কাঠগোলাপের আসক্তি পর্ব-১২+১৩

0
4

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_১২
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌

বিষ্ণু নদীতে শিহাবের লা শ পাওয়া গেছে।গ্রামের এক জেলে অতি ভোরে নদীতে মাছ ধরতে যেয়ে শিহাবের লা শ পেয়েছে।শিহাবের বিভৎস লাশ দেখে গ্রামের মানুষ প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সাথে অবাক ও হয়েছে খুব!এতো বি ভ ৎ স ভাবে আদৌও কি কোনো মানুষ মারতে পারে?নাকি অন্যকিছুর কাজ এটা?গ্রামের সকলের মনে হাজারও প্রশ্ন খচখচ করছে।সবাই অতিদ্রুত লা শ দা ফ নে র কাজে লেগে পড়েছে।পুলিশ ইতোমধ্যে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে।

সময় সকাল আটটা।দিনটা শুক্রবার।আজ আর বৃষ্টি নামেনি ধরণীর বুকে।অন্য দিনের মতোই ঝলমলে একটা দিন।পূর্ব দিগন্তে সূর্য বেশ তেজ নিয়ে উঠেছে।মেহরিমা অন্যমনস্ক হয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে।শিহাবের করুণ মৃত্যুর কথাটা শুনেছে মেহরিমা।হৃদিত এখনও ঘুমাচ্ছে। অবনী শেখ রান্না শেষ করে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মেহরিমার পাশে এসে বসে।আজ সকাল থেকেই ভ্যাপসা গরম পড়া শুরু হয়েছে।

“হৃদিত রাতে কখন এসেছে?”

অবনী শেখের কথায় মেহরিমা নড়েচড়ে বসে।সময় নিয়ে জবাব দেয়।

“মধ্যরাতে।”

“খেতে দিয়েছিলিস কিছু?”

“খেতে দিতে চেয়েছিলাম উনিই খাইনি।”

“ওও আচ্ছা।বেলা তো ভালোই হলো যা রুমে যেয়ে দেখ হৃদিত ওঠে কি না?”

“মা!”

অবনী শেখ মেহরিমার দিকে তাকিয়েই যেনো মেহরিমার মনের কথা বুঝে ফেলে। মুচকি হেসে বলে,

“সময় হলে সব জানতে পারবি।এখন এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে স্টাডি তে কনসেনট্রেশন দে।আজ হৃদিত তোকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাবে। এখন থেকে ওখানেই থাকবি।”

অবনী শেখের কথায় মেহরিমার চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বলে,

“আমি যাবো না মা। তোমাদের ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।”

মেহরিমার কথায় অবনী শেখের মন হু হু করে কেঁদে ওঠে। চোখে জলেরা ভীড় জমায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে বলে,

“যেতে হবেই মা।এটাই প্রকৃতির নিয়ম।আমরা বাধ্য।”

“আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিলে কেনো মা?”

“তোর ভালোর জন্যই। কেনো তুই খুশি না এই বিয়েতে?”

মেহরিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। অবনী শেখ মেহরিমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলেন,

“আমার মেয়ে সাহসী।আমার মেয়েকে আমি কঠিন সত্তায় তৈরি করেছি।আমার মেয়ে যেনো অল্পতেই ভেঙে না পড়ে।সংসার জীবন যেমন কঠিন তেমন সহজও মা।সবটা তোর উপর ডিপেন্ড করবে।তুই যেরকম ভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবি সেরকমই হবে সংসার জীবন।সবসময় নিজেকে মানিয়ে,গুছিয়ে চলতে হয়।তবে নিজের আত্মসম্মানের সাথে কখনো আপস করবি না।মনে রাখবি মেয়েদের আত্মসম্মান সবকিছুর ঊর্ধ্বে।কখনো অপাত্রে ভালোবাসা আর সম্মান দান করবি না।মানুষের ব্যবহার দিয়ে তাকে যাচাই বাছাই করবি।মনে থাকবে?”

মেহরিমা হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“মনে থাকবে।”

“আমার লক্ষী মা।আর অন্যের কোনো কথায় হৃদিতকে কখনো ভুল বুঝবি না।মনে রাখবি স্বচক্ষে দেখাতেও মিস্টেক হতে পারে‌।ঝগড়া,ঝামেলা এগুলো কখনো কোনো কিছুর সলিউশন হতে পারে না। নিজেদের মধ্যকার ঝামেলা নিজেরা ডিসকাশন করেই ঠিক করে নিবি।ঘরের কথা কখনো বাইরে বলে হাসির পাত্রী হবি না।আর এই বাড়ির দরজা সবসময় তোর জন্য খোলা।কখনো যদি ওই বাড়িতে নিজেকে বোঝা মনে হয় এক সেকেন্ড ও অপচয় না করে তোর মায়ের বুকে ফিরে আসবি।”

মেহরিমা ঠোঁটে হাসি চোখে পানি নিয়ে অবনী শেখের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই মানুষ টা এতো অদ্ভুত রকমের ভালো কেনো?মেহরিমাকে এতোটা বোঝে কিভাবে?সব মায়েরাই বোধহয় এমন হয়।

“অবনী খেতে দেও।নাস্তা করে বাইরে যাবো।”

জলিল শেখের কথায় অবনী শেখ মেহরিমার মাথায় ছোট্ট একটা চু মু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।মেহরিমার উদ্দেশ্যে বলে,

“রুমে যেয়ে হৃদিত কে উঠিয়ে ফ্রেশ হতে বল।”

“আচ্ছা।ও বাবা শিহাবের জা না জা কখন?”

“নয়টা পনেরো তে আম্মা।”

“তুমি জা না জা য় যাবে বাবা?”

“হুম।”

মেহরিমা আর কিছু না বলে গেস্ট রুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরে।মেহরিমা রুমে এসে দেখে হৃদিত উপুড় হয়ে ঠোঁট টা লাভ শেইপ করে বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে।মেহরিমা গুটি গুটি পায়ে বিছানার নিকট এগিয়ে যায়।হৃদিত কে দেখতে নিষ্পাপ ছোট্ট একটা বাচ্চার মতো লাগছে।মেহরিমার খুব করে মন চাইলো একটু আদর করে দিতে।পরক্ষণেই নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়।এই ছেলে সুবিধার না একদম।কিছু তো একটা আছেই এই ছেলের মাঝে!এই ছেলের কাছে আসলেই মেহরিমা কেমন যেনো বেশামাল হয়ে যায়।না জানি কবে কি অ ঘ ট ন ঘটিয়ে ফেলে!মেহরিমা নিজেকে খুব করে সামলায়। অতঃপর আস্তে আস্তে ডাক দেয়,

“এই শুনছেন?বেলা হয়েছে অনেক। উঠে পড়ুন।বাবা আপনার সাথে নাস্তা করার জন্য ওয়েট করছে।”

মেহরিমার কথা হৃদিত আদৌও শুনলো কি শুনলো না কে জানে! একটু নড়েচড়ে আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।মেহরিমা পড়েছে বিপাকে।এবার ডাকার জন্য গায়ে হাত দিতেই হৃদিত মেহরিমাকে একটানে নিজের নিচে নিয়ে ওর গায়ের উপর পা তুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে।মেহরিমা লজ্জায়, আতংকে হাঁসফাঁস করতে থাকে।

“শ.. শুনুন দরজা খোলা। আপনি উঠে পড়ুন প্লিজ।”

হৃদিত ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বলে,

“তাহলে তুই কি চাচ্ছিস আমি দরজা লক করে দিয়ে আসি?”

হৃদিতের এহেন কন্ঠস্বরে মেহরিমা থমকায়‌!বুকের মাঝে হৃৎপিণ্ড টা আবারও শব্দ তুলে ধ্বক ধ্বক করে চলেছে।মেহরিমা জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে,

“বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। এমন করবেন না প্লিজ।”

“হুশশশ!বউজান।স্টপ টকিং। তুই না আমার ভালো বউ? তাহলে এতো জ্বালাস কেনো? চুপচাপ থাক।”

মেহরিমা মোচড়া মুচড়ি করতে করতে এক সময় শান্ত হয়ে যায়।এই ছেলের সাথে পেরে ওঠা সম্ভব নয়।মেহরিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।হৃদিত চোখ বুজেই মুচকি হাসে।পাঁচ মিনিট পর নিজে থেকেই মেহরিমা কে ছেড়ে দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।মেহরিমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে নির্ঘাত জান টাই বের হয়ে যেতো!পনেরো মিনিট সময় নিয়ে হৃদিত ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর সবাই মিলে একসাথে সকালের নাস্তা করে। জলিল শেখের সাথে হৃদিত ও শিহাবের জা না জা য় শরিক হতে যায়।মেহরিমা মনে মনে খুব খুশি হয়।ওর ভালোবাসার মানুষ টা কত্ত ভালো!একটা ন র প শু র জানাজায় শরিক হতে যাচ্ছে তাও যে কিনা মেহরিমার সম্মান নিয়ে খেলতে চেয়েছিল!কতো ভালো মনের মানুষ হৃদিত।কত সহজেই ক্ষমা করে দিয়েছে প শু টা কে।মেহরিমা মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে যে ও সঠিক মানুষকেই ভালোবেসেছে।যার মধ্যে নেই কোনো হিং স্র তা।আছে শুধু মায়া আর ভালোবাসা।নিজের ভাবনাই নিজেই মুচকি হাসে মেহরিমা।মেহরিমার হাসি দেখে মাধবী বলে,

“কি রে মেহু পাগল হলি নাকি? হঠাৎ হাসছিস কেনো?”

“কিছু না মাধুপু।ও মাধুপু চলো না আমার সাথে চৌধুরী বাড়িতে।আজ থাকবে আমার সাথে।”

“ধুর পাগলি তাই হয় নাকি?বাবা মা একা হয়ে যাবে না?আর তাতে কি এইতো দশ মিনিটের পথ। যখন মন চাইবে আমি চলে যাবো।আর ওখানে তৃধা আছে তো। সমস্যা হবে না বোন।”

ওদের কথার মাঝেই হৃদিত আর জলিল শেখ বাসায় আসেন।হৃদিত এসে ধপ করে মেহরিমার পাশে বসে মেহরিমার ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে,

“বাইরে খুব গরম বুঝলি?যা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দে।আর দশ মিনিটের মধ্যে লাগেজ গুছিয়ে নে।আমরা বের হবো।”

হৃদিতের কাজে মেহরিমা লজ্জা পেলেও আপাতত লজ্জা এক পাশে রেখে হৃদিতের কথামত সব কাজ করে।পাছে যদি রেগে যেয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করে!

সময় দুপুর বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট।মেহরিমা অবনী শেখ আর মাধবীর সাহায্যে সব তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিয়েছে। এখন ওরা বাড়ির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে। বিদায় বেলা বড়ই হৃদয়বিদারক।মেহরিমা ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদেই চলেছে।হৃদিত রিতিমত বিরক্ত। তবুও চুপচাপ বকুল গাছের নিচে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত জোড়া ভাজ করে দাড়িয়ে আছে। জলিল শেখ হৃদিতের নিকট এগিয়ে যায়।হৃদিতের হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

“বাবা,মেহু আমাদের খুব আদরের।আমরা কখনো ওর গায়ে একটা ফুলের টোকা পর্যন্ত লাগতে দেই নি। কিন্তু গত পরশুদিন কিভাবে কি হয়ে গেলো!আমার প্রাণ তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি বাবা। কখনো যদি ও তোমার কাছে বিরক্তির কারণ অথবা বোঝা হয়ে যায় আমাকে শুধু একটাবার জানিও আমি যেয়ে ওকে নিয়ে আসবো কিন্তু তবুও ও কে কখনো কষ্ট দিও না বাবা।আমি বাবা হিসেবে ব্যর্থ আমার দায়িত্ব পালনে। তুমি হাসবেন্ড হিসেবে ব্যর্থ হয়ো না বাবা।”

কথাগুলো বলে জলিল শেখ ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেন।মেহরিমার কান্না আরও বেড়ে যায়। অবনী শেখ ছলছল চোখে জলিল শেখের দিকে তাকিয়ে থাকে।হৃদিত কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে যায়! ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি টেনে বলে,

“আজ থেকে ও কে ভালো রাখার সব দায়িত্ব আমার বাবা।আমি একজন বেস্ট হাসবেন্ড হয়ে দেখাবো।ও কে অভিযোগের জন্য কোনো সুযোগই দেবো না।আপনারা শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন বাবা।”

হৃদিতের কথায় জলিল শেখ চোখের পানি মুছে সন্তুষ্টির হাসি হাসেন।মেহরিমা জলিল শেখ কে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থেকে একে একে সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।মাধবীর কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে।জলিল শেখ দুই হাতে মাধবী কে আগলে নেন।অবনী শেখ হৃদিতের নিকট এসে ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখেই বলে,

“নীলাক্ষীর প্রতি অনেক দায়িত্ব তোমার। আশাকরি যথাযথভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করবে। সামনে কিন্তু বড় ঝড় উঠতে চলেছে হৃদিত।সবদিক মাথায় রেখো।আমি কখনো ও বাড়িতে পা দেবো না।সো, তোমাকেই নীলাক্ষীকে সবদিক থেকে আগলে রাখতে হবে।আমার দোয়া সবসময় তোমাদের সাথে আছে।আর এদিকের সবকিছু আমি সামলে নেবো।সাবধানে থেকো।”

হৃদিতের ঠোঁটে বাঁকা হাসি।

“আপনার বিশ্বাস কখনো ভাঙবে না মা।আরিফ হাসান চৌধুরী জীবনে বড্ড ভুল করেছেন। একপ্রকার হেরেছেন তিনি।”

“চৌধুরী রা অলওয়েজ ভুলই করে।ওরা কখনো জিততে পারে না।”

“আমি কিন্তু জিতেছি মা।”

হৃদিত কথাটা বলেই হেসে ওঠে।অবনী শেখের মুখের হাসিটাও চওড়া হয়।হৃদিত সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চৌধুরী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।গাড়ির মধ্যে ভালোবেসে কাজ না হওয়ায় ধমকে ধামকে মেহরিমার কান্না থামিয়েছে হৃদিত।মেহরিমা এখন নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।দশ মিনিটের ব্যবধানে ওরা চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছে যায়।হৃদিতের গাড়ি চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করতেই সবাই ছুটে আসে ওদের নিকট।আজ চৌধুরী বাড়ির সবাই যেনো একটু বেশিই খুশি।হৃদিত এই খুশির কারণ সবটাই জানে শুধু অজানা মেহরিমার নিকট।মেহরিমা সবার খুশি দেখে নিজেও খুব খুশি হয়।মেহরিমার মুখে হাসি দেখে হৃদিত যেন দেহে প্রান ফিরে পাই।অ্যানাবেলার চোখের পানি হৃদিত একদমই মেনে নিতে পারে না।ভেতর থেকে তীব্র অশান্তি অনুভব হয়। নিজের ভাবনার মাঝেই হৃদিতের চোখ যায় চৌধুরী বাড়ির সদর দরজায়।হৃদিত কুটিল হেসে দরজার নিকট উপস্থিত মানুষ দু’টোর দিকে তাকিয়ে থাকে।হৃদিতের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অর্থ খুব করে বুঝতে পারে মানব দুটো।যেনো ওই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ওদেরকে ইঙ্গিত করে বলছে,

“সবে তো সব কিছুর শুরু।জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি।”

#চলবে_____

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_১৩
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌

হৃদিত কে দেখে আয়াশ আর আরিশা সদর দরজা থেকে সামনে এগিয়ে আসে।

“কেমন আছিস?”

“আরে মন্ত্রী সাহেব যে!আর কতদিন এভাবে অন্যের চামচামি করবে বলোতো?”

“হৃদিত তুই কিন্তু একটা হাসিখুশি পরিবারের মাঝে দেয়াল তুলছিস।তাদের ভালো থাকাটা কেড়ে নিচ্ছিস।”

“বিশ্বাসঘাতক দের পরিবার আবার হাসিখুশিও হয় নাকি?বিশ্বাসঘাতকদের সাথে আবার কিসের ভালো থাকা মন্ত্রী সাহেব?”

“তোর জন্য বাবা মায়ের কিছু হয়ে গেলে আমি কিন্তু তোকে ছেড়ে কথা বলবো না।”

“উরে বাবা!খুব ভয় পেলাম।”

হৃদিতের ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি।হৃদিতের একরোখামি কথা বার্তায় আয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“বাবা মা আসবে আজকে রাতে।”

“পঁয়ত্রিশ বছরের রেকর্ড ভাঙতে নাকি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য?”

“তুই কিন্তু এবার বেশি বেশি বলছিস।”

“সত্যি কথা যায়গা মতোই লাগে।”

“আরে তোমরা থামো তো।তা হৃদিত ভাইয়্যু শেষ পর্যন্ত ওই চরিত্রহীন পরিবারের মেয়েকেই বিয়ে করলে?তাও আবার ভালোবেসে! নিশ্চয় মেয়েটাও ওর পরিবারের মতোই।”

আরিশার কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই তৎক্ষণাৎ হৃদিতের মুখমণ্ডল পরিবর্তন হয়ে যায়।

“মন্ত্রী সাহেব তোমার বিলভড ওয়াইফ কে বলে দেবে তার বাতাসের আগে চলা মুখটা যেনো বন্ধ রাখে। নাহলে দেখা যাচ্ছে তার বডি তে সব অর্গান আছে কিন্তু কথা বলার জন্য দুটো ঠোঁট আর জিহ্বা টা নেই। অ্যান্ড ইউ নো আমি কি কি করতে পারি।”

পুরুষালী থমথমে কন্ঠে কথাগুলো বলে হৃদিত সদর দরজার দিকে হাঁটা ধরে।ততক্ষণে মেহরিমাকে নিয়ে চৌধুরী পরিবার ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয়েছে।

“দিলে তো হৃদিত কে রাগিয়ে।আরিশা দয়া করে তুমি তোমার মুখটা একটু বন্ধ রাখবে।আমি শান্তি চাই।সব সময় তো তোমার এতো কথা বলার প্রয়োজন দেখি না আমি।আ’ম টায়ার্ড।রুমে যাচ্ছি।”

“আশ্চর্য!ভুল কিছু তো বলিনি আমি।চরিত্রহীনকে তো চরিত্রহীনই বলবো তাই না?”

“তুমি সবটা জানো না।কোনো কিছু না জেনে কারোর দিকে আঙ্গুল তোলার কোনো রাইট নেই তোমার।”

“তাহলে আমাকে সব সত্যিটা বলো।”

“আমি বাধ্য নই।”

নিজের কথা শেষ করে বড় বড় কদম ফেলে ওখান থেকে প্রস্থান করে আয়াশ।আরিশা র ক্ত চক্ষু দিয়ে আয়াশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

“আমিও দেখবো আর কতদিন এই চৌধুরী পরিবার ফেরেস্তার মুকুট পরে থাকতে পারে!এখন তো আমি আর একা নই।চৌধুরীদের দূর্ভোগ অতি নিকটে।”

আরিশার ঠোঁটে কুটিল হাসি।মেহরিমা কে ঘিরে ধরেছে সবাই মিলে।সবার এত্ত এত্ত প্রশ্ন!মেহরিমা সবার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে রিতিমত হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে।হৃদিত দুই মিনিট মতো দাঁড়িয়ে সবটা পর্যবেক্ষণ করে।

“মেহরিমা রুমে আয় ফাস্ট।”

এই প্রথম হৃদিতের মুখে নিজের নাম শুনে মেহরিমার অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়।তাও আবার পুরো নাম ধরে ডেকেছে।যে নামে সচরাচর কেউ ডাকে না।বলা চলে এই নাম শুনতে মেহরিমা মোটেও অভ্যস্ত না।মেহরিমা পিছন ফিরতেই দেখে হৃদিত হাওয়া।ততক্ষণে দোতলায় উঠে পড়েছে।চৌধুরী বাড়ি দেখাশোনা করে আবুল চাচা লাগেজ নিয়ে উপরে ছুটছে।উপস্থিত সবার মুখে চাঁপা হাসি।

“এই তৃধা মেহু মাকে হৃদিতের রুমে দিয়ে আয়। আমার ছেলেটার নিশ্চয় কোনো দরকার। আর ছোটু কিচেনে চল।আজ তুই আর আমি মিলে অনেক পদের রান্না করবো।কতগুলো বছর পর বড় ভাইয়া আর ভাবী আসবে।আমার তো খুশিতে কান্না পাচ্ছে।”

“হ্যাঁ আপা চলেন।হাতে অনেক কাজ।”

আতিয়া চৌধুরী আয়েশা চৌধুরীর কথায় সহমত পোষণ করে দু’জনে একসঙ্গে কিচেনে চলে যায়।ওনাদের সাহায্য করার জন্য রাবেয়া ফরিনা চাচিও কিচেনের দিকে যায়‌।থেকে যায় তাবান,তাইফ তৃধা আর মেহরিমা।

“ভাবী আপনার বয়স কতো?”

তাইফের ভাবী আর আপনি সম্বোধনে মেহরিমা খানিকটা লজ্জা পায়।মুচকি হেসে জবাব দেয়,

“উনিশ বছর পাঁচ মাস রানিং ভাইয়া।”

মেহরিমার কথায় তাইফ কিছু একটা ভেবে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে,

“উনিশ বছর পাঁচ মাস বয়সে আপনি মাত্র একাদশ শ্রেণীতে পড়েন ভাবী?”

মেহরিমার লজ্জা এবার আকাশ ছোঁয়া।মুখটা মলিন করে বলে,

“সেই কথা আর বলবেন না তাইফ ভাইয়া!সব মায়ের জন্য হয়েছে।প্লে, নার্সারি পড়িয়েও আবার ক্লাস ওয়ানে দুই বছর পড়িয়েছে।তাই তো এই অবস্থা আমার।”

মেহরিমার কথায় তাবান হেসে বলে,

“সমস্যা নেই ভাবী। আপনার সাথে ভাইয়ার বয়স একদম খাপে খাপ। আপনাদের দু’জন কে পাশাপাশি দাঁড়ালে যা লাগে না ভাবী!পুরাই রাজ জোটক।”

তাবানের কথায় মেহরিমার মুখে লাজুক হাসি ফুটে ওঠে।

“তাবান ভাইয়া ওনার বয়স কতো?”

“সাতাশ রানিং।”

মেহরিমা মনে মনে হিসাব কষে।হৃদিত আর মেহরিমার এইজ ডিফারেন্স প্রায় সেভেন ইয়ার্স। ওদের কথার মাঝে আবারও হৃদিতের ডাক শোনা যায়।তৃধা দ্রুত মেহরিমা কে হৃদিতের রুমের সামনে দিয়ে আসে।মেহরিমা হৃদিতের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কেমন এক অজানা ভয়, আবার ভালোলাগা মনের মাঝে উঁকি দিচ্ছে।মেহরিমা এই প্রথম হৃদিতের রুমে পা রাখবে তাও তার ওয়াইফ হিসেবে এজন্যই হয়তো এমন অনুভূতি!

“আর এক মিনিট ও যদি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নষ্ট করিস।আই সোয়্যার…”

হৃদিতের কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে দরজা টা আস্তে করে খুলে ভেতরে প্রবেশ করে মেহরিমা‌।ভেতরে প্রবেশ করতেই মেহরিমা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়!কিছুক্ষণের জন্য থমকায়!ওর মনে হচ্ছে ও ভুলে কোনো পার্পল ইউনিভার্সে চলে এসেছে।পুরো রুম পার্পল কালারে ডেকোরেশন করা।রুমের ওয়াল,বেডসিট থেকে শুরু করে ক্যাবিনেট সব পার্পল কালারের।রুমের অর্ধ শতাধিক অংশ অন্ধকার।জানালার পর্দা নামানো।পর্দার ফাঁকে ফাঁকে সামান্য আলো এসে উকি দিচ্ছে রুমটাতে‌‌।রুমের মধ্যে পার্পল কালারের ফেইরি লাইট গুলো মৃদু আলোয় জ্বলছে।চোখ ধাঁধানো সুন্দর এক পরিবেশ!মেহরিমা অবাক চোখে সবটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।হঠাৎ ঘাড়ে কারোর গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতেই মেহরিমা আঁতকে উঠে ওখান থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রয়াস করতে চাইল।কিন্তু তার আগেই হৃদিত নিজের বলিষ্ঠ হাতজোড়া দিয়ে মেহরিমার নরম কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।মেহরিমার উ ন্মু ক্ত ঘাড়ে থুতনি রেখে বলে,

“পছন্দ হয়েছে?”

মেহরিমা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দেয়,

“কিসের কথা বলছেন?”

“এই রুম,আমাদের রুম পছন্দ হয়েছে?”

“খুউউব।”

“আমার থেকেও বেশি?”

হৃদিত এতোটা নিকটে থাকায় মেহরিমার নাজেহাল অবস্থা।বুকটা লাগামহীনভাবে ধড়ফড় করেই চলেছে।হাত পা কেমন অবশ হয়ে আসছে।শরীরে শক্তি পাচ্ছে না একবিন্দুও।তারমধ্যে হৃদিতের হাস্কি ভয়েসের এমন প্রশ্নে মেহরিমা বেশামাল হয়ে পড়ার উপক্রম।তবুও নিজেকে সামলায়।জবাব দেয়,

“আপনার থেকে ইম্পর্ট্যান্ট আপাতত আমার লাইফে কিছু নেই।”

মেহরিমার কথায় হৃদিত সন্তুষ্টির হাসি হাসে।মেহরিমার ঘাড়ে গুনে গুনে তিনটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে ছেড়ে দেয়।ফেইরি লাইট গুলো অফ করে দেয়। জানালার পর্দা গুলো সরিয়ে ফেলে।মূহুর্তের মধ্যেই পুরো রুম প্রকৃতির আবছা আলোয় ঝলমল করে ওঠে।হৃদিতের রুম টা দোতলার একদম কোণায় হওয়ায় সম্পূর্ণ গাছপালায় আচ্ছাদিত।যার ফলস্বরূপ রুমে আলো সম্পূর্ণরূপে এসে পৌঁছাতে পারে না।গাছপালার ফাঁক ফোকড় দিয়ে প্রবেশ করে আলো।

“ক্যাবিনেটে তোর সকল ড্রেস আছে।ওয়াশ রুমে যেয়ে শাওয়ার নে।রিফ্রেশ লাগবে।”

মেহরিমা তখনও অনবরত কেঁপে চলেছে।এই প্রথম পাওয়া ঠোঁ টে র স্পর্শে মেহরিমার মনের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।ভেতরে ভেতরে কেমন ছটফট অনুভূত হচ্ছে।মেহরিমা নতুন সব অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে আজ।মেহরিমার উশখুশ অবস্থা দেখে হৃদিতের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি খেলে যায়।

“কাম ডাউন লিটল কিটি।জান ইউ নো ইটস আ নিউ ফিলিংস ফর আস।জাস্ট ফিল ইট।”

হৃদিতের এমন বে ফাঁ স কথায় মেহরিমা লজ্জা পেয়ে যায়।হৃদিতের সামনে থেকে তাড়াতাড়ি পালানোর জন্য বলে,

“আমার ড্রেস তো লাগেজে ছিলো?”

“ক্যাবিনেটে আমি রেখেছি।”

মেহরিমা আর কিছু না বলে ক্যাবিনেট থেকে একটা মেরুন কালারের থ্রি পিচ নিয়ে দ্রুত ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়ে। তাড়াহুড়ো করে টাওয়াল টা নিতেও ভুলে যায়।হৃদিত মেহরিমার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মুচকি হাসে।অতঃপর রুমের অসমাপ্ত কাজ গুলো গোছাতে লেগে পড়ে।তার অ্যানাবেলা কে এখনও অনেক সারপ্রাইজ দেওয়া বাকী।

#চলবে_______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে