবার দৌড়ে দৌড়ে চলে যেতে থাকে। প্রচন্ড গরমে মেঘলার পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
ঐদিকে সবাই অপেক্ষা করে বসে আছে। কাজি সাহেব রেগে গিয়ে বলল — আপনারা তো আজব মানুষ! আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে আমার সময় নষ্ট করছেন।
নীলা কাজির কাছে গিয়ে বলল — প্লিজ একটু অপেক্ষা করুন। মেঘলাকে আসতে দিন। এখানে কিছু একটা সমস্যা আছে। মেঘলাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। মেঘলা এমন মেয়েনা যে সে আমার ক্ষতি করতে চাইবে।
নীলা এবার অর্নবের কাছে গিয়ে বলল — অর্নব তুমি আমার কাছে সত্যিই টা বলো।
— নীলা আমি সত্যি কথা বলছি আমি মেয়েটাকে চিনিনা। আমি তো ওনাকে আজ প্রথম দেখলাম।
অর্নবের বাবা বলল — কাজি সাহেব আপনি বিয়ের কাজ শুরু করুন। এখানে বসে থাকে আমাদের সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয়না। মেয়েটা কীসব আবল তাবল কথা বলছে আর আমরা আমাদের সময় নষ্ট করছি। নীলা মা ঐ মেয়েটা হয়তো চাইছে না অর্নবের সাথে তোমার বিয়ে হোক। দেখোনা মেয়েটা এখনও আসছেনা। মনে হয় পালিয়ে গিয়েছে। আর আসবে না। আসবে বা কী করে? আসলে তো ধরা খেয়ে যাবে।
— আংকেল আমি জানি মেঘলা কেমন মেয়ে। মেঘলা আমার ক্ষতি করবেনা এটা আমি জানি। আপনারা কী জানেন! আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি শুধুই মেঘলার জন্য। সেদিন যদি মেঘলা না থালতো আজ হয়তো আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। বা অর্নবের সাথেও আমার পরিচয় হতোনা।
অর্নবের বাবা বলল — কী হয়েছিলো মা তোমার সাথে?
— তাহলে শুনুন! মেঘলা মেয়েটা একটা অচেনা মানুষের জন্য সেদিন কি করেছিল। সেদিন আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। আমরা ফ্রেন্ডরা সবাই ট্যুরে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় হঠাৎ করে আমাদের গাড়ি ব্রেক ফেইল হয়ে যায়। আর একটা গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এর পরে কি হয়েছে আমার মনে নেই। আমি চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডের উপরে আবিষ্কার করলাম। পাশে তাকিয়ে দেখি একটা অচেনা মেয়ে। মেয়েটা আমার চোখ খুলতে দেখে অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। আমি ডাক্তার দের থেকে জানতে পারি মেয়েটা আমাকে নিজের রক্ত দিয়ে বাঁচায়। আর মেয়েটা আমার পাশে তিন দিন ছিলো। আমাকে রেখে কোথাও যায়নি। সব সময় আমার সাথে ছিলো। যে মেয়ে একটা অচেনা মেয়ের জন্য এতো কিছু করতে পারে সে মেয়েটা আমার ক্ষতি করতে চাইবে এটা আপনারা কীভাবে ভাবতে পারেন?
অর্নবের বাবা বলল — সব নাহয় বুঝলাম। এতো সময় হয়ে গেলো মেয়েটা এখনও কেন আসছেনা প্রমাণ নিয়ে?
— আমরা আরেকটু অপেক্ষা করি। হয়তো কোনো ঝামেলা হয়েছে। দাড়ান আমি মেঘলাকে ফোন দিচ্ছি।
নীলা রুমে গিয়ে নিজের ফোন নিয়ে আসে। আর সে সবার সামনে দাঁড়িয়ে মেঘলার নাম্বারে ফোন দেয়। ফোন বাজতে থাকে কিন্তু মেঘলা ফোন রিসিভ করছেনা। একের পর এক ফোন দিতেই থাকে নীলা। কিন্তু মেঘলার ফোন কিছুতেই রিসিভ হচ্ছেনা।
— ফোন রিসিভ করছেনা তাইতো? বলছিলাম না তখন! আমার কথা বিশ্বাস হয়েছে তো? মেয়েটা আমাদের সাথে মজা করেছে। তাই এখন আর ফোন রিসিভ করছেনা। আর ঐ মেয়ের জন্য অপেক্ষা করে টাইম নষ্ট করার দরকার নাই। আমাদের তো আবার বাসায় ফিরতে হবে বউমাকে নিয়ে।
নীলা মেঘলাকে বার বার ফোন দিচ্ছে। নীলা কিছুই বুঝতে পারছিনা মেঘলা এমন কেন করছে? আর কোনো উপায় না পেয়ে এবার সবাই বিয়ের আসরে গিয়ে বসে।
নীলা অর্নবের পাশে বসতেই মেঘলার নাম্বার থেকে কল আসে নীলার ফোনে।
চলবে??