#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আরেকটা স্নিগ্ধ সকাল রাইফা চোখ খুলেই দেখলো মেহবিন নেই। ঠিক তখনি মেহবিন আসলো মাথায় ওরনা ও বুঝতে পারল নামাজ পরেছে মেহবিন এসে কিছু দোয়া পড়ে ওর গায়ে ফু দিয়ে দিল। রাইফা হাসলো মেহবিন রাইফাকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিল। সকাল সাতটা বাজে। মেহবিন রাইফার হাত ধরে বলল,,
‘আমি যা বলবো মন দিয়ে শুনবি ঠিক আছে। আজ তোর কিডনির অপারেশন হবে ।”
কথাটা শুনে রাইফা ভয় পেল ও ছোটবেলা থেকেই এসব কাঁটা ছেড়া ভয় পায়। ও বলল,,
‘না না আমি অপারেশন হবো না। তুই ওষুধ দে ইনজেকশন দে তাও কিছু বলবো না। কিন্তু অপারেশন না মেহু?
“আমার পুরো কথাটা তো শোন অপারেশন ছাড়া কোন উপায় নেই রাই। কারন একটা কিডনি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ওটা ওষুধ দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। আর তো ব্রেন টিউমারের অপারেশন করার জন্য তুই বাইরের দেশে যাবি আমি পাঠাবো। অপারেশন করলে তুই ঠিক সময়ে যাবি।”
‘আমি বাঁচতে চাই না মেহু। বাঁচলে আবারও সেই জগন্য অবস্থায় পরতে হবে।”
কথাটায় মেহবিন থমকে গেল। তারপরও ওর হাতে হাত রেখে বলল,,
‘চিন্তা নেই রাই যতো যাই হোক না কেন তোকে আর সেই অবস্থায় কখনোই ফিরতে হবে না রাই।”
‘আমি যদি আর না ফিরি তো কেমন হবে মেহু?
মেহু অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকালো। তারপর বলল,,
‘যতো যাই হোক না কেন? তোকে মায়ের মতো কারো স্বার্থপরতার কাছে বিলীন হতে দেব না ।”
‘মেহু!”
‘না তুই কারো স্বার্থপরতার কাছে বিলীন হবি না। আমি হতে দেব না মাকে বাঁচাতে পারি নি কিন্তু তোকে তো পারবো।”
“মেহু তুই কি বলছিস?’
মেহবিনের হুস আসলো ও বলল,,
“কিছু না রাই তুই রেস্ট কর আমি আসছি। আর হ্যা তুই দু’টো অপারেশনই করবি আমি কিছু জানিনা আর শুনতেও চাই না। তোকে বাঁচতে হবে। তুই বাঁচবি প্রানখুলে। কারো স্বার্থপরতার জন্য তুই বিলীন হবি না।”
বলেই মেহবিন বেরিয়ে গেল। রাই শুধু দেখে গেল। ও বেরুতেই মেহবিনের কল এলো সেই লোকটা ফোন দিয়েছে যাকে ও নিশাচর এর নাম্বারের ব্যাপারে খবর নিতে মেহবিন সালাম দিতেই ওপাশ থেকে সালামের জবাব দিয়ে বলল,,
‘আপনার ই-মেইল বক্সে আমি সব পাঠিয়ে দিয়েছি দেখে নিন। আপনার সেই কাঙ্খিত জিনিস টা আছে।”
‘শুকরিয়া!”
মেহবিন নিজের কেবিনে ল্যাপটপ খুলল। আর মেইলবক্স চেক করতে ওর মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। ও কারো নাম্বারে ফোন করে বলল,,
‘আসসালামু আলাইকুম পার্টনার!”
ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“অতঃপর আমাদের লক্ষ্যের চুড়ায় আমরা পৌঁছে গেছি। এতো বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমরা এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে।”
‘আলহামদুলিল্লাহ!”
‘আপনার ফোনে সব পাঠিয়ে দিচ্ছি দেখে নিন।”
‘হুম আমাদের কবে দেখা হচ্ছে পার্টনার?”
‘দেখা তো হবে তাড়াতাড়িই তবে পার্টনার হিসেবে কবে হবে জানি না।”
‘ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি আমাদের দেখা হোক।”
‘ইনশাআল্লাহ!”
‘আপনাকে আপনার লক্ষ্যপূরনের জন্য শুভেচ্ছা।”
‘শুকরিয়া এবং আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা।”
‘শুকরিয়া! রাখছি!”
‘হুম তবে বিষয়টা দেখে থমকে যায়েন না আবার। আর হ্যা এবার কিন্তু পেছালে চলবে না। এবার তাদের কৃতকর্মের শাস্তি তাদের অবশ্যই দিতে হবে।”
‘ইনশাআল্লাহ তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
‘এবার আপনার দায়িত্ব বেশি।”
“হোক তবুও এবার আমি আমার দায়িত্ব পালনে কোন কাপণ্য করবো না।”
‘হুম ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।”
“হুম আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”
“ইনশাআল্লাহ!”
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। তার মুখে আজ অদ্ভূত সুন্দর হাসি। সে বের হলো খুশি মনে কেবিন থেকে করিডোর দিয়ে হাঁটতে লাগলো। তাজেলের মাকেও দেখে এলো। ওর মা অবাক হলেও বেশ খুশি হয়েছে। সে তাজেলের বাবার হাতে দুই হাজার টাকা দিল। এটা দেখে তাজেলের মা একটু আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল। তাজেলের সৎ নানি ও ছিল সেখানে। তিনি জানতে চাইলেন কে সে বলল তার মেয়ে তাজেলের বন্ধু । এটা দেখে মেহবিন হাসলো যখন বলল আমার মেয়ে তাজেল। তাজেলের বাবাকে মেহবিন গিয়ে বলল চিন্তা কম করতে। দুদিন হাসপাতালে থেকে তারপর বাড়ি চলে যাবে বাড়ি গিয়ে ঠিকঠাক সেবা যত্ন করলেই আর কোন সমস্যা হবে না।মেহবিন ওখান থেকে চলে এলো। ওখান থেকে রাইফার কেবিনে আসতেই দেখলো পুরো শেখ পরিবার এখানে। শেখ শাহেনশাহ ও আজ এখানে এসেছে। মেহবিন কে দেখে মিসেস আমজাদ বললেন,,
” মেহবিন আমার ছেলের বউয়ের জন্য এতকিছু করছো এর জন্য ধন্যবাদ। এসো তোমাদের দুজনের জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নাও।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘না আমি আপনার ছেলের বউয়ের জন্য কিছু করছি না। করছি আমার বন্ধুর জন্য।”
“যার জন্যই করো সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ। এসো এখন খেয়ে নাও।”
তখন পেছন থেকে কেউ বলল,,
“ডাক্তার!”
মেহবিন পেছনে তাকিয়ে দেখলো তাজেল হাতে টিফিন বক্স। দেখেই মেহবিন বুঝতে পারলো ওর জন্য এনেছে। মেহবিন বলল,,
“ধন্যবাদ তবে দরকার নেই । আপনি রাইকে খাওয়ান।
বলেই তাজেলকে কোলে তুলে নিল। আর বলল,,
“নেত্রী এসবের কি দরকার ছিল?”
তাজেল হেঁসে বলল,,
‘আইজ তো আমাগো বাড়ি গোস্ত রানছে। হাসপাতালে নিয়া আইছে মায়ের নিগা আমিও তোমার জন্য তাই একটু গোস্ত আর ভাত আনছি। এনে তো তোমার কেউ নাই যে তোমার জন্য খাওয়ারতা নিয়া আসবো। তাছাড়া তোমার হাত ও তো ঠিক হয় নাই তোমারে খাওয়ায় দিবো কিরা?
মেহবিন হাসলো তারপর ওকে নিয়ে বের হলো। তারপর বলল,,
‘কাল যে রাত হলো কেউ কিছু বলেছে?”
“না আমি কইছি তোমার কাছে আছিলাম।
এইডা হুইনা আর কিছু কয় নাই।”
“তোমার বাবা তো দেখলাম সকালে এখানেই। রাতে কি আসছে নাকি সকালে।”
“আজ সকালেই ভোরে ঊইডা আইছে। রাইতে থাহে নাই রাইতে তো নানি আছিল।”
“ওহ আচ্ছা! তা তুমি একাই এসেছো হাসপাতালে?”
“না দাদিও আইছে তারে দেখতে।”
“ওহ আচ্ছা!”
মেহবিন কেবিনে গিয়ে ওকে বসিয়ে দিল। তাজেল বলল ওকে চুপচাপ বসতে। মেহবিন চুপচাপ বসলো তাজেল তার ছোট ছোট হাত দিয়ে ভাত মেখে ওকে খায়িয়ে দিতে লাগলো। মেহবিন ওর দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইল। তা দেখে তাজেল বলল,,
“ডাক্তার তুমি আমার দিকে এমনে তাকাই রইছো ক্যা?
“আমি তোমার কে নেত্রী?
“তুমি আমার ডাক্তার!”
“আমার দিকে তোমার এতো খেয়াল কেন? আমি খাই বা না খাই তাতে তোমার এতো চিন্তা কিসের?”
“আমি জানি না কিসের চিন্তা কিন্তু তোমারে আমার কষ্ট পাইতে দেখতে মন চায় না। তুমি জানো তুমি আসার আগে আমারে কেউ ভালোবাসতো না। আমি তো মাঝে মাঝে সারাদিন না খাইয়াও থাকতাম। তাও কেউ খোঁজ নিতো না। আমারে তো জামাও কিনা দিতো না। যহন তুমি আইলা তহন তো আমার খোঁজ তুমি ঠিকই নেও আবার আমার যা দরকার সব করো। আর হেইদিন তো তোমার জন্যে আব্বাও আমারে কতো ভালোবাসে। তাইলে আমি কেন তোমার যত্ন নিমু না কও তো। যারা আমাগো ভালোবাসে তাগোও তো আমাগো ভালোবাসা উচিত না। তুমি না একদিন পরাইতে যাইয়া কইছিলা আমারে। আমি তোমার জন্যই তোমারে এতো ভালোবাসি ডাক্তার আর তোমার কষ্ট আমার সহ্য হয় না। নেও অনেক কতা কইছাও এহন হা করো?
মেহবিনের মুখে তৃপ্তির হাঁসি ফুটে উঠলো। মেহবিন হেঁসে হা করল তাজেল খায়িয়ে দিল। মেহবিন বলল,,
“তুমি খেয়েছো নেত্রী?”
“হ খাইছি খাইয়া দাইয়াই আইছি।”
“তোমার মাকে দেখতে গেছিলে?”
‘হ একবার দেইহা আইছি। আর দাদিরে কইয়া আইছি বাড়ি যাওয়ার আগে আমারে জানি নিয়া যায়।”
“ওহ আচ্ছা!”
“ডাক্তার কও তো এইডা কেমন হাসপাতাল?”
“কেমন আবার সরকারি হাসপাতাল।’
‘উহুম এইডা অর্ধেক সরকারি অর্ধেক বেসরকারি হাসপাতাল।”
‘না নেত্রী হাসপাতাল কখনো অর্ধেক সরকারি আর অর্ধেক বেসরকারি হাসপাতাল হয়না। হলে পুরোটা সরকারি নাহয় তো পুরোটা বেসরকারি। তবে তোমার মাথায় এরকম একটা প্রশ্ন আসলো কিভাবে?”
“চেয়ারম্যান বাড়ির সবাইরে দেইখা। এইডা আগে চেয়ারম্যান বাড়ির ওনাগো হাসপাতাল আছিল। তিন বছর আগে এইডা পুরাডা ওনাগো হাসপাতাল আছিল। তারপর উনারা নাকি সরকারের কাছে হাত মিলাইছে তারপর এনে এই যে এতবড় হাসপাতাল দেহো এইডা নুতন কইরা হইছে। তাইতো আমাগো গ্ৰামের সবাই কয় এইডা অর্ধেক সরকারি আর অর্ধেক বেসরকারি হাসপাতাল। তুমি জানো ওনাগো আরাটা হাসপাতাল আছে। আমার আব্বায় তো আগে এই হাসপাতালেই কাম করতো।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“না নেত্রী তোমার গ্ৰামের মানুষ ভুল জানে। এটা পুরোটাই সরকারি হাসপাতাল। চেয়ারম্যান সাহেব এটা বিক্রি করে দিয়েছিল সরকারের কাছে। এখন আর এটা ওনাদের নেই বুঝেছো।”
‘হ তুমি কওয়ায় বুঝলাম।”
শেখ বাড়ির সবাই মেহবিনের সাথে রাইফার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিল। এসেই দেখলো তাদের মেহবিনকে খায়িয়ে দিচ্ছে। মেহবিন জানালো সে খেয়ে তারপর আসছে। মেহবিন খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে গেল। ওনাদের সাথে কথা বলল। সায়িদ ও এসেছে এখানে মেহবিন ওর দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে তাকালো। সে আজ ও বলছে তাদের হাসপাতালে নিতে। মেহবিন তো মেহবিনই কারো কথার ধার ধারে না সে। তাজেল চলে গেল। দুপুরেই রাই চলে এলো। মেহবিন ওর সাথে সবকিছু ডিসকাস করলো ও নিজেও থাকবে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে। রাইফা তো কতো কান্না সে করবে না। একটা সবাই মেহবিনের ধমক খেল। ওর ধমক খেয়ে আরো কতো কান্না। রাইফার মা বাবাও বোঝাচ্ছে। অতঃপর মেহবিন আবার বোঝালো শেষ মেষ সে রাজি হলো। আর এটাও বলল অপারেশন থিয়েটারে যেন মেহবিন ও থাকে। ডোনার এলো। বিকেল পাঁচটায় রাইফার অপারেশন ও ভিশন ভয় পাচ্ছে। এখন ওর কেবিনে রাই আর মেহরিন। মেহবিন ওর হাত ধরে আছে। হুট করে রাইফা বলল,,
“মেহু আমি যদি আর না ফিরি?”
তা শুনে মেহবিন রেগে বলল,,
“ফাউল কথা বললে আমিই তোকে মেরে দেব।”
তখন রাই বলল,,
‘আরে মেহু তুই বকছিস কেন? ও ভয় পাচ্ছে তাই নার্ভাসনেসে এসব বলছে। তুই কি পেশেন্টদের সম্পর্কে জানিস না। তারওপর রাইফা কে তো তুই ভালোমতো চিনিস।”
“ভালোমতো চিনি বলেই তো এভাবে বলছি। দ্যাখ রাই একটা মানুষের সুস্থতা অনেকটাই তার মনের ওপর। তুই যদি মনে করিস তুই সুস্থ তাহলে তুই যতই অসুস্থ হোক না কেন তোর অসুস্থতার মধ্যেও মনে হবে আমার ওতো কষ্ট হচ্ছে না। আর তুই যদি নিজেকে সুস্থ থাকতেও মনে করিস অসুস্থ তাহলে তুই সুস্থ থাকলেও মনে হবে শরীর দূর্বল লাগছে। নিজেকে শক্ত করে আর ভাব তুই ফিরবি এতো নেগিটিভিটি কেন? তোকে অলওয়েজ পজিটিভ ভাবতে বলেছি তো। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ ইনশাআল্লাহ কিছুই হবে না। তাছাড়া এখানে তো দু’টো কিডনিই নষ্ট নয় শুধু একটা তাহলে ভয় কিসের।”
মেহবিন আরো কিছু জিনিস বলল অতঃপর রাইফা শান্ত হলো। পাঁচটা বাঁচতেই ওকে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো মেহবিন ও সাথে গেল। রাইফার অপারেশন সাকসেসফুল হলো। ও বেরিয়ে ফ্রেশ হলো। রাইয়ের সাথে কথা বলল। বেরিয়ে এসে জানতে পারলো সায়িদ আর নুপুর কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তা শুনে মেহবিন হাসলো। রাইকে মেহবিনের কেবিনে নিয়ে বলল ওকে থাকতে এখন মেহবিনের একটা কাজ আছে ও বের হবে। রাইকে কিছুটা আগেই বলেছিল তাই ও আর কিছু বললো না। ও রইলো রাইয়ের জন্য। রাইফার অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে শেখ বাড়ির সকলে চলে গেল হাসপাতালে রইলো রাইফার মা বাবা। এদিকে সায়িদ কে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে ওরাও কিছু বললো না। মেহবিন বেরিয়ে গেল। একটা গাড়ি এসে ওকে নিয়ে গেল। মেহবিন একটা কালো প্যান্ট কালো হুডি আর মুখে মাস্ক পড়লো। একটা ঘরে ঢুকতেই ওরই মতো আরেকজন কে দেখলো। সেও হুডি প্যান্ট আর মাস্ক পড়া তাকে দেখেই ও বলল,,
‘পার্টনার আপনি এখানে? আপনাকে কে বলল আমি আজ এখানে আসবো?”
“লোক কি শুধু আপনার পার্টনার আমার ও তো তাই না। আপনি যদি কেন আমায় ছাড়া কাউকে শাস্তি দেবেন তাই খবর পেতেই চলে এলাম। ”
‘এখানে কাদের তুলে আনা হয়েছে জানেন আপনি?”
“হুম জানি আর এটাও জানি তারা তাদের অন্যায়ের সীমারেখা পার করেছিল। তাই তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন।”
‘ওকে তাহলে চলুন যেহেতু আপনি এসেছেন আপনাকেও কাজে লাগাবো।”
বলেই দুজনে ভেতরে ঢুকলো। সামনেই নুপুর আর সায়িদকে বেধে রাখা হয়েছে। ওদের দেখেই ওরা চিৎকার করে ছেড়ে দিতে বলল । ওদের কথায় মেহবিনদের কোন ভ্রুক্ষেপ হলো না। মেহবিন বলল ছেড়ে দেবে যদি ওদের কথামতো কাজ করে। তারা বলল করবে না। তখন মেহবিন এসিড নিয়ে এলো দুজনেই দিকে ছুড়বে এমন সময় বলল তারা রাজি। মেহবিন বলল তারা দু’জনেই ডাক্তার তাহলে একটা কাজ করা যাক। মেহবিন দুজনকে দু’টো ওষুধে ভরা ইনজেকশন এর সিরিঞ্জ এগিয়ে দিয়ে বলল একে অপরের শরীরে পুশ করতে। ওরা করলো ওরা খুশি হয়ে গেল যে এখন বোধহয় ছাড়া পেয়ে যাবে। এদিকে ওদের খুশি দেখে মেহবিনের মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।
ওদের আবার বেঁধে দেওয়া হলো। মেহবিন জানতে পেরেছে এখানে নুপুরের তেমন বিশেষ দোষ নেই। ও শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে সায়িদকে ভালোবাসতো আর ওকে পেতে চাইতো এই জন্য ও রাইফাকে মেরে ফেলার কাজে ছিল তবে বুদ্ধিটা সায়িদের ছিল। ও শুধু সায়িদের কথামতো কাজ করেছে। এমন কি নুপুর এটাও জানে না ও রাইফাকে ধর্ষণ করেছে এমন কি সায়িদের আরো কয়েক জায়গায় রিলেশনশিপ আছে এবং সবার সাথে শারীরিক মেলামেশাও আছে। ও ভাবলো আগে নুপুর কে ব্যাপারটা জানাবে ও এক এক করে সব জানালো। এবং কিছু ভিডিও দেখালো সব শুনে ও দেখে নুপুর চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। ও চিৎকার বলল,,
“সায়িদ কেন করলে আমার সাথে এরকম? আমি তো তোমায় নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতাম তাহলে কেন করলে। ইশ আমি কতো বোকা আমি ভাবতাম তুমি আমায় ভালোবাসো কিন্তু এখন বুঝলাম তুমি আমায় নও আমার শরীরকে ভালোবাসো। না না শুধু আমার শরীরকে না তুমি তো মেয়েদের শরীরকে ভালোবাসো তাই তো এতো গুলো মেয়েদের সাথে এসব করেছো? আমি যদি পারতাম তাহলে আমি তোমায় এর জন্য কঠিন শাস্তি দিতাম।”
মেহবিন শান্ত স্বরে তার ভয়েজ পাল্টিয়ে বলল,,
“তুমি চাইলেই তা করতে পারো নুপুর। আমি দেব তোমায় সুযোগ।”
নুপুর খুশি হয়ে গেল। ও বলল সে করবে ওকে শাস্তি দেবে। মেহবিন নুপুরের হাত ছাড়িয়ে দিতে দিতে ফিসফিস করে বলল,,
“তোমরা যেহেতু শারীরিক সম্পর্ক করেছো তাহলে তো লজ্জা নেই তাই না। ওখানে এসিড রাখা আছে ওর প্যান্ট খুলে সেখানে এসিড মেরে দাও। তোমাকে ধোঁকা দিয়ে ও অন্যদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে তাই না। এটাই একজন প্রথম নিম্নস্তরের ধর্ষকের শাস্তি।”
মেহবিনের কথা শুনে নুপুর থমকে গেল এটা ওর মাথায়ই আসেনি। ভাবতেই ওর শরীর কাঁপতে লাগলো। মেহবিন তার পার্টনারকে নিয়ে অন্যদিকে ঘুরলো। নুপুর কাঁপা কাঁপা হাতে এসিড নিল। এদিকে সায়িদ বুঝতে পারছে ওর সাথে কি হচ্ছে ও চিৎকার করছে আর নুপুরকে থামতে বলছে। নুপুরের চোখে অদ্ভুত হিংস্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। ওর চোখের সামনে ভিডিও গুলো ভাসছে। ও সত্যি সত্যি প্যান্ট খুলে ওখানে এসিড মেরে দিল। সায়িদ দিল এক গগন বিদারক চিৎকার। ওর চিৎকার শুনে নুপুরের আনন্দ হলো। সায়িদ অজ্ঞান হয়ে গেল। মেহবিন নুপুরকে বলল আরেকটা ইনজেকশন দিতে নুপুর দিল। তখন মেহবিন তাড়াতাড়ি করে সায়িদকে ট্রিটমেন্টের জন্য পাঠিয়ে দিল। যাতে করে ও মরবে না। তারপর নুপুর বুঝতে পারলো ওর চোখ নিভু নিভু হয়ে আসছে। নুপুর অজ্ঞান হয়ে গেল। মেহবিন ওকেও পাঠালো। সব দেখে তার সাথে থাকা পার্টনার বলল,,
“এরকম কিছু আমার কখনো মাথায় আসেনি?”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘আমার তো মনে হয় ধর্ষকের শাস্তি এমনটাই হওয়া উচিৎ।”
“ও বাঁচবে তো?”
“জানি না তবে মরবেও না। এরকমভাবেই একটা ইনজেকশন লাগিয়েছি আমি। আজীবন প্যারালাইজডস হয়ে থাকবে যেটা সবার শেষে নুপুর দিল। আর শরীরে এইচআইভি ও দিয়ে দিয়েছি। যেটা নুপুর আর সায়িদ একে অপরের শরীরে পুশ করেছে। যার মধ্যে দিয়ে নুপুরেও শরীরেও এখন এইচ আইভি বর্তমান।
“কাউকে শাস্তি দেওয়া কেউ আপনার থেকে শিখুক। আপনি দুজনকেই শাস্তি দিয়েছেন কিন্তু আপনি নিজে হাত লাগান নি । দুজনের মাধ্যমেই দুজনকে শাস্তি দিয়েছেন।
“মা বলেছিল কাউকে শারীরিক ভাবে শাস্তি দিতে হলে তাকে অবশ্যই দেবে কিন্তু অন্যায়ভাবে নয়। এর জন্য হাত লাগাই নি। আমি হাত দিলে আমার অন্যায় হতো।তাই ওরা দুজনে যেহেতু অপরাধী আরো দুয়েকটা অপরাধ করলে কিছুই হবে না। তাই দুজনের দ্বারাই দুজনকে শাস্তি দিলাম।আমি ভেবেছিলাম নুপুরকেও কঠিন শাস্তি দেব। কিন্তু পরে জানতে পারলাম ও নিজেও একজন ভুক্তভোগী। তাই অল্পের ভেতর দিয়েই দিলাম সারাজীবন এইচআইভি শরীরে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। খুব বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক করার ইচ্ছা না ওর তাই এরকম শাস্তি দিলাম। কাল দুজনের লাইভ টেলিকাস্ট হবে বিয়ের পর পরকীয়া করতে গিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ডক্টর নুপুর ডক্টর সায়িদের এই অবস্থা করেছে। এমনকি দুজনের শারীরিক সম্পর্ক ও ছিল ডক্টরের সায়িদের এইচ আইভি ছিল শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ডক্টর নুপুরের শরীরেও তা ঢুকেছে। নুপুরকে ধরে নিয়ে যাবে পুলিশ। ও রাইকে মারার চেষ্টা করেছিল তার জন্য এটা।”
বলেই মেহবিন হাসলো তাকে দেখে তার পার্টনারও হাসলো। অতঃপর ওরা দুজন চলে গেল। পরের দিন সকালে সবাই সায়িদ আর নুপুরের খোঁজ পেল সেই সাথে মেহবিন যেমনটা চেয়েছিল তেমনটাই খবরে দেখানো হলো। সব শুনে এবং দেখে শেখ বাড়ির সকলে স্তব্ধ। খবরটা দেখে মেহবিন নিজেই নিজের মনে আওরালো,,
“এটা তো শেখ বাড়ির রহস্য উন্মোচন এর প্রথম ধাপ। এখন দেখবে সব রহস্য কি করে একে একে সামনে আসে। নিশাচর গেট রেডি আই এম কামিং।
~চলবে,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৬ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
সায়িদের খবরটা শুনেই রাইফার মা বাবা ভিশন ভেঙে পরেছেন। এমনিতেই মেয়েটার এতো বড় অপারেশন হলো তার মধ্যে এইরকম একটা ঘটনা মেয়েটাকে না জানি কতবড় আঘাত পেতে হবে। তারা তো আর জানে না এই খবরটাই তার মেয়ের মনে কতটা খুশি এনে দেবে। শেখ পরিবার থেকে শেখ শাহনাওয়াজ আর মিসেস আমজাদ রাইফার মা বাবার কাছে ক্ষমা চাইলেন। রাইফাকে এখনো খবরটা জানানো হয় নি। সবাই ভাবছে যদি রাইফা জানতে পারে তাহলে খুব ভেঙে পরবে। তাই কেউ রাইফাকে জানায় নি। এমনকি মেহবিন ও জানায় নি। এভাবেই পার হয়ে গেল সাত দিন। সেদিনই রাই ফিরে গেছে। সাত দিন ধরে রাইফা হাসপাতালে আজ সে বাড়ি ফিরবে। শেখ বাড়ির অবস্থা বেশ করুন। রাইফার মা বাবা বলেছে ওকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যাবে এতে রাইফা অবাক হলেও কিছু বলেনি। মেহবিন কাগজ করতে দিয়েছে সেগুলো তৈরি হয়ে গেলে তিনজনেই বিদেশে চলে যাবে রাইফার চিকিৎসার জন্য। রাইফারা বেরুবে কিন্তু শেখ বাড়ির কেউ আসেনি এটা দেখে রাইফার একটু মন খারাপ হলো। ও মেহবিনের দিকে তাকালো মেহবিন সবাইকে বাইরে যেতে বলল । সবাই চলে গেলে মেহবিন নিউজটা রাইফাকে দেয়। ও প্রথমে অবাক হলেও পরে খুশি হলো যে মানুষ টা ওকে এতটা টর্চার করেছে তার শাস্তি পাওয়া উচিৎ সবথেকে বড় কথা ও পরকীয়ার লিপ্ত ছিল। সারাজীবনের জন্য প্যারালাইজড হয়ে গেছে আর যা ঘটনা ঘটে গেছে ও প্রতিটা মুহূর্তে নিজের মৃত্যকামনা করছে। নুপুরের নুপুরের শাস্তি হয়েছে দেখে সে খুশি হয়েছে। তার সাথে আফসোস ও করেছে। এরকম করুন অবস্থা দেখে। এভাবে ওদের অবস্থা সবার সামনে আসবে ও ভাবেও নি। তখন শেখ বাড়ির সকলে এলো শেখ শাহেনশাহ আর শেখ আমজাদ ছাড়া মিসেস আমজাদ কেঁদে দিয়ে রাইফার কাছে মাফ চাইলো। তিনি এটাও বলল তাদের ডিভোর্স করাবে কিছুদিন পর পাঠিয়ে দেবে আরও বলল তুমি বাঁচবে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে বলল ভয় পেতে বারন করলো। পরে অনেকক্ষণ মেলোড্রামার পর রাইফারা বেরুবে। রাইফা বলল,,
“এই মেহু তুই আমার সাথে যাবি?”
“নারে তোরা যা আমার অনেক কাজ আছে।”
“প্লিজ মেহু! যদি আর না ফিরি। আমার ভিশন ভয় করছে। ”
“এতো ভয় পাস না ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না। এখন তোর এখানে থাকা টা ঠিক হবে না। তুই ঢাকায় ফিরে যা। তাছাড়া আমি দেখা করে আসবো তো।”
মেহবিন বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাইফাকে বাড়ি পাঠানোর জন্য রাজি করালো।ওরা গাড়িতে উঠবে এমন সময় রাইফার বাবা মেহবিনের মাথায় হাত দিয়ে বলল,,
“আমার মেয়ের জন্য যা করলে তার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া মেহু মা।
মেহু হেঁসে বলল,,
“আরে আঙ্কেল এসব কি বলছেন। রাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর এইটুকু করা একজন ডক্টর হিসেবে আমার দায়িত্ব।
“আমি জানি তবুও একজন বাবা হিসেবে তোমার শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ। আমি জানি তুমিই আমাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাচ্ছো তা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই মেহু মা। আর আমি জানি তুমি এখানে আমাদের নিচু দেখাচ্ছো না শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য কিছু করছো। তবুও সেখানের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ আমি দেব। আমার একটাই মেয়ে সব ওর জন্যই এই জন্যই আমি সব নিজের হাতে করতে চাই মেহু মা।
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘ সমস্যা নেই আঙ্কেল করুন আপনি আপনার মেয়ের জন্য। এতে আমি হস্তক্ষেপ করবো না কিন্তু কোন সমস্যায় পড়লে সবার আগে যেন আমার কাছেই ফোনটা আগে আসে।”
“তা আর বলতে। নিজের খেয়াল রেখো সাবধানে থেকো আসছি। আল্লাহ হাফেজ।”
“হুম আল্লাহ হাফেজ।”
ওরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এ কয়েকদিন তাজেলের সাথে সময় কাটানো হয় নি মেহবিনের বেশীরভাগ সময় হাসপাতালেই কেটেছে মুখরের সাথেও তেমন যোগাযোগ হয় নি। ক’দিন বাদেই আলভি আর মাইশার বিয়ে। মেহবিন আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রওনা দিল। বাড়ির সামনে আসতেই তাজেলের সাথে দেখা। তাজেল একবার ওর দিকে তাকালো আবার অন্য দিকে তাকি হাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো। তা দেখে মেহবিন বলল,,
‘নেত্রী কেমন আছো?”
তাজেল আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো আর মেহবিনের উল্টো দিকে ঘুরে রইলো। তা দেখে মেহবিন একটু ভরকালো। ও তাজেলের সামনে দাঁড়ালো আর হাঁটু গেড়ে বসে বলল,,
“কি হয়েছে এতো রাগ কিসের শুনি?”
তাজেল পাশ ফিরে দাঁড়ালো আর বলল,,
“কেউ জানি আমার সাতে কথা না কয়। তার জন্যে আমার একটা পশাল দিন খুব খারাপ গেছে।”
মেহবিন কিছুই বুঝতে পারলো না। ও বলল,,
“তা ঐ একটা স্পেশাল দিনে ছিল। আর ঐ স্পেশাল দিনটা কবে ছিল। যে নেত্রীর তার ডাক্তার কে ছাড়া খারাপ গেছে।”
“তুমি তো আমার সাতে কথাই কইয়ো না। কাল আমার জন্মদিন আছিল। আমি চাইছিলাম তোমার সাথে ঘুইরা জন্মদিনের কেক কাটুম আর খামু। এই জন্য আব্বারেও কইছিলাম আব্বা ও কইছে ট্যাহা দিবো। কিন্তু তুমি বাড়িই আইলা না তোমার জন্য আমি কতোক্ষন অপেক্ষা করছিলাম।”
‘এই ছোট্ট একটা জিনিসের জন্য তুমি রাগ করেছো?”
“হ তোমার কাছে তো তোমার বন্ধুই বড় আমি তো আর কেউ না।”
মেহবিন তাজেলকে ওর দিকে ঘুরালো আর বলল,
“আজ আমার বন্ধু চলে গেছে। তাই তো কাল আসতে পারি নি সব গোছগাছ করে দিয়ে আসতে হতো তো। রাত হয়ে গেছিল আমার বন্ধুও বলল ওর সাথে থাকবে ভাবলাম কাল চলে যাবে তাই ওর সাথে থেকে গেলাম।”
‘তোমার জন্য আমি জন্মদিনের কেক কাটতে পারলাম না। আবার খাইতেও পারলাম না। আব্বা সবাইরে খিচুড়ি খাইয়াইছে আমার জন্মদিনের জন্যে আমার অনেকদিনের শখ আছিল কুলসুমের ভাইয়ের মতো সবাইরে দাওয়াত দিয়া খাওয়ামু আর মোমবাত্তি নিভাইয়া কেক ও কাটুম। তুমি আইলে তুমারে নিয়া কেক কিনতে যামু বাজারে কিন্তু তুমি আইলাই না আমার কেক ও কিনা হইলো না। পরে আব্বা কইছিল হে আনবো আমি তোমার জন্য না কইরা দিলাম।”
মেহবিন তাজেলকে কোলে তুলে নিল। আর বলল,,
“সরি নেত্রী আমার জন্য তুমি কেক খেতে পারলে না। তবে তুমি কি জানো এসব জন্মদিন পালন করা হারাম।জন্মদিন পালন করা খুবই কমন কালচার আমাদের সমাজে। আজ আমরা পাপকে পাপই মনে করি না তবে জন্মদিন খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় কালচার। আর ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, , রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক।
অন্য ধর্মের কোন সিম্বল মুসলমান ধারন করতে পারেনা।
খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে ঈসা আঃ জন্মদিন তাদের জন্য বিশেষ রহমত বয়ে আনে, তাই এই দিন তাদের জন্য রহমতময়, এই রহমতকে তাদের জীবনে ধরে রাখার জন্য তারা নিজেদেরো জন্মদিন পালন করে থাকে,,আর তাদের এই উৎসব আজকে আমরাও পালন করি,,,!
অথচ জেনে না জেনে কত বড় ঈমানহানীকর কাজ আমরা করছি নিজেরাই বুঝতে পারছিনা,,,,!
আর আমরা যদি জন্মদিন পালন করি, তবে খ্রিষ্টানদের কালচার গ্রহন করলাম।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”
[সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]
আল্লাহ তাআলা সকলকে সঠিক বুঝ দান করুক আর এইসব জিনিস থেকে দূরে রাখুক। যারা আমরা জন্মদিন পালন করি তারা মন থেকে তওবা করি এবং এসব কাজ থেকে বিরত থাকি। আমিন।”
সব শুনে তাজেল বলল,,
“তুমি কি কইলা কিছুই বুঝিনাই আমি। খালি এইটুকু বুঝলাম জন্মদিন পালন করা যাইবো না।”
“হুম ঠিক বুঝেছো।”
‘তাইলে কি কেক ও খাওয়া যাইবো না।”
“কেক খাওয়া যাবে তবে জন্মদিনের নিয়তে খাওয়া যাবে না। তোমার জীবনের সবকিছুই তোমার নিয়তের ওপর নির্ভর করে। তুমি এমনে কেক খাও সবাইকে খাওয়াও তাতে সমস্যা নেই।”
“ধূরু আমি কিছুই বুঝি না তো।”
‘তুমি কেক খেতে চাও তাই না চলো আমি আর তুমি আজ কেক খাবো। তবে এটা জন্মদিনের জন্য না কেক খেতে ইচ্ছে হয়েছে তাই খাবো ঠিক আছে।”
‘হ ঠিক আছে। ট্যাহা কিন্তু আমি দিমু কারন আমি খাইতে চাইছি।”
‘না আজ টাকা আমি দেব আমি এখনি অর্ডার করছি।”
মেহবিন ফুড পান্ডায় একটা কেক অর্ডার দিল। ও দেখেছে এখান দিয়ে ফুড পান্ডার একটা ইউনিট আছে। মেহবিন ওকে নিয়ে বাড়িতে গেল। বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হলো। হাত ঠিক হয়ে গেছে ওর। তাজেল আর মেহবিন গল্প করলো এই কয়দিনের সব কিছু তাজেল বলছে ঘন্টাখানেক এর মধ্যে ওদের কেক এলো। মেহবিন তাজেলকে বলল কেক কেটে খেতে। তাজেল কাটলো অনেকগুলো পিচ করলো ওর ভালো লাগছে। মেহবিন একটা প্লেটে একটু উঠিয়ে রেখে বাকিটা তাজেল কে বলল খেতে। ও তাদের খেতে গিয়ে ক্রিম দিয়ে মুখ মেখে গেল। তা দেখে মেহবিন হাসলো তাজেলের হাত ও পুরোটা কেকের ক্রীম দিয়ে মেখে গেছে। মেহবিন ওর সামনে একটা আয়না ধরলো নিজের মুখ দেখে সে নিজেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আর বলল,,
“ডাক্তার দেহো আমারে ভুতের লাগান লাগতেছে।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“হ দেখতাছি তো?”
“তুমি দেহি আমার মতো কথা কইতেছো?”
‘হ তাই তো দেখতাছি!”
তাজেল খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। মেহবিনের ওপর রাগ কখন ভুলে গেছে ও নিজেও জানে না। মেহবিন বাকি কেকটুকো ফ্রিজে রেখে দিল। তাজেলের হাত মুখ ধুয়ে দিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই তাজেল খুশিমনে বাড়ি চলে গেল। তখন শেখ শাহনাওয়াজ এর ফোন এলো শেখ শাহেনশাহর কি যেন হয়েছে। উনি অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে। এই মুহুর্তে কোন ডাক্তার বাড়িতে নেই। তাই ওকে ফোন দিয়েছে। মেহবিন চেয়ারম্যান বাড়িতে গেল । মেহবিন চেক আপ করে দেখলো প্রেসার অনেকটাই হাই প্রেসারের ওষুধ খান না কয়েকদিন ধরে নিয়মিত তারসাথে উনি বোধহয় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। মিসেস আমজাদ ছেলের চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরেছে তাই এখন সে হাসপাতালে যার জন্য শেখ আমজাদ মুনিয়া দুজনেই ওখানে। এখন আরিফা জামান তার ভাইয়ের বউ, নিসা,মিশু,আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ বাড়িতে। সবাইকে দেখে মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘উনি কয়েকদিন যাবৎ ওনার কোন ওষুধ খাচ্ছেন না। যার জন্য প্রেসার অনেকটাই হাই এমনকি নিয়মিত খাবার খাচ্ছেন না। মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা এই জন্য আজ আর শরীর উনার সাথে পেরে উঠেন নি।
মিসেস আরিফ বললেন,,
“বাড়ির যে অবস্থা এই সময় কি খাওয়া দাওয়া ঠিক থাকে। ”
“ঘরটা খালি করার ব্যবস্থা করুন। ওনার একটু আবহাওয়ার দরকার এখন। আর হ্যা কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুন।”
মেহবিনের কথা শুনে সবাই বেরিয়ে গেল শুধু রইলো শেখ শাহনাওয়াজ আর মেহবিন। সবাই বের হতেই বলল,,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনি একজন ডক্টর। এর পরেও আপনার আমায় ডাকার প্রয়োজন কেন পড়লো বুঝলাম না।”
মেহবিনের কথায় শেখ শাহেনশাহ ওর দিকে তাকালেন ঐ চোখে প্রশ্ন মেহবিন কিভাবে সব জানলো। তিনি বললেন,,
“তুমি কেমনে জানলা?”
“সেটা আপনার না জানলেও চলবে তো চেয়ারম্যান সাহেব আপনি বলুন?”
“আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছি সেই উনিশ বছর আগেই?’
“কেন?”
শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের দিকে তাকালো। আর বলল,,
“কিছু পার্সোনাল কাজের জন্য?”
“কাউকে না বাঁচাতে পারার আক্ষেপ থেকে নাকি?”
শেখ শাহনাওয়াজ আর শেখ শাহেনশাহ দুজনেই বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকালো। মেহবিন হেঁসে বলল,
“যাই হোক যেভাবেই ছাড়ুন ওসব বাদ। তো শেখ শাহেনশাহ আপনাকে সেদিন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার সবথেকে প্রিয় জিনিস কি? আপনি বলেছিলেন আপনার বংশের সম্মান ও গৌরব। তা আপনার বাড়ির সম্মান আর গৌরব দেখছি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।”
শেখ শাহেনশাহ মাথা নিচু করলেন। তা দেখে মেহবিন হেঁসে বলল,,
“এই বংশের সম্মান আর গৌরব এর জন্য কত কি না করেছেন। আপনার ছেলেকে কেউ যেন নিঃসন্তান না বলে নিজের বংশের প্রদীপ জ্বালানোর জন্য অন্যকাউকে স্বার্থের জন্য এবাড়িতে নতুন করে জড়িয়েছেন। আবার স্বার্থ শেষ হয়ে গেছে তাকে ছেড়ে দিয়েছেন।আর এমনভাবে ছেড়ে দিয়েছেন যে পৃথিবী ছেড়েই চলে গেছে।”
শেখ শাহেনশাহ বড় বড় চোখ করে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
‘কে তুমি এতকিছু জানলে কিভাবে?”
‘তারমানে আপনিও একজন যে মেহেরুন নিসা কে মারার প্ল্যানে যুক্ত ছিলেন।”
শেখ শাহেনশাহ এবার উঠার চেষ্টা করলেন আর বললেন,,
“এই কে তুমি এতকিছু কিভাবে জানো?”
মেহবিন একটু উঠে গেল তারপর তার সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,,
‘আমি সে যাকে মেহেরুন নিসার সাথে এই পৃথিবী থেকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। মুসকান আমি শেখ শাহনাওয়াজ এর ছোট মেয়ে মেহবিন মুসকান শাহনাওয়াজ।”
এইটুকু শুনেই শেখ শাহেন শাহ ছটফট করতে লাগলেন। তার মুখ বাকা হয়ে যাচ্ছিল হাত ও কেমন যেন করছিলেন। শেখ শাহনাওয়াজ ও অদ্ভুত ভাবে দেখলেন উঠে আসতেই শেখ শাহেনশাহ অজ্ঞান হয়ে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ বাবা বলে তাকে তাড়াতাড়ি করে ধরলেন। তিনি বুঝতে পারলেন স্ট্রোক করেছে। এখন তিনি নিজেই উনিশ বছর পর ডাক্তারি চিকিৎসা করলেন তাও প্রাথমিকভাবে। শেখ শাহনাওয়াজ এর চিৎকার এ শেখ বাড়ির সকলে ঘরে এলো। মেহবিন চুপ করে একপাশে শেখ শাহেনশাহ এর দিকে তাকিয়ে রইল। শেখ শাহনাওয়াজ আর আরবাজ মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। মেহবিন ও গেল। ওখানে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করার পর ডাক্তার জানালো এক তিনি স্ট্রোক করেছিলেন যার জন্য তার দেহের ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে। মুখটাও বাকা হয়ে গেছে তার জন্য উনি কথা বললেও কিছু বুঝতে পারবে না কি বলছে। শেখ বাড়ির সকল মহিলারা কেঁদে উঠলো। আরিফা জামান কেঁদে উঠলো তিনি বললেন কার নজর লেগেছে যে এসব হচ্ছে। এমনিতেও বাড়ির এই অবস্থা এখন আবার এসব। শেখ শাহনাওয়াজ করিডরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। মেহবিন পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মেহবিনের অস্তিত্ব টের পেয়ে শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“আল্লাহ তায়ালা কিছু কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই প্রদান করেন। তিনি কতোই না উত্তম কর্মবিধায়ক।
আপনি নিজেকে ছোট ভাববেন না আপনার জন্য কিছু হয় নি। আপনি তো শুধু কিছু সত্যি বলছিলেন এটা তার ব্রেন সহ্য করতে পারেনি তাই আজ এই অবস্থা।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“এসবের জন্য নিজেকে নিয়ে কিছুই ভাবছি না আমি। এটা নিয়ে আমার অনুশোচনাও নেই।তবে আমি জানতাম এই অবস্থায় তিনি এগুলো সহ্য করতে পারবেন না। তবে,,
“তবে কি?”
“আপনি কষ্ট পাচ্ছেন?”
‘আপনার কষ্টের কাছে এগুলো কিছুই না। আমার বাবা তো একেবারে মারা যায় নি তবুও ভেতরটা কতটা হাহাকার করছে আর আপনি তো তখন বাচ্চা ছিলেন তাও সব সামলে নিয়েছেন। আমাকে ক্ষমা করবেন আমি জানতাম আপনার মাকে মারার সাথে উনিও ছিলেন তবে উনি মারতে বলেন নি। উনি শুধু জানতেন মারা হবে। কিভাবে কে মারবে এসব কিছুই জানতেন না।তবে উনি একবার বলেছিলেন না মারলে হয় না। কিন্তু তারা তার কথা কানেই নেয় নি। আপনি বলেছিলেন না আমি বাবার বিষয়ে সব জেনেও কেন চুপ করে থাকি। ঠিক এই কারনে কারন তিনি ছিলেন না সেই কাজে শুধু জানতেন। কিন্তু এর মেইন মাথা কে সেটাও তিনি জানেন না। আমি যেভাবে আপনার চোখের দিকে তাকাতে পারিনা ঠিক তেমনভাবেই সেও আমার চোখে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। অদ্ভুত অনুশোচনা তার। ”
মেহবিন অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমাদের জীবন অনেক অদ্ভুত চেয়ারম্যান সাহেব। আমরা যেটাকে জটিল ভাবি সেটা কখনো কখনো অনেক সহজ হয়ে যায় আর যেটাকে সহজ ভাবি সেটা আমাদের ভাবনার তুলনায় কঠিন হয়ে পরে। যাই হোক আসছি আমি! আল্লাহ হাফেজ।
~চলবে,,