রিচের অবস্থা যা! মনে হচ্ছে অবস্থার উন্নতি করতে “বাসরঘরে লালবাত্তি!” লেখা ছাড়া উপায় নাই! তয় কারিনার আরেকটা পার্ট দিলাম। আপনারা যারা পড়বেন কষ্ট করে কমেন্ট টমেন্ট কইরেন!
কারিনা (২)
(২)
০২/০১/২০২৪
ভাবছি এখন থেকে অদ্ভুত ব্যপারটা ডায়রিতে লিখে রাখব। স্কুলে পড়তে ডায়রি লিখবার অভ্যাস ছিল। বহুদিন লিখি না। কিন্তু এখনকার ব্যাপারটা বেশ রোমাঞ্চকর, লেখালিখির কাজে আসতে পারে ভেবে লিখে রাখবারই সিদ্ধান্ত নিলাম। দেখা যাক, কতটুকু কাজে আসে!
আজকের কথাটা চট করে লিখে ফেলি। সকালে যথারীতি আকাশ কাজে চলে গেছে। আমিও উঠে জগিং, গোসল, নাস্তা প্রভৃতি সেরে লিখতে বসেছিলাম। এখন বাজে এগারোটা। ব্রেক নিতে উঠলাম। রান্নাঘরে এসে চা বানাচ্ছি, ধপ করে শব্দ হল। খানিক পরে আরেকবার। কান খাড়া করলাম আমি। শব্দটা আমার লিখবার ঘর থেকে আসছে বুঝতে পারছি। গত কয়দিন ধরে ঘর খালি থাকলে, সাথে আমি বাসায় একা থাকলে খুটখাট শব্দ আসে ওঘর থেকে টের পাই। প্রথম প্রথম আমি দৌড়ে যেতাম। গিয়ে অবশ্য কিছু দেখতাম না। শুধু টেবিলের ওপরে জিনিসপত্র সামান্য এদিক ওদিক করা থাকত। অন্য কেউ হয়ত খেয়ালও করত না। কিন্তু ঐ যে বললাম আমি একটু পিটপিটে স্বভাবের। যে জিনিস যেখানে থাকবার কথা, সেটা সেখানে থাকতে হবে। সামান্য নড়াচড়া করলেও আমি টের পাব।
যাই হোক, খুব একটা পাত্তা দেইনি, ভয়ও পাইনি। একে তো সাহসী, উপরন্ত আমি জানি এ কার কাজ। এ আমারই কাজ। মানে ঠিক আমি না। তবে আমার মতো দেখতে এক মেয়ের। টেবিলের ওপরে যে ভারী এন্টিক আয়নাটা রয়েছে, সেখানে ও থাকে। কিছুদিন হল ওকে আমি দেখতে পেয়েছি। প্রথম প্রথম এক ঝলক দেখা দিয়েই সরে যেত। কয়দিন যেতে উঁকি দিয়ে মুখটা সরিয়ে নিত না। মনোযোগ দিয়ে কৌতূহলী চোখে ঘরের চারিদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখত, আমাকেও দেখত। একদিন আমার চোখে চোখ পড়তে আমি হেসে ওকে প্রশ্রয় দিয়েছিলাম। তাতে ওর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটো আগ্রহে যেন ফেটে পড়ল। আমার হাসির জবাবে ওরও ঠোঁটে ফুটে উঠল হাসি। সামান্য চমকে উঠলাম। ওর হাসিটা অবিকল আমার মতো। অবশ্য ও দেখতেও হুবহু আমার কার্বন কপি। কাজেই হাসিটা আমার মতো হবে, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নাই।
চা হাতে করে ফিরে এলাম। ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ল বুকশেলফের দিকে। আমার বইগুলি লেখক অনুসারে পরিপাটি করে সাজানো থাকে। এখন দুটা বই মাটিতে পড়ে রয়েছে। আরেকটা বই কেউ টেনে বের করার চেষ্টা করেছে বোঝা যায়। অন্যান্য বই থেকে সামান্য আগানো রয়েছে সেটা। ধুপধাপের কারণ বোঝা গেল এতক্ষণে। কয়েকদিন আগে থেকেই সে আয়না থেকে বের হয়ে এসে টেবিলের ওপরে রাখা মোমদানটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখত, আমার চায়ের মগও এদিক সেদিক সরিয়ে রাখত। আজ মনেহয় সাহস করে টেবিল থেকে বুক শেলফ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে আমার বইয়ে হাত দিয়েছে।
যদিও আমার জিনিসে হাত দেয়া ঠিক পছন্দ করি না কিন্তু ওর প্রতি আমারও কৌতূহল কম না। কে ও? কেন ও হুবহু আমার মতো দেখতে? ও থাকে কোথায়? কিভাবে আমার খোঁজ পেল? ও কি কিছু চায় আমার কাছ থেকে? এসব প্রশ্ন আমাকে অস্থির করে তুলল। আকাশকে বলিনি, বললে ও বিশ্বাস করবে না, হয়ত আমাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে দৌড় দিবে। ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করে না। কেন যেন মনেহয় ওকে আকাশ দেখতে পাবে না। শুধু শুধু বলে লাভ নাই।
কিন্তু ওকে আমার খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে। মনের মধ্যে গল্পের বীজ ধীরে, খুব ধীরে অঙ্কুরিত হচ্ছে। দেখি ও কী করে। ওকে ঘিরেই গল্প লেখা যাবে নাহয়।
০৭/০১/২০২৪
আজ ওর পূর্ণ অবয়ব প্রথমবারের মতো দেখতে পেলাম। সকালে উঠতে একটু দেরীই হয়ে গেছিল। বিছানা ছাড়তেও ইচ্ছা করছিল না, কেমন ক্লান্ত অবসন্ন লাগছিল। পাত্তা না দিয়ে জোর করে বিছানা ছাড়লাম। প্রতিদিনের মতো জগিং এও গেলাম। ফিরে এসে যথারীতি গোসল নাস্তা সারলাম, লিখবার ঘর থেকে কোনো সাড়া নেই। ভাবলাম আজ হয়ত ওর দেখা পাব না।
কিন্তু ঘরে ঢুকতেই ওকে দেখলাম বুকশেলফের সামনে। আমারি একটা বই খুলে মনোযোগ দিয়ে ফ্ল্যাপে আমার ছবিটা দেখছে। হুট করে আমি ঢুকতে চমকে গিয়ে হাত থেকে বইটা পড়ে গেল। তারপর এক দৌড়ে নিমেষে সে আয়নায় ঢুকে পড়ল। মাত্র এক ঝলক আমি ওকে দেখতে পেলাম কিন্তু তারমধ্যেও বুঝলাম ওতে আমাতে কোনো তফাত নেই। অনায়াসে ওকে আমি বলে চালিয়ে দেয়া যাবে।
ইন্টারেস্টিং! ভেরি ইন্টারেস্টিং!
একটা গল্প লিখতেই হবে ওকে নিয়ে।
(চলবে)