#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_১৯
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌
রৌদ্রজ্জ্বল একটা দিন।বইছে ঠান্ডা ঝিরিঝিরি পবন।হৃদিত মেহরিমা বেরিয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।মেহরিমার জেদের কাছে একরকম হেরে গাড়ির জানালা খোলা রেখেছে হৃদিত।মেহরিমা জানালা ঘেসে বসে আছে।চোখজোড়া জানালার বাইরে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত।ঠান্ডা বাতাস জানালা দিয়ে প্রবেশ করে ক্ষণে ক্ষণে মেহরিমার তনু মন জুড়িয়ে দিচ্ছে।মেহরিমা আবেশে চক্ষুযুগল বন্ধ করে নেয়।গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দেয়।এভাবেই কেটে যায় কিছুক্ষণ।হৃদিত ড্রাইভিংয়ে ব্যস্ত।
“শরীর খারাপ লাগছে?”
হৃদিতের কন্ঠস্বর শুনতেই মেহরিমা চোখ খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে হৃদিতের দিকে তাকায়।জবাব দেয়,
“উহু।”
“তাহলে?”
“কিছু না।”
“তোর বিয়ে করার এখনো বয়স হয়নি।একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করে বড্ড বিপদে পড়েছি আমি।”
হৃদিতের কথা শুনে মেহরিমা চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকায়।অতঃপর অ্যাটিটিউড নিয়ে বলে,
“আ’ম ১৯+। অবভিয়াসলি আমার বিয়ের বয়স হয়েছে।”
“উহু হয়নি।”
“তাহলে বিয়ে কেনো করেছেন?”
“তোকে হালাল ভাবে চাই তাই।ইয়্যু নো জান হালাল ইজ অলওয়েজ বেস্ট।”
হৃদিতের কথা শুনে মেহরিমা না চাইতেও ওর মনটা ভালো হয়ে যায়।গতকালের ঘটনার পর থেকে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে মেহরিমার।না চাইতেও ওই ঘটনাটাই চোখের পর্দায় ভেসে উঠছে বারংবার।মেহরিমা মুচকি হাসে।
“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া আপনি।”
“তুই আমার ভালোবাসার আদুরে ধ্বংসবতী।সবার জীবনে আসে মায়াবতী।আর আমার জীবনে এসেছে ধ্বংসবতী।তোকে ভালোবেসে বার বার,শতবার, সহস্র বার ধ্বংস হতে রাজি আমি।”
হৃদিতের বলা কথাগুলো মেহরিমার মাথার একহাত উপর দিয়ে যায়।কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
“ধ্বংসবতী কে আবার কে ভালোবাসে?নিজের ধ্বংস স্বচক্ষে দেখার এমন ইচ্ছাও আবার কারো হয় নাকি!”
“আমি ভালোবাসি আমার ধ্বংসবতী কে।তোকে ভালোবেসে শুধু নিজের ধ্বংস কেনো নিজের মৃ ত্যু ও স্বচক্ষে দেখতে রাজি আমি।”
হৃদিতের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারে না মেহরিমা।তবে কথাগুলো শুনতেই হঠাৎ’ই বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়।সত্যিই কি এই মানুষটার ধ্বংসের কারণ হবো আমি?ওনাকে ধ্বংস করার আগেই আমার মৃত্যু হোক তবুও আমার দ্বারা এমন কোনো কাজ না হোক।মেহরিমাকে ঠিকমতো কষ্টটা উপলব্ধি করতে না দিয়েই ওর ফোনটা নিজস্ব শব্দে ঝংকার দিয়ে ওঠে।মেহরিমা পার্স থেকে ফোন বের করে।ফোনের স্ক্রিনে নজর রাখতেই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘শাকচুন্নী’ শব্দটা।মেহরিমা তৎক্ষণাৎ কল কেটে দেয়।কল রিসিভ করলেই এই মেয়ে নির্ঘাত উল্টাপাল্টা বকা শুরু করবে।
“কে ছিলো?”
হৃদিতের কথায় মেহরিমা ভাবনা চ্যুত হয়।
“তৃধা।”
শাকচুন্নীর নাম নিতেই আবারও ফোনটা বেজে ওঠে।মেহরিমা পূর্বের ন্যায় কল কাটতে নিলেই শুনতে পাই হৃদিতের কন্ঠস্বর।
“রিসিভ কর ফাস্ট। লাউড স্পিকার অন কর।”
হৃদিতের কথামতোই সবটা করে মেহরিমা।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে তৃধার ক্যাট ক্যাটে কন্ঠস্বর।
“কিরে সমবয়সী ভাবী!আমার ভাইকে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলি?গতকাল থেকে কল দিয়েই যাচ্ছি রিসিভ করছিস না।সে যাই হোক তোর বাসর রাত কেমন কাটলো?কিছু মিছু কি হয়েছে তোদের মাঝে?অ্যাই শোন একদম মিথ্যা কথা বলবি না কিন্তু। যদিও ভাইয়াকে নিয়ে আমার বিশ্বাস নেই।কি রে চুপ করে গেলি কেনো?”
“এই থাম।আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিয়েছিস তুই?”
তৃধার কথায় মেহরিমা অত্যধিক লজ্জা পেয়ে যায়।হৃদিত মুচকি মুচকি হাসছে।হৃদিতের হাসি দেখে মেহরিমার মাটি ফাঁক করে ভিতরে ঢুকে যেতে মন চাইছে।মেহরিমার কথায় তৃধা দম নেয়।বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে।পরক্ষণেই কিছু একটা মনে পড়তেই বলে,
“ভাইয়া কোথায়?”
“আমার পাশে।”
“কল কি কোনোভাবে লাউড স্পিকারে দে..”
তৃধার কথা শেষ করতে না দিয়েই মেহরিমা জবাব দেয়,
“হুম।”
ব্যস অমনিই সাথে সাথে অপর পাশ থেকে কল ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।তৃধা কল কেটে শুকনো ঢোক গেলে।মেহরিমা কল রিসিভ না করায় এক প্রকার রেগে ওকে লজ্জায় ফেলানোর জন্যই ইচ্ছে করে কথাগুলো বলেছে তৃধা।এখন নিজের বুদ্ধিতে নিজেই বাঁশ খেয়ে গেছে।ভাইয়া কি ভাবলো! নিজের ইনোসেন্ট বোনটার এই রুপ মেনে নিতে নিশ্চয় খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়ার।তৃধার বুক ফেটে কান্না আসে।ধপাস করে ফ্লোরে বসে হাত পা ছড়ায়ে ছিটায়ে শব্দ করে কান্না করতে থাকে।তৃধার কান্নার শব্দে চৌধুরী পরিবারের সকলে উপস্থিত হয় ওর রুমে।তৃধা কল কাটতেই মেহরিমা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।আর সাথে সাথেই চোখ ধাঁধানো সেই সুন্দর টোল পড়ে থুতনি তে।হৃদিত মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে ওর অ্যানাবেলার দিকে।মেহরিমার হাসির শব্দ হৃদিতের শ্রবণেন্দ্রিয়ে ঝংকার তোলে।
“তোর মুখটা একটু এদিকে এগিয়ে নিয়ে আয় লিটল কিটি।”
মেহরিমা হাসতে হাসতে মুখটা হৃদিতের দিকে এগিয়ে দেয়।হৃদিত সাথে সাথে থুতনি তে টুপটাপ কয়েটকা চু মু খেয়ে বসে।তৎক্ষণাৎ মেহরিমার হাসি থেমে যায়।চোখ বড় বড় করে হৃদিতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“সিলমোহর মেরে দিলাম।তোর ওই সুন্দর গর্ত ওয়ালা থুতনির একমাত্র মালিক আমি।কখনো কারোর সামনে হাসবি না ঠিক আছে?তোর এই সুন্দর নজর কাড়া হাসি দেখার অধিকার শুধুমাত্র তাহমীদ হৃদিত চৌধুরীর।”
মেহরিমা হতভম্ব অবস্থায়’ই বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়।যার অর্থ ঠিক আছে।আরও এক ঘন্টা জার্নি করার পর ওরা হসপিটালে পৌঁছায়।মেহরিমাকে ডক্টর দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন নিয়ে একেবারে মেডিসিন কিনে সব ঠিকঠাক করে দু’জনে বড় একটা শপিং কমপ্লেক্সে আসে।দুহাত ভরে শপিং করেছে মেহরিমা।অবশ্য হৃদিতের পছন্দে,হৃদিতের ইচ্ছাতেই সব কিনতে হয়েছে।ছয়টা শাড়ি,সাতটা থ্রি পিচ,পাঁচটা ওয়াশ পিচ,পাঁচটা রেডিমেড প্যান্ট কাটিং সালোয়ার,ছয়টা হিল শু কিনেছে।সাথে কসমেটিকস,অর্নামেন্টস তো আছেই।এতকিছু কিনেছে ভাবতে যেয়েই মেহরিমা রিতিমত হাঁফিয়ে উঠছে।
“আমার কেনা শেষ।আর লাগবে না।”
“তুই না গতরাতে বললি অনেক শপিং করবি? এখনও তো কিছুই হয়নি কেনা।”
সেই সেইম আন্সার।প্রায় একঘণ্টা ধরে মেহরিমা এই এক কথা বলেই চলেছে আর হৃদিত ও সেইম আন্সার দিয়েই চলেছে।মেহরিমার রাগে দুঃখে কান্না পায়।কেনো যে গতকাল রাতে ওটা বলতে গিয়েছিলো!
“বিশ্বাস করুন। আমার খুব কেনা হয়েছে।শখ মিটেছে।এবার চলুন প্লিজ।আ’ম টায়ার্ড।”
মেহরিমার মুখের দিকে দুই সেকেন্ড মতো তাকিয়ে হৃদিত বলে,
“সত্যিই তো?”
“তিন সত্যি।”
“আচ্ছা চল।”
মেহরিমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। অতঃপর দু’জনে গাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।শপিং কমপ্লেক্সের একজন স্টাফ ওদের শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। ওতো গুলো ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে যেয়ে আনফরচুনেটলি একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে স্টাফের। সবগুলো ব্যাগ নিচে পড়ে যায়।মেয়েটার নিজের হাতে থাকা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিজের ড্রেসের উপরেই পড়ে।
“মূর্খের বাচ্চা দেখে চলতে পারিস না।দিলি তো আমার ড্রেস টা নষ্ট করে।উফফ এই ছোট লোকগুলো কে নিয়ে আর পারি না।জানিস এটা আমার পাপা আমেরিকা থেকে এনে দিয়েছিল।”
“ছরি ম্যাম।”
“কিসের ছরি হু?তোকে তো আমি দেখে নেবো।তুই জানিস এই শপিং মলের ওনার আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড।এক মিনিটেই তোর চাকরি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি আমি।”
“প্লিজ ম্যাম এমন করবেন না।এটার উপর দিয়েই আমার সংসার চলে।আমার বাবা নেই।আমার ছোট্ট একটা বোন আছে।”
ততক্ষণে হৃদিত মেহরিমা পেছন ঘুরে দাঁড়িয়েছে।মেহরিমা মেয়েটার দিকে দৃষ্টিপাত করে।হোয়াইট কালারের একটা লেডিস শার্ট আর লেডিস জিন্স পরা।হালকা বাদামী রঙের চুল গুলো কাঁধ ছুঁয়েছে।গায়ের রং ফর্সা।মেয়েটা কটমট করে আরও কিছু বলতে নিলেই মেহরিমা এগিয়ে এসে বলে,
“আপি ওনার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দেন প্লিজ।আর এরকম কখনো হবে না।”
“হু আর ইয়্যু?দেখে তো মনে হচ্ছে গ্রামের কোনো ছোট পরিবার থেকে উঠে এসেছিস।বস্তি একটা।এইসব ড্রেসের ভ্যালু বুঝিস তুই?যা সর এখান থেকে।”
মেয়েটার কথায় মেহরিমার চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে।তীব্র অপমানে উজ্জ্বল মুখমণ্ডল থমথমে ভাব ধারণ করে।হৃদিতের শানিত চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।মেহরিমা কে এহেন কথা বলায় স্টাফ টা ভয় পেয়ে হৃদিতের দিকে তাকায়।মেহরিমা আর কথা না বাড়িয়ে ওখান থেকে প্রস্থান করে।হৃদিতের নিকট এসে বলে,
“ভাইয়ার চাকরিটা বাঁচিয়ে দেবেন প্লিজ।শপিং মলের ওনার তো আপনার পরিচিত।কথা বলে দেখুন একটু।নিশ্চয় আপনার কথা শুনবে।আর আমি বাসায় যাবো।”
মেহরিমার কাঁদো কাঁদো কন্ঠস্বর।কোনোমতে কথাগুলো বের করে কন্ঠনালী দিয়ে।হৃদিত নিজেকে কিছুটা নরম করে বলে,
“তোর ফেভারিট ফুসকা খাবি না?”
“না।”
“আচ্ছা চল।”
হৃদিত মেহরিমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে দেয়।মেহরিমার ফোনের সাথে কানেক্ট করে দেয়।
“তুই গান অথবা যেটা ভালো লাগে সেটা শোন।আমি ওই ছেলের বিষয়টা একটু দেখে আসি।”
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসবেন।”
হৃদিত যেতে যেয়েও ফিরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে গানের প্লে লিস্ট অন করে দিয়ে যায়।মেহরিমা তীব্র মন খারাপ নিয়েই ছিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।হৃদিত চলে যেতেই মেহরিমা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।মেহরিমার কাছে থেকে সরে আসতেই হৃদিতের মুখমণ্ডল পরিবর্তন হয়ে যায়।কারো কাছে টেক্সট করতেই পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে শপিং মলের সামনে একটা বাইক এসে থামে।তৎক্ষণাৎ কোথাও একটা কল দেয় হৃদিত আর সাথে সাথে পুরো শপিং মলের সিসিটিভি ক্যামেরা অফ হয়ে যায়।সেই মেয়েটা তখনও কথা কাটাকাটি করছে স্টাফ টার সাথে।হৃদিত উপস্থিত হয় সেখানে। মেয়েটার দিকে টাকার বান্ডিল এগিয়ে দেয়।
“আই হোপ এই টাকা দিয়ে আপনার এটার থেকেও এক্সপেন্সিভ ভালো ড্রেস কেনা হয়ে যাবে।আর আপনার জানতে একটু মিস্টেক আছে।এই শপিং কমপ্লেক্সের এস্টাব্লিশার আপনার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও ওনার তাহমীদ হৃদিত চৌধুরী।এখন আসতে পারেন।রাহাত আমার গাড়ির ব্যাক ছিটে এগুলো রেখে আস যা।”
বিশ/একুশ বছরের ছেলেটা কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে ব্যাগ গুলো তুলে ওখান থেকে চলে যায়।মেয়েটা কিছু বলার জন্য হৃদিতের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই কিছুক্ষণের জন্য থমকায়!হৃদিতের চোখে সানগ্লাস পরা।পুরুষালি সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কিছু বলতে চেয়েও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারে না।হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নেয় শুধুমাত্র ওগুলোতে হৃদিতের স্পর্শ লেগে থাকায়।হৃদিত উল্টো পথে হাঁটা ধরে।মেয়েটা কিছুক্ষণ হৃদিতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর কিছু একটা ভাবতেই মুচকি হেসে গাড়ির পার্কিং প্লেসে চলে যায়।নিজের গাড়িতে উঠে বসতেই হঠাৎ মেয়েটার মুখে তরল কিছু উড়ে এসে পড়ে।এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে গাড়ি থেকে ছিটকে দূরে পড়ে যায়।দুপুরের সময় হওয়ার দরুন আশেপাশে মানুষের আনাগোনা কম।তবুও মেয়েটার করুণ চিৎকারে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মানুষের ঢল নেমে যায় পার্কিং প্লেসে।মেয়েটার পুরো মুখ ঝলসে গেছে।সেন্সলেস হয়ে নিচে পড়ে আছে।সাথে সাথে কয়েকজন মিলে ঠান্ডা পানি দিতে থাকে মেয়েটার মুখে।অতঃপর সময় ব্যয় না করে ওখান থেকে হসপিটালে নিয়ে চলে যায়।হৃদিত দূরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে।ঠোঁটে হিংস্র হাসি।এতক্ষণে বুকের মাঝের আগুন নিভে শান্তি অনুভব হচ্ছে।অ্যানাবেলার চোখের পানি এই শক্তপোক্ত বুকে আগুন ধরিয়ে দেয়।মেহরিমার কথা মনে পড়তেই দ্রুত কদমে গাড়ির নিকট এগিয়ে যায় হৃদিত।গাড়ির ডোর ওপেন করতেই মেহরিমার ঘুমন্ত মুখখানি চক্ষুগোচর হয়।হৃদিত মুচকি হেসে মেহরিমার কপালে ছোট্ট করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।ছিট টা আরেকটু হেলিয়ে শোয়ার জন্য কম্ফর্টেবল করে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
#চলবে_______
#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_২০
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ❌
একটা বড় রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায় হৃদিত।মেহরিমা এখনো গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন।হৃদিত হ্যান্ড ওয়াচে চোখ বুলায়।ঘড়ির কাঁটা দুটোর ঘরে প্রবেশ করেছে।সেই সকাল আটটায় খেয়ে বেরিয়েছে ওরা।মেহরিমা কে বারবার খাওয়ার কথা বললেও নাকোচ করে দিয়েছে।আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না। নাহলে অ্যানাবেলা সিক হয়ে পড়বে।কিন্তু ঘুমটাও ভাঙাতে ইচ্ছে করছে না হৃদিতের।ও অপারগ কি আর করার!আস্তে করে ধীরস্বরে ডাকে,
“জান!”
মেহরিমার কোনো নড়চড় নেই।গভীর তন্দ্রায় তলিয়ে আছে।হৃদিত আরেকটু এগিয়ে যেয়ে মেহরিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“জান!একটু উঠবি প্লিজ।”
গলায় কানে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতেই মেহরিমা নড়েচড়ে ওঠে।সময় নিয়ে পিটপিট করে বন্ধ চক্ষু যুগল মেলে তাকায়। নিজের এতোটা কাছে কোনো পুরুষের উপস্থিতি অনুভব করতেই চমকে দূরে সরে যায়।জানালা ঘেসে বসে পড়ে। ঘুমঘুম ভাব কেটে যেতেই হৃদিতের দিকে ভালোভাবে তাকায়।মেহরিমার করা কাজে হৃদিতের কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজের সৃষ্টি হয়।পরক্ষণেই কিছু একটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসে।
“লিটল কিটি ইটস মি।ইউর পার্সোনাল ম্যান।ডোন্ট বি অ্যাফ্রেইড।”
মেহরিমা নিজেকে ধাতস্থ করে।ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,
“আ’ম ছরি।আসলে ঘুমের ঘোরে বুঝে উঠতে পারেনি।”
“ইটস্ ওকে। এখন ফাস্ট দুই মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নে।খেতে হবে।”
হৃদিত একটা ওয়াটার বটল আর টিস্যু বক্স ধরিয়ে দেয় মেহরিমার হাতে।জানালার গ্লাস নামিয়ে দেয়।মেহরিমা ফ্রেশ হয়ে নেয়।অতঃপর দু’জনে মিলে রেস্টুরেন্টের ভিতরে যায়।হৃদিত মেনুকার্ড মেহরিমার হাতে দেয়।
“অর্ডার কর।”
মেহরিমা অস্বস্তিতে পড়ে যায়।হৃদিত খুব সহজেই সেটা বুঝে ফেলে।
“আমার কাছে পাস কর ওটা।”
মেহরিমা হাতে থাকা মেনুকার্ড হৃদিতের দিকে এগিয়ে দেয়।
“কি খাবি?”
“আপনার যেটা ভালো লাগে।”
“আমার তো তোকে ভালো লাগে।”
মেহরিমা ভড়কে যায়!হৃদিতের কথার মিনিং বুঝতে পেরেই কান দুটো গরম হয়ে ওঠে।লজ্জায় মুখটা নামিয়ে নেয়।হৃদিত মুচকি হাসে।কাচ্চি উইদ চিকেন রোস্ট,বোরহানি,জালি কাবাব,বিফ রেজালা,চাটনি,কোল্ড ড্রিঙ্কস অর্ডার করে। কিছুক্ষণের ব্যবধানে খাবার ও এসে যায়।খাবার দেখে মেহরিমার মাথা ঘুরে যায়।এতো খাবার কে খাবে!হৃদিত জোর করিয়ে খাওয়ায় মেহরিমা কে। খাবার পর্ব শেষ করে ওরা বেরিয়ে আসে রেস্টুরেন্ট থেকে।মেহরিমার দু’হাতে দুটো আইসক্রিম।একটা থেকে একটু একটু করে খাচ্ছে।হৃদিত মেহরিমাকে যত্ন সহকারে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
“তুই শিওর ফুসকা খাবি না?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।এখন ফুসকা খেতে গেলে মরেই যাবো।”
“হুশশ এই কথা নেক্সট টাইম যেনো আর না শুনি। আমার হাত থেকে এতো সহজে তোর মুক্তি নেই।”
“আচ্ছা বলবনা।”
হৃদিত আর কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভিং এ ফোকাস দেয়।মেহরিমা আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত।নিজের খাওয়া শেষ করে অন্য হাতের টা হৃদিতের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
“আপনার টা।”
“আমাদের মাঝে আবার আমার,তোর ও আছে নাকি?”
মেহরিমা থতমত খেয়ে যায়।
“আসলে আমি ওভাবে বলি নাই।”
“তাহলে কিভাবে বলেছিস?”
“আমি বোঝাতে চেয়েছি আমি তো একটা খেলাম। তাহলে এটা আপনার ভাগের হচ্ছে।”
“খাইয়ে দে।”
মেহরিমা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।
“আমি!”
“তুই ছাড়া আর কেউ আছে নাকি এখানে?”
মেহরিমা ইতস্তত করে হাতটা বাড়িয়ে দেয় হৃদিতের দিকে।হৃদিত ড্রাইভিং করতে করতে খেতে থাকে।মেহরিমা যত্ন সহকারে খাইয়ে দিতে থাকে হৃদিতকে।মেহরিমার চোখের আড়ালেই মুচকি হাসে হৃদিত।
_________
নিজের রুমে সকলের উপস্থিতি টের পেতেই তৃধার কান্না থেমে যায়। নিজের করা আরেকবারের বোকামিতে নিজেই বিরক্ত হয়। আয়েশা চৌধুরী দৌড়ে এসে মেয়েকে ঝাপটে ধরে।
“কি হয়েছে মা? এভাবে কাঁদছিস কেনো?”
আরেকপাশেই আতিয়া চৌধুরী এসে বসে। মুখে বলে,
“কি হয়েছে আমাদের তৃধুরাণীর? এভাবে কান্না করছিস কেনো মা?”
মা ছোটমায়ের কথায় বোকা হাসে তৃধা। দু’জন কে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কান্নার রিহার্সাল করছিলাম।মেহুর সাথে প্রাঙ্ক করবো তো তাই।হিহিহি।তোমরা ভয় পেয়ে গেছো?”
মেয়ের কথায় আয়েশা চৌধুরী রেগে যান।তৃধার পিঠে ধুম করে কিল বসিয়ে দিয়ে বলে,
“এভাবে কেউ রিহার্সাল করে?জান টাই বের হয়ে গেছিল আমার।”
আয়েশা চৌধুরীর সাথে তাল মিলিয়ে আতিয়া চৌধুরী বলে,
“এমন আর কখনো করবি না সোনা।এগুলো ঠিক না।আমরা সবাই কত ভয় পেয়ে গেছিলাম জানিস তুই?”
“ছরি।”
“আচ্ছা ঠিকাছে।দুপুরের খাবার খেতে আয়।”
কথাটা বলে আয়েশা চৌধুরী চলে যান।ওনার পিছু পিছু আতিয়া চৌধুরীও নিচে চলে যান।এতক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো শ্রেয়া চৌধুরী আর আরিশা।আয়েশা চৌধুরী,আতিয়া চৌধুরী চলে যেতেই ওনারা দু’জন ও প্রস্থান করেনা।বড়রা চলে যেতেই তাবান,তাইফ এগিয়ে আসে।
“সত্যি করে বল কিন্তু কান্না করছিলি কেনো?তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুই মিথ্যে বলেছিস।”
তাবানের কথা শুনে তাইফ বলে,
“তৃধুচুন্নী কারোর সাথে লাইন মেরে ছ্যাঁকা খাইছিস নাকি?”
“এই ভাইয়া তোমরা থামবে।আমি সত্যিই বলেছি। মিথ্যে কেনো বলতে যাবো।আজব!”
তৃধার কথা শুনে তাবান নিজের আটাশ পাটি দাঁত বের করে বলে,
“হয়তোবা!তোর মতো চুন্নীকে আবার কে পছন্দ করবে?”
কথাটা বলেই তাবান হো হো করে হেসে ওঠে।ওকে সঙ্গ দেয় তাইফ।তৃধা রেগে কটমটিয়ে বলে,
“তোমাদের বিয়ে হবে না দেখে নিও।আর বিয়ে হলেও তোমাদের বউ হবে চুন্নীদের প্রধান।দাঁত গুলো ইয়া বড় বড় হবে।হাতের নখ হবে এই দোতলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত।দেখতে হবে কুচকুচে কালো।মাথায় কয়েকটা চুল থাকবে সুতোর মতো।”
“এমন দোয়া দিস না বইন।তখন তুই নিজেই ভয় পেয়ে ঘর থেকে বের হতে পারবি নানে।তুই যে ভীতুর ডিম।”
তাইফের কথায় সুর মিলিয়ে তাবান বলে,
“ঠিক বলেছিস ব্রো।”
পুরো রুম জুড়ে আবারও হাসির রোল পড়ে যায়।
“তো..তোমরা একটা যাচ্ছে তাই।”
কথাগুলো বলেই রেগে গটগট পায়ে নিচে চলে যায় তৃধা।তৃধা চলে যেতেই দুই ভাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।বোনটাকে জ্বালাতে বড্ড ভালো লাগে কি না!
#চলবে