#কাঠগোলাপের_আসক্তি
#পর্ব_০২
#ইসরাত_তন্বী
❌অনুমতি বিহীন কপি করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ❌
“পড়লি কিভাবে?”
হৃদিতের গম্ভীর কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই মেহরিমার কান্না সাথে সাথে থেমে যায়।ব্যথা নিয়েই তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ায়।পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ উ প ড়ে সেখান থেকে র ক্ত ঝরছে ওর।হৃদিত কপালে কয়েক টা ভাঁজ ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেহরিমার পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“মেহু সোনা পড়লি কিভাবে?”
তৃধার কথায় মেহরিমা ছোট্ট করে জবাব দেয়,
“ইটে বেঁধে।”
“ইট বড় নাকি তুই বড়?”
হৃদিতের প্রশ্ন শুনে তাবান সাথে সাথে বলে,
“মেহরিমা তুমি বরঞ্চ ইটের সাথে নিজের উচ্চতা মেপে ভাইয়া কে হাতে না হাতে প্রমাণ দিয়ে দেও।”
হৃদিত বিরক্ত চোখে তাবানের দিকে তাকাতেই তাবান তাইফের হাত ধরে ওখান থেকে কেটে পড়ে। এমনিতেই এই মুখটা বেশি চলে সবসময়।উল্টা পাল্টা কিছু বলে ফেললে পাছে ভাইয়া যদি আর হাত খরচ না দেয় তখন!তাবান আর কিছু ভাবতে পারলো না।
“তুই আসলি ভালো কথা। আমাকে কেনো টেনে আনলি। ভাইয়ার সাথে ঘুরতাম একটু।”
তাইফ বিরক্তির সাথে বলে।
“আরে আরে রাগোস কেনো? ভাইয়ার ওভাবে তাকানোর মিনিং বুঝোছ?ওভাবে তাকানো মানে ভাইয়া প্রাইভেসি চাই গর্দভ!মেহরিমার সাথে একটু সময় কাটিয়েই চলে আসবে নে এখানে।চল তোকে একটা সিগারেট খাওয়াই।”
তাবানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাইফ আর কিছু বলে না।ওরা ওদের দলের কাছে চলে যায়।
“উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?”
হৃদিতের হাড় হিম করা গম্ভীর কন্ঠে মেহরিমা চমকে উঠে হৃদিতের দিকে তাকায়।সেকেন্ডের ব্যবধানে আবার চোখ নামিয়েও নেয়।পাক্কা তিন মিনিট সময় নিয়ে মেহরিমা আস্তে করে জবাব দেয়,
“আমি।”
“তাহলে তুই এতো বড় মানুষটা ওই ছোট ইটের সাথে পা বেঁধে পড়লি কিভাবে?”
“হোঁচট খেয়ে।”
“চোখ,মন কোথায় থাকে?”
হৃদিতের এবারের করা প্রশ্নে মেহরিমার খুব করে বলতে মন চাইলো।চোখ আর মন দুটোই তো অলওয়েজ আপনার দিকে থাকে।অবুঝ আপনি কি তা বোঝেন?কিন্তু আফসোস এই কথা বলার মতো এতো বড় সাহস মেহরিমার নেই।এই কথা বললে দেখা যাচ্ছে মেহরিমার বডি আর মাথা দুটো দুদিকে পড়ে আছে।কি দরকার সেধে নিজের ক্ষতি করার! মুখে বলে,
“আমি খেয়াল করিনি।”
হৃদিত আর কথা বাড়ায় না।তৃধার উদ্দেশ্যে বলে,
“তোর বিলভড ফ্রেন্ড কে নিয়ে গাড়িতে ওঠ।”
হৃদিত বলার সাথে সাথে তৃধা মেহরিমা কে ধরে আস্তে আস্তে হেঁটে গাড়ির দিকে যেতে থাকে।হৃদিতের সাথে ওর কাজিন মহলের সবাই খুব ফ্রি হলেও ওর কথা অমান্য করার সাহস কারোর নেই।
মেহরিমারা গাড়ির নিকট পৌঁছাতেই হৃদিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।হৃদিত গাড়ির কাছে এসে প্যান্ট থেকে চাবির রিং এর মতো ছোট্ট রিমোট বের করে সুইচ অন করে গাড়ির দরজা আনলক করে দেয়।
“ভেতরে যেয়ে বস।”
হৃদিতের কথাটা কানে আসতেই মেহরিমা আসে পাশে তাকিয়ে ভালোভাবে দেখে নেয়। দুপুর হওয়ার দরুন রাস্তায় তেমন মানুষজন নেই।মেহরিমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তৃধার সাথে আস্তে করে গাড়িতে উঠে বসে।ওরা গাড়িতে উঠে পড়তেই হৃদিত তাবানের কাছে কল দিয়ে কিছু একটা বলে। মিনিট চারেক পর তাবান আসে হৃদিতের কাছে। ওর হাতে ভায়োডিন,তুলা আর ব্যান্ডেজ।হৃদিত ওগুলো নিয়ে আর সময় ব্যয় না করে গাড়িতে উঠে বসে।
“তৃধু মেজো মা তোকে এক্ষুনি বাসায় যেতে বলেছে। খুব আর্জেন্ট দরকার।তাবানের সাথে বাসায় চলে যা।”
কথাটা শুনতেই মেহরিমা কয়েক মিনিটের মাঝেই দড়দড়িয়ে ঘেমে ওঠে।ভয়ে ও শুকনো ঢোক গিলে শক্ত করে তৃধার হাত ধরে থাকে।হৃদিত ভ্রু জোড়া কুঁচকে হাতের দিকে তাকাতেই মেহরিমা সাথে সাথেই তৃধার হাত ছেড়ে দেয়।তৃধা ও বোধহয় মেহরিমার ভয় টা বুঝতে পারলো।তাই কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই হৃদিত বলে,
“আমি ভুত না যে ওর ঘাড় মটকাবো।”
নিজের ভাইয়ের ত্যাড়া কথাটা খুব করে বুঝলো তৃধা।সাথে মায়ের জন্য ও চিন্তা হচ্ছে। হঠাৎ তলব করার কারণ টা ঠিক বুঝতে পারছে না!
“মেহু সোনা ভাইয়া তোকে সেইফলি বাসায় পৌঁছে দেবে।ভয় পাস না কেমন?আমি বাসায় যায়। মায়ের জন্য টেনশন হচ্ছে খুব।”
মেহরিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়ি থেকে নেমে পড়ে তৃধা।তাবান তখন ও তৃধার জন্য ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।তৃধা বের হতেই ও কে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে।কোথায় থেকে দৌড়ে এসে তাইফ ও ওদের সঙ্গে যোগ দেয়।তিন ভাইবোন খুনসুটি করতে করতে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে।
“আমি নিশ্চয় তোর পার্সোনাল ড্রাইভার নই?”
হৃদিত পেছনে তাকিয়ে বলে।হৃদিতের কথাটা কর্ণগোচর হতেই ওর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় মেহরিমা।
“সামনে এসে বস।”
হৃদিতের কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে মেহরিমা। নিজের কান কেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না!তারপর নিজেকে সামলিয়ে মনের মাঝে হাজারো ভয় নিয়েই সামনের সিটে এসে বসে।নাহলে আজ আর ওর বাড়ির মুখ দেখা হবে না! হৃদিত আর মেহরিমার মধ্যে দুরত্ব মাত্র দুই,তিন হাত।এই প্রথম হৃদিতের এতোটা নিকটে মেহরিমা।মেহরিমার হার্ট টা তীব্র শব্দ তুলে দ্রিম দ্রিম করে বেজেই চলেছে।আর সাথে ওর কাঁপা কাঁপি তো আছেই!এই শব্দ নির্ঘাত হৃদিতের কান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে!ভয়ের সাথে একঝাঁক লজ্জা এসে হানা দেয় মেহরিমার মুখমণ্ডলে।
“মৃগিরোগীর মতো কাঁপছিস কেনো?কি সমস্যা?”
মেহরিমা ভয়ে কোনো উত্তর দিতে পারে না। অস্বাভাবিক ভাবে কেঁপেই চলেছে ও। হঠাৎ করেই হৃদিত গাড়ির গ্লাস তুলে দেয়।এসি অন করে।মেহরিমার এবার ভয়ে মরি মরি অবস্থা।মুখের লাজুক আভা মুছে গিয়ে মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
“আর একটুও কাঁপা কাঁপি করলে আই সোয়্যার এক্ষুনি খারাপ কিছু ঘটিয়ে ফেলবো।”
হৃদিত রাগে গর্জে ওঠে বলে।ব্যস!মেহরিমার কাঁপা কাঁপি সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে যায়।হৃদিত একবার আড়চোখে মেহরিমার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। দুই মিনিট পার না হতেই মেহরিমা হঠাৎ খেয়াল করে গাড়িটা ওর বাসার দিকে না যেয়ে উল্টো দিকে অর্থাৎ ওর কলেজের দিকে যাচ্ছে।মেহরিমা আঁতকে ওঠে!মনে সাহস সঞ্চয় করে কোনোরকম তুতলিয়ে বলে,
“আ..আ…আপনি এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?”
“জাহান্নামে! সঙ্গী হবি আমার?”
“অ..অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।সময় মতো বাসায় না ফিরলে বাবা টেনশন করবে।”
“তারমানে তুই আমার সাথে যেতে ইচ্ছুক না?”
হৃদিতের প্রশ্ন শুনে মেহরিমা কি বুঝলো কে জানে!ফ্যাকাশে মুখ নিয়েই মেহরিমা জানালার দিকে আরও চেপে বসে।তারপর এক ধ্যানে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেহরিমার দিকে এক পলক তাকিয়েই হৃদিত চোখ ফিরিয়ে নেয়। সেকেন্ডের ব্যবধানে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয়।মেহরিমা ভয়ে তাড়াহুড়ো করে নিজের সিট বেল্ট বেঁধে ফেলে।ওর কর্মকাণ্ড দেখে হৃদিতের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।কিন্তু আফসোস সেই হাসি বোকা মেহরিমার চোখে পড়ে না।নাহলে আবারও এই মুহূর্তে নতুন করে আরেকবার হৃদিতের প্রেমে পড়তো!
#চলবে_______