কাছে_পাশে
পর্ব_২
#Hiya_Chowdhury
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রোদের ফোন টা বেজে উঠে। ফোন রিসিভ করে ওপাশ থেকে কানে ভেসে আসা। কথাগুলো শুনে রোদ খুশিতে আত্মহারা।
-রিমি তুই ঠিক বলছিস তো যে আগামীকাল জুহি আসবে?
-হ্যাঁ রে ভাই একদম পাক্কা।
-ইশ আমার যে কি খুশি লাগছে। কত্তো দিন পর আমার জুহি কে দেখবো।
-তোর জুহি মানে?
-ককই কিছু না তো।
-তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই খুশি হয়েছিস জুহি আপি আসবে জেনে?
-হুম খুশি না হওয়ায় কি আছে। কতো বছর পর জুহি কে দেখবো।
-সরি ভাই তোর এতো খুশি হয়ে কাজ নাই।
-মানে?
-জুহি আপি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তুই বাসায় থাকলে সে আসবে না।
-হোয়াট…!
-হুম ভাই আম্মু বলেছে তুই বাসায় থাকবি না আগামীকাল। তুই আমাদের বাংলো বাড়ি টা তে চলে যাবি।
-ওহ আচ্ছা রাখি।
এটা বলেই রোদ ফোন টা কেটে দেয়। রোদ জানে জুহি কেন বলেছে সে বাসায় থাকলে জুহি আসবে না। জুহি ছোট থেকেই বড্ড অভিমানী আর জেদি ছিলো। রোদের উপর থেকে এখনো রাগ যায় নি তাই সে এমন টা বলেছে।
জুহি আসবে শুনে যতটা না খুশি হয়েছিলো রোদ। জুহির বলা কথাটি শুনে মুহুর্তের মধ্যেই বিলিন হয়ে গেছে রোদের সেই খুশি। বুকের বাম পাশ টায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো রোদ। জুহি কে একটা বার দেখার জন্য নিজের মধ্যে যে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে রোদের।
রোদ ডিসিশন নেয় সে তার মায়ের বলা কথা অনুযায়ী সে সত্যি ই চলে যাবে তাদের বাংলো বাড়িতে। তাও অন্তত জুহি পা রাখুক তাদের বাসায়। কারণ সে একদিন বাসায় না থাকলে কিছুই হবে না কিন্তুু তার জন্য যদি জুহি ওদের বাসায় না আসতে পারে তবে এর চেয়ে খারাপ কিছু আর কি হতে পারে। রোদ এমনি তেই জুহির সাথে করা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা পায় নি সেখানে আবার নতুন করে কোনো ভুল/অন্যায় করতে চায় না সে।
রাতে………..
রোদের পরিবারের সবাই ডিনার করতে বসেছে। প্রায় অর্ধেক খাওয়া শেষ এমন সময় রোদের আম্মু বলে উঠে।
-রোদ তোকে তো একটা কথা বলাই হয় নি… (রোদ ওর আম্মু কে আটকিয়ে)
-আমি জানি আম্মু। আর আমি কাল আমাদের বাংলো বাড়িতে চলে যাবো। তুমি টেনশন নিও না।
জুহির কথা মনে পড়তেই রোদের গলা দিয়ে আর খাবার নামছে না। সে খাবার ছেড়ে উঠে চলে যেতে নেয়………
-কিরে রোদ খাবার ছেড়ে উঠে গেলি কেন?
-আম্মু আমার খাওয়া শেষ। এটা বলে রোদ উপরে চলে যায়।
-কি জানি বাবা ওর মাথায় কখন কি ভুত চাপে। তুমি এই অল্প বয়সে আমার ছেলে টার উপর বিজনেস এর সব দায়িত্ব তুলে দেওয়ার জন্যই এমন হয়েছে।
-আহা রোদের মা কি সব বলছো। রোদ নিজেই এই দায়িত্ব নিয়েছে।
-হয়েছে ভাইয়া ভাবী তোমরা আর ঝগড়া করো না। ডিনার শেষ করো সবাই।
-হুম।
পাশ থেকে এসব চুপটি মেরে বসে শুনছে রিমি আর রোদের চাচাতো ভাই বোনেরা। এবার রোদের বায়োডাটা বলি।
রোদেরা জয়েন্ট ফ্যামিলি। রোদ কাব্য রিমি (রোদের ছোট ভাই বোন) রোদের আব্বু আম্মু রোদের কাকা কাকিমনি (ঝিমি শুভ্র ও শান্ত (রোদের চাচাতো ভাই বোন) রোদের দাদুমনি এদের নিয়ে রোদের পরিবার। শুভ্র আর রোদ সেইম এইজের। দুজনেই বিজনেসম্যান। শুভ্র আর একি সাথে তাদের কোম্পানি সামলিয়ে আসছে। অফিসের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ডিল ফাইনাল করতে শুভ্র দেশের বাইরে গেছে। যায় হোক সব মিলিয়ে খুব সুখি একটি পরিবার রোদের। সবাই খুব মিলেমিশেই থাকে।
রোদ উপরে নিজের রুমে গিয়ে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়। জুহির কথা মনে পড়ছে ভীষণ। কোনো কিছুই আর ভালো লাগছে না তার। ইচ্ছে করছে ছুটে জুহির কাছে চলে যেতে।
সেই উপায় টাও যে নেই। নিজের করা অন্যায়ের জন্য জুহির একটা পিক ফোন নাম্বার কিছুই পায় নি রোদ। বারবার ওর আম্মুর কাছে জানতে চেয়েছে জুহির ফোন নাম্বার/অন্য যেকোনো ভাবেই রোদ জুহির সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছে। কিন্তুু রোদ কোনো ভাবেই জুহির সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।
বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় রোদ। আকাশের হাজার হাজার তারার মাঝে চাাঁদ টাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। কোনো এক রাতে জুহি কে সাথে নিয়ে এমন সুন্দর পরিবেশ ভ্রমণ করতে চায় রোদ। কিন্তুু তা কি আদৌ সম্ভব….?
পরের দিন সকালে অফিসে পৌছে রোদ নিজের মাঝে নিজে স্থির থাকতে পারছে না। কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে তার। কখন জুহি ওদের বাসায় এসে পৌছাবে এটা জানার জন্য মন টা ব্যাকুল হয়ে আছে।
রোদ সকালে অফিসে আসার আগে রিমি কে বলে দিয়েছে। জুহি যখন ই ওদের বাসায় এসে পৌঁছাবে তখনি যেনো খবর টা রিমি রোদ কে দেয়। প্রায় ১১ বাজতে চললো রোদ এখনো রিমির ফোন পাচ্ছে না।
আসার তো কথা সকালেই তাহলে এখনো কেন আসছে না? কোনো বিপদ হলো নাতো জুহির? এখন কেমন জেনো নার্ভাস ফিল করছে রোদ।
তখনি ম্যানেজার সাহেবের আগমন……
-স্যার আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
-ককই না তো।
-তবুও স্যার আপনাকে কেমন যেনো নার্ভাস দেখাচ্ছে। যদি স্যার আপনি কিছু মনে না করেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন আপনার সমস্যার কথা! যদি আমি স্লভ করতে পারি!
রোদ মুচকি হাসে ম্যানেজার সাহেবের কথায়। সে নিজেই কিছু করতে পারছে না আর সেখানে নাকি ম্যানেজার সাহেব পারবে।…!
-আরে না ম্যানাজার সাহেব। আপনি যেমন টা ভাবছেন তেমন কিছুই না। এমনি আজকে আমার মন টা ভালো নেই।
-ওহ আচ্ছা মন খারাপ হলে স্যার গান শুনেন মুড অন হতে যাবে।
-(তাও রোদ মুচকি হাসে)
কিছু সময় পর ম্যানেজার সাহেব চলে যায়। রোদ জুহির কথা ভাবতে ভাবতে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে। মেয়ে টা এখনো কেন আসলো না? নাকি রিমি ওকে জানাতে ভুলে গেছে? না অন্য কিছু। আর কিছুই ভাবতে পারছে না রোদ। মোটামুটি সে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যা হয় আর কি।
আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে রোদের ফোন বেজে উঠল। রোদ দেখে রিমি ফোন দিয়েছে। রোদের মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠে। তবে এই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রিমির কথা শুনে মুহুর্তের মাঝে রোদের হাসি উধাও হয়ে গেলো………..
চলবে————-