#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫৫(বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
শেখ শাহনাওয়াজ এর মুখে সব শুনে শাহরিয়ার পরিবারের সবাই অবাক। সকলে আছিয়া খাতুন এর দিকে তাকালেন। কারন মেহবিনের পরিবার নেই বলে তিনি তার আর মুখরের ওপর শর্তারোপ করেছিলেন। তার রেশ ধরেই মুখর আর মেহবিনের এই বিচ্ছেদ। শেখ শাহনাওয়াজ আর মেহরব চৌধুরী নিজেদের মধ্যে সবকিছু মিটিয়ে নিলেন। আছিয়া খাতুন স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। তখন মুখর ফোন করে বলল সে মেহবিনের সাথে আছে। তারা যেন বাড়ি চলে যায়। শাহরিয়ার পরিবার চলে গেল। তখন মিশু আরবাজ কে মারতে লাগলো। তা দেখে আরবাজ বলল,,
“আরে মিশু মারছিস কেন?”
“কান কাটা জ্বীন বাজপাখি তুই আগেই ফুলের সম্পর্কে জানতি কিন্তু আমায় বলিস নি। আমি তো ফুলকে চিনতাম মুখরের বউ হিসেবে আর তুই আমাকে কিছুই বলিস নি।”
“আরে কি করবো বল? ফুলই তো আমার ওপর এক হাজার ধারা জারি করেছিল আমি ওর সম্পর্কে তোকে বা বাড়ির কাউকে বললে ও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবে। আর ও কোথাও চলে যাবে কেউ জানবে না।”
“হুম তোরা সবাই পচা!”
‘তা ঠিক হওয়ার পর তোকে কে বলল সে ডক্টর মেহবিন মুসকান তোর বোন।”
“প্রথমে আমিই বুঝেছিলাম মায়ের চোখের মতো চোখ। যখন পাগল ছিলাম ও আমায় বলেছিল আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। ও ভেবেছিল আমি ঘুমিয়ে পরেছি পরে ও মায়ের, আমার আর ওর কথা কিছু বলছিল। আর আমাকে ভালো হতে বলছিল। তারপর ফুলের এক্সিডেন্ট হলো তখন তো সব ফিরেই পেলাম। ফুল সুস্থ হয়ে ফিরে এলে ওর সন্দেহ হলো আমি ঠিক হয়ে গেছি। আমাকে চেপে ধরতেই সেদিন ফুলকে সব বললাম আর ও বলেদিলো ও আমার বোন। আর ও বললো অনুভবের ব্যাপারে ওকে সব নির্দ্বিধায় বলতে।”
“ওহ আচ্ছা! আমি তোকে ফুলের কথা বলিনি আর তুই আমাকে তোর ঠিক হওয়ার কথা বলিশ নি শোধবোধ।”
‘মোটেই দু’টো এক নয়।”
বলেই মিশু মেহরব চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,
“এই যে মামা শুনো আমি তোমার বিধবা ছেলে মিহিরকে বিয়ে করতে চাই। এখন তুমি বলো রাজি কি না?”
হুট করে মিশুর কথা শুনে সবাই চমকে উঠলো। এদিকে বাড়িতে শোক চলছে আর ও বিয়ের কথা বলছে। তাও এমনভাবে প্রপোজাল রাখলো যেন বিয়ে করা কোন ব্যাপারই না। এদিকে মিহির হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তখন আরবাজ বলল,,
‘এই মিশু একটু রয়ে সয়ে আর এটা কি হলো?”
‘আদর রাজি আমাকে মা করতে এখন মিহির আর মিহিরের বাপ রাজি থাকলেই হলো।”
মেহরব চৌধুরী বললেন,,
‘মিশু এটা কি ধরনের কথা। এভাবে হুট করে বিয়ে মানে এসব কি করে? শাহনাওয়াজ তুমি কিছু বলো?”
শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘ঠিকই তো মিশু এটা কি ধরনের কথা হলো।”
মিশু এবার শান্ত চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“বাবা ও মিহির নয় ও আমার অনু। মানে অনুভব।”
এ কথা শুনে মনে হলো একটা বজ্রপাত হলো। শেখ শাহনাওয়াজ আর আরবাজ বলল,,
“কি বলছো এসব?”
তখন মিশু মিহিরের সামনে গিয়ে বলল,,
“আজ ও কি সবাইকে সত্যিটা বলবে না অনু? এবার যদি তুমি স্বীকার না করো তাহলে বলে দিচ্ছি সারাজীবনের জন্য তুমি তোমার মিশুমনি কে হারাবে। আর এমনভাবে হারাবে তুমি চাইলেও মিশুমনিকে ছুঁতে পারবে না।”
মিহির মেহরব চৌধুরীর দিকে তাকালো। মেহরব চৌধুরী বুঝতে পারলেন বিষয়টা তিনি বললেন,,
“তোমার স্মৃতি ফিরে এসেছে এটা বলোনি কেন আমাদের?”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“এখানে কি হচ্ছে কেউ বলবে প্লিজ?”
মেহরব চৌধুরী বললেন,,
“চার বছর আগে আমার ছেলে মিহির মারা গেছে।ও নিজেও রাজনীতি করতো। আমার ডান হাত ছিল মিহির। ও মাফিয়া টাইপ ছিল কিছুটা ওকে সবাই ভয় পেত। মিহিরের একটা কাজ থেকে ফেরার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট করা গাড়ি দেখতে পায়। আর সেটা কে আমরা জানি না। ছেলেটার জ্ঞান ছিল ও আস্তে আস্তে অস্ফুট স্বরে বলছিল মিশুকে ছেড়ে দিতে। আমরা তো মিশুকেও চিনতাম না এই মিশুই যে সেই মিশু হবে আমরা বুঝতে পারিনি। এটা মিহির বুঝতে পারে যে কেউ ইচ্ছে করে এটা ঘটিয়েছে। তবে ছেলেটার মুখটা থেঁতলে যায়। ও তাড়াতাড়ি করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তখন ওর একটা ইমার্জেন্সি কল আসে ও পার্টি অফিসের দিকে যাচ্ছিল তখন ভোটের সময় ছিল বিরোধী দলের নেতা আমাকে দূর্বল করার জন্য মিহিরের ওপর এটাক করে। ও কোন রকমে ওখান থেকে পালিয়ে যায় সবাই ওর পিছু ধাওয়া করে। ও দৌড়াতে দৌড়াতে ও আমায় ফোন দেয়। আমি ফোনে কথা বলবো তার আগে ও বলল,,
“বাবা আমার কথা শুনো তোমার বিরোধী দলের নেতা আমাকে মারার জন্য গুন্ডা পাঠিয়েছে। আমি বোধহয় বাঁচবো না তবে হ্যা তোমরা মিহিরকে মরতে দিও না। মিহিরকে মরতে দিলে ওরা তোমায় আঘাত করার সুযোগ পেয়ে বসবে। মিহিরকে একদল ভিশন ভয় পায় বাবা। মিহির যেই হোক না কেন ওর বেঁচে থাকাটা এই সবার জন্য জরুরি।”
“এসব কি বলছিস মিহির?”
“এখনি**** হাসপাতালে যাও ওখানে একটা ছেলে আছে। আমি কিছুক্ষণ আগে ওকে ভর্তি করেছি। ওর মুখটা বাজে ভাবে থেতলে গেছে তবে ডক্টর বলেছে ও বাঁচবে। ওকে বাঁচাও আর মিহিরকে গড়ে তুলো। বাবা আদরকে পিতৃহারা হতে দিও না। এমনিতেই ছেলেটার আমার মা নেই। যদি বাবাও না থাকে তাহলে ও এতিম হয়ে যাবে। আমি জানি তোমরা ওকে কখনো ফেলে দেবে না। তবে আমি চাই ওর বাবা হয়ে কেউ থাকুক। প্লিজ বাবা মিহিরকে মরতে দিও না।”
তারপরেই আমার ছেলেটা আর্তনাদ করে উঠে আর আমি চুপচাপ আমার ছেলের আর্তনাদ শুনতে থাকি। ছেলেটার বুকে ওরা ছুরি বসিয়েছিল আর পা দিয়ে পিষে ধরেছিল গলাটা। নিজেকে কতটা অসহায় মনে হচ্ছিল তা কেউ বুঝতে পারবে না। তারপর আমরা তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে যাই আর অনুভবকেই মিহির হিসেবে তৈরি করি। সেই মিহিরের স্মৃতি ছিল না। যা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তবুও আমার কানে তো শুধু মিহিরের কথাগুলো বাজছিল কতোটা অসহায় ছিল আমার ছেলেটা।
সব শুনে শেখ শাহনাওয়াজ মেহরব চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরলেন। মিহির যে মারা গেছে এটা চৌধুরী পরিবার জানে। তাই তেমন রিয়াক্ট করলো না। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে মিসেস মেহরবের চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। তা দেখে মিহির মানে অনুভব তার হাত ধরে বলল,,
“একদম কাঁদবে না মা? আমি তো তোমার ছেলে বলো। ছোটবেলা থেকে মা বাবাকে পাইনি। অনুভব থেকে মিহির হওয়ার পর সেটা পেয়েছি। আর আমি কোনোকিছুর মূল্যে আমি তাদের হারাতে চাই না। আমার মন্ত্রীর ছেলে নাম ষশ টাকা পয়সা কিচ্ছু চাইনা। আমার শুধু একটা পরিবার চাই আমার মা বাবাকে চাই।”
মেহরব চৌধুরী মিহিরকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,
“আমাদের ও শুধু আমাদের ছেলেকে চাই আর কাউকে চাইনা।তুমি নিঃসন্দেহে একজন আদর্শ ছেলে মিহির। এতো দিন ধরে আছো আমাদের সাথে কখনো মিহিরের অভাব বুঝতে দাও নি। ও যেভাবে আমাদের খেয়াল রাখতো তুমিও তার থেকে কম নয় বরং বেশি করো। ”
তখন মাইশা কাশি দিয়ে বলল,,
“মেলোড্রামা পড়ে কোরো মিহির ভাইয়া কোথাও যাচ্ছে না। আমি তো অন্তত যেতে দিচ্ছি না। মন্ত্রী আর মন্ত্রীর বউয়ের কথা জানি না। ”
মিহির মাইশার কান মলে বলল,,
“তবে রে তোকে বাবা মা কিছু বলে না দেখে পেকে গেছিস।”
‘আহ ভাইয়া ছাড়ো এখন বলো তোমার স্মৃতি এলো কবে?”
“আমি তো নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিলাম ছয়মাস আগে হুট ছোট একটা এক্সিডেন্ট হলো আমি মাথায় আঘাত পেলাম তখন মনে পরেছে।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কিন্তু আমরা তো অনুভবের বডি পেয়েছিলাম সেটা?”
তখন অনুভব বলল,,
‘শেখ আমজাদ আর আরিফ জামান আমাকে পায়নি দেখে মনে করে হয়তো কেউ আমাকে নিয়ে গেছে। তাই একটা বডি রেখে দেয় যাতে আপনারা বিশ্বাস করে নেন আমি এই পৃথিবীতে নেই। তবে এটা নিয়ে তারা ভয়েই থাকতেন যে অনুভব না আবার কখনো ফিরে আসে।”
“তোমাকে এসব বললো কে?”
“আপনার মেয়ে মেহবিন মুসকান বলেছে। ও সব জানে আমার ব্যাপারে। মিশুর প্রতি তাকিয়ে থাকা ওর প্রতি কেয়ারিং দেখে আর মিশুর চোখের ভাষা দেখে ওর সন্দেহ হয় এরপর আমাকে চেপে ধরে আমিও বলে দিই সব।”
‘ওর তীক্ষ দৃষ্টির জন্যই ওকে কেউ হারাতে পারে না।”
তখন আরবাজ বলল,,
“আচ্ছা তবে মিশু জানলো কিভাবে এটাই অনুভব। ফুল বলেছে?”
তখন মিশু বলল,,
‘না ফুল বলেনি। চোখ দেখেই সন্দেহ হয়েছিল কয়েকদিন আগে মামা বাড়ি গেলাম। তখন উনি আমার বিরহে আমার হাত ধরে কাঁদছিলেন। আমি ওনার জন্য পাগল হয়েছি সেই জন্য। আমার তো বেশি ঘুম আসে না ঘুম আসার ভান ধরে পরে থাকি যাতে ঘুম আসে সেদিন ও তাই হয়েছিল।”
তখন আরবাজ বলল,,
‘বাপরে মিশু তোর ঘুম তো দেখি সেই ডিটেক্টটিভ তুই তোর ঘুমের মধ্যেই সব জানতে পারিস।”
“সব বাদ এহন কও আমার বিয়া কবে দিবা? এই বিধবা মিহিরের সাথে। রেডিমেট বাচ্চাও পাইছি এইবার। পোলাডাও আমার মেলা কিউট। আমার সাথে খুব ভাব। নামটাও আদর দেখলে খালি আদরই করতে মন চায়।”
মিশুর কথা শুনে সবাই হেঁসে ফেললো। মিশু নিজেও হাসলো। এ কয়েকদিন পাগলের একটিং করে এখন পাগলামো তার শরীরে মিশে গেছে। অতঃপর শেখ শাহনাওয়াজ ভাবলেন তিন ছেলে মেয়ের বিয়ে একসাথেই দেবেন তিনি। দুই মেয়ের বিয়ে তো আগে থেকেই হওয়া এখন নতুন করে আবার একটু তাই।
_____________
“এই যে নেত্রী দেখো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আইসা পরছে ?”
তাজেল হুইলচেয়ার বসে ছিল মুখরের কথায় ওর দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। ওর এক হাতে আর পায়ে ব্যান্ডেজ। মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে গতকাল এখন নেই। নেত্রীর ভাব দেখে মুখর একটু দমলো। মেহবিন তাজেলের সামনে গিয়ে বলল,,
‘নেত্রী ঘুরতে যাবা আজ!”
তখন মুখর বলল,,
“এই আমিও যাবো।”
‘নেত্রী বললে আপনাকে নেব না হলে নেব না।”
“এই নেত্রী তুমি নেবে আমায়?”
তাজেল এবারও মুখরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো কিছু বললো না। তা দেখে মুখর বলল,,
“নিরবতা সম্মতির লক্ষণ তাহলে আমি যাবো । তবে ভাবছি আমি আর ডাক্তার যাবো নেত্রীকে নেব না।”
বলেই মুখর ভয়ে ভয়ে তাজেলের দিকে তাকালো তাজেল রাগে ফুঁসছে। তা দেখে মুখর দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“সত্যিই নেত্রীকে রেখে যাবো?”
তখন তাজেল চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,
‘ডাক্তার পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালারে কইয়া দাও আমি হেতিরে নিমু না। ডাক্তার আমার লগে যাইবো খালি।”
তাজেলের রাগ দেখে মুখর আর মেহবিনের হাঁসি পাচ্ছে তবে এখন হাসির সময় না। মুখর অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,,
“কেন কেন? আমায় নিবে না কেন?”
“আমি কিছু কইতাছি না দেইহা ডাক্তার আমারে নিয়া ঘুরতে যাইতে চাইছে। আর তুমি আমারে বাদ দিয়াই ঘুরবার যাইতে চাইতেছো? যাও তুমারেই নিমু না। আমি আগে ভাবছিলাম তুমি ভালা তা দেহি তুমি ভালা না।”
“আরে ওমন করো কেন আমি তো মজা করছিলাম তোমার সাথে? নাও না একটু?
“না নিমু না তুমি আমারে রাইখা যাইতে চাইছো তুমারেই নিমু না।”
“আরে নেত্রী আমি তো পুরোনো নেত্রীরে আনার জন্য এসব বলছি। মনে মনে আমি ওসব কইনাই বিশ্বাস করো।”
‘যতোই ঢপ মারো আইজ এনে চিরা ভিজবো না।”
“এখন তোমার ডাক্তারকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেও তুমি কিছু করতে পারবা না। তুমি তো চেয়ারেই থাকবা।”
“ডাক্তার ভালো হইবো না কইলাম। কুন সময় জানি হেতির মাথা পেইছা আমি বাড়ি মারুম। ”
‘লাঠি কোথায় পাবা? যে বাড়ি মারবা? তুমি তো উঠতেও পারবা না।
মুখরের কথা শুনে মেহবিন ওর দিকে তাকিয়ে রইল। আর তাজেল রেগে বলল,,
‘আমি খালি ঠিক হই পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আমার হাত থেইকা তোমারে ডাক্তার ও বাচাইতে পারবো না। আমি উঠবার পারতেছি না দেইহা তোমার আনন্দ লাগতাছে তাই না।”
এইবার মুখর সিরিয়াস হয়ে গেল। ও তাজেলের সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে বলল,,
“বিশ্বাস করো নেত্রী তোমাকে এইভাবে দেখতে আমার একটুও আনন্দ লাগছে না। কিন্তু কষ্ট লাগছে আমি তো ছি নেত্রীকে কখনো দেখিনি । আমি তো সেই নেত্রীকে দেখেছি যে সবসময় লাফালাফি করে। তার ডাক্তারের জন্য আমার সাথে ঝগড়া করে। ডাক্তারের সবসময় খেয়াল রাখে। আমি এই নেত্রী কে দেখে একটুও আনন্দ পাই না। আমি তো আগের নেত্রীকে দেখে আনন্দ পেতাম। আমি আমার পুরোনো নেত্রীকে চাই যে আমার সাথে ঝগড়া করবে তার ডাক্তারের জন্য।
সব শুনে তাজেল ওর দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইল তারপর বলল,,
“আমার দিকে ওরমভাবে তাকাই রইছো ক্যা? আর হাত ছাড়ো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আমার শরম করে।”
কথাটা শুনে মুখর হা হা করে হাসতে লাগলো। মেহবিন মুচকি হাসলো। মুখর বলল,,
‘তুমি জানো এই কথাটাই আমি সবথেকে বেশি মিস করেছি পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আমার শরম করে।”
তাজেল হেঁসে ফেলল তারপর বলল,,
“আইজ মাস্ক পড় নাই ক্যা?”
‘এখন থেকে আর পরতে হবে না নেত্রী এখন সবাই জানে আমি তোমার ডাক্তারের জামাই।”
তাজেল হাসলো।তখন মেহবিন তাজেলের গালে হাত দিয়ে বলল,,
“এভাবেই সবসময় হাসিখুশি থেকো নেত্রী। তোমার যেমন তোমার ডাক্তারের হাঁসি মুখটা পছন্দ।আমার ও তেমন আমার নেত্রীর হাঁসি মুখটা পছন্দ। তোমাকে চঞ্চলতায় মানায় নিরবতায় না। যা হয়েছে সব ভুলে যাও শুধু মনে রেখো তোমার ডাক্তার আছে তোমার সাথে আর সবসময় থাকবে। তোমাকে নিজের আকাশ তৈরি করতে সাহায্য করবে। সবশেষে আমার নেত্রী সবসময় আমার সাথে আর হাসিখুশি ভাবে থাকবে।”
তাজেল হেঁসে বলল,
“তোমার শ্বশুরবাড়ি ও আমারে নিয়া যাইবা নাকি?”
‘হ্যা তো! না হলে আমি শ্বশুরবাড়ি যাবোই না।”
‘কেউ কিছু কইবো না। তুমি জানো ঐ বাড়ির কাকি তার বইনেরে আইনা রাখছিল এক বছর পরে কাকা আর দাদি অনেক কিছু কইছে পরে ঐ খালা চইলা গেছে।”
তখন মুখর বলল,,
“যেখানে নেত্রীর ডাক্তার আর নেত্রীর পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আছে সেখানে কে কি বলবে। তাছাড়া জানো আমার বাড়ির হোম মিনিস্টার বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে।”
তাজেল একটু রাজি না বুঝতে পেরে মেহবিন আর মুখর অনেক ভাবে বোঝালো। পরে সে মানলো তারপর বলল,,
‘ডাক্তার যেনে আমিও হেনে থাকুম।”
এটা শুনে মেহবিন আর মুখরের মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। বিকেলটা ওরা সারা গ্ৰাম চক্কর দিল। রাতে মুখর তাজেলের খুশির জন্য কাচ্চি নিয়ে এলো। মেহবিন খায়িয়ে দিল। তিনজনেই একসাথে খেল। মেহবিন তাজেলকে ঘুম পারিয়ে দিল। তাজেল ও টেডিবিয়ার ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। রাত নয়টা মুখর মেহবিনকে পেছনের বারান্দায় ডাক দিল। মেহবিন গেল সেখানে। মুখর ওর হাত ধরে ওর পাশে বসিয়ে দিল আর বলল,,
“আমি কিন্তু তোমার কাজে জয়ী হয়েছি আমার পুরস্কার এর জন্য প্রস্তুত হও।”
তোমার চোখে এই নগরীর ঘুমন্ত রাত,
আধারগুলির মৃত্যু ঘটে রাঙা প্রভাত!
গন্ধে তোমার ছুটছে কুমার তোমার বাড়ি
হাত বাড়ালে ধরছি তোমার প্রেমের শাড়ি।
তোমার প্রেমে সিক্ত মনের শহরতলি,
সেই শহরে মুচড়ে নিলাম বিষাদথলি!
এই সেই শাখা আমি তুলসীপাতা,
আমার নামে গেথে নিলাম আবার নকশিকাঁথা
~রোজ (কাব্যের বিহঙ্গিনীর পাঠক বিহঙ্গিনীর জন্য লিখে পাঠিয়েছেন।
মেহবিন কবিতা শুনে মুচকি হেঁসে বলল,
“আপনার পুরস্কার প্রস্তুত কাব্য! কারন আজ আপনার বিহঙ্গিনী হয়তো খুব খুশি।
মুখর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘ চলো না বিহঙ্গিনী একটু নির্জনে হেঁটে আসি। অনেকদিন হলো তোমার হাত ধরে হাঁটা হয় না। নির্জনে হাঁটা সুন্নত চলো আজ না হয় একটু সুন্নত পালন করি। নেত্রী ঘুমিয়ে পরেছে সমস্যা নেই।”
‘চলুন!”
মেহবিন আর মুখর সাবধানে বের হলো সব আটকিয়ে। আজকে পুরো চাঁদ আছে। রাস্তাঘাট পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। ওরা কিছুক্ষণ হাত ধরে হাটলো। হাঁটতে হাঁটতে ওরা একটা মাঠের কাছে এসে পরেছে । আর ওখানেই মুখরের গাড়ি রাখা। মুখর মেহবিন কে বলল,,
“একটু চন্দ্রবিলাশ করা যাক গাড়ির ওপর বসে?”
মেহবিন হেঁসে সায় জানালো। অতঃপর দুজনে গাড়ির ওপরে উঠে বসলো। দুজন কিছুক্ষণের জন্য মৌন রইলো। মেহবিন চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুখর মেহবিনের দিকে। হুট করে মেহবিন মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপনি জানেন কাব্য আমার একাকীত্বের শহর আমার খুব যত্ন করে গড়া। তার দেয়াল এতটাই শক্তিশালী যে সহজে কেউ আঘাত করে ঘায়েল করতে পারে না। আমার আমিকে খুব যত্ন করে একাকীত্বের শহরে পুষি। যার দুঃখ প্রকাশ পায় না। আজ কেন যেন আমার দুঃখ প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে আজ ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙতে চাইছে। আমি চেয়েও আমার সহনশীলতা কে ধরে রাখতে পারছি না কাব্য। যা আমি এতোকাল ধরে করে এসেছি ধীর স্থিরতার সাথে আজ সেই হিসেবে আমি বিজয়ী।
মেহবিনের কথা শুনে মুখর বলল,,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,
“তোমাদের মধ্যে এমন দুটি অভ্যাস রয়েছে, যা স্বয়ং আল্লাহ্’ও পছন্দ করেন। একটি হলো ধৈর্য ও সহনশীলতা, অপরটি হলো ধীর-স্থিরতা।” [সুনানে আত-তিরমিজি, ২০১১]
সেই জন্যই তুমি আজ সফল বিহঙ্গিনী।”
মেহবিন বলল,,
“তবে আমি এতদিন ধৈর্য্য আর সহনশীল হয়ে থাকলেও। আজ ভেতরের চাঁপা কষ্ট গুলো আর চাপা থাকতে চাইছে না। ঐ দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কি কখনও ঠিক কতোটা বিশালতা বিরাজমান? যখন রাতের নিস্তব্ধতা আর সাথে থাকে অসংখ্য তারা আর একটি মাত্র শুভ্র রাঙা জোসনা মাখা চাঁদ । কখনও কি সাগরের দিকে তাকিয়ে ভেবেছেন তার গভীরতা ঠিক কতোটা ? আমার সবাই থেকেও কেউ নেই কাব্য । কাব্য আজ কি আপনি আমার এক টুকরো চাঁদ হবেন ? যার কাধে মাথা রেখে আমি আমার সকল কষ্ট বেদনা ভুলে একটু প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেব ? একটুখানি আগলে নিবেন কি আপনার বিহঙ্গিনী কে ?
মেহবিনের কথায় মুখরের চোখ ছলছল করে উঠলো। মুখর বুঝতে পারলো চাঁদের দিকে তাকিয়ে সে এতোক্ষণ নিজের জীবনের হিসাব মিলাচ্ছিল। মুখর মেহবিনকে খুব শক্ত করে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মেহবিন মুখরের কাঁধে মাথা রাখলো। আর বলল,,
“তোমার কাব্য সবসময় আছে তোমার সাথে বিহঙ্গিনী।
আর সারাজীবন তোমায় আগলে নেবে।”
মেহবিন পাশে তাকালো আর বলল,,
‘অনেক রাত হয়ে গেছে চলুন বাড়ি যাই কাব্য!”
বলেই মেহবিন গাড়ির ছাদ থেকে নামার জন্য এগুলো।মুখর কিছু একটা আন্দাজ করে ওকে নামতে সাহায্য করলো আর নিজেও নামলো। কিছুদূর আসতেই মুখর মেহবিন কে কোলে তুলে নিল। আর বলল,,
“এই মুখর শাহরিয়ার কাব্য কখনো তার বিহঙ্গিনীকে কষ্ট পেতে দেবে না। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবে সর্বদা।”
~চলবে,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
অতীত,,
“এই যে পাঞ্জাবি ওয়ালা আপনি কি সবসময় পাঞ্জাবি পরেই থাকেন?”
মেহবিনের কথায় মুখর অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি ব্রেক করলো।সে আর নাফিয়া এসেছিল তার দাদিকে চেক আপ করানোর জন্য। এখানে মেহবিন কে দেখতেই দাদিজান তার আছে কথা বলতে লেগে গেল। মেহবিন সৌজন্যতার খাতিরে কথা বলতে লাগলো। এরপর মেহবিন বলল তার একটু নীলক্ষেত যেতে হবে কিছু বইয়ের জন্য। কথাটা শোনা মাত্রই দাদিজান বলল মুখর কে ওকে নীলক্ষেত পৌঁছে দিতে। ওখান দিয়েই মুখর একটা কাজে যাবে এই জন্য নাফিয়া কে ও এনেছে যাতে দাদিজান ওর সাথে বাড়ি যেতে পারে। দাদিজানের কথায় মুখর না করলো না। তবে মেহবিন করলো দাদিজান অনেক বলে কয়ে তাকে রাজি করালো। অতঃপর মেহবিন মুখরের সাথে গেল। বরাবরের মতো এবারও মেহবিন পেছনে বসলো। আজ মুখর কিছুই বললো না। তবে অনেক বার আড় চোখে তাকে আয়নার দেখেছে। আবার পড়াশোনার বিষয়ে কথাও বলেছে। তারপর কথার প্রেক্ষিতে হুট করে মেহবিন উক্ত কথাটা বলে দিল। গাড়ি থেমে গেছে। মুখর বলল,,
“হুট করে এমন প্রশ্ন কেন আপনার মনে উদয় হলো?”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“আজ পর্যন্ত যতোবার আপনাকে দেখেছি ততবারই পাঞ্জাবিতে দেখেছি তাই বললাম।”
“হ্যা আসলে আমার পাঞ্জাবি পরতে অনেক ভালো লাগে। এই জন্যই কোথাও বেরুলে পাঞ্জাবি পড়ি। তবে পাঞ্জাবি ওয়ালা নামটা বেশ ভালো লাগলো। এরপর থেকে না হয় এই নামেই ডাকলেন।
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“হুম এখন গাড়ি স্টার্ট করুন।”
মুখর গাড়ি স্টার্ট করলো। অতঃপর নীল ক্ষেত পৌঁছালো। মেহবিন আজকে গাড়ি থেকে নেমে বলল,,
‘ধন্যবাদ আজকে। কারন আপনার জন্য আমার ভাড়াটা বেঁচে গেল। আর সেটা দিয়ে আমি আরো একটা বই কিনতে পারবো।”
“যাক বই কেনার জন্য হলেও আপনি আমায় ধন্যবাদ তো দিলেন।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“হুম দিলাম তবে বই কিনতে পারবো দেখেই নাহলে দিতাম না। কারন এটা আপনার,,
‘হ্যা হ্যা জানি কারন এটা আমার দায়িত্ব।কারন দাদিজান আপনাকে জোর করে পাঠিয়েছে।”
মেহবিন উল্টো দিকে ঘুরে গেল।তখন মুখর বলল,,
“আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ!”
মেহবিন না ঘুরেই বলল,,
“ইনশাআল্লাহ!”
মেহবিন চলে গেল। তবে আজ মুখরের ভালো লাগলো। ও উঁকি দিয়ে দেখলো মেহবিন কি বইগুলো দেখছে। ও দেখলো একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি কিছু গল্পের বই ও দেখছে। কিন্তু ওর আজ নামার সময় নেই। তাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ও চলে গেল। এটা ছিল মেহবিন আর মুখের তৃতীয় দেখা।
এভাবেই কেটে গেল আরো তিন মাস। মেহবিন পুলিশ স্টেশনে এসেছে একটা মেয়েকে নিয়ে। আর রিপোর্ট লেখানোর জন্য পুলিশ অফিসারের কেবিনে ঢুকতেই দেখলো মুখর কে। তাকে দেখে ও বলল,,
“পাঞ্জাবি ওয়ালা আপনি এখানে? তারমানে আপনি একজন পুলিশ অফিসার?”
মেহবিনের কথায় মুখর অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। তিনমাস পর আবারোও ও সেই মুখটা দেখতে পাবে এটা ও ভাবতে পারেনি। মুখর আজ ইউনিফর্ম এ আছে। মুখর হেঁসে বলল,,
‘জি আমি একজন পুলিশ অফিসার। আপনি এখানে? দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন!
মেহবিন আর মেয়েটা বসলো। তখন মুখর বলল,,
“চা না কফি?”
“আপাতত কোন কিছুই না একটা রিপোর্ট লেখাতে এসেছি।”
মুখর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আরেকবার মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“জি। কি রিপোর্ট?”
‘ও হচ্ছে আমাদের দারোয়ান কাকার মেয়ে লতা ওর বোন আর আমি একই সাথে পড়ি। ওর বোনের মুখে গতকাল একটা ছেলে এসিড নিক্ষেপ করেছে। এই জন্যই রিপোর্ট লেখাতে এসেছি।”
“আপনি কি ছেলেটার চেহারা দেখেছেন?”
“জি দেখেছি। আর তাকে চিনিও!”
“ছেলেটা কে?”
“একজন নেতার ছেলে। আর সে আমাদের কলেজেই পরে।
‘আপনি তার বিষয়ে সকল ডিটেলস দিয়ে যান। ইনশাআল্লাহ কালকের মধ্যে সে লকাপের ভেতরেই থাকবে।”
মেহবিন সবকিছু দিয়ে গেল। আর পরেরদিন মুখর গেল মেডিকেলে মেহবিন ছেলেটাকে দেখিয়ে দিল। মুখর ছেলেটাকে এরেস্ট করলো। তখন ছেলেটা চিৎকার করে উঠল কে করেছে তার নামে রিপোর্ট। আর কোন প্রমান আছে কে দেখেছে কে। মুখর জানালো সরাসরি দেখেছে এরকম প্রমান আছে। অতঃপর ছেলেটাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো। কেস কোর্টে উঠলে মেহবিন বলল সে সাক্ষী দেবে ততদিনে ছেলেটার বাবা জেনে গেছিল মেহবিন সব করেছে। তাই পরেরদিন কলেজে সবার সামনে ওকে অপমান করার চেষ্টা করে আর ওর হাত ধরে হিজাব নিয়ে টানাটানি করে এসব দেখে মেহবিন আর সহ্য করতে না পেরে সব কটাকে মেরে শুয়িয়ে দিল। সেদিন মাহফুজ শাহরিয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলেন একটা কাজে তিনি সব দেখতে পান। তিনি মুখর কে ফোন করে । মুখর তাড়াতাড়ি করে চলে আসে। ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। মুখর মেহবিনের দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“নিন পানি খান অনেকটা হাঁফিয়ে উঠেছেন?”
মেহবিন তার দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘দরকার নেই আমি ঠিক আছি।”
‘আপনাকে একা ছাড়া উচিৎ হবে না। যতোদিন ধরে ঐ নেতার ছেলের কেসটা শেষ হয়।”
‘সমস্যা নেই আমার কিছু হবে না।”
‘কাল কেস কোর্টে উঠবে আমি নিয়ে যাবো আপনাকে।একা যাওয়ার দরকার নেই কারন আপনিই হচ্ছেন এই কেসের মুল প্রমান। আর মেয়েটাকেও আমি সেফটি দিয়ে রেখেছি।”
“ঠিক আছে।”
যখন মুখরের নজর গেল মেহবিনের হাতে । হাত দিয়ে রক্ত পরছে হয়তো কেটে গেছে। মুখর ওর হাত ধরে বলল,,
‘আপনার হাত তো দেখি অনেকখানি কেটে গেছে। ব্যান্ডেজ করতে হবে তো!
মেহবিন হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,,
“কোন পুরুষ মানুষ আমার হাত ধরুক এটা আমার পছন্দ নয়। আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আমি নিজের কাজ নিজেই করে নিতে পারি।
বলেই মেহবিন চলে গেল। মুখর ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। পরেরদিন মুখর এলো ওকে নিতে মেহবিন সাক্ষী দিল তার কারনে ছেলেটার সাজা হলো। নেতা মেহবিন কে অনেক কথা শোনালো। আর একটা সামান্য দারোয়ানের মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে নিজের জীবনের রিস্ক নিল। ওকে ছাড়বে না এসব বলতে বলতেই এক সময় মেহবিন সবার সামনে নেতার হাত ধরে নিয়ে গেল হাসপাতালে পেছনে মুখর ও গেল। মেহবিন সেই এসিড নিক্ষেপ করা মেয়েটার কেবিনের সামনে গিয়ে তাকে দেখিয়ে বলল,,
” এই মেয়েটাকে দেখেছেন। সে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। আপনি জানেন এই মেয়েটা কতোটা কষ্ট করে পড়াশোনা করছে। সে একজন দারোয়ানের মেয়ে এই জন্য তাকে কেউ দাম দিতে চায় না। তবুও সে দিনশেষে একটা মেডিকেল স্টুডেন্ট। আপনার ছেলে যে কাজটা করেছে আপনি তার ওপর কোন কিছু না করে আমার ওপর কালকের মতো একটা জগন্য কাজ করলেন। আচ্ছা কেউ যদি আপনার মুখে এসিড দেয় বা আপনার মেয়ের ওপর এসিড নিক্ষেপ করে তাহলে আপনার কেমন লাগবে। দেখুন এই মেয়েটাকে কিভাবে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। সে কি সুস্থ স্বাভাবিক একটা জীবন পাবে সমাজে তাকে কি চোখে দেখবে মানুষ। আপনিই বলুন যে এসিড মারে তাকে তো সবাই এক সময় ভুলে যায়। কিন্তু যার গায়ে এসিড লাগে সে কি ভুলতে পারে, না সমাজ ভুলতে দেয়। এসিডে মুখ জ্বলসে যাওয়া মেয়েকে সবাই আঙুল তুলি দেখিয়ে দেয়। তার যায়গাটা কোথায়? আমি জানি আপনার আমার ওপর অনেক রাগ কিন্তু আমি মনে করি এই মেয়েটার কষ্টের কাছে এসব কিছুই না। আপনি তো একজন নেতা আপনার কাজ মানুষের সেবা করা। কিন্তু আপনি কি করছেন নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন তো? আপনার ছেলে, ছেলে আর ও দারোয়ানের মেয়ে বলে ওর কোন দাম নেই। একটা কথা মনে রাখবেন যার পেশা যেমনই হোক না প্রত্যেকটা বাবার কাছে তার সন্তান তার কলিজা।
বলেই মেহবিন ওখান থেকে চলে গেল। সেই নেতাটা ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। একটা সময় তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। সে দারোয়ানের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলো। আর বলল ঐ মেয়েটার সব দায়িত্ব সে নেবে। মুখর মুগ্ধ হয়ে গেল মেহবিনের কাজে এভাবে হয়তো সেও বোঝাতে পারতো না। এভাবেই কেটে গেল কয়েকদিন কিন্তু এ কয়েকদিন মুখর ঠিকঠাক ভাবে ঘুমাতে পারলো চোখ বুঝলেই মুখরের মেহবিনের চেহারা ভেসে উঠে। মেহবিনকে দেখা যেন তার অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে সে পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার সময় মেহবিন কে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করে। মুখর বুঝতে পারছে ও মেয়েটার মায়ায় পরে গেছে। মুখর সাহস করে একদিন মেহবিনের কাছে গেল। সেদিন সে পাঞ্জাবি পরে গেল। মেহবিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,
‘মিস মেহবিন আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে?”
মেহবিন মুখরকে একদম আশা করেনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ও বলল,,
“আপনি এখানে?”
‘হুম আপনার সাথে কিছু কথা আছে চলুন।”
“কোথায় যেতে হবে?”
“আপাতত কোন রেস্টুরেন্ট বা কোন খোলামেলা জায়গা যেখানে একান্তে আপনার সাথে কথা বলা যাবে। ভয় নেই শুধু কথাই বলবো।
‘আপনার সাথে একান্তে কথা বলার জন্য কোন সম্পর্ক কি আমাদের আছে? তাছাড়া একটা ছেলেমেয়ের একান্তে কথাবার্তা বলা বা মেলামেশা উচিত নয়।”
“তাহলে না হয় একটু দূরত্বেই চলুন আশেপাশে মানুষ থাকবে। তবে কেউ আমাদের কথা শুনতে পাবে না।”
মেহবিন চারদিকে একবার তাকালো। সবাই ওর দিকে অড়চোখে তাকিয়ে আছে। ও এখানে না থাকাই ভালো মনে করলো। ও কলেজের পেছনে একটা জায়গা আছে ওকে নিয়ে সেখানে গেল। মেহবিন একবার মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল ,,
“বাহ পাঞ্জাবি ওয়ালা দেখি আজ পাঞ্জাবি পরে এসেছে।
মুখর হেঁসে বলল,,
‘নামটাই দিয়েছেন পাঞ্জাবি ওয়ালা তাই পাঞ্জাবি পরে আসাটাই ভালো মনে করলাম।”
“তা কি বলবেন বলুন?”
মুখর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“দেখুন আমি তেমনভাবে মনের কথাগুলো সাজিয়ে বলতে পারি না। আমি বোধহয় আপনাকে পছন্দ করি এবং হয়তো ভালোবাসি। কারনে অকারণে আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করে। আমি চাই এই অনুভূতিটা খারাপ দিকে যাওয়ার আগে আমাদের নতুন এক হালাল সম্পর্ক হোক তাই বলছি আপনি কি আমায় বিয়ে করবেন বিহঙ্গিনী?
মুখরের বিয়ের প্রস্তাবে মেহবিন অবাক হলো আর সবথেকে বেশি অবাক হলো বিহঙ্গিনী শুনে। ও বলল,,
“বিহঙ্গিনী?”
‘হুম বিহঙ্গিনী আপনার ডায়রির ওপরে তো কাব্যের বিহঙ্গিনী লেখা ছিল। তাই আমিও আমার একান্ত পছন্দের মানুষটির নামকরণ করেছি বিহঙ্গিনী ।”
“আপনি আমার ডায়রি কোথায় পেলেন?”
“পাইনি আপনার হাতে দেখেছি বহুবার আপনি আনমনে কিছু লেখেন তাতে।”
“আপনি আমার ওপর নজর রাখেন?”
মুখর মাথা চুলকিয়ে বলল,,
‘না মানে আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হতো তখন একটু? সেসব বাদ দিন আপনি বলুন না আপনি আমার কথায় রাজি কি না?”
মেহবিন চোখ মুখ শক্ত করে বলল,,
“না!”
মুখরের মুখটা ছোট হয়ে গেল তবুও বলল,,
‘কেন আপনি কি আমায় অপছন্দ করেন?”
‘এখানে পছন্দের অপছন্দের ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো আমার আমার জীবনে কাউকে জড়াতে চাই না। আর বিয়েও করতে চাই না এখন?”
“আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো বিহঙ্গিনী! যতোদিন অপেক্ষা করতে হয় ততদিন না হয় অপেক্ষা করবো। আপনার জীবনে যখন আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে গ্ৰহন করবেন। আর জীবন সঙ্গী যেই হোক না কেন সেই মানুষটা নাহয় আমিই হবো।
‘আমি চাইনা কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করুক। আপনি যতোবারই বলুন না কেন? আমার উত্তর “না” হবে। আশা করি আপনি আমার উত্তর পেয়ে গেছেন।”
বলেই মেহবিন ওখান থেকে চলে গেল। মুখরের চোখটা ছলছল করে উঠলো। জীবনের প্রথম কোন মেয়ের ওপর ওর অনুভূতি তৈরি হলো আর সেই মেয়েটা কতোটা সহজেই না ওকে রিজেক্ট করে দিল। মুখর ভারাক্রান্ত মন নিয়ে গেটের কাছে এলো। মিশু আর আরবাজ বন্ধুর জন্য এখানে এসেছে। ওকে দেখেই মিশু আর আরবাজ বলল,,
“এই কি বললো রে মেয়েটা?”
মুখর ছোট করে বলল,,
‘রিজেক্ট তোদের বন্ধু। জীবনে কোন মেয়ের ওপর মুখর শাহরিয়ারের অনুভূতি তৈরি হলো।আর সেই মেয়েটা ওকে রিজেক্ট করে দিল।”
মুখরের কথায় আরবাজ আর মিশুর মুখটা ছোট হয়ে গেল। মিশু বলল,,
‘মেয়েটা তোকে অপছন্দ করে নাকি?”
“আরে না সে তার জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চায় না। আর এখন বিয়েও করতে চায় না।”
তখন আরবাজ বলল,,
“আরে এটা তো একবার। হাল ছাড়িস না বন্ধু লেগে থাক একদিন ঠিকই রাজি হবে।”
“উনি সবার মতো নয় উনি একদম আলাদা।”
‘আরে ভাই চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই তাই না। এখন এসব বাদ দে মেয়েটাকে দেখা।”
মুখর সামনে তাকালো দেখলো মেহবিনই ওদের দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। মুখর তাকাতেই ও দৃষ্টি সরিয়ে নিল। মেহবিন আরবাজকে মুখরের সাথে দেখে অবাক হয়ে গেছিল তাই এতোক্ষণ ধরে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল। মুখরের নজর পরতেই মেহবিন ওদের সামনে দিয়ে চলে গেল। মুখর ডাক দিল,,
“মিস মেহবিন?”
মেহবিন পেছনে ঘুরে মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমাদের মধ্যে তেমন কোন সম্পর্ক নেই যে আপনি যখন তখন এভাবে ডাকবেন। আপনার উত্তর তো আপনি পেয়ে গেছেন আশা করি এরপর থেকে আপনার আর আমার সম্পর্ক পানির মতো পরিস্কার হয়ে গেছে। আল্লাহ হাফেজ!”
বলেই মেহবিন চলে গেল। তখন মিশু বলল,,
“এই মেয়েটাই মেহবিন বাপরে বাপ যেন তুই ওকে ডাকিস নি ওকে তুলে এনেছিস।”
‘হ্যা মিশুমনি এটাই সেই মানুষটি। যাকে প্রথমবার তার এরকম ব্যবহারের জন্য অসামাজিক বলেছিলাম।”
‘আর এখন সেই অসামাজিক মেয়ের জন্যই মেডিকেলের সামনে পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে আছেন ইন্সপেক্টর মুখর শাহরিয়ার।”
কথাটা শুনে মুখর হাসলো। কিন্তু আরবাজ মেহবিনকে দেখেই থমকে গেছে। ও চুপচাপ হয়ে রইলো। ওরা সবাই নিজেদের জায়গায় চলে গেল। রাতে “কাব্যের বিহঙ্গিনীর” পেজ থেকে একটা পোস্ট হলো।
“মানুষ কতটা সহজেই না প্রাপ্তির জন্য আবদার করে বসে। অথচ তারা জানে না কখনো কখনো প্রাপ্তির থেকে অপ্রাপ্তিই শ্রেয়।”
পোস্ট টা সামনে আসতেই মুখর একটু অবাক হলো। মেহবিনের কাব্যের বিহঙ্গিনী ডায়রিতে লেখা দেখে ও ফেসবুকে সার্চ দিয়েছিল। তখন একটা পেজ আসে ওর ঐ নামে। পেজটা বছর খানেক আগে খোলা হয়েছে। এবং ফ্যান ফলোয়ার ও বেশ আছে। ও মনোযোগ দিয়ে তার পেজটার প্রত্যেকটা পোস্ট দেখলো। দেখতে দেখতে ও একটা পোস্ট এ থমকে গেল।
“একটা মানুষ নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে কখনো অন্যের পরিস্থিতি বুঝতে পারে না। অথচ মানুষ কতো সহজেই না একটা মানুষকে তার কাজের পরিচয় দিয়ে বিচার করে বসে। কেউ দারোয়ান তো কেউ নেতা কিন্তু দারোয়ানকে দেখে যেন নেতা সাহেব দারোয়ান কে মানুষের কাতারে ফেলতে চায় না। এভাবেই উচুস্তরের মানুষেরা নিচু স্তরের মানুষ কে বাঁচতে দিতে চায়না।
মুখর ডেট টা দেখলো আর মনে করার চেষ্টা করলো এসিড পরা মেয়েটার কেসটা কোর্টে ওঠার ডেট। একই দিনে পোস্ট টা করা। ওর এটা দেখে সন্দেহ হলো পেজটা মেহবিনেরই। এছাড়া মেহবিন পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে পোস্ট করে। এরপর ও কয়েকদিন ওর নজর রাখলো ও ওর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেই পোস্ট করে ও সিওর হয়ে গেল। আজকের পোস্ট দেখে আলট্রা শিওর। তবে ওর মনে খচখচ করলো এই কাব্য টা কে? কাব্য নামের কারো সাথে কি ওর জীবন জড়িত এই জন্যই কি রিজেক্ট করলো। এদিকে আরবাজ মেহবিনের সাথে কথা বললো মুখরের ব্যাপারটা নিয়ে মেহবিন সাফ না করে দিল। ও এখনি কারো সাথে জড়াতে চায় না। আরবাজ অনেক বোঝানোর পরেও ব্যর্থ হয়ে চলে গেল।
সময় পেরিয়ে গেল আরো একমাস মুখর একটা কাজে এসেছিল তবে ওর হাঁটতে ইচ্ছে হচ্ছিল দেখে এমনিতেই হাঁটছিল। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো ও একটা বাস্ট স্টপ এ আশ্রয় নিল। পাশে দাঁড়াতে দেখলো মেহবিন ও ওখানে। ও আশে পাশে দেখলো না আর কেউ নেই। রাত আটটা মেহবিন একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকালো। তখন মুখর বলল,,
‘মিস মেহবিন দেখছেন প্রকৃতিও বোধহয় চায় আমরা এক হই। তাই তো দেখে দেখে এই সময়ই বৃষ্টি নামিয়ে আমাদের এক জায়গায় এনে দিল। আর কি অদ্ভুত দেখুন এখানে আমি আর আপনি ছাড়া কেউ নেই।”
মেহবিন মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“নিজের মনমতো প্রকৃতিকে ভেবে নেওয়া বোকাদের কাজ। প্রকৃতি নিজের নিয়মে চলে অন্যদের নয়। তবে এটা ঠিক কোন কিছুই কারন ব্যতিত হয় না। এমনকি প্রকৃতিও না।”
‘হুম সেটাই তো বলছি প্রকৃতিও চায় আমরা এক হই। তো বলুন না মিস এই বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে আপনি কি আমার হবেন?
মেহবিন এবার কঠোর স্বরেই বলল,,
“আপনি বাংলা বুঝেন না মুখর শাহরিয়ার। একটা মেয়ে তখনি না বলে যখন তার উত্তর পুরোপুরি সিওর ভাবে না হয়। দেখুন আপনি একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ আপনাকে এসবে মানায় না। দয়া করে এসব করবেন না।”
মেহবিনের কথায় মুখর মুচকি হেসে বলল,,
কাঁদিছে গগন, বহিছে পবন
কহিতেছে কানে কানে
কি এমন যন্ত্রণা তোমার
বলিয়া যাও গানে গানে।
বিহঙ্গ কহিল,
উড়িয়া গিয়াছে পিঞ্জিরার বিহঙ্গিনী
করিয়া গিয়াছে একা
আর কি কভু পাবো
আমি বিহঙ্গিনীর দেখা।
পবন কহিল,হে বিহঙ্গ
হাল ছাড়িলে হয়
বক্ষে বল আর অন্তরে বিশ্বাস রাখিলে
তব আসিবে জয়।
~শাকিল হোসেন (কাব্যের বিহঙ্গিনীর পাঠক কাব্যের কাছে থেকে তার বিহঙ্গিনীর কাছে ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য লিখে পাঠিয়েছেন)
মুখরের কবিতায় মেহবিন শান্ত ভাবে তার দিকে তাকালো। বিহঙ্গ বলতে ও নিজেকেই বুঝিয়েছে। আর এটাও বুঝিয়েছে ও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। কিন্তু মেহবিন কিছু বললো না। তখন হুট করে মুখর আবার বলল,,
‘আপনার জীবনে কি কাব্য নামের কেউ আছে। যার জন্য আমাকে রিজেক্ট করছেন?”
মেহবিন মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমার জীবনে কেউ নেই। আমি একা আমার কেউ নেই আর কোনদিন ছিলোও না।”
হুট করে এমন কথায় মুখর হতভম্ব হয়ে যায়। ও কিছু বুঝতে পারেনা তবু ও বলল,,
“তাহলে এই কাব্য মানে কাব্যের বিহঙ্গিনীর উৎপত্তি কোথায়?”
“কাব্য মানে কি বলুন তো?”
‘কবিতা বা ক্ষুদ্র আকারে লেখা কিছু গল্প।”
মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“আপনারটা হয়েছে তবে জানেন? কাব্য অর্থ আরো আছে। যেমন নির্দোষ সারল্যের কাহিনী ও নির্দোষ সুখের কাহিনী। আর আমি এই দুটি অর্থেই নামকরণ করেছি। আর বিহঙ্গিনী মানে পাখি আমার মা আমাকে বিহঙ্গিনী হতে বলেছে। মুক্ত পাখির মতো আমার সবখানে বিচরন। আমার জীবনে অন্যকারো জন্য কোন দায় নেই। আমার আমিই আমার কাছে সবার আগে। ”
মুখর মেহবিনের কথায় অদ্ভুতভাবে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। ও বুঝতে পারলো এই মেহবিনকে যেমন দেখতে তেমনটা সে মোটেই নয়। ও ভিশন জানতে ইচ্ছে হলো এই বিহঙ্গিনীকে। মুখর ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,
‘আপনি কারো কোন দায় রাখবেন না বলেই কি আমাকে গ্ৰহন করছেন না।”
মেহবিন হাসলো আর বলল,,
‘কাব্য অর্থ আরেকটা আছে সুখী জীবন। তাহলেই বুঝুন।”
“আমি বিহঙ্গিনীর কাব্য হতে চাই। আর সেই সাথে বিহঙ্গিনী কে জানতে চাই। তবুও কি আপনি বাঁধ সাধবেন?”
মেহবিন বৃষ্টির মধ্যেই সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার পেছনে মুখরের দিকে তাকিয়ে একটু চিৎকার করে বলল,,
“এই বিহঙ্গিনীকে জানতে চাইবেন না মুখর শাহরিয়ার! তাহলে শূন্য হাতে ফিরতে হবে আপনাকে।”
বলেই মেহবিন বৃষ্টির মধ্যে চলে গেলো। মুখর অদ্ভুত ভাবে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। ও নিজেও বেরিয়ে পড়লো নিজের গন্তব্যে।
_____________
বাড়িতে সবাই মুখরের বিয়ের কথা বলছে। মুখর বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরলো ওকে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল। তা দেখে মুখর বলল,,,
“আমি আসার সাথে সাথে সবাই চুপ হলো কেন?”
তখন মুখরের মা বলল,,
“কিছু না তুই আগে ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর বলছি।”
“ঠিক আছে।”
মুখর ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। মিসেস মাহফুজ কফি দিলেন ওকে। ও সোফায় বসে বলল,,
“হুম এখন বলো কি ব্যাপার?”
তখন আছিয়া খাতুন বললেন,,
“নাতি তোমার জন্যে নাতবউ পাইয়া গেছি।”
মুখর আছিয়া খাতুনের কথায় ড্যাবড্যাব করে ওনার দিকে তাকিয়ে রইল। আর বলল,,
“মানে?”
“তোমার মেহবিন কে কেমন লাগে নাতি?”
মেহবিনের কথা শুনে ওর মনে তো লাড্ডু ফুটতে লাগলো। তবুও মুখে বলল,,
“ভালোই তো কেন?”
মুখর সবে কফিটা মুখে দেবে এমন সময় আছিয়া খাতুন বলল,,
“নাতবউ হিসেবে মেহবিনকেই আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে।”
মুখর কথাটা শুনে যেন কফি গেলার কথা ভুলে গেল। ও কোনরকমে কফি গিলে বলল,,
‘মানে কি?”
‘মানে হলো এটাই আমর মেহবিনকে তোমার জন্য পছন্দ করছি।”
“ওহ আচ্ছা!”
‘তুমি খুশি হইছো তো না মানে তোমার পছন্দ হয় ওরে।”
“তোমরা যখন পছন্দ করেছো তাহলে এখানে আর না করার কি আছে?”
বলেই মুখর উঠে চলে এলো। ও আসতেই সবাই হেঁসে ফেললো। কারন উনারা জানেন মুখর মেহবিনকে পছন্দ করে। আর বাড়ির সবারই মেহবিন কে পছন্দ। কিন্তু মুখর এমন ভাব ধরলো যেন ওর কিছু যায় আসে না। এদিকে মুখর এসে নিজের ঘরে একাই গানবাজনা ছাড়াই নাচতে লাগলো। আর বলল,,
“পাঞ্জাবিওয়ালা তোমার এখন বিয়ের রঙ লাগবে। এবার আর বিহঙ্গিনী নিশ্চয়ই না করতে পারবে না। শুকরিয়া আল্লাহ। ”
মুখর মুচকি হেসে ফেসবুকে ঢুকলো। আর ঢুকে কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজের পোস্ট দেখে কিছু টা অবাকই হলো।
“আমাকে অন্যদের সাথে গুলিয়ে ফেলো না। নাহলে শূন্য হাতে ফিরতে হবে তোমায়।”
~চলবে ,,,