#কালো_মেঘের_আভাস
[ সূচনা পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
বান্ধুবীর বিয়েতে এসে চার বছর আগের মৃত স্বামীকে বরের ভেসে দেখে চমকে উঠল মেঘলা। তার স্বামীকে বর ভেসে দেখে তার চোখ যেনো কপালে উঠে গেল। মেঘলার পুরো হাতপা কাঁপতে শুরু করে। সে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা। যে মানুষ চার বছর আগে মা’রা গেছে, সে এখানে কীভাবে আসতে পারে? মেঘলা চোখের ভুল মনে করে তার চোখ মুছে তাকিয়ে দেখে সামনে কেউ নেই। মেঘলার ফ্রেন্ড ও নেই। তাহলে মেঘলা একটু আগে কাকে দেখল? মেঘলা চোখের ভুল মনে করে সে ওখান থেকে চলে গেলো। হঠাৎ অর্নবের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। অর্নবের মৃত্যুর চার বছর শেষ হয়ে গেলো। এখনও মেঘলা বিয়ে করেনি। কারণ অর্নবের মৃত্যু মেঘলা এখনও মেনে নিতে পারেনি। অর্নবকে খুব বেশিই ভালোবাসে মেঘলা। কতো সুন্দর ভালোবাসা ছিল দু’জনের মধ্যে। হঠাৎ একটা কাল বৈশাখী ঝড়ে সব শেষ হয়ে গেলো। অর্নবের কথা মনে আসতেই মেঘলার মন অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায়। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। মেঘলা একা দাঁড়িয়ে আছে নিরিবিলিতে৷
আচমকা কেউ মেঘলার কাধের উপরে হাত রাখতেই মেঘলা চমকে উঠে। নিজের চোখের পানি মুছে নেয় তাড়াতাড়ি করে। আর সে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে তার বান্ধুবী নীলা।
— মেঘলা কি হয়েছে তোর? তুই আমার স্পর্শ পেয়ে এই ভাবে চমকে উঠলি কেন?
— কই নাতো। কিছু হয়নি, হঠাৎ করে ঢাকলি তাই একটু চমকে উঠলাম।
— আচ্ছা বাদ দে তোকে আমি পুরো বাড়ি খুঁজে শেষমেশ এখানে এসে পেলাম। তুই এখানে একা কেন দাঁড়িয়ে আছিস?
— ভালো লাগছেনা দোস্ত। কেমন জানি লাগছে।
— তোর আবার কি হলো? শরীর খারাপ নাকি?
— না, এমনি ভালো লাগছেনা। আচ্ছা তুই আমার খোঁজ কেন করছিস?
— তোর দুলাভাই আসছে পরিচয় হবিনা নাকি? বিয়ের আগে কতোবার বলছি অর্নবের সাথে দেখা করার কথা। কিন্তু তুই তো দেখাও করতে গেলিনা।
অর্নবের নাম শুনে মেঘলার বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো। মেঘলা আবার নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। কারণ অর্নব নামের মানুষ তো আরো থাকতে পারে! তাই সে এটা নরমাল ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করল।
— কিরে আবার কী হলো তোর? চুপচাপ হয়ে গেলি কেন মেঘলা? তোর কি হয়েছে বলবি আমাকে? তোকে দেখেই কেমন জানি লাগছে আমার। কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
— আরে কিছু হয়নি। তুই অহেতুক চিন্তা করছিস আমাকে নিয়ে। এমনি একটু খারাপ লাগছে এই আর কি।
— ঠিক আছে, এখন তুই আমার সাথে চল। অর্নবকে আমি অপেক্ষা করিয়ে আসছি তোর জন্য। অর্নবের কাছে আমি তোর কথা বলেছি। অর্নব ও আগ্রহী তোর সাথে পরিচয় হওয়ার জন্য।
তুই যা আমি একটু পরে আসছি।
— না তুই এখন আমার সাথে চল। কোনো কথা বলবিনা।
এই কথা বলে নীলা মেঘলার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে মেঘলার রুমের দিকে।
তখন নীলা মেঘলাকে বলল — মেঘলা জানিস আজ আমি সত্যিই অনেক খুশি। আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাচ্ছি। এতো খুশি আমি আর কখনও হইনি।
মেঘলা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল — দোয়া করি সারাজীবন সুখী হ। আর নিজের ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখিস। কখনও হারাতে দিস না।
— এবার তো তুই একটা বিয়ে করে নে। আর কতো এই ভাবে থাকবি?
— আমার আর বিয়ে? থাক বাদ দে। চল তোর হবু হাসবেন্ড এর সাথে আগে দেখা করি। বান্দা কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে কে জানে!
দুজনেই নীলার রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। রুমের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে অর্নব। নীলা আর মেঘলা রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে অর্নব বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্নবের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা আর নীলা।
নীলা অর্নবকে ডাক দিয়ে বলল — অর্নব তোমাকে বলছিলাম মনে আছে মেঘলার কথা? মেঘলা এসেছে ওর সাথে পরিচয় হও।
নীলার কথা শুনে অর্নব পিছনে ঘুরতেই মেঘলা মুখের হাসি নিমিষেই বিলীন হয়ে গেলো। মেঘলার পায়ের তোলার মাটি যেনো সরে গেলো। কারণ মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে সে আর কেউনা মেঘলার স্বামী অর্নব। যে চার বছর আগে মারা গিয়েছে। মেঘলা মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছেনা। মেঘলার চোখের পানি টলমল করছে। যেনো এখনই কান্নার বৃষ্টি নামবে। এতোদিন পরে নিজের স্বামীকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়া যায়। আর সে ভাবতে থাকে এটা কীভাবে সম্ভব!
একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে এসে নীলাকে বলল — নীলা আপু তোমাকে আংকেল ডেকেছে।
— মেঘলা তুই অর্নবের সাথে কথা বল। আমি একটু পরে আসছি। অর্নব তুমিও মেঘলার সাথে পরিচয় হয়ে নাএ। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।
এই কথা বলে নীলা চলে গেলো। অর্নব নীলার কাছে এসে বলল — আপনি মেঘলা? আপনার নাম অনেক শুনেছি নীলার মুখে।
অর্নবের কথা শুনে মেঘলা অবাক হয়ে গেলো। অর্নব এমন ব্যবহার করছে যেনো অর্নব মেঘলাকে আজ প্রথম দেখেছে। মেঘলা অবাক হয়ে বলল।
— অর্নব তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার মেঘলা।
মেঘলার কথা শুনে অর্নব অবাক হয়ে গেলো।
— মানে? আমার মেঘলা মানে কি? কি বলছেন এসব আপনি?
— অর্নব তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার ভালোবাসা। তোমার মেঘলা।
— আপনি খুব ভালো মজা করতে পারেন।
— আমি মজা করছিনা অর্নব। তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে? তুমি আমাকে ছাড়া কীভাবে থাকতে পারলে এতোদিন?
— আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছেন। আপনি নীলার ফ্রেন্ড তাই কিছু বললাম না। এসব মজা আমার পছন্দ না। আমি চলে গেলাম।
এই কথা বলে অর্নব রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। মেঘলা ওখানে বসেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। মেঘলা কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। অর্নব মেঘলাকে চিনতে পারছেনা, না-কি না চেনার অভিনয় করছে?
ঐদিকে সব কিছু রেডি করা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ের কাজ শুরু হয়ে যাবে। মেঘলা এই বিয়ে ভেঙে দিতে চাইছে। কারণ সে অর্নবকে আর হারাতে চায়না। মেঘলা ঠিক করে সে নীলার কাছে গিয়ে সব বলবে। তাই মেঘলা আর দেরি না করে নীলাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। মেঘলা পাগলের মতো এদিকসেদিক ঘুরতে থাকে। কিন্তু নীলাকে কোথাও খুজে পাচ্ছেনা। মেঘলা কী করবে সে বুঝতে পারছেনা।
হঠাৎ করে নীলার শব্দ শুনতে পায় মেঘলা। মেঘলা তাকিয়ে দেখে নীলাকে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মেঘলা আর দেরি না করে নীলার কাছে ছুটে গেলো এক দৌড়ে।
— নীলা তোর সাথে আমার কিছু জরুরী কথা ছিলো। প্লিজ একটু সাইডে আয়।
নীলা যাওয়ার জন্য রাজি হয়। কিন্ত নীলার বাবা চলে আসে এখানে।
— তোদের এতো সময় লাগছে কেন? সবাই ঐদিকে অপেক্ষা করে বসে আছে। কাজি সাহেব ও অপেক্ষা করে বসে আছে। ওনার নাকি আরেক যায়গায় যেতে হবে।
— আব্বু মেঘলা আমাকে কিছু বলতে চাইছে ওর কথা একটু শুনে আসছি।
— বিয়েটা আগে হয়ে যাক তারপর কথা বলিস তোরা। এখন সময় নেই। ওখানে সবাই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে।
নীলা মেঘলার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — মেঘলা একটু পরে কথা বলছি। কিছু মনে করিস না।
এই কথা বলে নীলাকে নিয়ে তার বাবা চলে গেলো। আর কাজি সাহেব বিয়ের সব কাজ শুরু করে দেয়।মেঘলা সেখানেই নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘলার মাথা কাজ করা অফ করে দিয়েছে। অর্নবের সাথে কাটানো সময় গুলো খুব বেশি মনে পড়ছে মেঘলার। মেঘলা কান্না করতে করতে বসে পড়ে ফ্লোরের উপরে।
হঠাৎ চোখ পড়লো অর্নবের বাবার দিকে। অর্নবের বাবাকে দেখে মেঘলা আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো। মেঘলা বুঝতে পারে তাহলে এখানে অর্নবের পরিবারের সবাই আছে৷ কিন্তু অর্নব মেঘলার সাথে এমন ব্যবহার কেন করলো মেঘলা বুঝতে পারছেনা। মেঘলা এবার অর্নবের বাবার কাছে গিয়ে তাকে ডাক দেয়। কিন্তু উনি মেঘলাকে না দেখেই চলে গেলো। মেঘলা বাবা, বাবা বলে বেশ কয়েকবার ডাকে। কিন্তু উনি মেঘলার ডাকে কোনো রেসপন্স করল না। মেঘলা আর কোনো উপায় না পেয়ে দোড়ে চলে গেলো যেখানে বিয়ে হচ্ছে অর্নব আর নীলার। মেঘলা সেখানে গিয়ে দেখে বিয়ের কাজ প্রায় শেষে হয়ে এসেছে। এখন শুধুই কবুল বলা বাকি।
চলবে??