#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৮( বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
(অনুমতি ব্যতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
বহিস্কার করার কথা শুনে মেহবিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ওর এর রিয়াকশনের মানে কেউ বুঝতে পারলো না। ডক্টর বাবুল এর মুখে হাসি তা দেখে মেহবিন বুঝতে পারলো উনিই কিছু ঝোল পাকিয়েছে। মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,
‘আমার অপরাধ?”
তখন ডক্টর বাবুল বলল,,
“প্রথমত আপনি সিনিয়রের কথা শুনেন নি। আর দ্বিতীয়ত কালকে ইমার্জেন্সি হয়েছিল বলে হাসপাতালে এসে আপনি পেশেন্ট কে ইনজেকশন দিয়েছিলেন সেই পেশেন্ট টা আপনার ভুল ইনজেকশন দেওয়ার কারনে কোমায় চলে গেছে।”
মেহবিন এবার বুঝতে পারলো সমস্যা কোথায় হয়েছে। কিন্তু ও এখনো শান্তই ও বলল,,
“আমার তো মনে পরছে না আমি কোন ভুল ওষুধ দিয়েছি যার জন্য উনি কোমায় চলে যেতে পারেন?”
“যেতে পারেন না ডক্টর মেহবিন। উনি কোমায় চলে গেছেন এবং আপনার ইনজেকশন দেওয়ার কারনেই উনি কোমায় চলে গেছেন।”
মেহবিন মুচকি হাসলো এবার আর হাঁসি বজায় রেখেই বলল,,
“উনার যতদূর শরীরের অবস্থা সেই হিসেবে কেউ কোমায় চলে যাওয়ার ওষুধ না দিলে উনি ভুলভাল ইনজেকশনেও কোমায় যাবেন না।”
তখন হেড সিনিয়র ডক্টর বললেন,,
“দেখুন ডক্টর মেহবিন কাল বন্ধ ছিল ইমার্জেন্সি ছিল বলে আপনাকে এখান থেকে কল করা হয়েছিল কারন পেশেন্টকে আপনি আর ডক্টর বাবুল দেখছিল। ডক্টর বাবুল তো আসেন নি আপনি এসেছিলেন। আর একটা ইনজেকশন ও দিয়েছিলেন যার দরুন এরকমটা হয়েছে। সকালেই ডক্টর বাবুল বোর্ড কে ব্যাপারটা জানিয়েছেন। আর সব শুনে বোর্ড এই এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সব শুনে মেহবিন শান্ত ভাবেই বলল,,
“আপনি সিওর যে আমার ইনজেকশনেই এমনটা হয়েছে?”
তখন ডক্টর বাবুল বলল,,
“হ্যা আমি সিওর আপনার ইনজেকশনের কারনেই এমনটা হয়েছে। আমার পেশেন্ট আমি ভালোমতোই জানবো তাই না।”
“ওহ আচ্ছা। তাহলে সেদিন আপনার পেশেন্ট থাকা সত্ত্বেও আপনি কেন তাকে অন্য হাসপাতালে পাঠাচ্ছিলেন ডক্টর বাবুল?
এ কথা শুনে ডক্টর বাবুল সিনিয়র ডক্টরের সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন। এদিকে সবাই এখন ডক্টর বাবুলের দিকেই তাকিয়ে আছে তা দেখে তিনি আমতা আমতা করে বলল,,
“আস্ সলে পে পেশেন্ট এর অবস্থা এখান থেকে ঠিক হচ্ছিল না তাই অন্য জায়গায় শিফ্ট করতে বলেছিলাম। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা এটা নয় এখানে ব্যাপারটা হলো ডক্টর মেহবিনের গাফিলতির জন্য একজন কোমায় চলে গেছে।”
তখন সিনিয়র ডক্টর বললেন,,
‘হ্যা ঠিক এটাই। তো ডক্টর মেহবিন আপনি আপনার জবাব পেয়েছেন । এই কারনেই আপনাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদিও লাইসেন্স বাতিল এখনো হয় নি শুধুমাত্র বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে হতেও পারে আপাতত সেটা বলতে পারছি না। আপনার এরকম ইরেসপন্সিবল কাজের জন্য একটা মানুষের কি পোহাতে হতে পারে এটা ভেবে আপনার লাইসেন্স ও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বোর্ড। বোর্ড থেকে আজ বন্ধের জন্য সবাই নেই এখানে তবে এখানে পুরো বোর্ডের মতামত নেওয়া হয়েছে।
তখন ডক্টর বাবুল বললেন,,
‘এইটুকুতেই থেমে নেই ডক্টর মেহবিন। পেশেন্ট এর বাড়ির লোক আপনার নামে কেস করেছে পুলিশ এলো বলে।”
মেহবিন ছোট্ট করে বলল,,
“ওহ আচ্ছা!”
মেহবিনের এরকম দায়সারা ভাবে দেখেই সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মেহবিন খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে কিছু ঘাটছে। তখন হেড সিনিয়র ডক্টর বললেন,,
“ডক্টর মেহবিন আপনি কি কিছু বলবেন আপনার কি একটুও অনুশোচনা বা ভয় নেই।”
মেহবিন ফোন ঘাটতে ঘাটতেই বলল,,
‘ভয় আমার কোনদিনও ছিল না। আর অনুশোচনা সেটা মানুষ ভুল করলে তার অনুশোচনা হয়। আমার মতে আমি কোন ভুল করিনি যার জন্য অনুশোচনা হবে।”
“আপনি বলছেন পেশেন্টের এই অবস্থায় আপনার কোন দায় নেই।”
‘মনে তো হচ্ছে না তবে একটা জিনিস বলতে পারি ওনার কপালে এরকমটা ছিল তাই হয়েছে। আপনারা আপনাদের কাজ করেছেন আমাকে আমার কাজ করতে দিন। পুলিশ কখন আসবে ডক্টর বাবুল?”
মেহবিনের এরকম কথায় ডক্টর বাবুল একটু চমকেই উঠলেন। বাকি দুজন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ পর্যন্ত এমন কাউকে তারা দেখেনি কারো ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেছে তবুও কি শান্ত ভাবে রয়েছে কষ্টের ছিটেফোঁটাও নেই এমনকি ভয় বা রাগ ও নেই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এলো। মেহবিন ভেবেছিল মুখর হয়তো জয়েন করেছে কিন্তু গাধাটা রেস্ট এর চক্করে আজকেও জয়েন করে নি কাল বোধ হয় করবে। এসেছেন একজন এস আই। তার সাথে পেশেন্ট এর বাড়ির একজন লোক এসেছে। কেবিনে ঢুকেই লোকটা আর ডক্টর বাবুল তাকে বলল,,
‘উনিই ডক্টর মেহবিন উনার জন্যই একজন মানুষ কোমায় চলে গেছেন। আপনি ওনাকে এরেস্ট করুন অফিসার।”
মেহবিন কাউকে ফোন করে এস আই এর দিকে এগিয়ে দিল। তা দেখে এস আই বলল,,
“এটা কি? আর কে আছে কলে আমি এখানে ফোনে কথা বলতে আসি নি। আমি আপনাকে এরেস্ট করতে এসেছি।”
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
“ফোনটা না ধরলে কিভাবে বুঝবেন কলে কে আছেন?”
লোকটা মেহবিনের কথায় ফোনটা কানে নিলেন ওপাশের আওয়াজ শুনতেই সে সোজা হয়ে স্যার স্যার করতে লাগলেন।
“সরি স্যার!
জি স্যার আমি এখনি দেখছি।
জি স্যার অপরাধী অবশ্যই শাস্তি পাবে।
জি স্যার আমি সব ব্যাবস্থা করছি।
নো স্যার এরপর থেকে আমাকে এ অবস্থায় আর পাবেন না।
জি স্যার ওকে স্যার!
সরি স্যার এড থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”
এদিকে লোকটার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তার অবস্থা দেখে ডক্টর বাবুল এর গলা শুকিয়ে আসছে কিছু তো খারাপ হতে চলেছে তার সাথে সে বুঝতে পারছে। বাকিরা অবাক চোখে মেহবিন কে আর অফিসার কে দেখছে। কথা শেষ করে লোকটা মেহবিনের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,,
‘সবকিছুর জন্য দুঃখিত ম্যাম।”
তখন ডক্টর বাবুল বললেন,,
“একজন অপরাধী কে সরি বলছেন কেন? আর ফোনেই কে ছিল?”
তখন এস আই বলল,,
“আপনার থেকে জানতে হবে না কাকে কি বলতে হবে। আপনি চুপ থাকুন। আর ফোনটা আমাদের কমিশনার স্যারের ছিল।”
এ কথা শুনে সকলে বিস্ফোরিত চোখে মেহবিনের দিকে তাকালো। মেহবিনের এখনো শান্ত দৃষ্টি। মেহবিন তখন নিজের ফোন বের করে সবাইকে দেখালো কাল মেহবিন বের হওয়ার প্রায় তিন ঘন্টা পর রাতে ডক্টর বাবুল আসেন একজন নার্সের সাথে কথা বলে একটা ইনজেকশন পুশ করে । তারপর পেশেন্ট টা ছটফট করে একটু তার এক মিনিট পরেই নিস্তেজ হয়ে পরে। তারপর থেকেই ওনার আর কোন আর কোন রেসপন্স নেই মানে উনি কোমায় চলে গেছেন। এমনকি মেহবিন সেদিনের একটা ভিডিও দেখালো এর আগেও ডক্টর বাবুল একটা ইনজেকশন দিয়েছিলেন যার জন্য লোকটার অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু ইনজেকশন পুশ করার সময় কেউ ওনার সাথে ছিল না। সব দেখে ডক্টর বাবুলের ঘাম ঝড়তে থাকে। ভিডিও দেখানো শেষ হলে মেহবিন বলল,,
“এখন কি বলবেন ডক্টর বাবুল?”
ডক্টর বাবুল তড়িঘড়ি করে করে বলল,,
‘এগুলো ইডিট করা এটা হতেই পারে না।”
“কেন হতে পারে না এটা তো স্পষ্ট এখানে আপনার চেহারা রয়েছে পেশেন্ট ও একজনই এমনকি হাসপাতাল ও এটাই। সিসি টিভি ক্যামেরা থেকে সহজেই এই ভিডিও গুলো নেওয়া যায়।”
“না সহজে নেওয়া যায় না কারন সিসিটিভি ফুটেজ সবাইকে দেখানো হয় না কিছু নির্দিষ্ট মানুষ ছাড়া এগুলো কেউ দেখতেও পারে না। আর ফুটেজ নেওয়া তো দূর। কারন আমি না করেছি ওর ওতো সাহস নেই কাউকে ফুটেজ দেখাবে। কারন ফুটেজ দেখলেই আমি সবার কাছে,,
জোশে হুশ হাড়িয়ে ফেলেছে ডক্টর বাবুল। তাই তো নিজেই সব বলে দিচ্ছিলেন। মেহবিন হেসে বলল,,
“সবার কাছে ধরা পরে যাবেন এই তো! তবে সত্যি ফুটেজ গুলো নিতে আমার খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। যাস্ট সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমটা একটু হ্যাক করতে হয়েছে।সেদিন আপনার অস্বাভাবিক আচরন দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম আপনার ভেতরে কিছু একটা তো আছে সবথেকে বড় কথা আপনি নিজে একজন সিনিয়র ডাক্তার হওয়া সত্বেও অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তখনই সন্দেহ হয়েছিল তাই তো সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে গিয়েছিলাম কিন্তু ওখানে গিয়ে আপনার বুলি শুনালো তখন সন্দেহ আরো গাঢ় হলো। তাই তো হ্যাক করে দেখে নিয়েছিলাম কাল এই বিষয়ে বলতাম সিনিয়র স্যার কে। এছাড়া এই হাসপাতালের সবার অগোচরে আপনি অনেক সুস্থ লোককে অসুস্থ করেছেন শুধু অন্য হাসপাতালে পাঠাবেন বলে। সেদিন আমার জন্য আপনি অন্য হাসপাতালে পেশেন্ট কে পাঠাতে পারেন নি। তাই আমাকে জব্দ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আপনার খুব তাড়া ছিল আমাকে জব্দ করার তাই নিজেই একদিন আগে করলেন। একটা কথা মনে রাখবেন ডক্টর বাবুল,,
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্য একটি পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে, তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হচ্ছে পাপকাজ। পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত বাংলা ৯ম খণ্ড হা/৪৬১৩)।
আবূ সিরমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দিবে, আল্লাহ তাকে কষ্ট দিবেন। ”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৩৪২)
নিজের কষ্টের জন্য তৈরি থাকুন যাই হোক অনেক জ্ঞান দিয়ে ফেলেছি। অফিসার এরেস্ট হিম।”
ডক্টর বাবুল সব শুনে কিংকর্তবিমূড় হয়ে রইলো। তারমানে এতো দিনের সাজানো গোছানো সাম্রাজ্যে প্রথম ফাইলটা তার মধ্যে দিয়েই হলো। একদিন গোটা সাম্রাজ্যই একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে সেটা ডক্টর বাবুল বুঝতে পারছেন। এস আই ডক্টর বাবুল কে এরেস্ট করলেন। ডক্টর বাবুলের কথা পুরো বোর্ড কে জানানো হলো। তারা তার লাইসেন্স বাতিলের জন্য মনস্থির করলেন। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যেন ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেল বাবুল এর কথা। হেড সিনিয়র ডক্টর মেহবিনের কাছে ক্ষমা চাইলেন। আর বললেন,,
‘আই এম রেইলি সরি ডক্টর মেহবিন আমরা কেউ বুঝতেই পারি নি রক্ষকই ভক্ষক। কিন্তু আপনি বুঝলেন কিভাবে? পেশেন্ট কোমায় যাওয়ার জন্য আপনার ইনজেকশন দায়ী নয়।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘এমনি এমনি বাইরের দেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হইনি। এ দেশের থেকে বাইরের দেশের সবকিছুই উন্নত এটা জানেন তো। আমি এমবিবিএস সেকেন্ড ইয়ার এখানে শেষ করে তারপরে বাইরের দেশে গিয়ে পুরো ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করেছি। ছয়মাস সেখানেও ডক্টর হিসেবে ছিলাম।আর এটুকু বুঝতে পারবো না। আর হ্যাকিংটাও আমি বিদেশে থেকেই শিখেছি।”
মেহবিনের কথা শুনে ডক্টর দুজন অবাক হয়ে গেল। মেহবিন আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে এলো।
মেহবিন সব কাজ শেষ করে বাইরে বের হলো। রাস্তায় দেখলো ফুচকা তাই সে ওখানে গেল গিয়ে মনের সুখে ফুচকা খেতে লাগলো। মুড টা এখন অনেক ভালো আছে। একটা কোন আইসক্রিম কিনে মেহবিন একটা রিক্সায় উঠলো। রিক্সাচালক বেশ বয়স্ক মানুষ। হুট করেই রিক্সাচালক বললেন,,
“এই মালাই মেলা স্বাদ তাই না?”
মেহবিন এক পলক তার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“হঠাৎ এরকম প্রশ্ন কেন করলেন?”
“আমার নাতি খুব খায় এইগুলা তাই মনে হইলো মেলা স্বাদ।”
“আপনি কখনো খেয়েছেন?”
“না খাই নাই তবে অনেক খাওয়ার শখ আছে। কিন্তু খাওয়ার কথা মনেই থাহে না। আর যহন মনে থাহে তহন ট্যাকা থাহে না।”
এ কথা শুনে মেহবিন একটা দোকান দেখে রিক্সা থামাতে বলল। মেহবিন দোকানে গিয়ে একটা কোন আইসক্রিম আনলো আর হেঁসে রিক্সাচালক এর হাতে দিয়ে বলল,,
” খেয়ে দেখেন তো মেলা স্বাদ কি না?”
“তুমি আবার মালাই কিনতে গেলা কেন? আমি তো এমনিই কইছি।”
“আমিও তো এমনিই দিয়েছি। আমার তাড়া নেই আপনি ধীরে সুস্থে খান তারপর চলেন। ভয় নেই আমি ভাড়া দেব। এটা আপনাকে উপহার হিসেবে দিলাম।”
মেহবিনের কথা শুনে লোকটার চোখ ছলছল করে উঠলো। সে একটা হাঁসি দিয়ে খেতে লাগলো এতোদিন সবাইকে দেখেছে খেতে আজ নিজে খাচ্ছে মুহুর্তটা অন্যরকম। সে ওপরের কাগজ ছিঁড়ে খেতে লাগলো মেহবিন ও মুচকি হেসে খেতে লাগলো। দুজনের খাওয়া শেষ হলে তিনি বললেন,,
‘তুমি যেমনে আমার শখ পুরন করলা তেমনে আল্লাহ জানি তোমার সব শখ পুরন করে।”
‘আমিন!”
“মালাই ডা মেলা স্বাদ আছিল। আইজকা বাড়ি যাওয়ার সময় আমার বউয়ের জন্য নিয়া যামু। আইজকা আমার কাছে ট্যাকা আছে।”
সব শুনে মেহবিন হাসলো। ভালোবাসা সুন্দর। সন্ধ্যার আগে মেহবিন বাড়ি পৌঁছালো।
__________________
মাগরিবের নামাজ শেষ করে উঠতেই ওর ফোনটা বেজে উঠল ও দেখলো সেই চেয়ারম্যান সাহেবের কল। মেহবিন ফোন ধরেই বলল,,
‘আপনার সমস্যা টা কি বলবেন? যখন তখন ফোন করেন কেন? আপনি আবার,,
‘বন্ধু!”
মেহবিন বুঝতে পারলো মিশু ফোন করেছে। তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বলল,,
‘হ্যা বলো।”
“বাবা তোমায় ফোন দিয়েছিল না।”
‘হ্যা দিয়েছিল।”
“তাহলে তুমি এলে না কেন?”
‘আমার কাজ ছিল তাই।”
“আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম।”
‘কেন?”
“জিজ্ঞেস করতে কাল তুমি আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলে কেন?”
“কখন!”
“ঐ বিকেলে বাজপাখি আমায় ধরলো আর তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে।”
‘কারন তখন প্রয়োজন ছিল যাওয়ার তাই গিয়েছিলাম।”
“তুমি আমায় ছেড়ে কেন গিয়েছিলে?”
‘আমি তো বললাম প্রয়োজন ছিল।”
“তুমি কেন গিয়েছিলে?”
এবার মিশুর কথায় মেহবিনের মেজাজ গরম হলো। তবুও নিজেকে যথআসম্ভব শান্ত রাখলো। মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,
“আমি তখন না গেলে একটা মেয়ে মরে যেত। তাই গিয়েছিলাম তখন গিয়েছিলাম বলেই মেয়েটাকে বাঁচাতে পেরেছিলাম।”
“তবুও তুমি আমায় ছেড়ে কেন গেলে?’
মেহবিন বুঝতে পারছে না মিশু বারবার একই কথা বলছে। মেহবিন নিজেকে শান্ত করে বলল,,
“তোমার বাবা কোথায়?”
“জানি না এখানে নেই।”
“তুমি কোথায়? আর তুমি কিভাবে জানলে এটা আমার নাম্বার?”
“আমাকে তো ম ক নানা সেটা বলা যাবে না সেটা সিক্রেট । তুমি এ কথা বাদ দাও তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে কেন?
মিশুর এমন হেঁয়ালি পনা কথায় মেহবিন একটু রেগেই বলল,,
‘তুমি কে যে তোমার সাথে থাকতে হবে। চেয়ারম্যান এর মেয়ে হয়েছো বলে তোমায় মাথায় করে রাখতে হবে। ফোন রাখো তুমি শুধু একটাই প্রশ্ন কেন ছেড়ে গিয়েছিলাম। আরে তোমায় তখন ছেড়ে না গেলে একটা মেয়ে মরে যেতো।”
ওপাশ থেকে মিশুর কাঁদো কাঁদো গলা শোনা গেল।
“বন্ধু তুমি?”
‘মিশু এখন প্লিজ আমার মাথা গরম করিও না।”
‘তুমি একটুও ভালো না বন্ধু তুমি অনেক পঁচা তুমি আমায় বকেছো। তুমি আমার সাথে আর কথা বলবে না।”
‘ঠিক আছে।”
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। এদিকে মিশু ও ফোনটা রেখে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল। তা দেখে একজনের মুখে পৈশাচিক হাঁসি ফুটে উঠলো। সে ঠিক এটাই চেয়েছিল।
~চলবে,,