কাছে_পাশে
পর্ব_৫
#Hiya_Chowdhury
জুহি রেস্টুরেন্ট থেকে গাড়ি করে বাসায় চলে আসে আর ঠিক তখনি রোদের বলা কথা টা শুনে জুহি চমকে উঠে।
-জুহি তুই আমাদের বাসায় আর আমি গতকাল তোকে খুঁজতে বিমান বন্দরে পর্যন্ত গিয়েছিলাম এটা তুই জানিস?
-কে জুহি? (অবাক হয়ে)
-দেখ তোর নাকের ওপর আরেক টা নাক উঠছে।
জুহি রোদের কথা শুনে নাকে হাত দিতেই। রোদ হাহা করে হেসে উঠে।
-কিরে তোর মনে আছে ছোটবেলায় এই কথাটা যখন আমি তোকে বলতাম তখন তুই ঠিক এই কাজ টাই করতি। এরপর ও যদি মিথ্যা বলছিস না দেখিস তোর এবার সত্যি সত্যি দুইটা নাক উঠবে। (হেসে হেসে)
-ভাইয়া আপনি জানলেন কিভাবে যে আমি জুহি।
-দেখ জুহি তুই আমাকে ভাইয়া ডাকবি না। আর আমি অফিস থেকে এসে নিজের রুমে যাওয়ার সময় আম্মুরা বলছিলো যে তখন শুনেছি।
-কেন ভাইয়া ডাকবো না? আপনি তো আমার ভাইয়া ই তাই না সো আমি ভাইয়া ডাকবো। আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে। যাচ্ছি।
জুহি চলে যেতে নিলে রোদ জুহির হাত ধরে ফেলে। জুহি একবার রোদের চোখের দিকে তাকায় দেখে রোদ ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জুহি কিছু না বলে ওর হাত টা রোদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উপরে চলে যায়।
রোদ অফিস থেকে আসার পর যখন শুনেছে ওর বউ সেজে থাকা মেয়েটি আসলে জুহি তখন ওর খুঁশির সীমা ছিলো না। কিন্তুু এখন জুহির মুখে ভাইয়া মার্কা ডাক টা শুনে রোদের কেমন জেনো লাগছে। সকাল পর্যন্ত জুহি যেমন ছিলো তেমন টাই তো ভালো ছিলো। ভাইয়া ডাকার কি দরকার আজব।
রোদের আজকে অফিসে ভালো লাগছিলো না তাই চলে এসেছে বাসায়। জুহি যাওয়ার পর রোদ ও নিজের রুমে চলে যায়।।।
লাঞ্চ টাইম………
-আম্মু তোমরা কিন্তুু এটা ঠিক করো নি।
-কোনটা?
-জুহি এসেছে আর তোমরা আমার কাছে সেটা লুকিয়ে রেখেছো।
-দেখ ভাইয়া আমাদের দোষ দিবি না। জুহি আপু ই তো নিষেধ করেছে।
-কিরে জুহি কেন নিষেধ করেছিলি?
-বেশ করেছি তুমি ই তো আমাকে চিনতে পারো নি ভাবলাম এই সুযোগে তোমার সাথে একটু মজা করা যাক। হিহি….
-আবার হাসে। কিভাবে চিনবো তুই কি আর আগের সেই পিচ্চি জুহি আছিস নাকি। এখন কওো বড় হয়ে গেছিস।
-হুহ হয়েছে আর বলতে হবে না। (মুখ বাঁকিয়ে)
-জুহি তুই তো নিজের হাতে নাকি খেতে পারিস না সকালের মতো আমি খাইয়ে দেই?
-না ভাইয়া তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি আর না এবার আমি নিজেই খেতে পারবো।
-আরে…..
রিমি ঝিমির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে জুহি। ওরা তো হাসতে হাসতে শেষ। রোদের মুখ টা দেখার মতো হয়েছে। কি আর করার জুহি যখন আসবে না রোদ নিজেই নিজেকে খাওয়াচ্ছে।
পরের দিন সকালে………
-রোদ উঠ আজকে তুই অফিসে যাবি না?.
-না আম্মু ভালো লাগছে না। আমি ম্যানেজার সাহেব কে সব বুঝিয়ে দিয়েছি।
-ওহ তাহলে নাস্তা করতে আয় সবাই এসে গেছে শুধু তুই ছাড়া।
-আচ্ছা আম্মু আসছি।
সবাই মিলে নাস্তা করে নেয়। রোদ জুহির পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করছে কিন্তুু জুহি রোদ কে ইগনোর করে চলছে। ইগনোর একবার ঠিক আছে। কিন্তুু বারবার মেনে নেওয়া পসিবল না। রোদ ভাবলো জুহি কে জিঙ্গেস করবে এমন কেন করছে সে। পরক্ষণে রোদ তার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য বাহিরে চলে যায়।
আর এ দিকে জুহি কাব্য রিমি ঝিমি আর শান্ত শুভ্র কে নিয়ে আসতে বিমান বন্দরে যায়। সবাই মিলে একসঙ্গে ইনজয় করছে। রোদ বাসায় আসে।
পুরো বাসা টা খুঁজে জুহি কে পেলো না রোদ।
-আম্মু ও আম্মু কোথায় তোমরা?
-এই তো আসছি…(রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে)
রোদের আম্মু রান্নাঘর ছেড়ে রোদের রুমে আসে।
-কিরে কি হলো?
-জুহি কোথায়? কোথাও দেখছি না যে?
-দেখবি কিভাবে ওরা তো বাসায় নেই।
-ওরা বলতে?
-কাব্যা রিমি ঝিমি শান্ত জুহি কেউ ই বাসায় নেই।
-কোথায় গেছে?
-ওরা শুভ্র কে বিমান বন্দরে থেকে নিয়ে আসতে গেছে।
-কিহ শুভ্র দেশের মানে কি? আমাকে একবার জানালো ও না?
-এই চুপ তুই শুভ্র কে দোষ দিচ্ছিস কেন? কালকে রাত থেকে শুভ্র তোকে ৫০ টার উপরে ফোন দিয়েছে। পরে সকালে তোর কোনো খোঁজ না পেয়ে জুহি দের কে পাঠাতে হয়েছে শুভ্র কে নিয়ে আসতে।
-ও মাই গড। ওপপস ফোন টা অফ হয়ে গেছে চার্জ দিতে ভুলেই গিয়েছিলাম। সরি আম্মু।
-সরি আমাকে না শুভ্র কে বলিস।
রোদের আম্মু রান্না ঘরে চলে যায়। রোদ নিজের রুমে গিয়ে ফোন টা চার্জে দেয়। একদম বন্ধ হয়ে পড়ে আছে ফোনটা। আজকাল সে কেমন জেনো হয়ে গেছে। সব কিছুই ভুলে যাচ্ছে। মাথায় শুধু জুহি কে নিয়েই সব ভাবনা।
সারাদিন কাটিয়ে শুভ্র রা সন্ধ্যায় বাসায় আসে। সবার আগে কাব্য শান্ত আর রিমি ঝিমি বাসায় ঢুকে।
-কিরে তোদের আসতে এতো দেরি হলো কেন? (রোদ)
-আরে ভাইয়া তুমি তো যাও নি সেই ইনজয় হয়েছে।
-এই তোরা ড্রিঙ্ক করেছিস?
-হুশ আস্তে ভাইয়া আস্তে কেউ শুনে নিলে শেষ।
-জুহি কোথায়?
-শুভ্র ভাইয়ার সাথে আসছে।
ওরা চারজন কোনো ভাবে হেলেদুলে নিজেদের রুমে চলে যায়। রোদ একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখে জুহি শুভ্রর সাথে হেসে হেসে কথা বলে আসছে। জুহি পড়ে যেতে নিলে শুভ্র জুহি কে কোলে তুলে নেয়। রোদ এটা দেখে খুব রেগে যায়।
রেগে দাঁত মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। রোদের ইচ্ছে করছে শুভ্র কে একটা ঘুষি মারতে। ওর সম্পদে হাত দেওয়ার সাহস কি করে হয় ওর। শুভ্র কে দেখে মনে হচ্ছে সে ড্রিঙ্ক করে নি।
-কি রে রোদ তুই এখানে কখন আসলি।
-যখন তুই আমার জিনিসে হাত দিলি তখন এসেছি। (বিড়বিড় করে)
-কিছু বললি?
-না তো।
-দেখ তোকে তো আমি ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো। দাড়া জুহি কে রেখে আসি।
-তোর ওকে রেখে আসতে হবে না আমাকে দে আমি রেখে আসছি।
জুহির কানে কিছু কিছু কথা যায়। রোদের কথা শুনে জুহি বলে উঠলো।
-আমি যাবো না রোদ ভাইয়ার কোলে। আমি শুভ্র……..
-দেখ না ভাই ও নিজেই বলেছে যাবে না। আমি রেখে আসছি।
রোদ আর কিছু বললো না। শুভ্রর পিছন পিছন গেলো রোদ ও। শুভ্র জুহি কে ওর বেডে শুয়ে দেয়।
-এবার তুই আমাকে বল তোর ফোন কোথায় ছিলো? কওো গুলা ফোন দিয়েছি খেয়াল আছে তোর?
-সরি রে আমার ফোন টা অফ হয়ে গিয়েছিলো কখন খেয়াল ই করিনি।
-হয়েছে আর বলতে হবে না।
-আহা সরি তো যা এখন ফ্রেশ হতে যা। আর তুই এদের ড্রিঙ্ক করতে দিলি কেন?
-আরে আমি এদের কে অনেক বার নিষেধ করেছি কেউ আমার কথা শুনলো ই না।
-মেরে নাক ফাটিয়ে দিতি।
-হাহাহা আচ্ছা অার কোনো সময় ড্রিঙ্ক করতে চাইলে মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো।
রোদ আর শুভ্র চলে যায়। জুহি শোয়া থেকে উঠে বসে।
-হুহ এখন কেমন লাগছে মি. রোদ চৌধুরী। (জুহি হেসে উঠে। জুহি ড্রিঙ্ক করেই নি। যাছিলো সব রোদ কে দেখানোর জন্য ছিলো)
ডিনার টাইম……..
রোদ আর শুভ্র পাশাপাশি বসেছে।
-কিরে তোদের বাকি ভাই বোন রা কি আজকে ডিনার করবে না?
-না আম্মু ওরা না খুব ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে।
-মিথ্যা কথা এই দেখো মামনি আমি এসে গেছি।
-ও জুহি তুই এসেছিস। আয় বস।
-কিরে শুভ্র ওর নেশা এতো তাড়াতাড়ি কেটে গেলো?(চুপিচুপি)
-জুহি তো কম খেয়ে ছিলো তাই কেটে গেছে হয়তো।
-এই তোরা কি বিড়বিড় করছিস?
-কই কিছু না তো আম্মু।
-হুম তোমাদের বিড়বিড় করা শেষ হলে শুভ্র ভাইয়া এবার আমাকে খাইয়ে দাও।
জুহির কথা শুনে রোদ বলে উঠে।
-তুই না লাঞ্চ করার সময় বলেছিস তুই নিজের হাতে খেতে পারিস?
-কই না তো সেটা তো বলেছি তোমাকে আর জ্বালাবো না।
-তাহলে এদিকে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
-না আমি শুভ্র ভাইয়ার হাতে খাবো।
-আহা রোদ এতো করে বলছে যখন শুভ্র ই ওকে খাইয়ে দিক না।
-আচ্ছা আম্মু।
রোদ জুহির কথা শুনে রেগে আছে। শুভ্র হাতে খাবে কিন্তুু রোদের হাতে খাবে না। রোদের এতো রাগ হচ্ছে যে বলার মতো না। কিন্তুু রোদ প্রকাশ ও করতে পারছে না।
রোদ কোনো ভাবে খেয়ে উঠে। কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রোদের। ভীষণ রকমের রাগ উঠে গেছে। টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে রোদ। আর সাথে ফুলদানি টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়……………
চলবে————