কাছে_পাশে
পর্ব_৩
#Hiya_Chowdhury
আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে রোদের ফোন বেজে উঠল। রোদ দেখে রিমি ফোন দিয়েছে। রোদের মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠে। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রিমির কথা শুনে মুহুর্তের মাঝে রোদের হাসি উধাও হয়ে গেলো।
-ভাই জুহি আপির না মত চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে আমাদের বাড়ি তে আসবে না। সকালে সবার সাথে কথা বলে নিয়েছে। আর বলেছে আজকেই নাকি দুবাইয়ে ফিরে যাচ্ছে।
দুবাইয়ে ফিরে যাচ্ছে শুনে রোদের মাঝে আর্তনাদ শুরু হয়ে গেছে। তবে কি এবারে ও সে জুহির দেখা পাবে না।
-কককেন আসনে না?
-তা তো জানিনা।
-ওর নাম্বার টা দিতে পারবি?
-না না ভাই একদম নিষেধ আছে। আম্মু যদি জানতে পারে আমার হাড্ডি মাংস এক করে ফেলবে।
-আম্মু দেখবে না। তুই লুকিয়ে লুকিয়ে দে।
-না ভাই আমি এতো রিক্স নিতে চাই না। ফোন রাখছি….
-আচ্ছা তুই এটা বল ফ্লাইট কয়টায় জুহির?
-তাতো আমি শুনি নি।
-আচ্ছা ফোন রাখ।
রোদ ফোন কেটে দিয়ে। ব্লেজার টা গায়ে জড়িয়ে গাড়ি করে সোজা অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রোদ দ্রুত গাড়ির চালিয়ে যাচ্ছে।
যে করেই হোক জুহি কে আটকাতে হবে। না হলে হয়তো বা এবার জুহি কে হারিয়ে ফেললে আর না ও পেতে পারে। গাড়ি পার্কিং করে রোদ সোজা বিমান বন্দরে ঢুকে যায়। এতো মানুষের ভিতরে রোদ কোথায় খুঁজবে জুহি কে। আর তাছাড়া আগের জুহি আর এখন কার জুহির মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। সে চিনবে কিভাবে কোনটা জুহি।
রোদের সারাটা দিন ও খানেই কেটে গেলো। নাহ জুহির দেখা পায় নি রোদ। অবশেষে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়। মনে হাজারো রকমের ভাবনা। হয়তো সে জুহি কে এবার ও হারিয়ে ফেলেছে।
রোদ প্রতিদিন অফিস থেকে সন্ধ্যা ৬ টায় ফিরে আসে। কিন্তুু আজকে অনেক লেট করে বাসায় ফিরছে রোদ। সবাই অনেক টেনশন করছে। রোদ বাসায় ঢুকতেই এত্তো গুলো প্রশ্ন ছুড়ে মারে সবাই রোদের দিকে।
-এতোক্ষন কোথায় ছিলি রোদ?
-আম্মু ঐ অফিসের জন্য একটু লেট হয়েছে।
-মিথ্যা বলছিস কেন । তোর আব্বু ম্যানেজার সাহেবের সাথে কথা বলেছে। উনি বলেছেন তুই অনেক আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেছিস।
-ওহ উনি তাহলে বলে দিয়েছে। আচ্ছা শোনো আম্মু আমি না আমার পুরনো একটা বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। আসলে আজকে হঠাৎ করে দেখা হলো তো তাই।
-তাহলে ফোন দিয়ে জানালে ও পারতি।
-দেখো না আম্মু ফোন টা অফ হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে নিই কেমন।
-আচ্ছা যা। কিন্তুু আজকের মতো আর না বলে দেরি করে বাসায় ফিরবো না।
-ওকে মাই সুইট কিউট মম।
রোদ নিজের রুমে চলে যায়। সারাদিন এতো হাটাহাটি করছে যে শরীর বড্ড ক্লান্ত। এতো খুঁজার ফলে ও আসল কাজ টাই হলো না। জুহির দেখা রোদ পেলো না। রোদ কোনো ভাবে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
পরেরদিন সকালে রোদ খেয়াল করে তার পাশে একটি মেয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। রোদ ভাবলো হয়তো জুহির কথা ভাবতে ভাবতে স্বপ্ন দেখছে। রোদ কোনো কিছু না ভেবেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
রোদ নিজের হাতের উপর ওজন জাতীয় কিছু একটা অনুভব করছে। মিটমিট করে চোখ খুলে দেখে সেই মেয়েটি। রোদ ভাবলো এ কেমন স্বপ্ন। রোদ চোখ কচলিয়ে দেখে না যা দেখছে তা তো সত্যি ই।
রোদ নিজের হাত ভেবে মেয়েটির হাতেই চিমটি কাটে। আর মেয়েটি সোজা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে। সাথে রোদ ও।
-ও মাগো! তুমি আমার হাতে চিমটি কাটলে কেন? সকাল সকাল আমার ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে দিলে কি সমস্যা কি হ্যাঁ? সকাল সকাল ভূতে কামড়ে দিয়েছে?
মেয়েটির কথা শুনে রোদের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। যেখানে ভূতের বলতে পৃথিবী তে কিছু নেই ই সেখানে ভূতে কামড়াবে? হাউ ইজ পসিবল..?
-কি হলো এভাবে বড় বড় চোখ করে কি দেখছো?
-কে আপনি আর আমার সাথে শুয়ে আছেন ছিঃ ছিঃ
-কিহ আমাকে আপনি বলা তার উপর আবার জিঙ্গেস করছো কে আমি? বলি বিয়ে যে করেছো ভুলে গেলে?
-বিয়ে আর আমি? (অবাক হয়ে)
-তো তুমি নয় তো কে?
-কি সব যাতা বলছেন। আমি বিয়ে করতে যাবো কোন দুঃখে। দেখুন আপনি যদি আমার সাথে মজা করে থাকেন সো প্লিজ মজা বন্ধ করুন।
-আমি তোমার সাথে কোন দুঃখে মজা করতে যাবো শুনি?
-দেখুন…..
-ওগো একটু কথাকাটাকাটি হয় এমন সংসারে। তাই বলে তুমি আমাকে অস্বীকার করছো। এতো অভিমান করে থেকো না।
রোদের তো মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেছে। মেয়ে বলে কি কথাকাটাকাটি হয়েছে বলে অভিমান করছি। মানে কি এসবের? সাত সকালে কি হচ্ছে এসব।
-ওগো কি ভাবছো।
-আমি এখনো বিয়ে করিনি সত্যি বলছি। বিশ্বাস করুন আপনার স্বামী আমি না। আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। প্লিজ এখান থেকে চলে যান নয়তো আমার বাসার লোক কেউ দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে। বলবে আমি রাতে বাসায় মেয়ে নিয়ে এসেছি। প্লিজ প্লিজ চলে যান।
রোদ এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে মেয়েটির চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। রোদের তো ভয়ে জান বেরিয়ে আসছে। মেয়েটি গিয়ে সোজা রোদের বুকের উপর বসে।ইচ্ছা মতো রোদের বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে।
-আহ আপনি আমায় মারছেন কেন?
-বিয়ে করে এখন ন্যাকামো সাজা হচ্ছে। কি এমন ভুল করেছি আমি যে বাসা থেকে বের করে দিতে চাচ্ছো। ঘরে বউ রেখে বাসায় মেয়ে নিয়ে আসার কথা বলছো। খবরদার যদি আর কখনো এসব শুনি মেরে ভর্তা বানিয়ে ছাঁদে কড়া রোদের মধ্যে শুকাতে দিবো।এই আমি বলে দিলাম। (রেগে গজগজ করতে করতে)
মেয়েটি সোজা ফ্রেশ হতে চলে যায়। রোদ উঠে বসে।
-এটা মেয়ে ছিলো না অন্য কিছু? ওহ গড এটা যদি স্বপ্ন হয়ে থাকে তো তাড়াতাড়ি আমার ঘুম ভেঙ্গে যাক। এমন বাঘিনী মেয়ে স্বপ্নের মধ্যে এসে বলছে আমার বউ। না জানি এমন মেয়ে কার বউ হবে। ভাই একটু সাবধানে থাকিস। নয়তো তোকে কুপিয়ে মেরে ফেলবে।
রোদ অনেক ভাবেই চেষ্টা করছে। এসব কে স্বপ্ন ভাবতে কিন্তুু এটা স্বপ্ন নয় সত্যি। গতকাল রাতে তো ঘুমানোর সময় কোনো মেয়ে সে দেখে নি। তাহলে হঠাৎ কোথা থেকে এই মেয়ে টি উড়ে এসে জুড়ে বসলো। এখন যদি বাসার কেউ দেখে কি হবে…! টেনশনে রোদের মাথায় ও কিছু আসছে না।
-কি বিড়বিড় করছো?
-কককই নাতো। প্লিজ বলুন কে আপনি?
মেয়েটি আবার চোখ গরম করে রোদের দিকে তাকায়।
-না মানে সত্যি আমার মনে হয় কি আমার স্মৃতি শক্তি লোভ পেয়েছে তাই আমি সব ভুলে গিয়েছি। তাই আপনি প্লিজ একটু মনে করিয়ে দেন।
-আর একবার যদি আপনি বলেছো তোমার মুখে আমি কসটেপ মেরে দিবো। (রেগে)
-আচ্ছা তুমি আমাকে প্লিজ একটু মনে করতে সাহায্য করো।
হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে। মেয়েটি কথা বলতে যাবে এমন সময় রোদ মেয়েটির মুখ চেপে। আর হাত দিতে ইশারা করে চুপ থাকতে।
-কে?
-ভাই আমি রিমি।
-কোনো প্রয়োজনে এসেছিস না এমনি?
-ভাই আমি কাল তোর বেলকনিতে এসেছিলাম। আমার রুমে নেটওয়ার্ক কাজ করছিলো না দেখে। পরে বোধহয় ভুল করে ফোন টা তোর বেলকনিতে ফেলে রেখে চলে গেছি। রাতে তো তুই ঘুমিয়ে পড়েছিলি ডোর লক করে তাই আর ফোন টা নিতে পারি। এখন নিতে এসেছি।
-ওহ আচ্ছা।
-খুল দে না দরজা টা। ভেতরে কি করছিস।
-এই তো ২ মিনিট।
রোদ মেয়েটির মুখ এখনো চেপে ধরে আছে। মেয়েটির কথা রিমির কানে গেলেই শেষ। রোদ আস্তে আস্তে মেয়েটিকে বলে….
-তুমি লুকিয়ে পড়ো। প্লিজ।
-কেন?
-আরে আমার বোন যদি তোমাকে দেখে। আমাকে শেষ করবে।
-মানে
-কিছু না এদিকে আসো।
আর ঐ দিকে রিমি চিল্লিয়ে রোদ কে বলে…
-আরে ভাই দরজা টা খুলতে তোর এতোক্ষণ লাগে?
রোদ রিমির কথায় পাওা না দিয়ে নিরাপদ একটা জায়গা খুঁজতে থাকে যেখানে সে মেয়েটি কে লুকিয়ে রাখবে। যাতে করে রিমি না দেখতে পায় ওকে। রোদ মেয়েটির কে আলমারির সামনে নিয়ে যায়। আলমারি পুরো ফাঁকা। রোদ মেয়েটির কে আলমারির ভিতরে ঢুকিয়ে….
-তুমি প্লিজ একটু এখানে থাকো। জাস্ট ২ মিনিট। আমার বোন আমার রুম থেকে ওর ফোন টা নিয়ে চলে গেলে তুমি বেরোবে এর আগে না।
-মানে? আমি আলমারির ভেতরে কি বলতে চাইছো তুমি?
-প্লিজ ২ মিনিট।
রোদের অবস্থা দেখে মেয়েটির এতো হাসি পাচ্ছে যা বলার বাহিরে। তাও নিজের হাসি চেপে রেখে মেয়েটি বলে…
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার কথা মেনে নিলাম। এখানেই আছি আমি।
-থ্যাঙ্কস…
রোদ তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর রিমি রোদের রুমে আসে।
-কিরে ভাই তুই এতোক্ষণ কি করছিলি?
-আরে আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।
-ওহ আচ্ছা।
-যা তুই তোর ফোন নিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড় আমার রুম থেকে!
-হুহ আমি তোর রুম দখল করতে আসি নি। আমার ফোন টা খুঁজতে এসেছি। আমার টা আমার জন্য ঢের ভালো।
মুখ বাকাঁ করে রোদের দিকে তাকিয়ে ভেঙ্গচি মারে রিমি। তারপর বেলকনিতে যায় ফোন খুঁজতে রোদ ও রিমির পিছন পিছন যায়।
-কি ব্যাপার বল তো তুই আমার পিছন পিছন কেন আসছিস?
-কেন আবার তুই যদি আমার কোনো কিছু চুরি করে নিস তাই আর কি। (জোড় করে হাসার চেষ্টা করে রোদ। কিন্তুু ভেতরে ভেতরে ভয়ে শেষ। ভালোয় ভালোয় রিমি রুম থেকে বেরোলেই সে বাঁচে।)
-আমার বয়েই গেছে তোর জিনিস চুরি করতে।
রিমি ফোন টা নিয়ে বেলকনি থেকে রুমে যায়। এমন সময় মেয়েটি আলমারি থেকে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়। রোদ টেনশনের ফলে ভুলেই গিয়েছিলো আলমারি লক করতে। লক না করার ফলে আলমারির দরজা হালকা তে লেগে ছিলো। মেয়েটি জোড়ে ধাক্কা দেওয়ার ফলে তাল সামলাতে না পেরে সোজা ফ্লোরে।
-আহ্ মাম্মি আমার কোমড়।(চিৎকার দিয়ে)
রিমির মুখে হাত। রোদ একবার রিমির দিকে তাকায় একবার ফ্লোরে পড়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকায়। রিমির রিয়েকশন বোঝার চেষ্টা করছে রোদ। একটু পরে কি হবে সেটা ভাবতেই রোদের কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। একদম পিচ্চি ছেলেদের মতো কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার। (মাইনকা চিপায় পড়লে যা হয় আর কি)
রোদ ভাবছে তার সাথে এখন কি কি হবে। এমন সময় রিমির বলা কথা শুনে রোদ বিস্মিত হয়ে গেলো। আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা রোদের…………..
চলবে————
রোদ আর অজানা মেয়েটির কোন কথাটি আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে??