কাঠগোলাপের আসক্তি পর্ব-১৪

0
4

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_১৪ [প্রথম অংশ]
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌

হৃদিতের ব্যালকনির চারি পাশ জুড়ে সুউচ্চ সারি সারি গাছ।শোঁ শোঁ শব্দে উঁচু সেই গাছের ছোট বড় পাতার ফাঁক ফোকড় দিয়ে বয়ে চলেছে হিমেল হাওয়া।মেঘের মতো করে উড়ে আসা শুভ্র শীতল সেই হাওয়ার পরশ মূহুর্তের মধ্যেই দেহের মনের সকল ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।একটু একটু করে ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার।এখনই ধরনীর বুকে সন্ধ্যা নামবে।দিনের শেষ রেখায় দেখা মেলে নাম না জানা কতশত প্রজাতির পাখি আর কীটপতঙ্গের। শোনা যায় অচেনা পাখি ও ব্যাঙের ডাক আর ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন।যারা গ্রামে বসবাস করেন, সন্ধ্যা নামলে জোনাকি পোকার মিছিল,ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের সঙ্গে তাদের সখ্যতা বেশ‌ দারুন। কেননা সন্ধ্যা নামলেই ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিঁ ঝিঁ সঙ্গীত আর জোনাকি পোকার মশাল আলোর মিছিল মানেই এক অন্যরকম অনুভুতি!

সময় সন্ধ্যা সাতটা।মেহরিমা মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে হৃদিতের ব্যালকনিতে বসে প্রকৃতির মন মাতানো সৌন্দর্য উপভোগ করছে।হৃদিতের ব্যালকনিটা একটু অন্যরকম।ছাদ বিহীন ব্যালকনিটা সুবিশাল অম্বরের নিচে অবস্থিত।ব্যালকনিতে আছে অনেক প্রজাতির ফুলের গাছ।আরও আছে ছোট্ট একটা আর্টিফিশিয়াল ফুলের দোলনা।বেলী ফুলের সুবাসে ভরে উঠেছে ব্যালকনির চারিপাশ।বলা চলে মেহরিমা এক প্রকার বাধ্য হয়েই ব্যালকনির দোলনায় বসে আছে।অবশ্য এটাতে মেহরিমার ভালোই হয়েছে।এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারছে।মেহরিমা মনে মনে ভেবে নেয় হৃদিতকে বড় করে একটা থ্যাংকস জানাবে।হৃদিত রুম লক করে কি করছে কে জানে?মেহরিমার জন্য নাকি কি একটা সারপ্রাইজ আছে এটাই বলেছে মেহরিমাকে।আজ একদিনেই হৃদিতের পাগলামীতে মেহরিমা আবিষ্ট হয়ে পড়েছে।একটা মানুষ কিভাবে এতোটা ভালোবাসতে পারে!মেহরিমার হঠাৎ করেই দুপুরের কথা মনে পড়ে যায়।মেহরিমা শাওয়ার নেওয়ার পরে উপলব্ধি করতে পারে ও টাওয়াল নিয়ে যায়নি ওয়াশ রুমে।দশ মিনিট মতো উশখুশ করেও অতিরিক্ত লজ্জায় পড়ে হৃদিতের থেকে টাওয়াল চাইতে পারেনা মেহরিমা।যখন ওড়না দিয়ে মাথা মোছার চিন্তা ভাবনা করে ঠিক তক্ষুনি ওয়াশ রুমের দরজায় নক করে ভদ্র ছেলের মতো মেহরিমা কে টাওয়াল টা দেয় হৃদিত।আর ছোট ছোট কেয়ারিং তো আছেই।এই এক দিনেই হৃদিতের প্রতি মেহরিমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা অনেক গুণ বেড়ে গেছে।ব্যালকনির দরজা খোলার শব্দে মেহরিমা পেছনে ঘুরে তাকায়।হৃদিত একটা সফট কাপড় এনে মেহরিমার চোখ বেঁধে দেয়।মেহরিমা ভয়ে হৃদিতের হাত খা ম চে ধরে।

“চ.. চোখ বাঁধলেন কেনো?”

“তোকে এখান থেকে ফেলে দেবো বলে।”

মেহরিমা ভয় পেয়ে যায়।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,

“আমাকে ফেলে দেবেন না প্লিজ।আমি বাঁচতে চাই।”

“কার সাথে?”

মেহরিমা সময় নিয়ে জবাব দেয়,

“আপনার সাথে।”

“শুধু আমার সাথেই?আমাদের বাচ্চার সাথে
না?”

হৃদিতের কথায় মেহরিমা কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়।হৃদিত আর কথা না বাড়িয়ে মেহরিমাকে রুমে নিয়ে আসে।

“শাড়ি পড়তে পারিস?”

“হু।”

“এই নে ওয়াশ রুম থেকে এই শাড়িটা পড়ে আয়।আ’ম ওয়েটিং।”

“কিন্তু আমার তো চোখ বাঁধা।”

“আমার সাথে চল।”

হৃদিত মেহরিমার হাত ধরে ওয়াশ রুমের দরজার সামনে নিয়ে যায়।মেহরিমার চোখজোড়া খুলে দেয়।

“আমি বাইরে থেকে লক করে দিচ্ছি।তুই ফাস্ট শাড়ি পড়ে আয়।কান্ট ওয়েট অ্যানিমোর।”

হৃদিতের কথামতো মেহরিমা বিশ মিনিট সময় নিয়ে শাড়ি পড়া শেষ করে ওয়াশ রুমের দরজায় নক করে।হৃদিত যেনো এই অপেক্ষাতেই ছিলো।চট করে দরজা খুলে দেয়।মেহরিমা ব্লাক কালারের একটা পাতলা জর্জেট শাড়ি পড়েছে।জর্জেট কাপড়ের ব্লাউজের হাতাটা কনুই পর্যন্ত লম্বা।পিছনের ফিতা দুটো বেঁধে অযত্নে পিঠের উপরে ফেলে রেখেছে।তাছাড়া পিঠে এক টুকরো কাপড়ও নেই।হাঁটু সমান ঘন কালো কেশ গুলো পিছনে মেলে দেওয়া।মেহরিমা লজ্জায় রাঙা মুখ নামিয়ে রেখেছে।ক্যান্ডেলের মৃদু আলোয় মেহরিমাকে বড্ড আবেদনময়ী লাগছে।হৃদিত মোহাবিষ্টের ন্যায় চেয়ে থাকে কিয়ৎকাল।আস্তে আস্তে মেহরিমার নিকট এগিয়ে যায়।ধীর অস্পষ্ট স্বরে বলে,

“আমাকে আর কত পা গ ল করবি?তোকে দেখলে আমি আর আমার মধ্যে থাকি না কেনো জান?আমার মন চুরি করার এতো বড় সাহস কোথায় পেলি মেহুপাখি?”

হৃদিতের ইনটক্সিকেটিং হাস্কি ভয়েস কর্ণগোচর হতেই মেহরিমার শান্ত মন অশান্ত হয়ে পড়ে।ঠিক হৃদিতের মতোই।হৃৎপিণ্ড শব্দ তুলে ধ্বক ধ্বক করে চলেছে।মেহরিমা দৃষ্টি তুলে তাকায় হৃদিতের দিকে।মুহূর্তেই দুই জোড়া চোখের নিরব দৃষ্টি মিলে যায়।মেহরিমা সেকেন্ডের ব্যবধানে দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।ওই নীল চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির গভীরতা বোঝার ক্ষমতা মেহরিমার নেই।হৃদিত আরেকটু এগিয়ে যেতেই মেহরিমা দেওয়ালের সাথে মিশে যায়।হৃদিত মেহরিমার একদম কাছাকাছি যেয়ে দাঁড়ায়।মেহরিমার মুখের উপর হালকা ঝুঁকে ফুঁ দিতেই মেহরিমা পরম আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।হৃদিত মুচকি হেসে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়।মেহরিমার উ ন্মু ক্ত পে টে হাত রাখতেই মেহরিমা কেঁপে ওঠে।শির দাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে যায়।হৃদিত মেহরিমার নরম পে ট খা ম চে ধরে অ ধ র জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়।সময় নিয়ে ছাড়ে মেহরিমাকে।পরক্ষণেই গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।ছোট ছোট ভালোবাসার পরশে মেহরিমাকে ভরিয়ে দিতে থাকে।গলায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করে তবেই ক্ষান্ত হয় হৃদিত।মেহরিমা তখন দিশেহারা।বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে ব্যস্ত।হৃদিত মেহরিমার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ।অনায়াসেই নিজের প্রেয়সীর চোখের অব্যক্ত ভাষা বুঝে ফেলে।মেহরিমা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে চোখ নামিয়ে ফ্লোরে দৃষ্টিপাত করে।

“বউজান শুধু আমাকে দেখলেই হবে?পুরো রুমটা তো দেখবি একবার।তোর জন্যই তো এতো কিছু করলাম আমি।”

হৃদিতের কথায় মেহরিমা ফ্লোর থেকে নজর তুলে রুমের দিকে তাকায়।পুরো রুম পার্পল কালারের ফ্লাওয়ার্স দিয়ে ডেকোরেশন করা।ফেইরি লাইটের পরিমাণ আরও বেড়েছে।ছোট শত শত ক্যান্ডেল জ্বলছে রুমের মধ্যে।সেই আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুমের চারিপাশের দেওয়ালে মেহরিমার শত শত ছবি টাঙানো।কয়েকটা জাস্ট ফটোশুট বাকি সবগুলোই আর্ট করা।মেহরিমা কিছুক্ষণের জন্য থমকায়!ছলছল চোখে হৃদিতের দিকে তাকিয়ে থাকে।হৃদিতের ঠোঁটে ভুবন ভোলানো মিষ্টি হাসি।মেহরিমা হঠাৎ করেই দৌড়ে যেয়ে হৃদিতকে জাপটে জড়িয়ে ধরে।হৃদিত যেনো আগে থেকেই জানতো এমনটাই ঘটবে।শক্ত করে বুকের মধ্যিখানে জড়িয়ে নেয় নিজের অ্যানাবেলাকে।কিছু নির্জন সুখকর সময় পার হয়ে যায় একে অপরের উষ্ণ আলিঙ্গনে।হৃদিত মেহরিমাকে ছেড়ে দিয়ে রুমের লাইট অন করে।লাইটের তীব্র আলোয় মেহরিমা ঘুরে ঘুরে মুগ্ধ নয়নে নিজের ছবিগুলো দেখতে থাকে।কতোটা যত্ন,ভালোবাসা নিয়ে এঁকেছে একেকটা ছবি!কিছু ছবি দেখে লজ্জাও পেয়ে যায় মেহরিমা।কয়েকটা ছবিতে পোশাক বেশ খোলামেলা ভাবে এঁকেছে।তবে ততটাও না।মেহরিমা লাজুক হাসে।মনে মনে আওড়ায় এই ছেলে একটা বদ্ধ পাগল।হৃদিত মেহরিমার নিকট এগিয়ে এসে বলে,

“আমার লিটল কিটির কি পছন্দ হয়েছে সারপ্রাইজ?”

“আপনি খুউউব সুন্দর আর্ট করতে পারেন।”

“আই‌ নো।গিভ মি আন্সার।”

“খুব, খুব, খুব পছন্দ হয়েছে।আমার লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ ছিলো এটা।”

“চল ব্যালকনিতে যায়।আজ পূর্ণিমা।জোৎস্না বিলাস করি দু’জনে মিলে।”

“এই ছবিগুলো এভাবেই থাকবে?”

“হুম,কোনো সমস্যা?”

“এভাবে সবাই দেখলে কি ভাববে?আমার ওই ছবিগুলো তো…”

মেহরিমা লজ্জায় নিজের কথা শেষ করতে পারে না।হৃদিত মেহরিমার না বলা কথাটা চট করেই বুঝে ফেলে।

“আমার রুমে কারোর আসার পারমিশন নেই।নট অ্যালাও বুঝলি?ওগুলো তো জাস্ট পিকচার।তুই সারা দিন রাত ওভাবে থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না।ট্রাস্ট না হলে একদিন ট্রাই করে দেখতে পারিস।”

কথাটা বলেই দুষ্টু হাসে হৃদিত।লজ্জায় মেহরিমার কান মুখ গরম হয়ে ওঠে।এক প্রকার পালিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।হৃদিতও গিটার কাঁধে নিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে শিস বাজাতে বাজাতে ব্যালকনির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে।আজ আর মেহরিমার মু ক্তি নেই।

#চলবে___

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব১৪ . [শেষ অংশ]
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌

দিন পেরিয়ে ধরণীর বুকে নেমে আসা একটি রজনীর অদ্ভুত সৌন্দর্য কে যদি বর্ণনা করা হয় তাহলে সবার প্রথমেই চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে পূর্ণিমা রাতের দৃশ্য।মানুষের মন কে মোহগ্রস্ত করে এক মায়াময় রজনীর সূচনা করে পূর্ণিমার চাঁদ।না আলো,না আঁধার এমন এক রহস্যের মায়াজালে মানব মনকে বন্দি করতে পারে শুধু ঐ দূর আকাশের থালার মতো বড় গোল চাঁদ টা। রাতের নিস্তব্ধতা গলিয়ে দূর থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের ডাক।হালকা ঠান্ডা ঝিরিঝিরি পবন বইছে।শীতের আগমনী বার্তা যেন!

মেহরিমা আর হৃদিত ব্যালকনির দোলনায় বসে আছে।জোৎস্না ভরা রাত।চাঁদ যেনো তার নিজের সবটুকু আলো পৃথিবীর বুকে ঢেলে দিয়ে পৃথিবীকে নতুন রুপে সাজিয়েছে!মেহরিমা হাঁটুর উপর মাথা রেখে পা জোড়া বুকে জড়িয়ে বসে আছে।নজর পাশে বসা নিজের ব্যক্তিগত সুদর্শন পুরুষটার দিকে।চাঁদের আলোয় নীল রঙের মণি জোড়া ঝলমল করছে।হৃদিত,মেহরিমার দু’জনের ঠোঁটেই মুচকি হাসি। হঠাৎ হৃদিতের গিটার থেকে ভেসে আসে আশিকি টু’র ‘তুম হি হো’ গানের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।এই জোৎস্না রাতের অপূর্ব সৌন্দর্যের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক টা মিলেমিশে তৈরি করেছে মন মাতানো এক চমৎকার পরিবেশ।

হাম তেরে বিন আব রেহ নেহি সাকতে
তেরে বিনা কিয়া ওয়াজুদ মেরা‌।
হাম তেরে বিন আব রেহ নেহি সাকতে
তেরে বিনা কিয়া ওয়াজুদ মেরা‌
তুঝছে জুদা আগার হো জায়েঙ্গে
তো খুদ সে হি হো জায়েঙ্গে জুদা।
কিউকি তুম হি হো
আব তুম হি হো
জিন্দেগী আব তুম হি হো
চেইন ভি মেরা দার্দ ভি
মেরি আশিকি আব তুম হি হো।
তেরা মেরা রিশতা হে কেসা
ইক পাল দুর গাওয়ারা নেহি
তেরে লিয়ে হার রোজ হে জিতে
তুজ কো দিয়া মেরা ওয়াক্ত সাবি
কই লামহা মেরা না হো তেরে বিনা
হার সাস পে নাম তেরা।
কিউকি তুম হি হো
আব তুম হি হো
জিন্দেগী আব তুম হি হো
চেইন ভি মেরা দার্দ ভি
মেরি আশিকি আব তুম হি হো।
তুমি হি হো……
তুমি হি হো…..
তেরে লিয়ে হি জিয়া মে
খুদ কো জো ইয়্যু দে দিয়া হে
তেরি ওফা নে মুজকো সামহালা
সারে গামো কো দিল সে নিকালা
তেরে সাথ মেরা হে নাসিব জুড়া
তুঝে পাকে আধুরা না রাহা…হুম
কিউকি তুম হি হো
আব তুম হি হো
জিন্দেগী আব তুম হি হো
চেইন ভি মেরি দার্দ ভি
মেরি আশিকি আব তুম হি হো (২)

হৃদিত নিজের পুরুষালি সুমধুর কন্ঠে গান গেয়ে থামে।মেহরিমা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে হৃদিতের গাওয়া গানের প্রতিটি লাইন।কি সুন্দর ভালোবাসা,মাধুর্য মিশিয়ে গাইলো গান টা!গানের মধ্যে দিয়ে নিজের অব্যক্ত কথাগুলো অনায়াসে প্রকাশ করে দিলো।গান থেমে যাওয়ার সাথে সাথেই চোখজোড়া খুলে হৃদিতের দিকে দৃষ্টিপাত করে মেহরিমা।হৃদিত মেহরিমার দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মেহরিমা প্রফুল্ল কন্ঠে বলে,

“আপনার গানের গলা মারাত্মক!এই দিয়ে তিন দিন শুনলাম আপনার গান। আপনি কি সব পারেন?”

“সব বলতে?”

“এই ধরুন আপনি গান গাইতে পারেন,আর্ট করতে পারেন, ফুটবল ক্রিকেট খেলতে পারেন, পড়াশোনা তেও কত্ত ভালো!”

“আমার পড়াশোনা সম্পর্কে কতটুকু জানিস তুই?”

“সব জানি আমি।আপনি ঢাবি ম্যাথ ডিপার্টমেন্ট থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন।”

“কিভাবে জানিস?”

“আরে আমিতো তৃধার থেকে সব সময় আপনার খোঁজ খবর নেই। আপনার বিষয়ে এ টু জেড সব জানি আমি।”

মুড নিয়ে বলে মেহরিমা।হৃদিত মৃদু হেসে বলে,

“দ্যাটস গুড।আই লাইক ইট। তুই শুধু আমাকে নিয়ে,আমার বিষয় নিয়েই চিন্তা ভাবনা করবি।তোর মন,মস্তিষ্ক সবটা জুড়ে যেনো শুধুমাত্র আমি থাকি।তোর পৃথিবী জুড়ে শুধু হৃদিত নামটাই থাকবে‌।আর কেউ না।”

মেহরিমা মুচকি হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে।বোকা মেহরিমা কথাটার গভীর অর্থ বুঝেও যেনো বুঝলো না!

“তিন দিন গান কিভাবে শুনলি?আমিতো আজ দিয়ে দুই দিন তোকে গান শোনালাম।”

“একদিন চুরি করে শুনেছিলাম।আমি তখন ক্লাস টেনে পড়তাম।”

“স্টিলিং ইজ আ সিন।”

হৃদিতের কথায় মেহরিমা থতমত খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,

“আই নো বাট ওটা তো ওরকম চুরি ছিলো না।”

“বি প্রিপেয়ারড ফর পানিশমেন্ট।”

মেহরিমা আঁতকে ওঠে বলে,

“কিসের পানিশমেন্ট?”

মেহরিমা নিজের কথা শেষ করার সাথে সাথে নিজেকে হৃদিতের উরুর উপর অনুভব করে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই অধর জোড়া হৃদিতের আয়ত্তে চলে যায়।হৃদিত মেহরিমাকে ছেড়ে দিয়েই কোলে উঠিয়ে নেয়।দ্রুত কদমে রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে।

“আই কান্ট সোনা।প্রিপেয়ার ইউরসেল্ফ ফর টুনাইট।”

হৃদিত বিছানায় এক প্রকার ছুড়ে মারে মেহরিমাকে।শার্টের বাটনে দ্রুত হাত চালাতে থাকে।হৃদিতের এই নতুন রুপে মেহরিমা ভীত হয়ে পড়ে।ভয়ে শুকনো ঢোক গেলে।হঠাৎ করেই ভয়ে ওর ক্ষুধা পেয়ে যায়।হৃদিত এক মিনিটেই শার্ট আনবাটন করে ফেলে।মেহরিমার উপর উঠে পিঠে হাত রেখে ফিতা ধরতে নিলেই মেহরিমা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে ,

“আমার ক্ষুধা পেয়েছে।খাবো।”

মেহরিমার তাৎক্ষণিক চিৎকারে হৃদিতের হাত জোড়া থেমে যায়।মেহরিমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

“হ্যাঁ সেটার প্রিপারেশন’ই তো নিচ্ছি।”

“ভাত খাবো।”

এই সময়ে মেহরিমার এহেন কথায় হৃদিত যেন আকাশ থেকে পড়ে!ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলে,

“আচ্ছা।দুই মিনিট ওয়েট কর।”

হৃদিত তাবানকে কল দিয়ে খাবার দিয়ে যেতে বলে।দুই মিনিটের মাথায় দরজায় নক করে তাবান।হৃদিত খাবার আনতে এগিয়ে যায়।দরজা খুলতেই তাবান হাসিমুখে খাবারের প্লেট এগিয়ে দেয়।হৃদিত খাবার নিয়ে দরজা লক করে দেয়।মেহরিমার নিকট এসে খাবার ধরিয়ে দেয় হাতে‌।

“সময় পনেরো মিনিট। ফাস্ট শেষ কর।এর এক সেকেন্ড ও বেশি সময় লাগলে তোর অবস্থা আরও খারাপ হবে।”

বিরিয়ানি দেখতেই মেহরিমা খুশি হয়ে যায়।দৌড়ে ওয়াশ রুম যেয়ে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে শুরু করে দেয়। কয়েক লোকমা মুখে দেওয়ার পর হৃদিতের কথা মনে পড়ে।মেহরিমা অসহায় চোখে হৃদিতের দিকে তাকায়।হৃদিত স্বাভাবিক চাহনি দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।

“আপনি খাবেন না?”

“আমার জন্য তুই আসিস।সময় আর মাত্র বারো মিনিট।”

এবার আর মেহরিমা কে পাই!দিন দুনিয়া ভুলে দশ মিনিটে বিরিয়ানি শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। পরক্ষণেই হৃদিতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়‌।ফুলো গাল দুটো লালচে আভায় ছেয়ে যায়।

“শেষ?”

হৃদিতের কথায় মেহরিমা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি দিয়ে তাকায়।হৃদিত আবারও বলে,

“তোর সব কাজ শেষ?”

মেহরিমা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই তড়িৎ গতিতে ওকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর উপর নিজের ভার ছেড়ে দেয় হৃদিত।অধর জোড়া নিজের অধর দিয়ে আঁকড়ে ধরে।মেহরিমা কিছুক্ষণ মোচড়া মুচড়ি করে করে শান্ত হয়ে যায়।নিজেও হৃদিতের ডাকে সাড়া দেয়।হৃদিত যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল।ধৈর্যহীন হয়ে পুরো শরীরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে লেগে পড়ে।মেহরিমা নরম কন্ঠে আস্তে করে বলে,

“লাইট টা বন্ধ করুন প্লিজ।”

“উমম!এভাবেই থাক।”

“প্লিজ!”

হৃদিত চোখ তুলে মেহরিমার দিকে তাকাতেই অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করা লজ্জায় আড়ষ্ট হওয়া মুখমণ্ডল চক্ষু গোচর হয়।হৃদিত হাত বাড়িয়ে লাইট অফ করে দিয়ে পুনরায় মেহরিমাতে ডুব দেয়।মেহরিমা হৃদিতের আরও নতুন একটা রুপের সাথে পরিচিত হয়।ছেলেটা সত্যিই পাগল! শুধু মেহরিমার জন্য পাগল!এই বদ্ধ পাগল টাকেই লাগবে মেহরিমার।বাইরে শনশন করে বাতাস বইছে।প্রকৃতির ঠান্ডা ফিরফিরে বাতাসে জানালার পর্দা ক্ষণে ক্ষণে উড়ে যেয়ে চাঁদের আলো উঁকি দিচ্ছে রুমে।বদ্ধ রুমে দু’জন নরনারীর শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু।চাঁদের আলো মেহরিমার মুখে এসে পড়ছে বারংবার।চাঁদের আবছা হলদে আলোয় মেহরিমার লজ্জা রাঙা মুখখানি দেখতে রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার মতো লাগছে।অশ্রুসিক্ত নেত্র।ভেজা আঁখি পল্লব।হৃদিত ওই অশ্রুসিক্ত নেত্রের গভীরেই নিজের বি না শ,ম র ণ দেখতে পাই।নরম আদুরে স্বরে আওড়াই,

“আমার বিনাশিনী,আমার প্রাণনাশিনী,আমার অ্যানাবেলা।”

#চলবে____

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে