কাঠগোলাপের আসক্তি পর্ব-৪৩

0
6

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_৪৩
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ❌

“আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?আমি আপনার সাথে কোথাও যেতে ইচ্ছুক নই।”

মেহরিমার কথায় হৃদিতের মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা যায় না।শক্ত পুরুষালী হাত দুটো সুকৌশলে ড্রাইভিংয়ে ব্যস্ত।হৃদিতের চোখমুখ শুকনো ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।একটু আগেই আয়াশ ফোন দিয়ে সবটা জানিয়েছে। ডক্টরের সাথে কথা বলে তখনই মেহরিমাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।মেহরিমার নিকট এখনও সবটা অজানা।মেহরিমা এবার খেকিয়ে ওঠে,

“কথা বলছেন না কেনো?আপনার ওই বাগান বাড়িতে আমি যাবো না।শুনেছেন আপনি?”

হৃদিত এ যাত্রায় ঘাড় ঘুরিয়ে মেহরিমার দিকে তাকায়।মলিন,ফ্যাকাশে মুখ নিয়েই ক্ষীণ স্বরে বলে,

“সকালে তুই আমাকে বলেছিলি না তোর বার্ধক্যের সূর্যাস্ত আমার সাথে দেখতে চাস।তোর ওই উইশটা পূরণ হবে কি না?আমার আন্সার শুনবি না সানসাইন?”

মেহরিমা এবার ভালোভাবে হৃদিতের দিকে দৃষ্টিপাত করে।চোখ, মুখের অবস্থা দেখেই বুঝতে পারে খা রা প কিছু ঘটেছে।মনের য ন্ত্র ণা মনেই লুকিয়ে রেখে জবাব দেয়,

“বলুন।”

“যদি বলি না।কষ্ট পাবি?”

হৃদিতের প্রশ্নে মলিন হাসে মেহরিমা।মনের অব্যক্ত হাজারও কথা,অনুভূতি গুলো আর প্রকাশ করা হয় না।বুকের মাঝে তিক্ততা ছড়িয়ে পড়ে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।সময় নিয়ে জবাব দেয়,

“না।”

একরোখা কন্ঠস্বর মেহরিমার।প্রেয়সীর একরোখামিতে মৃদু হাসে হৃদিত।

“ওটা তোর মুখের কথা। মনের কথা না। আমাদের একসাথে বাকি জীবনটা বোধহয় আর পাড়ি দেওয়া হবে না অ্যানাবেলা।তোর ভালো সময়গুলোতে তোর পাশে না থাকতে পারলেও তোর খারাপ সময়গুলোতে প্রতি ন্যানো সেকেন্ড তোর পাশে পাবি আমাকে।জানিস অ্যানাবেলা আমরা মানুষেরা বড়ই অদ্ভুত!কীসে আমাদের সুখ সেটা আমরা নিজেরাও জানি না।আমরা যেটাকে পাই সেটাকে আঁকড়ে না ধরে যেগুলো আমাদের দখল,সাধ্যের বাইরে সেগুলোকে পাওয়ার জন্য আমরণ চেষ্টা করি। দিনশেষে সেই খালি হাতেই ফিরতে হয়।”

মেহরিমা গভীর মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনে। তবে কী এতটুকুই ছিল দু’জনের গন্তব্য?চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে।তবুও ঠায় নীরব রয়।হৃদিতের ব্যথিত ভগ্নহৃদয় থেকে চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
___

শোকাচ্ছন্ন প্রকৃতি। প্রকৃতি আজ নিজের সেই চিরচেনা রুপে সাজেনি। গাছ গুলো রু ক্ষ তা, তি ক্ত তা, বি ষা দে র প্রতিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রকৃতিতে আজ তীব্র শোকের ছায়া ছড়িয়েছে।শেখ বাড়ির আঙ্গিনায় আজ আর বকুল ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ নেই।গাছে বসে থাকা পাখিগুলোর সুরেলা কণ্ঠ থেকে আজ আর কোনো গান ভেসে আসেনি।ভেসে এসেছে বিষাদের সুর।কীসের এতো শোক তাদের?তবে কী নিষ্পাপ মেয়েটার মৃ ত্যু তে ওই অবলা পাখিগুলোও শোকাহত?

মাধবীর প্রাণহীন,নিস্তব্ধ দেহ খানা সফেদ রঙা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো।যার একাংশ র ক্তে রাঙা হয়ে আছে।বেঁচে থাকতে আমাদের নিজেকে সাজাতে কতশত আয়োজন থাকে অথচ হাড় মাংসে গড়া দেহখানা থেকে প্রাণ পাখিটা উড়াল দিলেই কমদামি সফেদ রঙের কাপড়খানাই আমাদের শেষ সঙ্গী হয়। তবে ধন,সম্পদ নিয়ে কীসের এতো অ হং কা র আমাদের?শেষ সময়ে যদি সেগুলো আমাদের সঙ্গীই না হয়।বড়ই আফসোস!আমরা মানুষেরা সবটা বুঝেও অবুঝের ন্যায় আচরণ করি।

অবনী শেখ মাধবীর লা শে র ডান পাশে বসে একদৃষ্টিতে নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।মাধবীর মুখের উজ্জলতা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।দেখতে কী স্নিগ্ধ লাগছে!কতোই না মায়াবী ওই মুখখানা!ওই মুখ দিয়ে আর কখনও ‘মা’ ডাক শোনা হবে না।আমরা পৃথিবীতে এসেছি একা।যেতেও হবে একা।তবে আমরা একাকীত্বকে কেনো এতো ভয় পাই?একাকীত্ব কেন মেনে নিতে পারি না?দুই দিনের পৃথিবীতে আমাদের মনে কেন এত মায়ার জন্ম দেয় আল্লাহ? আশেপাশের কোথাও থেকে কোনো উত্তর আসে না।অবনী শেখের প্রশ্ন গুলো হাওয়ায় মিশে যায়। ঠিক যেভাবে আর কিছুক্ষণের ব্যবধানে মাধবীকে নিয়ে ওনার সব স্বপ্ন,শখ,আহ্লাদ মাটির সাথে মিশে যাবে।অবনী শেখ যেন ইহজগতে নেই।গভীর ভাবনায় মগ্ন।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই চলেছে। ঠোঁটজোড়া থরথর করে কাঁপছে।যেন বুকের মাঝে তোলপাড় করতে থাকা অসহনীয় য ন্ত্র ণা গুলো মুখ ফুটে প্রকাশ করতে চাচ্ছেন।কিন্তু পারছেন না।মাধবীর লাশের বাম পাশে তাইফ বসে আছে।তাইফের স্তব্ধ, নিশ্চল শরীর খানা আগলে রেখেছে তাবান আর তৃধা।তৃধা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অ্যাক্সিডেন্টের থেঁ ত লে যাওয়া লা শ বেশিক্ষণ রাখবে না।এমনিতেই কাফনের একাংশ র ক্তে ভিজে গেছে।সবাই অপেক্ষারত মেহরিমার জন্য।মেহরিমা আসলেই মাধবী কে কবরস্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে।দীর্ঘক্ষণ পরে অধর জোড়া নাড়ায় তাইফ।বিড়বিড় করে বলে,

“এই পৃথিবীর সবকিছু পেয়ে গেলেও তোমাকে আর নিজের করে কোনো কালেই পাওয়া হবে না মাধবীলতা।এই একটা আফসোস নিয়ে আমি কীভাবে বেঁচে থাকবো?এই একটা আফসোস যে আমারে আজীবন পোড়াবে।তোমাকে ছাড়া তোমার তাইফ বাঁচতে পারবে না মাধবীলতা।”

তাইফের অস্ফুট স্বরে বলা কথা গুলো শুনতেই তাবানের চোখের জলেরা আর বাঁধ মানে না। ভাইয়ের কষ্টে তৃধা ডুকরে কেঁদে ওঠে।
___

হৃদিত শেখ বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই মেহরিমা ভ্রু কুঁচকে তাকায় হৃদিতের দিকে।বাড়ির দিকে নজর পড়তেই বাড়ির সামনে,ভিতরে শতশত মানুষের আনাগোনা দেখে।বুকের ভেতর ধ্বক করে ওঠে। অজানা এক ভয়ে হৃদয় দু ম ড়ে মু চ ড়ে ওঠে।হৃদিত ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমেছে।হৃদিতকে দেখতেই আয়াশ,আরিফ চৌধুরী এগিয়ে আসেন।হৃদিত মেহরিমার পাশের দরজাটা খুলে দেয়।মেহরিমা একদমই হাঁটার মতো অবস্থায় নেই।হৃদিত মেহরিমাকে কোলে উঠিয়ে নিতে নিলেই মেহরিমা হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়।চোখের সামনে প্রতিবেশী এক চাচী কে দেখতেই ডাক দেয়,

“চাচী একটু শুনুন।”

মহিলাটা মেহরিমার ডাক শুনতেই এগিয়ে আসে।

“চাচী বাড়িতে কী হয়েছে?এতো মানুষের ভীড় কেনো?”

মহিলাটা মুখে আঁচল গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,

“মাদুবী মা আর লাই।তুমি জানবার পারো লাই?একখান টিরাক আর একখান গাড়ি চাপা দিয়া গেছে মাদুবী মারে।”

কিছু সময়ের জন্য মেহরিমার মস্তিস্ক থমকে যায়। নিউরন গুলো ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যায়।শরীর অসাড় হয়ে আসে।শিরায় উপশিরায় র ক্ত চলাচলের পরিবর্তে যেন য ন্ত্র ণা চলাচল করতে শুরু করে।মেহরিমা অস্ফুট স্বরে বলে ‘আমার মাধুপু’।পরক্ষণেই হৃদিতকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে ওই ক্ষ ত বি ক্ষ ত পা নিয়েই বাড়ির ভেতরে ছুট লাগায়।হাত খোঁপা করা চুলগুলো খুলে পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।মিনিটের ব্যবধানে পা জোড়া র ক্তা ক্ত হয়ে যায়।শুভ্র রঙা ব্যান্ডেজ লাল র ক্তে গোসল করে গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করে।হৃদিত ধাক্কাটার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিল না বিধায় কয়েক পা পিছিয়ে যায়।মেহরিমার পিছু পিছু দ্রুত পায়ে শেখ বাড়িতে প্রবেশ করে।মেহরিমাকে দৌড়ে আসতে দেখেই সকলে সরে যেয়ে রাস্তা করে দেয়।মেহরিমা দৌড়ে এসে অবনী শেখের পাশে ধপাস করে বসে পড়ে।নিজের একমাত্র আদুরে বোনের থে ত লা নো শরীর দেখে শিউরে ওঠে!হতভম্ব হয়ে যায়!আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে কান্না করে ওঠে।মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দই বের হয়,”আমার মাধুপু।”

মেহরিমার গ গ ন বি দা রী আ র্ত না দে যেন ধরনী কেঁ পে ওঠে।বকুল গাছের ডালে বসে থাকা পাখিগুলো ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে চলে যায়।অবনী শেখ হুশে ফেরেন।মেহরিমাকে নিজের বুকে আগলিয়ে নেন।মায়ের বুকের উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই মেহরিমার কান্না আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়।

“মা আমার মাধুপু। আমার মাধুপুকে ওরা কতটা ক ষ্ট দিয়ে মেরেছে মা।আমার কলিজার বোন।আমার মা..”

আর কিছু বলতে পারে না।শরীর অতিরিক্ত দুর্বল থাকায় সাথে এতো বড় স্ট্রেস না নিতে পেরে মায়ের বুকেই ঢলে পড়ে মেহরিমা।অবনী শেখ বুকের মাঝে মেয়েকে জড়িয়ে নেন।এখন বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল বুকের মাঝে গুটিয়ে থাকা বাচ্চা টা।মেহরিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন,

“এবার লড়াইটা তোর একার না নীলাক্ষী।তোর মা তোর সাথে আছে।”

অদূরেই দাঁড়িয়ে ব্যথিত আঁখি জোড়া,ব্যথিত হৃদয় নিয়ে সবটা নীরব দৃষ্টিতে দেখতে থাকে হৃদিত।অবনী শেখ হৃদিতকে ইশারা করতেই নিজের লাল টকটকে চোখজোড়া নিয়ে যন্ত্রের ন্যায় এগিয়ে আসে হৃদিত।মেহরিমাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে।সাইমা শেখ ও হৃদিতের পিছু পিছু যায়। চৌধুরীদের থেকে অনুমতি নিয়ে মাধবীর মুখের কাফনের কাপড়টা বেঁধে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন মুয়াজ্জিন সাহেব।বাঁধ সাধে তাইফ।সে তার মাধবীলতা কে কিছুতেই নিয়ে যেতে দেবে না।

“আপনি ছুঁবেন না আমার মাধবীলতাকে।ও এখানেই থাকবে আমার সাথে।কোত্থাও যাবে না।”

খাঁটিয়ার দুটো পায়া নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখে।আয়াশ এগিয়ে এসে তাইফকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

“ভাই আমার খাঁটিয়া ছেড়ে দে।এমন পাগলামি করিস না।”

“তুমি কে? আমাকে পাগল বলছো কেনো?দেখছো না আমার মাধবীলতা ঘুমিয়ে আছে।ও আমার সাথে ঘুরতে যাবে বলেছে।তোমরা ওর ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছো কেনো?”

আয়াশের বুকটা কেঁপে ওঠে।ওর ছোট্ট ভাইটা কি তবে ভালোবেসে সব হারিয়ে ফেললো!তাইফের পাগলামিগুলো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেন অবনী শেখ।মাধবী বেঁচে থাকলে নিঃসন্দেহে সুখী মেয়েদের মধ্যে একজন হতো।এই যুগে এসেও এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সবাই পায় নাকি?পরক্ষণেই ভাবে থাক না কিছু অপূর্ণতা।সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পেতে নেই। কিছু কিছু ভালোবাসা অপূর্ণাতাতেই সুন্দর।অবনী শেখ হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগিয়ে আসেন।তাইফের পাশে বসেন। আস্তে করে বলেন,

“যেতে দেও বাবা। তুমি তো মিনাক্ষী কে ভালোবাসো।তোমাদের আবারও দেখা হবে।তুমি ওর সাথে আর দেখা করতে চাও না?এখন যেতে না দিলে যে তোমাদের আর দেখা হবে না।”

“চাই তো।সত্যিই আবারও আমাদের দেখা হবে?”

অবিশ্বাস্য কন্ঠস্বর তাইফের।অবনী শেখ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াতেই তাইফ কী বুঝে কে জানে?খাটিয়া ছেড়ে দেয়। মুয়াজ্জিন চাচা মাধবীর মুখ বাধতে নিলেই অবনী শেখ উঠে দাঁড়ান। শেষ বারের মতো নিজের মেয়েকে স্পর্শ করেন।এই তো কয়েক বছর আগেই এই ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে অবনী শেখের সাথে খেলা করতো।এই ছোট্ট ছোট্ট পা দুটো দিয়ে গুটি গুটি করে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াতো!ওই মিষ্টি মুখখানা দিয়ে আধো আধো বুলিতে ডাকতো ‘আম…মা’।এতো তাড়াতাড়িই সেগুলো সব স্মৃতি হয়ে গেল!মেয়েটা কবে এতো বড় হলো যে তার পৃথিবী ছাড়ার সময় এসে গেল! অবনী শেখ আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না।ধপ করে ওখানেই বসে পড়েন।সবাই এগিয়ে এসে ওনাকে ধরেন।মাধবী কে নিয়ে চলে যেতেই অবনী শেখ দূর্বল পায়ে হেঁটে নিজের ঘরে চলে যান।ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দেন।মেহরিমার শেষ বারের মতো আর ওর মাধুপুকে দেখা হলো না।এতগুলো বছরের একসাথে কাটানো মুহূর্তগুলো শুধুমাত্র স্মৃতির পাতায় জমা রইল।
___

রাত আটটা বেজে পাঁচ মিনিট।গ্রামের পরিবেশ নিস্তব্ধ।শেখ বাড়িতে বিষাদের ছায়া লেপ্টে আছে।হৃদিত শেখ বাড়ির সামনে গাড়ির হুডের উপর বসে আছে।হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।পাশেই আয়াশ বসা।দুই ভাইয়ের মাঝে নিরবতা বিরাজমান।হৃদিতের দৃষ্টি দূর আকাশের জ্বলজ্বল করতে থাকা একটা নক্ষত্রের দিকে।আয়াশ বলে,

“মেহু,আন্টির কী অবস্থা এখন?”

“ভালো।”

“মেহু সব সত্যি জানে?”

“এতক্ষণে হয়তো জেনে গেছে।”

“মেহু যদি তোকে ভুল বুঝে?”

আয়াশের বোকা বোকা কথায় হৃদিত মলিন হাসে।

“মাধবী তো নিষ্পাপ বাচ্চা একটা মেয়ে ছিল ভাইয়া।ওর মুখের দিকে তাকালেই অদ্ভুত এক মায়া জন্মাত ওর প্রতি।ওকে কেনো এই খেলায় ব্যবহার করলো ওই বা স্টা র্ডে র দল?ওদের শ ত্রু তা আমার সাথে।আমাকেই মে রে দিতো।কিন্তু হাসিখুশি ছোট্ট এই পরিবারটাকে কেনো শেষ করে দিলো?এই প্রশ্নের উত্তর তো আমার নিজের কাছেই নেই ভাইয়া।তাহলে মেহরিমাকে কীভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি?ভাইয়া আমি বাবা হতে চলেছি অথচ দেখো কেমন কেয়ারলেস বাবা আমি। নিজের আপকামিং বেবি,ওয়াইফ কাউকেই ভালো রাখতে পারছিনা।ওদের সব কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছি আমি। বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি যদি না থাকতাম ওরা খুব ভালো থাকতো।সব ভুল আমার।মেহরিমাকে নিজের সাথে না জড়ালে হয়তো আজ এতো সুন্দর পরিবারটা শেষ হয়ে যেতো না। আমার মেহরিমা যদি নিজেকে ভালো রাখতে,আমাদের কুট্টুস পাখিকে ভালো রাখার জন্য বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমি হাসিমুখে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।আমার কাছে ওর ভালো থাকাটা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।ও ভালো থাকলে কোনো না কোনো ভাবে দিব্যি দিন কেটে যাবে আমার।কাছে এসে ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার না থাকলেও দূর হতে ওর ওই পবিত্র মুখখানা দেখে হৃদয়ে শীতলতা আনার অধিকার টুকু তো থাকবে।”

“তোকে ছাড়া মেহরিমা ভালো থাকতে পারবে?”

“আ’ম অ্যা কার্স টু দেম।ব্রো,আ’ম অ্যা ফেইলিওর অ্যাজ আ ফাদার অ্যান্ড হাসবেন্ড।আ’ম অ্যা কাওয়ার্ড।”

ভঙ্গুর অথচ শান্ত শিথিল কন্ঠস্বর হৃদিতের। নিজের একমাত্র ভাইয়ের কষ্টে আয়াশের বুক ভার হয়। আচ্ছা ভালোবাসা এতো কাঁদায় কেনো? নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে কী তবে সবাই সুখী হতে পারে না?মন থেকে উত্তর আসে,’অভাগা,সেটা তোর থেকে ভালো আর কে জানে?’আয়াশের মানসপটে ওর আর আরিশার খুনসুটির মুহূর্তগুলো ভেসে ওঠে।আয়াশ চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।তক্ষুনি আয়াশের ফোনে তাবানের নম্বর থেকে কল আসে।আয়াশ রিসিভ করে। অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে তাবানের কান্নারত কন্ঠস্বর।

“ভাইয়া তাইফ কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবীদের ওখানে আছে কি?”

আয়াশের মাথায় আকাশ ভে ঙ্গে পড়ে‌।হৃদিতের কপালে ভাঁজের সৃষ্টি হয়।ফোন লাউড স্পিকারে থাকায় সবটাই শুনতে পায় হৃদিত।

“না,এখানে তো নেই।আচ্ছা আমি আর হৃদিত খুঁজে দেখছি।টেনশন করিস না।বাসার সবাইকে হাইপার হতে নিষেধ কর।”

কল কেটে দেয় আয়াশ। চিন্তিত মুখমণ্ডল আয়াশের।কিছু একটা ভাবতেই মৃদু হাসে হৃদিত। গাড়ির হুডের উপর থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামে।হাতে থাকা জ্বলন্ত সিগারেট টা ফেলে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।আয়াশকেও গাড়িতে উঠতে ইশারা করে।

#চলবে ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে