কাঠগোলাপের আসক্তি পর্ব-২৭+২৮

0
7

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_২৭. [রহস্যের খন্ডাংশ.১]
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ❌

মাঝে কেটে গেছে পনেরো দিন।তিনদিন হলো মেহরিমারা গ্রামে এসেছে।নিজের বাড়িতে এসে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।চৌধুরী পরিবারের সবাই অপারেশনের পরের দিনই চলে এসেছিলেন। আরিফ চৌধুরী,আয়াশ থাকায় মেহরিমাদের ওতোটা সমস্যা হয়নি।তাছাড়া প্রতিবেলা শ্রেয়া চৌধুরী রান্না করে খাবার পাঠাতেন।সময় পেলে নিজেও এসে দেখে যেতেন।জলিল শেখ এখন মোটামুটি অনেকটা সুস্থ।তবে কোনো এক কারণে উনি সবসময় মনমরা হয়ে থাকেন।দেখে মনে হয় কোনো এক গভীর চিন্তায় মগ্ন।কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছেন।এই কয়েকদিনেই মুখে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে।বাবার নিরবতা মেহরিমাকে ভেতরে ভেতরে দিশেহারা করে তুলেছে।হঠাৎ এই নিরবতা ঠিক মেনে নিতে পারছে না।জলিল শেখের পরিবর্তন নিয়ে অবনী শেখও বেশ চিন্তিত।

গতকাল চৌধুরী পরিবারের সবাই এসে দেখে গেছে জলিল শেখকে।মেহরিমা শেখ বাড়িতেই আছে।ভেবে রেখেছে বাবা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এ বাড়িতেই থাকবে।হৃদিত আজ আর শেখ বাড়িতে আসবে না। নিজের বাগান বাড়িতে গেছে।সময় রাত দশটা।জলিল শেখ বেডের হেড বোর্ডের সাথে বালিশ রেখে হেলান দিয়ে বসে আছেন।মেহরিমা নিজের হাতে বাবাকে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাওয়াচ্ছে।অবনী শেখ রাতের টুকিটাকি কাজ শেষ করে রুমে আসেন।সামনের মাসে ঢাবির অ্যাডমিশন টেস্টের ডেইট দিয়েছে।এই কয়দিন ঢাকাতে থাকায় একটুও পড়াশোনা করা হয়নি মাধবীর।তাই পড়ার জন্য নিজের রুমে গেছে পাঁচ মিনিট হতে চললো।

“ও বাবা তোমার এখন কেমন লাগছে?”

“ভালো আম্মা।তুমি কি এখন কিছু করবা?”

“না বাবা।”

“আসো তোমার সাথে গল্প করি।”

পনেরো দিন পরে বাবাকে আগের মতো কথা বলতে দেখে মেহরিমার বুকে প্রশান্তির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে।ও উৎফুল্ল হয়ে বাবার পাশে বসে।বাবার ডান হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

“বলো বাবা।আজ তোমার সাথে অনেক গল্প করবো।তোমার সব কথা শুনবো।”

মেয়ের কথায় জলিল শেখ মৃদু হেঁসে বলেন,

“আজ তোমাকে আমার ভালোবাসার গল্প শোনাবো।শুনবে তো?”

“অবশ্যই বাবা।বলো তুমি।”

“আমি আর তোমার মা কাজিন সেটাতো জানো আম্মা?”

“হ্যাঁ বাবা।”

“আচ্ছা শোনো তাহলে।তোমার মা আমার বেশ অনেক বছরের ছোট। আমাদের বকুল গাছ আছে না?ওখানে আগে আমাদের বাড়ি ছিলো।আর আমার ছোট চাচা মানে তোমার নানু ভাইয়ের বাসা ছিল আমাদের শিউলি ফুলের গাছ আছে না? ওখানে।”

“বাবা আমার নানুর বাসাও এই গ্রামেই ছিলো!”

অবিশ্বাস্য কন্ঠস্বর মেহরিমার!মেয়ের কথায় মুচকি হাসেন জলিল শেখ।

“হ্যাঁ মা। তারপর শোনো।তোমার মা ছোট বেলা থেকেই খুব চঞ্চল ছিল।অতশী ছিল ওর পুরোই উল্টো।নম্র,ভদ্র,নরম মনের নির্ভেজাল একজন মানুষ।আর শাহিন তো ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত।ব্যতিক্রম ছিল শুধু তোমার মা।অবনীর নামে প্রতিদিন পাড়া প্রতিবেশীদের থেকে বিচার আসতো।একদিন কারোর মাথা ফাটিয়ে দিতো তো,অন্যদিন কারও চুল ছিঁড়ে দিতো।এভাবেই বড় হতে থাকে অবনী।মূলত ওর চঞ্চলতার জন্যই ওর প্রেমে পড়েছিলাম আমি।আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি আর অবনী ফোরে।সেদিন স্কুলে মারপিট করে আমার কাছে এসেছে।ছোটমার ভয়ে বাড়ি যেতে পারছে না।ছোটমার হাত থেকে নাকি ও কে বাঁচাতে হবে।বাঁচিয়েও ছিলাম।বলা বাহুল্য ছোটকাকা অবনী কে মাত্রারিক্ত ভালোবাসতো।তাই অবনী শুধু মাত্র ভয় পেতো ছোটমাকে।বাড়িতে ও কে বাঁচিয়ে দিলেও সেবার ওর শেষ রক্ষা হয়েছিল না।সেদিন স্কুলের পুরো ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে।এক মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে কিনা!কারণটা হচ্ছে সে অবনীকে দাঁত বুকড়ি বলে রাগিয়েছে।সেইবার চৌধুরীরা বিচার পর্যন্ত বসিয়েছিল।কারণ মেয়েটা ছিল আয়রা চৌধুরী।তাহলে ভাবতে পারছো তোমার মা কোন লেভেলের দুষ্টু ছিল।তবে হ্যাঁ তোমার মায়ের একটা ভালো গুণও ছিল,কোনো অন্যায় মেনে নিতো না।খুব প্রতিবাদি ছিল ঠিক এখনকার মতই।”

“বাবা তাহলে মানুষ তো ঠিকই বলে।আমি মায়ের মতো হয়েছি।”

“হ্যাঁ আম্মা তুমি পুরোটাই তোমার মায়ের মতো হয়েছো।আর মাধবী আম্মা অতশীর মতো।তোমার মা আমার এক পাক্ষিক ভালোবাসা ছিলো।যখন থেকে আমি আমার অনুভূতি বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই অবনী আমার ভালোবাসা ছিল।সালটা ১৯৮৬।একদিন খুব ধুমধাম করে অতশীর বিয়ে হয়ে যায়।আমিও ওটার অপেক্ষাতেই ছিলাম।ছোট কাকার কাছে যেয়ে নিজের জন্য অবনীর হাত চাই।কিন্তু আফসোস তিনি আমার মতো বেকার ছেলের হাতে মেয়ে দিবেন না।আমি যতই ভাইপো হই না কেনো।ছোট মেয়ের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বড়ই দায়িত্বশীল।অতশীর প্রতি অতোটা দায়িত্বশীল কখনোই ছিলেন না।অতশীর প্রতি যদি আরেকটুও দায়িত্বশীল হতেন তাহলে হয়তো অতশীর জীবনটা অন্যরকম হতো।কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন জলিল শেখ।

যাইহোক ততদিনে ঢাবি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়েছে।তোমার মা তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে।তবে ছোট কাকা আমাকে কথা দিয়েছিলেন চাকরি পেলে অবনী কে আমার হাতেই তুলে দিবেন।আমার চাকরি পাওয়া পর্যন্ত উনি অপেক্ষা করবেন।তখন আমি টগবগে যুবক।রক্ত গরম আমার।অবনী কে পাওয়ার জন্য জেদ ধরেই আবারও ঢাকায় ফিরে গেলাম।চাকরির জন্য ছুটোছুটি করতে লাগলাম।এভাবে ঢাকা শহরে চাকরি খুঁজতে যেয়ে জড়িয়ে পড়লাম ছাত্ররাজনীতিতে।তবুও চাকরির জন্য কমবেশি চেষ্টা করতাম।এভাবেই কেটে গেলো তিনটা বছর। ১৯৮৮ সালের জুলাই মাস।অবনীর ঢাবিতে বাংলা ডিপার্টমেন্টে পড়ার সুযোগ হয়ে যায়।ও যে ঢাকাতে যেয়ে ঢাবিতে পরিক্ষা দিয়ে এসেছে সেটাও আমি জানতাম না।গ্রামে তখন হাতে গোনা কয়েকজন ইউনিভার্সিটি তে পড়তো।বাকি সবাই স্কুলের গন্ডি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল।কেউ কেউ কলেজ পর্যন্ত পড়তো এই যা।অবনী প্রথম সেমিস্টার গ্রামে থেকেই পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।জাস্ট পরিক্ষার সময় যেয়ে পরিক্ষা দিয়ে আসবে।আমি ওর জন্য যাবতীয় সব বই কিনে এনে গ্রামে দিয়ে যাই।তারপর মাঝে ছয়মাস আর কোনো খোঁজখবর পাইনি ওর।তখন তো ফোনের যুগ ছিল না।তখন ছিল চিঠির যুগ।যাই হোক ঠিক ছয়মাস পরে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রাম থেকে বাবার দেওয়া একটা চিঠি পাই আমি।বাবার দেওয়া চিঠিটা আমি যখন পড়ি তখন ধরনীর বুকে তমসা নেমেছে।চিঠিটা পড়ে শেষ করতেই আমার পৃথিবী থমকে যায়।আমি এক কাপড়েই বের হয়ে আসি গ্রামের উদ্দেশ্যে।বুকের মাঝে তখন ক্ষণে ক্ষণে উঁকি দিয়ে উঠছে মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়।সেইসময় আমি টিউশন করে নিজে চলতাম।বাবার থেকে ইচ্ছে করেই টাকা নিতাম না।মাসের শেষের দিকে হওয়ায় হাতে টাকাও ছিল না।আমার এক বন্ধুর থেকে টাকা ধার নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসি।কপাল ভালো থাকায় ওই রাতের শেষ বাসটা পেয়ে যাই।গ্রামে এসে পৌঁছায় রাত বারোটার সময়।অন্যদিন ওই সময়ে পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ হয়ে থাকে।কিন্তু ওইদিন গ্রামের প্রতিটা কোণায় চলছিল চাঁপা কানাঘুষা।বাড়ির পরিবেশ তখন থমথমে।বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই দেখি বধুবেশে চোখের কাজল লেপ্টে চোখ মুখ ফুলিয়ে শাকচুন্নী সেজে মাটিতে বসে আছে অবনী।শাড়ির বড় আঁচল মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে।সেদিন চাঁদের ভরা পূর্ণিমার আলোয় অবনীর ওই রুপে আবারও নতুন করে প্রেমে পড়ি।ছোটকাকা আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে তিনি পার পাননি।সেদিন রাতেই আমার সাথে অবনীর বিয়ে হয়।বাধ্য হয়ে আমার মতো বেকারের হাতেই অবনীকে তুলে দেন।তার ঠিক দুই দিন পরেই ছোট কাকা স্ট্রোক করে মারা যান।ছোট কাকা মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরেই ছোট চাচি শাহিন কে নিয়ে নদীর ওপারে কুসুমপুরে উঠে যান নিজের বাবার ভিটেতে।অবনীকে নিয়ে আমিও ঢাকাতে পাড়ি জমায়।সেখানে শুরু হয় আমাদের দু’জনের জীবনযুদ্ধ।নতুন করে একটা দুই রুমের বাসা নিই।তোমার মায়ের কাছে তখনও আমি স্বামীর মর্যাদা পাইনি।আলাদা রুমে থাকবে সে।সুযোগ থাকলে ও কখনোই আমাকে বিয়ে করতো না।কাউকে ভালো না বাসলে বিয়ে করা যায় নাকি!১৯৯২ সালের কথা আমরা তখনও আলাদা ঘরেই থাকতাম।তবে ততদিনে আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের মতো হয়ে গেছিল।অবনী টিউশন আর আমি ছোট্ট একটা চাকরি করে দিব্যি ভবিষ্যৎহীন একটা সম্পর্ক টেনে বেড়াচ্ছিলাম।যেই সম্পর্কের শেষে কি আছে আমরা কেউই জানতাম না।আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে এমনও সিদ্ধান্ত অবনী নিয়েছিল।আমি ওর মতের সাথে সহমত প্রকাশ করলেও কখনোই ডিভোর্স দিতাম না।শখের নারীকে পেয়ে ছেড়ে দেওয়ার মতো বোকামি কেউ করে নাকি!কথাগুলো বলে কিছুক্ষণের জন্য থামেন জলিল শেখ।মুখমণ্ডলে ফুটে ওঠে তীব্র বেদনার ছাপ।

একই ছাদের নিচে বসবাস করতে করতে আমরা দুজন কখন যে একে অপরের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম সেটা আমরা বুঝতে পারেনি।বিষয়টা উপলব্ধি করতেই আমরা দু’জনে একসাথেই বাকিটা জীবন পার করার সিদ্ধান্ত নিলাম।একটা সুন্দর মিষ্টি সংসারের স্বপ্ন দেখলাম।অবনী মাস্টার্স শেষ করার এক বছর পরেই ওর স্কুলের চাকরি টা হয়ে যায়।পোস্টিং পড়ে পাশের জেলার শেরপুর গ্রামে।তোমার মা শেরপুর থাকতো আর আমি ঢাকাতে।সেখান থেকে আনন্দপুরে ট্রান্সফার করতে দুই বছর সময় লেগে যায়।তারপর দু’জনে একসাথে এই গ্রামেই ফিরে আসি।যেই মেয়েটা নিজের মুখ লুকিয়ে গ্রাম ছেড়েছিল,ঠিক সেই মেয়েটাই সেদিন বুক ফুলিয়ে গ্রামের গর্ব হয়ে ফিরে আসে।দীর্ঘ দশ বছর পরে গ্রামে পা দিয়ে আমরা আগের মতো আর কোনো কিছুই পাইনি।আমরা গ্রামে আসার এক বছরের মাথায় তোমার নানিমনি মারা যান।তার দুই বছর পরে বাবা মারা যান আর মাধবী হওয়ার এক বছর আগে আম্মাও মারা যান।ভাইগুলো সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা করে আমাকে একা করে দেয়।এই জগৎ সংসারে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়ি।ততদিনে আমি পাকা রাজনীতিবিদ হয়ে গেছি।বাবা রিটায়ার্ডের পর একটা ছোট্ট ব্যবসা শুরু করেছিল।সেটার হাল ধরি আমি।তারপর আস্তে আস্তে সবটা সামলিয়ে উঠে এই সুখের মুখ দেখেছি।”

মাঝে থেমে থেমে প্রায় দুই ঘন্টা সময় নিয়ে সবটা বলে শেষ করেন জলিল শেখ।বাবা মায়ের কষ্টের কাহিনী শুনে মেহরিমা ততক্ষণে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে।কাঁদতে কাঁদতেই বেডের পাশে রাখা টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে খাইয়ে দেয় বাবাকে।অতঃপর নিজেকে সামলিয়ে মনের মধ্যে ঘুরপাক করতে থাকা প্রশ্ন গুলো করে ফেলে।

“বাবা তুমি মাঝে অনেক কথা বললে না যে! খালামনির কার সাথে কোথায় বিয়ে হয়েছিল?দাদু চিঠিতে কি এমন লিখেছিল যে তুমি গ্রামে ছুটে আসো?তখন কি খালামনি কে দেখতে পাওনি তুমি?মায়ের সাথে কি ঘটেছিল বাবা?নানুভাই খালামনির প্রতি কম দায়িত্বশীল কেনো ছিল?তোমার….”

মেহরিমাকে নিজের কথা শেষ করতে না দিয়েই জলিল শেখ বলেন,

“বাকিটা তোমার মায়ের থেকে শুনে নিও।আমার ঘুম পাচ্ছে।ঘুমাবো আম্মা।”

বাবার মুখে ঘুমের কথা শুনতেই মেহরিমা আর কথা বাড়ায় না।বাবা তো অসুস্থ।তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত।পাশে বসে থাকা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।ঘর থেকে বের হতেই সামনে পড়ে মাধবী।ছলছল চোখজোড়া নিয়ে মেহরিমার দিকে তাকিয়ে আছে।মেহরিমা মাধবীকে আগলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।অবনী শেখ আজ না জানা অনেক সত্যের মুখোমুখি হন।এই মানুষ টা দীর্ঘদিন ধরে ভালোবেসে গেছে অথচ উনি টেরই পাননি।সেই দিনগুলোতে কতশত খারাপ ব্যবহারই না করেছেন।আর এই মানুষটা সব মুখ বুজে সহ্য করে গেছে।অতীতের কথা ভাবতেই বুকটা ভার হয়ে ওঠে।

“আমি ভেবেছিলাম সেদিন তুমি নিজের দায়বদ্ধতা থেকে,আমায় কলঙ্কিত হওয়া থেকে বাঁচাতে বিয়ে করেছিলে।”

“আমি কথাগুলো বলার আগ পর্যন্তও তো তুমি এটাই ভাবতে।”

“কখনো তো সত্যটা বলনি আমায়।”

“তুমিও তো কখনো সত্যটা জানতে চাওনি।”

অবনী শেখ চুপ হয়ে যান।আর কোনো কথা না বলে জলিল শেখকে শুইয়ে দিয়ে ঘরের লাইট অফ করে নিজেও শুয়ে পড়েন। কিন্তু দু’চোখের পাতা এক করতে পারেন না।বুকের মাঝে চাপা কষ্ট জমা হয়।

“তোমাকে পেয়ে আমি পরিপূর্ণ।ভাগ্যিস সেদিন আমার সাথে দূর্ঘটনা ঘটেছিল নাহলে আমার এই জীবনটা এতো সুন্দর করে কখনোই কাটানো হতো না।আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।আমার দুই সন্তানের বাবা অনেক ভালোবাসি তোমায়।তুমি ছাড়া আমার তীর হারা জীবনটা কখনোই এতো সুন্দর হতো না।ওইদিন তো এক মূহুর্তের জন্য জীবন কি জিনিস,এই জীবনের কি অর্থ সবটা ভুলতে বসেছিলাম।তুমিই আমায় নতুন করে জীবনের মানে,জীবনের মূল্য বুঝিয়েছো‌।নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছো।”

অবনী শেখের হঠাৎ করে কি হয়ে যায় উনি নিজেও বুঝে উঠতে পারেন না।নিজের বলা কথাগুলোতে নিজেই হতবাক হয়ে যান!এতো বছর না বলা কথাগুলো আজ কিভাবে বলে ফেললেন!জলিল শেখের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।পঁয়ত্রিশ বছরের সংসার জীবনে এই কথাটা শুনতে উনি কতোই না মরিয়া হয়ে ছিলেন।আজ সেই স্বপ পূরন হলো।এখন মরলেও আর কোনো আফসোস থাকবে না।

“আমার ড্রয়ারে একটা ডায়েরি আছে অবনীমালা।যখন আমি থাকবো না ওটা তোমার সঙ্গী হবে।”

অবনীমালা ডাকটা অবনী শেখকে শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।জলিল শেখ আগে এই নামেই ডাকতো।বিয়ের পরে আর কোনোদিন এই নামটা ওনার মুখে শোনেননি।অবনী শেখ ছলছল চোখে জলিল শেখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।জলিল শেখের অধরে ক্ষীণ হাসির রেখার দেখা মেলে।

#চলবে____

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_২৮
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ❌

মেহরিমা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।পাশেই ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে বায়োলজি বিচিত্রা পড়ছে মাধবী।হঠাৎ মেহরিমার ফোনটা নিজস্ব কর্কশ শব্দে বেজে ওঠে।মাধবী ভ্রু কুঁচকে তাকায় মেহরিমার দিকে।ফোনটা বেজেই চলেছে কিন্তু মেহরিমার সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।সে গভীর তন্দ্রায় তলিয়ে আছে।কলটা কেটে যেতেই মাধবী পুনরায় পড়াতে মনোযোগ দেয়।সেকেন্ড পেরোতেই আবারও ঝংকার তুলে ফোনটা বেজে ওঠে। মাধবী এবার বেজায় বিরক্ত হয়।

“এই মেহু,শুনছিস?তোকে কখন থেকে কে যেনো কল দিয়েই যাচ্ছে।রিসিভ কর।”

মাধবীর কথায় মেহরিমা নড়েচড়ে উঠে আবারও তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।ওর ঘুম যেনো ইদানিং বেড়ে গেছে।মাধবী তীব্র বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।ফোনের স্ক্রিনে হৃদিতের নাম দেখতেই শুকনো ঢোক গেলে।এই মানুষ টাকে মাধবী সবচেয়ে বেশি ভয় পায়।হৃদিত মাধবীর সাথে রেগে কথা বলেছে কিংবা খারাপ ব্যবহার করেছে এমনটা না।অকারণেই ভয় পায়।আসলে হৃদিতের শানিত চোয়াল,গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর,নীল চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মাধবী কে ভেতর থেকে নাড়িয়ে তোলে।কথা বলতে গেলেই হাঁটু কেঁপে ওঠে।মাধবী মাঝে মাঝে ভেবে পায় না মেহরিমা ওমন কঠিন একটা মানুষের সাথে সংসার কিভাবে করছে!মাধবীর ভাবনার মাঝেই কল কেটে যেয়ে তৃতীয় বারের মতো ফোনটা বেজে ওঠে।মেহরিমার কোনো হেলদোল না দেখে তীব্র ভয় নিয়ে কল রিসিভ করে মাধবী।

“ঘুমিয়ে পড়েছিস জান?আই মিস ইয়্যু আ লট।আ’ম ওয়েটিং।পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাইরে আসবি।”

হৃদিতের মুখে এমন কথা শুনে মাধবী বেশ লজ্জা পায়।নিজের মনের মাঝে থাকা প্রশ্নের উত্তর গুলো খুব সহজেই পেয়ে যায়।এই জন্যই তার ছোট্ট বোনটা হৃদিত ভাইয়া বলতে পাগল।মাধবী মুচকি হাসে।

“ভাইয়া আমি মাধবী বলছি।মেহু ঘুমিয়ে আছে। অনেকবার ডেকেছি তবুও উঠলো না।”

কল মাধবী রিসিভ করাতে হৃদিতের মাঝে কোনো বিচলিত ভাব দেখা গেল না।সবসময়ের মতো গম্ভীর তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর।

“ওর শরীর ঠিক আছে?রাতে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেছে?”

“ভাইয়া ও ঠিক আছে।রাতেও ঠিকমতো খেয়েছে।হয়তোবা একটু টায়ার্ড থাকায় ঘুমাচ্ছে।”

“ওকে।তুমি একটু কষ্ট করে এসে মেইন গেইট টা খুলে দেও।”

“আচ্ছা ভাইয়া।”

মাধবীর জবাব শুনেই কল কেটে দেয় হৃদিত। মাধবী যেয়ে মেইন গেইট খুলে দেয়।হৃদিত গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।অতঃপর গেইট ঠিকঠাক ভাবে লক করে নিজের রুমে চলে যায় মাধবী।মেহরিমার রুমে যেয়ে ওর আর কোনো কাজ নেই।হৃদিত মেহরিমার রুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়।অ্যাট ফার্স্ট ওয়াশ রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।দরজা খোলাই রাখে।ওয়াশ রুমের পানি পড়ার শব্দে মেহরিমার ঘুম হালকা হয়ে যায়।হাতড়ে পাশে থাকা বালিশ টা দিয়ে কান চেপে ধরে‌।কিন্তু তবুও শব্দের হাত থেকে বাঁচতে পারে না।শেষমেষ বিরক্ত হয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,

“ও মাধুপু তুমি আমার সাথে এমন কেনো করছো? ওয়াশ রুমের দরজা টা বন্ধ করে দেওনা প্লিজ।আমি ঘুমাতে পারছি না।”

তখনই হৃদিত ফ্রেশ হয়ে বের হয়।মেহরিমার কথাগুলো শুনতেই অধরে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। ছোট্ট এই বিড়াল ছানাকে ছাড়া একদমই চলছিল না।মনের মধ্যে হাঁসফাঁস লাগছিল।একটুও শান্তি পাচ্ছিল না।হৃদিত কোনো কথা না বলে রুমের লাইট অফ করে দেয়।মেহরিমার পাশে শুয়ে ওর ব্লাংকেটের মধ্যে ঢুকে পড়ে‌।মেহরিমার কোমর আকড়ে ধরে নিজের সাথে ঘনিষ্ঠ করে গলায় মুখ ডুবিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।আকস্মিক ঠান্ডা হাত,ঠান্ডা ঠোঁ টে র আক্রমনে মেহরিমার তন্দ্রা ছুটে যায়।ভয়ে আত্মাটা লাফিয়ে ওঠে।পরক্ষণেই অতি পরিচিত ম্যানলি পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই মেহরিমা শান্ত হয়।হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“আপনি কখন আসলেন?আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন তো আপনি ছিলেন না!”

“উমম!কথা কম বলে ঘুমা জান।তোর তো আজকাল ঘুম বেড়েছে।ঘুমিয়ে পড় আর আমাকেও ঘুমাতে দে।”

“আপনাকে কে বললো আমার ঘুম বেড়েছে?”

“কাউকে বলতে হবে কেনো? আমার কি চোখ নেই?”

“না সেটা বলিনি তো আমি।”

“আর একটাও কথা না। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়।নাহলে কিন্তু আজ রাতে আর ঘুমাতে পারবিনা।”

ব্যস মেহরিমা চুপ হয়ে যায়।ছোট্ট বিড়াল ছানার মতো হৃদিতের বুকে জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।মেহরিমার কাজে হৃদিত মুচকি হাসে।কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।
_____

সকালের নাস্তার পর্ব সেরে মেহরিমা ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে।মাধবী পড়াশোনায় ব্যস্ত।অবনী শেখ স্কুলে গেছেন।হৃদিত জলিল শেখের সাথে কথা বলছে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে মেহরিমা হাতের কাজ ফেলে এসে ঘরের দরজা খুলে দেয়।আর অমনিই তাবান, তাইফ,তৃধা হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে।ওদের সকল কে দেখতেই মেহরিমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।তৃধা মেহরিমাকে জড়িয়ে ধরে।তাবান,তাইফ সোফায় বসে।

“তোরে খুব মিস করছি মেহু বেইবি।তোরে ছাড়া আমাদের বাড়িটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে।”

“ভাবী তৃধু কিন্তু ঠিক কথা বলেছে।আপনাকে ছাড়া আমাদের আড্ডা জমে না একদম।”

তাবানের কথায় মেহরিমা মুচকি হেসে বলে,

“বাবা আরেটু সুস্থ হলেই আমি ও বাড়িতে চলে যাবো ভাইয়া।আজ রাতটা এখানেই থেকে যান।সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া যাবে।”

“আচ্ছা ভেবে দেখবনি।ভাবী আপনার বোনটা কোথায়?ওরে দেখছি না তো?বাড়িতে নেই নাকি?”

তাইফের কথা শুনে ওর মাথায় গাট্টা মারে তাবান। ফিসফিসিয়ে বলে,

“তুই ওরে দেখার জন্যই এসেছিস তাই না?সত্যি করে বল কিন্তু।”

তাইফ তাবানের মতোই ফিসফিস করে বলে,

“হ্যাঁ রে‌।এই কয়দিন তো কোচিংয়ে যাচ্ছে না।তাই এ বাড়িতে আসার সুযোগ খুঁজছিলাম। কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে সব বৃথা যাবে।”

“ধান্দাবাজ ভাই আমার।”

“এই ভাইয়া তোমরা দু’জন কি ফুসুরফুসুর করছো বলোতো?একটু জোরে বলো আমরা দুজনও একটু শুনি।”

“শাকচুন্নীর মাথায় কয়টা চুল থাকে সেটার হিসাব করছিলাম দু’জনে মিলে।”

তাবানের কথা শুনে তৃধা রাগে কিড়মিড় করে ওঠে।ভাই বোনের মাঝে বড়সড় ঝামেলা বাঁধার আগেই মেহরিমা পরিস্থিতি ঠিক করতে বলে,

“সামনে আপুর অ্যাডমিশন টেস্ট তো তাই রুমে বসে পড়ছে।”

তাবান,তাইফ সমস্বরে বলে,

“ওওও আচ্ছা ভাবী।”

ভাইয়া আপনারা একটু বসুন আমি আসছি।এক মিনিটের ব্যবধানেই তৃধার রাগ পড়ে যায়।আগের ন্যায় মুখটা হাস্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।মেহরিমার পিছন পিছন কিচেনে চলে যায়।হাতে হাতে নাস্তা গুছিয়ে দু’জনে একসাথে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসে।একথা,সেকথা বলতে বলতে বসে যায় আড্ডার আসর।ড্রয়িংরুমে অনেকগুলো মানুষের কথার শব্দ পেয়ে ঘরের বাইরে আসে মাধবী।সবার জোরাজুরিতে আড্ডায় সামিল হয়।তাইফের ইচ্ছাটাও পূর্ণ হয়ে যায়।সকলের হাসির শব্দ শুনে হৃদিত ততক্ষণে দরজার নিকট এসে দাঁড়িয়েছে।মেহরিমাকে সকলের সামনে খিলখিল করে হাসতে দেখে ভালো,ফুরফুরে মেজাজটা সেকেন্ডের ব্যবধানে বিগড়ে যায়।এই মেয়েটা একটা কথাও শোনে না।কতো করে বলেছে যে শুধুমাত্র হৃদিতের সামনে হাসবে।ওর এই সুন্দর হাসি যেনো আর কেউ না দেখে।এটা দেখার অধিকার শুধুমাত্র হৃদিতের।কিন্তু এই মেয়ে শুনলে তো!

“মেহু বেইবি ক্লাসে অ্যাটেন্ড করবি না আর?”

তৃধার কথাটা আগুনে ঘি ঢেলার মতো কাজ করে।মেহরিমা কে অ্যানাবেলা,লিটল কিটি, সানসাইন, বাটারফ্লাই,অ্যাঞ্জেলা,বেইবি,জান,সোনা,মনা,পাখি,হানি যত নিকনেইম আছে সেগুলো ডাকার অধিকার শুধুমাত্র হৃদিতের।আর কারোর না।হৃদিত
সামনে এগিয়ে আসে।হৃদিতকে দেখতেই তৎক্ষণাৎ সবার হাসি থেমে যায়।চুপ হয়ে যায় সকলে।

“ওর নাম কি তৃধু?”

হৃদিত,মেহরিমার দিকে তাকিয়ে বলে কথাটা।হৃদিতের অতীব গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বর।হঠাৎ এমন আজগুবি প্রশ্নে সবার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে।মেহরিমার নাম জানতে চাইছে তাও আবার হৃদিত!হৃদিতের তীক্ষ্ণ চাহনির স্বীকার হয়ে তৃধা আমতা আমতা করে বলে,

“মেহু।”

“টেল মি হার ফুল নেইম।”

“মেহরিমা শেখ নীলাক্ষী।”

“সবাই ওরে কি নামে ডাকে?”

“মেহু,শুধু আন্টি ডাকে নীলাক্ষী।”

“তুই কি ডাকিস?”

এ পর্যায়ে এসে তৃধা চুপ হয়ে যায়। ইতস্তত বোধ করে।সময় নিয়ে জবাব দেয়।

“মেহু বেইবি।”

“ওর নাম কি ওইটা?”

“না ভাইয়া।”

“তাহলে ওই নামে কেনো ডাকিস?”

“আর ডাকবো না ভাইয়া।”

“গুড গার্ল।”

হৃদিতের ব্যবহারে মেহরিমা হতভম্ব হয়ে যায়!আজ যেনো হৃদিতের এই ব্যবহার মোটেও স্বাভাবিক লাগে না।বাকিরা হৃদিতের জেলাসি লেভেল দেখে মুচকি মুচকি হাসে।তাবান,তাইফ উপরে উপরে হাসলেও ভেতরে ভেতরে ভয়ে কুঁকড়ে আছে।তৃধার মুখেও মুচকি হাসি।মেহরিমার হঠাৎ’ই সেদিনের রাতের কথা মনে পড়ে যায়।ইশশ!কাজের চাপে সবটা ভুলে গেছিল।বিয়ের পরে হৃদিতের ঘটানো সব অস্বাভাবিক ঘটনা গুলো মেহরিমার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।সব কিছু কেমন যেনো একসূত্রে গাঁথা মনে হয় ওর কাছে।

“আমি সন্ধ্যায় আসবো।রেডি হয়ে থাকিস।তোকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো।”

মেহরিমা হতভম্ব অবস্থায়’ই হ্যাঁ সূচক মাথা দোলায়।মন মস্তিষ্ক পড়ে আছে অন্যদিকে।হৃদিত,তাবান আর তাইফ কে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।হৃদিত ওদের নিয়ে চলে যেতেই তৃধা মেহরিমাকে এটা ওটা বলে নাড়তে শুরু করে।মেহরিমা সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বললেও মস্তিষ্ক হাতড়ে বেড়াচ্ছে অজানা এক সত্য উদঘাটনে।

______

সকাল সকাল রেডি হয়ে বসে আছে আরিশা। শ্রেয়া চৌধুরী ইউনিভার্সিটিতে গেছেন‌।উনি রেজাইন লেটার জমা দিবেন।সরকারি চাকরি ছাড়ার মূলত একমাস আগে রেজাইন লেটার জমা দিয়ে থাকে সকলে।যাতে কোনো টাকা না লাগে।কিন্তু শ্রেয়া চৌধুরী এক সপ্তাহের মধ্যেই চাকরি থেকে অবসর নেবেন।টাকার তো আর অভাব নেই।দেশের একমাত্র তথ্য মন্ত্রীর মা বলে কথা।ক্ষমতা,টাকা এ দুটো জিনিস থাকলে আর কি লাগে!আয়াশ মায়ের সাথে সহমত।বয়স হয়েছে এখন ঘুরে ফিরেই বাকিটা জীবন কাটাক।তাহলে মন,মস্তিষ্ক দুটোতেই স্বস্তি মিলবে।আয়াশ নিজেকে পরিপাটি করতে করতে আরিশার দিকে আড়চোখে তাকায়।

“এমন সংয়ের মতো সেজে বসে আছো কেনো?”

“গ্রামে যাবো।”

“কিহ্!কে নিয়ে যাবে তোমাকে?”

“তুমি তো আর নিয়ে যাবে না।তাই ড্রাইভারের সাথে যাবো।”

“ড্রাইভারের সাথে সত্যিই গ্রামে যাবে?নাকি অন্য কোথাও?”

“আজব!অন্য কোথায় যাবো?”

“যেখানে ইচ্ছা যাও কিন্তু তোমার জন্য যদি আর কারোর জীবনে এক বিন্দু পরিমাণও সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেদিন’ই আমার জীবনে তোমার শেষ দিন।”

“আমাকে থ্রেট দিচ্ছো তুমি?”

“হ্যাঁ,কথা না শুনলে কাজেও করে দেখাবো।”

“কিসের এতো অহংকার তোমার? টাকার? ভুলে যেওনা আমার বাবারও কম টাকা নেই।এই দেশের বানিজ্য মন্ত্রী আমার বাবা।”

“ওরে বাবা তাই নাকি!তুমি না বললে তো জানতামই না তোমার বাবা ওতো বড় একজন মানুষ।ওনার সাথে একবার দেখা করতে হয় দেখছি।”

“মজা করবে না একদম।তোমাদের থেকে কোনো অংশে কম না আমার বাবা।”

“হ্যাঁ আমিও তো সেটাই বলছি।”

“বললে না তো কিসের এতো দাপট তোমার?এই সুদর্শন চেহারার?”

“মনের মধ্যে ভালোবাসা থাকলে সৌন্দর্যের প্রয়োজন পড়ে না সোনা।তবুও একটু বলি ওকে?আমি রাস্তায় বেরোলে মেয়েরা আমার দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে।নেহাতই একটা বিয়ে করে ফেলেছিলাম।আর আমার অহংকার হচ্ছে,আমার নিঃস্বার্থ ভালবাসা।যেটা তোমার আর তোমার সো কলড বাবার মধ্যে নেই।তোমাদের নেশা মানুষ ঠকানো।টাকা দিয়ে সবকিছু হয়না আরু।”

আয়াশের কথায় আরিশার চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে।গলায় কান্না আটকে বলে,

“তুমি কি এখনও আমাকে আগের মতোই মনে করো?”

“তুমি তো আগের মতোই আছো।এখানে মনে করার কি আছে?আ’ম অলরেডি লেইট।সাবধানে যেও।”

আয়াশ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।ওর যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আরিশা।চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। অস্পষ্ট স্বরে বলে,

“ভালোবাসা কি জোর করে হওয়ার জিনিস?আমিও তো তোমায় ভালোবাসতে চাই।কিন্তু অতীত সেটাতো আমার পিছু ছাড়েনা।তোমার প্রতি দেহের টা ন অনুভব করলেও মনের টা ন অনুভব করতে পারিনা।তোমাদের ধ্বং স করতে এসে তোমার পবিত্র ভালোবাসাতে আমি নিজেই ধ্বং স হচ্ছি প্রতিনিয়ত।নিজের উদ্দেশ্যে’ই ভুলতে বসেছি আমি।ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়!”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে