#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_০৪
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌
(পর্বটাতে নৃ শং স খু নে র বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।ঘটনা প্রসঙ্গে,চরিত্র বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কিছু অসামাজিক ভাষা ব্যবহার করতে হয়েছে।আর হ্যাঁ এই পর্ব থেকেই গল্পের মূল প্লট শুরু।)
“মাধুপু গুনে গুনে চারটা থাপ্পড় মারো ওনার দুই গালে।”
মেহরিমার কথাটা কর্ণগোচর হতেই সাথে সাথে মাধবীর কান্না থেমে যায় ।ও চোখ বড় বড় করে মেহরিমার দিকে তাকায়।মাধবীর কোনো হেলদোল না দেখে পলাশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেহরিমা গুনে গুনে চারটা থাপ্পড় মেরে দেয় ওর গালে।থাপ্পড়ের শব্দে দোকানের সবাই হতভম্ব হয়ে মেহরিমাদের দিকে তাকায়।পলাশ ক্যারাম খেলছিল নিজের টিমের পোলাপানদের সাথে।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে নিজের সাথে কি ঘটে গেছে সেটা বুঝতে পেরেই দাঁত কিড়মিড় করে আগুন চোখে মেহরিমার দিকে তাকায় পলাশ।
“মা গি র ঝি তোর এতো বড় সাহস!তোরে তো আজ…”
কথাটা বলেই মেহরিমার ডান হাতটা বেঁকিয়ে শক্ত করে ধরে।মেহরিমা ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে।
“নে এবার দেখা তোর কত তে জ।আমিও আজ দেখবো চেয়ারম্যানের মেয়ির এত তে জ কোথায় থেকে আসে?তোর তেজ কি শুধু মাঠেই নাকি
খা টে ও?”
কথাটা বলার সাথে সাথেই পলাশের ডান গালে শব্দ তুলে আরও একটা থাপ্পড় পড়ে।অবনী শেখ রাগে রিতিমত কাঁপছে। মাত্রই উনি এখানে এসে পৌঁছেছেন। উনি চিৎকার করে বলেন,
“জা নো য়া র তোর সাহস কি করে হয় আমার মেহরিমা কে নিয়ে এতো বাজে মন্তব্য করার।জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি।তোর অ্যাগেইনস্ট এ আমি লিগ্যাল অ্যাকশন নেবো।”
পলাশের কথাটা শুনতেই রাগে,ক্ষোভে,দুঃখে মেহরিমার চোখ বেঁয়ে পানি পড়তে থাকে।অবনী শেখ এক ঝটকা মেরে পলাশের হাত থেকে মেহরিমার হাত ছাড়িয়ে নেন।যেখানে জা নো য়া র টা ধরেছে একদম রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে!ততক্ষণে ঘটনাস্থলে শ’খানিক মানুষের ভীড়।ইতোমধ্যে সবাই ঘটনার মূল কাহিনী জেনে নিজেদের মাঝে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।কেউ কেউ তো মেহরিমার মুখের উপরই বাজে বাজে কথা বলছে।আবার কেউ কেউ জলিল শেখের ক্ষমতার ভয়ে চুপ করে আছে।তবে মজা কম বেশি সবাই নিচ্ছে!মাধবী কেঁদেই চলেছে।মেহরিমা পাথর বনে গেছে একদম।
“নীলাক্ষী তোকে কোনো প শু র সামান্য কথার
আ ঘা তে ভে ঙ্গে পড়ার মতো করে গড়ে তুলি নাই আমি।যেখান থেকে আ ঘা ত পাবি সেখানেই ফিরতি আ ঘা ত করার মতো মনোবল থাকতে হবে।মনে রাখবি এরা মানুষ জাতি তোর কষ্টের কথা শুনবে,শান্তনা দেবে আবার এরাই তোর কষ্টে হাসবে।সুযোগ পেলে নিজেরা তোর কষ্ট আরও চারগুণ বাড়িয়ে দেবে।”
অবনী শেখ কথাগুলো বলে মেহরিমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।মেহরিমা মায়ের কথায় নিজের কঠিন সত্ত্বায় ফিরে আসে।তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলিয়ে চঞ্চল হাতে চোখের পানি মুছে ফেলে।অবনী শেখ দুই মেয়ে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা ফেলতেই পলাশ পথ আটকায়।পলাশ আবারও বি শ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর দৃষ্টি যায় ভিড়ের মাঝে থাকা কালো মণির একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টির দিকে।সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ভাষা বুঝতে পেরেই পলাশের চেহারা টা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়।পলাশ সাথে সাথেই মেহরিমার পা জোড়া জড়িয়ে ধরে।
“আ…আ…. আমার ভুল হয়ে গেছে আপু। আমাকে ক্ষমা করে দেন।আর এরকম ভুল কখনো হবে না।চাইলে আপনি আমাকে আরও একশো টা থাপ্পড় মারতে পারেন। তবুও আমাকে ক্ষমা করে দেন।”
থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলে পলাশ। সেকেন্ডের ব্যবধানে পলাশের এমন পরিবর্তনে সবাই হতবাক হয়ে যায়!অবনী শেখ তার ঈগল দৃষ্টি দিয়ে সবটাই খেয়াল করেন।আর তাতেই ওনার ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে ওঠে।মেহরিমা কিছু না বলেই নিজের পা জোড়া ছাড়িয়ে অবনী শেখ আর মাধবীর সাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে।
বাসায় এসে হাতে অনেক্ষণ বরফ ধরে যায়গাটা একটু স্বাভাবিক হতেই অবনী শেখ ওখানে মলম লাগিয়ে দেন।মেহরিমা দীর্ঘ তিন ঘন্টা সময় নিয়ে গোসল কমপ্লিট করেছে। তবুও নিজের মনের মাঝে তুমুল অশান্তি অনুভব হচ্ছে।মেহরিমার বার বার মনে হচ্ছে হৃদিত ওর নামের এইসব বাজে কথা শুনলে ও কে ভুল বুঝবে না তো!এই..এই হাতটা কি কেটে ফেলা উচিত?তাহলে কি হৃদিত আমাকে আগের মতোই কেয়ার করবে, ভালোবাসবে!হৃদিত ভুল বুঝলে নিজেকে একদমই সামলাতে পারবে না মেহরিমা।হঠাৎ মায়ের ডাকে নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে মেহরিমা।মায়ের হাতে চায়ের কাপ দেখে মুচকি হাসে ও।
“রাতে তো তেমন কিছুই খেলি না।চা টা খেয়ে নে।যত সময় নিয়ে গোসল কমপ্লিট করলি।নির্ঘাত গলা বসে যাবে তোর!”
মেহরিমা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে নেয়। এমনিতেই ঠান্ডার ধাঁচ বেশি ওর।
“হৃদিত এসেছে গ্রামে?”
চা টা কেবলই মুখে দিয়েছে মেহরিমা হঠাৎ মায়ের এমন প্রশ্নে ওর কাশি উঠে যায়।
“আরেহ আরেহ সাবধানে খাবি তো!”
মেহরিমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কথাটা বলেন অবনী শেখ।মেহরিমা নিজেকে সামলিয়ে দুই মিনিট মতো সময় নিয়ে বলে,
“আমি তো জানি না মা।তৃধা ও এমন কিছুই বলেনি আমাকে।”
অবনী শেখ সন্দেহজনক দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলে,
“আচ্ছা তাহলে চা টা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়।”
“আচ্ছা মা।বাবা কবে আসবে?”
“আগামীকাল সন্ধ্যায়।”
“মা,সমাজ মেয়েদের কে এতো ছোট চোখে কেনো দেখে?দোষ তো ছিল পলাশের।তাহলে সবার খারাপ কথার বলিদান আমি কেনো হলাম?”
মলিন মুখে বলে মেহরিমা।মেহরিমার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে অবনী শেখ বলেন,
“ওদের চিন্তাভাবনা ওদের মনের মতোই সংকীর্ণ মা।তুই আমার প্রিন্সেস।কেউ খারাপ বললেই খারাপ হয়ে যাবি নাকি!তুই কাঠগোলাপের মতো শুভ্র,স্নিগ্ধ। তোকে ক লু ষি ত করার আগেই সেই জ ঞ্জা ল ছেঁ টে পরিষ্কার করে দেবো আমি।এটা তোর মা অবনী শেখের ওয়াদা।”
কথাটা বলেই অবনী শেখ রুম থেকে বেরিয়ে যান।মেহরিমা অবনী শেখের যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।মেহরিমা সময় নিয়ে চা শেষ করে। তারপর রুমের দরজা লক করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে।নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে হৃদিতের ফেইসবুক আইডি তে যেয়ে ওর ছবি দেখতে থাকে।এই মানুষ টা কে ছাড়া মেহরিমার একটুও চলবে না!হোক না সে রাগী তাতে কি? কেয়ারিং ও তো কম না!
_______
সকাল সাতটায় মাধবীর ডাকে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে মেহরিমা। গতকাল রাতে হৃদিতের ছবি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল মেহরিমা বুঝতেই পারেনি।গতকালের সব কথা ভুলে মুচকি হেসে বিছানা ছাড়ে ও।দরজা খুলতেই মাধবীর ভীতু, উত্তেজিত মুখটা দেখে মেহরিমা বলে,
“কি হয়েছে মাধুপু। তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?”
“মেহু পলাশ ভাইকে অ র্ধ মৃ ত অবস্থায় ওদের বাড়ির গেইটের সামনে পাওয়া গেছে আজ সকালে।”
“কিহহহহহহহ!”
“হ্যাঁ ।বাম হাত টা নাকি ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে একদম থেঁ ত লে দিয়েছে।ডান হাত টার কোনো অংশই নেই!চোখ দুটো উ প ড়ে ফে লে ছে।পা আর বুকে
না ই ফ দিয়ে করা হাজারো আঁ চ ড়ে র দাগ।কপালে পে রে ক টাইপের কিছু একটা দিয়ে খু চি য়ে খু চি য়ে লেখা ‘মাই লিটল সানসাইন’।মাথার একাংশ থেঁ ত লে দেওয়া।মে ই ন পয়েন্টে আ ঘা ত করে র ক্তা ক্ত করা। জি হ্বা টাও নেই। দাঁত গুলোও ভে ঙ্গে দিয়েছে।আমাকে সামিয়া বললো।ওরা নাকি নিজের চোখে দেখেছে এমন বি ভ ৎ স দেহ!”
মাধবীর থেকে এমন ভ য় ঙ্ক র বর্ণনা শুনে মেহরিমা থরথরিয়ে কেঁপে ওঠে।ওর মনে পড়ে যায় তিন মাস আগের কথা। মেহরিমা সবে কলেজে অ্যাডমিট হয়েছে তখন। একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় ও কে নিশান নামের একটা ছেলে খুব বাজে ভাষায় টিজ করেছিল।মেহরিমা প্রতিবাদ ও করেছিল কিন্তু বাসায় এসে সেই বাজে কথাগুলো শুধু কানের কাছে বাজতে থাকে।তাই ও নিজেকে সামলাতে না পেরে সেই রাতে খুব কান্না করেছিল।ঠিক এইভাবেই তার পরের দিন ছেলেটাকে অ র্ধ মৃ ত অবস্থায় তাদের বাড়ির পাশের নোং রা ডোবাতে পাওয়া যায়।তার গালেও খুঁ চি য়ে
খুঁ চি য়ে লেখা ছিল ‘মাই অ্যানাবেলা’।সেই ছেলেটা বেঁচে আছে তবে ওর থেকে ম রে যাওয়ায় বোধহয় শান্তির!ছেলেটা একদম বিছানাগত কথা বলতে পারেনা।একা একা নড়তে,চলতে কিছুই পারে না।ছেলেটা শহরে পড়তো।ড্রা গ নিতো। ব খা টে বে য়া দ ব ছিল।মে য়ে র প্রতি নে শা ছিলো।গ্রামের সবাই যেন জানতো ছেলেটার এমন পরিণতিই হবে!মেহরিমা আর ভাবতে পারছে না।মেহরিমা কেঁ পে উঠে পড়ে যেতে নিলেই অবনী শেখ দুই হাতে আগলে নেন নিজের মেয়েকে।মেহরিমা কোনোরকম কাঁ পা কাঁ পা গলায় বলে,
“প…পলাশ কো..কোথায় এখন?”
“সেই ভোরেই ওনাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে সবাই।এতক্ষণে পৌঁছে ট্রিটমেন্ট ও শুরু হয়ে গেছে বোধহয়। এখন আল্লাহ ভরসা।”
মাধবীর কথা শুনে মেহরিমা মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে।আর যাই হোক কারোর মৃত্যু চাই না মেহরিমা!
“নীলাক্ষী ভেঙে পড়লে চলবে না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।যা হয় ভালোর জন্যই হয়।আর প্রত্যেক মানুষকেই তার কৃতকর্মের শা স্তি পেতে হবে।সেটা আজ হোক বা কাল।”
নিজের মায়ের কথাটা শুনে মেহরিমা একটু শান্ত হয়।কিন্তু এতো নৃ শং স তার মাঝে ভালোর তো কিছুই চোখে পড়ছে না মেহরিমার! যদিও পলাশ মানুষ টা খুব খা রা প তাই বলে এতো ক ঠি ন শা স্তি!কে করছে এমন?আর কেনোই বা করছে? দু টো মানুষ কে এভাবে মৃ ত্যু র দো য়া রে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তি কি একজনই? হঠাৎ ই গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে যায় মেহরিমার!ও সাথে সাথেই নিজের মায়ের দিকে অবাক চোখে তাকায়!
অবনী শেখ নিজের দিকে মেহরিমাকে ওভাবে তাকাতে দেখে মুচকি হাসেন।মেহরিমা মায়ের মুচকি হাসির কারণ টা ঠিক ধরতে পারলো না। তবে মেহরিমা জানে ওর মা একদম পবিত্র ঠিক ফুলে দের মতো!
মেহরিমা হাঁটতে হাঁটতে কলেজে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে হৃদিত ভাইয়ের সাথে একবার কথা বলা উচিত এই বিষয় নিয়ে।উনি তো এইসবের কিছুই জানেন না।সবটা জানলে উনি নিশ্চই ভালো কোন সলিউশন দেবে!কথাটা ভাবতেই মেহরিমা একটু স্বস্তি পায়।
#চলবে________