#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_১৭
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌
সময় দুপুর বেলা।ঘড়ির কাঁটা ঘুরে একটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে।চৌধুরী পরিবারের সবাই উপস্থিত হয়েছে শেখ বাড়িতে।আনন্দপুর থানার এসআই অমিত সাহাও জলিল শেখের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন।সবার মাঝে তিনিও উপস্থিত আছেন।মেহরিমা নিজের বাড়িতে আসতেই উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে।সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।হৃদিত শান্ত চোখে সবটা দেখছে।চোখ মুখ মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না।মেহরিমা এখানে এসে যেন হৃদিত কে ভুলতেই বসেছে।বিশ মিনিটের মধ্যে একবারও হৃদিতের খোঁজ নেয় নি।
অবনী শেখ,মাধবী আর মেহরিমা নাস্তা নিয়ে আসে সকলের জন্য।অবনী শেখ কে দেখতেই আরিফ চৌধুরী কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।অতীতের ক্ষতটা তাজা হয়ে ওঠে।পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নেয়।অন্য কারোর স্ত্রী কে নিয়ে ভাবতে মোটেও ইচ্ছুক নন তিনি।কিন্তু মন কি আর মস্তিষ্কের কথা শোনে!সে চলে তার নিজ ইচ্ছায়।শ্রেয়া চৌধুরী নিরব চোখে আরিফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছেন।এখানে এই বাড়িতে আসার একটুও ইচ্ছা ছিলো না ওনার।একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসেছে এখানে।স্ত্রী হিসেবে খুব সহজেই স্বামীর মনের অবস্থা বুঝতে পারে।নিজের করা ভুল গুলো প্রতিনিয়ত ওনাকে ভেতর থেকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।অবনী শেখ এইসবে নির্বিকার রয়েছে।মুচকি হেসে সকলের সাথে সালাম বিনিময় করে।ম্যানার্স রক্ষার্থে আরিফ চৌধুরীর সাথে ভালো মন্দ দুটো কথা বলে।শ্রেয়া চৌধুরীর সেটুকুও যেনো সহ্য হয় না।কিন্তু উনি অপারগ কিছুই করার নেই ওনার।নিজের একেকটা ভুলের শাস্তি তিলে তিলে পাচ্ছে এখন।শ্রেয়া চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।হৃদিত সবটা লক্ষ্য করতেই বাঁকা হাসে।
“আপনারা সবাই আজ এখানে থেকে যান।খুশি হবো আমরা।”
জলিল শেখের কথায় আরিফ চৌধুরী বলে,
“সেটা তো সম্ভব না ভাই।আয়াশ রাতে ঢাকা ব্যাক করবে।পনেরো মিনিটেরই তো রাস্তা।যখন মন চাই চলে আসা যাবে।”
“এমপি স্যারের বোধহয় আমার শ্বশুরবাড়ির মানুষজনকে পছন্দ হয়েছে।আই মিন ওনাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে।তাই এখানে বার বার আসতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না স্যার?”
হৃদিতের যায়গা মতো মারা খোঁচা টা সবাই বুঝলো শুধু অবুঝের ন্যায় চেয়ে রইল অমিত সাহা,মাধবী, মেহরিমা।হৃদিতের কথায় চৌধুরী পরিবারের সকলের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়।পরিবেশ কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে থমথমে হয়ে ওঠে।পরিবেশ ঠিক করার জন্য জলিল শেখ আলতো কেশে বলে,
“দুপুরের খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তো।অবনী খাবার সার্ভ করো।”
অবনী শেখ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে কিচেনে যেতে নিলেই আয়েশা চৌধুরী বলে,
“আপা আমি আর আতিয়া আপনাকে সাহায্য করি চলেন।একা হাতে এত কাজ সামলানো কষ্ট হয়ে যাবে।দয়া করে না করবেন না।আমরা আপনার বোনের মতোই।”
আয়েশা চৌধুরীর কথায় অবনী শেখের বুকের মাঝে কেঁপে ওঠে।মনে পড়ে যায় অতীতের কিছু সুখকর স্মৃতি।না করতে পারে না ওনাদের কে। আয়েশা চৌধুরী আর আতিয়া চৌধুরী কে সাথে নিয়েই কিচেনে চলে যায়।তিন জনে মিলে দ্রুত হাতে দশ মিনিটের মধ্যেই খাবার সার্ভ করে ফেলে।আগে পুরুষেরা খেয়ে নেবে তারপর মেয়েরা। এভাবেই খাওয়ার পর্ব শেষ হয়।
সময় বিকাল বেলা মেহরিমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় বড় বকুল গাছটার নিচে চেয়ার পেতে ছোট বড় সকলে আড্ডায় মশগুল।উপস্থিত নেই হৃদিত আর বাড়ির মহিলারা।মেহরিমা মাঝে মাঝে হৃদিতের করা কাজে,ব্যবহারে বড্ড অবাক হয়।রুমে একা বসে কি করছে কে জানে!খাওয়ার সময়ই কথা পাকাপাকি হয়েছে মেহরিমা আর হৃদিত কিছুদিন এখানে থাকবে।মেহরিমা সেই খুশিতেই নেচে বেড়াচ্ছে।তবে চোখ কান খোলা রেখেছে।চৌধুরী পরিবারের মধ্যে যে একটা গোলক ধাঁধা আছে সেটা খুব সহজেই বুঝে গেছে মেহরিমা।কোনো ক্লু পেলেও পেতে পারে।আয়েশা চৌধুরী,আতিয়া চৌধুরী,অবনী শেখ মিলে বিকালের হালকা পাতলা নাস্তা নিয়ে আসে।সবার অনুরোধে ওনারা তিনজন ও আড্ডায় সামিল হয়।
“জলিল ভাই সামনে বছর তো আবার ইলেকশন।আপনি ইলেকশন করবেন তো?”
আরিফ চৌধুরীর কথায় জলিল শেখ সময় নিয়ে বলে,
“না ভাই।আর ইচ্ছা নেই।অনেক তো করলাম অন্যের উপকার।বয়স হয়েছে,এখন নিজের পরিবার,নিজেকে একটু সময় দেই।হায়াতের তো আর বয়স নেই।কখন আল্লাহ ডাক দিয়ে দেবেন আর আমি আল্লাহর বান্দা তার ডাকে সাড়া দিয়ে এই পৃথিবী ত্যাগ করবো।তাই আর যেই কয়টা দিন বেঁচে আছি কোনো ঝামেলা ছাড়া শান্তিতে কাটাতে চাই।”
জলিল শেখের কথায় উপস্থিত সবাই মৃ ত্যু র কথা স্মরণ করে।ইহজীবনের সদা কঠিন সত্যের কথা স্মরণ করতেই সকলের গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়। ছোট্ট এই জীবনে কতশত ভুলই করে থাকি আমরা!আজাদ চৌধুরী বলে,
“ঠিক বলেছেন ভাই।এটাই উত্তম সিদ্ধান্ত।”
জলিল শেখ মুচকি হাসেন।অমিত সাহা ক্ষণে ক্ষণে অবনী শেখের দিকে তাকায়।এই কঠিন সত্তার মানবীর মধ্যে আলাদা কিছু তো একটা আছেই।যা ওই মানবিকে হাজারও নারীর মধ্যে থেকেও আলাদা করে রাখে।হঠাৎ সকলের সম্মুখে আরিশা বলে ওঠে,
“অবনী আন্টি আপনি দেখতে মা শা আল্লাহ খুব সুন্দর।আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনার মতো সুন্দর মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখি নাই।”
আরিশার কথায় সবাই অবনী শেখের দিকে দৃষ্টিপাত করে।ফুল হাতার কামিজ পরিধান করা।লম্বায় হাঁটুর অনেকটা নিচ পর্যন্ত।ঢোলাঢালা সালোয়ার।ওড়না টা খুব সুন্দর করে মাথায় আটকানো।শুধু মাত্র উজ্জ্বল মুখমণ্ডল,চকচকে হাত দুটো আর পা দুটো দেখা যাচ্ছে।একদম মার্জিত বেশভূষা।সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি উপেক্ষা করে অবনী শেখ মুচকি হেসে বলে,
“আল্লাহর সৃষ্টি সবকিছুই সুন্দর।আমরা মানুষেরা মানুষ কে অসুন্দর বানাই,আল্লাহ না।”
অতি সাধারণ কথার মাঝেই অসাধারণ কিছু একটা ছিলো।সবাই মুগ্ধ হয় অবনী শেখের মার্জিত সুস্পষ্ট জবাবে।অমিত সাহা মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে কিয়ৎকাল।আরিশা এবার বুঝতে পারে মেহরিমা ঠিক অবনী শেখের মতোই হয়েছে।আয়াশ হাতঘড়ি যে চোখ বুলিয়ে বলে,
“এবার উঠতে হবে আমাদের কে।সন্ধ্যার পরপরই আমাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে হবে।”
আয়াশের কথায় সবাই সহমত জানিয়ে বিদায় নেয়।আরিফ চৌধুরী অবনী শেখের দিকে একপলক চেয়ে শেখ বাড়ি ত্যাগ করেন।চৌধুরী পরিবারের সকলে চলে গেলেও থেকে যায় অমিত সাহা।মেহরিমা আর মাধবী ততক্ষণে বাড়ির ভেতরে চলে গেছে।আঙ্গিনায় উপস্থিত আছে জলিল শেখ, অবনী শেখ আর অমিত সাহা।অবনী শেখ ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিয়েও থেমে যায়।
“মেয়েদের দিকে নজর দেওয়া পাপ।আর যদি সেই মেয়ে বিবাহিত হয় তাহলে তো তার দিকে নজর দেওয়া মহাপাপ।নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে শিখুন।বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করুন। আশাকরি আমার দ্বিতীয় রুপ আপনাকে দেখাতে হবে না।এই পর্যন্তই থেমে যাবেন।”
কথাগুলো বলে আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে অবনী শেখ বাড়ির ভেতরে চলে যায়।অমিত সাহা অবনী শেখের সুস্পষ্ট কথায় লজ্জা পেয়ে যান।জলিল শেখও ঘটনা কিছুটা আঁচ করতে পারে।
মেহরিমা দরজা খুলে নিজের রুমে প্রবেশ করতেই ভয় পেয়ে যায়।অন্ধকারে ছেয়ে আছে পুরো রুম।জানালা গুলো বন্ধ করা।কোনো টু শব্দ নেই রুমের মধ্যে।শোনা যাচ্ছে শুধু ফ্যান চলার শোঁ শোঁ শব্দ।কেমন গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে রুমের মধ্যে।হঠাৎ শব্দ করে রুমের দরজা টা বন্ধ হয়ে যায়।মেহরিমা ভয়ে আঁতকে ওঠে দরদরিয়ে ঘামতে শুরু করে।মনে পড়ে যায় সেই বিভৎস রাতের কথা।সেকেন্ডের ব্যবধানে ঠান্ডা একটা হাত শাড়ির আঁচল গলিয়ে উ ন্মু ক্ত কোমর স্পর্শ করে।কোমরে চাপ দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।স্পর্শটা চিনতে এক সেকেন্ড ও সময় লাগে না মেহরিমার। হঠাৎ কানের কাছে ভেসে আসে উদ্ভট একটা কন্ঠস্বর,
“তোর কাছে এই পৃথিবীতে কার প্রায়োরিটি সবচেয়ে বেশি?আমার নাকি অন্য কারোর?টাইম ইজ অনলি ফাইভ সেকেন্ডস।আন্সার মি কুইকলি।”
হিমশীতল তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই মেহরিমার ছোট্ট বুকটা অজানা ভয়ে কেঁপে ওঠে।এক ঝটকায় কোমর থেকে বলিষ্ঠ হাতটা ছুড়ে ফেলে।পেছনে ঘুরতেই তৎক্ষণাৎ একটা মোমবাতি জ্বলে ওঠে।অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমের মধ্যে সেই আবছা হলদে আলো হাড়হিম করা পরিবেশ তৈরি করেছে।মেহরিমার গা ছমছম করে ওঠে।মোমবাতির আবছা আলোয় সামনে উপস্থিত মানবের হিংস্র মুখমণ্ডল চক্ষু গোচর হতেই ভয়ে ওখানেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে যেতে নেয় মেহরিমা।তার আগেই বিদ্যুতের গতিতে দু’টো শক্ত পেশিবহুল হাত এগিয়ে এসে কোমর চেপে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।
#চলবে_____
#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_১৮
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌
মেহরিমা পিটপিট করে চোখজোড়া মেলে তাকায়। লাইটের তীব্র আলো সহ্য করতে না পেরে পরক্ষণেই চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।সময় নিয়ে আবারও চোখ মেলে তাকায়।দৃষ্টি ঝাপসা লাগছে।সেই ঝাপসা দৃষ্টি দিয়েই তাকিয়ে দেখে একপাশে হৃদিত বসে আছে ওর ডান হাত ধরে।অপর পাশে অবনী শেখ চিন্তিত মুখে বসে আছেন।ওনার পাশেই মাধবী,জলিল শেখ বসা।সবার চোখে মুখেই উদ্বেগের চিহ্ন।মেহরিমা কে সময় দেয় সকলে। কিছুক্ষণ অতিক্রম হওয়ার পরে মেহরিমা নিজে থেকেই বলে,
“আমি উঠে বসবো।”
মেহরিমা মুখ থেকে কথা টা বের করার সাথে সাথেই হৃদিত যত্ন সহকারে ওকে উঠিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়।এবার অবনী শেখ মুখ খোলে,
“কি হয়েছিল নীলাক্ষী?এভাবে হঠাৎ সেন্সলেস হলি কিভাবে?”
অবনী শেখের কথায় মেহরিমার চোখের সামনে শেষ বিকালের সেই ভয়াবহ দৃশ্য ভেসে ওঠে।চোখ মুখে আঁধার নেমে আসে।চাহনিতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। অবনী শেখের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হৃদিতের দিকে তাকায়।হৃদিত স্বাভাবিক দৃষ্টি দিয়েই মেহরিমার দিকে তাকিয়ে আছে।মেহরিমা সাহস পাই যেন।বলতে শুরু করে।
“আমি বিকালে রুমে এসেছিলাম।রুমে এসে দেখি পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে আছে।আ…আমি ভয় পেয়ে যায়।তখন রুমে হৃদিত ভাইয়ের উপস্থিতি অনুভব করি।তারপর একটা উদ্ভট কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হয়।লাল চোখের হিংস্র একটা মুখ দেখতেই আমি ভয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলি।অন্ধকারে মুখটা স্পষ্ট দেখতে পারিনি আমি।তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।”
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কথাগুলো বলে শেষ করে মেহরিমা।হৃদিত সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি মেহরিমাকে সযত্নে খাইয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“আমি তো তোদের বাসার পিছনে বাগানে ছিলাম। ওখানে শিউলি ফুল গাছের নিচে বসে বসে গেইম খেলছিলাম।সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর ড্রয়িং রুমে বসে মা কে তোর কথা আস্ক করতেই বলে তুই রুমে আছিস।আর এখানে এসেই দেখি তুই সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিস।আই থিংক তুই কোনো কিছু নিয়ে টেনশড।তাই এরকম উদ্ভট চিন্তা ভাবনা আসছে তোর মাথায়।ইভেন আমি যখন রুমে আসি তখন রুমে লাইট জ্বালানো ছিলো।”
হৃদিতের কথা শুনে মেহরিমা ভাবনার অতলে হারিয়ে যায়।তবে সত্যিই ওগুলো ভাবনা ছিল? কিন্তু কন্ঠস্বর সেটা তো নিজের কানে শোনা! ওগুলো কিভাবে ভাবনা হতে পারে?মেহরিমা দো মনায় ভুগতে থাকে।হৃদিতের কথায় সহমত জানিয়ে অবনী শেখ বলেন,
“হ্যাঁ,হৃদিত তো রুমেই ছিলোনা।আচ্ছা তুই এখন রেস্ট নে।বেশি স্ট্রেস নিস না।এগুলো নিয়ে পরে কথা বলা যাবে।মিনাক্ষী আমার সাথে আয়।খাবার সার্ভ করতে হেল্প করবি।”
কথাগুলো বলে অবনী শেখ উঠে যেতে নিলেই হৃদিত বলে,
“মা,আমার আর ওর খাবার টা এখানেই দিয়ে যাবেন প্লিজ।ওর শরীর যথেষ্ট দূর্বল।ওর প্রোপার রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন।আগামীকাল হসপিটালে নিয়ে যাবো চেক আপের জন্য।”
অবনী শেখ মুচকি হেসে বলে,
“আচ্ছা বাবা।”
অবনী শেখ রুম ত্যাগ করতেই ওনার পিছন পিছন মাধবী ও রুম থেকে বের হয়ে যায়।জলিল শেখ এগিয়ে এসে মেহরিমার মাথায় হাত রেখে বলে,
“রেস্ট নেও আম্মা। শরীর ভালো লাগবে।রাতে না খেয়ে ঘুমাবে না কিন্তু।”
মেহরিমা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।জলিল শেখ হৃদিতের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আচ্ছা বাবা থাকো।যাই আমি।”
হৃদিত মুচকি হেসে সায় জানায়।জলিল শেখ ধীর পায়ে হেঁটে প্রস্থান করেন।কিছু সময় পরে মাধবী এসে দু’জনের জন্য খাবার দিয়ে যায়।হৃদিত হাত ধুয়ে এসে খাবার মেখে মেহরিমার মুখের সামনে ধরে,
“ক্ষুধা নেই।”
“তবুও খেতে হবে।”
“জোর করে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।”
“তখন খুব ভয় পেয়েছিলিস?”
মেহরিমার যেন এই প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলো।
“আপনি বিশ্বাস করুন।ওগুলো মিথ্যা ছিলো না। আমার ভাবনা না ওগুলো।আমি সত্যিই দেখেছিলাম।একটা উদ্ভট কন্ঠ শুনেছিলাম।আপনার স্পর্শ অনুভব করেছিলাম।আপনার স্পর্শ চিনতে আমার কখনোই ভুল হতে পারে না।”
“আচ্ছা তুই কি শুনেছিলিস?”
“আমার লাইফে কার প্রায়োরিটি বেশি? আপনার নাকি অন্যকারোর এটা শুনেছিলাম।”
“তো ওটার আন্সার কি?”
মেহরিমা সময় নিয়ে জবাব দেয়,
“আমার পরিবার আর আপনি।মা বলেছে বিয়ের পরে হাসবেন্ডই মেয়েদের সব।তাই আমার প্রায়োরিটির লিস্টে সবার আগে আপনি আছেন।”
সুযোগে সৎ ব্যবহার করে হৃদিত।মেহরিমার জবাব শুনে হৃদিতের ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটে ওঠে।মেহরিমা দেখার আগেই সেটা মিলিয়ে যায়।
“তাহলে তোর কথা অনুযায়ী দাঁড়ায় আমি এই রুমে ছিলাম।আশ্চর্য!আমি কি জ্বিন,ভুত নাকি যে একসাথে দুই যায়গায় অবস্থান করবো।”
হৃদিতের এবারের বলা কথায় মেহরিমা চুপসে যায়।সত্যিই তো এটা তো ভেবে দেখেনি।আর হৃদিত যখন বলছে এখানে ছিল না তার মানে হয়তো সত্যিই ছিলো না। উনি তো আর মিথ্যা বলবে না। কিন্তু ওগুলো সব ভাবনা ছিল এটাও তো মন, মস্তিষ্ক মানতে চাইছে না।মেহরিমা সত্য, মিথ্যার বেড়াজালে পড়ে অস্থির হয়ে ওঠে।হৃদিত সবটাই লক্ষ্য করে।
“এক রাতেই আমার স্পর্শ এতোটা চিনে ফেললি? ভালোবাসা কি একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছি?দিলেও মন্দ হয়নি কাজ টা।”
হৃদিতের কথায় মেহরিমা হকচকিয়ে যায়!নিজের বলা কথাতে নিজেই লজ্জা পেয়ে দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলে।ফুলো ফুলো গাল দুটোতে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে।পরক্ষণেই ঠোঁট কামড়ে থুতনি বুকে ঠেকিয়ে মাথা নামিয়ে রাখে।মেহরিমার লজ্জা মিশ্রিত রক্তিম গাল,পাতলা ঠোঁটখানা সেকেন্ডের ব্যবধানে হৃদিতকে এলোমেলো করে দেয়।হৃদিত নিজেকে খুব করে সামলায়।মনকে বুঝ দেয় ওর ছোট্ট বিড়াল ছানাটা অসুস্থ।এই অবস্থায় ওইসব কাজ ঠিক হবে না।মুচকি হেসে বলে,
“এখন চুপচাপ লক্ষী বউয়ের মতো খেয়ে নে তো সোনা।”
হৃদিতের নরম ভালোবাসাপূর্ণ কথায় মেহরিমা আহ্লাদে গদগদ হয়ে ওঠে।আহ্লাদি কন্ঠে বলে,
“আপনি খাইয়ে দিবেন?”
“হু।”
“কম করে খাবো কেমন?”
“আচ্ছা।”
“কাল সত্যিই হসপিটালে যেতে হবে আমাকে?”
“হুম।”
“ওই শাবলের মতো মোটা ছুঁচ ফোটাবে না তো?”
মেহরিমার প্রশ্নে হৃদিত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলে,
“সেটা আবার কি?”
“আরে ইনজেকশন,সেটাও চেনেন না?”
হৃদিত মেহরিমার চোখের আড়ালেই দুষ্টু হেসে বলে,
“হ্যাঁ ইনজেকশন ওটা দেবে তো।”
মেহরিমার মুখটা একটুখানি হয়ে যায়।ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে।মেহরিমার মুখটা দেখতে ছোট্ট বাচ্চার মতো লাগছে।হৃদিত মনে মনে খুব মজা পাই।তবে মুখটা সব সময়ের ন্যায় গম্ভীর।
“ক..কয়টা দেবে?”
“এই ধর পাঁচ,দশটা তো দেবেই।”
“অতগুলো কেনো দেবে?”
“আই ডোন্ট নো।মে বি যাদের মাথায় সমস্যা তাদের বেশি দেয়।”
“আমার মাথায় কোনো সমস্যা নেই তো!”
“তাহলে ওইসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা কেন করিস?”
“আর করবো না।”
“তবুও যেতে হবে।”
“আমি যাবো না।”
“যেতে হবে।”
“প্লিজ,আমি ওটাতে ভয় পাই।”
মেহরিমার কাঁদো কাঁদো কন্ঠ শুনে হৃদিত এদফায় থামে।কন্ঠে নিজের সবটুকু স্নেহ,ভালোবাসা মিশিয়ে বলে,
“আমি আছি তো জান।আমি থাকতে তোকে কখনো কোনো দুঃখ,কষ্ট ছুঁতে পারবে না।আই প্রমিজ।”
হৃদিতের কথায় মেহরিমা শান্ত হয়।পরক্ষণেই নিজের আটাশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলে,
“আমরা তো শহরে যাবো তাই না?”
“হ্যাঁ।”
“অনেক শপিং করবো ওকে।”
“পুরো দোকানই কিনে দেবো।”
“স্ট্রিট ফুড খাবো।”
“ওগুলো আনহেলদি।”
“তাহলে শুধু ফুসকা।”
“নো।”
“প্লিইইইইইজজজজজ।”
“গান ধরেছিস কেনো?”
“আপনি আমার কথা শুনবেন না?একটুও ভালোবাসেন না আমায়।শুধু আমি একাই ভালোবাসি।”
“সাহস বেড়েছে তোর।”
“তাহমীদ হৃদিত চৌধুরীর ওয়াইফ মেহরিমা শেখ নীলাক্ষী।সাহস তো থাকবেই ব্রো।”
হৃদিৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।গতকাল ভালোবাসা পাওয়ার পর থেকে এই মেয়ের মাঝে তুমুল পরিবর্তন এসেছে।সাহস বেড়েছে বহুগুণ।হৃদিত কে রিতিমত নাচিয়ে ছাড়ছে।হৃদিত হার মেনে নেয়।
“আচ্ছা খেতে পারিস।”
“সত্যিই!”
“হুম।”
মেহরিমা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে।হৃদিতের সাথে শপিং করা,স্ট্রিট ফুড খাওয়া বহুদিনের স্বপ্ন ওর।আর সেটা পূরণ হতে চলেছে ভাবতেই খুশিতে গদগদ হয়ে পড়ে।হৃদিৎ ওর অ্যানাবেলা কে দু’চোখ ভোরে দেখে।এই মেয়েটা অল্পতেই কতো খুশি হয়ে যায়!মেহরিমার বকবকানির জন্য খাবার ঠান্ডা হয়ে যায়।হৃদিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“খাবার ঠান্ডা হয়ে গেছে। তুই পাঁচ মিনিট বস আমি খাবার গরম করে নিয়ে আসি।”
“না,না তার দরকার নেই।আমি খেতে পারবো। আপনার বোধহয় সমস্যা হবে খেতে।মা কে ডেকে বলি আপনার টুকু গরম করে দিতে।”
“আমারও সমস্যা নেই।”
“সত্যি তো?”
“হু।”
মেহরিমা প্রাণবন্ত হাসে।হৃদিত ওর পাশে বসে ছোট ছোট লোকমা করে খাইয়ে দিতে থাকে।অবনী শেখ মুগ্ধ নয়নে দৃশ্য টুকু দেখে ওখান থেকে চলে যান।উনি খাবারের প্লেট নিতে এসেছিলেন।এসেই এই সুন্দর দৃশ্যর সম্মুখীন হন।অবনী শেখ নিজের ছলছল করা চোখজোড়া মুছে মনে মনে ভাবেন হৃদিতের হাতে মেহরিমা কে তুলে দিয়ে উনি মোটেও ভুল করেননি।চৌধুরী বাড়ির রক্ত খারাপ হলেও হৃদিত আর ছোট ছেলে দুটো ভিন্ন প্রকৃতির হয়েছে।অবনী শেখ চলে যেতেই হৃদিতের অধরে বক্র হাসি খেলে যায়।
#চলবে_____