#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“কালকের দিনটা কি বিহঙ্গিনী তার কাব্যের নামে লিখে দিতে পারবে?”
অনেকদিন পর”বিহঙ্গিনীর কাব্য” আইডি থেকে মেহবিনের জন্য পোষ্ট করা হয়েছে। রাতে শোয়ার বন্দোবস্ত করছিল মেহবিন এমন সময় নোটিফিকেশন এর আওয়াজ পেতেই নোটিফিকেশন টা অন করতেই উক্ত পোস্টটি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মেহবিন বাবু হয়ে বসে তারপর মুচকি হেসে বলল,,
“কালকের দিনে কি আছে? যে বিহঙ্গিনী কে তার কাব্যের নামে দিনটা লিখে দিতে হবে।”
ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,
“কালকের তারিখেই বিহঙ্গিনীর কাব্য তার বিহঙ্গিনীর সাথে হালাল , লিখিত ও বৈধভাবে জুড়ে গিয়েছিল।”
“তাই বুঝি! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম?”
“ভুলে গিয়েছিল দেখেই তো কালকে হাসপাতাল থেকে সে ছুটি নিয়েছে। তাছাড়া আমার বিহঙ্গিনী কিছু ভুলে না। আর সে ভুলে না দেখেই তো সে এরকম সবকিছু নিজের ভেতরের চাদরে মুড়িয়ে রাখে।”
মেহবিন হাসলো কাল যে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছে সে খবর ও নেওয়া হয়ে গেছে তার কাব্যের। কালকের দিনটা দুজনের জন্যই স্পেশাল। বিয়ে হওয়ার পর থেকে এই দিনটা তারা তাদের নিজেদের মতো কাটায়। এমন কি যখন বিদেশে ছিল তখন ও তারা দুই জায়গা থেকে ভিডিও কলে সারাদিন থেকে নিজেদের মতো সময় কাটাতো। মেহবিন হেসে লিখলো,,
“যান কালকে বিহঙ্গিনী তার কাব্যের নামে দিনটা লিখে দিল।”
ওপাশ থেকে খুশির ইমুজি আসলো। তার সাথে আরেকটা কমেন্ট আসলো,,
“তার খেয়াল যখন আসে মনে। জানি না কেমন লাগে অদ্ভুত সুন্দর যন্ত্রনা হয় তবে এইটুকু বুঝি অদ্ভুত খুশিও অনুভব হয়।
বিহঙ্গিনীর প্রতিটা সাক্ষাৎ যেন,
কাব্যের মনে ঈদ বয়ে আনে!
সে কি জানে বিহঙ্গিনীর কাব্য তার জন্য কতটা
অপেক্ষা নিয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতো
মুখিয়ে থাকে বিহঙ্গিনীর পথের পানে!
এটুকু দেখে মেহবিন হেঁসে লিখলো,,
“অপেক্ষাটাও এক অদ্ভুত ভয়ঙ্কর আনন্দ দেয় কাব্য। যখন এই অপেক্ষা শেষ হবে তখন এই অপেক্ষার আনন্দ টা আর পাওয়া যাবে না।”
তখন ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,
“তার যত্ন আর অপেক্ষা এতটা সুন্দর!
না জানি তার প্রাপ্তি ও ভালোবাসা কতোটা সুন্দর।
সবশেষে কথা দিয়ে কথা রাখা ব্যক্তিগত মানুষটা ভয়ঙ্কর সুন্দর।”
মেহবিন হাসলো কিন্তু আর কিছু লিখলো না। সে খুশিমনে শুয়ে পড়লো। কে জানে আজ অপেক্ষায় ঘুম হবে কি না।
________________
পরের দিন সকাল বেলা শেখ পরিবারের সবাই ব্রেকফাস্ট করছিল। পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সেদিনের পর দুদিন পার হয়ে গেছে। শেখ শাহেনশাহ কে বাড়ি আনা হয়েছে তার জন্য একটা নার্স রাখা হয়েছে। হুট করে মিশু বলল,,
“আমি আমাদের আরেক মামাবাড়িতে যাবো বাবা?”
মিশুর কথায় সবাই ওর দিকে তাকালো। শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘হুট করে সেখানে যাওয়ার কথা তোমার মাথায় এলো কিভাবে? তাছাড়া ওনারা তো আরবাজের অনুষ্ঠানে আসে নি তোমার পরিচয় ও নেই। যেতে হবে না।
“না আমি যাবো। আর হ্যা আমি আমাদের মামাবাড়িতে বেড়াতে যাবো। যেয়ে তাদের জিজ্ঞেস করবো তারা কেন বাজপাখির অনুষ্ঠানে এলো না।”
“না মিশু? তুমি তো তাদের চেনো না তাই না।”
“আমি না চিনলাম বাজপাখি তো চেনে। ও দিয়ে আসবে। আমি মামাবাড়িতে যাবো ব্যস আমার এই বাড়িতে আর থাকতে ভালো লাগছে না।”
আরিফা জামান বললেন,,
“অন্য কোথাও যাও ওখানেই কেন যেতে হবে।”
“না আমি আমার মামাবাড়িতেই যাবো। আমার কতোদিনের ইচ্ছে আমি মামা বাড়িতে যাবো। তাছাড়া জসীমউদ্দীন এর কবিতা আছে না,,
আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই
তাই আমিও মামাবাড়ি যাবো বাবা। বাবা তুমি ব্যবস্থা করো?”
শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘আচ্ছা ঠিক আছে আরবাজ তোমায় দিয়ে আসবে।”
তখন আরিফা জামান বললেন,,
‘মিশুর কি দরকার ওখানে যাওয়ার তাছাড়া মিশুর অবস্থাও তো বুঝতে হবে ও কি সামলে থাকতে পারবে। তাছাড়া এতো বছর ধরে যোগাযোগ নেই। যতোই তাদের ভাগনি হোক ওর অবুঝতা কি তারা সহজে নিতে পারবে।”
“ওখানে আরবাজ ও যাবে দু’জনেই থাকবে। আমি মিশুকে একা ছাড়ছি না তো। দু’দিন থেকেই চলে আসবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
মিশু তো মামার বাড়ি যাবে শুনে ইয়াহু বলে উঠলো। তখন ওদের বাড়ির সামনে এসে কেউ আরবাজ কে ডাকতে লাগলো তার পার্সেল এসেছে। আরবাজের খাওয়া শেষ তাই সে উঠে সেদিকে গেল। পার্সেল কালেক্ট করলো।একটা বক্স আছে আরবাজ বক্সটা দেখে অবাক হলো। সবাই জিজ্ঞেস করতেই ও বলল জানে না। ও ঘরে চলে গেল পেছন পেছন মিশুও গেল। বক্সটা খুলতেই কতো গুলো সাদা গোলাপ দেখতে পেল। এই ফুলটা ওর পছন্দের। ফুল দেখে ওর মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। ও ফুল গুলো উঠিয়ে বিছানায় রাখলো। তারপর কতো গুলো চকলেট পেল তার ওপরে একটা চিঠি। ও চিঠিটা খুলতেই ওপরের সম্মধোন দেখে অবাক হয়ে গেল তবে খুশিও হয়ে গেল। ও পরতে লাগলো,,
প্রিয় চকলেট বয়,,
কি অবাক হয়েছো তাই না। তুমি বাড়ি থেকে বের হলে আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতে এই জন্য তোমায় তখন চকলেট বয় বলে ডাকতাম। ছোটবেলায় তোমার সাথে আমার ডিল হয়েছিল কোথাও গেলে আমার জন্য চকলেট আনতে হবে। আর তুমি আনতেও তাই। তোমাকে কখনো বাজপাখি কখনো চকলেট বয় ডাকতাম। কখনো ভাইয়া বলে ডাকা হয় নি। কারন তুমি আমার বড় ভাইয়া এটা কখনো ফিল হয় নি। সবসময় মনে হতো তুমি আমার বন্ধু।
এইটুকু পরতেই আরবাজের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। তবুও মুখে অদ্ভুত হাঁসি। ও চোখ মুছে আবার পরতে নিল,,
সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার কথায়। কারন তুমি তো আমার বন্ধু ছিলে আমায় বিশ্বাস করতে তাহলে সেদিন কি হয়েছিল তোমার। তুমি আমার কোথায় আঘাত করেছিলে তুমি বুঝতেই পারোনি। তোমায় আমি কঠিন শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরেরদিন যখন বললে তুমি আরিফা জামান আর আরিফ জামানের কথা শুনে আমায় ওগুলো বলেছো তখন ভাবলাম তোমায় যেন তেন শাস্তি দিলে হবে না। তোমাকে বোঝাতে হবে অন্যের কথায় নিজের বোনকে কষ্ট দেওয়ার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এমনিতেও অনুশোচনায় দগ্ধ ছিলে তাতে আরেকটু ঘি ঢেলে তোমার কষ্টটা বাড়ানোর জন্য তোমাকে আমার কথা জানালাম নিজের চোখে নিজেকে নিচু করে দিলাম তুমি নিজের জন্য শাস্তি চাইছিলে অথচ আমি তোমায় ক্ষমা করে দিলাম যা তোমাকে কষ্টের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আশা করি এই কয়েকদিন নিজের শাস্তিটাকে ইনজয় করেছো। তোমার এই ছোট্ট বোনটা তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছে মন থেকে এখন আর নিজের চোখে নিচু হতে হবে না। তোমার এই কয়েকদিনেই শাস্তিই তোমার জন্য যথেষ্ট। তোমার ছোট্ট বোনটা তোমার থেকে আর মুখ ফিরিয়ে নেবে না। আর হ্যা মিশু মনি মামা বাড়িতে যাচ্ছে আমিও যাবো তবে আজ না আজকের দিনটা নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার। কাল যাবো দেখা হবে আর হ্যা আমার জন্য চকলেট নিতে কিন্তু ভুলো না। আমার অনেক চকলেট চাই কিন্তু।
অতঃপর ভালোবাসি ভাইয়া আমার বাজপাখি ও চকলেট বয়।
~ ইতি তোমার আদুরে ছোট্ট বোনটা
আরবাজের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। মুখে তৃপ্তির হাঁসি ও চিঠিটাতে চুমু খেয়ে বলল,,
“আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি ফুল। আমি তোর জন্য অনেক অনেক চকলেট নিয়ে যাবো। আর কোনদিন তোকে কোন অভিযোগ করার সুযোগ দেব না। আমার ছোট্ট বোনটা খুব ভালোবাসি । ভাইয়া খুব ভালোবাসে তোকে ফুল।”
মিশু আরবাজের কাঁধে হাত রাখলো। ও মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“মিশু ফুল আমায় ক্ষমা দিয়েছে একেবারে। জানিস ও চিঠি, চকলেট আর ফুল পাঠিয়েছে। ও লিখেছে ও আমায় ভালোবাসে ওর জন্য যেন আমি চকলেট নিয়ে যাই মামা বাড়ি।”
আরবাজ বাচ্চাদের মতো মিশুকে বলতে লাগলো। মিশু হেঁসে বলল,
“মামার বাড়ি যাওয়ার প্ল্যান তো ফুলেরই বাজপাখি?”
আরবাজ মিশুর দিকে তাকালো। আর বলল,
“ফুলের?”
“হুম!”
আরবাজ মিশুর দিকে তাকালো তারপর চোখের পানি মুছে বলল,,
‘মিশু তুই কি ঠিক হয়ে গেছিস? তোকে আমি আগের মিশুর মতো দেখতে পাচ্ছি।”
মিশু হাসলো তা দেখে আরবাজ বুঝলো ও যা ভাবছে তাই। ও বলল,,
“তারমানে সত্যি সুস্থ মিশুমনি ব্যাক!”
মিশু হেঁসে মাথা নাড়ালো। আরবাজ খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরলো। ও চিৎকার করে কিছু বলতে চাচ্ছিল তখন ও আরবাজের মুখে হাত দিয়ে চুপ করালো। আর বলল,
“বাজপাখি সরষের মধ্যে ভুত আছে । তাই এখনি সবাইকে জানালে চলবে না। ”
“মানে?”
“মানে সব পরে হবে? শুধু শুনে রাখ অনুকে মেরে ফেলার পেছনে আমাকে পাগল করার পেছনে এবং মায়ের মৃত্যুর পেছনে এই বাড়িরই কেউ আছে। তবে কে আছে সেটা সিওর না।”
“তুই কি বলছিস এসব?”
“হুম এখন বাদ দাও।”
“আচ্ছা তবে তুই সুস্থ হলি কিভাবে?”
“ফুল আমাকে সুস্থ করার ওষুধ দিতো। যার কারনে আমি অনেকটাই ভালো হয়ে উঠছিলাম। তারপর ফুলের সেই এক্সিডেন্ট এর রক্ত দেখে আমার পুরোনো জিনিস মনে পরতে থাকে । সেদিনই সব ক্লিয়ার হয়ে যায় আমার সব মনে পরে আর আমি সুস্থ ও হয়ে যাই।তবে আমি কাউকে বলি নি। তবে ফুল জানে আমি সুস্থ। আর কয়েকদিন আগে বাবা জেনেছে আমি সুস্থ।”
“এতো দিন ধরে তুই সুস্থ আর আমাকে বলিস নি।”
‘আরে চুপ থাক দেয়ালেরও কান থাকে। ফুল মামাবাড়ি যেতে বলেছে ওখান থেকে কি যেন আমাদের দুজনকে বলবে।”
“আচ্ছা। তাহলে গেট রেডি গোয়িং টু মামাবাড়ি।”
আরবাজের কথায় মিশু হেঁসে উঠল। আর বলল,,
“এখান থেকে অর্ধেক চকলেট আমার !”
বলেই মিশু চকলেট এর প্যাকেট টা নিল। তা দেখে আরবাজ বলল,,
“মোটেই না এগুলো আমার বোন আমায় দিয়েছে তাই এই সবগুলো আমার।”
‘দেব না।”
বলেই মিশু দৌড় পেছন পেছন আরবাজ ও দৌড়। এতোক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শেখ শাহনাওয়াজ ছেলেমেয়ের কথা শুনছিল। মুখে তার তৃপ্তির হাঁসি কতো বছর পর আরবাজ আর মিশু আগের মতো দৌড়াদৌড়ি করছে যা শেখ শাহনাওয়াজ কে প্রশান্তি দিচ্ছে। এক পর্যায়ে আরবাজ মিশুকে ধরে ফেলল আর দু’জনেই খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। সবকিছু রুমের ভেতর হওয়ায় কেউ কিছু শুনলো না আর দেখলো না।
______________
মেহবিন নয়টার দিকে গোসল সেড়ে ফুল হাতা সাদা ব্লাউজের সাথে একটা নীল রঙের শাড়ি পড়লো। সে আয়নার সামনে বসে হিজাব বাঁধবে তখনি আগমন ঘটলো আমাদের শেখ তাজেলের মেহবিন কে শাড়িতে দেখে তাজেল বলল,,
“ডাক্তার তুমি দেহি শাড়িও পড়? আইজ প্রথম দেখলাম।”
তাজেলের কথায় মেহবিন ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘নেত্রী তুমি এখন স্কুল ড্রেস পরে এই সময়। স্কুলে যাবে না?”
“যামু তো তার আগে এই দুধটুকু ফিরিজে রাইহা দেও।”
“এটা রাখতেই এসেছো?”
“হ! তা কোনোহানে যাইবা নাকি?
“হুম যাবো।”
“পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালার সাথে ঘুরতে যাবা বুঝি?”
কথাটা শুনে মেহবিন তাজেলের দিকে তাকালো। তা দেখে তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“ঐ যে দেহো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আর নীল কালারের পাঞ্জাবি পইরা আসতেছে। মুখে আবার মাস্ক লাগাইছে তাও চিনছি দেহো চাইয়া।”
মেহবিন গেটের দিকে তাকালো মুখরই আসছে নীল রঙের পাঞ্জাবি সাদা রঙের পায়জামা মুখে কালো মাস্ক। হাতে গোল্ডেন ঘড়ি দুর থেকেও মুখরকে অনেক সুন্দর লাগছে। তাজেল বলল,,
“দেহো ঐডাই তো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তাই না।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“হুম!”
ততক্ষণে মুখর ঢুকলো বাড়িতে তাজেলকে দেখেই মুখর বলল,,
“কি ব্যাপার নেত্রী স্কুলে যাও নি?”
তাজেল হেঁসে বলল,,
‘না আজ ভাবতেছি ডাক্তারের লগে ঘুরতে যামু। দেহো ডাক্তার রেডি ও হইতেছে।”
তাজেলের কথায় মুখর থমকে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। এদিকে মেহবিন তাজেলের কথা শুনে হেঁসে ফেললো। মুখর নিজেকে সামলে বলল,,
‘না আজ আমার সাথে তোমার ডাক্তার ঘুরতে যাবে।”
‘না আমার সাতে যাইবো। আমি আইসা খাড়াই রইছি আগে থাকতে তুমি দেহো না। তুমি পরে আইছো তাই তোমার সাতে ঘুরতে যাইবো না। আমার সাতে যাইবো।”
‘না তোমার ডাক্তার আমার সাথে যাবে। আমাদের আগেই কথা হয়েছে।”
“তো কি হইছে? ডাক্তার আমার সাতে যাইবো তাইনা ডাক্তার কও তুমি।”
মেহবিন এবার জোরেই হেঁসে উঠল। তা দেখে তাজেল ও হেঁসে উঠল। তখন মুখর বলল,,
“এই তোমরা দুজন হাসতেছো কেন?”
মেহবিন বলল,,
‘পাঞ্জাবিওয়ালা আপনিও না। দেখছেন তাজেল স্কুল ড্রেস পরে আছে। তবুও ওর কথা শুনে ওর সাথে ঝগড়া করতে লেগে গেলেন।আপনি পারেন ও বটে।”
তখন তাজেল বলল,,
‘ডাক্তার তোমার জামাই বুকদা।”
মুখর মুখ ঘুরিয়ে বলল,,
‘মোটেও আমি বোকা নই। আমি আগে থেকেই জানতাম তুমি যাবা না তবুও একটু মজা করলাম তাই।”
“হ এহন মজার কথা বইলা নিজের বুকদামি ঢাকতেছো?”
‘না আমি সত্যি কথাই বলছি।”
“হইছে হইছে শেখ তাজেল এহন আর ছোট নাই পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা। শেখ তাজেল এহন বড় হইছে আর সে স্কুলেও যায় বুঝছো?”
‘হুম বুঝলাম। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তুমি স্কুলে যাবে না।”
“হ যাইতেছি আমারে খেদানের জন্যে আবার আমার স্কুলের তাড়া দেহায়তেছো?”
‘আমি কোথায় তোমাকে তাড়াতে চাইলাম। আমি তো তোমার স্কুলে দেরি হবে বলে বললাম।
“আমি সব বুজি আমি শেখ
এইটুকু বলার পর মুখর ওর সাথে তাল মিলিয়ে বলল,,
“হ হ তুমি শেখ তাজেল আর ছোট নাই।”
মেহবিন কি বলবে এদের দু’জনের কথা শুনে হাঁসিই থামছে না। যদিও এ হাসির শব্দ নেই। তাজেল আর মুখর ও এবার হাসলো। তাজেল মেহবিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,
“স্কুলে গেলাম ডাক্তার। আল্লাহ হাফেজ!”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“আল্লাহ হাফেজ!”
‘আর পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা ডাক্তাররে দেইহা রাইহো কেউ জানি আবার ডাক্তাররে নিয়া যায় না। আইজক্যা ডাক্তাররে শাড়িতে মেলা সুন্দর লাগতেছে।”
তখন মুখর বলল,,
“তা আর বলতে নেত্রীর ডাক্তার তাকে না দেখলে চলবে। যদি কিছু হয় তাহলে তো ডাক্তারের নেত্রী আমার গর্দান নেবে।”
‘হ মনে জানি থাহে আমি গেলাম। আল্লাহ হাফেজ আর সাবধানে যাইয়ো।”
‘হুম তবে নেত্রী আজ কিন্তু তোমার ডাক্তার বাড়ি ফিরবে না।”
মুখরের কথায় মেহবিন ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তখন তাজেল বলল,,
“কেন তোমার সাতে থাকবো?”
“হুম আমার সাথে থাকবে।”
“আইচ্ছা।”
তাজেল হেঁসে চলে গেল। মুখর তাজেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘তুমি খুব লাকি বিহঙ্গিনী যে তোমার জীবনে তোমার নেত্রী আছে।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“হুম তা তো বটেই।”
“আমিও খুব লাকি যে আমার জীবনে বিহঙ্গিনীর মতো উত্তম জীবনসঙ্গী আছে।”
মেহবিন হাসলো কিছু বললো না। মুখর দেখলো মেহবিনের কুচি ঠিক নেই। তাই ও ওর সামনে বসে ওর কুঁচি ধরলো। মেহবিন হেঁসে ওর কুঁচি ঠিক করলো। তারপর মুখর সাদা রঙের হিজাবের সাথে সাদা রঙের নিকাব বেঁধে দিল। । সম্পুর্ন রেডি হওয়া শেষে মুখর মেহবিনের গালে হাত রেখে বলল,,
‘মাশাআল্লাহ মনে হচ্ছে এক টুকরো নীল আকাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে।”
বলেই কপালে একটা প্রেমের পরশ একে দিল। মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘শুকরিয়া জনাব। আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে কাব্য মাশাআল্লাহ!”
“হুম শুকরিয়া তো এখন যাওয়া যাক! তা প্রথমে কোথায় যাবে?
‘আজকের দিনটা আপনার নামে আপনি যেথায় ইচ্ছা সেথায় যান।’
মুখর হাসলো তারপর মেহবিনের হাত ধরে সব তালা দিয়ে বের হলো। এখন ওদের একসাথে দেখলেও সমস্যা নেই সবাই জানে সে বিবাহিত। পাকা রাস্তায় আসতেই দেখলো গাড়ি দাঁড় করানো। মুখর গাড়ির দরজা মেহবিন কে বসতে বলল। মেহবিন বসলো এরপর মুখর নিজেও উঠলো। কিন্তু মুখর গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে না দেখে মেহবিন বলল,,
“কি হলো?”
“এক মিনিট!”
বলেই মুখর পেছনের সিট থেকে দু’টো সাদা ক্যাপ বের করলো। সোনালী রঙের KABBER BIHONGGINI লেখা ক্যাপটা মেহবিনের মাথায় পড়িয়ে দিল। আর BIHONGGINIR KABBO লেখা ক্যাপটা মেহবিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে পরিয়ে দিতে বললো। মেহবিন হেঁসে পরিয়ে দিল। মাঝে মাঝে এর বাচ্চামো দেখে মেহবিন হাসে। অতঃপর মুখর গাড়ি স্টার্ট করলো। ঘন্টা দুয়েক পর মুখর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের সামনে গাড়ি দাঁড় করালো। তা দেখে মেহবিন হেঁসে বলল,,
“এই প্রথম কাউকে দেখলাম যে এরকম একটা দিনে সেজেগুজে হাসপাতাল ঘুরতে আসে।”
মুখর হেঁসে বলল,,
‘এইখানেই তো কাব্য তার বিহঙ্গিনীর দেখা পেয়েছিল। তাই এখানেই আসলো।”
মুখর বের হলো তারপর মেহবিনের পাশের দরজা খুলে হাত বাড়ালো মেহবিন মুচকি হেসে মুখরের হাত ধরে নামলো। বেশ কয়েকবছর পর মেহবিন এখানে এলো। মুখর ওর হাত ধরে ভেতরে ঢুকলো। সবাই আড়চোখে ওদের দেখছে তাতে এদের দুজনের কিছু যায় আসে না।মুখর একটা জায়গায় থেমে বলল,,
“ঠিক এই যায়গাতেই মুখর শাহরিয়ার কাউকে দেখে থমকে গিয়েছিল।জানো দাদিজানের ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল রাস্তায় একটা মেয়ে তাকে হাসপাতালে আনে। আমিও খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসি। তাড়াতাড়ি করে আসতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। মেয়েটার হাতে কিছু জিনিসপত্র ছিল ওগুলো পরে যায়। আমি সরি বলে উঠিয়ে দিই মেয়েটাও ইটস্ ওকে বলে। তার এই সহজতা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি তার দিকে তাকাই দেখি এক বোরকা হিজাব পড়া মেয়ে। আমি তাড়াতাড়ি করে দাদিজানের কাছে যাই। তার কিছুক্ষণ পর দেখি মেয়েটা দাদিজানের কেবিনে এলো পরে জানতে পারি সেই যে দাদিজান কে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। তাকে ধন্যবাদ জানাবো এমন সময় তার ফোন আসে। সে বলে তার যেতে হবে বলেই সে বাইরে আসে আমিও পেছনে বের হই পরে দেখি সে দৌড়ে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম হয়তো কোন অসুবিধায় পরেছে আমিও গেলাম। দেখলাম সে ঢাকা মেডিকেল ক্যাম্পাসে ঢুকছে আমিও ঢুকলাম সে সোজা কলেজের স্টোর রুমের দিকে গেল। মেয়েটা গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো তখন একটা মেয়ে কোন রকমে বের হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটা সেই মেয়েটাকে শান্ত করলো কি যেন জিজ্ঞেস করলো তারপর মেয়েটার হাত ধরে কোথাও নিয়ে যেতে লাগলো। সোজা থামলো একটা ছেলের সামনে মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো এই ছেলেটায় কি না। মেয়েটা ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো। মেয়েটা কোনকিছু না ভেবে ছেলেটাকে থাপ্পড় মারলো। ছেলেটা মারতে এলেই মেয়েটা ঘুষি মেরে দিল। মুহুর্তেই সেখানে ছোটখাটো একটা জটলা বেঁধে গেল। মেয়েটা ছেলেটাকে মারতে লাগলো তখন কতো গুলো মেয়ে এসে ঐ মেয়েটাকে ছাড়ালো। পরে জানলাম ঐ ছেলেটা তার রুম মেটের মানে ঐ মেয়েটা যে স্টোর রুমে ছিল তার সাথে মিসবিহেব করেছিল। আর আমি মেয়েটার সাহসিকতা ও সহজতায় আটকে গিয়েছিলাম। তুমি জানো সেই মেয়েটা কে?
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“না!”
তখন মুখর বলল,,
“সেই মেয়েটা তুমি বিহঙ্গিনী?”
‘তাই বুঝি আপনি না বললে তো জানতেই পারতাম না।”
“মজা করছো?”
‘না তো!”
“তুমিও না!”
“তা এখন কি এখানেই থাকবেন নাকি যাবেন?”
“হুম চলো।”
মুখর আর মেহবিন ঢাকা মেডিকেল ক্যাম্পাস ঘুরলো। তারপর ওখানে থাকা দোকান থেকে ফুচকা খেল। ফুচকা খাওয়ার সময় মুখর মেহবিনের নিকাব ধরে রেখেছিল। তা দেখে কতোজনে মুচকি মুচকি হাসছিল। দুপুর হয়ে যাওয়াতে মেহবিন আর মুখর একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো আলুওয়ালা কাচ্চি খেতে। মুখর আজকেও মেহবিন কে খায়িয়ে দিল আজ অবশ্য মেহবিন মুখরকেও খায়িয়ে দিল। এরপর ওরা একটা ফুলের দোকানের সামনে গেল । অনেকগুলো অর্কিড আর গোলাপ ফুল কিনলো একটা বেলি ফুলের মালাও কিনলো। বেলি ফুলের মালা হাতে জড়িয়ে দিল মুখর। আর ফুলগুলো দিয়ে বলল,,
“এ কয়েকমাসে আমাদের অনেকবার দেখা হয়েছে কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পরে ফুল দেওয়া হয় নি। আজকেও দেওয়া হয়নি। তাই এখন সব সুদে আসলে দিয়ে দিলাম।”
ফুলগুলো এতোই বেশি ছিল যে মেহবিনের হাতে জায়গা হলো না। ও পেটের সাথে মিশিয়ে দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো। তখন পাশেই একটা কাপল ছিল মেয়েটা ছেলেটাকে গুতো মেরে দেখালো যে এভাবে ভালোবাসতে হয়। বেচারার আর কি সে একবার মানিব্যাগের দিকে তাকালো আবার মেয়েটার দিকে। মেয়েটার দিকে ছেলেটা হেঁসে বলল,,
‘আপাতত এই একমুঠো ফুলেই সন্তুষ্ট হও প্রিয়তমা। একটু ধৈর্য্য ধর যখন তোমার প্রিয়তমের অনেক টাকা হবে। তখন তোমার প্রিয়তম এর থেকেও বেশি খুশি তোমায় কিনে দেবে প্রমিস।”
ছেলেটার কথায় মেয়েটা হেঁসে ফেলল আর বলল,,
“আমি কি বলেছি কিনে দিতে আমি তো বলছিলাম তাদের ভালোবাসা দেখতে। তোমার এই একমুঠো ফূলেই আমি সন্তুষ্ট । আমি জানি তো আমার প্রিয়তমের যখন অনেক টাকা হবে তখন সে আমায় অনেক খুশি কিনে দেবে।”
এই সবকিছুই মেহবিন আর মুখর শুনলো। মুখর হেঁসে আরো কতগুলো ফুল কিনলো আর মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
‘এই ফুলগুলো সুন্দর চিন্তা রাখার মানুষটার জন্য।”
মেয়েটা ছেলেটার দিকে তাকালো ছেলেটা হেঁসে মাথা নাড়ালো। মেয়েটা তার দেখে ফুলগুলো নিয়ে ধন্যবাদ জানালো। মেহবিন হাসলো তারপর এগিয়ে গিয়ে ফুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে বলল,,
‘এগুলো ধরুন। এখন আমি গাড়ি ড্রাইভ করবো।”
বলেই মেহবিন চলে এলো তখন মেয়েটা বলল,,
“আপু মনে হয় রাগ করলো ভাইয়া? তাই চলে গেল এভাবে?
মুখর হেঁসে বলল,,
“না আপু সে রাগে নি বরং খুশি হয়েছে কারন এই ফুলের জন্য আপনার মুখে হাঁসি ফুটেছে। সে ফুলগুলো আমায় দিল কারন তার ক্যারি করতে কষ্ট হচ্ছিল আর গাড়ি সে চালাবে কারন আমি আজ অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলাম।”
“না ভাইয়া আপু জেলাস থেকেই এরকম করেছে। আমিও একটা মেয়ে তাই আমি বুঝি।’
তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,
“যে মানুষটার সমস্তটা জুড়ে আমি । তার কাউকে কয়েকটা ফুল দেওয়া তে কি জেলাস হবো নাকি। মানুষটাই যেখানে আমার সেখানে জেলাসি রেখে সম্পর্কের কেন অবনতি ঘটাবো বলুন। সবথেকে বড় কথা আমরা একে অপরকে আমি বিশ্বাস করি। এখন যদি আমার সবগুলো ফুল ভাইয়াকে দিয়ে দিই তবুও সে কিছুই করবে না। বরং সে হেঁসে আমায় দোকান থেকে আরো ফুল কিনে দেবে। কাব্য আসুন আমরা আমাদের যেতে হবে।”
মেহবিনের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,
“কাব্যের বিহঙ্গিনীর আলাদা বিশেষত্ব আছে আপু। সবার মতো তাকে ভাবলে শূন্য হাতে ফিরতে হবে। যাই হোক আসছি।”
ছেলেটা হেঁসে বলল,,
“আপনার নামকি কাব্য?”
“না সে আমায় কাব্য বলে ডাকে। ”
মুখর ওখান থেকে চলে এলো। গাড়িতে এসে বলল,,
‘ফুলগুলো ছেলেটাকে দিয়ে আসলেই পারতে তাহলে!”
“দিলে আপনি খুশি হতেন বুঝি?”
‘হতাম তো আমার বউ হয়ে অন্য একজন কে ফুল দিচ্ছো খুশি হতামই তো। আমি তো আর তুমি নই আমার জেলাসি আছে।”
‘তাহলে ওখানে যে ডায়লগ দিলাম সেটা ভুল হয়ে গেল।”
“আরে তুমি সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছো? আমি তো মজা করছিলাম।”
“হুম হুম বুঝি আমি। আমি আর শেখ তাজেলের মতো আর ছোট নাই।”
কথাটা শুনে মুখর ওর দিকে তাকালো ওর দিকে তাকাতেই মেহবিন ও তাকালো আর দুজন একসাথেই হেঁসে ফেলল। বাইরে থেকে ঐ ছেলেমেয়ে দুটো দেখলো। যদিও ওদের কারোরই মুখ দেখেনি তারা তবে উপলব্ধি করেছে অনেক সুন্দর চিন্তাধারার মানুষ তারা। মেহবিন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। বিকেল হয়ে এসেছে ওরা ফুটপাতে নামলো হাতে হাত রেখে অনেকক্ষণ ঘুরলো। তারপর একটা শুনশান লেকে ওদের গাড়ি থামলো। এটা একটা নির্জন এলাকা মানুষ জন নেই। আর এই লেকে বেঞ্চ ও নেই। মেহবিন নেমে বড় গাছটার নিচে ঘাসের ওপর বসলো। মুখর ও বসলো। মুখর মেহবিনকে বলল নিকাব খুলে ফেলতে ও নিকাব খুলে ফেলল। মুখর হেঁসে মেহবিনের হাতে হাত রাখলো। মেহবিন মুখরের কাঁধে মাথা রেখে বিকেলটা অনুভব করতে লাগলো। সন্ধ্যে হয়ে এলো। আজ মেহবিন কিছুই বলছে না যে ওদের ফিরতে হবে।কারন আজকের দিনটা মুখরের নামে। সন্ধ্যা হতেই মুখর মেহবিন কে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিল। তারপর গাড়িতে উঠলো। তারা মহুয়াপুরে ফিরে গেল তবে মেহবিনের বাড়িতে নয়। মুখরের বাড়িতে ওরা বাড়িতে পৌঁছালে মুখর একটা লাল শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলল ফ্রেশ হয়ে পরে আসতে। মেহবিন হেঁসে শাড়িটা নিয়ে চলে গেল। ও শাড়িটা পরতে বেরুতেই এদিকে মুখর ক্যান্ডেলাইট ডিনার এরেন্জ করে ফেলল।টেবিলে ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে খাবার সার্ভ করলো নিজেও ফ্রেস হয়ে একটা সাদা পাঞ্জাবি পরে এলো। মেহবিন রুম থেকে বের হতেই দেখলো অন্ধকার একটু আগাতেই দেখলো মুখর ক্যান্ডেল হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে। মুখর মেহবিনের হাত ধরে টেবিলে বসিয়ে দিল। ওখানে যেতেই মেহবিন অবাক হয়ে গেল টেবিলটা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো সেই সাথে ক্যান্ডেল জ্বালানো। মুখর হেঁসে বলল,,
“ফর মাই বিহুঙ্গিনী।”
“ক্যান্ডেলাইট ডিনার ইন হোম। ডেকোরেড বাই মুখর শাহরিয়ার।”
“অনলি ফর ইউ।”
মেহবিন হাসলো তখন মুখর বলল,,
“লাল শাড়িতে মোমবাতির আলোতে অদ্ভূত সৌন্দর্য গ্ৰাস করছে তোমায় বিহঙ্গিনী।”
‘শুকরিয়া এবং সাদা পাঞ্জাবিতে মোমবাতির আলোতে আপনাকেও দারুন লাগছে।”
“হুম শুকরিয়া। তো খাওয়া শুরু করা যাক।’
ওরা দুজনে একসাথে খাবার খেল। মুখর সব কিচেনে রেখে এলো। মুখর হুট করেই মেহবিনকে কোলে তুলে নিল। আর অন্য একটা রুমে নিয়ে গেল। সেই রুমটাও আজ মোমবাতি দিয়ে সাজানো। ড্রেসিং টেবিলে ফুল রাখা। মুখর বিছানায় নিয়ে বসালো। তারপর মেহবিনের বরাবর বসে তারপর মেহবিনের চোখে চোখ রেখে বলল,,
“তুমি যদি আকাশ হও,
আমি না হয় মেঘ হয়ে তোমাতেই বিচরণ করবো।
তুমি যদি চাঁদ হও,
আমি না হয় তোমার জোসনা হয়ে আলো ছড়াবো।
তুমি যদি মেঘ হও,
আমি না হয় তোমার বৃষ্টি হয়ে ঝরবো।
তুমি যদি ঝর্ণা হও,
আমি না হয় তোমার ধারা হয়ে বয়ে চলবো।
তুমি যদি সাগর হও,
আমি না হয় তোমার ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়বো।
তুমি যদি পাহাড় হও,
আমি না হয় আরোহী হয়ে তোমাকে জয় করবো।
তুমি যদি ফুল হও,
আমি না হয় ভ্রমর হয়ে গুনগুনিয়ে তোমায় গান শোনাবো।
তুমি যাই হও না কেন,
আমি শুধু তোমারই হবো।
~ শাকিল হোসেন
(কাব্যের বিহঙ্গিনী গল্পের একজন পাঠক বিহঙ্গিনীর জন্য লিখে পাঠিয়েছেন।)
কবিতাটা শুনে মেহবিন মুগ্ধ হয়ে গেল। ও কিছু বলবে তার আগে মুখর বলল,,
“আজ যদি বিহঙ্গিনীকে রাতটাও তার কাব্যের নামে করে দিতে বলি তাহলে কি সে করবে?”
মেহবিন হেঁসে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,
“যদি না বলি তাহলে কি সে মানবে?”
মুখর হেঁসে বলল,,
“জানি সে না বলবে না। তাই আমার ও মানা না মানার কোন দায় নেই।
মুখর মেহবিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,
” দিনশেষে আজ বিহঙ্গিনীর কাব্যের ইচ্ছে, বিহঙ্গিনী তার কাব্যের ভালবাসার রঙ দ্বারা রঙিন হোক।”
মেহবিন ও হেঁসে ফিসফিস করে বলল,,
“অতঃপর বিহঙ্গিনীর কাব্যের তার ইচ্ছের পূর্নতা পাক।”
~চলবে,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
সকালে মুখের ওপর হালকা পানি পড়তেই চোখ খুললো মুখর। চোখ খুলে তার বিহঙ্গিনীকে কালো শাড়িতে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল সে। চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। আর তার বিহঙ্গিনী এক হাত দিয়ে চুল মুচছে ইশশ কি নিদারুন দৃশ্য। চুল মুছতে মুছতে মেহবিনের নজর পড়লো মুখরের দিকে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে মুখর। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“উঠে পরেছেন আমি এখনি আপনাকে ডাকতাম!
মুখর হেঁসে বলল,,
“না ডেকেই ভালো করেছো । তুমি ডাকলে কি আর এই চুল মুছার নিদারুণ দৃশ্য দেখতে পেতাম। আবার ডাকলেও আলাদা এক দৃশ্য হতো চোখ খুলতেই তোমার মুখটা একদম কাছ থেকে দেখতে পেতাম। দুটোই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তবে এর আলাদা আলাদা বিশেষত্ব আছে। ”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“কি সকাল সকাল শুরু করে দিলেন তো? শুনুন পছন্দের মানুষটার সবকিছুই সুন্দর মনোমুগ্ধকর লাগে আমাদের। শুধু তার সঙ্গটা প্রয়োজন ব্যস।”
“তা আমার এই ঘুম থেকে উঠার দৃশ্যটা কি তোমার মনোমুগ্ধকর লাগছে বিহঙ্গিনী?”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“হুম অনেক হয়েছে এবার ফরজ গোসলটা সেরে ফেলুন। সূর্য মামা উঠে পরেছে বেশ খানিকটা আগেই । ফজরের নামাজ কাযা হয়ে গেছে।”
“কথা ঘুরাচ্ছো তুমি।”
“হ্যা ঘুরাচ্ছি এই যে টাওয়াল যান গোসলে যান। আমি অপেক্ষা করছি একসাথে ফজরের কাযা সালাত আদায় করবো।”
“নামাজ পরতে হবে বলে এই যাত্রায় বেঁচে গেলে।”
বলেই মুখর মেহবিনের থেকে টাওয়াল নিয়ে চলে গেল। মেহবিন আয়নায় নিজেকে দেখলো। কাল ওদের দুজনের ভালোবাসাময় একটা রাত গেছে। এতক্ষন যাবৎ নিজেকে অনেকটাই সামলে রেখেছে মেহবিন কিন্তু মুলত তার লজ্জা লাগছে মুখরের দিকে তাকাতে। মুখর গোসল শেষ করে পায়জামা পাঞ্জাবি পরে আসতেই দেখলো মেহবিন জায়নামাজ বিছিয়ে হাতে মুখরের টুপি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখর গিয়ে মুচকি হেঁসে মেহবিনের কপালে ছোট্ট প্রেমের পরশ দিল তারপর হাত থেকে টুপি নিয়ে নামাজে দাঁড়ালো। দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করে নিল । মেহবিন রান্না ঘরে গেল রান্না করবে বলে। কাপড়ে একটু সমস্যা হচ্ছে দেখে ও আঁচলটা কোমরে গুঁজে নিল। চুল ভেজা থাকলেও খোঁপা করে নিল। এই দৃশ্যটা মুখর দেখলো আর এই দৃশ্যটা ওর অন্যরকম সুন্দর লাগলো। কারন এইরকম দৃশ্য সে আজ প্রথম দেখলো। মেহবিন পেঁয়াজ মরিচ কাটতে লাগল ফ্রিজে মাংস ছিল সেটা সে আগেই বের করে ভিজিয়ে রেখেছিল। রুটি বানাবে আর কষা মাংস রান্না করবে সে। কাটাকাটি শেষ করে কড়াইতে তেল দিল একটু গরম হতেই তখন মুখর পেছন দিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,
“এই রকম দৃশ্য দেখতে যে কতোদিন অপেক্ষায় ছিলাম তা বলার মতো না। কোমরে কাপড় গুঁজে হাতখোপা করে রান্না করা।ইশশ কি নিদারুন দৃশ্য!
“হুম অনেক হয়েছে এখন ছাড়ুন। তেল গরম হয়ে গেছে।”
“হুম সরো সরো আজ রান্না আমি করবো।”
বলেই মেহবিনকে সরিয়ে সে দাঁড়ালো। মুখর রান্না জানে। সে পেঁয়াজ আর মরিচ তেলের ভেতরে দিয়ে দিল। তারপর বলল,,
“দেখবে তোমার জামাই আজ কি রকম রান্না করে।”
“হুম তা তো দেখবোই। তবে সে এই রান্নাটা করতে পারলেও, সে কি রুটি গোল করতে পারবে হুম?”
“তুমি রুটি বানাতে চেয়েছিলে?”
“হুম গরম গরম রুটি আর কষা মাংস ইশশ কি দারুন খেতে। যদিও চালের আটা হতো তাহলে আরো বেস্ট হতো।”
“আরো দুই টা রুটি দেই তোমায়? দেখো কি স্বাদ।”
মুখরের এমন কথায় মেহবিন হাসলো। আর বলল,,
“হুম অনেক হয়েছে আপনি মাংস রান্না করুন আর আমি রুটি করছি।”
“হুম কাজকাম ভাগ করে করলে ভালোবাসা বাড়ে।”
মেহবিন হেঁসে ময়দা নিল । মুখর মাংস রান্না করছে আর মেহবিন রুটি বানাচ্ছে দুজন খুনসুটিও করছে। মুখর আর মেহবিনের মুখে তৃপ্তির হাঁসি। রান্না করা শেষ হলো দু’জনে খেতে বসলো। মুখর মেহবিনকে খায়িয়ে দিল। মুখর আজ পুলিশ স্টেশনে যাবে। মুখর বলল,,
“তোমার তো আজ ও ছুটি কারন শুক্রবার। তো তোমায় বাড়ি নামিয়ে দিয়ে যাবো?”
“না আমি মামাবাড়িতে যাবো। বাজপাখি আর ফুল ওখানে। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে আসবো।”
“আচ্ছা তা সেদিন তো তোমার মামাবাড়ি থেকে কেউ এলো না?”
“এসেছিল কিন্তু ওখানে যায় নি। যাই হোক আগেরবার পরার জন্য কিছু ছিল না দেখে পাঁচটা শাড়ি আর দুইটা বোরকা এনে রেখেছেন যা দেখে আই এম ইমপ্রেজড।”
“তো আমার বউ মাঝে মাঝে আসবে সবসময় কি আমার জিনিস পরবে নাকি।”
“কেন আপনার টা পড়াতে আপনার সমস্যা হয় নাকি।”
“তা হবে কেন? তবে আমি আমার বউকে শাড়িতেই দেখতে বেশি পছন্দ করি।”
“হুম এখন রেডি হোন আমিও হবো। মামা স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে বলেছে।”
দু’জনেই রেডি হলো। মেহবিন কালো শাড়ির ওপরে বোরকা আর হিজাব বাঁধলো শুধু। মুখর মেহবিন কে মুগ্ধ চোখে দেখছিল তা আয়নায় দেখতে পেয়ে মেহবিন মাথা উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো,,
“কি?”
মুখর হেঁসে মেহবিনের পাশে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল,,
“সবাই বলে স্থানের দূরত্ব নাকি মনের দূরত্ব বাড়ায়। অথচ আমি বলি তার দূরত্বের জন্য অপেক্ষাটা আমার মুগ্ধতা বাড়ায়। চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল নয়। সে তো সবসময় মনেই থাকে তাহলে দূরত্ব তৈরি হবে কোথা থেকে।”
মেহবিন মুচকি হাসলো । তা দেখে মুখর আবার বলল,,
“তার এই মুচকি হাসির কারন আমি এইটা ভেবেই বুকে প্রশান্তি ছেয়ে যায়।”
মেহবিন মুখরের দিকে ঘুরলো। মুখর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘তাকে প্রথমবার দেখি মনে আনন্দ হয় এরপর বারবার দেখি মনটা আনন্দে নেচে উঠে। মনে হয় শুধু তাকে দেখতেই থাকি দেখতেই থাকি,,,
মেহবিন মুখরের ঠোঁটে আঙুল রেখে বলল,,
“অনেক হয়েছে এখন বন্ধ করুন কাব্য।”
মুখর মুচকি হেঁসে আঙ্গুল সরিয়ে বলল,,
“তোমায় নিয়ে বললে শেষ করতেই ইচ্ছে করে না। যেমনভাবে ভালোবাসা শুরু কর,,
এবার মেহবিন মুখরের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলো। তা দেখে মুখর হাসলো। আর মেহবিন কে জড়িয়ে ধরলো। মেহবিন ও মুখরের বুকে লুকালো। মুখর বলল,,
“কালকের মতো দিন আর রাত আমাদের জীবনে বারবার আসুক বিহঙ্গিনী!”
মেহবিন কিছু বললো না। সে মুখরকে ছেড়ে রেডি হয়ে নিল। মুখর মেহবিন কে স্টেশনে নামিয়ে দিতেই দেখলো মেহবিনের জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। মেহবিন হেঁসে আল্লাহ হাফেজ বলে চলে গেল।
_______________
“আজ কিন্তু আমি ঘুম থেকে উঠেই আসিনি ফুলের মামাতো ভাই। আজ আমি ফ্রেশ হয়ে ভালোভাবে এসেছি।”
প্রতিদিনের মতো আজ ও মিহির ফুল গাছে পানি দিচ্ছিল। মিশুর কথায় ও সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কাল রাতেই মিশু আর আরবাজ এসেছে। মেহরব চৌধুরী আরবাজের ওপর একটু রেগে থাকলেও মেহবিনের কথায় সব ভুলে ভাগ্নে কে আপন করে নিয়েছে। কাল রাতে মিহিরের সাথে ওদের দেখা হয় নি। কারন মিহিরের অফিস থেকে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেছিল। মিহির অবাক হয়ে বলল,,
“তুমি এখানে কিভাবে? মেহু এসেছে নাকি? কই আমায় তো কেউ কিছু বললো না।”
মিশু হেঁসে বলল,,
“না ফুল আসেনি আমি আর আমার ভাই এসেছি আমাদের মামাবাড়ি।”
“তারমানে তুমি জেনে গেছো এটা তোমার ও মামাবাড়ি?”
“হুম সেই সাথে আরো অনেক কিছু জেনেছি। আচ্ছা তোমার চোখ কি এটা পরে লাগিয়েছো?
মিশুর কথায় মিহির অবাক হয়ে যায়। ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“চোখ আবার পরে লাগায় কিভাবে? চোখ তো সবার জন্ম থেকেই থাকে।”
“তাহলে কি মুখ পাল্টিয়েছো?”
এবার মিহির থমকে গেল। ও প্রসঙ্গ বদলে বলল,,
“এতো সকাল সকাল তুমি এখানে কি কর?”
“তুমি জানো আমার অনুরও ফুল গাছ খুব পছন্দের ছিল। সেও প্রতিদিন নিয়ম করে তার ফুল গাছে পানি দিতো।”
“তোমার অনু এখন কোথায়?”
“ঐ যে তোমার চোখে!”
মিহির ফট করে মিশুর দিকে তাকালো। মিশু হেঁসে বলল,,
“তোমার চোখদুটো একদম আমার অনুর মতো।”
মিহির অন্য দিকে ঘুরে গেল। তখন আরবাজ এলো। আরবাজ এগিয়ে গিয়ে মিহিরের সাথে কুশল বিনিময় করলো। আরবাজের সাথে আদর ও এসেছে ও গিয়ে মিশুর হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল। মিহির অবশ্য আড় চোখে সবটাই দেখলো। ওঁরাও নিচে এলো ব্রেকফাস্ট করার সময় হয়ে গেছে। মেহরব চৌধুরী তার ভাগ্নে ভাগনির জন্য এলাহী আয়োজন করেছে। মেহরব চৌধুরী বললেন,,
“মিশুমনি আজ তো ফুল নেই আর বাবাও নেই আজ আমি তোমায় খায়িয়ে দিই।”
মিশু হেঁসে বলল,,
“আমাকে খায়িয়ে দিলে তোমার ছেলেমেয়েরা আবার রাগ করবে না তো মামা।”
তখন মাইশা বলল,,
“না মিশু আপু রাগ করবো না কারন তোমার সাথে আমিও খাবো বাবার হাতে।”
তখন আরবাজ আর মিহির বলল,,
“তাহলে আমরা দুজন বাদ যাবো কেন শুনি?”
সবার কথা শুনে মেহরব চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,
“ঠিক আছে চারজন কেই খায়িয়ে দেব।”
তখন আদর বলল,,
“এই যে তোমরা চারজন কি কুট্টি বাবু নাকি যে তোমাদের খায়িয়ে দিতে হবে।”
তখন মেহরব চৌধুরী হেঁসে বললেন,,
“বাবা মায়ের কাছে তার ছেলে মেয়েরা কখনো বড় হয় না।”
“আচ্ছা তাহলে আমায় খায়িয়ে দেবে কে?”
মিশু আদরকে নিজের কাছে নিয়ে বলল,,
“আজ মনি তোমায় খায়িয়ে দেবে আদর?”
“তুমি পারবে সিওর তো!”
“হুম সিওর পারবো।”
“তাহলে ঠিক আছে।”
মেহরব চৌধুরী চারজন নিয়ে নিচে বসলেন মিসেস মেহরব চৌধুরী পাটি বিছিয়ে দিলেন। তিনিও তাদের সাথে বসলেন মেহরব চৌধুরী চারজনকে খাওয়ালেন আর মিশু আদরকে খায়িয়ে দিল। মেহরব চৌধুরী আর মিসেস চৌধুরী সবার পরে একসাথে খেলেন। সবাই বেশ খুশি তবে যারা কাজের লোক গার্ডস ছিল তারা সবাই অবাক হয়েছে একজন মন্ত্রী হয়েও কোন অহংকার নেই। তার ভাগনে ভাগনি আর ছেলে মেয়েদের জন্য সে মেঝেতেই পাটি বিছিয়ে বসেছে। আজ মিহির আর মাইশার অফিস বন্ধ। তারা কেউ অফিস যাবে না।
ঘন্টাখানেক পর মেহবিন আসলো। মেহবিনকে দেখে আদর দৌড়ে তার কোলে উঠলো। মেহবিন সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। মিশু এসে মেহবিন কে জরিয়ে ধরলো। মেহবিন আড় চোখে একবার আরবাজের দিকে তাকালো। তারপর নিজের বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো আরবাজ হাঁটু গেড়ে বসে এক হাত দিয়ে কান ধরে রয়েছে আরেক হাতে বড় এক বক্স চকলেট ধরে রয়েছে। মেহবিন মুচকি হেঁসে সেদিকে এগিয়ে গেল আরবাজ কান ধরে বলল,,
“সরি আমার মিষ্টি বোনটি!”
মেহবিন হেঁসে আরবাজকে উঠিয়ে ওর হাত থেকে চকলেট নিয়ে বলল,,
“ইটস্ ওকে!”
“সরি বললাম তো একবার জড়িয়ে ধরবি না।”
মেহবিন হেঁসে আরবাজ কে জড়িয়ে ধরলো। তখন পেছন থেকে কেউ বলল,,
“এই যে দুই ভাইবোন আমিও কিন্তু আছি।”
আরবাজ হেঁসে এক হাত বাড়িয়ে দিল। মিশু দৌড়ে এসে আরবাজ কে জড়িয়ে ধরলো। তিন ভাইবোন একসাথে হেঁসে ফেলল। তিন ভাইবোন মিলে কিছুক্ষণ খুনসুটি করলো। দুপুর হয়ে এলে সবাই একসাথে খাবার খেল। মেহবিন এক ফাঁকে মিশু কে নিয়ে নিজের রুমে গেল। তারপর মিশুর কোলে শুয়ে বলল,,
“আজ আমি মিশুমনি আর অনুভবের কাহিনী শুনতে চাই।”
“এই জন্যই কি মামারবাড়ি আসার প্ল্যান করেছিস?”
“কিছুটা এখন ওসব বাদ দিয়ে বলো তো! মিশু তার অনুভবের সাথে কোথায় কিভাবে পরিচয় হলো। আর তাদের শেষই বা কোথায় হলো।”
মিশু মেহবিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে শুরু করলো,,
“অনুভব ছিল আমার তিন বছরের সিনিয়র। নতুন ভার্সিটিতে উঠে প্রথমদিনই সিনিয়রদের র্যাগিং এর স্বীকার হলাম। আর তখন অনুভব এসে আমায় বাঁচিয়ে নিল সাথে যারা র্যাগ দেওয়া সিনিয়রদের ও অপমান করলো। সে ছিল ভার্সিটির পরিচিত মুখ। প্রথমদিনই তার ওপর মুগ্ধ হলাম। এভাবেই দিন চলতে লাগলো। বছর দুয়েক পার হয়ে গেল। মাঝখানে কতোবার চোখাচোখি হলো কতোবার কথা হলো কতোবার আমায় সাহায্য করলো। তার ব্যক্তিত্ব সবার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো আমায় সবসময় মুগ্ধ করতো।এভাবেই একটা সময় দু’জনেই দুজনের প্রতি কিছু ফিল করলাম। কিন্তু কেউ কাউকে নিজের অনুভূতি জানালাম না। অনুভবের মাস্টার্স শেষ হলো ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করে একটা চাকরি ও পেয়ে গেল। সে একজন মেয়েকে ভার্সিটিতে ভর্তি করার জন্য নিয়ে এসেছিল । তার সাথে একটা মেয়েকে দেখে ভাবলাম হয়তো অনুভবের কাছের কেউ রাগে দুঃখে আমি কেঁদেই ফেললাম আর সরাসরি তাকে গিয়ে বললাম আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।
মেহবিন মনোযোগ দিয়ে শুনছিল হুট করে বোনের এতো সাহস দেখে ও অবাক হয়ে বলল,,
“তুমি মেয়ে হয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য প্রপোজ করলে?’
‘তো মেয়ে হয়েছি তো কি হয়েছে তাদের কি আগে ফিলিংস শেয়ার করার অধিকার নেই। তাছাড়া আমি কি হারাম রিলেশনশিপ এ জড়াবো নাকি তাই তো হালাল ভাবে পাওয়ার জন্য বিয়ের প্রপোজাল দিলাম।”বিয়ের ক্ষেত্রে নারী নিজেই পুরুষকে বিয়ে প্রস্তাব দেয়া বা আগ্রহ প্রকাশ করা একটি সুন্নাত কাজ। কারণ উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ ও উত্তম চরিত্রের অধিকার। তাঁর আখলাক ও দ্বীনদারী দেখেই হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,
“বিয়ের ক্ষেত্রে নারী নিজেই পুরুষকে প্রস্তাব দেয়া সুন্নত.!
তাই একসাথে দুই কাজ করেছি সুন্নত ও আদায় করলাম আবার মানুষটাকে জানালাম ও।”
“হুম হুম বুঝেছি তারপর ?
“আমি বিয়ের প্রস্তাব দিলাম দেখে তার কি যে লজ্জা। এদিকে সে তখন রাজি ছিল না। আমায় সবার থেকে আলাদা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বলল এসব কি পাগলামি। সে আমায় নাকচ করলো আমি কারন জানতে চাইলে সে বলল সে বিয়ে করবে না। আমি তবুও কারন জানতে চাইছিলাম কারন তার চোখ স্পষ্ট বলছিল সে আমায় পছন্দ করে। বেশ জোরাজুরির পর সে জানালো তার পৃথিবীতে কেউ নেই। এরকম একটা ছেলের সাথে কেউ মেয়ে দেবে না। ব্যস বাবাকে কল লাগালাম বললাম তার মেয়ের জামাই পেয়ে গেছি। পরে বাবা আর বাজপাখির সাথে দেখা করালাম।বাবা আলাদা নিয়ে কি কি জানি বলল তারপর আমাদের বিয়ে ফাইনাল। হয়তো বাবা ছেলে পরখ করছিল। আমাদের বিয়ে ঘরুয়া ভাবে হয়ে গেল। বাবা ওকে আমাদের হাসপাতালের ডাক্তার না হওয়া সত্ত্বেও এম ডি বানালেন। আমাদের বাড়িতেই থাকতো সে। আমাকে খুব ভালোবাসতো অনুভব এই ভাবেই ভালোবাসাময় ছয় মাস পেরিয়ে গেল। আমি আর অনুভব গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে বের হলাম।তখন,,
এইটুকু বলতেই ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো,,
অতীত,,
“অনুভব তুমি এই রাত করে এতোদূর কেন এলে বলো তো?”
অনুভব মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তোমায় কিছু বলার ছিল মিশুমনি তাই এতো দূর আসা।”
‘কি বলবে যে যার জন্য এতো দূর আনলে? আমার জন্য সারপ্রাইজ বুঝি।”
তখন অনুভবের মুখটা করুন দেখালো। আমি ওর মুখে হাত দিতেই ও বলল,,
‘আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি মিশুমনি। আমি তোমায় কষ্ট দিতে চাই না।”
বলেই ও গাড়ি থেকে নেমে গেল। গাড়িটা একটা ব্রিজ এ থামিয়েছিল। অনুভব ব্রিজের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালো। ওকে নামতে দেখে মিশুও নামলো। মিশু অনুভবের কাঁধে হাত রেখে বলল,,
“কি হয়েছে অনু?”
অনুভব বলল,,
“যদি কোনদিন জানতে পারো তোমার মাকে তোমার আপনজনই কেউ মেরে ফেলেছে। তাহলে তুমি কি করবে মিশুমনি?”
কথাটা শুনে মিশু থমকে গেল ওর চোখ ছলছল করে উঠলো।ও দুই পা পিছিয়ে গেল। ও কিছু বলবে তার আগে অনুভবের বুকে কেউ গুলি করলো। আর রক্ত এসে লাগলো মিশুর মুখে। মিশু তাড়াতাড়ি করে অনুভবের কাছে যেতে চাইলো তখন কতো গুলো মুখোশধারী লোক ওকে ধরে ফেললো। আর কিছুজন অনুভব কে ধরলো। আর অনুভবকে ইচ্ছে মতো মারতে লাগলো। একজন বলল,,
“তোর খুব কৌতুহল না শেখ বাড়ির রহস্য জানার। এখন তো জেনে গেছিস এখন মৃত্যকে আলিঙ্গন কর।”
এদিকে মিশু চিৎকার করছে অনুভব কে ছেড়ে দিতে।নিজেও ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। অনুভব কে মারতে মারতে আধ মরা করে ফেলেছে। তখনি একটা গাড়ি এলো আর লোকটা অনুভব কে সেই গাড়ির সামনে ফেলে দিল। মুহুর্তেই অনুভবের রক্ত দ্বারা রাস্তা ভিজে উঠলো। তখন মিশুকে ছেড়ে দিল। মিশু দৌড়ে গিয়ে অনুভবকে জড়িয়ে ধরলো আর চিৎকার করতে লাগলো। সাহায্যের জন্য বলতে লাগলো। আর বলল,,
‘কেউ আছেন অনুকে হাসপাতালে নিতে হবে। অনেক রক্ত পরছে ওর শরীর থেকে। প্লিজ সাহায্য করুন। কেউ আছেন।”
তখনি কেউ হাসতে হাসতে মিশুর পেছনে দাঁড়ালো। আর মিশুর মাথায় রড দিয়ে খুব জোরে আঘাত করলো। মিশু রাস্তায় পরে গেল। ওর মুখে তখনো একটাই কথা ।
‘কেউ আছো আমার অনুকে কেউ বাঁচাও। ওর শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। কেউ আমার অনুকে বাঁচাও।”
বলতে বলতেই মিশু সামনে তাকাতেই দেখলো। কতো গুলো লোক অনুভব কে ওদের গাড়ি তে উঠাচ্ছে। ওকে গাড়িতে উঠিয়ে অনুভবের পা গিয়ারে আর হাতে স্টেয়ারিং এ রেখে “হ্যাপি জার্নি” বলে গাড়ি স্টার্ট করে দিল। অনুভবের জ্ঞান নেই। গাড়ি চলতে শুরু করলো কিছু দূর যেতেই ব্যালেন্স হাড়িয়ে গাড়িটা খাদে পরে গেল। মিশু অনু বলে চিৎকার করে উঠলো। আর কিছুক্ষণ পর সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গেল।
বর্তমান,,
মিশুর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। মেহবিন ওকে জরিয়ে ধরলো। মিশু মেহবিনকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আর বলল,,
“আমি অনুকে খুব ভালোবাসি ফুল। আমি তো ওকে হারাতে চাই নি তাহলে এমন কেন হলো ফুল? আমরা তো একসাথে কতোকিছু করার প্ল্যান করেছিলাম।তাহলে আমাদের সাথে এরকম কেন হলো?
মেহবিন বলল,
“অনুভব ভাইয়া নিশ্চয়ই এমন কিছু জানতে পেরেছিল তার জন্য তাকে প্রান দিতে হলো। আপু একদম কাঁদবে না তুমি। এখন যে তাদের শাস্তি দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। তোমার এক্সিডেন্ট এর পর তুমি এক জায়গাতেই থেমে ছিলে তখন বাড়ির কেউ তোমায় ঠিক না হওয়ার ওষুধ দিতো। এর জন্যই তুমি ঠিক হওনি । এর শাস্তি তো পেতেই হবে আর মাত্র কয়েকটা দিন।”
মেহবিন মিশুকে শান্ত করলো। তখন মিহির আর আদর এলো। মিহিরের হাতে অনেকগুলো হাওয়ার মিঠাই। মিহির এসে বলল,,
‘এই যে ফুল আর ফুলের বোন এই যে দেখো তোমাদের জন্য অনেকগুলো ভালোবাসা নিয়ে এসেছি। নাও নাও ভালোবাসা খেয়ে একটু হাসো দেখি।”
মিহির এমন ভঙ্গিতে বলল যে সবাই হেঁসে উঠলো। মিশু বলল,,
‘এই হাওয়ার মিঠাইকে শুধু আমি ভালোবাসা বলি। তুমি তোমাদের কেন বললে ফুলের মামাতো ভাই?
‘ভুল হয়ে গেছে ফুলের বোন আমায় ক্ষমা করুন। আর আপনার ভালোবাসা গ্ৰহন করুন।”
মিহিরের কথা শুনে মিশু হেঁসে উঠলো। মেহবিন একবার মিশু আরেকবার মিহিরের দিকে তাকালো। তারপর সে নিজেও হাসলো। তখন আরবাজ আর মাইশা এলো। সবাই মিলে একসাথে হাওয়ার মিঠাই খেলো। বিকেল হওয়াতে এখন মেহবিন বাড়ি ফিরবে সবাই থেকে যেতে বললেও মেহবিন থাকলো না। মিহিরকে যেতে বললেও মেহবিন বলল ড্রাইভার দিয়ে আসবে এতো কষ্ট করে মিহিরের যেতে হবে না। অতঃপর ড্রাইভারের সাথে মেহবিন ফিরলো। গাড়িতে উঠতেই মেহবিনের ফোন বেজে উঠল ফোনটা মুখরের। ও কানে নিতেই শুনলো,,
‘অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে বিহঙ্গিনী। অতঃপর কাব্য ও তার বিহঙ্গিনী তাদের সাময়িক বিচ্ছেদ কাটিয়ে পূর্নতা পেতে চলেছে।”
~চলবে,,