#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-১৯
কয়েক দিন ধরে তানি খুব অসুস্থ। হঠাৎই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ক’টা দিন হাসপাতালেও কাটিয়ে এসেছে। বাসায় ফেরার পরও প্রায় বেহুশ, কিছু খেতেও পারছে না। মাঝেমধ্যে একটু চোখ মেলে চাইলে মাহফুজা জোর করে কিছু একটা খাইয়ে দেয়। তানিও যন্ত্রের মতো চোখ, নাক বুঝে খাবার গিলে আবারও বিছানায় পড়ে থাকে। মাহফুজা দুদিন স্কুল কামাই করলেও তৃতীয় দিনে আর সম্ভব হলো না। স্কুলে ফার্স্ট টার্ম এক্সাম শুরু হয়েছে তাই বাধ্য হয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। তবে ভরসার কথা হলো কাজ কর্ম ছেড়ে ইরা এসে তানির দেখভাল করছে। আনিকারও ইউনিভার্সিটির এডমিশন কোচিং শুরু হয়েছে। তাই তাকেও ছুটতে হচ্ছে কোচিং এ। ইরার মা সালমা সুলতানাও এসে মাঝেমধ্যে দেখে যায়। তানিকে তার ও ভীষণ পছন্দ। তাই ইরার অনেক টা সময় থাকা নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই।
শুভ্র এই সময়টা’তে তানির আশেপাশে কেবল তখনই ঘুরঘুর করে, যখন তানি ঘুমিয়ে থাকে। জেগে থাকা অবস্থায় ওর সাহস হয় না তানির মুখোমুখি হবার। তাই তানি যখন ই চোখ মেলে তাকায় শুভ্র তখনই পালিয়ে যায়। এই ক’দিনে শুভ্র এক ফোটাও ঘুমাতে পারে নি। সারারাত বিছানায় এপাশ, ওপাশ করে কাটিয়েছে। ভিতরের যন্ত্রনা না পারছে কাউকে বলতে, আর না পারছে সইতে। একেকবার ইচ্ছে হয় কিছুক্ষন চিৎকার করে কাঁদতে, কিন্তু তাও পারছে না।
অভ্র বলেছে, ভাইয়া ভাবী সুস্থ হলে আমরা তাকে বুঝিয়ে সব টা বলব। তুমি এতো ভেবো না। কিন্তু শুভ্র ভরসা করতে পারে নি। শুভ্র যে ভরসা করতে পারে নি, সেটা অভ্র’ও বুঝেছে। শুভ্র’র চোখের নিচে কালি জমেছে, শেভ না করার কারনে খোঁচা খোঁচা দাড়ি বড় হয়ে গেছে। রাতে ঘুম না হওয়ার কারনে চোখও রক্তবর্ণ আকার ধারণ করেছে। মাহফুজা প্রথম কয়েকটা দিন ছেলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেও তারপর আর পারে নি। মমতার কাছে হেরে গেলেও শুভ্র’কে ক্ষমা করতে পারে নি।
যা যা ঘটেছে তার জন্য মাহফুজা নিজেও অনেক কষ্ট পেয়েছে। শুভ্র অনেকবার ক্ষমা চাইলেও ক্ষমা করতে পারে নি। এর আগে শুভ্র অবন্তীর ভুল, বেহায়াপনা প্রশ্রয় দিয়েছে অথচ এতো ভালো মেয়েটার ব্যাপারে যাচাই না করেই এরকম একটা কথা কিভাবে বলল এটা ভেবেই মাহফুজার রাগ হয়। ছেলের সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলছে না। কিন্তু পরে দেখলো যে শুভ্র নিজেই ঠিক নেই তখন আর রাগ ধরে রাখতে পারে নি। মনে মনে আল্লাহ কে বলেছে, হে আল্লাহ এই অবুঝ ছেলেমেয়ে দুটো’কে তুমি বুঝ দিও৷
*****
গত কয়েকদিনে শুভ্র, তানির চক্করে অভ্র’র ও ভালো ঘুম হয় নি। নিজের ভাইয়ের নির্বুদ্ধিতায় হতভম্ব হয়েছে। শুভ্র’র মতো এতো বুদ্ধিমান মানুষ এরকম একটা কাজ করলো! অন্তত ওকে যদি বলতো তবে পরিস্থিতি এতো বিগড়ে যেত না। অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সবাই শুভ্র’কে ভুল বুঝলেও ও তা পারেনি। বরং ওর শুভ্র’র জন্যই মায়া বেশী হয়। খেতে বসে এক রাতে দেখলো শুভ্র ডালের বদলে ভাতের প্লেটে পানি ঢেলে নিয়ে খেতে শুরু করেছে। ঠিকঠাক ঘুমায় ও না। প্রায় রাতেই ওর কাছে সিগারেট নিতে আসে, কিছুক্ষণ বসে থেকে সিগারেট ছাড়াই চলে যায়। এসব দেখতে অভ্র’র ভালো লাগে না। ইচ্ছে হয় কিছু একটা করে দুজনের সব দুঃখ, কষ্ট মুছে দিতে।
চেয়ারে হেলান দিয়ে এসব ভাবছিলো তখনই ইরা ফোন করলো। অভ্র ফোন ধরে বলল,
“হ্যালো! ভাবী ঠিক আছে তো।”
ইরা চাপা গলায় বলল, হ্যাঁ ঠিক আছে। ঘুমাচ্ছে, জ্বর নেই।
“তাহলে এই সময় ফোন করলে যে?”
“তোমাকে একটা কথা জানানোর জন্য। ”
“কী?”
“ভাইয়া প্রায় ই দরজার সামনে ঘুরঘুর করে। মাঝেমধ্যে ভিতরে এসে একটু বসে। ভাবীর নড়াচড়া টের পেলে উঠে চলে যায়। ভাইয়া’কে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না। ”
অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ওর নিজের কী ভালো লাগছে এসব দেখতে।
ইরা আবারও বলল, তবুও ভাবীর দিক টা’ও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ভাবীও তো বিনাদোষে কষ্ট পেল।
“হু।”
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। ইরা আবারও বলল, আমার কী মনে হয় জানো?
“কী মনে হয়?”
“ভাইয়া ভাবীকে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছে। ”
অভ্র কিছু বলল না। সেটা ও নিজেও জানে। কিন্তু জানলে লাভ কী! তানি কী সেটা আর বিশ্বাস করবে! তানি তো বলবে যে, ভালোবাসার এই নমুনা।
ফোনের ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে ইরা বলল, আচ্ছা রাখছি। তুমি এতো ভেবো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
“তাই যেন হয়। ”
ফোন রেখে আবারও চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিলো অভ্র। মনে মনে ভাবলো, তানি সুস্থ হলে ওকে হাতজোড় করে বলবে, ভাবী তোমাদের কারও অতীত ই মসৃন ছিলো না, হ্যাঁ ভাইয়ার দোষ ও আছে তবুও তাকে বড় কোনো শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেও সেই শাস্তির ভাগিদার হইয়ো না।
*****
দুপুরবেলা শুভ্র তানির খোঁজ নিতে গেল। তানি ঘুমিয়ে আছে। ইরা পাশে বসে গান শুনছিলো। শুভ্র’কে দেখে বলল,
“কিছু বলবে ভাইয়া? ”
শুভ্র আমতা আমতা করে বলল, না মানে ও কিছু খেয়েছে কী না!
ইরা বলল, না। ভাবীকে কয়েকবার ডেকেছি কিন্তু সাড়াশব্দ নেই।
শুভ্র চিন্তিত গলায় বলল, অনেক টা সময় হয়ে গেছে। এখন তো ওর ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তুই ওকে ডেকে দে।
শুভ্র’র কথামতো ইরা তানিকে ডেকে তুলল৷ তানি চোখে খুলে তাকাতেই শুভ্র’কে দেখতে পেল। শুভ্র চট করে সরে গেল। ইরা তানিকে বালিশ উঁচু করে হেলান দিয়ে খাওয়াতে লাগলো। তানি চিকেন স্যুপ গিলছে আর বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। দেখার চেষ্টা করছে শুভ্র আছে কী না। ইরা বুঝতে পেরে বলল, ভাবী ভাইয়াকে ডেকে দেব?
তানি ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, না।
খাওয়ার পর্ব শেষ করে তানি আবারও শুয়ে পড়লো। ইরা রান্নাঘরে খুটখাট করছে সে শব্দ শুনতে পাচ্ছে। তানির চোখে পানি এসে গেল। শেষকালে এসে এমন নিষ্ঠুর মানুষ কে জানপ্রান উজাড় করে ভালোবাসতে গেল! অসুস্থ হয়ে এতোদিন বিছানায় পড়ে ছিলো অথচ দেখতে এসেছে কেবল আজ ই। প্রতিদিন ই তানি ভাবতো চোখ খুলে হয়তো শুভ্র’কে দেখতে পাবে। পাশে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। যা কিছুই হোক, বউ তো! তাছাড়া ভুল যখন করেছে ক্ষমা চাইবে তো অন্তত। সেইটুকু ভদ্রতাটুকু নেই। অথচ বিয়ের পর কতো ভদ্রতা দেখালো। তানি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুস্থ হয়েই সোজা বাপের বাড়ি চলে যাবে। তাছাড়া ও এসব কী ভাবছে! শুভ্র’র কাছেই বা কেন এতোকিছু আশা করছে! যে ছেলে পরের কথায় নিজের বউকে ক্যারেক্টারলেস বলেছে সে চূড়ান্ত অসভ্য একটা ছেলে।
ক্ষমা করার প্রশ্ন ই আসে না। একটু হাটাচলা করতে পারলেই এই বাড়ি ছেড়ে যাবে। দুইবেলা আধপেটা খেয়ে, ভাইয়ের বউয়ের খোঁচা সহ্য করে থাকবে তবুও চরিত্রহীনা তকমা গায়ে লাগিয়ে এ বাড়িতে থাকবে না।
একটা চূড়ান্ত অসভ্য লোককে ভালোবাসার জন্য তানি হাপুস নয়নে কাঁদতে লাগলো।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে সেই অসভ্য লোকটার’ও তখন তানির কান্না দেখে চোখ ছলছল করে উঠলো।
চলবে……
#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-২০
তানির অবস্থা আগের থেকে অনেক টা ভালোর দিকে। শরীর কিছুটা দূর্বল আছে তবে চলাফেরা করতে পারে অনেক টা রোগাও হয়ে গেছে। সুস্থ হবার পর শুভ্র তানিকে আগের মতো দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। তানি এখন আনিকার সাথে ওর ঘরেই থাকছে। সারাদিন ঘর থেকে বের হয় না বললেই চলে। শুভ্র অপেক্ষা করে অন্তত খাওয়ার সময় তানিকে দেখতে পাবে। কিন্তু ও টেবিলে খেতেই আসে না। নিজের ঘরে বসে নাকি খায়। শুভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কিভাবে যে মান অভিমান পর্ব চুকিয়ে স্বাভাবিক করবে তানিকে সেটাই ভেবে পায় না। প্রথম প্রথম লজ্জায় তানির সামনে যাওয়ার সাহস করতে পারে নি। এখন যখন সাহস করে তানির কাছে যাচ্ছে, তখন তানি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। লাগাতার দরজায় কড়া নেড়েও দরজা খোলাতে পারে নি। এমন জেদি মেয়ে! শুভ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে করেই হোক তানির সাথে কথা বলবে। চুপচাপ থেকে ব্যাপার টা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
অপেক্ষা করলো মঙ্গলবারের। সেদিন বাসায় কেউ থাকবে না, কিভাবে দরজা আটকে বসে থাকে সেটা শুভ্র’ও দেখবে।
*****
তানি এখন অনেকটা সুস্থ ঠিক ই কিন্তু এই অবস্থায় বাড়ি যাবার মতো সাহস করতে পারছে না। প্রায় ই মাথা ঘুরে, একটু বেশী হাটাচলা করলে শরীর খারাপ করতে শুরু করবে। যদি এই অবস্থায় বেরিয়ে যায় আর পথে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকে তাহলে দেখার কেউ থাকবে না। তাই এই বোকামি করার মানে হয় না কোনো।
তানি সারাদিন ঘরে, শুয়ে বসে কাটায়। বই পড়তেও আজকাল ভালো লাগছে না। ইরা নীলক্ষেত থেকে কতগুলো বই এনে দিয়েছে সেগুলো তেমন ই পড়ে আছে, ছুঁয়েও দেখে নি তানি। বই খুললেই মাথা ঘোরাতে শুরু করে।
কিছু ভালো লাগছিলো না বলে তানি ফেসবুকে ঢু মারলো। ওয়াইফাই অন করতেই ম্যাসেঞ্জারের টুংটাং আওয়াজ শুরু হতে লাগলো। শুভ্র অনেকগুলো ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। তানি ম্যাসেজ না খুলেই শুভ্র’কে ব্লক করে দিয়ে ওয়াইফাই অফ করে ম্যাসেঞ্জার থেকে বেরিয়ে এলো। এতো আদিখ্যেতা সহ্য হচ্ছে না ওর। প্রায় ই চোরের মতো ঘুরঘুর করে, দরজার সামনে এসে নাম ধরে ডাকে। এতোসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে দেখাক, তানি এসব নাটক দেখে মোটেও গলবে না।
★★
রাগে শুভ্র’র শরীর কিড়মিড় করছে। এতো বাড়াবাড়ি! ম্যাসেঞ্জারে ব্লক দিয়ে দিলো! শুভ্র’র হাত মুষ্টিবদ্ধ, একটু পর পর দরজায় ঘুষি দিচ্ছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। বুদ্ধিজ্ঞান লোপ পেয়ে গেছে যেন৷ শুভ্র মোবাইল হাতে নিয়ে তানিকে পর পর ফোন দিতে লাগলো। তানি যতই কেটে দেয়, শুভ্র তত আরও ফোন দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তানি বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দিলো। শুভ্র ফোন বন্ধ পেয়ে অভ্র’কে ফোন করলো। অভ্র ফোন ধরতেই গমগমে গলায় বলল,
“অভ্র শোন, বাড়াবাড়ির কিন্তু একটা লিমিট আছে।”
অভ্র অবাক হলো না। নির্লিপ্ত গলায় বলল, কী হয়েছে?
“কী হয়েছে শুনতে চাস? তোর পেয়ারের ভাবী আজ আমাকে ম্যাসেঞ্জারে ব্লক দিয়েছে। ”
অভ্র হাসতে গিয়েও চেপে গেল।বলল,
“ভাবী রেগে আছে তাই ব্লক দিয়েছে। রাগ কমে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
শুভ্র চিৎকার করে বলল, আই এ্যম হার হাজবেন্ড, অথচ সে আমাকে ব্লক দেয়, ফোন দিলে রিসিভ করে না। এতো স্পর্ধা!
অভ্র নীরবে হাসলো। মনে মনে বলল, বাহ ভাইয়া! তুমি তো এবার সত্যি সত্যি গেছ!
শুভ্র রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলল, শোন অভ্র, আমি এখন ওর ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকবো।
অভ্র আঁতকে উঠে বলল, এই না ভাইয়া। মাথা ঠান্ডা করো।
“মাথা গরম কড়াইয়ের মতো ফুটছে, রুটি ভাজা যাবে ইজিলি। এতো সহজে ঠান্ডা হবে না। ”
“ভাইয়া প্লিজ, আমি না আসা পর্যন্ত দরজা ভাঙাভাঙির ঝামেলায় যেও না। আমি আসছি তোমাকে হেল্প করব”।
“নো নিড”।
শুভ্র কল কেটে দিয়ে ফোন টা ছুড়ে মেরে আনিকার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
★★
অভ্র অফিস থেকে বেরিয়ে ইরাকে ফোন করে বলল,
“কোথায় আছ? ”
ইরা বাড়িতেই ছিলো। বলল, ঘরে কেন? ডেটিং এ নিয়ে যাবে বুঝি।
অভ্র বলল, শিগগিরী আমাদের বাড়ির দিকে যাও। ঘরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
“ভাইয়া আর ভাবীর আবারও ঝগড়া শুরু হয়েছে?”
“আরে ঝগড়া না, রীতিমতো মারামারি। ভাবী ভাইয়াকে ব্লক দিয়েছে ম্যাসেঞ্জারে। ”
ইরা অবিশ্বাস্য গলায় বলল, এই সামান্য বিষয়ে এতো ঝগড়াঝাটি?
অভ্র বলল, তোমার আমার কাছে সামান্য বিষয়, কিন্তু ভাইয়ার কাছে সিরিয়াস। সে তার বউয়ের প্রেমে পড়ে নিজেকে রোমিও আর বউকে জুলিয়েট ভাবছে। এখন জুলিয়েট তাকে ইগ্নোর করার কারনে ওয়ার্ল্ড ওয়ার শুরু হবে।
ইরা বিস্মিত গলায় বলল, ওহ মাই গুডনেস!
“তুমি তাড়াতাড়ি যাও। আমিও আসছি। ”
ফোন রেখে ইরা পড়িমরি করে ছুটলো শুভ্র’দের বাড়ির দিকে।
★★
শুভ্র’কে দরজা ভাঙতে হয় নি। দরজায় দুরুম দুরুম শব্দ হতেই তানি দরজা খুলেছিল। শুভ্র’র চোখ, মুখ তখন রাগে লাল হয়ে আছে। তানি দেখে ভরকে গেলেও অতিদ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“আপনার সমস্যা কী? এভাবে দরজা ধাক্কাধাক্কি করছেন কেন?”
শুভ্র বজ্রকন্ঠে বলল, ধাক্কাধাক্কি না। আমি দরজা ভেঙে ফেলতে এসেছিলাম।
অতি দুঃখেও তানির খুব হাসি পেল। সিনেমায় দেখেছে নায়ক দরজা ভাঙে তাই দেখে নিজের ও শখ হয়েছে। তানি মিটিমিটি হাসলো। তানিকে হাসতে দেখে শুভ্র’র আরও বেশী রাগ হলো। গমগমে গলায় বলল,
“তুমি আমাকে ব্লক কেন দিয়েছ? ফোন কেন কেটে দিয়েছ?”
“আমার আপনার সাথে কোনো কথা নেই তাই। ”
তানি নির্লিপ্ত গলায় বলল।
শুভ্র তানির বাহু চেপে ধরে বলল, অবশ্যই তুমি আমার সাথে কথা বলবে এবং আমার সব কথা মন দিয়ে শুনবে।
তানি নিজেকে শুভ্র’র হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, আপনার কথা শোনার এবং আপনাকে কিছু বলার রুচি আমার একদম ই নেই।
শুভ্র যেন একটু দমে গেল। বলল,
“ওকে ফাইন। তুমি তাহলে কী চাচ্ছ? ”
তানি এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। তবুও সাথে সাথে বলল,
“আমি আমার বাড়ি যেতে চাই।”
শুভ্র শীতল গলায় বলল,
“এটাই তোমার শেষ কথা”?
তানি বলল, হ্যাঁ।
“বেশ এক ঘন্টার মধ্যে সব গুছিয়ে নাও। আমি তোমাকে রেখে আসব”।
তানি ঝোকের মাথায় বলে ফেললেও এখন ওর খুব খারাপ লাগছে। মাহফুজা বাড়ি নেই। এভাবে না বলে যাওয়া কী ঠিক হবে!
তানি বলল, আগে মা আসুক তারপর দেখা যাবে। তাছাড়া আপনার সাথে পাশাপাশি বসে যাওয়ার ও কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
শুভ্র শীতল চোখে তাকালো। বলল,
“তুমি এক ঘন্টার মধ্যে সব গুছিয়ে রেডি থাকবে। আর একটা কথাও যদি বলো তাহলে তোমার এক ঠ্যাং ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখব। বাপের বাড়ি যাওয়ার শখ মিটে যাবে। ”
★★
অভ্র, ইরা বাসায় এসে দেখলো সব ঠান্ডা। শুভ্র বসে বসে কফি খাচ্ছে। সব ঠান্ডা দেখে তানিকে জিজ্ঞেস করলো, ঘটনা কী! শুভ্র’কে ঘাটানোর সাহস হলো না।
তানির কাছে সব টা শুনে অভ্র’র খুব মজা লাগলো। ইরা ফিসফিস করে বলল, ভাইয়া তো বেশ রোমান্টিক।
মাহফুজা ফিরে এসে সব টা শুনে হতাশ গলায় বলল, এসব কী হচ্ছে? কোনো ভদ্রলোকের বাড়ির মানুষজন এসব করে?
অভ্র চোখ টিপে চুপ থাকতে বলল।
তানি একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে মাহফুজার দিকে আসতেই শুভ্র হাত ধরে সরিয়ে দিয়ে বলল, আমার সাথে কথা বলার রুচি না থাকলে, আমার মা, ভাই, বোনদের সাথেও কথা বলার প্রয়োজন নেই।
তানি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। শুভ্র সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে তানির হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
মাহফুজা অভ্র’র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আমাকে কী একটু বলবি কী হচ্ছে এসব?
★★
তানি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছে। শুভ্র চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে আছে। তানি যে কেঁদে যাচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। এদিকে তানির খুব কষ্ট হচ্ছে শাশুড়ী, দেবর, ননদের জন্য।
রাজশাহী পৌছুতে পৌছুতে ওদের রাত সাড়ে ন’টা বাজলো। শুভ্র কিছুতেই থাকবে না। দুজন যে ঝগড়া করে এসেছে সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে মুখ দেখে। শুভ্র সবার সাথে কথা বলেছে চোখ, মুখ শক্ত করে। অন্যদিকে তানি ভালো করে কারও সাথে কথাই বলে নি। বোনেদের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছে। শুভ্র ফেরার পথে তানির সাথে দেখা করতে চাইলেও তানি সামনে আসলো না।
শুভ্র অপেক্ষা না করে চলে এলো। নিচে নেমে তানির নাম্বারে ম্যাসেজ করলো, এরপর তুমি কী চাও?
কিছুক্ষণ পর তানি রিপ্লাই দিলো, ডিভোর্স পেপার পাঠাবেন আমি সাইন করে দেব।
মিনিট দুয়েকের মধ্যে শুভ্র লিখলো, ঠিক চারদিন পর তোমাকে নিতে আসব। ভালোয় ভালোয় না এলে অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থা নেব। আর ডিভোর্স? সেটা তো কোনোদিন ই পাবে না। দেখি তুমি কী করো।
ম্যাসেজ পড়ে তানির চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। শুভ্র ওকে থ্রেট দিলো!
চলবে…..
সাবিকুন নাহার নিপা