কাছে_আসার_গল্প পর্ব_৪

0
3833

কাছে_আসার_গল্প পর্ব_৪
#লেখা_আশিকা

রুমে ঢুকেই হিমেল বিছানায় ধপাশ করে বসে পড়লো। আমি চমকে উঠে ওর দিকে তাকাই। কেমন কটমট করে চোখ রাংগিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার সমস্ত ভাবনাকে ছন্নছাড়া করার জন্য এই রকম চোখ রাঙ্গানোই যথেষ্ট। আমি কিছুটা ভয়েই কুকড়ে গেলাম। ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম। কপালের উপর এক হাত রেখে চোখ দুটো বুঝে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


ভাবী একটু পরেই খাওয়ার জন্য ডাকতে আসলো।…
খেয়ে আসছে বলে এড়িয়ে গেল। আদৌ খেয়েছে কিনা কে জানে।
আমার এতো ভেবে কাজ নেই এই একটি বাক্যই আমার পড়ায় মনোযোগী হওয়ার টনিক হিসেবে কাজ করলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। দুটি মানব মানবী একি রুমে পাশাপাশি থাকা সত্বেও অচেনাই রয়ে গেল।
কলিং বেল বাজছে…
সবাই মনে হয় ঘুমুচ্ছে….
আমিই গেট খুললাম..
ওপাশে হিমেল এর মা আর বোন দাঁড়িয়ে আছে।এনাদের আমি চিনি আগেও বাসায় এসেছে। শুধু হিমেলকেই চিনতাম না ছোট থেকে সবসময় বাইরে থাকার জন্য।
কোন ভণিতা ছাড়াই আমি গিয়েই আমার শাশুড়ি মা কে সালাম করলাম।
থাক থাক বলে শাশুড়ি মা আমাকে জড়িয়ে ধরল। আর মিথিলা আমাকে ভাবি বলে জড়িয়ে ধরল। আমি তাদের বসতে দিয়ে মা আর ভাবিকে ডাকতে লাগলাম। আমার শাশুড়ি মা তার ছেলের কথা জিজ্ঞাস করছিলো।
আমি আস্তে করে বললাম,
— মা ঘুমুচ্ছে।
কিছুটা অবাক হয়ে মা আমার দিকে তাকালো,
— কি বলো এখনো ঘুমুচ্ছে। এইরকম অবেলায় পড়ে পড়ে ঘুমুতেতো আগে কখনো দেখিনি।
যাও ডেকে নিয়া আসোতো মা।
মিথিলা টিপ্পনী কেটে বলেই ফেললো,
— মা ভাইয়াতো আগে বিয়েও করেনি। তাই না!
মা চোখ তুলে ওর দিকে তাকাতেই ও চুপ করে গেলো।
আমি কিছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করে পরে ডাকতে গেলাম।
— এই যে শুনছেন…
কতক্ষন ডাকলাম
নাহ কোন শাড়া শব্দ নাই।
এইবার আমি তার কপালে আলতো করে আমার এক হাত রাখলাম।
–এই যে এদিকে তাকান।

সে কপাল ভাজ করে আমার দিকে তাকালো।
অস্ফুট স্বরে বললাম,
— মা আর মিথিলা আসছে…
এরপরো নিশ্চুপ তাকিয়েই আছে আর
কোন কথাও বলতেছনা।
না বলুক আমার এত ঠ্যাকা পড়ে নাই।
আমি একটু রেগে আবার বললাম,
— নেহাৎ মা আপনাকে ডাকতে বলেছে।
তাই ডাকতে আসলাম নইলে আমার এত ঠ্যাকা পড়ে নাই।
মজার ব্যাপার হলো এইটা বলতেই সে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়ল। সোজা ড্রইং রুমের দিকে পা গেলো…
আমার মনে হলো বেশি বলে ফেললাম…
আমি ঠাই বিছানায় বসে আছি। আজকে সারাদিন কি কি হলো এটা ভাবতেই আমার মাথা ভারী হয়ে উঠছে। আজকে আমি যা করতে চাইলাম তা না করে শুধু উলটো কাজটাই বেশি করে করলাম।
ব্যাগ গুছানোর শব্দে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই।
চলে যাবে মনে হচ্ছে…।
আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে জিরাফটা চলে যাওয়ার কথা মনে হতেই আমার এত খারাপ লাগছে কেন? চলে গেলেইতো আমার বেশি খুশি হওয়া উচিৎ।
আচ্ছা এখন মা আর বাবা আমাকে প্রশ্ন করলে কি জবাব দিবো।
কি করি?? নাহ
যাইতে দিলে চলবে না।
বিছানার এক পাশে বসে কাপড়গুলো কেমন শৈল্পিক ভাবে ভাজ করে আবার ব্যাগে ঢুকাচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ভবিষ্যৎ এ আমার ব্যাগপ্যাক গুছানোর দায়িত্ব ও জিরাফটার ঘাড়ে গছাবো।
জানিনা কি জানি কি ভেবে,
আমি পিছন থেকে গিয়ে তার হাত ধরলাম,
গলাটা একটু নরম করে বললাম,

— ব্যাগ গোছান কেন??
আমার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে তার ব্যাগ গুছানোতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

এইবার আমি তাকে জোড় করে আমার দিকে ঘুরাই….
তার চোখগুলো লাল…
রাগে ফুসতেছে…
— না গেলে হয়না।
প্লিজ আজকে থাকেন, কি হলো কথা বলেন.
উত্তেজনায় আমার শরোর কাপতেছিলো। তার দিক থেকে রেস্পোন্স পাওয়ার জন্য আমি মরিয়া হয়ে উঠছিলাম।
ক্রমশ আমার হাতে চাপ অনুভব করলাম।
আমি চমকে উপরের দিকে তাকালাম।
ব্যাথায় কুকড়াতে লাগলাম…
— উহু লাগছে, ছাড়েন,….
উঁহু……মা গো…
কিন্তু সে আমার হাতের সবগুলা চুড়ি চাপ দিয়ে একটা একটা করে ভাংতে লাগল…
ভাংগা চুড়ির খোঁচা লেগে আমার হাত কেটে ব্লাড বের হতে লাগল।
ব্লাড বের হতে দেখে সে আমার হাত ছেড়ে দিলো।
মিথিলা তার ভাইকে খুঁজতে রুমে আসে।
আচমকা ওর উপস্থিতিতে আমরা অপ্রস্তুত হয়ে যাই।
এদিক সেদিক তাকিয়ে মিথি আমার গা ঘেষে বসে পড়লো।
— অই ভাইয়া তুই কি করছস?? ভাবি র হাত রক্তাক্ত ক্যা?? ভাবি কি হইছে?? ও মাই গড কতটা রক্ত বের হয়ে গেছে।
কোন কথা না বলে চোরের মত নিচে তাকাই ছিলো। মিথি তার ভাইয়ের চোখ অনুসরণ করে
নিচে তাকায় দেখে ভাংগা চুড়ি। কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে ও চুপ করে রইলো।
মিথিলা ফ্রার্স্ট ট্রিট বক্স বের করে,
আমার হাতে পোভিসেপ দিয়ে মুছতে লাগল। উহু খুব জ্বলতেছিলো আমি ব্যাথায় কুকড়াচ্ছিলাম এইটা দেখে অসভ্যটা রুম থেকে চলে গেলো।
আমার হাত ব্যান্ডজ করে দিলো।
এরপর মিথিলা আমাকে একটা ফুল হাতা জামা পড়তে বলল, নইলে নাকি তার মা বুঝে ফেলবে আর তার ভাইয়া বকা খাবে।
রাগে আর ঘৃনায় আমার শরির জ্বলছে। কিচ্ছু করার নাই শুধু মিথিলার কথা রাখতে জামা চেঞ্জ করলাম।
কিছুক্ষণ পর আমার শাশুড়ি মা রুমে ঢুকলেন।
আমার দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগলেন,
— তুমি যে এসে দেখা করলা। আর তো মায়ের কাছে এলে না।
হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলেন।
— হিয়া মা তোমার চোখ লাল কেন?? কাদছো মনে হচ্ছে…
তখন আবার খাটাশটা রুমে ঢুকে মায়ের কথা শুনে ফেললো। মা ওর দিকে ঘুরে বললো,
— কিরে তোর চোখ লাল ক্যান??
দুইজন মনে হয় ঝগড়া করছস।

আমি ইতস্তত করে। বললাম
— মা আমার চোখের সমস্যা হইছে, তাছাড়া ভালো করে কালকে ঘুমাতে পারি নাই তাই এমন লাগছে।
— ওহ তাই বলো।মা তাহলে আমরা আজকে আসি কেমন।
— মিথিলা আমার ব্যাগটা নিয়ায়। হিয়া আমি আসছি।
বলেই চলে গেলো খাটাশটা…
এখন আবার দেখিয়ে দেখিয়ে আসি বলা হচ্ছে..
তারপর শাশুড়ি ননদ ও চলে গেলো…
আমি রুমে বসে একা একা কাঁদছি। মা আর ভাবি আসল একটুপরেই..
তাদেরকে ধরে আমি আরো কান্না জুড়ে দিলাম।
— কি হইছে এইভাবে কাদছো কেন?? হিয়া মা কি হইছে।
মা আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
— কি হইছে খুলে বলো হিয়া। নইলে আমরা বুঝবো কেমনে?
বলেই ভাবি আমার হাত ধরতে আসল…
আমি অজান্তেই উহু বলে উঠলাম।
— কি হইছে? বলেই ভাবী আমার হাতের ব্যান্ডেজ দেখে ফেললো।
মা আর ভাবি দুইজন দুইজনের দিকে চোখাচোখি করে একসাথে প্রশ্ন করে…
–কেমনে ব্যাথা পাইছো??
ব্যন্ডেজ কেন??
কখন পাইছো??
আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতেছিলাম তখন ও।
ভাবি কিছুটা রেগে বললো,
— আরে কি হইছে? কিছুতো বলো??
— কপালে লিখা ছিলো তাই হাত কাটছে। এইবার তোমরা যাও আমি একটু একা থাকতে চাই।
গমগম করে কথাগুলো বলে দিলাম।
— হিমেলের সাথে কিছু হইছে মা?একটা সত্যি করে বলোতো হিমেলকে কেমন লাগছে তোমার?? মানে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে পারবেতো।
— আমার বিয়ে হইছে বলে কি সব কিছু হিমেলের জন্যই হবে এইরকম ভাবার কিছু নাই। তাছাড়া তোমরা বিয়ে দেয়ার সময় একবার জানতে চাইছিলা আমি কি চাই?? চাওনাই যখন এখন এইগুলা বলবানা। আমার লাইফ টা শেষ করে দিয়া এখন আসছে শুধুইতে……. । প্লিজ যাও আমি একা থাকতে চাই।
কলকল করে কথাগুলো বলে
অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।
মা আর ভাবি চলে গেলো একরাশ টেনশন নিয়া।
আমার তাতে কি??
আমার এইসব বিয়ে সংসার ভালো লাগে না। আমার কোন স্বাধীনতা নাই সবসময় তার ইচ্ছায় চলতে হবে। আমার তার প্রতি কোন ফিলিংস নাই।
এইরকম মিথ্যা মিথ্যা বাকি জীবন কিভাবে অভিনয় করব। এইসব কিছু ভেবেই আমার মাথাটা ভারী হয়ে আছে। জানি না কতক্ষন কান্না করেছি।
ভাবী আর মা অনেক্ষন জোরাজোরি করেছে খাওয়ার জন্য। খিদা নাই বলছি, খেতে ইচ্ছা করছে না।
ফোনটা বালিশের নিচে ছিলো হাতে নিয়ে দেখি হিমেল ৫৬ টা কল দিয়েছিলো। আবার রিংটোন বাজছে হিমেলের কল…
দাও যত খুশি আমি ধরব না।
আই হেট ইউ হিমেল…
আই হেট ইউ…
ফোনটা আবার বালিশের নিচে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু ঘুম কেন আসছে না??
তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি।
অইদিকে হিমেল বাসায় এসো নাকী দরজা বন্ধ করে ছিলো, রাতে খাইও নাই। মিথি আপডেট জানাইছে।
আমাকে সারা রাত ফোন দিয়েই গেছে কিন্তু আমি ধরি নাই। হুম।আর ফোন ধরবো ও না।সহসা ভোর ৪ টার সময় আমাদের বাসায় কলিংবেল বাজতে থাকে। এই সময়ে কারো আসার কথা না। সবাই বেঘোরে ঘুমুচ্ছে কেউ খুলছিল না।
বাবা মাকে পাঠায় দরজা খুলতে।
মা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খোলে…
ওকে দেখেই চমকে উঠে,
– এত সকালে তুমি?? কোন সমস্যা হয়েছে?
কোন উত্তর না দিয়েই হিমেল আমার রুমের দরজায় নক করতে থাকে।
মা আমার চিন্তায় আর শুতে পারলেন না। তার কলিজায় শুধু খচখচ করতে লাগল।
আমি একরাশ বিরিক্তি আর ভয় নিয়ে ডোরটা খুললাম।
রুমে ঢুকেই আমাকে অবাক করে দিয়ে ধুম করে ডোর লাগিয়ে দিলো।

আমি পিছন ঘুরতেই হ্যাচকা টানে আমাকে তার বুকের কাছে নিয়ে যায়। আমার দুই হাত তার বুকের উপরে । আমার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুততর হতে লাগলো।

— তোমার ফোন কোথায়??

ভয়ে কোন কথা বলি নাই।
— তোমার ফোনে গুনে গুনে ১০০ টা কল দিছি ধরো নাই ক্যান??
আমি কাদতে লাগলাম ভয়ে।
আমার দুই গাল আলতো করে ধরে উপরে তুলে ধরলো
— কাদবা না প্লিজ। সারারাত এক্টুকুও ঘুমাতে পারি নাই। এত রাতে কি তোমার কান্না দেখার জন্য বাসা থেকে আসছি। খালি আমার বাহিরটাই দেখলা ভিতরে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটা তুমি দেখতে পেলে না।
আমি চক্ষু তুলে উপরের দিকে তাকালাম,
হিমেলের চোখের কোণ জলে ভিজে উঠতে লাগলো।
আমি তার কান্না দেখে নির্বিকার ভাবে বসে ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিৎ।
হঠাৎ সে কাটা হাতটা ধরে
আমি ব্যাথায় উহু বলে উঠি।
— সরি ময়না। খুব লেগেছিলো নাহ??
আসলে তখন বেশি রাগ উঠে গেছিলো। আমাকে কেউ অপমান করলে সেটা আমি সহজে নিতে পারিনা।
বলেই আমার হাতে কিস করতে লাগলো…
কেমন যেন একটা শিহরণ অনুভব করলাম।
আমি আর পারছিলাম না তাই হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম
আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাবো।
— ওকে ঘুমাও। আমি ও ঘুমাই…
চলবে।।।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে