কাব্যের বিহঙ্গিনী পর্ব-২৯+৩০

0
428

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“অনেক রাত হয়েছে মামা ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”

মেহবিনের কথায় মেহরব চৌধুরী মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“আজ বোধহয় ঘুমটা হবে না আমার।”

“আজাইরা কথা রাখো তো। যাও ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। ঘরে গিয়ে দেখবে তোমার জন্য মামীও না ঘুমিয়ে আছে।”

“হ্যা তা তো থাকবেই। তবুও উঠে এসে বলবে না চলো ঘুম আসছে না যখন তাহলে চন্দ্রবিলাশ করি।”

মেহরব চৌধুরীর কথায় মেহবিন হাসলো। ও বুঝতে পারল ওর মামা ওর মুড ঠিক করতে এগুলো বলছে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“তাহলে মামীকে ডেকে নিয়ে আসি?”

“তোর মামী যে নিরামিষ মহিলা। তোর মামী আবার চন্দ্রবিলাশ করবে।”

“কেন তোমার মতো বুড়ো বয়সে এসে নির্লজ্জ হতে বলছো নাকি?”

পেছনে কারো কথায় দুজনেই পেছনে তাকায়। মেহরব চৌধুরী নিজের স্ত্রীকে দেখে বললেন,,

“এই মেহু এটা সত্যি তোর মামী তো নাকি কোন জ্বীন তাড়াতাড়ি আয়াতুল কুরসি পাঠ কর।”

মেহরব চৌধুরী সত্যি সত্যি আয়াতুল কুরসি পাঠ করলেন আর বললেন,,

“আরে তুমি তো দেখি আমার বউ কোন জ্বীন না। আয়াতুল কুরসি পাঠ করছি যেহেতু গায়েব হও নাই তার মানে এইটা সত্যি সত্যি তুমি।”

“এখন আর একটা কথা বললে ছাদ থেকে ফেলে দেব বলে দিলাম। রাত বেরাতে আমাকে জ্বীন বলা হচ্ছে।”

মেহরব চৌধুরী তার মিসেস এর কাছে গিয়ে বললেন,,

“আরে রাগ করো কেনো? এটা তো সত্যি বেশি রাত করে ঘরের বাইরে বা ছাদে থাকতে নেই। রাতের অন্ধকারে জ্বীনদের আনাগোনা শুরু হয়। তাই ছাদে এসেছো একবার পরখ করে নিলাম। যদিও তিন কুল পরেই এসেছিলাম তবুও সাবধানের মার নেই।”

“হয়েছে এখন ঘরে যাবে নাকি জ্বীনদের সাথে চন্দ্রবিলাশ করবে?”

“বউ থাকতে আবার জ্বীনদের লাগে নাকি। তাছাড়া বউয়ের সাথে সময় কাটানো ভালো কথা।”

মেহবিন এতক্ষন তার মামামামির কথোপকথন শুনে হাসছিল এখন একটু কাশি দিয়ে বলল,,

“এই যে লাভ বার্ডস এখানে কিন্তু বাচ্চা পুলাপাইন আছে।”

তখন মেহবিনের মামি বললেন,,

“এই যে মেহু তুই যদি বাচ্চা পুলাপাইন হস। তাহলে আদর এখনো মায়ের পেটে আছে।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“তা ঠিক যাই হোক তোমরা চন্দ্রবিলাশ করো আমি আসছি।”

“আরে তুই ও বোস না আমরা আড্ডা দিই।”

“বিরিয়ানি তে এলাচি হয়ে লাভ নেই।”

“তুই কি কালকেই চলে যাবি?’

“হ্যা সকালের খাবারের পর!”

“আরে কাল না তোর বন্ধ সকালে গিয়ে কি করবি একেবারে রাতে যাস মিহির পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

মিহিরের কথা শুনে মেহবিনের মিশুর কথা মনে পড়লো। তাই ও বলল,

“তোমরা কোন অনুকে চেনো? আই মিন অনুভব।”

দুজন একসাথেই বলল,,

“অনুভব কে?কই না তো কেন?”

মেহবিন বলল,,

” না তেমন কিছু না এমনিই। আচ্ছা তোমরা থাকো আমি গেলাম।”

বলেই মেহবিন নিচে এলো। নিজের রুমে ঢুকতেই দেখল মিশু মাথার বালিশ মাথায় না দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মেহবিন গিয়ে বালিশ ঠিক করে মিশুর মাথার নিচে দিয়ে দিল। আর পাশেই শুয়ে পড়লো তখন ও মিশুর থেকে শুনতে পেল,,

“অনু! অনু! আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।”

এটুকু শুনেই মেহবিন মিশুর দিকে তাকালো নিঃসন্দেহে মিশু তার অনুকে অনেক ভালোবাসে। নাহলে কেউ অন্যকারো চোখের মাঝে নিজের অনুকে খুঁজে। নাকি সবাইকে ভুলে গিয়ে শুধু তার অনুকেই মনে রাখে। ও আর না ভেবে শুয়ে পড়লো। তার কিছুক্ষণ পরেই মিশু মেহবিন কে কোলবালিশ বানিয়ে জড়িয়ে ধরলো মেহবিন চেয়েও কিছু করতে পারলো না। একটা সময় পর সেও ঘুমিয়ে পড়লো।

________________

“এই ফুলের মামা তো ভাই তুমি এখানে কি করো?”

মিহির সকাল বেলা ছাদের ফুল গাছ গুলো তে পানি দিচ্ছিল। ঘুম থেকে উঠে মেহবিন কে না পেয়ে সোজা ছাদে চলে আসে । কাল আদর ওকে দেখিয়ে গিয়েছিল তাই অসুবিধা হয় নি। মিহির মিশুর দিকে তাকিয়ে দেখলো বিছানা থেকে নেমে সোজা এখানে এসেছে ও বুঝতে পারল। চোখ দু’টো ফোলা চুলগুলো এলোমেলো। ওরনাটা ঠিকঠাক আছে তবুও এভাবে আসাটা উচিত নয়। মিহির অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,,

“দেখতেই তো পাচ্ছেন ফুলগাছে পানি দিচ্ছি। তা সকাল সকাল আপনি এখানে কেন? এভাবে ফ্রেশ না হয়ে ছাদে আসা ঠিক হয় নি আপনার। আর যেখানে একজন ছেলে আছে সেখানে একা আসা আরো উচিত হয় নি আপনার।”

“কেন একা আসলে কি তুমি খেয়ে ফেলবে নাকি। তাছাড়া আমি তো ফুলকে খুঁজতে এসেছি। আমি একা একা ফ্রেশ হতে পারি নাকি মাইশার জামা নষ্ট হয়ে যাবে না।”

মিহির মিশুর কথার মানে বুঝতে পারলো কিন্তু মিশু যে ওর কথার মানে বুঝেনি এটাও বুঝতে পারলো। তাই ও বলল,,

“ঠিক আছে আপনি নিচে যান আপনার ফুলকে পেয়ে যাবেন?”

“আচ্ছা। তবে একটা কথা?”

“কি?”

“তুমি আমার থেকে বড় হয়েও আপনি বলছো কেন? আমার কেমন যেন লাগে তুমি করে বলতে পারো না।”

“আপনার অসুবিধা না হলে তুমি করেই বলবো।”

“তুমি করেই বলবে । তুমি করে বলো এখন?”

“তুমি।”

“হুম ঠিক আছে। তবে আরেকটা কথা?”

“তুমি তো বলেছিলে একটা কথা।”

“আছে আরেকটা শুনোই না।”

“কি?”

“সবাইকেই দেখলাম কিন্তু আদরের মা মানে তোমার বউকে তো দেখলাম না।”

“আদরের মা আদরের তিন বছর থাকতে মারা গেছে।”

এ কথা শুনে মিশু একটু নরম স্বরে বলল,,

“ওহ আচ্ছা।”

তখনি মেহবিন এলো দৌড়ে বোঝায় যাচ্ছে মিশুকে না পেয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পরেছিল মিশুকে পেতেই ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর মিশুর হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল। ফ্রেশ করিয়ে দিল তারপর নিচে গেল সবাই ব্রেকফাস্ট করবে। মিশু বসতেই দেখতে পেল সব তার ফ্রেবারিট খাবার। সে খুশি হয়ে গেল তখন আদর বলল,,

“এই যে তোমাকে আমি কি বলে ডাকবো।’

আদরের কথায় মিশু আদরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার নাম মিশুমনি। তুমি আমায় মিশুমনি বলেই ডাকবে।”

‘বড়দের নাম ধরে ডাকতে হয় না। দাদু বলেছে আমায়।”

তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

“আদর তুমি মিশুকে মনি বলেই ডেকো।”

‘আচ্ছা।”

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলো খাওয়ার শেষে মেহবিন মিশুকে একটা ওষুধ দিল। মিশু প্রথমে ওষুধ দেখে অবাক হলেও মেহবিনের দিকে তাকিয়ে খেয়ে নিল। সবাই মিলে একটু গল্প করবে তারপর মেহবিন রা রওনা দেবে। সবাই বসলো সোফায় কিন্তু মিশুর নজর বারবার মিহিরের চোখের দিকেই যাচ্ছে। ও চেয়েও ফেরাতে পারছে না।কাল রাতে মেহবিন একটা গোলজামা পায়জামা ওরনা আর হিজাব অর্ডার করেছিল মিশুর জন্য। সেগুলো আসলেই মেহবিন বলল রেডি হতে নতুন জামা পেয়ে মিশুর খুশি আর দেখে কে। এগারোটার দিকে ওরা রওনা হলো মেহরব চৌধুরী মিহির কে পাঠাতে চাইলেও মেহবিন বলল দরকার নেই। ও নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাবে আর মিশুকে ঘুরাবে। বিকেল চারটায় যেন মেহরব চৌধুরী একজন ড্রাইভার পাঠিয়ে দেয় গাড়ি আনানোর জন্য। প্রথমে সম্মতি দিতে না চাইলেও পরে দেয়। আদর মিশুকে এক বক্স চকলেট গিফট করে। মিহির একটা বড় মাঝারি সাইজের টেডিবিয়ার দেয় যা কিনা মিশুর বুক পর্যন্ত। টেডিবিয়ার আর চকলেট পেয়ে মিশু খুশিতে লাফিয়ে উঠে। টেডিবিয়ার টা ওর খুব পছন্দ হয়েছে। মাইশা একটা হিজাব আরোকিছু জামা গিফট করে আর মেহরব চৌধুরী ও তার মিসেস একটা স্বর্নের চেইন গিফট করে। স্বর্নের চেইন গিফট পেয়ে মিশু প্রথমে নিতে চায় না পরে মেহবিনের আর মেহরব চৌধুরীর কথায় নেয়। মেহবিন নিজে হেঁসে চেইন পরিয়ে দেয়। এরপর বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে। একটু ঘুরাঘুরি করে ফুচকা খায় ওরা এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে চেয়ারম্যান বাড়িতে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নামার আগে মেহবিন বলল,,

“ফুল তোমায় কি বলেছি তো মনে থাকবে?”

“হুম মনে থাকবে। এখন তুমি চকলেট আর শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে আসো। আমি টেডিকে নিয়ে যাচ্ছি।”

“হুম!”

মেহবিন সব নিয়ে বের হলো ও বাড়িতে ঢুকে দেখলো এখনো আহমেদ পরিবার যায় নি। তবে আজকে চেয়ারম্যান বাড়ির ও সবাই বাড়িতেই। মিশুর হাতে টেডি দেখে সকলেই অবাক হলো। মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“এই যে আপনার মেয়েকে সহি সালামতে আপনার কাছে দিয়ে গেলাম। আর এগুলো ওর উপহার! আমায় বাড়ি যেতে হবে আসছি।

বলেই মেহবিন ওগুলো টেবিলে রাখলো। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“এতদূর থেকে জার্নি করে এসেছেন কিছু খেয়ে রেস্ট নিয়ে তারপর যান।”

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“আমার নাতিনের শ্বশুরবাড়ির সাথে পরিচয় হও।”

মেহবিন বুঝতে পারলো তিনি ওকে নিচু দেখানোর একটা চেষ্টায় আছে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“সেদিন যেহেতু মামনিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম তখনই আপনাদের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। আমার মনে হয় না সেই প্রশ্ন আপনারা আমি আসার অপেক্ষায় আর করেন নি। নিশ্চয়ই আমার ব্যাপারে জেনে গেছেন। তাই পুরোনো কাসুন্দি ঘেটে কি লাভ।”

মেহবিনের মুচকি হেসে কথার জবাবে সবাই এক প্রকার অবাক হলো। তখন শিলা বলল,,

“তা শুনলাম ডাক্তার হয়েছিস এতোদিন ছিলিস কোথায়? তাছাড়া তোর বেশভুষায় বুঝলাম বেশ উন্নতি হয়েছে তোর।

“তোমাদের দেখা পেয়ে বুঝতে পারলাম সত্যিই দুনিয়াটা গোল।”

তখন কুদ্দুস বাড়ি বুকে বলল,,

“বাইরে নতুন গাড়ি কার? আরবাজ ভাইজান আইছে গাড়ি নিয়া ঢুকতে পারতেছে না।”

তখন মেহবিন বলল,,

“চেয়ারম্যান সাহেব আমায় যেতে হবে। আর গাড়িটাও আমারই এখন বাড়ি যাবো বলে ভালোমতো পার্ক করা হয় নি।”

তারপর মেহবিন সাবিনা আহমেদ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মামনি যদি তোমরা থাকো তাহলে বিকেলে আমি যেখানে থাকি সেখানে যেও। যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে।”

মেহবিন বেরিয়ে এল। গাড়ির সামনে আসতেই দেখলো আরবাজ দাঁড়িয়ে আছে। আরবাজ মেহবিন কে দেখে বলল,,

“কাল কেমন কাটলো?

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘আপনিও না হয় আমার সাথে গিয়ে দেখতেন কেমন কেটেছে?”

‘আমি যেতে পারলে তো যেতামই।”

‘চাইলেই যেতে পারতেন শুধু যাওয়ার মন থাকলেই হতো।”

‘তো মামাবাড়িতে গিয়ে মামার সাথে সময় কাটিয়েছেন নিশ্চয়ই।”

“হুম তা তো কাটিয়েছিই। আমার মামা মন্ত্রী হলেও নিজের পরিবারের ওপর দায়িত্ববোধ ভুলেন না।”

মেহবিনের কথায় আরবাজ আর সে বিষয়ে কিছু বললো না। বলল,,

“গাড়িটা কি আপনার ?”

‘না মামার।”

“একেবারের জন্য এনেছেন?’

“না বিকেলে মামার ড্রাইভার আসবে।”

“ওহ আচ্ছা!”

বলেই মেহবিন গাড়ি তে উঠে বসলো আর বাড়ি চলে গেল। আরবাজ ভেতরে যেতেই মিশু দৌড়ে এসে ওকে সব দেখাতে লাগল। আরবাজ এসেছে শুনে ও আর ওপরে যায় নি। মিশু এটাও বলল ওকে মেহবিন যে বাড়িতে নিয়ে গেছিল সে বাড়ি ওদের বাড়ির থেকেও বড়। সবাই সব শুনে অবাক হলো তারপর মিশু কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে ওপরে চলে গেল। একে বলে কিছু না বলেও মুখের ওপর জবাব দেওয়া।

_______________

পাকা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মেহবিন নেমে দাড়াতেই একজন লোক এসে বলল,,

“আপনার এতো দেরি হলো কেন ম্যাম? আজ তো দুপুর দুইটায় আপনার কাজ ছিল একটা হাসপাতালে।”

~চলবে,,

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩০(বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

লোকটার কথায় মেহবিন তার দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘ডক্টর মেহবিন তার কাজকে কখনো ভূলে না। সামান্য একটা কারনে আপনি আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন দেখে অবাক হলাম আমি। কাইন্ডলি এখানে না এসে আপনার ইমেইল বক্স চেক করতেন তাহলে এমনিতেই সব পেয়ে যেতেন। এখানে আসার দরকার পরতো না।”

‘তারমানে আপনি আগে থেকেই সব যোগাড় করে রেখেছিলেন?”

‘হুম এখন যান এখান থেকে। কাল হাসপাতালে দেখা হবে।”

” হুম।”

বলেই লোকটা চলে গেল। মেহবিন বুঝতে পারলো না তার এখানে আসার কারন এতো দেখি মেহবিনের থেকেও ডেসপারেট কাজের বিষয়ে। মেহবিন এগুতে দেখলো ওর গাড়ি দেখে সবাই তাকিয়ে আছে । মেহবিন করে চলে এলো। বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে নিল আসার সময় কাচ্চি নিয়ে এসেছিল রাস্তা থেকে এখন সেটাই খাবে সে। অবশ্য মিশুকেও অফার করেছিল। কিন্তু সে খাবে না বলে জানিয়েছে। মেহবিন খাবার খেতে বসতেই মুখরের ফোন এলো। ও ফোন ধরে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”

আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো। একটা কথা কালকে কিন্তু ফুলকে ফুল দেওয়া হয় নি?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“এটা আপনার দোষ আমার কি?”

“এমন ভাবে বলছো যেন আমি ফুল দেওয়ার স্কোপ পেয়েছি।’

‘দিলে কে না করতো শুনি? আমার দাদি শাশুড়িও কাল কিছু বলতো না‌।”

‘হুম পরেরবার কালকেরটা সহ আরো বেশি করে ফুল নিয়ে যাবো ঠিক আছে।”

‘ঠিক আছে।”

‘তা কি করছো?”

“কাচ্চি খাচ্ছি তাও আবার আপনার পছন্দের আলুওয়ালা।”

‘কি!”

“হুম!”

“তুমি কি আমায় লোভ দেখাচ্ছো?”

“আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।”

‘তাহলে এতো ঘটা করে কেন বলছো আমার আলুওয়ালা কাচ্চি।”

“ওটা এমনিই বললাম।”

‘আমি কিন্তু শুধু তোমায় নিয়ে আলুওয়ালা কাচ্চি খাই কিন্তু তুমি আমাকে রেখেই খাচ্ছো।”

‘মুড হলো তাই।”

‘এটা ঠিক না।”

“আমার তো মনে হচ্ছে এটাই ঠিক। যাই হোক বাদ দিন এই সময় ফোন দিয়েছেন কেন?”

“তুমি বাড়ি পৌঁছে গেছো কি না এই জন্য?’

‘হুম পৌঁছে গেছি এখন খেতে বসেছি।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে খাও।”

“আপনি খেয়েছেন?”

‘হুম সেই দুপুরবেলা।”

‘আচ্ছা।”

‘তাহলে রাখছি?”

‘আচ্ছা! আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”

‘ইনশাআল্লাহ।”

বলেই ফোনটা রেখে দিল। মেহবিন খাবার শেষ করলো। তারপর বাইরে বের হতেই দেখলো তাজেল দাঁড়িয়ে আছে। তাজেল কে দেখে মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘এই যে নেত্রী এদিকে আসো?”

তাজেল এগিয়ে গেল কিন্তু কিছু বললো না। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“কেমন আছো?”

তাজেল হাত ভাঁজ করে অন্যদিকে ঘুরে গেল। এমন দেখে মেহবিন বুঝতে পারলো না আসলে কি হয়েছে। তাই ও বলল,,

“আমার সাথে কথা বলবে না।”

তাজেল ও দিকে ঘুরেই বলল,,

“ডাক্তার তুমি কিছু ভুইলা গেছো?”

মেহবিন কথাটা শুনে ভাবতে লাগলো কি ভুলে গেছে। মনে পরতেই ও মাথায় হাত দিল। আর বলল,,

“সরি নেত্রী দেরি হওয়ার জন্য যাই নি।”

‘হরো তুমি কথা নাই তোমার সাথে।”

“আহা নেত্রী আমি ভুলে যাই নি মনে ছিল তো। আজ তোমার বাড়িতে দুপুরে আমার দাওয়াত ছিল। এখন তো তিনটা বাজে তাই যাই নি।”

‘তোমার সকালে বাড়ি আসার কথা আছিল আর তুমি এহন আইলা। আর আইসা তুমি আমাগো বাড়ি না যাইয়া বাড়িতে খাইতে বইসিলা।”

মেহবিন বুঝতে পারলো ও যে খেয়েছে এটা তাজেল দেখেছে বলেই এতো অভিমান করেছে। তাই বলল,,

‘আমি কি জানতাম নাকি দুপুরের দাওয়াত তিনটা পর্যন্ত থাকে।”

“আমাগো গ্ৰামে সন্ধ্যাতুরিও থাহে।”

‘আচ্ছা সরি। তুমি খেয়েছো দুপুরে?

তাজেল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,

“হুম খাইছি। রাতে কিন্তু আমাগো বাড়ি খাইবা। যদিও নতুন রান্ধা না দুপুরের রান্দাতাই খাইবা এইডা তোমার শাস্তি।”

‘আচ্ছা ঠিক আছে। এখন আর রাগ নেই তো তোমার ডাক্তারের প্রতি।

” না! আমি জানি তো আমার ডাক্তারের হেই রহম কাম না থাকলে আমার ডাক্তার দেরি করতো না। তা হুনলাম তুমি নাকি গাড়ি নিয়া আইছো।”

“হুম তুমি উঠবে তাহলে চলো ঘুরে আসি।”

“হু যামু পাশের গ্ৰামে মেলা লাগছে। তোমারে ফুচকা খাওয়ানোর লাইগা চল্লিশ টাহা রাখছি আব্বার কাছে থিকা। হেনে যামু এহন চলো।

“চল্লিশ টাকা তোমার কাছে রেখে দাও। পরে তুমি কিছু খেয়ে নিও। আজ আমার নেত্রীকে আমিই মেলা ঘুরাবো।”

‘না আমি রাখছি আব্বার থিকা তাই আমিই খাওয়ামু।”

“থাক না।”

‘আমি কিন্তু মেলায় যামুনা ডাক্তার।”

মেহবিনের আর কি তার নেত্রীর কথা তাকে মানতেই হবে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে আসি। তুমিও রেডি হয়ে আসো। আর হ্যা কুলসুম আর নওশি কেও নিয়ে এসো।”

“ওগো খাওয়ানোর টাহা কিন্তু আমি দিমু না কইলাম।”

“আচ্ছা আমিই দেব তোমার চল্লিশ টাকার ভাগ আমি ছাড়া আর কেউ নেবে না খুশি।”

‘মেলা খুশি।”

বলেই তাজেল তার বাড়ির দিকে দৌড় দিল। আজ তাজেল ওকে দাওয়াত করেছিল দুপুরে। তাড়াতাড়ি আসতে চেয়েও পারে নি মেহবিন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে তিনটা বেজে যায় তাই ও যায় নি। আর রাস্তা থেকেই বুঝতে পেরেছিল ও ঠিক সময় পৌঁছাতে পারবে না। তাই এখন রান্না করবে না বলেই কাচ্চি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ও এখানে এসে বুঝতে পারলো এটা কমিউনিটি সেন্টার নয় এটা গ্ৰাম এটা দুই ঘন্টা কেন সারাদিন লেট করলেও কিছু হবে না। মেহবিন রেডি হয়ে নিল রেডি হয়ে বছর হতেই দেখলো নওশি, তাজেল আর কুলসুম দাঁড়িয়ে। নওশিসহ তাজেল আর কুলসুম খুব ইচ্ছে ছিল গাড়িতে উঠার তাই একবার শুনেই রাজি হয়ে গেছে। ওরা গাড়ির সামনে আসতেই দেখলো দুই তিন জন বাচ্চা ছেলে গাড়ির ছাদের ওপর উঠেছে। তা দেখে সবার আগে তাজেল দৌড়ে গিয়ে বলল,,

“ঐ রানা গাড়ির ওপরে ওঠছোস কেন? তাড়াতাড়ি নাম আমার ডাক্তারের গাড়ির যদি কিছু হইছে আমার হাত থেইকা তোগোরে কেউ বাচাইতে পারবো না।”

“না নামলে কি করবি হুনি?”

তাজেল পাশে থেকে একটা ইটের টুকরো উঠিয়ে বলল,,

‘এইডা ফিক্কা তোর মুখে মারুম আগে তারপর একটা লাঠি দিয়া বাবলা গাছের সাথে বাইন্দা পিটামু।”

ততক্ষণে সবাই গাড়ির কাছে এলো। মেহবিন কে দেখে বাচ্চাগুলো নেমে গেল। মেহবিন তাজেলের সব কথাই শুনেছে এই মেয়েটাও না তার ডাক্তারের কোন কিছু মানে তার কাছে মহামূল্যবান কেউ কিছু করতে পারবে না। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘হইছে নেত্রী তোমার আর কিছু করতে হবে না ওরা নেমে গেছে।”

তখন রানা নামের ছেলেটা বলল,,

“আমরা তাজেলের কথায় নামি নাই আপনারে দেইহা নামছি। আপনে যদি কিছু কন বা মারেন এই জন্য।”

“গাড়ির ওপরে কি করছিলে?”

“কিছু না এমনিই শখ হইছিলো তাই।”

“গাড়িতে উঠবে তোমরা।”

কথাটা শুনেই তিনজনের মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। আর তাড়াতাড়ি করে বলল হ। কিন্তু তাজেল ওদের উঠতে দেবে না ওরা আগে বেয়াদবি করেছে তাই। মেহবিন তাজেলকে বুঝিয়ে উঠালো ওদের। মেহবিন সবাইকে নিয়ে মেলায় গেল। মেহবিন তাজেলের টাকায় ফুচকা খেল। বাকি সবার টাকা ও নিজে দিল সবাইকে হালকা কিছু জিনিস কিনে দিল। ওরা পুরো মেলা ঘুরলো। নাগরদোলা তারপর নৌকা সব জায়গায় উঠলো। তখন ফোন এলো ড্রাইভার এসে পরেছে ওনাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলল মেহবিন। ওরা বাড়ি চলে এলো।আজ তাজেল কে অনেক খুশি দেখাচ্ছিল। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চাবিটা ড্রাইভারের হাতে দিলে উনি গাড়ি নিয়ে চলে গেল। তাজেল মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আইজকা আমি মেলা খুশি ডাক্তার।”

“তোমাকে খুশি করতে পেরে আমি ধন্য নেত্রী।

“রাইতে কিন্তু আমার বাড়ি খাইতে হইবো ভুইলো না কিন্তু।”

“আচ্ছা।”

কথা বলতে বলতেই ও বাড়ির সামনে এসে দেখলো আহমেদ পরিবার এখানে। না পুরো আহমেদ পরিবার বলা যায় না, সাবিনা আহমেদ, শিলা, শান, শানের মা আর ওর বোন এসেছে। ওদের দেখে তাজেল বলল,,

“এইগুলা কারা ডাক্তার?”

“আমার পরিচিত তুমি এখন বাড়ি যাও।”

“আইচ্ছা।”

তাজেল চলে যেতে নিল তখন মেহবিন আবার ডাক দিল ,,

“নেত্রী?”

তাজেল পেছনে ঘুরে বলল,,

“কি?”

“এগুলো কে নেবে?”

তাজেল দেখলো মেহবিনের হাতে ওর ভাইবোনের জন্য কেনা খেলনা যা মেহবিন কিনে দিয়েছে। তাজেল হেঁসে এগিয়ে এসে বলল,,

“ভুইলা গেছিলাম।”

“হুম নিয়ে যাও।”

তাজেল ওগুলো নিয়ে চলে গেল। মেহবিন মুচকি হেসে সাবিনা আহমেদ কে বলল,,

“কখন এসেছো মামনি?”

“বেশি না দুই মিনিট।”

“ওহ আচ্ছা ভেতরে এসো।”

মেহবিন গিয়ে বারান্দার তালা খুললো সবাইকে নিয়ে ঘরে বসতে দিল। সাবিনা আহমেদ মেহবিনের গালে হাত দিয়ে বলল,,

“কেমন আছিস?”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“আমাকে কি খারাপ দেখছো?”

তখন শিলা বলল,,

“কোথায় গিয়েছিলি?”

“মেলায় গিয়েছিলাম। তা মামনি তোমরা কয়েকদিন থাকছো নাকি এখানে?

তখন মিসেস সাবিনা বললেন,,

“না আজ সন্ধ্যায় রওনা হবো। ভাবলাম যাওয়ার আগে তোর সাথে দেখা করে যাই।”

তখন শিলা বলল,,

“বাড়ি থেকে বেরিয়ে তো হলে উঠেছিলি শুনেছিলাম। তার বছর খানেক পর কোথায় লাপাত্তা হয়েছিলি?”

“বাহ আমার এতো খোঁজ তুমি নিয়েছো বলে অবাক হলাম। যাই হোক আমি তোমাকে কিছুই বলতে চাইছি না। এখন বলো বিয়ে করেছো?

“কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছিস নাকি?”

“না শুধু জিজ্ঞেস করছি।”

“হ্যা করেছি।”

“তা জামাইকে আনলে না এখানে?”

“আমার জামাই কি যেন তেন লোক নাকি সে মস্ত বড় বিজনেস ম্যান। সময় নেই তার বেশিরভাগ সময়ই সে ব্যস্ত থাকে।”

“তা তোমায় সময় দেয় তো ?”

কথাটা শুনে শিলা একটু থমকে গেল। তবুও বলল,,

“দেবে না কেন।”

“যাক খুশি হলাম।”

সবাই আরো কিছু কথাবার্তা বললো মেহবিন ওদের জন্য কফি বানিয়ে আনলো সবাই খেল । মেহবিন সবার আলাদা হয়ে সাবিনা আহমেদ কে কিছু বললো। এখন সবাই বাড়ি যাবে যাওয়ার আগে। শান সুযোগ বুঝে মেহবিন কে একা পেয়ে বলল,,

“তুই কোথায় ছিলিস এতোদিন জানিস আমি কতো খুঁজেছি?”

“কেন? বিয়ে করার জন্য বুঝি?”

মেহবিনের কথায় শান অবাক হলো তখন মেহবিন বলল,,

“অবাক হওয়ার কিছু নেই শান ভাইয়া। তুমি যে আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করতে এটা আমি বুঝতাম। এখন যা হচ্ছে তা ভালোর জন্যই হচ্ছে। ”

“জিনিয়াকে দেখার আগে যদি আমি তোকে পেয়ে যেতাম তাহলে হয়তো কিছু করতে পারতাম।”

“তবুও কিছুই করতে পারতে না তুমি। যে মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সেই মেয়েটাকে তোমার বউ হিসেবে কেউ আপন করতে পারতো না। তাছাড়াও সেটা সম্ভব নয় সবথেকে বড় কথা আমি ম্যারিড। জিনিয়া খুব ভালো মেয়ে তোমাকে সুখী করতে পারবে।”

মেহবিনের কথায় শান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। আর বলে,,

“সত্যিই কি তুই ম্যারিড নাকি আমায় মিথ্যা বলছিস।”

“সত্যি বলছি আমি ম্যারিড। আর তুমি তো জানো আমি কিরকম এরকম কথা নিশ্চয়ই আমি মিথ্যে বলবো না। তাছাড়া আর কেউ না জানলেও মামনি জানে আমার বিয়ে হয়েছে।”

শান আর কিছু বললো না। ওখান থেকে নিজের মায়ের কাছে গেল। অতঃপর তারা সকলেই চলে গেল।

রাত হলে তাজেল আর ওর দাদি এলো মেহবিনকে নিতে। তা দেখে মেহবিন হাসলো এখন একেবারে নিতেই এসেছে। মেহবিন কতোগুলো চকলেট আর চিপস বিস্কুট নিয়ে ওদের বাড়িতে গেল। তাজেলের বাবা ওকে বসতে বলল তাজেল আর ওর দাদি মেহবিন কে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে পাটি বিছিয়ে দিল। হাঁসের মাংস আর চিতই পিঠা মেহবিনের সামনে রাখলো। তখন মেহবিন বলল,,

“তাজেল তোমার মা কোথায়?”

“হেতি এনে আইবো না ঘরেই রইছে।”

“তোমরা সবাই খেয়েছো?”

তখন তাজেলের দাদি বলল,,

“হ সবাই দুপুরেই গোস্ত দিয়া পিঠা খাইছে খালি তাজেল তোমার জন্য বইসা আছিল। এইগুলো তোমার জন্য আমারে উঠাই রাখতে কইছিল তাজেল আর ওর বাপে তাই তোমাগো দুজনের জন্যই উঠাই রাখছি। আর রাইতেও সবাই খাইছে খালি তাজেল বাদে।

মেহবিন এ কথা শুনে তাজেলের দিকে তাকালো। মেহবিনের চোখের ভাষা তাজেল বুঝতে পারলো ও চুপটি করে মেহবিনের পাশে বসলো একটা প্লেট নিয়ে তরকারি নিল তারপর মেহবিনের খাওয়া শুরু করার আগেই পিঠে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আর বলল,,

“এহন তুমি শুরু করো?”

মেহবিন হেঁসে খাবার খাওয়া শুরু করলো। মেহবিন নিজের প্লেট থেকে মাংস তুলে তাজেলের প্লেটে উঠিয়ে দিল। তা দেখে তাজেল বলল,,

“আমার পেট ভরা কিছু দিও না আমারে।’

“দুই পিস মাংস খেলে কিছুই হবে না নেত্রী।”

“মেলা থেইকা কতো কিছু খাইছি মনে নাই তোমার।”

“আরে খাও তো।”

তখন তাজেলের দুই ভাইবোন ওখানে এলো। তাজেল ওদের ডেকে এক টুকরো করে মাংস দিল দু’জনকে। তা দেখে মেহবিন হাসলো এটাই বোধহয় বড় বোন ভাইবোন যেমনই হোক না কেন তাদের প্রতি আলাদা একটা দায়িত্ববোধ কাজ করে সব বড় ভাইবোনদের।

_________________

দুদিন পর দুপুরে,,

ব্রেকিং নিউজ,,

মহুয়াপুর ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার সুলেখার মৃত্যু তদন্তে অতঃপর তার মৃত্যুর ছয় মাস পর পুলিশ একটা সুরাহা করতে পেরেছে। জানা যাচ্ছে যে তার খুনের পেছনে রয়েছে নিশাচর এবং খুনটা ডক্টর বাবুলের দ্বারা করিয়েছিলেন তিনি। ডাক্তার সুলেখা নিশাচর কে দেখতে পেয়েছিলেন এবং অবৈধ কার্যকলাপের একটা সাক্ষী হয়েছিলেন দেখে নিশাচর তাকে হত্যা করেন। কাল মারা যাওয়ার আগে ডাক্তার বাবুল এ কথা স্বীকার করে গেছেন। হুট করেই জেল থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পরেন এবং ওনার অবস্থার অবগতির জন্য ওনাকে মহুয়াপুর ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় ডক্টর মেহবিন মুসকান এর আন্ডারে। ওনার সকল ট্রিটমেন্ট উনিই করছিলেন। মারা যাওয়ার আগে ডক্টর মেহবিন মুসকান ও ওসি মুখর শাহরিয়ার এর সামনে ডক্টর বাবুল জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু ঘটে।

খবরটা দেখেই নিশাচর চেয়ারটা উঠিয়ে টিভির স্কিনে ছুড়ে মারলো আর চিৎকার করে বলল,,

“এই ডাক্তার আর পুলিশ এরা আসার পর থেকেই আমার একটা একটা করে সব বের হচ্ছে।যতবার ভাবি এদের ছেড়ে দেব ততবারই এরা নতুন নতুন কারন দেয় ওদের শেষ করার জন্য। আচ্ছা এই দুইজন কি একসাথেই আমাকে এক্সপোজ করার রাস্তায় নেমেছে নাকি আলাদা আলাদা। যেভাবেই হোক এদের কে আর ছাড়া যাবে না। আমার পেছনে লাগার জন্য এদের মূল্য চুকাতেই হবে।

______________

‘এভাবে কয়েকদিন পর পর অসুস্থ হলে চলবে নিজের যত্ন নিতে হবে তো রাইফা! তুমি যদি একটুও আমার কথা শুনো। সবসময় শুধু নিজের মন মর্জি মতো চলো।”

সায়িদের কথায় রাইফার তেমন ভাবান্তর হলো না। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহবিনের দিকে। মেহবিন ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। বিকেলবেলা বাড়ি ফিরতেই ওর ফোন এলো সেদিনের মতো আজকেও রাইফা অজ্ঞান হয়ে পরে গেছে। মেহবিন শুনেই তাড়াতাড়ি করে চলে আসে। বাড়ি এসেই দেখে ওর জ্ঞান ফিরেছে এখন ড্রয়িংরুমের সোফায় শোয়া। বাড়িতে শেখ শাহেনশাহ ছাড়া পুরুষেরা কেউ বাড়ি নেই তাই বোধহয় মহিলারা এখানে এনে শুয়িয়েছে। মেহবিন চেক আপ করে দেখলো একই অবস্থা সেদিনের মতো। ও কিছু বলবে তার আগেই তখনি শেখ সায়িদ , নুপুর ,আরবাজ আর শেখ শাহনাওয়াজ আসে বাড়িতে। রাইফা কে ওভাবে দেখে তাড়াতাড়ি করে ওখানে যায়। মেহবিন ওকে জায়গা ছেড়ে দেয়। কিন্তু সায়িদ যা বললো তা শুনে কেন যেন মেহবিনের বিশ্বাস হচ্ছে না। মেহবিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

“আমার মনে হয় একবার হাসপাতালে গিয়ে ওনার পুরো বডি টেস্ট করা উচিৎ। উনি তেমন ভাবে কিছু বলছেও না আবার এভাবে কয়েক দিন পরপর অসুস্থ হওয়াটাও স্বাভাবিক নয়।”

তখন সায়িদ বলল,,

“আমি কালকেই তোমাকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাবো। কোন কথা না।”

তখন রাইফা বলল,

‘এতো ব্যস্ত হবেন না। আমি ঠিক আছি কিছু হয় নি আমার। দুপুরে খাবারটা খাইনি তাই এমন হয়েছে আর কিছু না।”

‘তুমি সিওর তো না খাওয়ার জন্যই।”

“হ্যা আমি সিওর গ্যাসের সমস্যার জন্য না খেয়ে এরকম হয়েছে।”

“আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে। মা ওর জন্য খাবার আনো খেয়ে ওষুধ খাক। আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।

বলেই সায়িদ ওপরে চলে গেল। তখন আরিফা জামান নুপুরকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেল সেদিনের পর আজই প্রথম এবাড়িতে এলো নুপুর। জিনিয়ার অনুষ্ঠানেও আসে নি।সবাই ওদিকে এগিয়ে গেল। সায়িদ যেতেই মেহবিন রাইফার পাশে বসলো আর বলল,,

‘যে মেয়েটা অল্পতেই কেঁদে ভাসাতো। সেই মেয়েটা এতো কিছুর পরেও কথাদ্বারা সব সামলে নিচ্ছে কি অদ্ভুত।”

রাইফা মেহবিনের দিকে তাকালো। মুহুর্তেই রাইফার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো । মেহবিন রাইফার চোখের ভাষা বুঝতে পারলো ঐ চোখে কতটা অসহায়ত্ব দেখা যাচ্ছে ও উপলব্ধি করতে পারছে। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তখন রাইফা বলল,,

‘হয়তো এগুলো তার একসময়ের ভুলের মাসুল।”

~ চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে