কাঠগোলাপের আসক্তি পর্ব-০৬

0
86

#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_০৬
#ইসরাত_তন্বী

❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌

সময় বিকাল বেলা।সূর্যি মামা আজকের মতো বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।পুকুরের পানি মৃদু সূর্যের আলোয় ঝলমল ঝলমল করছে।ঠান্ডা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।চৌধুরী বাড়ির ফুল বাগান থেকে ভেসে আসছে নাম না জানা ফুলের মিষ্টি সুবাস।

হৃদিত বাড়ির পিছনে একা একা বসে গিটারে সুর তুলে গান গাইছে।তাইফ আর তাবান খেলার মাঠে গেছে ফুটবল খেলতে।নাহলে এতক্ষণে হৃদিতকে বিরক্ত করে ছাড়তো!হৃদিতের গান গাওয়ার মাঝেই হঠাৎ ওর ফোনটা নিজ শব্দে বেজে ওঠে।হৃদিতের কোনো কাজের মাঝে ডিস্টার্ব একদম পছন্দ না।ওর মেজাজ বিগড়ে যায়।তবুও অনিচ্ছা নিয়েই প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা টা বের করে হাতে নেয়।ফোনের স্ক্রিনে নিজের বাবার আনসেইভ নাম্বার টা দেখতেই হৃদিত বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে কল রিসিভ করে,

“বলুন এমপি আরিফ হাসান চৌধুরী।কি দরকারে আমাকে স্মরণ করেছেন?”

“আমি কি শুধু প্রয়োজনেই তোমাকে কল দিই বাবা?”

“জ্বি এমপি স্যার।”

হৃদিতের কাঠখোট্টা জবাবে আরিফ হাসান মলিন হেসে বলেন,

“বাসায় আসবে কবে?তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না কিছু।তোমার মা কান্না করছে শুধু।তুমি কারোর কল ও রিসিভ করছো না!”

“কেনো আপনার বউ,ছেলে,বউমা আছে তো! আমাকে কেনো প্রয়োজন স্যার?আর তাছাড়া ঢাকাতে থাকলে আপনার রাজপ্রাসাদে আমি কয়দিন থাকি স্যার?আমাকে কাইন্ডলি একটু বলবেন প্লিজ।আপনার বউকে বলবেন এইসব কুমিরের কান্না যেন আমার জন্য না করে।”

“এভাবে কেনো বলছো?আমরা তোমার বাবা মা।”

“আমি মানি না।”

“তুমি মানো বা না মানো সত্য এটাই।আর সত্য সবসময় সত্যই থাকে।”

“ঠিক বলেছেন স্যার।সত্য সবসময় সত্যই থাকে।সত্য কখনো মুছে ফেলা সম্ভব না।”

কথাটা বলেই হৃদিত কল কেটে দেয়।হৃদিত কল কাটতেই আরিফ হাসানের চোখে জলেরা হানা দেয়।এই বিষাক্ত অতীত কবে পিছু ছাড়বে?এই অতীত যে আর টানা সম্ভব না।এর থেকে বরং মৃ ত্যু ই শ্রেয়! নিজের জানের টুকরো ছেলেকে আরিফ হাসান হারিয়ে ফেলেছে।সেই ছোট্ট হৃদিত আর এই হৃদিতের মাঝে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য!
হঠাৎ কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতেই পিছনে ফিরে তাকায় আরিফ হাসান।শ্রেয়া চৌধুরী কে দেখে চোখের জল লুকোনোর বৃথা চেষ্টা করে।শ্রেয়া চৌধুরী মলিন হেসে বলেন,

“কান্না করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“এটা কি আদৌও ঠিক হওয়ার মতো?মিথ্যা শান্তনা আর কতো দিবে শ্রেয়ু।”

“তোমার সাথে সাথে একই পাপ আমিও বয়ে বেরাচ্ছি আরিফ। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। আমাদের ছেলে আমাদের কে একদিন ঠিক বুঝতে পারবে।”

“আমার পাপের কোনো ক্ষমা নেই শ্রেয়ু।আর না কখনো তোমাকে ক্ষমা করবো আমি।”

কথাটা বলেই ঘর থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে বাইরে চলে যায় আরিফ হাসান।শ্রেয়া চৌধুরী ছলছল চোখে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
__________

হৃদিত তখন মেহরিমা কে ডক্টর দেখিয়ে মার্কেটে যেয়ে বোরকার সাথে প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিয়ে বাসায় রেখে গেছে।মেহরিমা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়েছিল।অবনী শেখ তিনটার দিকে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে মেহরিমার হাতে ব্যান্ডেজ দেখতে পেয়েই পুলিশের মতো জেরা শুরু করেছিলেন।মেহরিমা সব পারলেও অবনী শেখের ঈগল দৃষ্টির সামনে মিথ্যা বলতে পারে না। তবুও আজ আগে থেকেই প্রিপারেশন নিয়ে রাখায় বেশ সাজিয়ে গুছিয়েই মিথ্যা বলেছিল।সবটা শুনে অবনী শেখ বিশ্বাস করেছিলেন কি কে জানে!তবে মেহরিমাকে আর প্রশ্ন করেন নি।মেহরিমা এখনো বোরকার ব্যাপার টা জানায়নি অবনী শেখ কে। একদিনে এতকিছু ঘটালে ওর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন মা অতি সহজেই সব বুঝে ফেলবেন।এমনিতেই অবনী শেখ চৌধুরী দের কেনো যেনো সহ্য করতে পারে না।মেহরিমাকে চৌধুরী ভিলাতে ও সহজে যেতে দেয় না।মেহরিমা বিষয় টা নিয়ে অতোটা মাথা ঘামায় না। কারণ ওর মা ওদের দুই বোন কে খুব প্রয়োজন ছাড়া কোথাও ই যেতে দেয় না। তবে চৌধুরী বাড়ির প্রতি একটু বেশিই করে এই যা!মেহরিমা ভেবে রেখেছে হাতের বাহানা দিয়ে এখন কয়দিন কলেজে যাবে না। তারপর ডক্টর দেখানোর নাম করে বাইরে যেয়ে বাসায় এসে বলবে বোরকা কিনে এনেছে। এখন ভালোই ভালোই প্লানিং মতো সবকিছু হলেই হলো।

“নীলাক্ষী মা আমার ঘুমিয়ে পড়েছিস?”

মায়ের কন্ঠ শুনে মেহরিমা ওর সামনে রাখা বইতে মনোযোগ দেয়। অবনী শেখ আর মাধবী মেহরিমার ঘরে এসে খাটে বসে।মেহরিমা ওদের দিকে চেয়ার ঘুরিয়ে হাসিখুশি মুখে সামনাসামনি বসে।

“এতো রাত হয়ে গেলো এখনো পড়ার টেবিলে বসে আছিস কেনো?মাথা যন্ত্রণা করবে তো।সময় মতো সব কাজ করবি।”

অবনী শেখের কথায় মেহরিমা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।মাধবী বলে,

“মা তুমি এতো টাইমলি সব কাজ কিভাবে করো গো?”

“আমরা চাইলে সবই করতে পারি।শুধু ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন।এই দেখ যারা ডক্টর তাদের কে তো দিনের প্রায় অর্ধেক সময়ই হসপিটালে কাটাতে হয়।তারাও তো নিজেদের সংসার,বাচ্চা সব সামলিয়ে থাকে।তাই চাইলে সব সম্ভব।পানচুয়ালিটি আমাদের লাইফের খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা পার্ট।যে যতো বেশি পানচুয়াল সে ততো বেশি সাকসেসফুল।”

“তুমি কতো বোঝো মা!”

মেহরিমার বোকা কথায় অবনী শেখ মুচকি হেসে বলেন,

“সময় হোক তোরাও বুঝবি।মনে রাখবি সময় আর পরিস্থিতি মানুষ কে সবচেয়ে বেশি ম্যাচিউর করে তোলে।যে যত বাস্তবতার কবলে পড়বে জীবনে সে ততো বেশি শিখবে,ততো বেশি শক্ত হবে।তবে দোয়া করি আমার মতো এতো বাস্তবতার সম্মুখীন তোদের যেনো হতে না হয়।”

মেহরিমা বোঝ দ্বারের মতো মাথা নাড়ে।মেহরিমা অবনী শেখ কে ওনার বলা শেষ কথাটা নিয়ে যখনই প্রশ্ন করতে যাবে তখনই ওদের বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে।মেহরিমাদের এক তলা বিশিষ্ট ঘরটা বেশ পরিপাটি,মান সম্মত।অবনী শেখ দরজা খুলতে এগিয়ে যায়। পিছন পিছন মেহরিমা আর মাধবী ও আসে। অবনী শেখ দরজা খুলতেই জলিল শেখ কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেহরিমা আর মাধবী ওনার বুকের উপর হামলে পড়ে। জলিল শেখ দেহে যেন প্রাণ ফিরে পায়। কলিজার টুকরা মেয়ে দুটোকে ছাড়া জলিল শেখ এই কয়দিন একটুও শান্তিতে ছিলেন না। উনি মুচকি হেসে দুই মেয়েকে দুই হাতে আগলে নেন।

“মিনাক্ষী,নীলাক্ষী তোদের বাবা অনেক পথ জার্নি করে এসেছে। ওনাকে ফ্রেশ হতে দে।”

অবনী শেখের কথা শুনে মাধবী আর মেহরিমা জলিল শেখকে ছেড়ে দেয়।জলিল শেখ মেঝে থেকে ব্যাগটা তুলে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

“আমার আম্মারা কেমন আছে?”

মাধবী আর মেহরিমা মুচকি হেসে একসাথে বলে,

“আলহামদুলিল্লাহ বাবা।”

“মেহু মা তোমার হাতের ব্যথা কমেছে?”

মেহরিমা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,

“বাবা তোমার আসতে এতো লেইট হলো কেনো?আমরা সবাই সেই সন্ধ্যা থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।গ্রামের মানুষ তো চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান করে বাড়ির মাটি রাখছিল না।”

জলিল শেখ মুচকি হেঁসে বলেন,

“একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে যাওয়ায় দেরি হয়ে গেলো আসতে। গ্রামের মানুষের আস্থার যায়গা আমি আম্মা। তাই ওরা তো আসবেই আমার কাছে।”

“রাত এগারোটা বাজে।মিনাক্ষী,নীলাক্ষী নিজেদের ঘরে যেয়ে ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে। কালকে ফজরের নামাজের সময় উঠতে যদি দু’জন একটুও বাহানা করিস। তাহলে একটা মার ও কিন্তু মাটিতে পড়বে না।”

অবনী শেখের কথায় ওরা দু’জন সুরসুর করে ওখান থেকে কেটে পড়ে। জলিল শেখ হাসতে হাসতে বলে,

“তুমি পারো বটে।”

“এভাবে না বললে আজ সারারাত তোমার সাথে গল্প করেই কাটিয়ে দিতো দু’জন।তিন দিনের গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসবে শুনে দেখো!আচ্ছা চলো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেস্ট নিবে তুমি।”

“হ্যাঁ,চলো।”

মেহরিমা রুমে এসে দরজা লক করে শুয়ে পড়ে।কি মনে করে যেন ফোন টা হাতে নেয়।হৃদিতের নাম্বার থেকে ১০+ মিসড কল দেখতেই মেহরিমা আঁতকে ওঠে।দিক দিশা হারিয়ে তাড়াতাড়ি কল দেয় হৃদিতের নাম্বারে ।আর সাথে সাথেই কল রিসিভ হয়।হৃদিত বোধহয় মেহরিমার কলের অপেক্ষাতেই ছিলো।মেহরিমা ফোন কানে ধরে চুপচাপ বসে আছে।মুখ দিয়ে যেন কোন কথা বের হচ্ছে না।হৃদিত ও চুপচাপ আছে।ফোনের দুই পাশেই নিস্তব্ধতা।শুধু দুই জনের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিনিট দুই পেরিয়ে যাওয়ার পর হৃদিত হিসহিসিয়ে বলে,

“কল ধরলি না কেনো?”

হৃদিতের ভয়েস টা কেমন যেন শোনাই।মেহরিমা ভড়কে যায়। ভয়ে আমতা আমতা করে বলে,

“আ…আ..আমি বাইরে ছিলাম।ব…বাবা বাইরে বাসায় আসলো ম..ম…মাত্রই।”

“নেক্সট টাইম কল ধরতে এক সেকেন্ড ও লেইট হলে তোর অবস্থা খারাপ করে ছাড়বো আমি।”

মেহরিমা ভয়ে চুপসে যায়।ওপাশ থেকে হৃদিতের জোরে জোরে শ্বাস টানার শব্দ আসছে।হৃদিত দুই মিনিট সময় নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলে,

“কথা বলছিস না কেনো?তোর নিঃশ্বাসের শব্দ শুনিয়ে আমাকে বেশামাল করার জন্য কল দিলি নাকি?”

অমনি মেহরিমার মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়,

“নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে মানুষ বেশামাল কিভাবে হয় হৃদিত ভাই?”

“এখন জানতে চাস না।সহ্য করতে পারবি না।”
বিয়ের পরে প্র্যাকটিক্যালি দেখিয়ে দেবো।”

হৃদিতের এমন লা গা ম ছা ড়া কথা শুনতেই মেহরিমার গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।হৃদিত আবারও নরম স্বরে বলে,

“মাই লিটল কিটি!”

“হুম।”

“হাতের ব্যথা কমেছে?”

“হু।”

“ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করেছিস ?”

“উহু।”

“কেনো?”

“ভুলে গেছি।”

“পানিশমেন্ট দিলে সব মনে থাকবে।”

মেহরিমা শুকনো ঢোক গিলে বলে,

“কি পানিশমেন্ট দিবেন হৃদিত ভাই?”

“তুই তো বড্ড ছোট।আমার কোনো পানিশমেন্ট ই সহ্য করার ক্ষমতা নেই তোর।”

“আমি মোটেও ছোট না হৃদিত ভাই।”

“আমার বাচ্চার মা হওয়ার মতো বড় হয়েছিস কি?”

মেহরিমা এক মিনিট মতো সময় নিয়ে ছোট্ট করে জবাব দেয়,

“না।”

“তাহলে আর বড় হলি কোথায়?”

কথাটা বলেই হৃদিত হেসে ওঠে।মেহরিমা পাঁচ সেকেন্ডের সেই হাসির শব্দতে যেন নিজের সর্ব সুখ খুঁজে পায়।মেহরিমা অবাক ও হয়!এই গোমড়া মুখো মানুষ টা হাসতেও জানে!হাসলে ঠিক কতোটা সুন্দর লাগবে?নিশ্চয় চোখ ধাঁধানো সুন্দর!হৃদিতের কথায় মেহরিমা ভাবনা থেকে বেরিয়ে নড়ে চড়ে বসে।

“মেডিসিন নিছোস?”

“হুম।”

“আচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে পড়। আল্লাহ হাফেজ।”

“এই না,না শুনুন।”

মেহরিমার কথায় হৃদিতের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে।অতঃপর বলে,

“সামনে থাকলে তো কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিস।আর ফোনে তো একদম তোতাপাখি হয়ে গেছোছ।”

হৃদিতের কথায় মেহরিমার মনের মাঝে আবারও ভয়েরা উঁকি ঝুঁকি দিতে শুরু করে।এতক্ষণ তো ও ভুলতেই বসেছিল যে ও ওর যমের সাথে কথা বলছে!হৃদিত স্বাভাবিক ভাবেই বলে,

“কি বলবি বল?”

“ক…কি করছেন আপনি?”

“আর্ট করি। ঝেড়ে কেশে বল কি বলবি?”

“আ…আমি কয়দিন কলেজে যেতে পারবো না।আজ হাত নিয়ে মা কে মিথ্যা বলেছি যে আমি রাস্তায় পড়ে যেয়ে ওখানে আবার ব্যথা পেয়েছি।মা বিশ্বাস করেছে কি না জানি না।তাই বোরকার কথা বলার সাহস পাই নি।একটু সময় লাগবে।”

হৃদিত কি বুঝলো কে জানে!ও ঠোঁ ট কামড়ে কিছু একটা চিন্তা করে বলে,

“আচ্ছা।”

হৃদিতের কথা শুনে মেহরিমার ঠোঁ ট দুটো আপনা আপনিই দুদিকে সরে মুখ টা হা হয়ে যায়!হৃদিত একবারেই কথাটা মেনে নিয়েছে এটা যেন মেহরিমা বিশ্বাস করতে পারছে না।

“ঘুমিয়ে পড়।”

কথাটা বলেই কল কেটে দেয় হৃদিত।এদিকে মেহরিমার মনে চলছে অস্থিরতা। উনি কি রেগে গেছেন? রেগে কল রেখে দিলেন নাকি? আমার কি ওনাকে একবার কল দেওয়া উচিত?কল দিলে যদি ঝাড়ি মারে!এভাবে পনেরো মিনিট মতো উশখুশ করে নিজের মনকে শান্তনা দেয় মেহরিমা।কাল যা হবে দেখা যাবে।শরীর অসুস্থ থাকায় আর সময় নষ্ট না তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে।পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় মেহরিমা।

________

তাইফ আর তাবান পারমিশন না নিয়ে হঠাৎ হৃদিতের ঘরে ঢুকতেই চমকে ওঠে।হৃদিতের রুমে ড্রেসিং টেবিল সহ কাঁচের যত জিনিস আছে সব ভেঙ্গে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।হৃদিতের ডান হাত ক্ষ ত বি ক্ষ ত হয়ে র ক্ত ঝরছে।সেই র ক্ত দিয়েই ক্যানভাসে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘মাই অ্যাঞ্জেলা, মাই গার্ল’।হৃদিতের এইসব দিকে কোনো খেয়ালই নেই।ও আরামছে ওই ক্ষ ত বি ক্ষ ত র ক্ত ঝ রা হাত নিয়েই বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ঠোঁটে ওর মুচকি হাসি।তাবান আর তাইফ সাবধানতার সাথে দ্রুত ঘর পরিষ্কার করে ফেলে। তারপর কাউকে না জানিয়েই এতো রাতে ডক্টর ডেকে এনে হৃদিতের হাত ব্যান্ডেজ করে মেডিসিন লিখে নেয়।হৃদিত তখন ও নির্বিকার। ডক্টর চলে যেতেই হৃদিত বলে ওঠে,

“পারমিশন না নিয়ে এই রুমে আসার সাহস পেলি কোথায়?”

“ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া।ছরি।”

তাইফের কথায় হৃদিত বলে,

“নেক্সট টাইম যেনো আর এমন ভুল না হয়।এখন এই রুম থেকে যা।”

ওরা দু’জন মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।তাবান হঠাৎ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বল,

“ভাইয়া মেডিসিন…..”

তাবানের কথা শেষ করতে না দিয়েই হৃদিত গম্ভীর কন্ঠে হুংকার দিয়ে বলে,

“ওইসব ফা উ ল মেডিসিন তুই খা গা ধা। আমার মেডিসিন আমি পেয়ে গেছি।মাই অনলি মেডিসিন ইজ মাই অ্যাঞ্জেলা। নাউ গেট লস্ট।”

ওরা দু’জন খেয়াল করে হৃদিতের চোখ মুখের রং পরিবর্তন হয়ে কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে!হঠাৎ হৃদিতের ভয়েস আর চেহারার এমন পরিবর্তন হতেই তাইফ,তাবান ভয় পেয়ে কোনোরকমে দরজা লক করে হাওয়ার বেগে ওখান থেকে ছুটে পালায়।হৃদিত চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলতে থাকে ,

“মাই অ্যাঞ্জেলা,মাই লিটল কিটি ইয়্যু আর অনলি মাইন।অনলি মাইন অ্যান্ড নো ওয়ান এলসে’জ।”

#চলবে_______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে