#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_৪১
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ❌
(পর্ব টা একটু সেন্সিটিভ।নোট বার্তা পড়বেন।)
রাত একটা বেজে পাঁচ মিনিট।মাধবী ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়িয়ে বিছানায় বসে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।পড়ার মাঝেই মাধবীর ফোনটা নিজস্ব শব্দে বেজে ওঠে। মাধবীর মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। বিরক্ত সহিত ফোনটা হাতে নিতেই একটা আননোন নাম্বার চক্ষুগোচর হয়।কলটা কেটে দিবে দিবে করেও রিসিভ করে।ফোনের অপর পাশ থেকে কোনো শব্দ আসে না।মাধবীর বিরক্তি এবার আকাশ ছোঁয়া।কঠিন কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ফোনের অপর পাশ থেকে পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
“এখনও জেগে আছো?”
এতো রাতে কল দিয়ে এমন বেহুদা কথা বলাতে মাধবীর মেজাজ বিগড়ে যায়।কটমট করে বলে,
“না,একটা শাকচুন্নী কথা বলছে আপনার সাথে।”
মাধবীর কথায় তাইফ শব্দ করে হেসে ওঠে।
“শেষমেষ একটা শাকচুন্নীর প্রেমে পড়লাম তাহলে?”
“আপনার পছন্দ খারাপ তাই শাকচুন্নীর প্রেমে পড়েছেন।”
“আমার পছন্দ ভালো খারাপ বুঝি না।আমার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দরী স্নিগ্ধ মায়াবতী তুমি।”
তাইফের বলা কথাটাতে মাধবীর হৃদয় গহীনে লুকিয়ে থাকা ভালবাসাটা আরও বেড়ে যায়।মনটা ভালোলাগায় ছেয়ে যায়।তবুও মিছে মিছে রাগ দেখিয়ে বলে,
“আমাকে ঢপ দিয়েন না।বেটার অপশন পাইলে তখন আর এই মাধবীকে চিনবেন না।জানা আছে আমার।”
“তোমার অভাবে মারা গেলেও আর কখনও অন্য কাউকে ভালোবাসতে চাই না।মানুষ দুচোখ বন্ধ করলে স্বপ্ন দেখে আর আমি তোমায় দেখি।”
“গুগল থেকে মুখস্থ করেছেন?”
“উহু,আমার হৃদয়ে থাকা সুপ্ত অনুভূতি এগুলো। আচ্ছা তুমি এতো সহজেই সবটা মেনে নিলে? আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না!মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।ঘুম ভাঙলেই আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।”
“এতো সহজে কোথায়?আপনি কী মনে করেন? এতো গুলো মাস ধরে আমাকে ফলো করা,আমার বাসার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করা,আমাকে দেখতে ভাইয়ার সাথে এ বাড়িতে আসা।এগুলো আমি লক্ষ্য করিনি?আর ভালোবাসা বোঝার জন্য মানুষের দুটো চোখ’ই এনাফ।মানুষের মন,মস্তিষ্ক মিথ্যা বললেও দুটো চোখ কখনও মিথ্যা বলে না। চোখের ভাষা সর্বদা সত্য।”
তাইফ মনোযোগ সহকারে মুগ্ধ হয়ে মাধবীর বলা কথাগুলো শোনে।ধরা পড়ে যাওয়ায় কিঞ্চিৎ লজ্জাও পায়।
“চলো কাল কোথাও ঘুরতে যায়।”
“সময় নেই।”
“প্লিজ মাধবীলতা।”
“বারোটা পঁয়তাল্লিশে কোচিংয়ের সামনে দাঁড়াবেন।”
কথাটা বলেই কল কেটে দেয় মাধবী।মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।এই ছেলে কয়েকদিনেই মাধবীকে পাগল করে ছাড়বে।তাইফের খুশিও আকাশ ছোঁয়া।এই প্রথম মাধবীর সাথে একাকী বসে নিজের মনের কথা গুলো বলতে পারবে।নতুন করে জীবনের একটা অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে।একটু স্পেশাল কিছু তো রাখতেই হয়।ইতোমধ্যে তাবানের সাথে কথা বলে সুন্দর একটা প্লানিংও করে ফেলেছে।
______
শব্দটা চলে যেতেই মেহরিমা মুখের উপর থেকে হাত নামিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়।ভয়ে তখনও ক্লান্ত শরীর টা কাঁপছে।হঠাৎ ফোনে মেসেজ নোটিফিকেশন আসে।মেহরিমা নোটিফিকেশনে ক্লিক করে।মেসেজ টা পড়তেই অধরে মৃদু হাসির রেখা ফুটে ওঠে।মেহরিমা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়’ই আয়াশকে মেসেজ করে আননোন নাম্বারটা দিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করতে বলেছিল।মেসেজের কোনো উত্তর না পেয়ে ভেবেছিল ভাইয়া হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।অপরিচিত ব্যক্তির অবস্থান জানতেই মেহরিমা মনের ভয় কাটিয়ে নিজের তেজস্বী সত্ত্বায় ফিরে আসে।
“বলুন এবার কোনদিকে যেতে হবে।”
কন্ঠে তেজস্বীয়তা বিদ্যমান।সেকেন্ডের ব্যবধানে মেহরিমার পরিবর্তনে ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যক্তিটা চমকায়!
“হঠাৎ সাহস বেড়ে গেল যে মেয়ে!”
“আমার পূর্ব,পশ্চিম,উত্তর,দক্ষিণ কোনো না কোনো একদিকে তো আপনি আছেন’ই।যেভাবে বুনো শেয়াল,সাপের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।সেভাবে অন্য প্রাণীর হাত থেকেও নিশ্চয় রক্ষা করবেন।”
“ইন্টেলিজেন্ট গার্ল।বাট ইয়্যু নো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার এই কঠিন রুপ ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে। নিজের ভালোবাসাকে হেরে যেতে দেখতে নিশ্চয় তোমার ভালো লাগবে না?”
“মনে হচ্ছে আমার মন ভাঙার বড্ড তাড়া আপনার?”
“তোমার মন ভাঙলে একজন নিজের সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে মেয়ে।তার কষ্টতে যে আমি নিজের মনের প্রশান্তি খুঁজে পাই।তার দেওলিয়া রুপ দেখার বড়ই ইচ্ছা আমার।”
মেহরিমার বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়। শরীরের ব্যথার চেয়েও মনের ব্যথাটাই বেশি পোড়াচ্ছে।মেহরিমা যেটা ভাবছে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে হৃদিতকে আবারও আগের মতো ভালোবাসতে পারবে তো!মেহরিমার পবিত্র ভালবাসা তবে কী হৃদিতের হিং স্র তা র কাছে হেরে যাবে?নিজের ব্যথিত মন,ক্লান্ত শরীর নিয়েই অপরিচিত ব্যক্তির কথামতো আবারও হাঁটতে শুরু করে।অদূরেই জ্বলজ্বল করতে থাকা দুটো চোখে হাসি খেলে যায়।
_____
কাঠের রুমের দরজা টা ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে খুলে যায়।ফ্লোরে পড়ে থাকা লোকটা সেই শব্দে নড়েচড়ে ওঠে।বাঁচার জন্য ছটফট করতে থাকে। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসে।হয়তো কিছু বলার চেষ্টা করছে।হৃদিত ঘরের ড্রিম লাইট টা জ্বালিয়ে দেয়। শব্দ করে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে। লোকটা সেই শব্দে কেঁপে ওঠে।হ্যানসেল আর হ্যারিকে একটা কাঠের খুঁটির সাথে বেঁধে লোকটার দিকে এগিয়ে যায় হৃদিত।চোখ,আর মুখের কাপড়টা খুলে দেয়। লাইটের আবছা আলোয় লোকটা নিজের সামনে উপস্থিত মানুষটার জ্বলজ্বল করতে থাকা হিং স্র চোখ দুটো দেখেই কাঁপতে শুরু করে দেয়।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“আমাকে ছেড়ে দাও।আমার কী অপরাধ?এ..একটু পানি।”
হৃদিত ক্ষীণ হেসে বলে,
“তোকে মুক্তি দিতেই তো আমি এসেছি।”
হৃদিতের কন্ঠস্বর শুনতেই লোকটা চমকায়! হতভম্বের সহিত বলে,
“ত.. তুমি?”
“হ্যাঁ তোর শুভাকাঙ্ক্ষী।পানি খাবি নাকি..?”
হৃদিতকে কথা শেষ করতে না দিয়েই লোকটা বলে,
“হ…হ্যাঁ খাবো।”
হৃদিত কোটের পকেট হাতড়ে একটা বোতল বের করে ছিপি খুলে লোকটার মুখের উপর ধরতেই লোকটা এক চুমুকেই সবটা শেষ করে ফেলে।সেকেন্ড পেরোতেই লোকটার গ গ ন বি দা রী চিৎ কা রে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।জিহ্বা,ঠোঁট দুটো গ লে পড়ে যায়।হৃদিত হাঁটু মুড়ে লোকটার সামনে বসে।
“এই মুখ দিয়েই আমার অ্যানাবেলাকে সুন্দরী বলেছিস তাই না?ওই চোখ দিয়ে ওকে কু ৎ সি ত নজরে দেখেছিস?আর,আর এই হাত দিয়ে ওকে স্পর্শ করেছিস তাই না? এখন যদি এগুলোর কিছুই না থাকে তাহলে কেমন হবে বল তো?”
কথাটা বলেই ভয়ংকর অট্টহাসিতে মেতে ওঠে হৃদিত।সেই হাসির শব্দে লোকটার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে।হৃদিত হাসি থামিয়ে পরক্ষণেই কোটের পকেট থেকে সাঁ ড়া শি,চা পা তি,না ই ফ,লা ই টা র, হা তু ড়ি সহ আরও দুটো বোতল বের করে কাঠের ফ্লোরে রাখে।লোকটা যন্ত্রপাতিগুলো দেখতেই দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু হাত পা বাঁধা থাকায় নড়তে পারে না।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে।হৃদিত তা দেখে বাঁকা হাসে।সাঁ ড়া শি হাতে লোকটার দিকে এগিয়ে যায়।কোনো কথা না বলেই মিনিটের ব্যবধানে চোখের মণি দুটো উ প ড়ে ফেলে।লোকটা কাঁ টা কবুতরের ন্যায় ঝাপটাতে থাকে।মুখ দিয়ে আ র্ত না দ বের হলেও হৃদিতের কর্ণে সেই আ র্ত না দ পৌঁছায় না।চা পা তি হাতে নিয়ে লোকটার হাতের পায়ের নখগুলো কে টে নেয়।একটা বোতলের ছিপি খুলে কাঁ টা আঙুলের ডগায় তরল পদার্থ লাগিয়ে দেয়।সাথে সাথে হাত পায়ের কা টা অংশগুলো ঝ ল সে যায়।হাতে হা তু ড়ি তুলে নিয়ে দাঁতসহ বুকের হা ড় গু লো খটখট শব্দ করে ভে ঙে ফেলে।লোকটা য ন্ত্র ণা য় কা ত রা তে থাকে।পরক্ষণেই কু ড়া ল উঠিয়ে নিয়ে হাত পা তিন খ ন্ড করে কেটে ফেলে।এক কো পে মাথাটা দ্বি খ ণ্ডি ত করে দেয়।মাথার মধ্যে থাকা তরল পদার্থ গুলো কি ল বি ল করে বেরিয়ে আসে। কাঠের ফ্লোর তাজা গাঢ় লাল র ক্তে ভেসে যায়।লোকটা কিছুক্ষণ নড়াচড়া করে শান্ত হয়ে যায়।লোকটার শরীরে তখন প্রাণ নেই।কিন্তু হৃদিত তবুও থামে না।বুকের মাঝে তখনও হিং স্র তা বিদ্যমান!না ই ফ দিয়ে শরীরের মাং স কাটতে থাকে।পুরো শরীরের মাং শ কেটে তবেই ক্ষান্ত হয়।মাং শ গুলো হ্যানসেল,হ্যারির সামনে দিয়ে আসে।হ্যানসেল হ্যারি খুশিতে ঘেউ ঘেউ করে ডে কে উঠে খেতে শুরু করে দেয়।হৃদিত পুনরায় লোকটার লা শে র কাছে ফিরে আসে।সাঁ ড়া শি দিয়ে কলিজা টা টেনে বের করে আনে।সেটার দিকে কিয়ৎকাল তাকিয়ে থেকে হিসহিসিয়ে বলে,
“এটা তোর খুব বড় হয়ে গিয়েছিল তাই না?নাহলে হৃদিতের অ্যানাবেলাকে টাচ করার মতো সাহস কখনই দেখাতিস না।”
ক লি জা টাও হ্যানসেল,হ্যারিকে খেতে দিয়ে আসে।অবশিষ্ট থাকে শুধু মানব কঙ্কাল টা।কু ড়া ল দিয়ে সেটা ইচ্ছে মতো কো পা তে থাকে।হৃদিতের পুরো কোট তাজা র ক্তে ভিজে গেছে।উন্মুক্ত চোখদুটো থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে র ক্ত পড়ছে।নীল রঙের মণি জোড়া লাল র ক্তে র মাঝে দপদপ করে জ্বলছে।এ যেন রুপকথার গল্পের তথাকথিত সেই হিং স্র খলনায়ক!হাড়গুলো খ ন্ড খ ন্ড করে ঘরের কোনায় থাকা একটা বোতল এনে ছিপি খুলে হাড়গুলোর উপর পেট্রোল ছড়িয়ে দেয়।লাইটারে আগুন জ্বালিয়ে সেটা ছুড়ে মারে।মূহুর্তের মধ্যেই হাড়গুলোতে দাউদাউ করে আ গু ন জ্ব লে ওঠে।ক্রমশ কুণ্ডলি পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে।মানুষ পো ড়া ভ্যা প সা গ ন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।হৃদিতের বুকটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়।এতক্ষণে বুকের মাঝে জ্ব ল তে থাকা আ গু ন নিভে।ওই জ্ব ল ন্ত আগুনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“আমার পবিত্র অ্যানাবেলাকে অপবিত্র করার জন্য হাত বাড়ালেই তাকে করুণ মৃ ত্যু গ্রহণ করতে হবে।
তার চিহ্ন আমি এই পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে ফেলবো।
পৃথিবীর সবটুকু সম্মান আমার অ্যানাবেলার হোক
এই পৃথিবীর সবটুকু ঘৃণা আমার প্রাপ্য,
আমার পবিত্র অ্যানাবেলা শুধুমাত্র সম্মানের যোগ্য।”
চোখের সামনে এমন বি ভৎ স দৃশ্য, নিজের ভালোবাসার মানুষটার হিং স্র রুপ দেখে মেহরিমা থমকে যায়!বুকে তীব্র র ক্ত ক্ষ র ণ শুরু হয়। তবে কী শেষ পর্যন্ত ওর পবিত্র ভালবাসা হেরে গেলো?হৃদিত কী এতদিন ভালো হয়ে যাওয়ার মুখোশ পরে ছিল?সামনে দাঁড়ানো এই মানুষটা মেহরিমার হৃদিত হতেই পারে না।যেই মানুষটিকে মেহরিমা ভালোবেসেছে তার মধ্যে এমন প শু র মতো হিং স্র তা থাকতেই পারে না।কিন্তু নিজের চোখে দেখা সবটা মেহরিমা কীভাবে অস্বীকার করবে?মেহরিমা অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
“বি শ্বা স ঘা ত ক!”
আ গু নে র মতো জ্ব ল তে থাকা হৃদিতের চোখজোড়া নিভে যায়।ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।দরজার নিকট মেহরিমাকে এলোমেলো অবস্থায় ছলছল চোখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হৃদিতের হৃদয় থমকে যায়।মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে।মেহরিমাকে তো গভীর ঘুমে রেখে এসেছিল।রুমের দরজা সহ বাড়ির দরজা ইভেন মেইন গেইটও বাইরে থেকে লক করে এসেছিল।তাহলে মেহরিমা এতদূর পর্যন্ত কীভাবে এলো?এখানকার কিছুই তো চেনে না।তবে কী কারোর সহযোগীতা নিয়ে এসেছে?কিন্তু কার?মস্তিষ্ক জুড়ে এতো এতো প্রশ্নের আনাগোনা থাকলেও উত্তর জানা নেই হৃদিতের।চোখের হিং স্র তা বিলীন হয়ে অসহায়ত্ব ফুঁটে ওঠে।এতোক্ষণ কী তবে কোনো ঘোরের মধ্যে ছিল?মেহরিমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই মেহরিমা গর্জে ওঠে,
“ওখানেই থামুন।এদিকে আর এক পা এগোলে আমি কিন্তু নিজেকে শে ষ করে দেবো।ঘৃ ণা হচ্ছে আমার নিজের উপর।চৌধুরীদের রক্ত খারাপ।সবাই বি শ্বা স ঘা ত ক।আমি নিজের হাতে আমার জীবনটা শেষ করে ফেললাম।”
ভঙ্গুর কন্ঠস্বর মেহরিমার।মেহরিমার বলা কথাগুলো শুনতেই হৃদিতের পা জোড়া থেমে যায় ।সামনে এগোনোর আর সাহস পায় না।হঠাৎ মেহরিমার নাকে ভ্যাপসা উদ্ভট গন্ধ এসে লাগে। এতোক্ষণ হয়তো নিজের ভাবনার জগতে ছিল বিধায় গন্ধটা নাসারন্ধ্র পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারেনি।মেহরিমা গলগলিয়ে ব মি করে দেয়।চোখের সম্মুখে সবটা কেমন ধোঁয়াশা হয়ে ওঠে।পুরো পৃথিবী ঘুরতে থাকে।চোখের সামনে ক্রমশ অন্ধকার নেমে আসে।চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।মেহরিমা পড়ে যেতে নিলেই হৃদিত দৌড়ে এসে দুহাতে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।মেহরিমাকে বুকে জড়িয়েই ফ্লোরে বসে হাউমাউ কান্না করে দেয়।এই কান্না যেন নিজের অ্যানাবেলাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার কান্না।হৃদিতের কান্নার শব্দে অন্ধকার জঙ্গলের পরিবেশ আরও গম্ভীর হয়ে ওঠে।সেই করুণ কান্নার শব্দ শুনে মনে হয় কোনো অশরীরী নিজের সবটা হারিয়ে কাঁদছে।ছেলেরাও যে এতোটা কাঁদতে পারে সেটা হয়তো প্রকৃতি নিজেও জানতো না!নিশুতি রাতের ওই চন্দ্রিমা একজন পাগল প্রেমিক পুরুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ হয়।ওদের একাকী সময় কাটাতে দিয়ে মেঘের আড়ালে নিজের সুন্দর মুখখানা লুকায়।একটা তমসাচ্ছন্ন রজনী সাক্ষী হয়ে থাকে স্বর্বহারা এক প্রেমিক পুরুষের হৃদয়বিদারক কান্নার।হৃদিতের বুকভাঙা কান্নায় জঙ্গলের গাছপালা গুলোও গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।পশুপাখি গুলো নিজস্ব শব্দে ডাকাডাকি করে হৃদিতের খারাপ সময়ের সঙ্গী হয়।ওরা যেন শান্তনা দিচ্ছে,
“কাঁদে না বোকা ছেলে।তোমার ভালোবাসা হারিয়ে যায়নি।ভালোবাসারা কখনও হারায় না।হারিয়ে যায় তো ভালোবাসার মানুষেরা।”
হৃদিত কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“এই অ্যানাবেলা কী হলো তোর?চোখ খোল আমার জান।তুই যা বলবি তাই করবো আমি।তুই বললে আর কখনও তোর দু’চোখের সামনে আসবো না আমি।এই অ্যানাবেলা তোর না বিশ্বাস ভেঙেছি আমি?আমাকে থা প্পর মার,মন চাইলে খু ন করে ফেল।তবুও এমন অভিমান করিস না প্লিজ।আমি বেঁচে থাকতে পারবো না।এই অ্যানাবেলা?”
মেহরিমা নিস্তব্ধ।কোনো সাড়াশব্দ নেই।নিথর শরীরখানা হৃদিতের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।হৃদিত যেন নিজের ভেতরে নেই।পাগলের মতো বিলাপ করে কান্না করে চলেছে।হৃদিতের বিষন্ন মর্মভেদী কান্না,এই ভ ঙ্গু র রুপ কারোর মনে বসন্ত এনে দেয়।আপাতত তার কাজ শেষ।ক্রুর হেসে বলে,
“শিঘ্রই নতুন কোনো রুপে আবারও আমাদের দেখা হবে হৃদিত চৌধুরী।”
#চলবে__
#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_৪২
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ❌
সকালের মিষ্টি রোদ এসে হাতছানি দিচ্ছে কেবিনে। প্রকৃতি কুয়াশার আবরনে ঢাকা।শুভ্ররঙা চাদরে মোড়ানো বিছানায় শুয়ে আছে মেহরিমা।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ডান হাতে ক্যানোলা ও মুখে অক্সিজেন মাস্ক পড়ানো।নিচের ঠোঁটের কা টা অংশে ড্রেসিং করে মেডিসিন লাগানো হয়েছে।পা জোড়া কে টে কু টে ছিঁ ড়ে একাকার।পা দুটোও ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করা।মেহরিমার বাম পাশেই একটা টুলে বসে আছে হৃদিত।মেহরিমার নরম তুলতুলে বাম হাতটা নিজের খসখসে দু’হাতের মুঠোয় পুরে।দৃষ্টি মেহরিমার ঘুমন্ত মুখমণ্ডলে।গতকাল শেষ রাতের দিকে হৃদিত নিজেই মেহরিমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে।ডক্টর জানিয়েছে টেনশনের কিছু নেই।টেক কেয়ার করলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। প্রেগন্যান্সির এই সময় টাতে যেন মেন্টালি স্ট্রেস কম নেয়।হৃদিত কেবল স্তব্ধ হয়ে সবটা শুনেছে কোনো প্রত্যুত্তর করেনি।
মেহরিমা নড়েচড়ে ওঠে।সময় নিয়ে পিটপিট করে আঁখিজোড়া খুলে তাকায়।হৃদিতের অধরে ক্ষীণ হাসির দেখা মেলে।মেহরিমা নিজের চোখ জোড়া মেলেই হৃদিতকে দেখতে পায়।হৃদিতের ভঙ্গুর অগোছালো রুপ দেখে বুকের ভেতর তীব্র য ন্ত্র ণা অনুভব হয়।চোখজোড়া লাল টকটকে হয়ে ফুলে আছে।মুখমণ্ডলে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে।অধরজোড়া শুস্ক দেখাচ্ছে।মাথার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।গায়ে থাকা ব্ল্যাক কালারের শার্ট টা যায়গায় যায়গায় কুঁচকে গেছে।বুকের কাছে শার্টের দুটো বাটন খোলা।মেহরিমা যেন আবারও নতুন করে এই অগোছালো হৃদিতের প্রেমে পড়ে।মেহরিমা কথা বলার জন্য ঠোঁটজোড়া ফাঁক করতেই হৃদিত বলে ওঠে,
“ওয়েট জান।ব্রিদিং প্রবলেম হচ্ছে?”
মেহরিমা হালকা করে না সূচক মাথা নাড়ায়।
“ওয়েট আ মিনিট।আমি অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে দিচ্ছি।”
হৃদিত যত্ন সহকারে অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে দেই।মেহরিমা মলিন চোখে কিছুক্ষণ হৃদিতের দিকে তাকিয়ে থাকে।পরক্ষণেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে।ঠোঁটের ব্যাথায় আস্তে করে বলে,
“বাসায় যাবো।”
“দুপুরের আগে সম্ভব না।”
“নিজের বাসায় যাবো।”
“আচ্ছা।”
“কর্মফল খুব ভয়ানক জিনিস।আপনি আজ যা করবেন আগামীকাল ঠিক সেটাই ফিরে পাবেন।”
“গতকাল রাতে ওখানে কীভাবে গিয়েছিলিস?”
মেহরিমার কথায় কোনো প্রত্যুত্তর না করে পাল্টা প্রশ্ন করে হৃদিত।মেহরিমা ঘাড় ঘুরিয়ে হৃদিতের দিকে তাকায়।প্রথম থেকে সবটা খুলে বলে।সবটা শুনে হৃদিতের কপালে গুটি কয়েক ভাঁজের সৃষ্টি হয়।ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায়।মেহরিমা প্রশ্ন করে,
“বুঝতে পারছেন কে?”
“আপাতত না।বাট শিঘ্রই জেনে যাবো।তবে তোর তো ওই ছেলেকে থ্যাংকস দেওয়া উচিত।তোর অনেক বড় উপকার করেছে কি না?”
“হ্যাঁ দিবো তো।ওনার দেখা পেলেই থ্যাংকস দিবো।”
হৃদিত আর কিছু বলে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।মেহরিমাও কথা না বাড়িয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি স্থাপন করে। জানালার পাশেই একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ।সেখানেই একটা ডালে বসে আছে একজোড়া টিয়া পাখি।তাদের ভালোবাসার খুনসুটি দেখে মেহরিমার অধরে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।
“এই পা পীকে তুই খুব ঘৃ ণা করিস তাই না?”
শান্ত,কম্পিত কন্ঠস্বর হৃদিতের।দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ। নিজের ভালোবাসার মানুষটার চোখে চোখ রেখে ঘৃ ণা শব্দ টা কখনোই শুনতে পারবে না।মেহরিমা দৃষ্টি ঘুরিয়ে হৃদিতের মুখের দিকে তাকায়।
“যাকে একবার ভালোবাসা যায়।সে যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পা পীও হয় তবুও তাকে ঘৃ ণা করা সম্ভব নয়।আর মানুষটা যদি আমাকে হারানোর ভয়ে সারারাত বসে বসে বাচ্চাদের মতো কান্না করে। তাহলে তো তাকে হারিয়ে ফেলা মানে নিজের সাথেই সবচেয়ে বড় অন্যায় টা করা হবে।”
মেহরিমার কথায় হৃদিত চমকে মেহরিমার দিকে তাকায়।বড্ড অবাক হয়!চোখে মুখে বিষ্ময় ফুটে ওঠে।তা দেখে মেহরিমা আবারও বলে,
“বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। গতকাল রাতে আপনার ওই হিং স্র তা দেখে আমি নিজেকে সামলাতে পারেনি।আপনার হাতে হাত রেখে আমি আমার বার্ধক্যের সূর্যাস্ত দেখতে চাই। আমার স্বপ্ন কি পূরণ হবে না?আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ।প্লিজ ডক্টর দেখিয়ে ট্রিটমেন্ট নেন।দেখবেন আপনি সুস্থ হয়ে উঠলে আমাদের সুন্দর একটা সংসার হবে।আমি…”
মানসিক অসুস্থতা,ট্রিটমেন্ট শব্দ দুটো শুনতেই হৃদিতের চোখমুখ কঠিন রুপ ধারণ করে।মেহরিমার মুখের কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।হৃদিত শেষ করতে দেই না।গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।কোনো ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই।”
“সেদিন মাকে আপনি নিজেই তো বললেন? আপনার আচরণ,রাগ আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত স্বাভাবিক না।বিশ্বাস করুন আমায়। আপনার এই হিং স্র তা একদিন আমাদের সবাইকে মৃ ত্যু র দিকে ঠেলে দিবে।অথচ আপনাকে নিয়ে হাজারও বছর বেঁচে থাকার স্বপ্ন আমার।”
“তখন ইমোশনাল হয়ে বলেছিলাম শ্রেয়া চৌধুরীকে।ওইসব রোগটোগ আমার নেই।আর আগে থাকলেও সেটার ট্রিটমেন্ট করিয়েছি আমি।এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।তাই আজাইরা কথা বলিস না জান।”
“আপনি একটা সাইকো।আমি থাকবো না আপনার সাথে।”
“তুই বাধ্য থাকতে।”
“ফোর্স করছেন আমায়?”
“উহু,তুই আমার ওয়াইফ।আমি তোর হাসবেন্ড। সেই অধিকারটাই দেখাচ্ছি।”
মেহরিমা রাগে কষ্টে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।হৃদিত এগিয়ে এসে গালে হাত রাখতে নিলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“দূরে সরুন আমার থেকে।আমাকে ছুঁবেন না।”
“তাহলে ওই ছেলে এসে ছুঁবে তোকে?”
মেহরিমা হতভম্ব হয়ে যায়!একটু আগের হৃদিত আর এই হৃদিতের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ! মেহরিমা এবার শব্দ করে কান্না করে দেয়।
“আপনার এই হিং স্র তা র জন্য আপনার শ ত্রু বেড়েই চলেছে।আমি একটু শান্তি চাই।একটা শান্তিপূর্ণ জীবন চাই।আপনার পরিবার আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছে।আমার খালামনিকে কেড়ে নিয়েছে।আমার মায়ের স ম্মা ন হা নি করেছে। আপনি ওদের মতো হবেন না প্লিজ।আমি তাহলে বেঁচে থেকেও ম রে যাবো।এমন হৃদিতকে তো আমি কখন’ই চাইনি।আমি যে হৃদিতকে ভালোবেসে ছিলাম সেই হৃদিত আপনি নন।আমার আগের হৃদিত হয়ে যাননা আপনি।আমরা খুব সুখে থাকবো।একটা সুন্দর সুখের ছোট্ট সংসারের খুব স্বপ্ন আমার।”
শেষের দিকের কথাগুলো বলতে যেয়ে মেহরিমার কন্ঠে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে।হৃদিত কোনো কথা বলে না।কিছুক্ষণ থমকে মেহরিমার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।অতঃপর ধীর পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।মেহরিমা চিল্লিয়ে বলে,
“আপনি আর কখনও আমাকে পাবেন না।সুযোগ দিয়েছিলাম আপনাকে আপনি গ্রহণ করেননি।”
মেহরিমার বলা কথাগুলো হৃদিত কি আদৌও শুনতে পায়?হয়তো পায় আবার হয়তো না!মেহরিমা ঠোঁটে টান দিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলায় আবারও কাঁ টা স্থান চিঁ ড়ে র ক্ত বের হয়ে আসে।রাগে দুহাতে নিজের চুল খামচে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“সব ক ষ্ট আমার কপালেই কেনো আল্লাহ?আমি ক্লান্ত।মুক্তি দেও আমাকে।ও বাবা তোমার মেহুমা একটুও ভালো নেই।নিয়ে যাওনা তোমার কাছে তোমার মেহুমাকে।”
____
তাইফ আজ নিজেকে বেশ সুন্দরভাবে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হয়।তাইফ কে নতুন রুপে দেখতেই তৃধা চোখ বড়বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।মুখটা হাঁ হয়ে যায়।তৃধার পাশেই তাবান বসে আছে।তৃধাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাবানও ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে সেদিকে তাকায়।তাইফকে দেখতেই বলে,
“ব্রো ওদিকে সব ঠিকঠাক তো?তুই খবর নিয়েছিলিস?”
তাবানের কথায় তাইফ মুচকি হেসে বলে,
“হুঁ।”
“এ্যাই ভাইয়া তুমি এতো ভাব নিয়ে লুক চেঞ্জ করে কোথায় যাচ্ছো?মেয়ে পটাতে?আবার নতুন বউয়ের মতো এমন লজ্জা পাচ্ছো কেন?”
“আরে শাকচুন্নী রে!মেয়ে পটে গেছে।আজ ফার্স্ট ডেট ওদের তাই এতো ভাবসাব নিয়ে যাচ্ছে।”
তাবানের কথায় তৃধা অবাক হয়ে বলে,
“সত্যিই ভাইয়া!আমিও যাবো। ভাবীকে দেখবো।”
তাইফ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এখানে আবার ভাবী কোত্থেকে থেকে আসলো?”
“আরে তোমার ফিউচার ওয়াইফ তো আমার ভাবীই হচ্ছে তাই না?”
“এ্যাই তোর মাথায় পড়াশোনা ঢোকে না।ম্যাথ পারিস না। আবার এতো ভাবী বুঝিস কী করে?”
“তাবান ভাইয়া তুমি সবসময় আমাকে ইনসাল্ট করবে না।তোমার থেকে আমি হাজার গুন ভালো পড়াশোনায়।ওই ম্যাথটাই একটু কম বুঝি এই যা। কিন্তু তার জন্য তো আমার মেহু বেইবি আছেই।”
“তা আমার জানা আছে রে শা ক চু ন্নী।শা ক চু ন্নী রা কেমন পড়াশোনা পারে জানি আমি।তাই ভাব কম ল।”
“মাআআআ!দেখো,তোমার ফেল্টুস ছেলে আমার সাথে কেমন করে মেয়েদের মতো কোমর বেঁধে ঝগড়া করছে।”
“ভাই তোরা ঝগড়া থামা।আমি গেলাম ।আমার লেইট হয়ে যাচ্ছে।”
তাইফ গাড়ির দিকে ছুট লাগায়।পিছন থেকে তাবান,তৃধা সমস্বরে বলে,
“বেস্ট অফ লাক।”
“থ্যাংকস, থ্যাংকস।”
তাইফ দৌড়াতে দৌড়াতেই জবাব দেয়।তাইফের এক্সাইটমেন্ট দেখে তাবান,তৃধা হেসে ওঠে। অবশেষে ছেলেটার অগোছালো জীবনটা গুছিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ একজন আসলো।
____
মাধবী ক্লাস শেষ করে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। চোখ যেয়ে পড়ে রাস্তার অপরপাশে টং দোকানে বসে থাকা তাইফের দিকে।তাইফের হাতে চায়ের কাপ।দোকানদার চাচার সাথে আড্ডায় ব্যস্ত।গায়ে আকাশি রঙের একটা শার্ট জড়িয়েছে।শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোটানো।সাদা রঙের গ্যাবার্ডিন প্যান্টের সঙ্গে আকাশি রঙের শার্টে বড্ড মানিয়েছে।হালকা বাতাসে কপালের উপরে পড়ে থাকা চুলগুলো উড়ছে।মাধবীর খুব করে মন চায় একটাবার ওই অবাধ্য চুল গুলোকে ছুঁয়ে দিতে।পরক্ষণেই নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়।মাধবী মৃদু হাসে।এ যেন ওর কল্পনার সেই রাজপুত্র।মাধবী নিজেও আজ আকাশি রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে।ওড়না টা সাদা। কাকতালীয় ভাবে ড্রেসের কালারটা মিলে যাওয়াতে মাধবী মনে মনে খুব খুশি হয়।তাইফ তখনও মাধবী কে খেয়াল করেনি।মাধবী তাইফ কে ডাকে না।নিজেই রাস্তা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।রাস্তায় তখন যানবাহনের চাপ কম।চার রাস্তার মোড় হওয়ার দরুন সবসময় যানবাহনের আনাগোনা থাকে।মাধবী মুচকি মুচকি হেসে রাস্তা পার হতে থাকে।মনের মাঝে তখন নতুন প্রেমের এক অদ্ভুত অনুভূতি ।সাথে এক্সাইটমেন্ট তো আছেই।কতশত কথা বলার আছে চায়ের দোকানে বসা ওই ছেলেটাকে।সারারাত না ঘুমিয়ে সবটা ভেবেছে শুধু।এখন কাঁপাকাঁপি ছাড়া সবটা বলতে পারলেই হলো।রাস্তার মাঝখানে আসতেই হঠাৎ দ্রুতগামী একটা ট্রাক এসে মাধবীকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।মাধবী চিৎকার করে ডেকে ওঠে,
“তাইফ!”
মাধবীর চিৎকার শুনতেই তাইফ রাস্তার দিকে তাকায়।রাস্তায় র ক্তা ক্ত অবস্থায় মাধবী কে পড়ে থাকতে দেখে মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ে।মাধবী তাইফের দিকে কান্নারত চোখে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট দুটো নড়ছে।যেন কিছু বলতে চায়।তাইফ দ্রুত উঠে ছুটে আসতে নিলেই আরেকটা দ্রুতগামী প্রাইভেট কার এসে মাধবীকে পি ষে দিয়ে চলে যায়!তাইফ ওখানেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।চোখের সামনে নিজের সব স্বপ্ন, নিজের ভালো থাকা, নিজের ভবিষ্যৎ,নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে শেষ হয়ে যেতে দেখে।সেকেন্ডের ব্যবধানে সবটা ওলটপালট হয়ে যায়।কী যেন মনে করে ঘাড় ঘুরিয়ে গাড়িটার নম্বর প্লেট দেখে নেয়।মাধবীর নিস্তেজ, নিথর দেহখানা রাস্তায় পড়ে আছে।যে মনে কয়েক সেকেন্ড আগেও হাজারও কথা জমা ছিল সেই মনটা এখন নিস্তব্ধ।শেষ বারের মতো নিজের মনের কথাগুলো আর বলা হলো না মাধবীর।এই আফসোসটা কার রয়ে গেল?মাধবীর?নাকি তাইফের?তাইফ যে তার মাধবীলতার মনের ভিতরে জমানো কথার একাংশও জানতে পারলো না।ততক্ষণে রাস্তায় মানুষের জট বেঁধেছে।তাইফ ভীড় গলিয়ে মাধবীর দিকে এগিয়ে যায়।পা জোড়া চলার শক্তি পাচ্ছে না।একটু আগেই তো এই পা দিয়ে ছুটে আসলো অথচ এখন এতো ভারী কেন লাগছে!স্তব্ধ র ক্তা ক্ত দেহখানার পাশে যেয়ে বসে।আলতো হাতে মাধবীর পিষ্ট হয়ে যাওয়া মাথাটা নিজের কোলের উপর উঠিয়ে নেয়।কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে ডাকে,
“এই মাধবীলতা?এই শুনছো তুমি?তোমার তাইফ এসেছে।তুমি কথা বলবে না?ঝগড়া করবে না? অভিমান করেছো তুমি?”
কিন্তু তাইফের মাধবীলতা কথা বলে না।মৃত মানুষের কথা বলার মতো ক্ষমতা যে আল্লাহ তায়ালা দেননি।তাইফ হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।মাধবীর থেঁ ত লে যাওয়া দেহটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।ততক্ষণে অবনী শেখ,চৌধুরী বাড়ির সকলে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়েছে। অবনী শেখ কে দেখতেই সবাই সরে দাঁড়িয়ে রাস্তা করে দেয়।অবনী শেখ স্লথ পায়ে হেঁটে সামনে এগিয়ে যায়। ধপাস করে রাস্তার উপরেই বসে পড়ে। মাধবী তখনও তাইফের বুকে।তাবান দৌড়ে এসে নিজের ভাইকে বুকে জড়িয়ে নেয়।তাইফ তবুও মাধবীকে ছাড়েনা।অবনী শেখ যেন কথা বলতে ভুলে গেছে।একদৃষ্টিতে মাধবীর দিকে তাকিয়ে থাকে।মিনিট পাঁচেক পেরোতেই হেসে কুটিকুটি হয়ে বলে,
“আমার মেয়ে তোমার বুকে ঘুমিয়ে আছে তাই না তাইফ বাবা?ও আজ সকালে তোমার কথা বলেছে আমাকে।আমি বলেছি হৃদিত বাবা আর নীলাক্ষী ফিরে আসলে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো আমি।আমাকে আরও কী বলেছে জানো? সকালে আমাকে বললো,মা তোমার মেয়ের সব স্বপ্ন ওই ঢাবিকে ঘিরে।ইন শা আল্লাহ তোমার মেয়ে একজন ঢাবিয়ান হয়ে দেখাবে মা।তখন গর্বে আমার বুকটা ভরে উঠেছিল।মা শা আল্লাহ কী মায়াবী দেখতে লাগছে আমার মেয়েকে।তোমার সাথে বড্ড মানাবে আমার মেয়েটাকে।ওকে কিন্তু কখনও কষ্ট দিওনা।খুব আদুরে মেয়ে আমার।আমার মিনাক্ষীকে এখন ডেকো না বাবা।ওকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে দিলে ওর খুব মাথা য ন্ত্র ণা হয়।তখন কান্না করে আমার মেয়েটা।মিনাক্ষী এমন করে রং মেখে আছে কেনো গো?কোচিংয়ে কোনো প্রোগ্রাম ছিল নাকি?আমাকে তো কিছুই বললো না সকালে।না,না বলেছে হয়তো আমি নিজেই ভুলে গেছি।বয়স হচ্ছে তো,সব কী আর অতো মনে থাকে।”
কথাগুলো বলেই আবারও হাসতে থাকে অবনী শেখ।অবনী শেখের কথায় সবাই হতভম্ব হয়ে যায়!এতো কঠিন মানুষটা এমন ভুলভাল বকছে কেনো? ওনাকে কী বিষয় টা জানানো হয়নি?পরক্ষণেই সবটা বুঝতেই সবার চোখে জলেরা হানা দেয়।ভীড়ের মাঝে দাঁড়ানো অমিত সাহা,আরিফ চৌধুরীর চোখেও পানি।এই কঠিন সত্তার নারীকে এই রুপে একদম মানাচ্ছে না।অবনী শেখকে সবসময় তেজস্বী রুপেই মানায়।তাইফ মাধবীকে বুকে জড়িয়েই কাঁদতে কাঁদতে অবনী শেখের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে!উপস্থিত সকলের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।হঠাৎ করেই অবনী শেখ নিজের হাসি থামান।পরক্ষণেই গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।এলোপাথাড়ি ভাবে নিজেকে থাপরাতে থাকেন।কাঁদতে কাঁদতেই বলেন,
“সব দো ষ আমার।সব দো ষ আমার এই পো ড়া কপালের।ওরা আমার নিষ্পাপ অবুঝ মেয়েটাকে বাঁ চ তে দিলো না।আল্লাহ!এই দিন দেখার আগে তুমি আমাকে কেন উঠিয়ে নিলে না?আমার সব শেষ।আমার নিষ্পাপ মেয়েটার কী দোষ ছিল?ওর আর ঢাবিয়ান হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না।আমার বুক খালি হয়ে গেল। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব?ও আল্লাহ এই কোন পাপের শা স্তি দিলে আমাকে?আমার মেয়ে।আমার মিনাক্ষী।ও আল্লাহ গো!এই কঠিন বোঝা মাথায় নিয়ে এই জীবন কী করে পার করবো আমি?”
আয়েশা চৌধুরী আর আতিয়া চৌধুরী দ্রুত এগিয়ে এসে অবনী শেখকে সামলানোর চেষ্টা করেন।এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই সেন্সলেস হয়ে আয়েশা চৌধুরীর গায়ের উপর ঢলে পড়েন অবনী শেখ।শ্রেয়া চৌধুরীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।আয়াশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীর দিকে তাকিয়ে থাকে।যার চোখে পানি অথচ অধরে ক্ষীণ বাঁকা হাসি ঝুলে আছে।
#চলবে___