#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
তাজেলের বাড়ি গিয়ে দুজন মহিলার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনতে পেয়ে মেহবিন থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। মুহুর্তেই মেহবিনের কান গরম হয়ে উঠলো কারন এর আগে ও এতো গালি কখনো শুনেনি । তাজেল এর দিকে মেহবিন তাকালো ও চকলেট খাচ্ছে আর মেহবিনের কোলে চড়ে ঝগড়া দেখছে মনে হচ্ছে তাজেল ব্যাপারটা বেশ ইনজয় করছে। হুট করে এক মহিলার তাজেল আর মেহবিনের দিকে নজর যেতেই বললেন,,
“ঐ যে নবাবজাদী বাড়িতে ফিরছে। তাও আবার নতুন মাইয়ার কোলে চইরা ও বাবা আবার কি যেন খাইতেছে। হাতে দেহি ফুল ওই তোর মনে এত রঙ কেন হুনি। এত কান্ড কইরা মন ভরে নাই তোর। কোল থিকা নাম তুই আজ চ্যালাকাঠ তোর পিঠে ভাঙুম আমি। *** মাইয়া*** ** ঝি ওই তুই নাম আজ তোর খবর আছে।”
তাজেলের জন্য গালি শুনে মেহবিন আর চুপ না থেকে বলল,,
“দয়া করে আপনার ভাষা ঠিক করুন।”
‘তোমার কাছ থিকা শিখতে হইবো আমি আমার মাইয়ার সাতে কেমনে কথা কমু। ”
তখন তাজেল বলল,,
‘মাইয়া না কও সৎ মাইয়া।”
“ভালো বুলি ফুটছে তোর! তোর ঐ মুখ আমি একদিন সেলাই করে দিমু। তখন দেহুম তোর বুলি কই থেইকা আসে।
তাজেলের কথা শুনে মেহবিন তাজেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল এতক্ষন মুখটা প্রানোচ্ছল থাকলেও সৎ মাইয়া বলতে বলতে তাজেলের মুখটাও শক্ত হয়ে উঠেছে। হুট করে তাজেলের কথায় মেহবিনের ধ্যান ভাঙে। ও বলল,,
“ডাক্তার আমারে নামাই দেও।
তখন মেহবিন তাজেলকে না নামিয়ে তাজেলের সৎমায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আসলে নেত্রী মানে তাজেলের পা কেটে গিয়েছিল। তাই আমি ব্যান্ডেজ করে কোলে করে নিয়ে এলাম। যদি ভুল না হই তাহলে আপনি কুলসুমের মায়ের সাথে ঝগড়া করছিলেন। তাজেল মেরেছে বলে উনি বিচার দিতে এসেছিলেন। আপনিও তাজেলের কোনোকিছুর দায় নেবেন না বলে ঝগড়া করছিলেন। কিন্তু এতকিছুর মাঝেও যার জন্য এই ঝগড়াটা সেটাই কারো মনে নেই। এখানে আমি বলবো কুলসুমের বড় ভাইয়ের দোষ কারন সে তাজেলের মায়ের বিষয়ে কথা বলেছে যেটা তার ভালো লাগেনি তাই সে ধাক্কা মেরেছিল। এরপর দুজনের হাতাহাতি মানে মারামারি এক পর্যায়ে কুলসুমের ভাইয়ের ধাক্কা খেয়ে তাজেল পরে যায় সেখান থেকেই তাজেলের পা কেটেছে।”
নিজের পরিচয় পেয়ে কুলসুমের মা অবাক হলেও বললেন,,
‘তুমি দুইদিন এনে আইসা তাজেলরে চিনা ফেলছো। ও তোমার কাছে মিথ্যা কথা কইছে। কুলসুমের ভাই ওরে খেলতে নেয় নাই বইলা তাজেল কুলসুমের ভাইরে মারছে। আর কোন থিকা পা কাটছে তার ঠিক নাই দিয়া দিছে আমার পোলার দোষ।”
“দু’দিন ধরে এখানে আসলে কি হবে মানুষ চেনার ক্ষমতা আমার আছে। তাজেল দুষ্টু হতে পারে কিন্তু মিথ্যা কথা আমায় বলবে না। তাছাড়া ও কিন্তু আগ বাড়িয়ে আমাকে বলে নি আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম বলে বলেছে। আচ্ছা ও সত্যি বলছে না মিথ্যা বলছে আমি প্রমান করে দিচ্ছি। কুলসুম এদিকে আসোতো।”
কুলসুম এলো তখন মেহবিন বলল,,
“কুলসুম তুমি তো সবসময় নেত্রীর সাথে খেলো তোমার মা যা বললো সত্যিই কি তাই হয়েছিল।”
তখন কুলসুম বলল,,
“সত্য কইলে ভাই মারবো!”
তখন তাজেল বলল,,
“আর সত্য না কইলে আমি তোরে মারুম কুলসুম। কোনদিন খেলা নিমু না। আমার লগে কোন জায়গায় যাইতে পারবি না। এই যে দ্যাখ ডাক্তার বিদেশি ফুল আর চকলেট দিছে ভাবছিলাম তোরে দিমু এইডাও দিমু না।”
“না না তুই না খেললে আমি কার লগে খেলমু। মা এই ডাক্তার সব সত্য কথা কইছে এনে ভাইয়ের ভুল আছিল। ভাই তাজেলের মাইরে অনেক খারাপ কথা কইছে। ভাইয়ের ধাক্কা খাইয়াই তাজেলের পা কাটছে।
তখন মেহবিন বলল,,
“দেখেছেন এই প্রমান করে দিলাম। আশাকরি ছেলে মেয়ের কথায় সত্যি যাচাই না করে অন্যের বাড়িতে ঝগড়া করতে আসবেন না। সবথেকে বড় কথা বাচ্চাদের ঝগড়া তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে দিন তারা ঝগড়াও করবে আবার একসাথে খেলবেও। বাচ্চাদের ঝগড়া মারামারির মাঝে বড়দের না ঢুকাই উত্তম তবে সেটা বাড়াবাড়ি হলে অন্য বিষয়। আর তাজেলের মাকে বলছি অন্যের কথায় নিজের মেয়েকে ভুল ভাববেন না। সৎ হোক একবাড়িতেই তো থাকেন।”
মেহবিনের কথায় কুলসুমের মা তাড়াতাড়ি করে চলে গেল দশ বছরের ছেলেকে নিয়ে। এতোক্ষণ বেশ ভালো একটা জটলা ছিল এখানে এমনিতেও মেহবিন আসছিল দেখে সবাই কৌতুহল দেখিয়ে ওর পেছনে এসেছে। আর ঝগড়া হচ্ছিল দেখে ওখানে আগেই কিছু মহিলা বিন্দু ছিল। সবাই অবাক চোখে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। এমনিতে তাজেলকে নিয়ে কেউ কিছু বললে তারা কেউ কিছু বলে না। যার মেয়ে সে শ্বাসন করুক তাতে কার বাপের কি। কিন্তু মেহবিন তো তেমন নয়। মেহবিন বুঝতে পারলো আজ ও না এলে তাজেল সত্যি সত্যি মার খেতো। হুট করে তাজেল হেঁসে বলল,,
“ডাক্তার ফাটাই দিছো ঐ কুলসুম এনে আয় চকলেট নিয়া যা। আর ডাক্তার আমারে নামাই দেও।”
তখন একটা মেয়ে এসে বলল,,
“ওরে আমার কাছে দেন।”
মেহবিন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলো কমদামি একটা থ্রিপিস পরে একটা মেয়ে। হয়তো এবার কলেজে পরে এরকম বয়স হবে। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“তুমি বুঝি নেত্রীর নওশি আপা।”
মেয়েটা অবাক হয়ে বলল,,
“আমি নওশি আপনি কি করে জানলেন? আর নেত্রী কে?
তখন তাজেল বলল,,
“ডাক্তার আমারে নেত্রী বলে নওশি আপা।”
“ওহ আচ্ছা কিন্তু আমাকে?”
“নেত্রী তোমার কথা প্রায়ই বলে এতো মানুষ থাকতে তুমি ওর কাছে এলে মানে তুমি ওকে অনেক আদর করো। আর তাই ও তোমার কথা বলে ওর মুখে কুলসুম আর নওশি আপা ছাড়া আর কারো নাম শুনিনি তাই আন্দাজ করলাম। তাছাড়া তোমার আচরন বেশ মার্জিত নেত্রী সবসময় বলে তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বলো তুমি তো কলেজে পড় তাই না।”
“হু এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।”
“ওহ আচ্ছা!”
“ডাক্তার তুমি আমারে নামাও না কেন? তোমার হাত ব্যাথা করে না।এই যে ছোট একচালা ঘর দেহো এইডাই আমার ঘর। আমি আর আমার দাদি এইহানে থাহি।”
“এতদূর এসেছি চলো তোমায় ঘরে নিয়েই নামিয়ে দিই। যদি আবার পায়ে ব্যাথা পাও।”
মেহবিন তাজেলকে না নামিয়ে একেবারে ঘরে গিয়ে নামিয়ে দিল। ঐ ঘরে কাঠের চকি ছাড়া আর কিছু নাই কাপর রাখার জন্য একটা দড়ি লাগানো। বিছানাটায় দুটো শক্ত বালিশ আর একটা ল্যাপ ভেতরে লাল ওপরের কভার সাদা রঙের হয়তো এই শীতের জন্য। তাও কভারটা ছেঁড়া দেখে মেহবিন বুঝতে পারলো ভেতরে লাল রঙের। মেহবিন দু’টো ওষুধ দিয়ে নওশি কে বলল,,
“এই যে এখানে ওষুধ আছে রাতে খাবারের পর। বেশ খানিকটা কেটে গেছে। ওষুধ খেলে কাল সকালেই ব্যাথাটা চলে যাবে। ওর মায়ের কাছে দেওয়ার সাহস হলো না তাই তোমাকেই দিচ্ছি।”
“সমস্যা নাই আমি খায়িয়ে দেব।”
তখনি মাগরিবের আজান শোনা গেল । মেহবিন ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো নামাজ পরতে হবে। মেহবিন যেতেই সবাই মেহবিনের প্রশংসা করলো। কিছুজন মুখ বাকালো তাদের মধ্যে সবার শীর্ষে তাজেলের মা।
_____________
“আরে মুখর যে কেমন আছো?”
“এই তো আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”
“আমিও ভালো আছি।”
তখন আরবাজ বলল,,
“বাবা মুখরের এখানে পোস্টিং হয়েছে ইনচার্জ সে এখন।”
“বাহ মাশাআল্লাহ। এতোদিন কতোবার আসতে বললাম এলে না। কিন্তু দেখেছো ভাগ্য ঠিকই এনে দিল।”
মুখর মুচকি হেসে বলল,,
“সত্যি আঙ্কেল ভাগ্য একটা বড় ব্যাপার। কখন কোথায় কাকে কিভাবে কোথায় নিয়ে যায় বলা যায় না।”
তখন কোথা থেকে মিশু এসে “বাজপাখি’ বলে চিৎকার করে আরবাজের ঘাড়ে উঠে ওর চুল ধরে টানতে লাগলো আর খিলখিল করে হাসতে লাগলো। তা দেখে আরবাজ বলল,,
‘মিশু কি করছিস আমার চুল গুলো সব উঠে যাবে।”
“বাজপাখি এই তোমার আসার সময় হলো। আমি কবে থেকে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। সেই পুরশুর পুরশু তার পুরশু গেলে আর এলে না আজকে এলে।”
“একজন অতিথি কে আনতে গিয়েছিলাম । এই দ্যাখ নিয়ে এসেছি তার সামনে তুই আমার ঘাড়ে উঠেছিস সে কি ভাববে বলতো?”
“কি!”
বলেই মিশু নেমে পরলো। মুখর ওর দিকে হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে ব্যাগ থেকে এক বক্স চকলেট বের করে বলল,,
‘মিশুমনি এগুলো তোমার জন্য।”
মিশু এক দৃষ্টিতে মুখরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ ভেবে হাত থেকে চকলেট নিয়ে বলল,,
“তুমি কিভাবে জানলে আমার চকলেট এত্তগুলা প্রিয়। হুম হুম কিভাবে জানলে? আচ্ছা আমি কি তোমাকে চিনি? আচ্ছা তুমি আমার নাম জানলে কি করে?”
‘হুম চিনো তো আমাকে। একসময় আমরা তো বন্ধু ছিলাম।”
‘বন্ধু ছিলে তাহলে এতোদিন কোথায় ছিলে। কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তোমাকে দেখলাম না কেন? আর বন্ধুরা কি হারায় নাকি আমার বন্ধু তো হারায় না কাল ও এসেছিল।”
তখন আরবাজ বলল,,
“কাল কে এসেছিল?”
“আমার বন্ধু!”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“মিশু তুমি যাও এখন। ঘরে যাও অতিথিদের এতো প্রশ্ন করতে হয় না। এখন তো চকলেট পেলে এগুলো ঘরে গিয়ে রেখে এসো।”
“না আমি এখন এখানে বসে খাবো।”
“রুমে গিয়ে খাও যদি আরবাজ তোমার চকলেট নিয়ে যায় তখন কি করবে?”
“এগুলো আমার চকলেট ঐ পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি দিয়েছে । আমি এগুলো কাউকে দেব না।”
বলেই এক ছুট দিল। মুখর আর আরবাজ ‘পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি’ শুনে হাসলো। একটা সময় মুখর আরবাজ আর মিশু ছিল বেস্ট ফ্রেন্ড। সময়ের সাথে কি থেকে কি হয়ে গেছে। হুট করে আরবাজ আবার বলল,,
“মিশুর নতুন বন্ধু কে বাবা?”
তখন ফট করেই আরিফা জামান বললেন,,
“দুদিন হলো এক ডাক্তার এসেছে গ্ৰামে। প্রথম দিন মিশুর সিঁড়ি থেকে পরে মাথা ফেটে গেছিল সে খবর পেয়ে এসেছিল। মিশু ওনার সাথে খুব তাড়াতাড়ি মিশে বন্ধু বানিয়ে ফেলেছে তাই তার থাকার জন্য বাড়ি ছিল না বলে তোমার বাবা গ্ৰামের ঐ বাড়িটা তাকে থাকতে দিয়েছে!”
“কি ঐ বাড়িতে থাকতে দিয়েছে।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“আহ আরিফা ছেলেটা আসতেই সব তোমার তার কানে তুলতে হলো। এখানে মুখর ও আছে পারিবারিক আলোচনা না হয় পরে করা যাবে। মুখরের জন্য খাবার সাজাও।”
“আঙ্কেল এতো ব্যস্ত হতে হবে না।”
তখন আরবাজ বলল,,
“মিশুর মাথা ফেটে গিয়েছিল আর কেউ আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না। আবার একজন ঐ বাড়িতেও থাকতে দিয়েছো।”
“তুমি চিন্তা করবে বলে জানাই নি।আর বাড়িটায় যে থাকছে সে যত্ন করেই রাখবে বাড়িটাকে। ডক্টর মেহবিন মুসকান নাম তার।”
মেহবিনের নাম শুনে আরবাজ আর কিছু বললো না। শুধু বলল,,
“এই মুখর চল ফ্রেশ হয়ে নিই ক্ষুদা লাগছে।”
মুখর আর আরবাজ ওপরে চলে গেল। যেতে যেতে মুখর বলল,,
“সব জেনেও ঢং কিভাবে করতে হয় এটা তোর থেকে কেউ শিখুক।”
“এরকম রিয়াক্ট না করলে সবাই সন্দেহ করতো না। বাদ দে।”
“পুরোনো মিশুকে মিস করছি ইয়ার।”
“আমিও চারটি বছর ধরে মিস করছি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে। যার কাছে আমার সবকিছুর উত্তর থাকতো। কি থেকে কি হয়ে গেল মুখর আমি মিশুকে এভাবে দেখতে পারি না।”
‘ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে মিশু।”
“আল্লাহর কাছে সেই দোয়াই রোজ করি।”
_________________
রাতে ফোন ঘাটতে ঘাটতে একটা পোস্ট নজরে এলো মেহবিনের ‘বিহঙ্গিনীর কাব্য” আইডি থেকে যাস্ট নাও পোস্ট করা হয়েছে।
“তার প্রতিটা সাক্ষাৎ এতো মধুর কেন হয়!
মন বলে তাকে একটু ছুঁয়ে দিই তবুও সে দূরে রয়!”
মেহবিন মুচকি হেসে কমেন্ট করলো,,
“মনকে বেঁধে রাখুন আজকাল বেশ ছটফট করে সে!”
কমেন্টের রিপ্লাই আসলো,,
“আমার মনের মালিক তো আপনার মতো ভদ্র জালিম নয়। যে না চাইলেও জোর করে মনকে বেঁধে রাখবে।’
“জালিম তো কেউ আর জন্ম থেকে থাকে না। পরিস্থিতির চাপে পড়ে জালিম হতে হয়।”
ব্যস আর কোন উত্তর নেই। তা দেখে মেহবিন কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো। এই ব্যক্তির পাগলামো দেখে সবসময় সে হাসে। এই আইডিটা শুধুমাত্র মেহবিনের জন্য খোলা। বিহঙ্গিনীর কাব্যের আইডিতে শুধু তার বিহঙ্গিনী আছে আর কেউ নেই। প্রফাইল লক আর একটাই ফ্রেন্ড সে হলো মেহবিন তার সকল অনুভূতি সে পোস্ট করে মেহবিন কে জানান দেয় আর মেহবিন মুচকি হেঁসে তার অনুভূতির সাথে হাডু ডু খেলে। শেষ মেষ ওপারের উত্তর না পেয়ে মেহবিন আর আগায় না। এভাবেই একটা আইডিতে কতোগুলো পোস্ট কতোগুলো কমেন্ট একা একাই পরে থাকে অন্যকেউ দেখে না শুধু দুজন মানুষ তাদের অবসরে এগুলো দেখে মুচকি হাসে।
__________
আজ শুক্রবার মেহবিনের ছুটি এবং এই হাসপাতালে আসার পর প্রথম ছুটির দিন। এর আগে আবুল বাজার করে দিয়েছিল আজ সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে নিজেই বাজার করবে। সকাল বেলা আবুল কে ফোন করে বলেছে বাজারে নিয়ে যেতে। আবুল এলেই ওরা বেরিয়ে পরলো বাজারের উদ্দেশ্যে। বাজারে খুব সকালে এসেছে যাতে ভীরে পরতে না হয় আবুলের থেকে জেনেছে আজ শুক্রবার ভীর বেশি থাকবে নয়টায় বেশি ভীর হবে তাই সে আটটায় এসেছে। একটা বড় ইলিশ মাছের দিকে নজর যেতেই মেহবিন জিজ্ঞেস করলো,,
“এই বড় ইলিশটার দাম কতো?”
“এইটা একদাম দুই হাজার টাকা।”
“ওহ আচ্ছা তাহলে এটা আমাকে দিন।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ এলেন ঐ মাছের দোকানে আর বললেন,,
“নিমাই বড় ইলিশ মাছটা ব্যাগে দাও!”
“চেয়ারম্যান সাব আপনি আগে কইবেন না। আমি অহনি দিতাছি।”
বলেই লোকটা মেহবিনের বলা মাছটা ওনার ব্যাগে দিতে নিলেন তখন মেহবিন মুখ শক্ত করে বলল,
“এই মাছটা আমাকে দেওয়ার কথা ছিল আপনার। এটা ওনার ব্যাগে ঢুকাচ্ছেন কেন?”
কোন শক্ত মেয়েলি কথায় শেখ শাহনাওয়াজ পাশে তাকালেন এতোক্ষণ সে খেয়াল করেনি মেহবিন ওখানে আছে। আজ সে বোরকা আর হিজাবের সাথে মাস্ক ও লাগিয়েছে তাই বোধহয় চিনতে পারে নি। নিমাই নামের লোকটা বলল,,
“আমগো বাজারের বড় মাছ সবসময় চেয়ারম্যানসাব এর বাড়িতেই যায়।”
“তাই আমি কি করবো বলুন? আমি আগে ওটা দিতে বলেছি। আপনার উচিত ওটা আমাকে দেওয়া।”
“আপনে অন্য আরেকটা নেন চেয়ারম্যানসাব চাইছেন তাই এটা ওনার।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,,
“বাড়িতে মেহমান এসেছে তাই তাকে বড় ইলিশ মাছটাই খাওয়াতে চাই আপনি যদি ছেড়ে দিতেন তাহলে ভালো হতো।”
“আপনার বাড়িতে মেহমান এসেছে তো আমি কি করবো?”
“ঐ মাইয়া আপনে চেয়ারম্যানসাব এর মুখে মুখে তর্ক করেন আমি আপনার কাছে মাছ বেছুম না। যান দেখি অন্য খানে যান।”
“নিমাই এটা কেমন ব্যবহার? খদ্দেরের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করতে হয় না। তাছাড়া উনি ঠিকই বলেছেন উনি আগে চেয়েছেন তাই এটা তোমার ওনাকে দেওয়া উচিত। চেয়ারম্যান দেখে কি সে যা বলবে তাই দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। তুমি ওনাকে ইলিশ মাছটা দিয়ে দাও।”
“কিন্তু চেয়ারম্যানসাব!”
“আমি বলছি তো!”
তখন মেহবিন বলল,,
“লাগবে না আমার। আপনি নিয়ে যান আপনার বাড়িতে না অতিথি এসেছে। যাই হোক এটা দেখে ভালো লাগলো সবাই আপনাকে বেশ মানে।”
বলেই মেহবিন অন্য কোথাও যেতে নিল তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“আজ দুপুরে আমার বাড়িতে আপনার দাওয়াত রইল ডাক্তার?”
“দুঃখিত আপনার দাওয়াত গ্ৰহন করতে পারলাম না। আজ দুপুরে আমার বাড়িতে একজনের দাওয়াত আছে।”
“তাহলে আপনার বাড়িতেও অতিথি আসছে?”
“হুম তাও আপনার বাড়ি থেকেই!”
“কে?”
“বাড়িতে গিয়ে খোঁজ লাগান তাহলেই জানতে পারবেন।’
বলেই মেহবিন চলে গেল কিছুক্ষণ ঘুরে সে বাজার করলো একটা ইলিশ মাছ ও কিনলো তবে অন্য দোকান থেকে। চেয়ারম্যান কে সম্মান করে ঠিক আছে তবে তার আচরন মোটেও পছন্দ হয়নি মেহবিনের। ইলিশ মাছ কিনলো কারন ঐ একজনের পছন্দের তাই।
________________
“এই যে কুলসুম নেত্রী কই?”
“হেতির নাকি জ্বর আইছে তাই আজকে বাইর হয় নাই।”
“পায়ের ব্যাথা কমছে?”
“সকালে তো দেখলাম দৌড়াইতেছে।”
“ওহ আচ্ছা কাল তোমার মা বকে নাই তো তোমার সত্যি বলার জন্য।”
“না কিন্তু ভাইরে অনেক বকা দিছে।”
“ওহ! নেত্রীর জ্বর কি অনেক?”
“আরে না ভং ধইরা পইরা রইছে।”
“মানে?”
“আজ ওর বাপ বাড়ি থাকবো সারাদিন। ও ওর বাপের কাছে যাইবো না দেইখা ভং ধইরা পইরা রইছে আর কইতেছে আমার জ্বর আইছে আমি ঘুমামু আমারে কেউ ডাক দিবা না।”
“ওহ আচ্ছা তাহলে নেত্রী কে গিয়ে বইলো দুপুরে আমি তারে ডাকছি।সে যেন আসে আর হ্যা তুমিও আইসো।”
“আইচ্ছা!”
বলেই কুলসুম চলে গেল। বাজার থেকে ফেরার পথে কুলসুমের সাথে দেখা তাই ওর কাছে থেকে তার নেত্রীর খবর নিল।
______________
“মিশুমনি দেখো কত বড় ইলিশ মাছ আনছি বাজার থেকে!”
বড় মাছ দেখা মিশুকে ভিশন আনন্দ দেয়। আর ইলিশ মাছ মিশুর সবথেকে পছন্দের। তাই ওর বাবাকে সবসময় বলে বড় ইলিশ আনতে। মিশু গেল মাছ দেখতে মুখর আর আরবাজ ও গেল মিশুর পেছনে। শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
” মিশুমনি বলোতো ইলিশ দিয়ে কি পদ রান্না হবে তুমি কোনটা খেতে চাও? ভাজা নাকি সরষে ইলিশ।”
তখন মিশু বলল,,
“আমি আজ কিছুই খাবো না। আমার দাওয়াত আছে।”
দাওয়াত এর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ এর মেহবিনের কথা মনে পড়লো। আরবাজ জিজ্ঞেস করল,,
“দাওয়াত কোথায় আবার?”
“আমার বন্ধুর বাড়ি। আমি বলেছি ওর বাড়িতে যাবো ওর বাড়ি চিনে রাখবো যাতে আমি যাওয়া আসা করতে পারি। ও শুক্রবারে বাড়ি থাকবে তাই আমি দাওয়াত রেখেছি।”
এ কথা শুনে আরিফা জামান বললেন,,
“ঐ মেয়েটার সাথে এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না। মেয়েটা কি ভাববে বলো তো মিশুর ব্যাপারে।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কিছুই ভাবছে না কারণ সে অলরেডি মিশুর জন্য বাজার করে ফেলেছে। এমন কি এই বড় ইলিশ মাছটাও সে মিশুর জন্য কিনছিল। কিন্তু আমি যাওয়াতে জেলে আমাকে দিচ্ছিল আর সে আমার বাড়ির অতিথির কথা শুনে প্রথমে না দিতে চাইলেও পরে আমাকে দিয়ে দিল। অবশ্য আমি তাকে দাওয়াত দিয়েছিলাম সে বলেছে তার বাড়িতে আমার বাড়ির একজনের দাওয়াত আছে। এখন বুঝলাম কে!
“আমি কিন্তু যাবো বাবা।”
“ঠিক আছে তুমি কোথাও যেতে চাও না আজ যেহেতু যেতে চেয়েছো আমি নিজে তোমায় নিয়ে যাবো।”
“তুমি যাবে কেন তোমাকে দাওয়াত দেয় নি তো।”
“তোমার বন্ধু আমি গেলে ঠিকই খাওয়াবে । তবে আমি শুধু তোমাকে দিতে যাবো বিকেলে আবার নিয়ে আসবো।”
তখন আরবাজ বলল,,
“তোমার যেতে হবে না আমি আর মুখর গিয়ে নিয়ে আসবো। আর কতোদিন ঐ বাড়িতে যাওয়া হয় না বাড়িটাও দেখে আসবো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
দুপুর হতেই মিশু রেডি হয়ে নিল। সুন্দর করে একটা থ্রিপিস পরলো একটা হিজাব নিয়ে মাথায় বাধার চেষ্টা করলো কিন্তু হলোই না শেষে মাথা ভালো করে ঢেকে গলায় কাছে গিট্টু মেরে দিল। ব্যস আমাদের মিশু রেডি। সে নিচে এলো ওকে দেখে ওর কাকাতো বোন জিনিয়া আর মুনিয়া হেঁসে উঠলো। তা দেখে মিশু বলল,,
“এই তোরা হাসছিস কেন?”
“তুমি এটা কি করেছো আপু হিজাব টা ঠিক করে পড়।”
“ধুর হয় না তো! কতো চেষ্টা করলাম হলোই না তাই তো গিট্টু মারলাম।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ এসে বললেন,,
“চলো আমি ঠিক করে দিচ্ছি।”
তিনি যত্ন করে মেয়ের হিজাব বেঁধে দিলেন। তারপর মেয়েকে নিয়ে মেহবিনের বাড়িতে এলেন। মেহবিন নামাজ শেষ করে উঠলো মাত্র। তখনি গেইট খোলার আওয়াজ পেল। বাইরে বেরিয়ে দেখলো মিশু আর শেখ শাহনাওয়াজ। মেহবিন কে দেখেই মিশু বন্ধু বলে এগিয়ে গিয়ে হাত সামনে ধরলো মেহবিন হাত বাড়ালেই সেদিনের মতো হাতের ওপর দিয়ে তুফান উঠলো।
মেহবিন মুচকি হেসে হাত ছাড়িয়ে বলল,,
“চেয়ারম্যান সাহেব বোধহয় না খেয়েই এসেছেন আপনিও ভেতরে আসুন।”
শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“আপনাকে এখনো আমার বাড়ির এক গ্লাস পানি ও খাওয়াতে পারি নি। যেদিন খাওয়াতে পারবো সেদিন নিশ্চয়ই আপনার বাড়িতে খাবো। আচ্ছা আমি যাই আল্লাহ হাফেজ। মিশুর খেয়াল রাখবেন বিকেলে আমার ছেলে এসে মিশুকে নিয়ে যাবে।”
“আপনার ছেলের নাম কি?”
“শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ!”
তখন মিশু দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“ওরফে বাজপাখি।’
মিশুর কথায় মেহবিন হাসলো। শেখ শাহনাওয়াজ চলে গেলেন। ওরা বাড়ির ভেতরে গেল তখন মিশু বলল,,
“বন্ধু তুমি এতো বড় বাড়িতে একা থাকো? ভয় করে না তোমার।”
“না ভয় করে না আর আমি একাই থাকি।”
“কেন তোমার পরিবার নেই।”
“আমার কেউ নেই আবার সবাই আছে ।”
“এটা কেমন কথা হলো আমি তো কিছুই বুঝলাম না।’
তখন বাইরে থেকে আওয়াজ শোনা গেল দ্য গ্ৰেট শেখ তাজেলের। মেহবিন বাইরে গিয়ে তাজেল কে ঘরে নিয়ে এলো ওর হাতে একটা প্লেট ওপরে ঢাকনা দেওয়া। মেহবিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“দাদি খিচুড়ি পাঠাইছে তোমার লিগা। আজ শুক্রবার আছিল না তাই মসজিদে দিছিল।”
মেহবিন প্লেটটা রেখে দিয়ে বলল,,
“পা সেরে গেছে নেত্রী।”
“এইটুকুতে আমার কিছু অয় না। অনেকটাই শাইরা গেছে সকাল বেলা উইঠা দেহি ব্যাথা নাই। পুরো দুইটা দৌড় লাগাইছি।পরে দেহি হালকা হালকা ব্যাথা করে তখন খাবার খাইয়া তোমার ওষুধ খাইলাম তারপরে সারাদিন শুইয়া আছিলাম কুলসুম যাইয়া তোমার খবর কইলো তাই দুপুরে নাইয়া তোমার বাড়ির দিকে আসলাম তহন দাদি এইটা ধরাই দিলো।
এটুকু বলেই মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“এডা চেয়ারম্যান এর মাইয়া না?”
তা শুনে মিশু গোল গোল করে তাকিয়ে বলল,,
“তুমি আমাকে চিনো? আচ্ছা কিভাবে চিনো?”
“এর আগে আমার বাপের লগে তোমাগো বাড়ি গেছিলাম । তোমারে জোর কইরা ওপরে নিয়া গেল না তাই দেখছিলাম।”
“ওহ্!”
“ডাক্তার এদিকে আসো তো!”
মেহবিন ওর কাছে গেলে তাজেল হাত দিয়ে নিচু করে ফিসফিস করে বলল,,
“চেয়ারম্যান এর পাগল মাইয়া তোমার কাছে কি করে?”
মেহবিন ফিসফিস করে বলল,,
“আমার বন্ধু সে! আর সে পাগল না একটু অবুঝ তুমি কিন্তু ওকে পাগল বলবা না।”
“সারা গ্ৰামের মানুষ কয়।”
“বলুক তবুও তুমি বলবা না।”
“আইচ্ছা।”
মেহবিন মিশুর কাছে গিয়ে বলল,,
“চলো হাত ধুয়ে নাও আমি খাবার দিচ্ছি আর নেত্রী তুমি আজকে আমাদের সাথে খাবে।”
“না না দাদির কাছ থিকা খিচুড়ি খাওয়া লাগবো খিচুড়ি আমার খুব ভালো লাগে।”
তখন মিশু বলল,,
“আমিও তাহলে খিচুড়ি খাবো বন্ধু।”
মেহবিন বলল,,
“আচ্ছা। নেত্রী তুমি আজ আমাদের সাথেই খাবে।বসে পড় বিছানায়।আমি সব খাবার নিয়ে আসছি।”
মেহবিন বিছানায় একটা ওরনা বেছালো এক এক করে সব রাখলো পোলাও, রোস্ট,ইলিশ মাছ ভাজা আর গরুর মাংস। পাশে খিচুড়ির প্লেট ও রাখলো। সব দেখে তাজেল বলল,,
“এ তো বিয়া বাড়ির খাওন।”
“এখনো তুমি খিচুড়ি খাবা?”
“না আমি এই বিয়া বাড়ির খাওন খামু। ইশশ কুলসুম তোরে আইতে কইলাম আইলি না দ্যাখ কতবড় মিস করলি।
“আমি তো কুলসুম কেও আসতে বলেছিলাম।’
“ওরে ওর মায় আইতে দেয়নাই তোমার বাড়ির কতা হুইনাই রাইখা দিছে তাই কুলসুম ও আসে নাই। দাদির বাড়িতে চুপচাপ খিচুড়ি খাইতেছে।
“ওহ আচ্ছা বন্ধু তুমি কি খাবে?”
“আমি দুইটাই খাবো তুমি আগে খিচুড়ি দাও।”
মেহবিন ওদের বেড়ে দিলো নিজের জন্যও বাড়লো। কিন্তু মিশু ঠিকভাবে খেতে পারছে না। একটু মাখিয়ে যাচ্ছে আর পরেও যাচ্ছে। তা দেখে তাজেল খাওয়া বাদ দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে মেহবিন বুঝতে পারলো একা ভালো মতো মিশু খেতে পারে না তাই ও গিয়ে বলল সে খায়িয়ে দেবে। মেহবিন যত্ন করে খায়িয়ে দিলো মিশু ও চুপচাপ খেল তাজেল এক পলক দেখে নিজে খেতে লাগলো। মেহবিন তাজেল আর মিশুকে সব থেকে বড় পিচ টাই দিয়েছে। অতঃপর সবার খাওয়া শেষ। মেহবিন তাজেলকে আর মিশুকে নিয়ে বারান্দায় গেল । মিশু অনেক গল্প করলো মেহবিন সব শুনলো। তাজেল আর মিশুর বেশ ভাব হয়েছে তারা দু’জন ঘরের ভেতর ছোটাছুটি করে অনেকক্ষন খেললো। খেলা শেষ করে তাজেল বাড়ি চলে গেল তখন মেহবিনের ফোনে ফোন এলো ইমার্জেন্সি হাসপাতালে যেতে হবে কালকের রোগীর অবস্থা আজও অনেক খারাপ। এখন কি করবে মিশুও রয়েছে ও তখন তাজেল আবার এলো কুলসুম কে নিয়ে মিশুর সাথে আরো খেলবে বলে। এটা দেখে মেহবিনের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো সে সবাইকে বলল কার্টুন দেখবে কি না। সবাই বললো দেখবে ও ল্যাপটপ এনে কার্টুন ছেড়ে দিল।যা তিন ঘন্টা চলবে সবাইকে বললো ওর হাসপাতালে যেতে হবে তারা তিনজন যেন একসাথে থাকে। তাজেলকে বলল মিশুর খেয়াল রাখতে মিশুকে যেন না ছাড়ে আর ওদের সামনে কতোগুলো চকলেট রেখে দিল পানিও এনে দিলো। কুলসুম চলে গেলেও যেন তাজেল না যায় সেটাও বলে গেল। অবশ্য এই জন্য আরবাজ কে একটা মেসেজ পাঠিয়ে হাসপাতালে গেল। ওদের একা রেখে গেল দেখে রাস্তায় গিয়ে রিক্সা পেতেই সেটায় চরে বসলো হাসপাতাল তার অবস্থা স্বাভাবিক করে আবার তাড়াতাড়ি রিক্সায় চড়ে বাড়ি আসলো। পাকা রাস্তায় নেমে তাড়াতাড়ি করে বাড়ির সামনে আসতেই দেখলো মিশু বারান্দায় বসে মাথায় দুই হাত দিয়ে চেপে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা বলছে। ওর শরীর ও কাঁপছে তা দেখে মেহবিন দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরলো মিশু ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,
“রক্ত! রক্ত! রক্ত!
~চলবে,,