#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৩ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
বর্তমান
মেহবিন চোখ বন্ধ করে টেবিলে হাত রেখে মাথা ধরে রেখেছে। আচংকা ক্ষত জায়গায় ওষুধ লাগতেই মেহবিন চমকে উঠলো। ও সামনে তাকাতেই দেখলো তাজেল দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তাকাতেই দেখলো নার্স এর হাতে তুলো। ও যা বোঝার বুঝে গেল। তাজেল বলল,,
“এই যে নার্স আপা থাইমা গ্যালা ক্যান? লাগাও ওষুধ হাতের রক্তের মতো ছিটাছিটা দেহো না তুমি।”
তাজেলের কথা শুনে মেহবিনের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। ও বলল,,
“নেত্রী এখানে কি করছো?”
তাদের দাঁত কেলিয়ে বলল,,
‘কিছু না হাসপাতাল দ্যাখবার আইছিলাম একটু। পরে দেখলাম তুমি আইলা কারে জানি নিয়া ঐ চেয়ারম্যান বাড়ির। তারপর দেখলাম তুমি তার চিকিৎসা করলা। বাইরে মেলা মানুষ দেইহা ওনে যাইনাই। পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালাও তো আছিল। তুমি বাইর হইয়া কি জানি কইলা পরে দেহি তোমার হাত দিয়া রক্ত বাইরেতেছিল তো তাই দেইহা নার্স আপারে নিয়া আইলাম। এহন কথা কম কও নার্স আপা তুমি কাম করো।”
মেহবিন নার্সের দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল ওষুধ লাগাতে। তারপর মেহবিন তাজেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তোমার সৎমায়ের কি হয়েছে নেত্রী? যার জন্য তুমি তাকে দেখতে এসেছো হাসপাতালে?
মেহবিনের কথা শুনে তাদের বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তুমি এইডাও জানো?
“আমার স্পেশাল পাওয়ার আছে।”
“তোমার পশাল পাওয়ার তোমার কাছেই রাহো। আমি হাসপাতাল দেখবার আইছি কতো বড় হাসপাতাল। এমনি তো দেহা অয় নাই। তাই মন চাইলো চইলা আইলাম আমগো বাড়ি থিকা তো বেশি দূর না।
“ওটা পশাল নয় স্পেশাল। আর আমাকে মিথ্যা বলতে হবে না আমি জানি তুমি তাকেই দেখতে এসেছো।
তাজেল মাথা চুলকিয়ে বলল,,
“ঐ হইলো।”
“কি হয়েছে তার?”
“পিত্তিতে পাথর অইছে বলে। আমি যে এনে আইছি তুমি কিন্তু কাউরে কইও না।
তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো। ও বুঝতে পারলো তাজেলের মনে তার মাকে নিয়ে আলাদা কিছু একটা আছে। হয়তো একই বাড়িতে থাকে বলে। মেহবিন বলল,,
‘আচ্ছা।”
“এহন কও তুমি বাড়ি যাইবা নাকি? আমি বাড়ি যামু। আমি যে এনে আইছি কেউ জানে না। ভাবছিলাম সন্ধ্যার আগেই বাড়ি যামু কিন্তু তোমার জন্যে আন্দার অইয়া গেল।”
“আমি আজ বাড়ি যাবো না।”
“এইডা কি কও তুমি এনে থাকবা?”
নার্সের হয়ে গেছে তাই সে চলে গেল। মেহবিন তাজেল কে ডাকলো আর ওকে কোলে বসিয়ে বলল,,
“হুম আজ এখানে থাকবো। আমি যাকে নিয়ে এসেছি সে আমার বন্ধু ছিল অনেক আগে। সে এখন অসুস্থ আমি আমার দায়িত্বে তাকে এখানে এনেছি। তাই তার সবকিছু আমাকেই দেখতে হবে এই জন্য আমাকে এখানে থাকতে হবে।”
‘অনেক আগে বন্ধু ছিল এহন নাই।”
“হুম এখনো আছে তবে মনে মনে।”
“ওহ আইচ্ছা তোমার কতো বন্ধু ডাক্তার। কয়দিন আগেই আইছিল কি জানি নাম রাই না খাই।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘ওর নাম রাই ছিল। তুমি জানো আমি যাকে আজ হাসপাতালে আনলাম তার নাম ও রাই।”
“তুমি দুই রাইরে একলগে পাইলা কেমনে?”
“সে অনেক কথা এসব রাখো। আমি তোমার বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করছি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তো।”
‘তোমারে রাইতে খাওয়ায় দিবো কি রা ডাক্তার? আর খাওনই আইনা দিব কিরা?
তাজেলের কথায় মেহবিন অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। এই ছোট্ট মেয়েটা ওর খাওয়ার চিন্তা করেছে। সকাল বেলা তাজেলই বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার এনে ওকে খায়িয়ে দিয়েছিল। আর দুপুর বেলাও তাই কারন সে আজ ও হাতের জন্য ছুটিতে ছিল শুধু কুদ্দুস এর জন্য তিনবার হাসপাতালে এখানে এসেছিল। মেহবিন ওকে সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,,
“খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমার ড্রয়ারে কাপ নুডুলস আছে রাতে গরম পানি করে নুডুলস বয়েলড করে চামচ দিয়ে খেয়ে নিতে পারবো।”
“সত্যি তো দেহি কোনে লুডুস?”
মেহবিন ড্রয়ার খুলে দেখালো সেখানে চকলেট চিপস আর তিনটা কাপ নুডুলস রাখা। মেহবিন এগুলো রাখে মাঝে মাঝেই খায়। মেহবিন একটা চকলেট তাজেলের হাতে দিয়ে খেতে বলল তারপর ওকে নিয়ে বের হবে এমন সময় মুখর ঢুকলো একজন নার্সকে নিয়ে সে এসেছিল মেহবিনের হাতে ওষুধ লাগাতে। মুখর দেখলো তার দরকার নেই। মেহবিন ওকে নিয়ে বের হলো। বাইরে বেরিয়ে দেখলো কেউ যায় নি। তাই দেখে মেহবিন বলল,,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনারা কেউ বাড়ি যাবেন না নাকি?”
তখন মিসেস আমজাদ বলল,,
“আমার ছেলের বউকে এই অবস্থায় রেখে আমরা বাড়ি যাবো নাকি।”
‘ওহ আচ্ছা তাহলে এখানের কেউ কি বাড়ি যাবেন না।”
শেখ শাহনাওয়াজ তাজেলকে দেখে বললেন,,
‘কেন আপনার কোন দরকার নাকি। তাছাড়া এখন মুখরের পরিবার চলে যাবে। ওনাদের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি।
তখন মুখরের বাবা মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,
“না ভাইসাব আগে রাইফার জ্ঞান ফিরুক ওকে দেখে ওর সাথে দেখা করে তারপর যাবো। আজকে বাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও তো যেতে পারলাম না। কাল সকালে বাড়ি যেতে হবে আর দেখা হবে না।
মেহবিন বুঝতে পারলো এখন কেউ বাড়ি যাবে না। হয়তো একেবারে রাতে যাবে। মেহবিন তাজেলের দিকে তাকালো তাদের বলল নিচু হতে ও নিচু হলো তা দেখে সবাই ওদের দিকে তাকালো। তাজেল ফিসফিস করে বলল,,
“পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালারে দিয়াইতে কও। আব্বা আর দাদি মনে হয় আমারে খুজতেছে।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“ঠিক আছে।”
মেহবিন ফোন নিয়ে মুখরকে টেক্সট করলো তারপর মুখের দিকে তাকালো। মুখর টেক্সট টা দেখে মাথা নাড়ালো। মুখর সবাইকে বলল,,
“তোমরা একটু থাকো আমার একটা ইম্পোর্টেন্ট কল করার আছে করে আসছি। আসার সময় তোমাদের জন্য চা ও নিয়ে আসছি।”
বলেই মুখর ওখান থেকে চলে গেল। মেহবিন তাজেলের হাত ধরে ওকে নিয়ে বের হলো। বাইরে বেরুতেই মুখর দরজা খুলে তাজেলকে কোলে নিয়ে সেখানে বসিয়ে দিল। মেহবিনকে বলল ওকে নামিয়ে দিয়ে আসছে। মুখররা চলে গেল। মেহবিন ওপরে গিয়ে দেখলো রাইফার বাবা মা এসেছে মেহবিনকে দেখেই চিনে ফেলল। রাইফার মা মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো আর ধমক দিল তাদের না বলে হাওয়া হলো কেন। আসলে সেদিনের পর আলম আহমেদ বাসা চেঞ্জ করেছিল তাই ওকে পায় নি কেউ। রাইফার মা মেয়ের জন্য কাঁদলো। মেহবিন তাকে শান্তনা দিয়ে নিজের কেবিনে গেল। ঘন্টাখানেক পর শুনলো রাইফার জ্ঞান ফিরেছে ও তখন কফি খাওয়ার জন্য কেটলিতে গরম পানি করছিল। মেহবিন সেটা দিয়ে কফি না বানিয়ে কাপ নুডুলস বের করে তাতে ঢেলে বের হলো। মেহবিন বাইরে গিয়ে বলল কাউকে না ঢুকতে সে বের হলে যেন সবাই যায়। মেহবিন কেবিনে গিয়ে দেখলো রাইফা আধশোয়া হয়ে বসে আছে। মেহবিন টুলে ভালো করে বসে নুডুলস কাঁটা চামচ দিয়ে নাড়াতে লাগলো। রাইফা সেদিকে তাকালো মেহবিন ওর দিকে না তাকিয়ে নুডুলসের দিকে তাকিয়ে নেড়ে চেরে মুখে পুরে নিল। দুই দিন বার নেওয়ার পর তারপর বলল,,
‘এভাবে তাকাস না রাই আমার পেট খারাপ হবে ।”
রাই মেহবিনের থেকে চোখ সরিয়ে বলল,,
“আমার বয়েই গেছে তোর দিকে তাকাতে?”
“তাহলে কে তাকাচ্ছিল শুনি শেখ সায়িদের বউ রাইফা আফনূর নাকি।”
কথাটা শুনে রাইফার মুখে অন্ধকার হয়ে এলো। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“তুই কিছু বলবি নাকি আমি কিছু বলবো। আচ্ছা তোর হয়েছে টা কি বলবি? যদি তুই জেনে থাকিস তাহলে আমায় বল।”
রাইফা কিছু বললো না। মেহবিন বুঝলো ও কিছু বলবে না। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“নুডুলস খাবি রাই? কেউ কিন্তু এই নুডুলস কে কখনো না করতো না।”
রাইফা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘কারো এইটুকুতে পেট ভরবে না। তাই এটুকু খেয়ে তার মুখ নষ্ট করবে না।”
মেহবিন হেঁসে ফেললো তা দেখে রাইফাও হাসলো। কতোদিন পর রাইফা এভাবে হাসলো তা রাইফা নিজেও জানে না। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“আপাতত এটা খা আমি আরেকটা নিয়ে আসছি।”
“আরেকটায় হবে না মেহু।”
“আচ্ছা আরো দু’টো নিয়ে আসছি হ্যাপি।”
রাইফা ওপর নিচ করে হাসলো। মেহবিন হেঁসে বের হলো আর বলল,,
‘রাইফা এখন খাবে কেউ যেন ভেতরে না ঢুকে।”
তখন সায়িদ বলল,,
“আমরা তো কতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি ওর জন্য। ওকে দেখতে পেলে আমাদের ভালো লাগতো তাইনা।
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘আপনারা তো ওকে দেখে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা ভাবছেন তাই না। ওর জন্য কনসার্ন আমাকে দেখাতে আসবেন না। আপনাদের সবাইকে চেনা শেষ আমার।”
বলেই মেহবিন চলে গেল কিছুক্ষণ পর দুইটা কাপ নুডুলস নিয়ে ফিরে গেল। রাইফার ওটা খাওয়া শেষ মেহবিন একটা ওকে দিল একটা সে নিল একটা। রাইফা বলল,,
“অনেকদিন পর শান্তি মতো নিজের পছন্দের নুডুলস খেলাম। শুকরিয়া মেহু।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“তোর মরার এতো তাড়া এখন মরলে কি এই নুডুলস খেতে পেতি।”
‘সত্যি কথাই বলেছিস তুই। সত্যি সত্যি মরলে মিস করতাম এটা।”
বলেই রাইফা হাসলো। মেহবিন কিছু বললো না বাইরে এসে সবাইকে দেখা করতে সবাই এক এক করে দেখা করলো। তখন রিপোর্ট এলো মেহবিন রিপোর্ট টা খুলে দেখতেই ওর মাথা ঘুরে গেল। তখন সবাই ওখানেই ছিল। রিপোর্ট এসেছে শুনে শেখ শাহনাওয়াজ শেখ আমজাদ আর সায়িদ মেহবিনের দিকে গেল। মেহবিন রাইফার কেবিনের বাইরে বসে ছিল বেঞ্চে আর চিন্তিত অবস্থায় রিপোর্ট দেখছিল। ওর চেহারা দেখে শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কি আছে রিপোর্ট এ?”
মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,
“রাইয়ের ব্রেন টিউমার যা এখন সময়ের সাথে বেশ বড় আকার ধারন করেছে। খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে হবে আর অপারেশনটাও বেশ রিস্কি। তাছাড়া ,
এইটুকু বলেই মেহবিন থামলো শেখ আমজাদ বললেন,,
“তাছাড়া কি?”
“রাইফার একটা কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে আরেকটা ড্যামেজের পথে। খুব তাড়াতাড়ি করে অপারেশন করতে হবে। আর দুটো অপারেশনই জরুরি। কিন্তু ওর শরীর দুটোর ধকল সহ্য করতে পারবে কিনা এটা নিয়ে যথেষ্ট ভয় আছে। কিন্তু ওকে দেখে এতটা অসুস্থ মনে হচ্ছিল না। ওকে দেখে সুস্থ স্বাভাবিক লাগছিল।
সব শুনে রাইফার মা বাবা কেঁদে উঠলো। সবারই খারাপ লাগছে। মেহবিন সায়িদের দিকে তাকালো। তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মেহবিন বলল,,
“ওর এখন বেস্ট ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন।”
তখন সায়িদ বলল,,
“রাইফাকে এখানে রাখা ঠিক হবেনা। ওকে এখনই আমাদের হাসপাতালে বেস্ট কেবিনে শিফট করতে হবে। আর হ্যা ওখানে গিয়ে আমরা আবার ওর টেস্ট করাবো। তারপর শিওর হয়ে চিকিৎসা নেব।”
“আপনারা ভাবলেন কি করে? আমি রাইফার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা আপনাদের ওপরে ছেড়ে দেব।”
কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। সায়িদ বলল,,
“তো তুমি করবে? তুমি এই সরকারি হাসপাতাল থেকে কি করবে। তাছাড়া কয়টাকা আছে তোমার ? আমাদের হাসপাতাল নামকরা হাসপাতাল ওখানের ট্রিটমেন্ট ও বেস্ট। তাছাড়া বেস্ট ডক্টরদের সাথে কনসার্ন করে রাইফার চিকিৎসা করাতে হবে। আমি ওর জন্য বেস্ট ডক্টর আনবো। রাইফা ভালো হয়ে যাবে।”
মেহবিন কিছু বলবে তার আগে মেহবিনের ফোন এলো ও ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে বলল,,
” ম্যাডাম রিপোর্ট এ একটা জিনিস দেওয়া হয় নি। ভুল হয়ে গেছে একটা।
‘কি দেওয়া হয় নি।”
“মিসেস রাইফা আফনূর এর শরীরে একটা কেমিক্যাল পাওয়া গেছে। ”
“কি কেমিক্যাল?”
লোকটা কেমিক্যাল এর নাম বলতেই মেহবিনের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো আর লোকটা এটাও বলল বেশ কয়েকবার এই কেমিক্যাল রাইফার শরীরে দেওয়া হয়েছে। শুনেই মেহবিন দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে বলল,
“আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। কিছু একটা তো চোখের আড়ালে হচ্ছে।
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। ওর শরীর রাগে জ্বলছে আর ওর মনে হচ্ছে শেখ পরিবার কে মেরে ফেলতে। রাইয়ের শরীরে এমন কেমিক্যাল পাওয়া গেছে যা কিডনি ড্যামেজ করে ফেলে। আর ঐ কেমিক্যালের জন্যই ওর একটা কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি কিছু না করলে আরেকটাও হয়ে যাবে। মেহবিন সায়িদের দিকে তাকালো । মেহবিন বড় বড় শ্বাস নিল। তখন শেখ শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কি হয়েছে আপনি এরকম রেগে যাচ্ছেন কেন?’
মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,
“কিছু না আপনাদের তো রাইফাকে দেখা হয়ে গেছে এখন বাড়ি চলে যান।”
তখন শেখ আমজাদ বলল,,
‘আমরা রাইফাকে নিয়ে যাবো এখান থেকে। এই সরকারি হাসপাতালে রাখবো না। রাইফার জন্য এক একটা মুহুর্ত খুব দামী। শরীরের যে কন্ডিশন? কোন ভালো স্পেশালিস্ট দিয়ে ওর অপারেশন করাতে হবে। আমার পরিচিত ভালো ডক্টর আছে আমি তাদের সাথে কথা বলছি। আমাদের হাসপাতালে নিয়ে ওর বেটার ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। যা আপনার ভরসায় আমি ফেলে রাখবো না। আপনি আর কয় টাকায় রোজগার করেন আমাদের মতো ভালো ডাক্তার ট্রিটমেন্ট তো দূরে থাক আপনি তো ভালো হাসপাতালে ওর এডমিট ও করতে পারবেন না। তাছাড়া কিডনি ও তো লাগবে সেটা দেবে কে আপনি। ব্রেন টিউমার এর জন্য বেস্ট ডাক্তার লাগবে আপনার মতো নগন্য সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার বেস্ট ডাক্তারের কি বেস্ট ডাক্তারের সাথে পরিচয় আছে আর থাকলেও ওনার ফিস দিতে পারবে তুমি। আমরা ওকে বাইরের দেশে পাঠাবো চিকিৎসার জন্য। আমরা ওর পরিবার আর আপনি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়তো আগে ছিলে এখন দেখে মনে হয় নও। আমরা তোমার ভরসায় ওকে ফেলে রাখবো না। তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো না। তাছাড়া যার কোন ফ্যামিলি নেই সে ফ্যামিলির মানে বুঝবে না।
শেখ আমজাদের এমন কথায় রাই শান্ত ভাবেই তার দিকে তাকালো। তারপর শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তারপর মুখরদের পরিবারের দিকে তারা সবাই ওর দিকে অসহায় চোখে তাকালো। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“আমার বুঝতেও হবে না এইসব ফ্যামিলির মানে। আর বাকিটা না হয় আমার হাতেই ছেড়ে দিন। আপনারা যতো যাই বলুন না কেন আমি আপনাদের হাতে রাইকে তুলে দেব না। ”
বলেই ফোন বের করে মেহবিন রাই মালিকের নাম্বারে ফোন করলো। ওপাশ থেকে রাই ফোন ধরতেই বলল,,
“কাল বাংলাদেশ সময় দুটোর আগে তোকে আমার এখানে দেখতে চাই। আর হ্যা তোকে মেইল পাঠাচ্ছি একজনের সেটা দেখে অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিবি।”
“মানে তুই থাকতে আমি!”
‘আমার হাতের অবস্থা ভালো নয় আর আমি রাইয়ের ব্যাপারে কোন রিস্ক নিতে রাজি নই। রাখছি কাল দেখা হচ্ছে।”
বলেই মেহবিন ফোন কেটে দিল। তারপর আরেকজনকে আরেকটা কল দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। কিছুক্ষণ পর আবার দিল এখন ফোনটা রিসিভ হলো ও ইংলিশ এ বলল,,
“হ্যালো ডক্টর ইলিয়ানা ফার্নান্দেজ আমি ডক্টর মেহবিন মুসকান। আপনার একটা সাহায্য লাগবে। একটা পেশেন্ট তার ব্রেন টিউমার হয়েছে এবং বড় আকার ধারণ করেছে। ব্যাপারটা খুব রিস্কি। আপনি যদি তার অপারেশন টা করতেন। আমি ওখানে তাকে পাঠাবো।আমি ডিটেলস পাঠাচ্ছি আপনাকে।
তিনি জানালো সে পারবে। মেহবিন বলল সে বিশ দিনের মধ্যে তাকে পাঠাবে। তিনি যেন তার অবস্থা দেখে অপারেশনটা করে। কথা বলা শেষ করে মেহবিন শেখ আমাজাদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“সি শেখ আমজাদ দুটো বেস্ট ডক্টর রেডি। রাই মালিক কে তো চিনেন। আর ডক্টর ইলিয়ানা ফার্নান্দেজ কেও চেনার কথা। এমন কোন রেপুটেডেড ডক্টর নেই যে ইলিয়ানা ফার্নান্দেজ কে না চিনে এবং অপারেশনের ডেট ও প্রায় রেডি। হয়ে গেছে সব দেখা এখন আপনারা যে যার মতো বাড়ি যেতে পারেন।
সবাই সব দেখে অবাক হয়ে গেল কে কি বলবে। মুখরের পরিবার ও কম অবাক হয় নি। শুধু অবাক হয় নি মুখর আর শেখ শাহনাওয়াজ। তখন সায়িদ বলল,,
“সব বুঝলাম কিন্তু কিডনি! কিডনি পাবে কোথায়? আর টাকা এতো গুলো টাকা কি উরে উপরে আসবে নাকি?”
“টাকার ব্যাপারটা না হয় আমার ওপর ছেড়ে দিন। আর কিডনি সে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। আর যদি না পারি তাহলে নিশাচর কে ফোন করবো কিডনির জন্য।”
বলেই মেহবিন হেঁসে ওখান থেকে চলে এলো। একবার রাইকে দেখলো ও ঘুমাচ্ছে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। শেখ বাড়ির সকলে চলে গেল। মেহবিন কাউকে কিডনির কথা বলে রাইফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। পাচ মিনিট পর ফোনে একটা ফোন এলো। মেহবিন ফোন উঠালো ও কিছু বলবে তার আগে ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,
“শুনলাম তুমি তোমার বান্ধবীর জন্য নাকি আমার কাছে কল করবে? তুমি বোধহয় ব্যস্ত আছো খুব। তাই ভাবলাম আমিই করি।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“ভালো করেছেন কল দিয়ে। কি করবো বলুন এতকিছু কি আর একসাথে করা যায়।”
‘আমার কাজকে বেআইনি অবৈধ বলো আবার অন্যায় বলো। দেখলে তো এই কাজ মানুষের কতো সাহায্যে আসে। এখন তুমি ইমার্জেন্সি কিডনি কোথায় পাবে সেই আমার দ্বারস্থ হতে হলো। তো বলো তোমার বান্ধবীর কিরকম কিডনি লাগবে ডিটেলস বলো। আমি পাঠিয়ে দেব সমস্যা নেই আমি টাকা নেব না। শুধু একটা কথা দেবে তুমি আমার দূরে থাকবে।”
মেহবিন হাঁসি মুখেই বলল,,
“সেদিন আমার সাথে কথা বললেন তবুও আপনার এতো ভয় আমাকে নিয়ে। বাহ বেশ লাগলো তো! তবে আপনাকে কে বলল আমি অবৈধ অন্যায়ভাবে নেওয়া কিডনি আমার বান্ধবীর শরীরে ঢুকাবো।”
‘মানে?”
“মানে আমি তখন এমনিই বলেছিলাম যে নিশাচর কে ফোন করবো। তার মানে এই নয় সত্যি সত্যি আপনাকে কল করে বলবো কিডনির জন্য। আমার কিডনি রেডি কালকেই এসে পরবে। তবে আপনাকে ধন্যবাদ।”
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। ফোনের দিকে তাকাতেই ওর মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। ও কাউকে ফোন করে বলল,,
“নাম্বারটার ঠিকুচি গুষ্টি সব আমার চাই।”
বলেই ফোন রেখে হেঁসে বলল,,
“আপনাকে এতটা বোকা ভাবিনি আমি নিশাচর। আপনার নাম বলতেই আপনি খুশিমনে আমাকে কোন ননট্র্যাকার প্রাইভেট নাম্বার ছাড়াই আমাকে ফোন করবেন আমি ভাবতেও পারিনি। একে বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা আমি তো ইচ্ছে করেই আপনার নাম নিয়েছিলাম।”
~চলবে,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেহবিন রাইফার দিকে তাকাতেই দেখলো ও অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মেহবিন বলল,,
“তুই ঘুমাস নি?”
রাইফা বলল,,
‘ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু হুট করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তোর দিকে তাকাতেই একটা অদ্ভুত ইচ্ছে হচ্ছে।”
“কি ইচ্ছে?”
“আজ চাঁদ উঠেছে তাই না?”
মেহবিন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বলল,,
‘হুম উঠেছে।”
“তোর কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্রবিলাশ করতে ইচ্ছে করছে খুব। কে জানে হয়তো আর কোনদিন এই সুযোগটা পাবো কিনা?”
মেহবিন ওর দিকে তাকালো আর বলল,,
“কেন পারবি না এখনো অনেকটা সময় বাকি আছে তোর।”
‘কেন মিথ্যা বলছিস বলতো?আচ্ছা যাই হোক এখন পুরোনো কথা বাদ। এখন তুই বল আমার ইচ্ছেটা পূরন করবি কিনা?
মেহবিন বুঝতে পারলো ও একটু ভালো থাকতে চাইছে তাই কিছু বললো না। ও এগিয়ে গিয়ে আয়াতুল কুরসি আর তিন কুল পাঠ করে ফু দিল। নিজেও পড়লো নিজের জন্য তারপর বলল,,
“হাঁটতে পারবি?”
‘না হাঁটতে পারলে কি তুই কোলে নিবি? তখন তো ঠিকই এনেছিলি। আচ্ছা আমায় বল তুই এতো শক্তি পাস কোথায় বলতো। যদিও আমি মোটা না তবুও একটা ব্যাপার আছে তো?”
মেহবিন কিছু বললো না হেঁসে ওর হাতের ক্যানুলা থেকে স্যালাইন এর পাইপটা খুলে ফেলল তারপর ওকে কোলে নিল। হাঁটা ধরলো লিফট দিয়ে সোজা ছাদে চলে গেল। যদিও সবার যাওয়ার অনুমতি নেই তবে মেহবিনের আছে। রাত দশটা বেশ মানুষের আনাগোনা এখনো আছে। একজন মেয়ে আরেকজন মেয়েকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে দেখে সবাই ওদিকে তাকিয়ে ছিল তাতে মেহবিনের কি সে তার কাজ ঠিকই করলো। ছাদে দু’টো বেঞ্চ রাখা উঠে তার একটাতে রাইকে বসিয়ে দিল।সাথে নিজেও বসলো মেহবিন একটু হাঁপিয়ে গেছে ও বড় বড় করে শ্বাস নিল। তারপর বলল,,
“নিন এবার মাথা রেখে চন্দ্রবিলাশ করুন ম্যাডাম। চাঁদটা যে আপনার দেখারই অপেক্ষায় ছিল আজ।”
রাইফা মুচকি হেসে মেহবিনের দিকে তাকালো। রাইফা মাথা রাখলো তারপর একটু চাঁদের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘এই চাঁদটাও কি অদ্ভুত মেহু প্রথম প্রথম দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে জীবনের কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে অসহায় করে দেয়। মনে করিয়ে দেয় তার একাকীত্বতা।”
“কিছু কিছু জিনিসের একাকীত্বতাই তার সৌন্দর্য!”
“আমাদের বিচ্ছেদের কারন কি মেহু?’
মেহবিন রাইফার দিকে তাকালো। রাইফা নিজেও সোজা হয়ে বসে মেহবিনের দিকে তাকালো। মেহবিন মুচকি হাসলো আর বলল,,
“সেটা তো আমার থেকে ভালো তুই জানিস?”
‘তোকে বিশ্বাস না করে সেদিন সাগরিকাকে সঙ্গ দেওয়াই হয়তো কারন টা।”
মেহবিন হাসলো আর বলল,
“আচ্ছা সেসব তো পরের কথা আর আগের কথাগুলো বল তোকে সাগরিকার রাই ডাকা। ওর সাথে বেশি সময় কাটানো ওর সাথে বাড়ি ফেরা আমাকে একটাও ফোন না করা ওগুলো কি ছিল রাই?
“সেগুলো করাই আমার ভুল ছিল। ওকে রাই বলাতে কিছু বলি নি ও মায়ের সামনে একদিন বলেছিল আমরা তো বন্ধু তাহলে ও তো রাই বলে ডাকতেই পারে । মা বলেছিল কেন নয় তাই কিছু বলিনি। তবে ওর সাথে কথা বলা ও নিজেই কথা দিয়ে ব্যস্ত রাখতো। আর বাড়িতেও তেমনই সবসময় চিপকে থাকতো আমি সৌজন্যতার খাতিরে কিছুই করতে পারতাম না। ”
“ভুল বললি রাই? একটা মানুষ চব্বিশ ঘন্টা ব্যস্ত থাকে না। তখন ওর নতুন নতুন জিনিস তোকে মুগ্ধ করতো। তোকে মাঝে মাঝে গিফট করতো এটা তোর ভালো লাগতো । ওর প্রতি তোর সফট কর্নার তৈরি হয়েছিল। সবথেকে বড় কথা কিছু সময়ের জন্য হলেও আমার থেকে ওর সঙ্গ তোর ভালো লাগতো। তাই তুই ওর সাথে থাকতি। আমি তোকে ভালোভাবেই চিনি রাই আমাকে দয়া করে কোন এক্সিউজ দিস না।”
সব শুনে রাইয়ের চোখ ছলছল করে উঠলো। এই মেয়েটা এখনো ওকে ভালো মতো চেনে।
“আমি তোকে বিশ্বাস করি মেহু?”
মেহবিন কিছু বললো না শুধু হাসলো। তা দেখে রাইফা বলল,,
“তুই ভাবছিস অবিশ্বাসের জন্য বিচ্ছেদ হয়েছে কিন্তু আমার কাছে তা অভিমানের জন্য। সেদিন সেসব কথা শুনে অনেক রাগ হয়েছিল কিন্তু আমি পুরোপুরি তোকে অবিশ্বাস করিনি। আমি মনে মনে কতোবার ধোঁকাবাজ বলার জন্য মাফ চেয়েছি তুই ভাবতেও পারবি না। আমি মনে মনে শুধু বলতাম প্লিজ মেহু তুই একবার আমার সাথে কথা বল একবার আমার কাছে আয় আমি তোকে আবার আমার বন্ধু করে নেব। কিন্তু তুই করলি না আমার অভিমানের পাহাড় বাড়তে লাগলো। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম সত্যিই তুই করেছিস নাহলে এতো দিনে তুই আমার কাছে ফিরে আসতি। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম তুই না আসলে আমিও যাবো না তবে তুই একবার এসে সব বললে আমি আবার তোর কাছে চলে যাবো। সেই জন্য তোকে ইগনোর করে দেখিয়ে দেখিয়ে সাগরিকার সাথে কথা বলতাম সেই ঘটনার পর। যাতে তুই রেগে গিয়ে সব প্রমান করে দিস কিন্তু সেসব কিছুই করলি না। তবুও আমি অপেক্ষায় ছিলাম তুই আয় আর সবকিছু মিথ্যে প্রমান করে দে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার বন্ধুর ব্যক্তিত্ব কে,সে কাউকে মানাবে না। যারা তার জীবনে থাকবে তাকে বিশ্বাস ভরসা করেই থাকতে হবে সে কাউকে ফেরাবে না মানাবে না। আর আমি এটাও জানতাম আমি যদি তোর কাছে যাই তাহলে তুই আমায় আগলে নিবি। আর এখানেই সবথেকে বড় ভুল করে বসি অভিমানে তোর কাছে না গিয়ে আমি তোর থেকে দূরে সরে গেলাম।
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“এই একটা কারনেই তুই আজ এখানে? যদি সত্যি সত্যি আমায় অবিশ্বাস করতি তাহলে তুই এখানে তো দূর মরে যাওয়ার আগে আমার দেখাটাও পেতি না। আমি তো তোর চোখ দেখেই বুঝতাম তুই কি চাইছিস তবে এবার আমার অভিমান ছিল তোর ওপর যে তুই আমার জন্য সবার সামনে বলতে পারলি না যে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে চিনি তোদের ঠুনকো কাউয়ার কথায় আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে অবিশ্বাস করি না। আমার অভিমান এ আরেকটু ঘি ঢেলে তুই আমার জন্য আনা ফুল চকলেট ওকে দিলি। তবে থেকেই আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করি আমি নিজ থেকে তোকে মানাবো না। আমিও ভাবতাম আর মনে মনে বলতাম ফিরে আয় রাই আমার গলা জড়িয়ে ধরে একবার বল আমি তোকে বিশ্বাস করি সেদিন যা ছিল সব ভুল ছিল। যদি তুই একবার বলতি আমি তোকে আগলে নিতাম কিন্তু তুই বললি না। আমি ভেবেছিলাম এবার আমি নয় সব তুই বের করবি কিন্তু তুই তো কিছুই করলি না সব সবসময় এর জন্য আমার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলি।
রাইফা হেঁসে বলল,,
“তুই আমার পথ চেয়েছিলি আর আমি তোর যার জন্য আমাদের এই বিচ্ছেদ। ”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“এটাই আজকাল কার একটা বড় সমস্যা। আমরা ভাবি আমরা কেন এগিয়ে যাবো আমাদের ইগো হার্ট হবে অপরজন আসুক তাহলেই আমরা সম্পর্ক ঠিক করে নেব। ঠিক এই কারনেই দুজন দুজনের দিক থেকে এগোয় না যার দরুন এই বিচ্ছেদ। যদি একজন এগুতো তাহলেই কিন্তু সম্পর্ক টা থেকে যেত।কিন্তু মিসেস রাইফা আফনূর আপনি আপনার এই অভিমানের আর অপেক্ষার দরুন তৃতীয় ব্যক্তিকে জিতিয়ে দিয়েছেন।
“মাফ করে দে মেহু। লাস্ট পরীক্ষার দিন তুই চলে যাওয়ার পর আমি দুঃখী মনে বাড়ি ফিরি। বিকেলে ছাদে উঠে দেখি সাগরিকা আর একটা ছেলে আমাদের নিয়ে কথা বলছে আমাদের ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে সেদিনের সেই চিঠি সেই ছেলেটা লিখেছিল আর লাস্ট ক্লাসের দিন যারা সাগরিকার সাথে তোর নামে বলেছিল তাদের ওরা পাঁচশ টাকা করে একেকজন কে দিয়ে বলিয়ে ছিল যাতে আমি তোকে অবিশ্বাস করি । আর আমাদের ফ্রেন্ডশীপ ভেঙে যায়। সব কিছু শুনে আমার পায়ের নিচ মাটি চলে যায়। আমি যার জন্য তোকে দায়ী করতাম সেটা ছিল ওরা। আমি সব অভিমান ভুলে দৌড়ে নিচে এসে মায়ের কাছে বলে তোদের বাড়ি গেলাম গিয়ে দেখি তালা তোরা নেই চলে গেছিস। তুই জানিস না মেহু সেদিন চিৎকার করে আমি কেদেছিলাম তোর বাড়ির সামনে আমি আমার একটু অভিমানের দরুন তোকে হাড়িয়ে ফেললাম। নিজের কাছে নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছিল। এরপর আমি আর কাউকে বন্ধু বানাইনি মেহু আমার জীবনে তুই ছাড়া আর কোন বন্ধু নেই মেহু।
রাইয়ের চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। মেহবিন তা মুছে দিল। তারপর মুচকি হেসে বলল,,
“তারপর তারপর কি হয়েছিল সাগরিকার কিছু কি হয়েছিল?”
“বাড়ি গিয়ে দেখি আঙ্কেল ইচ্ছে মতো সাগরিকা কে পেটাচ্ছে। সাগরিকা চিৎকার করছে আর কাঁদছে।আমি তো থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি নিজেই নিয়ত করেছিলাম দু’টো থাপ্পড় হলেও ওকে মারবো। পরে জানতে পারলাম ও একটা ছেলের সাথে লিপ কিস করছিল আর সেটা কেউ ছবি তুলে ওর বাবাকে পাঠিয়েছে এই জন্য পেটাচ্ছে। বাড়ির মানসম্মান ভুলে এসব করেছে দেখে। সেটা আবার মুহুর্তেই পুরো মহল্লায় ছড়িয়ে পরেছে সবাই ছি ছি করছিল। শেষে বাধ্য হয়ে পরের দিন ওরা এলাকা ছাড়লো।”
মেহবিন এবার একটু জোরেই হাসলো আর বলল,,
“বাহ কেয়া সিন হে!! ইস মিস্টার আলম সেদিন বাসা না চেন্জ করলে এই দৃশ্যটা দেখতে পেতাম।”
“এক মিনিট এক মিনিট তুই বললি সাগরিকার কি হয়েছিল তার মানে তুই?”
মেহবিন হেঁসে মাথা নাড়িয়ে বলল,,
“আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে দিল আর আমি ওকে ছাড়বো নাকি। আমাকে তো ভালো করেই চিনিস আমার সাথে কেউ অন্যায় করলে আমি অবশ্যই তাকে শাস্তি দিই।”
এবার রাইফাও হাসলো একটু পর বলল,,
“আচ্ছা এইসবে সাগরিকার কি স্বার্থ ছিল। ও কিসের জন্য আমাদের এতো সুন্দর সম্পর্ক টা নষ্ট করলো?
“তোর তোদের এলাকার এক নামধারী নেতার ছেলে শফিক কে মনে আছে রাই? যে ছেলেটা তোকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিল আর অসভ্যতা করেছিল বলে আমি মেরে ওর বাবার কাছে বিচার দিয়েছিলাম।”
“হুম মনে আছে তো? এই সবের সাথে এটার কি সম্পর্ক?”
“সেই ছেলেটাকে সাগরিকা পছন্দ করতো।”
“ওয়াক থু ঐ মেয়ের এইরকম থার্ড ক্লাস পুলাপাইন পছন্দ।”
রাইয়ের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“যে যেরকম তার চয়েজ তো সেরকমই হবে। সেই ছেলেটাকে ও জানায় ওর মনের কথা। পরে সেই ছেলেটা আমাদের ফ্রেন্ডশীপ ভাঙার কথা বলে। যদি ভাঙতে পারে তবেই ও রাজি হবে। আমি না থাকলে তুই কিছুই না। তাই আমাদের ফ্রেন্ডশীপ ভাঙার জন্য ওকে পাঠায়। কিন্তু মেয়েটা ছেলেটার জন্য এতটাই পাগল যে এই কাজটাও করে ফেলল যেদিন আমাদের ফ্রেন্ডশীপ ভাঙলো সেদিন ছেলেটা খুশি মনে ওর সাথে রিলেশন এ জড়িয়েছে। এমন কি?”
রাইফা ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো তা দেখে ও বলল,,
“না কিছু না?”
“এই কি তারপর বল?”
“না ওসব বড় মাইনষের কথা তোর শোনা লাগবে না?”
রাইফা ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকায়। আর বলে “তুই বলবি?”
“তাদের ওষ্ঠদয়ের মিলনায়তন ও হয়েছিল।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। এইডা কি কইলি তুই ধুর ধুর ঐ রহম একটা মাইয়ার লগে আমি আছিলাম তোরে দেখাইয়া দেখাইয়া আবার হাত ও ধরছি। আল্লাহ মাফ করো। একে তো হারাম রিলেশনশিপ তারপর আবার কঠিন যেনা। আল্লাহ এর থেকে সবাইকে রহম করুন।
“সাগরিকা এক বছর আগে মারা গেছে রাই?”
হুট করে এমন কথায় রাই থমকে গেল। আর বলল,
“কি কিভাবে? আর তুই জানলি কিভাবে?”
‘আমি আগে যে হাসপাতালে ছিলাম সেই হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ব্লাড ক্যান্সার হয়েছিল। আমাকে দেখে চিনতে পেরে আমার কাছে সবকিছুর জন্য মাফ চায়। শেষে এটাও বলেছিল ওর পাপের জন্যই নাকি ওর এই অবস্থা। আমি আর কিছু বলিনি।”
সব শুনে রাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আর বলল,,
“আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না এটাই তার প্রমান?”
‘তুই ভালো নেই কেন রাই? আমি সবকিছু শুনতে চাই।আমি এও জানি তুই অনেককিছুই জানিস।”
রাই আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“সেইসব বলতেই তোকে এখানে নিয়ে আসা আমার একটু খোলা আকাশ আর একজন মানুষ দরকার ছিল যাকে আমি সব বলতে পারবো। আমার ভিশন দমবন্ধ লাগে। বোধহয় কত যুগ ধরে আমি শান্তিতে নিঃশ্বাস নিই না।
রাইফা মেহবিনের কাঁধে মাথা রাখলো তারপর হাত জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলতে শুরু করল,,
“পড়াশোনা শেষ বাবা বিয়ের কথা কথা ভাবছিল। তখন শেখ পরিবার থেকে আমার জন্য প্রপোজাল যায়। এতো ভালো পরিবার ডাক্তার ছেলে দেখে সবাই রাজি হয়ে যায়। আমিও সায়িদের সাথে কথা বলে মনে হয় ভালোই তবুও কোথাও একটা কিন্তু রয়ে যায়। আমি ওকে পুরোপুরি ভাবে ভরসা করে বিয়ে করতে পারছিলাম না। কিন্তু মা বাবা রাজি বিধায় আমি কিছু বলি নি। আমিও রাজি হয়ে যাই। সবকিছু ঠিকঠাক বিয়েটাও হয়ে গেল আমি নিজেকে মানালাম। বাসর ঘরে ঢুকেই আমি দেখলাম সেখানে নুপুর বসে আছে।
“ডক্টর নুপুর?”
“হুম! ডক্টর নুপুর সে আমায় জানালো ওর আর সায়িদ রিলেশনে আছে। কিছুক্ষণ পর সায়িদ ও ঢুকলো ওকে দেখে বোঝা গেল ও নুপুরকে আশা করেনি। ওর দিকে তাকিয়ে সায়িদ ও ওদের ব্যাপারে জানালো। পরে আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম তাহলে বিয়েটা করলো কেন? সে জানালো বাবা কাকারা ওপরে নাকি বলতে পারেনি। দুজনে মিলে আমায় শাসাচ্ছিল আমি যেন কাউকে কিছু না বলি। আমি কি বলবো আমার ভেতর থেকে কোন আওয়াজই বের হচ্ছিল না। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। তখন সায়িদ আমাকে বলল আমি যেন ওর ওপর কোন আশা না রাখি আর কাউকে যদি কিছু বলি তাহলে নাকি বাবার ব্যবসা ডুবিয়ে দেবে একটা ভিডিও দেখালো যেখানে আমার বাবার সব ডকুমেন্ট এর ফাইল। আর বলল আমার পরিবার কে শেষ করে ফেলবে। আমি ভয় পেয়ে যাই। আমি বলি কিছু বলবো না। তখন নুপুর ওকে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে বেরিয়ে গেল। বুঝিয়ে দিয়ে গেল এই মানুষটি আমার। এসব দেখে আমার একটুও সহ্য হচ্ছিল না
আমি তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে চলে যাই আমি সেদিন চিৎকার করে কেঁদে ছিলাম তবে মুখে কাপড় দিয়ে যাতে আওয়াজ বাইরে না যায়।”
মেহবিন নিজের কাঁধে তরল কিছু অনুভব করলো ও বুঝতে পারল রাইফা কাঁদছে। ও একহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আবার রাইফা বলল,,
“ঘন্টাখানেক কান্না করে বের হলাম। আমি কোনদিকে না তাকিয়ে জামাকাপড় নিয়ে ফ্রেশ হলাম তারপর সোফায় ঘুমিয়ে পরলাম। আর সায়িদ এলোমেলো ভাবে বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। তার দিকে তাকিয়েই বলতে ইচ্ছে করলো সে আমার সাথে এমন কেন করলো। পরের দিন জানতে পারলাম বিদেশে যেতে হবে সায়িদের ডক্টর রিলেটেড কাজের জন্য। ও বলল চুপচাপ মেনে নিতে। এদিকে নুপুর ওকে যেতে দিতে চাইলো না। ও বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাকে নিয়ে বিদেশে গেল। প্রথম প্রথম ভালো ব্যবহারই করছিল আমি বললাম বিয়ে যেহেতু হয়েছে মানিয়ে নিতে কিছু ইসালামিক পরকীয়ার বিষয়েও বললাম ও বলল ওনাকি নুপুরকে ধোঁকা দিতে পারবে না যতোই হারাম রিলেশনশিপ হোক । ওনার ভালোবাসা দেখে আমিও মুগ্ধ হতে লাগলাম তবে ঐ যে হারাম ইজ হারাম। এই জন্য বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে লাগলাম। কিন্তু কাজ হলো না। আমিও হাল ছেড়ে দিলাম। এভাবেই একমাস পার হয়ে গেল। আমি এক ঘরে ঘুমাতাম ও এক ঘরে। রোজ নিয়ম করে নুপুরের সাথে কথা বলতো নুপুরই ফোন দিতো মুলত। একদিন খাবার খাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমার শরীরটা ভার ছেড়ে দিচ্ছে । আমি কোন রকমে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম। সকালে উঠে দেখি আমি এলোমেলো আর সায়িদ আমার পাশে। আর এটা সায়িদের ঘর। যা ঘটার রাতেই ঘটে গেছে। সকালে উঠে সায়িদ এমন একটা ভান করলো আমি গিয়েছি ওর রুমে। কিন্তু আমার মনে ছিল আমি আমার রুমেই শুয়ে ছিলাম। আমাকে নানা কথা বলতে লাগলো আমি নাকি ওর কাছে গিয়েছি ও পুরুষ মানুষ ঘুমের ঘোরে নুপুরকে ভেবে এসব করে ফেলেছে মানে আমারই দোষ। নিজের ওপরেই সেদিন নিজের ঘৃনা লাগছিল। এভাবেই চার পাঁচ দিন গেল আমি ওর মুখোমুখি হলাম না। সেদিন রাতে সায়িদই ডাকে যা হওয়ার হয়ে গেছে আমরা তো হাজবেন্ড ওয়াইফ বৈধতা আছে নিজেকে ছোট ভাবার কারন নেই আরো কতো কিছু। আমি কিছুই বলি নি একসাথে খাবার খেতে বললে আমিও খেলাম। কিন্তু খাবার খেয়ে উঠতেই দেখি আমার নিজের ওপর কোন কন্ট্রোল নেই। গলা শুকিয়ে আসছে হাত পা অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে।তখন সায়িদ এসে আমাকে কোলে নিয়ে বলল সেদিন তুমি অজ্ঞান অবস্থায় অনেক আনন্দ লেগেছিল ভাবলাম অজ্ঞান অবস্থায়ই এতটা আনন্দ তাহলে সজ্ঞানে থাকলে না জানি কি পেতাম। বলেই বিছানায় ফেলে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো আর আমি কিছুই করতে পারলাম না। সেদিন কতটা অসহায় ছিলাম তোকে বোঝাতেও পারবো না মেহু।
রাইফা জোরেই কেঁদে উঠলো। মেহবিন রাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাইফা বলল,,
“কি ভাগ্য আমার নিজের স্বামীর কাছেই ধর্ষিত হলাম আমি মেহু ! কারন ওটায় তো আমার সম্মতি ছিল না আমাকে ওষুধ খায়িয়ে জোর করেই করেছে তাহলে তো ওটা ধর্ষণই বলে তাই না।”
মেহবিনের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঐ সায়িদকে শেষ করে ফেলতে। ও মনে মনে কিছু একটা ভেবেও ফেলল। তখন রাইফা বলল,,
“এভাবেই ও কতোবার জোর করে শাসিয়ে আমাকে ধর্ষণ করেছে তার হিসেব নেই। তখন তো আরেকটা ভয় ছিল। ও নিজের বউয়ের ভিডিও বানিয়েছিল। আমি মুখ খুললেই নাকি ও ওগুলো ভাইরাল করে দেবে। আর নুপুরকে তো জানতেই দেওয়া যাবে না। ও আমাকে বিদেশ থাকতে কি কি যেন ওষুধ খাওয়াতো জোর করে। যার জন্য বাচ্চা ও হবে না । আবার কয়েকবার শরীরে কিসের ইনজেকশন পুশ করতো আমি বুঝতেই পারতাম না ওর আমার সাথে ঠিক কি করতে চাইছে। বিদেশে ঐ ছয়মাসে নুপুর ও গিয়েছিল দুইবার ঐ দুইবারে নুপুর ও ওর সাথে শারীরিক মেলামেশা করতো। আমি ওখান থেকেই জানলাম সায়িদ আর নুপুর আগে বিদেশে এক জায়গায়ই পড়াশোনা করতো আর ওরা লিভ ইন এ ছিল। পড়াশোনা করতো আগে তখন ও সে এরকমই ছিল। এসব নুপুরই জানায়।আমার নিজের ওপরই নিজের রাগ হতো যে এই রকম মানুষের সাথে আমার জীবন জড়িয়ে গেছে। একদিন মাথা ঘুরে পরে যাই সায়িদ বাসায় ছিল না। আমাকে কাজের লোক হাসপাতালে নিয়ে যায় ওখানে গিয়ে টেস্ট করাতেই ব্রেন টিউমার ধরা পরে। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি অন্তত মরে গেলে এসব থেকে বেঁচে যাবো।তাই তো সব জেনেও আমি কিছু করতাম না ডাক্তার দেখাতাম না। নিজে সম্পূর্ণ চেষ্টা করতাম যাতে কেউ না বুঝতে পারে আমি অসুস্থ।
মেহবিন আজ নিজেকে অসহায় বোধ করলো। ওর ভেতরে অদ্ভুত যন্ত্রনা হচ্ছে। রাইফা ভাবছে মরে গেলেই এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। ভাবতেই ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। রাইফা আবার বলল,,
তারপর দেশে এলাম নুপুরের জন্য সায়িদ আমার সাথে মিশতে পারতো না। দুজনে মিলে কি করতো কে জানে। প্রায়ই সায়িদ গেস্ট রুম সবার থেকে লুকিয়ে ওর কাছে থাকতো আরবাজ ভাইয়ার বিয়ের কথা বলতেই আমি ভয় পেয়ে যাই। এদের দুজনের প্ল্যান ছিল নুপুরকে এবাড়িতে পার্মানেন্ট আনার। ওর সাথে আরবাজ ভাইয়ার বিয়ে দুজনের পরকীয়া করতে সুবিধা হবে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আরবাজ ভাইয়ার জন্য বিয়েটা হয় না। সেদিন দু’জনে জোর করে ধরে আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আজ সকালে জানতে পারলাম দু’জনে কথা বলছিল আমি লুকিয়ে তাদের কথা শুনছিলাম তারা আমার শরীরে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার ওষুধ দিয়েছে। আমাকে মেরে ফেলার জন্যই এই প্ল্যান। অন্য ভাবে মেরে ফেললে কেউ সন্দেহ করতে পারে আর যদি এভাবে মারা যাই তাহলে কেউ সন্দেহ করবে না। কারনটা হবে আমার দু’টো কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে। সব শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। বিকেল বেলা খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার মনে হচ্ছিল আর কাউকে না বলতে পারলেও আমি তোকে সব বলতে পারি। তোকে ভিশন দেখতেও ইচ্ছে করছিল তাই ফোন দিয়েছিলাম তোকে।
সব শুনে মেহবিন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রাইফা কে শক্ত করে ধরে বসে রইলো। তখন কাঁদলেও এখন রাইফা শান্ত। মেহবিন কিছু বললো না কিছুক্ষণ পর রাইফার দিকে তাকাতেই দেখলো ও ঘুমিয়ে পরেছে। মেহবিন রাইফার কপালে চুমু দিয়ে বলল,,
“তোর কিছু হবে না রাই আমি তো আছি। ইনশাআল্লাহ ঠিক তুই সুস্থ হয়ে যাবি। কষ্ট পাস না রাই তোকে যারা কষ্ট দিয়েছে তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে। আমি করবো সেই ব্যবস্থা।
মেহবিন রাইফাকে কোলে তুলে নিয়ে এসে কেবিনে শুয়িয়ে দিল। এবার মেহবিনের কষ্ট হলো বেশ। তবুও ও কিছু মনে করলো না। ও কাউকে ফোন দিয়ে বলল,,
‘ডক্টর সায়িদ আর আর ডক্টর নুপুরকে তোলার ব্যবস্থা করো কালকের মধ্যে। তাদের শাস্তির সময় ঘনিয়ে এসেছে। কালকে রাতেই তাদের শাস্তি প্রদান করা হবে।”
~চলবে,,
“