কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-৩৩+৩৪

0
436

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

কোন কিছুর আওয়াজ পেয়ে মুখর আরবাজ সহ সবাই মেহবিনের কেবিনে গেল। ওখানে যেতেই ওরা দেখল টুলটা উল্টে পরে আছে। মেহবিনের দিকে তাকাতেই দেখল মেহবিন চোখ খুলে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। আর কেমন যেন হাঁসফাঁস করছে বোধহয় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মুখর তাড়াতাড়ি করে ডক্টর ডাকলো ডক্টর এসেই মেহবিনকে দেখে একটা ইনজেকশন দিল। মেহবিন আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে চোখ বুঝলো। ডাক্তার জানালো আউট অফ ডেন্জার মেহবিন চিন্তার কোন কারন নেই। কথাটা শুনে সবাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো। তবে আরবাজ খুশি হওয়ার সাথে এটাও বুঝতে পারলো টুলটা মেহবিনের হাত লেগে পরেনি কেউ এসেছিল এখানে। অতঃপর অ্যাম্বুলেন্স আসতেই মেহবিন কে সেখানে উঠানো হলো। গন্তব্য কোন এক ভালো হাসপাতালে ‌। এদিকে মেহবিন জানতেও পারলো না কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে সে আর কাদের পেছনে ফেলে যাচ্ছে ‌সে।
______________

সকাল আটটায় তাজেল আসলো নওশিকে নিয়ে মেহবিন কে দেখতে। এখানে এসে জানতে পারলো মেহবিন এখানে নেই রাতেই ওকে ট্রিটমেন্ট এর জন্য ওর হাজবেন্ড অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে কিন্তু কোথায় গেছে তারা জানে না। সব শুনে তাজেল একদম চুপ হয়ে গেল। তখন নওশি বলল,,

“চল তাজেল আমরা বাড়ি যাই এখন।”

তাজেল কিছু বললো না ও হাঁটা ধরলো বাড়ির দিকে। হেঁটেই বাড়ি যাবে সে। নওশি বুঝতে পারলো তাজেলের খুব খারাপ লাগছে সাথে রাগ ও লাগছে। তাই নওশি তাজেলের কাছে গিয়ে বলল,,

“ডাক্তার আপার জামাইয়ের ওপর রাগ করিস না তাজেল। ডাক্তার আপার ভালোর লাইগাই তো ডাক্তার আপারে নিয়া গেছে অন্য জায়গায়।”

তাজেল এবার ও কিছু বললো না। সে হাঁটতেই লাগলো।
___________

“কিরে আরবাজ তুই আসলি কখন? তোর না হাসপাতালে থাকার কথা।”

সকালের খাবার খাওয়ার জন্য নিচে আসতেই উক্ত প্রশ্নটি শেখ আমজাদ করলেন। শুক্রবার সে বাড়ি ফিরেছে আজ যাবে আবার। আরবাজ চেয়ারে বসতে বসতে বলল,,

“কাল রাতেই ফিরেছি সবাই ঘুমিয়েছিল তাই কাউকেই জাগাইনি।”

“কেন? চলে এলি কেন?”

“ডক্টর মেহবিন এর হাজবেন্ড ওনাকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে তাই ।”

“কোথায় নিয়ে গেছে?”

“তা জানি না উনি বলেন নি।”

“ওহ আচ্ছা।”

তখন রাইফা বলল,,

“আরবাজ ভাইয়া ডক্টর মেহবিন এখন কেমন আছে?”

“কালকে রাতেই জ্ঞান ফিরে এসেছিল বলে ডক্টর বলেছে আউট অফ ডেন্জার চিন্তার কোন কারন নেই। তিনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। তা সবাই তো এসে পরেছে বাবা আর মিশু কোথায়?”

“ঐ তো আসছে দুজন।”

মিশু প্রতিদিনের তুলনায় আজ অনেকটা শান্ত সে চুপচাপ এসে তার বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে পড়লো। শেখ শাহনাওয়াজ ও বসলেন। শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“আরবাজ ডাক্তারের কি খবর?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো বাবা। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

তখন মিশু বলল,,

“আমি ফুলকে দেখতে যাবো বাবা।”

তখন আরবাজ বলল,,

“তোমার ফুল এখানে নেই। তোমার ফুলের জামাই তাকে নিয়ে গেছে অন্য জায়গায়।”

“ফুলের জামাই ও আছে বাজপাখি?”

“হুম আছে।”

“কই এতোদিন তো দেখলাম না।”

“কাল হাসপাতালে এসেছিল।”

তখন আরিফা জামান বললেন,,

“মেয়েটা যে বিবাহিত বুঝতেই পারি নি। কখনো বলেও নি আমাদের।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার সে কিভাবে কতটা নিজের জীবনবৃত্তান্ত অন্যদের জানাবে। এখন সবাই কথা বন্ধ করে খাবার খাওয়া শুরু করো।”

________________

মেহবিনের এক্সিডেন্টের বিশ দিন পার হয়ে গেছে আজ মাহফুজ শাহরিয়ার এর ওপর বড় একটা হামলা হয়। তিনি কোথাও থেকে অফিসে ফেরার পথে উক্ত ঘটনা ঘটে। এখন তিনি অপারেশন থিয়েটারের ভেতর রয়েছেন অবস্থা খুবই খারাপ তিনটে গুলি লেগেছে ওনার। পুরো শাহরিয়ার পরিবার থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি মুখর নিজেও পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস মাহমুজ সেই কখন থেকে কাঁদছেন মিসেস আছলাম তাকে সামলাচ্ছেন। নাফিয়াকে নিসা সামলাচ্ছে। আছলাম শাহরিয়ার তার মাকে অর্থাৎ আছিয়া খাতুন কে। আলভি ওষুধ পত্র রক্তের সবকিছু ব্যবস্থা করছে। এই সময় মুখরের পাশে কেউ নেই সে একা দেয়ালের সাথে চেপে দাড়িয়ে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। ভিশন কান্না পাচ্ছে তার কিন্তু সে কাঁদলে তার মা আর বোনসহ পুরো পরিবার আরো ভেঙে পরবে তাই শক্ত হয়ে রয়েছে। মিসেস আছলাম , আছলাম শাহরিয়ার এর কাছে এসে বললেন,,

“এখানে মেহবিনের থাকা উচিৎ নয় কি। পরিবারের এই অবস্থা তারওপর যে হাসপাতালে সে সম্পর্কে তার শ্বশুর তার ওপর কি মেহবিনের কোন দায়িত্ব নেই। মানলাম ও আমাদের বাড়ি থাকে না ওকে উঠিয়ে আনা হয়নি। কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় নি। মা ওর ওপর কিছু শর্তারোপ করেছেন।তাই বলে কি খারাপ সময়েও সব ছেড়ে দেবে। পরিবারের পাশে থাকবে না।

কথাটা ওখানে থাকা সবাই শুনলো। মুখর ওর মা ওর বোনের কানেও গেল। মুখর পুরোটা শুনে আরো পাথর হয়ে গেছে। সব শুনে আছলাম শাহরিয়ার মুখরের কাছে গিয়ে বলল,,

“মেহবিন কিছু জানে? ও যদি,,

হুট করেই আছিয়া খাতুন আছলাম শাহরিয়ার কে না বলতে দিয়ে মুখরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,,

“সারা শহর জানে হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিক পুলিশগো অভাব নাই। আর ও জানবো না।তোমার বউ কই মুখর। বাড়ির বউ হে পরিবারের ওপর এতোবড় একটা ঝড় যাইতেছে সে কই? নাকি আসবো না। সে কি তার শ্বশুরের মরার জন্য অপেক্ষা করতেছে নাকি এখন আসবার পারতেছে না। সারা শহর জানে মাহফুজ এর এই অবস্থা তোমার বউকি শুনে নাই কিছু। আবার বড় বড় ডায়লগ দেয় সে সবাইরে আপন ভাবে সে মাহফুজ রে নিজের বাবা মনে করে। বাপের এইরকম খবর শুইনা কোন মেয়ে কি বইসা থাকতে পারে। নাকি সে কোন ঝামেলায় পরবো না দেইহা আসতেছে না। তার কি কোন দায়িত্ব নাই। এহন তো মনে হইতেছে তার সাথে তোমার বিয়া দেওয়ায় ভুল হইছে। যদিও আমার আগেই মনেই হইছিল একটা পরিবারহীন মাইয়া কখনো পরিবারের মূল্য বুঝবো না। ও বুঝতে পারবো না সম্পর্ক কেমন হয় সম্পর্ক এর গুরুত্ব ও,,

উনি আর কিছু বলতে পারলো না কারণ মুখর এক দৃষ্টিতে কড়িডোরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখরের থমকানো চেহারা দেখে তিনি মুখরের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালো। আর তাকিয়েই থমকে গেল। কেউ একজন আসছে এক হাতে স্কাউচে ভর দিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ ওরনা এমনিতেই মাথায় দিয়ে রেখেছে তার ওপর কালো ক্যাপ মুখে মাস্ক। থ্রি কোয়ার্টার হাতার গোল জামায় হাতের ব্যান্ডেজ ও স্পষ্ট। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। তার পেছনে একজন ছেলে আর আর একজন মেয়ে। তা দেখে মুখর বলল,,

“কাব্যের বিহঙ্গিনী তার দায়িত্ব কখনো ভুলে না। আর সম্পর্কের কথা বললেন না দাদিজান তার থেকে ভালো সম্পর্কের মানে এবং সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝতে আমি আর কাউকে বুঝতে দেখিনি।

বলেই সে দৌড়ে মেয়েটার সামনে গেল। আর তাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে তার হাত ধরে বলল,,

“তোমাকে এই অবস্থায় এখানে আসতে কে বলেছে বিহঙ্গিনী?”

মেহবিন মুখরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার দায়িত্ব আর আমার এই পরিবারের থেকে পাওয়া স্নেহ ভালোবাসা।”

মুখর কিছু বললো না ওকে আস্তে আস্তে করে ধরে আনতে লাগল । পেছনে মিহির আর মাইশা। এদিকে মেহবিন কে এই অবস্থায় দেখে সকলে চমকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেহবিন সোজা এসে মুখরের মায়ের পাশে বসে তার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বলল,,

“ভরসা রাখুন আল্লাহর ওপর মা। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে বাবার কিছু হবে না। ইনশাআল্লাহ বাবা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। বাবার জন্য দোয়া করুন।আর আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের মন থেকে খুব করে চাওয়া জিনিসটা থেকে কখনো নিরাশ করেন না।”

মেহবিন কে দেখেই ওনার কান্না থেমে অবাকতা ফুটে উঠেছে। তিনি সেসব বাদ দিয়ে বলল,,

“তোমার এই অবস্থা কেন মেহু?”

“তেমন কিছু না যাস্ট ছোট একটা এক্সিডেন্ট ছিল। আমার কথা ছাড়ুন তো আমি এখন ঠিক আছি।”

মেহবিনের কথা শুনে মুখর অবাক হয় না। কারন সে ভালোমতোই চেনে তার বিহঙ্গিনীকে। মেহবিন একবার মুখরের দিকে তাকালো ঐ চোখে কতটা অসহায়ত্ব তা ও টের পেল। সে যে কতটা কষ্টে নিজের কান্না চেপে রেখেছে সেটা ও ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো। মেহবিন মুখরের মাকে কিছুক্ষণ শান্তনা দিয়ে আছিয়া খাতুনের কাছে গিয়ে তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। আছিয়া খাতুন মেহবিন কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন। মেহবিন তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“কাঁদবেন না দাদিজান ইনশাআল্লাহ বাবার কিছুই হবে না। উনি খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠবেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন বাবার জন্য যাতে তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে।”

কথাটা শুনে আছিয়া খাতুন আরো বেশি করে কান্না জুড়ে দিল। মেহবিন কোন রকমে তাকে শান্ত করলো। এরপর মুখরের হাত ধরে ওকে নিয়ে একটু দূরের বেঞ্চে বসলো। মেহবিন বলল,,

“আমার কাঁধে মাথা রাখুন কাব্য!”

মুখর বাধ্য ছেলের মতো রাখলো। মেহবিন নিজের মাথার ক্যাপ খুলে মুখরের মাথায় পরিয়ে দিয়ে এমনভাবে নিচু করে দিল যাতে মুখরের মুখ না দেখা যায়।সব শেষে মেহবিন বলল,,

“এবার আর আপনার দূর্বলতা কেউ দেখবে না কাব্য।”

মুখরের চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি পরতে লাগলো। মুখর বলল,,

“তুমি এখানে কেন এলে বিহঙ্গিনী?”

“আমি কাউকে বলেছিলাম তার জীবনের সাথে আমি যেমনভাবেই জড়িয়ে যাই না কেন? তার সুখে দুঃখে আমি তার সাথে থাকবো। আর কেউ একজন কথা দিয়েছিল আমার সব সুখে দুঃখে সে আমার সাথে থাকবে। কয়েকদিন আগেও সে তার কথা রেখেছে তাহলে আমি কেন নয়। ইনশাআল্লাহ বাবার কিছু হবে না আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন।”

“তুমি জানো আমার এতোক্ষণ কতটা অসহায় লাগছিল। আমার পরিবার জানে আমি একজন কঠোর ব্যক্তিত্বের মানুষ আমার কারো সঙ্গ প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমার কি করতে ইচ্ছে করছিল জানো চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। আমার বাবা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আজ সেই অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল বিহঙ্গিনী। দেখো না সবার জন্য কেউ না কেউ শান্তনার জন্য ছিল। মায়ের জন্য কাকিমনি, নাফির জন্য নিসা,দাদির জন্য কাকাই কিন্তু কেউ আমার কাছে আসে নি বিহঙ্গিনী। এই সময়টায় আমারও একটা কাঁধ প্রয়োজন এটা কেউ ভাবে নি। আমার ভিশন দমবন্ধ লাগছিল চোখের অশ্রু গুলো বার বার চিৎকার করছিল বাইরে বের হবার কিন্তু আমি দিই নি মায়ের আর বোনের দিকে তাকিয়ে। আমার মতো কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পূর্ন মানুষ যদি কাঁদে তাহলে তারা আরো ভেঙে পরবে।কারন আমাকে তারা কোন পরিস্থিতিতে ভেঙে পরতে দেখেনি। আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি বিহঙ্গিনী। আমার বাবার এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বিহঙ্গিনী। কারন ঐ একজন মানুষ সবসময় আমার ওপর বটগাছের মতো ছিল। আমার আইডল আমার শক্তি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বিহঙ্গিনী।

“বাবার কিছু হবে না প্লিজ নিজেকে শান্ত করুন। আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে এটা একটা পরীক্ষা মাত্র। আল্লাহর ওপর ভরসা করুন তাকে ডাকুন বাবার জন্য দোয়া করুন ইনশাআল্লাহ বাবা ভালো হয়ে যাবে।”

মুখরের কান্নায় মেহবিনের জামার হাতা ভিজে যাচ্ছে তবুও সে নিশ্চুপ। মুখর বলতে লাগলো,,

“একটু আগে সবাই তোমার ব্যাপারে কতোকিছু বলছিল। তখন আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল আর বলতে ইচ্ছে করছিল আজ বাবা যে অবস্থায় ভেতরে রয়েছে তুমিও বিশদিন আগে সেরকম অবস্থায়ই ছিলে। কিন্তু আমি বলতে পারিনি বিহঙ্গিনী আমি ওদের কথার জবাব দিতে পারি নি। ওরা বলছে তোমার দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে আমি তখনও মুখ ফুটে বলতে পারি নি তোমার দায়িত্ব পালনের গভীরতা কতটা। তারা দূর থেকে টেনশন করবে বলে তুমি সবাইকে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন খবর না জানানোর জন্য ওয়াদা করিয়ে রেখেছো। এরা তো তোমার কোন দুঃখে তোমার পাশে থাকে নি তাহলে তারা কেন আজ তোমার,,

মেহবিন মুখরকে না বলতে দিয়ে বলল,,

‘আমার কথা ছাড়ুন মুখর আমার কারো প্রতি কোন প্রত্যাশা নেই এটা নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। প্লিজ শান্ত হন আপনি।”

মুখর আর কিছু বললো না চুপচাপ মেহবিনের কাঁধে মাথা রেখে নিজের অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো। মেহবিন মুখর কে নিয়ে বসলে সবাই সেদিকেই তাকিয়ে ছিল। মেহবিন মুখরের মুখটা ক্যাপ দিয়ে ঢেকে দিলে ওরা বুঝতে পেরেছিল মুখর কিছু বলছে কিন্তু কি বলছে বা ও কাঁদছে কিনা এটা কেউ দেখেনি। মুখর সোজা হয়ে বসলো কিছুক্ষণ পর এখন অনেকটাই শান্ত সে। তখন মুখরের মামার বাড়ির লোকজন এলো। আরো কিছু লোকজন এলো। কয়েকজন পুলিশ ও আগে থেকেই ছিল। মেহবিন আজ কিছুই করলো না মাস্ক আছে তো। তাছাড়া মাইশারাও তো আছে। অতঃপর আধ ঘন্টা পর ডক্টর বের হলো সবাই এগিয়ে গেল। ডাক্তার জানালেন আউট অফ ডেন্জার চিন্তার কোন কারন নেই তবে দুই মাস ফুল বেড রেস্ট এ থাকতে বললো। সকলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো। মিহির আর মাইশা যেহেতু আছে মুখর বলল মেহবিন কে মাস্ক খুলে ফেলতে। কারন মাস্কে ওর নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে অসুস্থ দেখে। মেহবিন মাস্ক খুলে ফেলল। মাহফুজ শাহরিয়ার কে কেবিনে দেওয়া হলে সকলে একবার করে মাহফুজ শাহরিয়ার কে দেখে এলো। মুখরের মামার বাড়ির সকলে চলে গেল । মাইশারা অনেকক্ষন রইল এখন বের হবে কারন রাত হয়েছে অনেক এখন দুই জনের বেশি অ্যালাও না। মেহবিন অসুস্থ দেখে মুখর বলল তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেতে। মেহবিন চলে গেল এখন মুখরের মা আর মুখর বাদে সবাই বাড়ি যাবে। তখন তিনজন নার্স মেহবিনের নামে আর ওদের নামে কিছু বলাবলি করছিল তা দেখে নাফিয়া বলল,,

‘এই আপনারা আমাদের সম্পর্কে কি কথা বলছেন?”

তখন একজন বলল,,

“না আপু আপনাদের নামে তেমন কিছু বলছিলাম না । ঐ যে ক্যাপ পড়া আপু এতক্ষণ ছিল না আপনাদের সাথে। ওনাকে দেখে ও বলছিল আপনারা সবাই কতো কাঁদলেন কিন্তু উনি সবাই কে শান্তনা দিলেন কিন্তু একটুও কাঁদলেন না। উনি কি দিয়ে তৈরি । তাই আমি বলছিলাম উনি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি। বছর খানেক আগে উনি এসেছিলেন একজন কে নিয়ে উনার অবস্থা আপনার বাবার থেকেও খারাপ ছিল উনার তো বাঁচার চান্সই ছিল না। পাঁচ দিন কি খারাপ অবস্থা ছিল। উনি এক ফোঁটাও চোখের পানি ফেলেন নি। এবং যা প্রয়োজন সব একাই করেছিলেন এমনকি ঐ পাঁচ দিন ঠিক মতো খাওয়া তো দূর তিনি ঘুমানওনি। ওনার পাশে কেউ ছিল না তবুও তিনি ভেঙে পরেন নি। আল্লাহর রহমতে পাঁচ দিন পর ওনার পেশেন্ট আউট অফ ডেন্জার হয় । আমি জিজ্ঞেস ও করেছিলাম ওনাকে আপনার কি একটুও কান্না পায় নি উনি বলেছিল ‘কান্না করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে। আর কান্না করে ভেঙে পরলে কি পেশেন্ট সুস্থ হয়ে যাবে। আর কান্না করলে সে অসুস্থ হলে তার দৌড়াদৌড়ি কি আমি করে দেব নাকি। আর এটাও বলেছিল আবেগে ভেসে দায়িত্ব ভুলে যেতে নেই। আবেগ কান্না মানুষ কে দূর্বল করে দেয়। আর সে দূর্বল নয়।” এটা শুনে আমি তো ওনাকে সিমেন্ট আপু বলে আখ্যা দিয়ে ছিলাম। প্রথমে চিনতে পারি নি কিন্তু যখন মাস্ক খুললো তখন ওনাকে দেখেই চিনেছি আমি আর সারাজীবন মনেও রাখবো আমি।”

সব শুনে পুরো শাহরিয়ার পরিবার থ হয়ে গেলেন পরে আলভি বলল,,

“হয়তো তার চেনা কেউ ছিল না তাই কাঁদেনি?”

তখন নার্সটা বলল,,

“আরে কি বলেন উনি তো আপুর বাবা ছিলেন।”

কথাটা শুনে যেন শাহরিয়ার পরিবারের ওপর বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো। আছলাম শাহরিয়ার বললেন,,

“আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে তার বাবা আসবে কোথা থেকে? ”

‘না স্যার কোন ভুল হচ্ছে না। তার বাবাই ছিল এমনকি তাদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে দুজনের একই রকম।”

‘আপনারা পেশেন্ট এর নাম ঠিকানা দিতে পারবেন।”

‘সরি স্যার এ বিষয়ে আমি আপনাকে কিছু বলতে পারছি না আসছি।”

বলেই নার্সগুলো চলে গেল সকলে মুখরের দিকে তাকালো। ও বলল,,

‘সবাই বাড়ি চলে যাও অনেক রাত হয়েছে।”

“তুই কিছু জানিস মুখর?”

“না! তোমরা বাড়ি যাও।”

মুখর সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল কেউ কিছু বলতে পারলো না। কিন্তু মেহবিন কে নিয়ে সবার কৌতুহল দিনকে দিন বেড়েই চললো। সবথেকে বেশি আছিয়া খাতুন এর।

************

দেখতে দেখতে কেটে গেছে আরো একমাস দশ দিন। এখন কেউ মেহবিনের উঠানে খেলে না। সেদিনের পর তাজেলকে খেলতে দেখা যায় না, না দেখা যায় তার মুখের হাঁসি। সে যেন সব ছেড়ে দিয়েছে তার ডাক্তারের জন্য। সকাল বেলা উঠে নিজেই পড়াশোনা করে স্কুলে যায় আবার ফিরে এসে ঘরেই থাকে বিকেল হলে ডাক্তারের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এটাই তার সেদিনের পর দুই মাসের রুটিন। একটা বাচ্চা মেয়ের মেহবিনের প্রতি এতটা ভালোবাসা দেখে সবাই অবাক হয় বয়সই বা কতো এই ছোট্ট মেয়েটার ডাক্তারের অবর্তমানে যেন তাকে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। সেদিন যাওয়ার দুদিন পর মুখর এসেছিল মেহবিনের বাড়িতে সে এসে তাজেলকে তার ডাক্তারের খবর দিয়ে গেছে। এই দুই মাসে মুখর চারবার এসেছিল তাজেলের কাছে মেহবিনের অবস্থা জানিয়ে গেছে। দুইবার মেহবিনের মতো ঘুরতে নিয়ে গেছিল। কিন্তু মুখর সেই আগের তাজেলকে পায় নি। তবে একটা ব্যাপার হলো মুখর ওকে বলেছে ফোনে কথা বলবে কি না ও সাফ না করে দিয়েছে বলেছে তার ডাক্তারকে সামনাসামনি দেখেই সে তার সাথে কথা বলবে। মুখর অবাক হয়েছিল মেহবিন আর তাজেলের বন্ডিং দেখে। মেহবিন যখন চোখ খুলেছিল নিজেকে অন্য জায়গায় আবিষ্কার করে তখন ও বলেছিল তাজেলকে বলে এসেছে কি না যে ওকে নিয়ে আসা হয়েছে। ও না জানাতেই ওকে পাঠিয়ে দিয়েছিল তাজেলের কাছে তার খবর জানাতে। এরপর মেহবিনের কথা মতোই ও আসতো তাজেলের কাছে।

প্রতিদিনের মতো আজ ও বিকেলবেলা তাজেল মেহবিনের বাড়ির সামনে বসে আঁকিবুঁকি করছে মাটিতে। এমন সময় পেছন থেকে কেউ বলল,,

“শেখ তাজেল এখানে বসে কি করছেন?”

তাজেল তার দিকে না তাকিয়েই আঁকিবুঁকি করতে করতে বলল,,

‘হাডুডু খেলছি এখানে বসে। তুই খেলবি?”

এ কথা শুনে পেছনের মানুষ টা হাসলো। সে বলল,,

” না খেলবো না। আরে বাহ! একা একা হাডুডু খেলেন আপনি। তা খেলছেন কিভাবে? আমি তো দেখছি মাটিতে বসে আঁকিবুঁকি করছেন।”

‘দেখতেছোস আঁকিবুঁকি করতেছি তাইলে আবার জিগাস করোস কেন?”

বলতে বলতেই সে পেছনে ঘুরলো পেছনে ঘুরে কাঙ্খিত মানুষ টাকে দেখে তাজেল হেঁসে চিৎকার করে বলল,,

‘ডাক্তার!”

বলেই ঝাঁপিয়ে পরলো মেহবিনের ওপরে মেহবিন টাল সামলাতে না পেরে মাটিতেই পরে গেল। মেহবিন তাজেলকে আর তাজেল মেহবিনকে খুব শক্ত করে আকড়ে ধরলো। মেহবিন আর তাজেলের মুখে তৃপ্তির হাঁসি। এই হাঁসি তাজেলের মুখে এই দুই মাসে কেউ দেখেনি। এসব দেখে পেছনের মানুষ গুলো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শুধু একজন বাদে সে হলো মুখর। তাজেলের চিৎকার শুনে নওশিদের ওখানের প্রায় সবাই বেরিয়ে এসেছে। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

‘নেত্রী তুমি আসতে না আসতেই আমাকে ফেলে দিলে।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

‘তোমার সাতে আমিও পরলাম হেইডা দেখলা না।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো তখন মুখর এসে তাজেলকে কোলে করে উঠালো তারপর মেহবিন কে উঠালো। মুখর তাজেলকে বলল,,

‘নেত্রী তোমার ডাক্তার এখন সম্পূর্ণ সুস্থ বুঝলে তবুও,,

মুখর কে আর না বলতে দিয়ে মেহবিন বলল,,

‘আমি ঠিক আছি। কিছুই হয় নি আমার।”

তখন তাজেল বলল,,

“কিমুন আছাও ডাক্তার?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

‘আমার নেত্রীকে দেখে এখন ভিশন ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

‘তুমারে দেইখা মেলা ভালো আছি।”

তখন নওশি বলল,,

‘ডাক্তার আপা আপনার এক্সিডেন্টের পর আজ প্রথম তাজেল এভাবে হাসলো। আপনি যাওয়ার পর ওর হাসির বাত্তি বন্ধ হইয়া গেছিল আপনি আসতেই তা আবার জ্বলে উঠলো।”

মেহবিন হাঁটু গেড়ে বসে তাজেলকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“আমায় এতো কেন ভালোবাসো নেত্রী?”

‘তুমি আমারে ভালোবাসো তাই।”

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

সবার শেষে মেহবিনের সাথে আসা মুখর বাদে আরো দুজন নতুন মানুষ দেখে তাজেল বলল,,

“ঐ দুইজন কিরা ডাক্তার?”

এতোক্ষণ মিহির আর মাইশা অবাক হয়ে সব দেখছিল। হুট করে তাজেলের প্রশ্নে ওরা এগিয়ে এলো। দু’জনেই মুখ ঢাকা মিহিরের মুখে মাস্ক মুখরের মতো আর মাইশার মুখে হিজাব নিকাব। মেহবিন কে দিতে এসেছে ওরা। মেহবিন হেঁসে ওদের সাথে তাজেল এর পরিচয় করিয়ে দিল। মেহবিনের মুখে যখন তাজেলের কথা শুনেছিল তখন ওরা অবাক হয়ে গেছিল আজ চোখের সামনে এসব দেখে বুঝলো মেহবিন ওর সম্পর্কে যা বলেছে কমই বলেছে। মেহবিন গ্ৰামের আসা সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। ওরা বাড়ির ভেতরে ঢুকলো মেহবিন তাজেলকে ও নিয়ে ঢুকলো। দুই মাস বাড়িতে কেউ ছিল না। তাই বেশ ময়লা তখন নওশি আর দুইজন মহিলা এলো ঝাড়ু হাতে ওদের বসতে বলে বলল ওরা পরিস্কার করে দিচ্ছে মেহবিন মানা করলেও তারা শুনলো না। তাজেলকে বলল নওশিদের বাড়িতে নিয়ে যেতে। নওশি ওদের বলল যেতে ওরা বলল সমস্যা নেই ওরা বাইরে দাঁড়াচ্ছে। মুহুর্তেই মহুয়াপুর গ্ৰামে ছড়িয়ে গেল ডক্টর মেহবিন মুসকান আবার গ্ৰামে ফিরে এসেছে। মহিলারা ঘর পরিষ্কার করে বের হতেই মেহবিন সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। যেদিন শেষ এই ঘরটায় ছিল সেদিন সকালেও সবাই কি সুন্দর খেলছিল গল্প করছিল খেয়েছিল। কি থেকে কি হয়ে গেল। মেহবিন কিচেনে যেতে চাইলে মাইশা বারন করলো সে কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে এলো। তখন তাজেল মাইশা কে বলল,,

“ডাক্তার তাইলে তোমাগো বাড়িতে আছিল?”

মাইশা হেঁসে বলল,,

“হুম। মেহু তোর নেত্রী তো দেখি সেই। এইবার ভাবছি ওকেই নির্বাচনে দাঁড়া করাবো ওকে দাঁড় করালে আমাদের বাড়ির মন্ত্রীসাহেব ও ডাব্বা মারবে। তোর নেত্রী এতো কিউট যে সবাই ওকেই ভোট দেবে।”

তখন তাজেল বলল,,

“তোমাগো বাড়ি কি শেখ হাসিনা থাহে নাকি? আর আমি ভোটে দাড়ামু না আমার বয়স হয় নাই এহনো আগে আমি বড় হইয়া নেই।

“এই মেয়েটা এতো কিউট কেন মেহু?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“মাইশা আপু ভাগ্যিস কিউট বলেছো কিউটের ডিব্বা বলোনাই নাহলে সে বলতো সে ডিব্বা না সে মানুষ। আর আপু তুমি যে মজাটা করতে চাচ্ছো ও বুঝছে না তাই বলে লাভ নেই। আর নেত্রী ওদের বাড়িতে শেখ হাসিনা থাকে না। আর বাকি কিছু তোমার চিন্তা করতে হবে না।

অতঃপর ওরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো। এখন মুখর মিহির আর মাইশা চলে যাওয়ার জন্য উঠবে এমন সময় কেউ দৌড়ে এসে মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো আর কেঁদে উঠলো। মেহবিন বুঝতে পারলো এটা কে ও বলল,,

“ফুল কাঁদছো কেন? এই দেখো এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।”

মিশু বলল,,

“ফুল তোমার কতো রক্ত পরছিল তুমি জানো?”

“তুমি দেখেছিলে? নাকি ফোবিয়ার জন্য আমার ওখানে যাও নি।”

“গিয়েছিলাম তো আমি তাই জন্যই তো !”

এইটুকু বলেই মিশু থেমে গেল ও সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তখন ঘরে রাইফা, মুনিয়া ,শান্তা ,আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ ঢুকলো। মিশু বলল,,

“কেমন আছো তুমি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও ভালো আছি।”

মেহবিন সবাইকে বসতে বলল তখন মিহির বলল,,

“সাবধানে থাকিস মেহু আমরা আসছি আল্লাহ হাফেজ।”

মেহবিন মাথা নাড়ালো ওরা কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন মুনিয়া বলল,,

“এরা কারা ছিল আপু?”

মেহবিন বলল,,

“আমার হাজবেন্ড আর আমার দুজন শুভাকাঙ্ক্ষী। ওনাদের একটু তাড়া ছিল তাই এভাবে বেরিয়ে গেল। কিছু মনে করো না।”

“ওহ আচ্ছা!”

সকলে একে একে ওর অবস্থা জিজ্ঞেস করলো। শেখ শাহনাওয়াজ রাইফা আর আরবাজ শুধু দেখে গেল। তারাও কিছুক্ষণ পর চলে গেল। মিশু বলে গেল শুক্রবার যেন মেহবিন ওদের বাড়ি যায় মেহবিন বলল সে যাবে। সবাই গেলেও রয়ে গেছে তাজেল সে বাড়িতে বলে এসেছে আজ ডাক্তারের সাথে থাকবে। মেহবিনের জন্য ওর মামী খাবার প্যাক করে দিয়েছে তাই খাবার নিয়ে টেনশন নেই। তাজেল বিছানায় বসে মেহবিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তা দেখে মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“কি দেখছো নেত্রী?”

“তোমারে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা হাসপাতাল থেইকা নিয়া গেছে শুইনা আমি ভাবছি তুমিও আমার মায়ের মতো আমারে ধোঁকা দিবা ডাক্তার।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“তা ধোঁকা দিয়েছি কি?”

“তারপর দুইদিন পর যহন দেখলাম পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আইলো তহন বুঝলাম তুমি আমারে ধোঁকা দিবা না ডাক্তার।’

“ডাক্তার কি তার নেত্রীকে ধোঁকা দিতে পারে হুম?”

“কি জানি দিবার পারো যেনে আমার মায়ের রক্তের সম্পর্কও থাহার পরেও আমারে ধোঁকা দিছে। হেনে তো তোমার সাতে আমার কোন রক্তের সম্পর্ক নাই।”

মেহবিন বুঝতে পারলো এই কথাটা তাজেলের নয় অন্য কেউ মাথায় ঢুকিয়েছে। এই জন্যই তাজেল ওর খবর পাওয়ার পরও মনমরা হয়ে থাকতো। মেহবিন তাজেলকে নিজের কোলে বসিয়ে বলল,,

“একটা কথা সবসময় মনে রাখবে নেত্রী। সবসময় রক্তের সম্পর্কই যে বড় হয় তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো রক্তের সম্পর্কগুলো আমাদের ধোঁকা দেয়। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক থাকে না তাদের সাথে তৈরি হয় আত্মার সম্পর্ক। তা কখনো কখনো রক্তের সম্পর্কগুলো থেকেও অনেক গভীর হয় এবং অনেক রক্তের সম্পর্ক থেকেও উর্ধ্বে হয়।”

“তোমার ভারী ভারী কথা কতসময় আমার মগজে ঢুকে না।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“ঢুকাতে হবেও না শুধু এই মনে রেখো মাঝে মাঝে রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও আমাদের অন্য মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে। যেমন তোমার আর আমার একটা আত্মার সম্পর্ক।”

তাজেল ঘুরে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার আত্মা কি তোমার শরীরে গেছে নাকি আর তোমার আত্মা আমার শরীরে আইছে নাকি।”

“মানে?”

“আমাগো আত্মার সম্পর্ক কেমনে হইলো যদি আমাগো আত্মা অদলবদল না হয়।”

এবার মেহবিন বুঝতে পারলো তাজেল কি বলতে চেয়েছে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মেহবিন হেঁসে উঠল আর বলল,,

“নেত্রী তুমিও না!”

“আরে কওনা কেমনে হইলো?”

“আমিও জানি না কেমনে হইলো কিন্তু সম্পর্ক তো হয়েছেই তাইনা নেত্রী।”

“হুম! ও আল্লাহ মেলা রাইত হইয়া গেছে এহন খায়া নও। পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কইছে তাড়াতাড়ি খাইয়া ওষুধ খাইতে‌।”

“হুম যাবো তো!”

“যাও আগে তুমি!”

তাজেলের জোরাজুরিতে মেহবিন খাবার নিয়ে এলো তাজেলকে খেতে দিল আর নিজেও খেল। অতঃপর তাজেল এই দুই মাসের জমানো সব বলতে লাগলো মেহবিন ও হেঁসে মনোযোগ শ্রোতার মতো শুনতে লাগলো।

_______________

অনেকদিন পর রাতে কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজ থেকে নতুন পোস্ট করা হলো,,

“রক্তের সম্পর্ক থেকেও উর্ধ্বে কিছু মানুষের সাথে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয় আমাদের। আর কখনো কখনো সেই সম্পর্কগুলোর সমস্ত স্বার্থপরতার উর্ধ্বে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্যই পৃথিবী এতো সুন্দর লাগে।”

অনেকদিন পর পোস্ট হওয়াতে লাইক কমেন্ট করে সবাই যেন বিহঙ্গিনীর খোঁজ নিচ্ছে। তার সাথে সবাই তার বেস্ট ফ্রেন্ডদের মেনশন দিচ্ছে “***** যেমন তুই’ লিখে কেউ কেউ তার প্রিয় মানুষটাকে ও মেনশন দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ শেয়ার ও দিচ্ছে নানান প্রিয় মানুষদের ট্যাগ দিয়ে।

তার আধ ঘন্টা পর বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে নতুন পোস্ট হলো সেটা হলো কাব্যের বিহঙ্গিনীর পেজের আজকের করা পোস্ট শেয়ার করার ওপরে ক্যাপশন

“আপনি ঠিক বলেছেন এডমিন মহাদয়া যেমন কাব্যের বিহঙ্গিনীর সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্য পৃথিবী শুধু সুন্দর নয় সে পাশে থাকলে অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে।”

নোটিফিকেশন এর শব্দে মেহবিন পাশে তাকালো ও দেখলো তাজেল ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিতে ওর পেটের ওপর হাত দিয়ে। এতোক্ষণ মেহবিন এই নোটিফিকেশন এর অপেক্ষায় করেছিল ও জানতো আসবে এটা। মেহবিন মুচকি হেসে ফোনটা হাতে নিল আর সাইলেন্ট করে নোটিফিকেশন খুললো। পোস্ট টা দেখে ওর মুখের হাঁসিটা আরো প্রশস্ত হলো। সে মুচকি হেসে কমেন্ট করলো,,

“হুম বুঝলাম!”

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

‘কি বুঝলেন ম্যাডাম?”

“এই যে আপনার পৃথিবী অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে।”

“তা, পৃথিবী অনেক অনেক বেশি সুন্দর কখন আর কে সাথে থাকলে লাগে সেটা বুঝোনি?”

” না বুঝিনি আমি বোকার বউ বোকী কি না।”

ওপাশ থেকে অবাক হওয়ার ইমুজি এলো। কাব্য বুঝতে পারলো সেদিনের রিভেঞ্জ নিচ্ছে। এদিকে মেহবিন হাসছে। বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে আবার রিপ্লাই আসলো,,

“থাক আপনার বুঝতে হবে না আমার বিহঙ্গিনী বুঝলেই হলো।”

‘হুম সেটাই তো!”

“আমার বিহঙ্গিনীর জন্য দুইটা লাইন লিখেছি এখনি দেখাবো কি?”

“না দেখিয়ে সারারাত ঘুমাতে পারবেন?”

‘সেটাই তো!”

‘হুম!”

“আসিও বৃষ্টি হয়ে ,
ভিজিবো তোমার বর্ষনে!
দূরত্ব আছে হয়ত বা
তবুও ভালোবাসা বাড়ছে ক্রমশে!

মেহবিন এটা দেখে মুচকি হাসলো। সে দু’টো ফুলের ইমুজি পাঠিয়ে ফোন নামিয়ে রাখলো। এমতাবস্থায় ও আর কিছু বলতে চাইছে না।
_______________

পরদিন মেহবিন কে অনেকেই দেখতে এলো। মেহবিন মুচকি হেসে সবার সাথে কথা বলল। তারপর দিন থেকে মেহবিন হাসপাতালে গেল সকলে ফুল দিয়ে ওকে সাদরে শুভেচ্ছা স্বাগতম জানালো। দেখতে দেখতে তিনদিন পর শুক্রবার চলেই এলো। মেহবিন বেলা তিনটার দিকে চেয়ারম্যান বাড়িতে গিয়ে শেখ পরিবারের সাথে আরো একজন নতুন মানুষ দেখতে পেল । মেহবিন কে দেখে মিশু এগিয়ে এলো। আরিফা জামান মিসেস আমজাদ যারা মেহবিন কে দেখতে যায় নি তারা সবাই মেহবিনের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো। মেহবিন সবাইকে তার অবস্থা জানালো। তখন শেখ আমজাদ বললেন,,,

“ডক্টর মেহবিন তোমাকে আবার এভাবে এবাড়িতে দেখতে পাবো ভাবতেই পারি নি।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘কেন?”

“আমরা তো ভেবেছিলাম তোমার হাজবেন্ড যখন তোমায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেল। তখন তোমাকে এখানে আর পাঠাবে না।”

মেহবিন মুচকি হাসলো আর বলল,,

“জীবনে অনেক সময় অনেক বাধা বিপত্তি আসে তাই বলে কি মানুষ জীবন যাপন করা ছেড়ে দেয় নাকি। হ্যা হয়তো একটু পরিবর্তিত হয় এই যা।’

‘হ্যা তা তো বটেই?”

“তা আপনার মেয়ে জিনিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে?”

‘হুম আরো পনেরো দিন আগে।”

‘আলহামদুলিল্লাহ শুনে বেশ খুশি হলাম।”

‘ভাইজান বলেছিল আরো এক মাস পর করতে। পরে আমি ভাবলাম এঙ্গেজমেন্ট করে এতোদিন রাখাটা ঠিক হবে না। ভাইজান ও আমার কথা একটু ভেবে করে দিলেন।”

‘আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

‘আপনিও বসুন না ডাক্তার।”

‘আমি মিশুর জন্য এখানে এসেছি তাই ওর সাথে থাকাটাই বেটার আপনারা আপনাদের মতো কথা বলুন।”

“হুম আসুন পরিচয় করিয়ে দিই উনি হচ্ছে নুপুরের মা।”

“ওহ আচ্ছা।”

মেহবিন সালাম দিয়ে মিশুর কাছে গেল তখন সিঁড়ি দিয়ে আরবাজ এলো। আরবাজ মেহবিন কে দেখে হেঁসে ওর দিকে গিয়ে কিছু বলবে তার আগে নুপুরের মা বলল,,

‘ঐ তো আরবাজ বাবা এসে পরেছে এখন তাহলে কথা বলা যাক।”

আরবাজ কথাটা শুনে মেহবিনের দিকে না গিয়ে অবাক হয়ে ওর বাবার পাশে বসলো তখন মেহবিন মিশুকে নিয়ে সিঁড়িতে পা রাখবে এমন সময় আরিফা জামান বললেন,,

‘আরবাজ আমরা নুপুরের সাথে তোমার বিয়ের কথা ভাবছি তুমি এই বিষয়ে কি বল?”

কথাটা শুনে মেহবিন দাঁড়িয়ে পড়লো। ও পেছনে ঘুরলো ওর দেখাদেখি মিশুও দাঁড়ালো। আরবাজের দিকে তাকাতেই দেখলো আরবাজ কথাটা শুনে মেহবিন এর দিকে তাকিয়ে আছে। আরবাজ শান্ত স্বরে বলল,,,

‘এটা সম্ভব নয়!”

কথাটা শুনে শেখ পরিবারের সবার মুখ অবাকতায় ছেয়ে গেল। শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

‘কেন সম্ভব নয় নুপুর ভালো মাইয়া একজন ডাক্তার সে। তুমি কি ওর বাবার জন্য এরকমটা কইতেছো আরবাজ।”

“দেখুন দাদুভাই আমি কখনো কারো পরিবারের জন্য কাউকে বিচার করিনা। নুপুরের বাবা যা করেছে তাতে নুপুরের দোষ নেই তবে ব্যাপারটা এখানে সেটা না। ব্যাপার হলো আমি আগে থেকেই নুপুরকে বোনের নজরেই দেখে এসেছি।”

তখন নুপুরের মা বলল,,

“তো কি হয়েছে কাজিন কাজিন অনেক বিয়ে হয় এ আর নতুন কি ? আগে বোনের নজরে দেখতে বিয়ের পর বউয়ের নজরে দেখবা।”

‘সরি তাও আমার দ্বারা সম্ভব নয়।”

এবার শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,,

“যা বলার পরিস্কার করে বলো আরবাজ তোমার কি অন্য কোন মেয়েকে পছন্দ?”

এবার সবাই উৎসুক হয়ে আরবাজের দিকে তাকায়। সে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

‘জি!”

সবাই আরেকদফা অবাক। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,,

‘কে সে? যদি সব ঠিক থাকে তাহলে তোমার বিয়ে তার সাথেই হবে।

তখন আরিফা জামান বললেন,,

‘এ আপনি কি বলছেন?”

“আরবাজ আমার সন্তান আরিফা আমি জানি কোনটায় আমার ছেলেমেয়ের জন্য ভালো হবে। আর তাছাড়া বিয়ে একটা বড় ব্যাপার যদি অমতে বিয়ে হয় তাহলে সারাজীবনেও কেউ সুখী হতে পারবে না। আমি তো আমার ছেলের বিয়ে তার পছন্দের মানুষের সাথেই দেব। আর আরবাজ তুমি বলো সে কে?”

শেখ শাহনাওয়াজ এর কথায় আরিফা জামান চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু দুজন রাগে ফোঁস ফোঁস করছে ভেতরে কিন্তু দেখাতে পারছে না। তখন মেহবিনের পাশ থেকে রাইফা আস্তেকরে বলে উঠলো,

“আলহামদুলিল্লাহ! বিয়েটা তাহলে নুপুরের সাথে হবে না। ”

আর কথাটা আস্তে হলেও মেহবিনের পাশেই রাইফা ছিল বলে ও শুনে ফেলল মেহবিনের রাইফার দিকে তাকালো মেয়েটার মুখে অদ্ভুত খুশির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে তা দেখে মেহবিন একটু অবাক হলো বটে। তখন আরবাজ বলল,,

‘কমিশনার মাহফুজ শাহরিয়ার এর একমাত্র মেয়ে নাফিয়া শাহরিয়ার।’

এ কথা শুনে মেহবিন পুরোপুরি অবাক হয়ে গেল। ব্যাপারটা মোটেও আশা করে নি সে। ও কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু কি ভেবে আবার চুপ রইলো। ও মিশুর হাত ধরে ওপরে চলে গেল। এদিকে আরবাজ এর কমিশনার এর মেয়েকে পছন্দ শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ খুশি হয়েছেন আরবাজের কথা শুনে তিনি বললেন,,

“মুখরের বোন নাফিয়া!

“জি বাবা!”

তখন সায়িদ বলল,,

‘মুখর এর বাবা কমিশনার?”

আরবাজ হেঁসে বলল,,

‘হুম পুলিশ কমিশনার মাহফুজ শাহরিয়ার এর একমাত্র পুত্র মুখর শাহরিয়ার। এখন আমাদের থানার ওসি মুখর শাহরিয়ার।”

কথাটা শুনে অবাক হলেও কেউ কিছু বললো না। কারন তারা মুখরের ব্যাপারে কিছুই জানতো না। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“ওনাদের সাথে আমি কথা বলছি।”

‘না বাবা তুমি আগেই বলো না। তার আগে আলাদা করে আমি ওনাদের সাথে কথা বলতে চাই।”

“ঠিক আছে।”

________________

মেহবিনের কেমন যেন আরবাজের কথাটা শুনে অস্থির লাগছে। ও কিসের আশঙ্কা করছে ও নিজেও জানে না। তখন মিশু বলল,,

‘ফুল কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন লাগছে কেন?”

“কিছু না ফুল আমি ঠিক আছি।”

‘তুই কি মনে করেছিস আমাকে না বললে আমি কিছু বুঝতে পারবো না।”

হুট করে এমন কথায় মেহবিন চমকে উঠলো। আর মিশুর দিকে তাকালো তখন মিশু বলল,,

‘তোমাকে তুই করে বললে কি তুমি রাগ করবে ফুল?”

মেহবিন ফ্যালফ্যাল করে মিশুর দিকে তাকিয়ে থাকে। তা দেখে মিশু হেঁসে বলল,,

“তোমার এক্সিডেন্টের পর দেখি তুমি বদলে গেছো ফুল। অন্যরকম লাগছে তোমায়। এখন বলো তোমায় তুই করে বললে কি তুমি রাগ করবে। আমার না তুই করে বলতে খুব ভালো লাগে। আমার যদি একটা ছোট বোন থাকতো তাহলে আমি তাকে তুই করে বলতাম অনেক ভালোবাসতাম জানো।”

মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

‘সমস্যা নেই তুমি তুই করেই বলো।”

‘তাহলে আজ থেকে তোকে আমি তুই করে বলবো ঠিক আছে।’

‘ঠিক আছে।”

“তাহলে এখন চল আমার সাথে খেল। আর হ্যা গল্পও করবো তোর সাথে এই দুই মাসে কি কি হয়েছে সব।”

‘আচ্ছা।”

মেহবিন বসে বসে মিশুর কথা শুনতে লাগলো। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর ও নিচে নামতে লাগলো তখন নতুন কন্ঠে কাউকে কিছু বলতে শুনলো,,,

“এখন এক মিনিট ও দেরি করা যাবে না। আসলে আমাকে এখনি বেরুতে হবে নাহলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে। আমার দেশে ফেরাটা খুব দরকার। বাকিটা আমি ই-মেইল এর মাধ্যমে সব সেন্ট করে দেব।”

তখন মেহবিনের ফোনটা বেজে উঠলো ও ফোন ধরে নিচে আসতেই মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হলো। মেয়েটা মেহবিন কে দেখে মনে চরম অবাক প্লাস খুশি হয়েছে সেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মেহবিন ও মেয়েটাকে দেখে খুশি হলো তবে ফোনে ইম্পোর্টেন্ট কিছু নিয়ে কথা বলছে তাই ও কোন রিয়াক্ট করলো না। মেয়েটা মেহবিন কে ঠিক দিল,,,

“এই মেহু তুই এখানে?”

মেহবিন হাত দিয়ে বলল পাঁচ মিনিট ও আসছে। মেহবিন একটু দূরে গেল। মেয়েটা দাড়িয়ে রইল। তা দেখে পুরো শেখ পরিবার যেন আকাশ থেকে পড়লো। একটু আগে খাওয়ার জন্য বলেছিল সবাই তাকে কিন্তু সে বলল তার এক মিনিট ও দেরি করা চলবে না। আর এখন, মেয়েটা কাউকে ফোন করে বলল ফ্লাইট ক্যানসেল করে দিতে। এটা দেখে সবাই আরেক দফায় অবাক। অতঃপর মেহবিন পাঁচ মিনিট পর এলো মেয়েটাকে আর পায় কে সে দুই হাত উঁচু করে দৌড়ে মেহু বলে জাপটে ধরলো। মেয়েটার কান্ডে মেহু হাসলো আর বলল,,,

“কি করছিস রাই ছাড় এভাবে ধরলে আমি তো চ্যাপ্টা হয়ে যাবো।”

‘আহ হা ওমন করিস কেন কতোদিন পর দেখা এতদিনের সবকিছু উসুল করতে হবে না।”

‘তুই ও না রাই পাগল একটা।”

“আমি রাই মালিক তো পাগল না পাগলি।তাও শুধু তোর কাছে।”

মেহবিন রাইয়ের কথায় হাসলো। রাই বলে মেয়েটা মেহবিন কে ছেড়ে দিল । আর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“আপনাদের বাড়িতে এতো ভালো ডক্টর থাকতে আমাকে ইন্ডিয়া থেকে আনালেন হাউ ফানি।”

তখন সায়িদ বলল,,

“মানে?”

“আমি আর মেহু বিদেশে একসাথে ডাক্তারি পাশ করেছি। আর আমাদের ব্যাচের মধ্যে সবথেকে ভালো ডক্টর হচ্ছে এই ইনি ডক্টর মেহবিন মুসকান।”

~ চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে