কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব ছয়
?
সেদিন সারারাত রাহি নিজের রুমে ওইভাবে খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে গেছে..রাতে এইসব ভাবতে ভাবতে রাহির মাঝরাতে কেমন করে কেপে উঠছিলো..দরজা বন্ধ থাকার কারনে কেও চাইলেও ডেকে উঠাতে পারে নি রাহিকে।।
সকালবেলা,
সূর্যের আলোর রশ্মিতে রাহি চোখে পরছে…রাহি আস্তে আস্তে চোখ খুলছে,সূর্যের আলো পরায় চোখমুখ কুচকে উঠছে বারবার..চোখ খুলে নিজেকে শাড়ি পরিধান অবস্থায় পাওয়া গেছে..হাতে তার শুকনো মেহেদী লেগে আছে..রাতের কথা ভাবতেই তার শুকনো বুকটা আবারো ধুক করে উঠছে..নিজেকে ফ্রেশ করলো বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ হলো..মেহেদী লুকিয়ে যাওয়ার ফলে উঠাতে রাহির কষ্ট হচ্ছিলো..ভিজিয়ে রেখেছিলো হাত মিনিট ২০এর মতো..শাড়ি খুলে নিজেকে সালোয়ার-কামিজে আনলো রাহি..বাহিরে যাওয়ার সাহসটা কুলোচ্ছে না তার আর..দরজা নকের আওয়াজে রাহি ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলো রেহেনা ফুফির আওয়াজ পেলো যখন..ঝটপট যেয়ে দরজা খুলে দিলো।।
“কিরে তুই ঠিক আছিস??কাল রাতে কি পরিমান ভয় পেয়েছিলাম তুই জানিস??” রেহেনা রাহিকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো।।
রাহির চোখে জল জমে গেছে,রেহেনা তাকে শান্তনা দিচ্ছে বুকে নিয়ে..তারপর নানান কথা জানালো, কালকের ঘটনা যে ফুফি জানে সেটাও বললো..তারপর ধ্রুভের ব্যাপারে কাহিনী রেহেনা বলতে শুরু করলো
ধ্রুভ হলো উনার ননদ রিজিয়ার ননদের ছেলে..ধ্রুভের বাবা বছরখানেক আগে একটা অফিস মিটিং এ হার্ট এট্যাক করে মারা যায়,স্বামী হারার শোকে ধ্রুভের মা ও একসময় অতিরিক্ত টেনশনের কারনে শ্বাসকষ্টের রোগ বাধিয়ে ফেলে নিজের মধ্যে..ধ্রুভ ছোট থেকে একরোখা আর রাগী..যার ওর চায় যেকোন মূল্য চায়..ধ্রুভের ফ্যামিলি অনেক উচ্চবিত্ত হবার কারনে ধ্রুভের কখনো কোনকিছুর কমতি হয় নি..ধ্রুভকে ছোট থেকে বাইরের রেখেছিলো তার পিতা মরহুম আশরাফুল সাহেব..ছেলের এরকম স্বভাব নিয়ে তিনি বরাবরই চিন্তিত ছিলেন,তাই এই দেশ থেকে দূরে তাকে রেখেছিলো..ধ্রুভের ছোটভাই ছোটবেলাতে বন্ধ দরজায় আটকা পরে গেছিলো..লুকোচুরি খেলছিলো তার ছোট ভাইয়ের সাথে,তার ছোটভাই তার থেকে ৫বছরের ছোট ছিলো..সে তার ভাইকে মজার ছলে আটকে দিয়েছিলো যেন তাকে তার ভাই খুজে না পায়..কিন্তু ওই মুহূর্তে ধ্রুভের ভাই আয়ুশ শ্বাসকষ্ট উঠে গেছিলো বন্ধ থাকা অবস্থায়..রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়াই সেদিন আয়ুশের ডাক ধ্রুভের কানে যায় নি..ধ্রুভকে তখন তার বাবা কি কাজে ডেকেছিলো তার কাছে..ধ্রুভের মাথা থেকে এটা স্কিপ হয়ে গেছিলো যে তার ভাইকে সে খেলার ছলে রুমে লক করে আসছে…আধাঘন্টা পর যখন তার মনে হলো তার ভাইকে সে ঘরে আটকিয়ে রেখে আসছে তখন তাৎক্ষণিকভাবে দৌড়ে রুমের দরজা খুললো সে,দরজা খুলে দেখলো তার ভাই নিচে পরে আছে বেহুশ হয়ে..চিৎকার দিয়ে সবাইকে একসাথে ডেকে নিচে নামালো..আয়ুশ কে নিয়ে তখুনি সবাই হাসপাতাল গেলো..অক্সিজেনের অভাবে সেদিন আয়ুশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো..তখন থেকে ধ্রুভ মানসিকভাবে কেমন হয়ে যায়..তার বাবা মা তাকে কখনো দোষারোপ করেন নি কিন্তু ছেলে হারানোর শোকে তারা পাথর হয়ে গেছিলো..এদিকে ধ্রুভের অবস্থার ও অবন্তি ঘটছে,রাতের বেলা নিজেই চিল্লিয়ে কেদে উঠে।।
এরকম অবস্থা দেখে ধ্রুভকে সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে গেলো তার বাবা মা..যত বড় হয়েছে ততই তার এই পাগলামিটা বাড়ছিলো,শেষে তারা শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলো ধ্রুভকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার…ধ্রুভ বাইরে যেয়েও একটা সাইকোলজিস্ট লোকের আন্ডারে ছিলো..তার এরকম পাগলাটে বিহেভিয়ার তখন শুরু হয় যখন তার মনে পরে তার ভাই চোখের সামনে কিভাবে খেলার ছলে মারা গেছে..তার ভাই মারা যাওয়ার কারন সে নিজেকে দোষারোপ করে..তার মাথা থেকে এই স্মৃতিটুকু মুছে দেয়ার জন্য তখন ডাক্তার একটা স্ট্রং ড্রাগ ধ্রুভের উপর এপ্লাই করে..ধ্রুভের উপর ওষুধটা কাজ করলেও নতুন একটা সমস্যা দেখা দিলো তা হলো সে যখনি ঘুমাতো স্বপ্নে এমন এক নারীকে দেখতো যে তার সামনে আসতো..ঘুম ভাঙলেই তখুনি মীরা মীরা বলে চিৎকার দিতো..স্বপ্নে দেখা ওই নারীটাকে ধ্রুভ নাম দিয়েছে মীরা..স্বপ্নে দেখা ওই নারীর প্রেমে সে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলো..ওই নারীকে সামনে আনার জন্য সে জিনের সঙ্গও নেয়..কিন্তু ফলাফল তাতে আরো বিগড়ে যায়..ধ্রুভের সাইকো ভাবটা সিরিয়াসে রুপান্তরিত হয়..কোন নারীর সংস্পর্শে না নিজে এসেছে, আর না কোন নারীকে আসতে দিয়েছে..বিগত সাত বছর ধরে সে জিনদের মাধ্যমে মীরা নামক অদৃশ্য নারীটাকে সামনে আনতো কিন্তু ব্যর্থতা শিকার হতো সে..নিজেকে কন্ট্রোল রাখার জন্য সে সব উপায় অবলম্বন করতো.. নিজের এমন সাইকো ভাবটা থাকলেও বিজনেসের ক্ষেত্রে তার মতো চালাক দুইটা নেয় লন্ডনে..কতশত ফন্দি এটেছে তাকে মেরে ফেলার কিন্তু সে সবসময় পার পেয়ে গেছে..তার মা যখন জানলো তার ছেলে জিন দের সাহায্য নিচ্ছে তখন ধ্রুভের শরীর ইমামকে দিয়ে বন্ধ করে দেয়..ধ্রুভের সবকিছু মুছে গেলেও মীরা নামের সেই অদৃশ্য নারীকে সে মুছতে পারে নি..আর মনেও হয় না কখনো মুছবে,কারন ওই মীরা নামক অদৃশ্য নারীকে সে বিগত সাত বছর ধরে বাস্তব ভেবে ভালোবেসে আসছে”
রাহি শুয়ে সবকথা শুনলো..তার মাথা ঘুরাচ্ছে যে কি একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে ছেলেটা গেছে।।
“প্রথমে তার ভাই,পরে বাবা তারপর মা সবাইকে হারিয়ে ধ্রুভ এক প্রকার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছিলো..যতক্ষন কোন মনোবিজ্ঞানী ডাক্তারের আন্ডারে থেকে মেডিসিন৷ নেয় ততক্ষন ভালো থাকে..তাকে এই মেডিসিন দেয়া হয় পুরোনো স্মৃতি মুছার জন্য কিন্তু স্বপ্নের ওই নারীকে তিনি মুছতে পারেন নি..কাল ওর মায়ের বার্ষিকী ছিলো এইজন্য দেশে আসছিলো,বিয়ে বা রিলেটিভের প্রতি তার কোন ইন্টারেস্ট দেখায় না..তোকে এরকম করার কারন আমি এখনো বুঝে উঠতে পারছি না..নিভ সেদিন যেয়ে না বললে বুঝতে পারতাম না আমরা” রেহেনা বললো।।
“ধ্রুভকে জোর করে এসে নিয়ে গেছে তার ডাক্তার..তিনি জানতেন ধ্রুভ পুরোনো কিছু দেখলে পাগলামি স্বভাব দেখাবে..আমরাও এইসব দেখে এক প্রকার শকে গেছিলাম..যে ধ্রুভর পাগলাটে স্বভাব অনেক ভয়ংকর” কিছুক্ষন থেমে রেহেনা বললো।।
রাহি শুয়ে এখনো ভাবছে যে সে নিজেও সাইকোলজির স্টুডেন্ট তার ত এটা মাথায় রাখা উচিত ছিলো যে মানুষ অতিরিক্ত প্রেশারের শিকার হইলে সব গুলিয়ে ফেলে..এবং বিভিন্ন উদ্ভট বিহেভিয়ার করে।।
সেইবারের মতো রাহি আরো একটা কথা জানতে পারলো যে রাশনা আর প্রান্তের সম্পর্কে..তারা বিগত তিন বছর ধরে সম্পর্কে আছে কিন্তু কাওকে জানায় নি তারা..প্রান্তের ইচ্ছা ছিলো রাশনার ভার্সিটিতে উঠলে একেবারে বিয়ের কথা বলবে কিন্ত রাশনা মুখ ফসকে আগেই সব ক্লিয়ার করে দিয়েছে..যার ফলে প্রান্তকেও স্বীকার করতে হয়েছে তাদের সম্পর্কটা।।
চলবে?