কাছে_কিবা_দূরে পর্ব-১৫+১৬

0
371

#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-১৫
হানিমুন ট্রিপের কথা শুনে শুভ্র’র কোনো ভাবান্তর হলো না। ব্রেকফাস্টের টেবিলে যখন অভ্র বলল, তখন নির্লিপ্ত গলায় বলল, ও তোরা এই করেছিস লুকিয়ে লুকিয়ে।

অভ্র বোকার মতো হেসে বলল, হ্যাঁ সারপ্রাইজ কেমন দিলাম বস!

শুভ্র পরোটা আর ডিম মুখে পুরে বলল, তা কোথায় যাচ্ছি আমরা?

আনিকা উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, কক্সবাজার। কী ভালো একটা রিসোর্ট বুক করা হয়েছে তোমাদের জন্য।

সবার উৎসাহে একরাশ পানি ঢেলে দিয়ে শুভ্র বলল, কক্সবাজার! ইয়াক! ধূলোর শহর ছেড়ে যাব বালির শহরে! কেন আমরা কী হানিমুনে গিয়ে বালি মাখামাখি করে শুয়ে থাকব নাকি?

অভ্র’র মুখ টা ছোট হয়ে গেল। তানি এতক্ষণ চুপচাপ মাথানিচু করে খাচ্ছিলো। বিস্মিত চোখে শুভ্র’র দিকে তাকালো। মাহফুজা রান্নাঘরে রান্না করছিলো। ঠিক তখনই আনিকা চিৎকার করে বলল, ভাইয়ায়ায়া তুমি একটা আস্ত খবিশ।

শুভ্র নির্লিপ্ত গলায় বলল, আমি আরও ভেবেছিলাম অফ টাইমে ভালো কোথাও একমাত্র বউটা’কে নিয়ে ঘুরতে যাব। তোরা’ই তো সব পন্ড করে দিলি।

অভ্র কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, অকৃতজ্ঞ, বেইমান।

তানি অবাক গলায় বলল, আপনি এমন কেন! ভাইয়া, আনিকা আর ইরা কতো কষ্ট করে প্ল্যান করলো। ”

শুভ্র সিরিয়াস গলায় বলল, আচ্ছা তানি বলোতো, তুমি আসলে কোন দলের? বরের হয়ে তো কখনো একটা কথাও বলো না। সবসময় দেখি বজ্জাত দেবর, ননদের ন্যাওটা হয়ে থাকো। অথচ তুমি যখন রেগে গিয়ে টমেটো হয়ে যাও তখন আমিই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করি।

তানি লজ্জায় মাথানিচু করে ফেলল। কী অসভ্য লোক! কোনো রাখডাক নেই। যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছে। ছোট ভাই বোনেরা সামনে সে খেয়াল নেই।

অভ্র বলল, ঠিক আছে আমরা তাহলে সব ক্যান্সেল করে দেই। কী বলিস আনু?

আনিকা বলল, হ্যাঁ ঠিক ই বলেছ।

তানি রুক্ষ গলায় বলল, কেন? উনি না গেলে আমি একা যাব। প্রয়োজনে তোমরা আমার সাথে যাবে।

শুভ্র মিনমিনে গলায় বলল, আরে তোমরা সবাই মিলে এতো হাইপার কেন হচ্ছো? আমি তো যাব না বলি নি।

অভ্র বলল, না না। বালির শহরে তোমাকে আর বালি মাখাতে পাঠাচ্ছি না।

শুভ্র হাসতে হাসতে বলল, আরে আমি তো মজা করছিলাম। কেন এতো সিরিয়াস হচ্ছিস তোরা? তাছাড়া তানি কী একা একা হানিমুন করবে নাকি? বর ছাড়া কী আর হানিমুন হয়?

তানি রেগে গিয়ে বলল, আপনি চূড়ান্ত অসভ্য এক লোক।

শুভ্র হেসে বলল, আরে বউয়ের সাথে অসভ্যতা করা ফরজ।

আনিকা কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ভাইয়া আমি কিন্তু এখনো ছোট।

শুভ্র চোখ কপালে তুলে বলল, ওমা তাই? আগে তো জানতাম না। আমি তো জানতাম যে লিপস্টিক, নেইলপলিস ঠিকঠাক লাগাতে পারে তাকে বিয়ে দেয়া যায়। তাহলে তুই ছোট কিসের!

মাহফুজা রান্নাঘরে বসে টের পেলেন ডাইনিং টেবিলে রীতিমতো মাছের বাজার বসে গেছে। বুঝলেন যে তার ছেলে মেয়েরা আবারও ঝগড়া শুরু করেছে। কাজ সেড়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, তোরা খাওয়া বাদ দিয়ে এমন ঝগড়া কেন করছিস?

অভ্র আর আনিকা শুভ্র’র বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করলো। সব শুনে মাহফুজা শুভ্র’কে বলল, তোর এসব ধানাইপানাই কিন্তু চলছে না, ক’টা দিন তানিকে নিয়ে ঘুরে আয়। মেয়েটা সারাদিন একা একা থাকে।

শুভ্র ভ্রু উঁচিয়ে বলল, আচ্ছা! আমাকে তাহলে তোমার পুত্রবধূর বডিগার্ড হয়ে যেতে হবে?

মাহফুজা হেসে বলল, হ্যাঁ হবে।

“ওহ আচ্ছা! আমি এখন পর তাই তো?”

অভ্র বলল, হ্যাঁ। তাছাড়া আমাদের ভাবীকে আমরা তো আর একা পাঠাতে পারি না, তাই তোমাকে পাঠাচ্ছি পাহারাদার হিসেবে।

শুভ্র দুঃখী হবার ভান করে বলল, আগে জানতাম মেয়েরা বিয়ের পর বাপ, মায়ের কাছে পর হয়ে যায়। এখন দেখলাম ঘরে বউ এলে ছেলেরাও মা, ভাই, বোনের কাছে পর হয়।

শুভ্র’র কথার ধরন শুনে সবাই ই হাসলো। শুধু তানি হাসলো না। গম্ভীর হয়ে রইলো।

******
তানি ঘরে ফিরে গোছগাছ শুরু করলো। ট্রলিতে কেবল নিজের কাপড়, চোপর ই নিচ্ছে। শুভ্র ঘরে ঢুকে সেটা দেখতে পেয়ে বলল, কী স্বার্থপর তুমি? নিজের জামাকাপড় গোছাচ্ছো, আর আমি কী বানের জলে ভেসে এসেছি! আমি পাহারাদার, ভুলে যেও না।

তানি পিছনে ফিরে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল, আপনি এতো অসভ্য অসভ্য কথা বলছিলেন কেন?

শুভ্র আকাশ থেকে পড়লো যেন। বলল, যাহ বাবা! বউয়ের সাথে অসভ্যতা করব না তো কার সাথে করব?

“ছিঃ! শেইমলেস কোথাকার।”

শুভ্র জামা, প্যান্ট ভাজ করতে করতে নির্লিপ্ত গলায় বলল, আমি দুটো পঁচা কথা বলে অসভ্য হয়ে গেলাম! আর কেউ কেউ যে রাতে আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে জড়িয়ে ধরে সেটাকে কী বলা যায়!

তানির চোখ দুটো বড় হয়ে গেল। শুভ্র তার মানে জেনে গেছে কাল রাতের ব্যাপার টা!

তানি শুকনো ঢোক গিলে বলল, মানে?

শুভ্র বলল, মানে হলো কিছু কিছু ভদ্রমহিলা আছে যারা স্বামী ঘুমিয়ে গেলে তার চুল হাতাহাতি করে, হাতের আঙুলের ভাজে আঙুল রাখে। একটু কায়দা করে জড়িয়ে ধরে। আর বেচারা স্বামী ভালো ছেলের মতো ঘুমিয়ে থাকে।

তানি রাগে ফুসতে ফুসতে বলল, হুহ! ভালো ছেলে। কতো ভালো জানা হয়ে গেছে।

“কী কী জানলে?”

তানি রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলে শুভ্র শব্দ করে হেসে ফেলল।

*******
সন্ধ্যেবেলা তানি আর শুভ্র’কে স্টেশনে এগিয়ে দিতে অভ্র আর ইরাও এলো। ইরা তানিকে নিয়ে একটু সামনে সামনে হাটছিলো আর শুভ্র, অভ্র পিছনে হাটছিলো।

অভ্র গলা খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া একটা সত্যি কথা বলবে?

শুভ্র স্বভাবসুলভ রসিকতা করে বলল, না বলব না। কারণ আমি সবসময় মিথ্যা বলে অভ্যস্ত।

“ভাইয়া সিরিয়াস কথা বলছি কিন্তু “।

“তাহলে ঢং না করে তাড়াতাড়ি বল। দিন দিন এতো ঢঙ্গী হচ্ছিস কেন? মেয়েদের সাথে থাকতে থাকতে বুঝি?

“মেয়েদের সাথে কই থাকি? ইরা, আনু আর ভাবী ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই আমার লাইফে। ”

শুভ্র বলল, মূল টপিক ভুলে যাচ্ছিস কিন্তু।

অভ্র বলল, ওহ হ্যাঁ! ভাইয়া সত্যি করে বলোতো তুমি কী ভাবীর প্রেমে পড়েছ?”

“অবশ্যই পড়েছি। ”

শুভ্র’র সহজ সরল স্বীকারোক্তি অভ্র’র হজম হলো না। বলল,
“ভাইয়া মজা না প্লিজ। সিরিয়াসলি বলো।”

“হ্যাঁ সিরিয়াসলি ই বলছি তো।”

“তা কবে প্রেমে পড়লে?”

“বিয়ের পর পর ই। চোখের সামনে এতো সুন্দর একটা বউ। তাও নিজের আপন বউ থাকলে যেকেউ প্রেমে পড়বে। আমিও পড়েছি। ”

অভ্র হাসলো। সেই হাসিটা মেকি হাসি না। প্রানবন্ত হাসি।

শুভ্র বলল, এতো হাসির কারণ?

“শুনে খুব খুশি হয়েছি তাই। ”

“এতো খুশি কেন হচ্ছিস?”

“শোনো ভাইয়া এবার সুযোগ বুঝে ভাবীকে প্রেমের কথাটা বলে দাও”।

শুভ্র কিছু একটা ভেবে বলল, আচ্ছা।

অভ্র খুশিতে পাগল হয়ে গেল। বলল, থ্যাংক ইউ ভাইয়া, থ্যাংক ইউ সো মাচ।

শুভ্র হাসলো। মিষ্টি হাসি। যে হাসি দেখলে তানির আত্মা কেঁপে ওঠে। চোখে পানি এসে যায়। খুশির পানি।

অভ্র আর ইরাকে বিদায় জানিয়ে দুজন ট্রেনে উঠলো। ট্রেন একটু একটু করে চলতে শুরু করলো। ইরা চাপা গলায় বলল, এই দেখো দুজন কে কত্তো সুন্দর লাগছে।

অভ্র উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, জানো ভাইয়াও আজ কনফেস করেছে। বলেছে ভাবীকে ভালোবাসে।

ইরা বিস্ময়ে চোখ বড় করে ফেলল। ট্রেনের গতি বেড়ে চলছে। শুভ্র, তানিকে দেখা যাচ্ছে না আর। ক্রমে ক্রমে মিলিয়ে যাচ্ছে।

ইরার বিস্ময় কেটে গেলে চিৎকার করে বলল, সত্যি!

“হ্যাঁ। ”

“ইশ আমার আজ এতো খুশি লাগছে!”

“আমারও। ”

“আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।”
অভ্র আঁতকে উঠে বলল, এই না না প্লিজ প্লিজ। এটা পাবলিক প্লেস।

ইরা খিলখিল করে হাসলো।

রিকশায় উঠে ইরা বাদাম চিবুতে চিবুতে বলল, আজ আমি তোমার উপর খুব খুব খুব খুশি।

অভ্র মৃদু হাসলো। ইরা অভ্র’র একটা হাত ধরে বলল, আমার সাধ্য থাকলে আমি তারা ভরা একটা আকাশ দিতাম তোমাকে।

অভ্র বলল, উঁহু। আমার নীল আকাশ পছন্দ। নীল আকাশ না পেলেও চলবে তবে এই দুষ্টমিষ্টি মেয়েটাকে নীল শাড়ি পরা অবস্থায় প্রতিটি মিঠা সন্ধ্যায় চাই ই চাই।

চলবে…..

#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-১৬
যে রিসোর্টে শুভ্র, তানি এসেছে সেখানের জানালা খুললেই সমুদ্র দেখা যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুভ্র জানালা খুলে মুগ্ধ চোখে কমলা রঙা আকাশ, আর সমুদ্রের ঢেউ দেখে। দুটো সকাল দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কেবল। প্রতিটি সকালে ই চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলেছে, একটা জীবন কেন মানুষ পায়! আর সে জীবন টা কেন এতো ছোট। আরেকটু দীর্ঘ হলে কতো ভালো হতো৷

কক্সবাজার আসার দিন টা দুজন মিলে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে। জার্নি করার সময় শুভ্র’র ঘুম হয় না। তানি পুরো সময়টা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে আর শুভ্র কাটিয়েছে তানিকে দেখে। সারারাত তানিকে দেখতে দেখতে শুভ্র একটা কথা উপলব্ধি করতে পারলো। অভ্র কে যে ও বলেছে তানির প্রেমে পরেছে সেটা আসলে সত্যি না। শুভ্র তানিকে ভালোবেসে ফেলেছে। তানির রাগ করা, ঠোঁট টিপে হাসা, কপাল কুচকে ঘুমানো, কথায় কথায় লজ্জা পাওয়া সব টাই ও ভালোবেসে ফেলেছে। শুভ্র তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল যে তানিকে ভালোবাসার কথা জানাবে। জীবন খুব ই ছোট। এক একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে এক একটা মুহুর্ত শেষ হয়ে যাওয়া৷ তাই আর লুকোচুরি না, তানিকে বলে দেবে যে তানি আমি তোমার ড্রেনওয়ালা হতে চাই। প্রথম জীবনে সেই ড্রেনওয়ালা অল্প সময়ের জন্য তোমার হাত ধরেছিল কিন্তু আমি সারাজীবন তোমার হাত ধরতে চাই।

কক্সবাজার আসার পর একটা গোটা দিন শুভ্র তানির সাথে কাটিয়েছে। সমুদ্রের জলে গা ভিজিয়েছে, খালি পায়ে হাত ধরে হাটাহাটি করেছে। রাতে দুজন মিলে জ্যোৎস্না বিলাস ও করেছে। এই সময়ে দুজনেই সবকিছু ভুলে নিজেদের মতো সময় কাটিয়েছে। বাড়ি থেকেও ফোন করে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে নি। মাঝরাত পর্যন্ত দুজন মিলে গল্প করে শেষরাতে ঘুমিয়ে গেছে। আর বিছানার ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের বর্ডারও আস্তে আস্তে উঠে যেতে শুরু করেছে।

*****
তানির ঘুম ভাঙলো একটু দেরীতে। উঠে দেখলো শুভ্র ঘরে নেই। ভাবলো একা একা বোর লাগছে বলে হয়তো হাটতে বেরিয়েছে। এই সুযোগে তানি চটপট একটু সেজে নিলো। এখানে আসার সময় ব্যাগে শুধু শাড়িই নিয়ে এসেছে। বাড়িতে সালোয়ার কামিজ পরলেও এখানে শাড়ি পরবে। তানি এতোদিনে বুঝে গেছে যে শুভ্র শাড়ি খুব পছন্দ করে। তাই একেক দিন একেক রঙের শাড়ি পরে নিজেকে একটু সাজিয়ে নেয়।

তানি আজ নীল রঙের শাড়ি পরেছে। শাড়ির সাথে গোলাপি ব্লাউজ। এই ব্লাউজে শাড়ির রঙ টা আরও ফুটে উঠেছে। দুহাত ভর্তি নীল চুড়ি, কানে নীল সাদা পাথরের ছোট দুল আর কপালে ছোট টিপ পরেছে। শুধু লিপস্টিক দেয়া বাকী ছিলো তখন ই শুভ্র ঘরে এসে হাজির। তানিকে দেখে অপলক তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। তানি অপ্রস্তুত হয়ে মাথানিচু করে ফেলল। স্বাভাবিক হবার জন্য জিজ্ঞেস করলো,

“কোথায় গেছিলেন?”

শুভ্র’র ঘোর ভাঙলো। বলল, এই তো একটু হাটতে বেরিয়েছিলাম। ”

তানি খেয়াল করলো শুভ্র’র হাতে একটা শপিং ব্যাগ। কিছু একটা যে ওর জন্য এনেছে সেটা বুঝতে পারলো। শুভ্র ব্যাগ টা ট্রলির ভিতর রাখলো। তানি মিটিমিটি হাসলো। শুভ্র আজ প্রপোজ করে ফেলবে নাকি! না শুভ্র স্পষ্টভাষী মানুষ, সে নিশ্চয়ই সিনেমাটিক ভাবে প্রপোজ করবে না। সরাসরি ই হয়তো বলে ফেলবে তানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।

হঠাৎ ই তানি শব্দ করে হেসে ফেলল। শুভ্র বলল, কী হলো হাসছ কেন?

তানি বলল, না এমনিই।

“এমনি এমনি কেউ হাসে?”

“হ্যাঁ হাসে।”

“আচ্ছা হাসা শেষ হলে চলো। এমনিতেই পেটে ইঁদুর দৌড় শুরু করছে। ”

তানি মৃদু হেসে বেরিয়ে গেল।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে দুজন যখন ঘুরতে গেল তখন ই শুভ্র’র এক কলেজ ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গেল। শুভ্র’র সাথে কুশল বিনিময় শেষে যখন তানির দিকে চোখ পড়লো তখন প্রশ্ন করলো,

“উনি কে?”

“তোর ভাবী। কয়েক মাস আগে বিয়ে করেছি”।

শুভ্র’র বন্ধু বিচিত্র চোখে তানিকে দেখতে লাগলো। তানির অস্বস্তি হলো ঠিক ই কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারলো না। বন্ধুর দৃষ্টি শুভ্র’র নজরে এলো। কৌতুহলী গলায় বলল, তুই কী তানিকে আগে থেকেই চিনিস?

লোকটা বিস্মিত গলায় বলল, ওনার নাম সত্যিই তানি?

এই প্রশ্নটায় তানিও বিব্রত বোধ করলো। এই ভদ্রলোক কে তানির চেনা পরিচিত মনে হচ্ছে না কোনোভাবেই। কোথাও কখনো দেখেছে কী না মনে করতে পারলো না।

শুভ্র বলল, মানে কী?

ভদ্রলোক হেসে বলল, না আসলে ভাবীকে কেমন চেনা চেনা মনে হলো। মনে হচ্ছে এর আগেও দেখেছি।

পরিবেশ কিছুটা হালকা হলেও শুভ্র’র মনের শঙ্কা কাটলো না। বন্ধুর মুখের অভিব্যক্তি যে অন্যকিছু বলছিল সেটা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তানিকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলো না। তানি নিজে থেকেই বলল,

“আমি আসলে ঠিক মনে করতে পারছি না যে ওনাকে কোথাও দেখেছিলাম কি না! ”

শুভ্র ব্যাপার টা উড়িয়ে দিয়ে বলল, আরে ব্যাপার না। হতে পারে তোমাদের কখনো দেখা হয়েছিল কিন্তু তোমার মনে নেই, ওর হয়তো সেজন্য পরিচিত লাগছে।

“হু।”

কিছুক্ষণ বাইরে কাটিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে রিসোর্টে ফিরে এলো। তানির বাইরে ভালো লাগছিল না তাই শুভ্র’ও জোর করলো না। তানি ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লো। সেই ঘুম ভাঙলো শেষ বেলায়। দেখতে পেল শুভ্র ঘরে নেই, ভেবে নিলো হয়তো বাইরে হাটতে গেছে। তানি ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় কিছু সময় বসে রইলো কিন্তু শুভ্র’র কোনো খবর নেই। ফোন করেও পেল না। তানির মনে অজানা একটা ভয় জন্ম নিলো। এই ভয়টা অমূলক সেটা তানি জানে। তবুও অস্থিরতা বেড়ে চলছে। এই অস্থিরতা দূর হলো শুভ্র’কে কে দেখার পর। শুভ্র হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, তানি জলদি করে সব গুছিয়ে নাও আমরা এখন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছি।

তানি বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। শুভ্র অপেক্ষা না করে নিজেই রুমে গিয়ে জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করলো।
তানি জিজ্ঞেস করলো, আমরা চট্টগ্রাম কেন যাচ্ছি?

শুভ্র গোছাতে গোছাতে উত্তর দিলো,

“কারণ আমরা এখন ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেব”।

তানি ভয়ার্ত গলায় বলল, বাড়িতে কিছু হয়নি তো? আমি তো বিকেলে ফোন করে শুনলাম সবাই ভালো আছে”।

“বাড়ির সবাই ঠিক আছে কিন্তু আমার জরুরী কাজ পরে গেছে।”

তানি আর কিছু বলল না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সব গুছিয়ে নিয়ে রওনা হয়ে গেল।

বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত তানি কোনো কথা বলল না। শুভ্র’ও আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না। বাসে ওঠার আগে হালকা কিছু খাবারও দুজনে নিঃশব্দে শেষ করলো। চট্টগ্রামে পৌছাতে ওদের সময় লাগলো চার ঘন্টার মতো। এই পুরো সময় টায় শুভ্র কোনো কথা বলল না। তানিও চুপচাপ রইলো। ওর মন টা খারাপ হয়ে গেল। ঠিকঠাক ভাবে ঘুরতেও পারে নি তার আগেই এমন চলে যেতে হচ্ছে। নিশ্চয়ই শুভ্র’র জরুরী কোনো কাজ পড়ে গেছে নাহলে এতো তাড়াহুড়ো কেন করবে!

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার জার্নিতে শুভ্র ঘুমিয়ে কাটালো। তানি অবাক হলো কারন ও যতদূর জানে তাতে শুভ্র বাস, ট্রেনে ঘুমায় না। অথচ এখন ঘুমুচ্ছে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় তানি ওকে ওষুধ খেতে দেখেছিল। সেটা যে ঘুমের ওষুধ ছিলো তা বুঝতে তানির অনেক সময় লেগেছে।

কক্সবাজার থেকে যে মিথ্যে কাজের বাহানায় শুভ্র ঢাকায় ফিরেছে সেটা তানি টের পেল তিন, চারদিন পর। এই তিন চারদিনে চোখে পড়ার মতো তেমন জরুরী কোনো কাজ শুভ্রকে ও করতে দেখে নি।

চলবে…..

সাবিকুন নাহার নিপা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে