কাছে_পাশে
পর্ব_৪
#Hiya_Chowdhury
রোদ ভাবছে তার সাথে এখন কি কি হবে। এমন সময় রিমির বলা কথা শুনে রোদ বিস্মিত হয়ে গেলো। আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা রোদের।
-আরে ভাবী তুমি আলমারি তে কি করছিলো?(রিমি মেয়েটি কে প্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে)
-তোমার ভাই জামা কাপড়ের মতো গোটা একটা মানুষ কে ঢুকিয়ে রেখেছে।
-কিরে ভাই তুই ভাবী কে আলমারি তে কেন ঢুকয়োয়েছিস?
-না মামমনে এমনি।
-দেখ তো ভাই ভাবী কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কিনা আমি গেলাম। আর নাস্তা করতে আয়।
-আচ্ছা তুমি যাও রিমি। আমরা আসছি।
-হুম
রিমি চলে যায়। রোদ ভাবছে রিমির তো উল্টো রিয়েকশন করার কথা ছিলো কিন্তুু রিমি কোনো রিয়েকশন ই করলো না। রিমি আরো মেয়েটি কে বলছে ভাবী!! রোদের মাথায় কিছুই আসছে না।
মেয়েটি রেগে কোমড়ে হাত দিয়ে রোদের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। রোদ কি বলবে বুঝতে পারছে না।
-তোর জন্য সব হয়েছে। তোর সব প্ল্যান ছিলো আমাকে ফেলে দেওয়ার তাই না?
-এই একদম না। আর তাছাড়া তোমার মতো এরকম একটা হাতি ঐ ছোট্ট আলমারি তে থাকতে পারবে ও কিভাবে? পড়বেই তো।
-কিহ আমি হাতি?
-না না জলজ্যান্ত একটা বাঘিনী মানুষ।
রোদ এটা বলে কোনো ভাবে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। কোনো মতেই হিসাব মিলছে না। রোদের মাথায় এখনো ঘুরছে বউ আসলো কোথা থেকে। যতোদূর মনে পড়ছে সে তো বিয়ে করেই নি। হঠাৎ রোদের জুহির কথা মনে পড়ে।
-আমি জুহি কে ভালোবাসি এই মেয়ে কে নয়। আমি এখন উনাকে সাফ জানিয়ে দিবো আমি তোমাকে চিনি না বিয়ে ও করিনি ব্যস। আমি জাস্ট জুহি কে ভালোবাসি আর কাউকে না। আর বিয়ে করলে জুহি কেই করবো। জুহি ই আমার বউ হবে(মনে মনে)
রোদ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে মেয়েটি রুমে নেই। রোদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। জুহির কথা মনে পড়তেই কিছুই জেন ভালো লাগছে না। এক দিকে জুহি আরেক দিকে এই মেয়ে কি হচ্ছে রোদের সাথে এসব। রোদ অফিসের জন্য রেডি হয়ে নেয়। তারপর নিচে নাস্তা করতে গেলেই অবাক রোদ।
কারণ মেয়েটি সবাই কে নাস্তা সার্ভ করছে। আর হেসে হেসে সকলের সাথে কথা বলছে! কারো তেমন রিয়েকশন ই নেই। এসব ভাবতে ভাবতে নাস্তার টেবিলে আসে রোদ।
-রোদ তুই এসেছিস দেখ না বউ মা তোকে ছাড়া নাস্তা করতে বসছে না। এবার দুজন একএে বস।
-হুম (জোড় করে হাসার চেষ্টা করছে রোদ)
অতঃপর রোদের পাশে মেয়েটি বসে। তারপর রোদের আম্মু কে বলে।
-মামনি আমি নিজের হাতে খাবো না ওকে খাইয়ে দিতে বলো।
মেয়েটির কথা শুনে রোদের হাত থেকে কাটা চামচ যেটা দিয়ে সে খাচ্ছিলো সেটা পড়ে যায়।এতো বড় মেয়ে বলে কিনা ওকে খাইয়ে দিবে রোদ। অসম্ভব।
-এই জন্যই বলেছিলি যে রোদ আর তুই একএে খাবি? হাহা রোদ ওকে খাইয়ে দে।
-না আমি পারবো না!
মেয়েটি রোদের কথা শুনে নাক ফুলিয়ে কাটা চামচ টা হাতে নিয়ে রোদের পেটের দিকে ইশারা করে। রোদ বড় বড় চোখ করে মেয়েটির দিকে তাকায়। রোদ মেয়েটির ইশারা বুঝতে পেরে চুপচাপ ওকে খাইয়ে দিতে থাকে। রোদের বুক ফুটছে তো মুখ ফুটছে মা। বাহ মেয়েটি ও বেশ আয়েশ করেই খাচ্ছে। আর বাকি সবাই রোদ আর মেয়েটির অবস্থা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।
কোনোমতে রোদ নাস্তা শেষ করে সোজা অফিসে চলে যায়। এদিকে জুহি কে রোদ খুঁজে তো পাচ্ছেই না অার অন্য দিকে এই মেয়ে যত্তোসব ঝামেলা।
নাস্তা শেষে মেয়েটি রোদের ঘরে যায়। বেড টা ভালো ভাবে গুছিয়ে রাখে। এমন সময় বেডের পাশের টেবিলে থাকা রোদের ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠে।
-হায় রে রোদ তো ওর ফোন টা ও ফেলে রেঝে চলে গেছে। হাহাহা বিয়ে না করেই বউ কোথা থেকে এলো হয়তো এই টেনশনেই সব গুলিয়ে ফেলেছে। (মনে মনে)
মেয়েটি ভাবছে রোদের ফোন টা দেখবে কি দেখবে না। অনেক ভাবা ভাবির পর মেয়েটি রোদের ফোন টা হাতে নেয়। আর ফোনের screen এ ভেসে উঠা মেসেজ টা দেখে মেয়েটি অবাক হয়ে যায়। মেসেজ টা ছিলো এরকম….
“যদি নিজের শত্রু দের দেখতে চাও এন্ড নিজের কোম্পানী কে বাঁচাতে চাও তবে রেস্টুরেন্ট এ চলে এসো। আর আমার খোঁজ করতে এসো না। ভাবতে পারো আমি তোমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী।”
মেয়েটি কিছু টা বিব্রত হয়ে যায়। কোন নাম্বার থেকে মেসেজ টা এসেছে তা চ্যাক করতে গেলে দেখা যায় মেসেজ টা একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে এসেছে।
মেয়েটি রোদের ফোন থেকে মেসেজ টা ডিলেট করে নেয়। আর রেডি ও হয়ে নেয়। কারণ তাকে এক্ষুনি দেখতে হবে ব্যাপার টা।
রোদের রুম ছেড়ে নিচে ড্রয়িংরুমে আসতেই রোদের আম্মু মেয়েটির সামনে পড়ে।
-কিরে মা কোথাও যাচ্ছিস?
-হ্যাঁ মামনি একটু দরকার ছিলো। তাই….
-তুই একা যাবি নাকি আমি রিমি কে ও ডেকে দিবো?
-না মামনি। আমি একাই যাবো। ওকে ডিস্টার্ব করার দরকার নেই।
-আচ্ছা সাবধানে যাস।
-আচ্ছা মামনি।
মেয়েটি গাড়ি নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে যায়। আর খোঁজার চেষ্টা কোথায় রোদ দের কোম্পানি নিয়ে কথা হচ্ছে। পেয়ে যায় মেয়েটি তাদের।
মেয়েটি ঐ লোক গুলো ঠিক পেছনে বসে। আর মুখ টা ঢেকে বসে। এমন সময় একজন ওয়েটার আসে।
-কি লাগবে ম্যাম?
-এক কাপ কফি নিয়ে আসো।
-ওকে ম্যাম।
লোকগুলো যা বলছে………
-ঐ চৌধুরী কোম্পানি টপে উঠে গেছে। পরপর ৩ বার টপে থাকলে ঐ কোম্পানি কে পুরস্কার দেওয়া হয় সাথে হরেক রকমের সুবিধা। আর এবার চৌধুরী কোম্পানির ৩য় বার টপে থাকার সময়। এবং এখনো পর্যন্ত আছে ও আর এটা কোনো ভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।
-ঠিক বলেছো আর তাছাড়া আমাদের ওপর থেকে চাপ ও দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের বড় যিনি আমাদের দিয়ে এই কাজ করাচ্ছেন তার সম্পর্কে তোমরা একটা কথা জানো?
-কি কথা?
-উনি চৌধুরী পরিবারের ই একজন।
-হোয়াট তো তাহলে ইনি এই কাজ করাচ্ছেন কেন?
-উনি চৌধুরী কোম্পানির আসল মালিক নন। আর উনার মতে এভাবে চলতে থাকলে উনি কখনো হতে ও পারবেন না ঐ কোম্পানির আসল মালিক।
-ওহ।আমাদের কাজ দিয়ে কি ভাবে কি হবে?
-হবে কারণ আমরা যদি চৌধুরী কোম্পানি কে এবার টপ থেকে নিচে নামিয়ে দিই তাহলে চৌধুরী কোম্পানির মালিক ভেঙ্গে পড়বেন। উনার এতো দিনের স্বপ্ন ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে। আর ঠিক তখনি আমাদের বড় স্যার উনাদের কোম্পানি টা দখল করে নিবেন। আর উনি ই হবেন আসল মালিক। পরে আবার উনি কোম্পানি টা কে টপে নিয়ে যাবেন।
-ওও আচ্ছা। তো তোমরা কেউ উনাকে দেখেছো যার নির্দেশে আমরা এসব করছি?
-না দেখিনি।
ওদের ঠিক পিছন থেকে ওদের এই সব কথা পুনরায় ফোন থেকে শুনে চমকে উঠে ওরা ৩ জন। পিছনে তাকিয়ে দেখে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আর তার হাতে ফোনের রেকর্ড থেকে এসব চলছে। ওরা ৩ জন ভয় পেয়ে যায়।
-এই মেয়ে কে তুমি?
-জুহি!!
-মানে?
(হ্যাঁ যা ভাবছেন সেটাই। মানে রোদের বউ সেজে থাকা মেয়েটি আর কেউ নয় জুহি ই। জুহি সেদিন ই রোদের বাসায় এসেছে যেদিন ওর আসার কথা ছিলো। জুহি শুধু রিমি কে দিয়ে মিথ্যা বলিয়েছে রোদ কে। ব্যাস সারাদিন তো রোদের বাহিরেই কেটে গেলো।মূল কথায় আসি….)
-মানে আমার নাম জুহি।
-তুমি আমাদের কথা গুলো রেকর্ড করলে কেন?
-সেটা এই জন্যই যে তোমরা যদি এখন আমাকে তোমাদের সাথে না নাও তো আমি চৌধুরী কোম্পানির আসল মালিক কে এই ফোনে রেকর্ড করা সব কথা শুনিয়ে দিবো।
সবাই ভীষণ ভয় পেয়ে যায়।
-দেখো আমরা একজনের থেকে কন্ট্রাক্ট নিয়ে ফেলেছি। এই কাজ টা করার জন্য।
-তো কি হয়েছে। তোমাদের সাথে এই কাজে আমি ও হেল্প করবো।
-এতে তোমার লাভ?
-আমার লাভ অবশ্যই আছে। চৌধুরী কোম্পানির মালিকের সাথে আমার খুব পুরোনো শত্রু তা। চৌধুরী কোম্পানির মালিক আমার বাবা ও ছিলেন একটা সময়। ৫০% ৫০% এ ছিলো কোম্পানির ভাগ। কিন্তুু পরে তার সাথে বেঈমানি করা হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এই কোম্পানি। তাই আমি ও ওদের থেকে ঠিক এটাই করবো।
-কিন্তুু তুমি তো কোম্পানির ভাগ পাবে না?….
-নো প্রবলেম। কোম্পানি টা তো আর রোদ চৌধুরীর বাবার ও থাকবে না। আর আমি এটাই তো চাই। হাহাহা
-কিন্তুু…..
-দেখো তোমরা যদি রাজি না হও তো আমি চললাম।
-হ্যাঁ আমরা রাজি।
-ওকে। থ্যাঙ্কস তো এবার বলো চৌধুরী কোম্পানির কোন সদস্য তোমাদের দিয়ে এই কাজ টা করাচ্ছে তোমরা কি ওকে চেনো?
-না আমরা উনাকে কখনো দেখি ই নি।
-ওহ আচ্ছা। তোমাদের বড় স্যার উনাকে জানিয়ে দিও তোমাদের সাথে আমি নতুন এড হওয়ার কথা ওকে।আর তোমরা যদি বেশি তিড়িং বিড়িং করো তাহলে কিন্তুু এই ফোন রেকর্ড…
-না না আমরা কিচ্ছু করবো না।…
-ওওওকে।
জুহি রেস্টুরেন্ট থেকে গাড়ি করে বাসায় চলে আসে আর ঠিক তখনি রোদের বলা কথা টা শুনে জুহি চমকে উঠে।
-রোদ জানলো কিভাবে এই কথা…..?????
চলবে————