#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“তার আকাশে মেঘ জমলে আমার আকাশ অন্ধকার হয়। হায় এ কেমন বিষন্নতা?”
পোস্ট টা মাত্রই করা হয়েছে বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে। মেহবিন এমনিই ফোন স্কল করছিল হুট করেই পোস্টটা সামনে আসলো। মেহবিন বুঝতে পারলো আজকের পোস্ট এর জন্য এরকম পোস্ট করা হয়েছে এই আইডি থেকে। মেহবিন কমেন্ট করলো,,
“এটাই এক অর্ধাঙ্গের বৈশিষ্ট্য।”
ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,
“আমারটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার এতো কিসের বিষন্নতা বিহঙ্গিনী?’
তাকে শুধু এই মানুষটিই তার হাল জিজ্ঞেস করে। উত্তর দেওয়া টা তার কাছে কঠিন হলেও ,এটা দেখে সে সবসময় মুচকি হাসে। মেহবিন মুচকি হেসে সাদাত হোসাইন এর একটা কবিতা লিখলো।
“আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ
আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি।
যত্ন করে খুব খেয়ালে রোজ
আমি’টাকে আমার ভেতর রাখি।
আমি ভীষণ অভিমানের মেঘ
আমি ভীষণ ক্লান্ত একা ভোর।
কষ্টগুলো রোজ জমিয়ে ভাবি
সুখগুলো সব থাকুক না হয় তোর।
আমি ভীষণ মন খারাপের দিন
আমি ভীষণ কান্না মাখা রোদ।
অশ্রুগুলো বর্ষা জলে ভাসাই
ঋণগুলো সব না হয় হল শোধ।
আমি ভীষণ স্মৃতির খেরোখাতা
মলাট জুড়ে হাজার আঁকিবুঁকি।
আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ
‘আমি’টাকে আমার ভেতর রুখি।
~ সাদাত হোসাইন
বরাবরের মতো এবারও ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো না। কিন্তু মেহবিন এবার আর চুপ করে রইলো না। সে আরো একটা কমেন্ট করলো।
“আমি হাড়িয়েছি আমার সব প্রিয় জিনিস কে। তবুও আমি এগিয়ে যাই সামনে কে জানে আবার কোন জিনিস প্রিয় হয়ে যায়।”
এখন ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,
“সারাজীবনের জন্য প্রিয় জিনিসকে হারানোর শোক বড়। না সাময়িক সময়ের জন্য হারানোর শোক বড়।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে লিখলো,,,
“নিঃসন্দেহে সারাজীবনের জন্য প্রিয় জিনিসকে হারানোর শোক বড়। সাময়িক সময়ের জন্য হারালেও কিছুটা অপেক্ষা করলে সেই জিনিস টা পাবেন। আপনি যাই করুননা কেন? একটা সময়ের পর আপনার অপেক্ষার অবসান হবে। কিন্তু সারাজীবনের জন্য হারালে আপনি যতই অপেক্ষা করুন সেটা আর পাবেন না। তাকে দেখার তৃষ্ণায় আপনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে তবুও তাকে দেখার সুযোগ পাবেন না। তাকে একটু ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য ছটফট করবেন তবুও একটু ছুঁতে পারবেন না। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তার জন্য অপেক্ষা করবেন কিন্তু এ অপেক্ষার শেষ হবে না। ভেতরে ভেতরে তার অপেক্ষা করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাবেন তবুও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে তাকে পাবেন না। তখন আপনার মস্তিষ্ক জুড়ে একটাই কথা ঘুরবে ইশশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে যদি তাকে দেখতে পারতাম।”
“সেই জন্যই তো সারাজীবনের জন্য যাতে হারাতে না হয় তাই সাময়িক সময়ের জন্য হাড়িয়েছি।”
“না হাড়ান নি একটু সঙ্গ ছেড়েছিলেন শুধু। তবে ছিলেন তো সবসময় আমার সাথেই। হয়তো একটু দূরে।”
“সামনে শুক্রবার তৈরি থেকো তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো। তবে হ্যা তুমি তোমার কালো বোরকা হিজাব নিকাব পরে এসো সাথে সেই ক্যাপ।”
মেহবিন মুচকি হেসে লিখলো,,
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
ব্যস কথোপকথন শেষ। মেহবিনের মুডটা এখন বেশ ভালো। যদিও তার কাব্য তার জন্য সেই মুডটা ভালো করার জন্যই পোস্ট করেছিল।
____________
“নেত্রী কাল তো খুব বলেছিলে সব পড়াশোনা শেষ তাহলে আজ কি হলো?”
মেহবিনের কথায় তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,
‘আমি তো পড়ছিলাম ডাক্তার কিন্তু কি কও তো আমার মাথা আমারে ধোকা দিছে।সে মনে রাহে নাই।”
“ধোকা কাকে বলে নেত্রী?”
মেহবিনের কথায় তাজেল ওর দিকে তাকালো আর বলল,,
‘আমি তো জানি না কিন্তু এইডা বুঝি। আমার বাপ আমারে একবার কইছিল আমার মায় নাকি তারে ধোঁকা দিয়া চইলা গেছে। এনে তো আমার পড়াও চইলা গেছে তাই কইলাম। মানে হইলো, চইলা যাওয়া মানেই ধোঁকা দেওয়া ঠিক আছে না ডাক্তার।”
তাজেলের এমন কথায় মেহবিন কিছু বললো না এই টুকু বয়সে ওকে ধোকার মানে টা সে শেখাতে চায় না। তখন তাজেল একটা দাত কেলানি দিয়ে বলল,,
“তুমি আমারে সত্যি মারবা ডাক্তার?’ এই দেহো আমার দাঁত কেলানি কি সুন্দর।”
তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,
‘তোমার দাঁতে পোকা হইছে বুঝছো নেত্রী। তাই এতো দাঁত কেলানোর দরকার নেই।”
“তুমি হাচা কথা কইতাছাও নাকি ডাক্তার? খাইছে আমি তো এহন ভালো মতো খাইতে পারুম না।
“নেত্রী তুমি না একটা,,
“কি আমি?”
“একটা কিউটের ডিব্বা।”
“আমি তো মানুষ তুমি ডিব্বা পাইলা কই। তোমার চোহে সমস্যা হইছে তুমি ঠিকমতো চোহে দেহো না তোমার চোহের ডাক্তার দেহান লাগবো। তুমি মানুষরে ডিব্বা দেখতেছো।
মেহবিন এবার একটু বেশিই হাসলো। আর বলল,,
“হইছে নেত্রী তুমি মানুষ। আমার তোমাকে ডিব্বা বলা উচিত হয় নি।
“আইচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এহনো আমারে মারবা নাকি ডাক্তার?”
“না! তুমি ঠিক বলেছিলে তোমাকে আমি মারতেই পারবো না।”
“তাইলে কানে ধরাইবা? আমার কান কিন্তু এহনো বিষ (ব্যাথা)।
“তাও করবো না।”
“তাইলে কি করবা?”
‘কিছুই করবো না। তবে হ্যা তুমি এখন আমার সামনে বসে পুরো পড়া মুখস্থ করবা এটা তোমার শাস্তি।”
“তাইলে আমারে চকলেট দিবা?”
“সব পড়া হলে দেব।”
‘আইচ্ছা তাইলে পরতেছি।”
“যদি না দিতাম তাহলে কি করতে?”
“এখন ব্যাগটা নিয়া পলাইতাম।”
“হুম হুম অনেক হয়েছে এখন পড়।
তাজেলের পড়া শেষ হলে মেহবিন ওকে চকলেট দিল। আজ দুজনেরই বন্ধ তাই দশটার দিকে পরতে এসেছিল তাজেল। তাজেল যেতে নিলে মেহবিন বলল,,
“নেত্রী তুমি কিন্তু কিছু ভুলে যাচ্ছো?”
তাজেল একটা হাঁসি দিয়ে বলল,,
“আসসালামালাইকুম?”
“এটা কি সঠিক হয়েছে নেত্রী? তোমাকে বলছি সালামের ভালোভাবে উচ্চারণ না হলে সেটার অর্থের বিকৃতি হয়ে যায়। যদিও অজান্তেই হয় মানুষ বুঝতে পারে না তবে এর এই ভুলের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত, একজন আরেকজনকে বদদোয়া দিচ্ছি। একজন আরেকজনের ধ্বংস, ক্ষতি, অকল্যাণ কামনা করছি।
সওয়াবের বদলে পাপের বোঝা ভারি হচ্ছে।
-যেমনঃ আমরা প্রতিদিন অনেককেই এভাবে সালাম দিতে শুনি যে,
১) স্লামালাইকুম
২) আস সালামালাইকুম
৩) সেলামালাইকুম
৪) আসলা মালিকুম ইত্যাদি
যার অর্থ শান্তির পরিবর্তে গজব, অশান্তি কিংবা শাস্তি কামনা করা হয়।
আবার উত্তর দেয়ার সময়ও শোনা যায় ভুল শব্দের ব্যবহার। যেমনঃ
১) অলাইকুম সালাম
২) অলাইকুম আস-সালাম
৩) আলিকুম সালাম ইত্যাদি
যার উত্তরেও গজব,অশান্তি কিংবা শাস্তি কামনা করা হয়।
নাঊজুবিল্লাহি মিন জালিক।
আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অনেকেই ভুল করে তাই আমাদের সঠিক টা জানতে হবে নেত্রী।এর সহীহ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কমপক্ষে এতটুকু বিশুদ্ধ উচ্চারণ অবশ্যই জরুরি, যার দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে। সালামের সঠিক উচ্চারণ হলো,,
“আসসালামু আলাইকুম” অর্থ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।”ওয়ালাইকুমুস সালাম” অর্থ আপনার ওপরেও শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে শুদ্ধ ভাবে করতে হবে নেত্রী।”
সবশুনে তাজেল বলল,,
‘আসসালামু আলাইকুম। এবার ঠিক আছে।”
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। মাশাআল্লাহ এবার ঠিক আছে।”
“আল্লাহ হাফেজ ডাক্তার।”
“আল্লাহ হাফেজ নেত্রী।”
তাজেল চলে গেল। মেহবিন আস্তে আস্তে তাজেল কে সব শেখাচ্ছে। নামাজ ও পরতে বলেছে দাদির সাথে। ও বলেছে আস্তে আস্তে শিখে ফেলবে।
_____________________
“তো বল তো একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে এরকম আচরণ করলি কিভাবে? আচ্ছা আমায় একটা কথা বলতো শুধুমাত্র নিজেদের খায়েশ মেটানোর জন্য তোরা মেয়েদের সাথে এরকম করতি না আরো কোন কারন আছে। যা জানিস ভালোই ভালোই বলে দে তাহলে আর তোদের ঐ শরীরে হাত দেব না।”
মুখর শামীম আর ওদের বন্ধুদের কে এসেই মেরেছে। এখন শান্ত হয়ে বসে ওকে এ কথা জিজ্ঞেস করল। মুখরের কথায় শামীম চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,,
‘আমরা নিজেদের জন্যই এসব করছি।”
‘তাহলে সহজেই মেনে নিলি তোরা। কালকে না বললি তোদের ফাঁসানো হয়েছে। তা রাতে কি নিশাচর এসেছিল নাকি?
নিশাচর নামটা শুনতেই সবগুলো চমকে উঠলো। শামীম আমতা আমতা করে বলল,,
“নিশ্ শশাচর কে?”
মুখর হেঁসে বলল,,
“তোদের ইলজিক্যাল ফাদার?”
তখন এস আই বলল,,
“স্যার ইলজিক্যাল ফাদার কি?”
‘নিশাচর তো ওদের বায়োলজিক্যাল ফাদার না কিন্তু বাবার মতো ওদের এ কাজে ঢুকিয়েছে তাই আমি নাম দিলাম ইলজিক্যাল ফাদার।”
“স্যার আপনিও না।”
‘আমি কিছুই না। তো শামীম বল কতো বছর ধরে নিশাচরের সাথে কাজ করিস। আর এতে তার লাভই বা কি হয়।”
‘আমি চিনি না নিশাচর কে। আমি জানি না তার সম্পর্কে।”
‘তারমানে নিশাচর নামে কেউ একজন তো আছে তাইনা।”
এ কথা শুনে শামীম একটা ঢোক গিললো তা দেখে মুখর বলল,,
‘কিরে আছে তো কেউ একজন নিশাচর নামে তাই না। আচ্ছা সেসব বাদ দে এখন বল তোরা না হয় মেয়েদের ধর্ষণ করে নিজেদের খায়েশ মেটাতি কিন্তু ওরা আত্মহত্যা করলে নিশাচরের কি লাভ হতো?
“আমরা জানি না।’
“না জানলে কেমনে হবে ভাই?”
‘আমাদের শুধু বলা হতো মেয়েকে তুলে তার সর্বনাশ করতে। এর জন্য আমাদের টাকাও দিতো আর ড্রাগস ও দিতো যা আমাদের প্রয়োজন।”
“তারমানে তোর ড্রাগ এডিক্টেড।”
“হ সেই কলেজে ওঠার পর থেইকা। তারপরেই তো আমার অন্ধকার জগতে পা রাখা শুরু যদি একজন ভালো মানুষই হইতাম তাইলে কি এইগুলা করতে পারতাম। তবে আপনে বিশ্বাস করেন আমরা নিশাচর রে দেহিনাই কোন দিন। খালি নাম শুনছি আর হেই আমাগো মালিক। আর এতে তার কি লাভ এইডাও আমরা জানি না।”
মুখর ওদের আরও কিছু জিজ্ঞাসা করে বাইরে বের হয়ে নিজের কেবিনে আসলো । ওদেরকে প্রচুর মেরেছে মুখর। তারপরেও ওদের দেখে ওর ইচ্ছে করছিল ওদের মেরে ফেলতে। একটা ধর্ষকের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ওদের যাতে ফাঁসি হয় এর সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে মুখর। কিছুক্ষণ পর মুখরের ল্যান্ড ফোনে একটা কল এলো ও ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,,
“কি ইন্সপেক্টর কি খবর?”
মুখর হেঁসে বলল,,
‘আমি ভেবেছিলাম আপনি ফোন দিবেন। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই খবর পেয়েছেন আপনার ছেলেপেলেদের ধরে আনা হয়েছে। অবশ্য খোঁজ তো রাখবেনই হাজার হোক তাদের ইলোজিক্যাল ফাদার বলে কথা।’
“ইলোজিক্যাল ফাদার আবার কি?”
“কিছু না শুধু আমার দেওয়া একটা নাম নিশাচর।”
“আমি ওদের জন্য তোমায় ফোন দিইনি।”
“তাহলে কিসের জন্য ফোন দিয়েছেন?”
‘এই তোমার খোঁজ নেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে তোমার উপদ্রব বেড়েছে তাই জন্য।”
“আমাকে ভয় পাচ্ছেন নাকি নিশাচর?”
তখন ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল। আর কিছুক্ষণ পর শোনা গেল,,
“নিশাচর নাম আমার আমি ভয় পাই না ভয় দেখাই।”
“আমি কিন্তু এখনো ভয় পাইনি।”
“একটা গুলি খেয়েও মন ভরেনি তাহলে?”
“দশটা খেয়ে মরে গেলেও বোধহয় মন ভরবে না। আমার মন তো আবার বিশাল বড় এতসহজে ভরে না।”
“আমার সাথে মজা করছিস?”
‘না তো আমি তো সত্যি কথা বলছি। যাই হোক আপনি হুট হাট করে তুই সম্পর্কে যান কেন বলুন তো? এমন ভাবে কথা বলেন বোধহয় আপনি আর আমি বন্ধু।”
‘আমি তো বন্ধু তোকে বানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই হলি না।”
“পুলিশ কখনো ক্রিমিনালের বন্ধু হতে পারে না।”
“এই ইন্সপেক্টর মুখ সামলে!!”
“আমি তো মুখ সামলেই কথা বলছি আপনার এতো জ্বলছে কেন বলুন তো।”
‘তুই যতো যাই করিস না কেন? শামীমের থেকে আমার কোন খবর পাবি না কারন ওরা কখনো দেখেই নি আমাকে আর আমার সম্পর্কে জানেও না।”
‘আমি কখন বললাম আমি ওদের কিছু করে আপনার ব্যাপারে জানবো। আপনার ব্যাপারে তো আমি জানি শুধু আপনাকে চিনি না। যেদিন চিনবো না সেদিন এমন ভাবে ধরবো তুই চাইলেও নিজেকে আড়াল করতে পারবি না।”
‘আগে চিনে তো দেখা তারপর না হয় ধরার প্রশ্ন আসবে?”
“খুব বেশিদিন এখানে আসা হয়নি তাতেই তোর দুজন মাথাকে বের করা শেষ। এরপরেও তোর এতো এটিটিউড?”
“এতো বছরের গড়া সাম্রাজ্য তুই কি ভেবেছিস এতো সহজেই ভেঙে যাবে নারে আমি অত সস্তা নই।”
“সেটা তো সময় বলে দেবে তুই সস্তা না দামী।’
বলেই মুখর ফোন কেটে দিল। ল্যান্ড লাইনে ফোন করে বলে ও লোকটার ট্রেস করতে পারছে না। মুখর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো।
_________________
রাতে খাবার টেবিলে মুখর জানালো ও বাসা ভাড়া পেয়ে গেছে পুলিশ স্টেশনের কাছে কালই ওখানে চলে যাবে সে। প্রথমে শেখ শাহনাওয়াজ আপত্তি করলেও পরে মুখরের কথায় মেনে নিয়েছে । মুখর চলে যাবে শুনে মিশুর মন খারাপ হলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মুখর আরবাজ কে নিয়ে নিজের ঘরের চলে গেল। কালকেই চলে যাবে সে। মিশুও গেল ওদের পেছনে ও গিয়ে বলল,,
“পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি তুমি সত্যি আমাদের বাড়ি থেকে চলে যাবে?”
মুখর হেঁসে মিশুকে একটা চকলেট দিয়ে বলল,,
“হ্যা যাবো তবে তোমার সাথে মাঝে মাঝেই দেখা করে যাবো।”
“তুমি যদি চলে যাও। তাহলে আমায় চকলেট দেবে কে প্রতিদিন রাতে খাবার খাওয়ার পর?”
“আরবাজ দেবে ওর কাছে চকলেট পাঠিয়ে দেব আমি তোমার জন্য। আবার আমি যখন আসবো তখন নিয়ে আসবো তোমার জন্য।”
“তুমি চলে গেলে আমার খারাপ লাগবে তো।’
“উহু বেশি খারাপ লাগবে না তোমার বন্ধু আছে তো! তোমার সাথে ফোনে প্রতিদিন কথা বলে । আবার তার বন্ধের দিন ও তো তোমার সাথে সময় কাটাবে বলেছে।”
‘তবুও সে তো বন্ধু আর তুমি তো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি।”
মিশুর কথায় আরবাজ আর মুখর দু’জনেই হাসলো। আরবাজ বলল,,
‘মন খারাপ করিস না মিশু। মুখর আসবে তো মাঝে মাঝে।”
“হুম। তুমি খুব ভালো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি।”
‘তুমিও খুব ভালো মিশু।”
মিশু হাসলো তারপর চকলেট খেতে খেতে বেরিয়ে গেল। আরবাজ আর মুখর কিছু কাজ করে ঘুমিয়ে গেল।
____________
সামনে শুক্রবার চলে এসেছে মেহবিন সকাল সকাল নয়টায় গোসল করে এসে রোদে বসলো। এগারোটার দিকে বিহঙ্গিনীর কাব্য চলে আসবে। কিছুক্ষণ এটা সেটা ভাবলো। তারপর সময় দেখে রেডি হতে গেল। কালো বোরকা হিজাব নিকাব মাথায় কালো ক্যাপ পরে সব তালা দিয়ে রাস্তায় আসলো। রাস্তায় আসতেই দেখলো একটা কালো গাড়ির সামনে কালো পাঞ্জাবি, কালো মাস্ক আর ক্যাপ পরিহিত ব্যক্তি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে চিনতে তার একটুও ভুল হলো না। তাকে দেখে মেহবিনের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। মেহবিন এগিয়ে গেল লোকটা তাকে দেখে ডান হাতটা বুকের বাঁ পাশে রাখলো তা দেখে মেহবিন হাসলো। মেহবিন তার সামনে দাঁড়িয়ে হেঁসে বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম ইয়া হাবিবি। মাশাআল্লাহ আপনাকে একদম রানীর মতো লাগছে বিহঙ্গিনী।”
“শুকরিয়া আপনাকেও কোন রাজার থেকে কম লাগছে না কাব্য।”
“আয় হায় তোমার মুখে কাব্য নামটা কি যে সুন্দর লাগে। কাব্য নামটা হয়তো তোমার নামকরনে রাঙানো বলে।”
মেহবিন মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে কয়েকটা চিঠি বের করলো আর সামনের মানুষটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“আমার অবসরে আপনাকে নিয়ে লেখা কাব্য।”
কাব্য মুচকি হেসে চিঠিগুলো গাড়িতে রেখে সেখান থেকে বড় একটা লাল গোলাপের তোরা দিয়ে বলল,,
“আপনাকে এত প্রেমময়ী কে হতে বলেছিল বলুন তো? যার প্রতিটা সাক্ষাতই আমাকে নতুন করে প্রেমে পড়ার অনুভূতি দেয়।”
~চলবে,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
কাব্যের এমন কথায় মেহবিন হাসলো আর ফুলগুলো নিয়ে বলল,,
‘হয়তো একটা সময়ের প্রেমিক পুরুষের চোখে অনেক প্রেম ছিল তাই তো এতো প্রেমময়ী হতে পেরেছি।”
কাব্য মুচকি হেসে বলল,,
‘এখন প্রেমিক পুরুষ নয় কেন?”
“এখন তো সে আমার অর্ধাঙ্গ। এখন কি সে আর প্রেমিক পুরুষ আছে নাকি!”
‘তার মানে বলছো অর্ধাঙ্গ হওয়ার সাথে সাথে প্রেমিক পুরুষ চলে গেছে।”
‘আমি কখন বললাম প্রেমিক পুরুষ চলে গেছে। বরং অর্ধাঙ্গ হওয়ার সাথে সাথে তার প্রেমিক পুরুষ পদ থেকে প্রমোশন পেয়েছে।”
‘কথায় তোমার সাথে কেউ পারবে না।”
“তাই নাকি?”
“হ্যা তাই।”
“ডাক্তার ইইডা কিডা?”
হুট করে কারো কথায় দুজনেই চমকে উঠলো । পাশে তাকাতেই মেহবিন দেখলো তাজেল দাঁড়িয়ে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
‘নেত্রী!”
“ডাক্তার তোমাগো দেহি সব কালা। মাথায় দেহি দুইজনেই ক্যাপ পরছো। এইডা কিডা ডাক্তার তোমার জামাই নাকি?
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
“জামাই হলে কি করবে নেত্রী।”
“একটা লজেন খাওয়ামু হেতিরে।”
তখন কাব্য বলল,,
‘তাহলে দিয়ে দাও লজেন। আমি তোমার ডাক্তারের জামাই।”
তাজেল একবার কাব্যের দিকে তাকালো আবার মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তোমার জামাই দেহি শরম পায় ডাক্তার। তাই তো মুখ ঢাইকা আইছে।”
তাজেলের কথায় কাব্য হেঁসে বলল,,
“শরম পাই নাই গো নেত্রী এমনি মাস্ক পরছি।”
“তুমি আমারে চেনো নাকি । আর তুমি আমারে নেত্রী কইতেছো কেন? ঐডা খালি ডাক্তার ডাকবো।”
“আমি তোমার ডাক্তারের জামাই তাই তো তোমায় নেত্রী ডাকছি। আর হ্যা আমি তোমায় চিনি।”
“ডাক্তারের জামাই দেইখা নেত্রী ডাকায় কিছু কইলাম না।”
“অন্যকেউ হলে কি করতে শুনি।”
“ডাক্তারের বাড়ির পাশে একটা বাবলা গাছ আছে না। ঐ গাছে বাইন্ধা পিটাইতাম।”
তাজেলের এমন কথায় কাব্যের মুখটা চুপসে গেল আর মেহবিন জোরে হেঁসে উঠলো। কাব্য বুকে হাত দিয়ে বলল,,
“তোমার ডাক্তারের জামাই দেখে বাইচা গেছি।”
“ডাক্তার তোমার জামাইরে এটটু দেহি। দেহি তোমার থিকা কালা না ধলা।”
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
“দেখাতে পারি যদি একটা কথা রাখতে পারো। তুমি কিন্তু কাউকে বলতে পারবে না এটা আমার জামাই।”
“আইচ্ছা তোমার নেত্রী তোমারে কথা দিতাছে কাউরে কইবো না। এহন কইয়া ফালাও, না তোমার জামাইরে দেখাই ফালাও, আরে না ঐ কালা পাঞ্জাবিওয়ালা মুখ খুলো।”
কাব্য একটু নিচু হয়ে হেঁসে মুখ খুললো তাজেল কাব্যের দিকে একবার তাকালো আরেকবার মেহবিনের দিকে। কাব্যের মুখ দেখে তাজেল হা হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,,
“এই পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তোমার জামাই ডাক্তার?”
মেহবিন মাথা নাড়লো। তা দেখে তাজেল মাথায় হাত দিল আর বলল,,
“তাইলে হেইদিন জিগাইলাম তোমার জামাই নাকি তুমি হেইদিন কইলা না ক্যান?”
তখন কাব্য মাস্কটা পরে তাজেলের নাক ধরে একটু টান দিয়ে বলল,,
“সেদিন তো তোমার পা দিয়ে রক্ত বের হওয়ার জন্য তোমার প্রশ্নটা চাপা পরে গিয়েছিল।”
“ওহ আইচ্ছা তোমরা কোথাও ঘুরতে যাইতেছো নাকি?”
“হুম যাচ্ছি তো!”
তখন মেহবিন বলল,,
‘তুমি এখানে কি কর এখন?”
‘কিছু না এমনিই কিন্তু দেহো সেদিন আমার শরীর লুকাইলেও চোখ দেখছিল। আইজ কিন্তু কেউ লুকায় নাই সবাই সব দেখছে।”
তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“তুমি আমার নেত্রী দেখেই কিন্তু সব জানতে পারলে। অন্যকেউ হলে কিন্তু জানতো না।”
“আইচ্ছা ঐডা ঠিক আছে। তা তোমার জামাই এর নাম কি? পাঞ্জাবিওয়ালা তো তুমি রাখছো।”
তখন মুখর কোলে নিয়ে গাড়ির ওপর বসিয়ে বলল,,
“তোমার ডাক্তার আমার আরো একটা নাম রেখেছে জানো। আমার নাম মুখর শাহরিয়ার কাব্য। মুখর শাহরিয়ার আমার বাবা মা রেখেছে আর কাব্যটা তোমার ডাক্তার।”
“একদম আমার মতো তাজেল আমার বাপ মায় রাখছিল আর শেখ আমি লাগাইছি।”
“হুম ঠিক কিছুটা তোমার মতোই শেখ তাজেল। তা তুমি চকলেট খাবে?”
‘না ডাক্তার আমারে মাঝে মাঝেই চকলেট দেয়। এহন খাইতে ইচ্ছা করতেছে না। আমি এহন খেলতে যামু। ওনে গেলেই ভাগ দেওয়া লাগবো।”
“ওহ আচ্ছা।”
“হ এহন আমারে নামায় দেও।”
মুখর তাজেল কে নামিয়ে দিল। তখন তাজেল বলল,,
“আমি কিন্তু তোমারে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কমু ঠিক আছে। নামটা এক্কেরে ভাললাগছে পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি তো আবার পুলিশ তাই পুলিশ ডাকমু ঠিক আছে।”
“ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা তাই ডেকো।”
‘হুনো ডাক্তার রে দেইখা রাইখো হেতিরে জানি কেউ আবার নিয়া যায় না।”
“আমি থাকতে তোমার ডাক্তারে নেবে কে?”
‘তা ঠিক আছে তুমি তো আবার পুলিশ। ডাক্তার আসবা কোন সময়?
মেহবিন বলল,,
“বিকেলে বা সন্ধ্যা হতে পারে রাত ও হতে পারে বলতে পারছি না।”
‘তাইলে কাল আমার ছুটি?”
‘না পড়াবো।”
“একদিন না পরাইলে কি অয়?”
“আজকে না তোমার ছুটি ছিল!”
“হ তাই তো। আইচ্ছা তোমরা যাও আমি গেলাম খেলায় দেরি হইতেছে। আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম!
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
তাজেল চলে গেল মুখর সেদিকে তাকিয়ে বলল,,
“মেয়েটা কিন্তু কিউটের ডিব্বা!”
মুখরের কথা মেহবিন হেঁসে বলল,,
“এখানে নেত্রী থাকলে কি বলতো জানেন? বলতো আপনার চোখে সমস্যা আছে ডাক্তার দেখাতে হবে আপনি মানুষ কে ডিব্বা দেখেন।”
মুখর হাসলো আর বলল,,
“ক্যারেক্টার একটা!”
“যাই হোক চলুন নাকি এখানেই থাকবেন। আশেপাশে মানুষ নেই তাই কি হয়েছে নেত্রীর মতো অনেকেই এখান দিয়ে যাওয়া আসা করবে।”
“হ্যা তা ঠিক বলেছো। উঠো গাড়িতে?”
মুখর আর মেহবিন গাড়িতে বসলো । গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। কিছুদূর যেতেই মুখর বলল,,
“এক মাস চার দিন পর বিহঙ্গিনীর সাথে তার কাব্যের দেখা হয়েছে।”
“উহু শুধু এক মাস চার দিন নয়। এক মাস চার দিন তিন ঘন্টা উনিশ মিনিট পর।”
“বাহ বিহঙ্গিনী ঘন্টা আর মিনিটের খবর ও রেখেছ?”
“বিহঙ্গিনীর সাথে কাব্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই এই ছোট ছোট বিষয়েও খেয়াল রাখতে হয়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কি বিহঙ্গিনী তার কাব্যের হাতটা জড়িয়ে ধরবে?”
মেহবিন মুচকি হেসে এগিয়ে এসে মুখরের হাত জড়িয়ে ধরলো ওর কাঁধে মাথা রাখলো। তখন মুখর বলল,,
“এখন কোথায় যাবে?”
“ঘুরতে নেওয়ার কথা আপনার। তাহলে আমি কেন বলবো?”
“আচ্ছা দুপুরে কি খাবে?”
‘আপনার যা পছন্দ?”
“তাহলে চলো আজ জমিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি খাবো। যেটায় আলু দেওয়া থাকে। তুমি কিন্তু তোমার প্লেট থেকে আলু আমায় দেবে।
মুখরের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“আচ্ছা ঠিক আছে দেব। আমি তো জানি আপনার কাচ্চির থেকে কাচ্চির আলু পছন্দ।”
“আমি কিন্তু কাচ্চি শুধু তোমার সাথে খাই।”
“হ্যা হ্যা তাই তো! সেদিন মিস্টার বাজপাখির সাথে কে বিরিয়ানি খেয়েছিল?
মেহবিনের এ কথা শুনে মুখর একটু হাসলো তারপর বললো,,
“ওটায় কিন্তু আলু ছিল না। আমি আলু ওয়ালা কাচ্চি শুধু তোমার সাথে খাই। আচ্ছা বাদ দাও তুমি কিন্তু আমার ক্যাপের ওপরের লেখা দেখো নি।”
“আপনাকে কে বলল আমি দেখেনি আমি দেখেছি ওখানে ইংরেজি তে লেখা BIHONGGINIR KABBO!”
“হুম ভালো আজ তোমায় একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।”
“আজ আপনার নামে আমার দিনটা লিখে দিয়েছি আপনার যেথায় ইচ্ছে সেথায় যান।”
মুখর একটা শুনশান লেকের জায়গায় নিয়ে গাড়ি থামালো সময়টা দুপুর বারোটা । কেউ নেই আশেপাশে। মুখর বেরিয়ে মেহবিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মেহবিন হেঁসে তার হাতে হাত রাখলো। তারপর দুজনে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো। হুট করেই মুখর বলল,,
“তোমার নিকাব টা একটু খুলবে বিহঙ্গিনী? বহুদিন হয়ে গেছে আমি মুগ্ধ চোখে তোমার হাঁসি দেখার সুযোগ পাইনি।”
মুখরের এমন কথায় মেহবিন একটু থমকালো । তারপর হেঁসে নিকাব টা খুললো। মুখর মুগ্ধ চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর মুখর বলতে লাগল,,
“এই বিশ্বে সবচাইতে ভয়ানক জিনিস কি জানো? নারীর চোখ আর হাঁসি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ মানুষ এখানেই আঁটকে যায়।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘এ কথা কে বলেছে?”
“আমি বললাম আর লেখিকা আজরিনা জ্যামি বলল।’
‘লেখিকা বললে ঠিক আছে কিন্তু আমার কাছে আপনার বলার গ্ৰহনযোগ্যতা হলো না।”
“আমায় আন্ডারেস্টিমেট করছো?’
“না তো কোথায় করলাম।”
মুখর মেহবিনের হাত ধরলো আর তার চোখে চোখ রেখে বলল,,
“তুমি আমার শীতের সকালের সোনালী সূর্য কণা,
তুমি মানে নীলাভ আকাশে মেঘের আনাগোনা।
তুমি মানে নতুন আলো, নতুন দিনের আভাস
আমার মনের মনিকোঠায় শুধু তোমার বসবাস।
তুমি মানে মেঘলা দিনের একটুখানি রোদ
তোমার জন্য পাড়ি দিতে পারি অনেকখানি পথ।
তুমি মানে রোদেলা দুপুরের এক টুকরো মেঘ
তোমায় নিয়ে মনের মাঝে অভিমান অনেক।
তুমি মানে উত্তাল সমুদ্রের এক টুকরো ঢেউ
তুমি ছাড়া আমার বলো আর কাছের কি আছে কেউ।
তুমি মানে গাছের ডালে বিহঙ্গদের বসেছে মেলা
তোমার অপেক্ষায় আছি শেষ যে হয়ে যায় বেলা।
তুমি মানে আঁধার রাতের একটুখানি আলো
আমি তোমায় বাসি আমার প্রাণের চেয়ে বেশি ভালো।
মুখরের এমন কবিতা শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“কিছু মুহূর্ত এতো সুন্দর হয় কেন কাব্য? ভালোবাসা বাড়ানোর জন্য নাকি স্মৃতি রাখার জন্য?”
মুখর হেঁসে বলল,,
“দুটোর জন্যই। ভালোবাসাময় এক মুহুর্ত সারাজীবন ধরে পুনঃজীবিত করে রাখার জন্য।”
“হুম!”
“কি হুম?”
“কিছু না!”
“জায়গা টা কেমন?”
“বেশ ভালো।”
“আমার খুদা লাগছে তাহলে যাওয়া যাক।”
“আরেকটু থাকি না?’
“আরো কিছু জায়গায় যেতে হবে সাথে ফুতপাত দিয়ে হাতে হাত রেখে হাঁটতেও তো হবে।”
মুখরের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“আপনি কোন দিন ও শুধরাবেন না।”
“না তোমার কোন সমস্যা?”
“উঁহু কোন সমস্যা নেই এখন চলুন জনাব।”
ওরা দুজনে ওখান থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। ওদেরকে কালো পোষাকে দেখে সবাই ওদের দিকে তাকালো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাপল। মুখর মেহবিনের হাত ধরে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে যা সবার নজর কারলো সব থেকে নজর কারলো দুজনের ক্যাপ যেখানে তাদের নিজেদের দেওয়া নাম আছে সোনালী রঙের। ওরা ভেতরে একটা রুমের মতো সেখানে চলে গেল। মুখর দু’জনের জন্য কাচ্চি অর্ডার করলো। মুখর মাস্ক খুলে ফেললো মেহবিন সেদিকে তাকিয়ে রইল। তা দেখে মুখর বলল,,
“কি দেখছো?”
“আপনিও প্রেমময় কিন্তু কম নন।”
‘আয় হায় এই জালিম মেয়েটা আমার প্রশংসা করছে ভাবা যায়।”
“যে মানুষ টা আমার দিকে সবসময় মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে সঠিক সময়ের জন্য আমার জন্য অপেক্ষা করে তার প্রশংসা করবো না।”
“শুধু কি আমি করি তুমিও তো অপেক্ষা কর। আমার অপেক্ষা তো শেষ হবে একদিন। কিন্তু তুমি যার জন্য অপেক্ষা কর তার অপেক্ষার অবসান কি কখনো হবে?”
মুখরের এই কথায় মেহবিনের হাঁসি মুখটা একটু থমকে গেল। তবুও আবার মুচকি হেসে বলল,,
“আল্লাহ চাহে তো হবে। ওসব নিয়ে আমি ভাবি না। জীবনের এতটা পথ একাই পাড়ি দিয়ে এসেছি। এরপর তো আপনি আছেন ঠিকই জীবন কেটে যাবে।”
তখনি ওয়েটার এলো খাবার নিয়ে। মেহবিন বলল,,
“খাবার এসে গেছে আপনার না খুদা লাগছে শুরু করুন।”
“আজ আমি তোমায় খায়িয়ে দিই?”
“কেন সবগুলো আলু নিবেন বলে?”
মেহবিনের এমন উত্তর মুখর আশা করেনি। ও হা করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমি বললাম কি, আর তুমি বললে কি? তুমি একটা যা তা!”
মুখরের এমন কথায় মেহবিন হেঁসে ফেললো। আর সামনের চেয়ারটা থেকে উঠে এসে মুখরের পাশের চেয়ারে বসলো। আর বলল,,
“নিন খায়িয়ে দিন।”
মুখর হেঁসে বলল,,
“তুমি একটা,,”
“কি?”
“গোলাপ ফুল!”
‘সাবধান গোলাপ ফুলে কিন্তু কাঁটাও থাকে।”
‘তোমার সবকিছুই মধুর লাগে আমার তা হোক স্নিগ্ধতা বা হোক আঘাত।”
‘হুম অনেক হয়েছে এখন শুরু করুন। আপনার সাথে কথা বলতে বলতে আমারই খুদা লেগে গেছে।”
‘সবসময় কথা কাটানোর ধান্ধায় থাকো। যাই হোক হা করো।”
মুখর মেহবিন কে যত্ন করে খায়িয়ে দিল মেহবিন ও খায়িয়ে দিল। দূর থেকে কেউ একজন এটা দেখে মুচকি হাসলো। সাথে সাথে একটা নিজের আইডি তে পোস্ট ও করলো ” ভালোবাসা সুন্দর যদি মানুষটা সঠিক হয়!’
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওরা বের হলো আর হাত ধরে রাস্তার ফুটপাতে হাঁটতে লাগলো। একজন ফুল বিক্রেতা আসলে মুখর একটা বেলি ফুলের মালা জরিয়ে দিল মেহবিনের হাতে। পুরো সারাটা দিন নিজেদের মতো কাটালো। কয়েকটা ছবিও তুললো। সন্ধ্যার পর মেহবিন কে পাকা রাস্তায় নামিয়ে দিল সাথে সে ও নামলো। মেহবিন হেঁসে বলল,,
“আজকের দিনটা অনেক সুন্দর ছিল কাব্য।”
‘হুম তা তো সুন্দর হবেই বিহঙ্গিনী যে তার কাব্যের সাথে মিলেছিল।”
‘হুম!”
মেহবিন অদ্ভুত ভাবে মুখরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। তা দেখে মুখর বলল,,
“কিছু বলবে বিহঙ্গিনী?”
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,,
“বলার মতো কিছু নেই। কি বলবো?”
“তোমায় নিয়ে?”
“আমার আমিকে নিয়ে কিছু বলার নেই। সময়ই পাইনি কোনদিন নিজেকে নিয়ে ভাবার। কিন্তু সবাই ভাবে কতো অফুরন্ত সময় আমার।”
মেহবিনের এমন কথা শুনে মুখর ওর দিকে তাকিয়ে রইল। আর বলল,,
“সত্যিই কি পাওনি সময়?”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“ছোটবেলায় ছিলাম মুক্ত পাখির মতো এখানে ওখানে নিজের ইচ্ছে মতো উড়ে বেড়াতাম নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কই। দিন তো এমনিই পেরিয়ে যেত। পাখনা দিয়েছিল আমার মা বাবা। মাকে হারালাম সাথে নিজেকে। নীড় পরিবর্তন হলো সেখানে মানিয়ে নেওয়ার তীব্র চেষ্টা করলাম নিজেকে তাদের সাথে। মানাতে মানাতে জীবনে কিছু মানুষ এলো খুব কাছের হলো মাঝপথে ছেড়ে চলে গেল । আবার একা হয়ে পরলাম তবুও নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার তীব্র চেষ্টা আবার করলাম। আবার নীড় হারালাম নতুন করে নিজের নীড় খুঁজতে লাগলাম একটা নীড় হলো তারপর আপনাদের সাথে পরিচিত হলাম। আপনি এলেন অন্যরুপে অনেক ভাবনা চিন্তার পর আপনাকে নিজের সাথে জড়ালাম। তারপর সাময়িক বিচ্ছেদ হলো আমাদের নিজেকে নিজের একাকিত্বের সাথে আবার মানিয়ে নেওয়ার তীব্র চেষ্টা করলাম। অতঃপর আমার একাকীত্ব আমার সঙ্গী হলো কিন্তু গন্তব্য বদলে গেল। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আবার তীব্র চেষ্টা করলাম বা করছি। এখন বলুন নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কখন পেলাম। জীবনের এতটা সময় পার করে এলাম অথচ নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ই পেলাম না। কি অদ্ভুত তাই না। উর্দু তে যদি বলি,,
“Itna Saal gujar di Per Waqt hi nhi Mila..koe puche Mujhe Aise kya kia Zo Waqt hi nhi Mila.. Eh to Mujhe nhi Malum per Mujhe Waqt hi nhi Mila.
সবশুনে মুখরের চোখটা ছলছল করে উঠলো। অথচ মেহবিনের মুখে স্নিগ্ধ হাঁসি। মুখর অসহায় চোখে একটা হাঁসি দিয়ে বলল,,
Kash Hum Sath hote, Kash Hardin Aise Khubsurat Hota.
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
Honge na! Sabr Kijiye.. Allah Hafiz…
~চলবে,,