কাছে_আসার_গল্প পর্ব- 2

0
4918

কাছে আসার গল্প পর্ব- 2
লেখা- আশিকা

ভাবি অনেক্ষন যাবৎ দরজা ধাক্কাচ্ছে, আমি খুলছি না। অবশ্য ইচ্ছে করেই খুলছি না। সহসা কারো কন্ঠস্বর আমার কর্নকূহরে প্রবেশ করলো।আশ্চর্যজনক ভাবে আমার কান পেতে শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। কি অদ্ভুত ইচ্ছে!
— এক্সকিউজ মি ভাবী, কোন প্রব্লেম থাকলে আমি আজকে চলে যাই। সমস্যা নাই।
কেমন শান্ত গলায় কথাগুলো বললো।
— আরেহ নাহ..
ধুর, ও বোধ হয় মজা করছে, আপনি একটু দাড়ান। আমি কি করে ওকে মজা দেখাই খালি দাঁড়ায় দাঁড়ায় দেখেন।
হিয়া, তুই খুলবি নাকি বাবাকে ডাকব হু?
পিছন থেকে বাবা হয়তোবা সবটা শুনে ফেলে…..
— হিয়া এইসব কি হচ্ছে? এইগুলা কি ধরনের ভদ্রতা। দরজা খোল ছেলেটা কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে….

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


বাবার গলা শুনে আমি ভয়ে চুপসে গেলাম।
তাড়াতাড়ি খুলে দিলাম…
ভাবির পিছুপিছু আমার বর মহাশয় রুমে ঢুকল…
আমি ভয়ে নিচে তাকাই ছিলাম তখনো। রুমে এসেই হিমেল খাটে বসলেন। ভাবি আমাকেও খাটে বসাইল হিমেলের পাশে। ভাবি আমাদের বাসার কাজের মেয়ে মিলি কে ডাকছেন এই রুমে আসার জন্য। একটু পর মিলি আসল ২ টা দুধের গ্লাস নিয়া আর মিষ্টি নিয়ে। ভাবি গ্লাসটা আমার হাতে দিয়ে বলল হিমেলকে খাইয়ে দিতে। আমি লজ্জায় যেন মাটিতে মিশে যাইতেছিলাম। চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে আছি দেখে ভাবি আমার হাতে ধরে হিমেলের মুখের দিকে এগিয়ে দিল। এই প্রথম আমি হিমেলের দিকে তাকালাম। হিমেল একটা মুচকি হাসি দিল আমাকে দেখতে লাগলো। অপূর্ব দুটি চোখে হিমেল আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে…
চোখে চোখ পড়তেই সরিয়ে নিলাম। অইদিকে মিলি হি হি করে হাসছে, আমার মেজাজ পুরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে দেই কয়টা বসিয়ে। জামাই মহাশয় একটু খেয়ে আমার মুখের দিকে গ্লাস এগিয়ে দিচ্ছে। সব নিয়ম দেখি ভালমতই জানে। আমার মুখ থেকে গ্লাস আর সরায় না, আমি ভয়ে পুরা গ্লাস দুধ ঢকঢক করে গিলে ফেললাম।
তারপর ভাবি আমাদের নামাজ পড়তে দিলেন।
একটু পর ভাবি আসলেন তারপর আমাদের একসাথে বসালেন। আমার হাতের উপর বরের হাত দিয়ে বললেন
— আমার ননদের সমস্ত দায়িত্ব আপনার আজ থেকে।
দেখবেন আমার ননদ যেন কষ্ট না পায়।
ভাবি আমাকে এক চোখ মেরে চলে গেল।
এই প্রথম কোন পুরুষ মানুষ আমার হাত ধরেছে কেমন যেন শিহরণ অনুভব হচ্ছে। বাট অসভ্যের মত কেমন শক্ত করে আমার হাত ধরে আঁঁছে। ছাড়ার নাম ও নেই…
আমার এই মূহূর্তে চরম অসহ্য লাগতে লাগলো।
ক্রমশ হাতে চাপ অনুভুত হচ্ছে, আমি ছাড়াতে চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছি না কিছুতেই, বৃথা চেষ্টা। শয়তানের মত কেমন চোখ বড়বড় করে তাকাই আছে। আল্লাহ আমাকে উদ্ধার করো।

— দেখি কত শক্তি ছাড়াও এইবার, খুব তো ভাব দেখাইলা এইবার তোমারে কে বাচায়?? হু…।
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বাসর রাতে কোন হাজব্যন্ড এর প্রথম কথা এটা হতে পারি কিনা আমার জানা ছিলোনা।
এই প্রথম কথা বলল তাও কি ছিরি কথার। কোন রস কস নাই।
–ওহু লাগছেতো।
— আমারো লেগেছে যখন আমাকে দরজার বাইরে দাড় করাই রাখছিলা। অপমানে আমার মাটির সাথে মিশতে ইচ্ছা হইছিলো। আমার সাথে পাঙ্গা নেয়ার সখ হইছিলো তো, এইবার তুমি বুঝবা আমি কি জিনিস….
আমি এইবার ভয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিলাম ..
সে আমার হাতটা ছেড়ে দিলো…
আমি এক লাফে ওয়াশরুমে চলে গেলাম…
সে তো পুরাই টাশকি খাইল আমার লাফ দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকা দেখে।
আধা ঘন্টার মত ওয়াশরুমে ঢুকে ছিলাম।
এইবার দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছি….
— এই তুমি কি ঘুমাচ্ছ?? আমার কিন্তু শিস ধরেছে?? তুমি বের হবা?? আমি কিন্ত বিছানায় করে দিলাম?? তখন কিন্তু আমি সকালবেলা সবাইকে বলবো এই কাজ তুমি করছো? তখন কেমন ট্রল হবে বুঝছো তো।
সবাই বলবে হিয়া বাসর রাতে জামাই দেখে ভয়ে শিস করে দিছে। যতদিন বাচবা ততদদিন তোমাকে এইভাবেই পচাবে।
নিজে বলে নিজে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। কেমন অসভ্য রে বাবা! ছিঃ কেমন কুরুচিপূর্ণ চিন্তা ভাবনা। আমার রাগে দুঃখে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইতাছে।
— এই বের হও?? হোমায়রা পাখি বের হও, প্লিজ আমি তোমাকে কিছুই করবনা।বের হও বলছি?
আচ্ছা আমি কি বাবাকে ডাকব??
বড্ড কঠিন গলায় বললো শেষোক্ত কথাটা।
এইবার আর পারলাম না আমি দরজা খুললাম। বাবা আর মা জানলে আমি শেষ..

দরজা খুলতেই আমাকে ওয়াশরুম থেকে হিড়হিড় করে টেনে এনে বিছানায় ফেলে দিলো….
চোখ মুখ বাকিয়ে মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,
— ওই এইগুলা কী? চিনো আমারে চিনো চটকানা দিয়া দাত সবগুলা ফেলে দিবো??
আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম…
ছিঃ কেমন বাজে ব্যাবহার।
— ওই তুমি কানতাছো ক্যা? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক?? ধুর…
বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো
আমি এই সুযোগ পেয়ে বাহির থেকে লক করে দিলাম ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য। গোলাপি কালার একটা থ্রি পিস পড়লাম।
সে তো দরজা ধাক্কাতেই আছে…
একটু পর ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দিলাম…..
ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই একটা হাত উচু করে ধমকের সুরে…
— দেই একটা? এই মেয়ে লক করছ কেন??
আমি সরে গেলাম অতি দ্রুত। এই ছেলের বিশ্বাস নাই সত্যি মেরে বসবে আবার।
— আম মি ড্রেস চেঞ্জ করছিলাম। আমি কি আপনার সামনে ড্রেস চেঞ্জ করব।

কিছুটা সাহস পেয়ে কথাটা বললাম।
না আর কিছু বলল না। সোজা বিছানায় বসল টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে…

আমি ঠাই ওখানটায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। তারপর মুচকি হাসি দিয়ে গলার স্বর কিছুটা নরম করে বললো,

— এই শোন, অলরেডি অনেক ড্রামা হয়ে গেছে। আমি সত্যিই খুবই ক্লান্ত।
আফা প্লিজ এইবার একটু খ্যামা দেন আর আমারে ঘুমাইতে দ্যান।
আর নিজেও লক্ষী মেয়ের মত ঘুমিয়ে পড়েন।
— নাহ আমি ঘুমাবোনা।
অ্যা অ্যাঁ অ্যা…
চোখ উঁচিয়ে আমার দিকে তাকায়,
— আবার কি হলো??
— আমার কালকে এক্সাম। আমি কি লিখব? এই যে আমাকে ঘুম থেকে তুলে এতক্ষণ যে নাটক গুলা হল এইগুলা জন্য আমি পড়তে পারলাম না…
যান আপনি ঘুমান, আমি পড়ি। বলেই টেবিলে বই নিয়ে বসলাম…
ওপাশ থেকে কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
আমি আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম…
— হিয়া হুয়াট?
আবার কি হইছে??
— আমার মাথায় কোন পড়া ঢুকছে না। অ্যা অ্যা অ্য….
— এখন কি আমি তোমার পড়াও পড়ে দিবো?? ননসেন্স!
আজকে আমার কপাল সত্যিই খারাপ। নইলে সকাল থেকে এত ড্রামা আমাকে সহ্য করতে হয়।
বলেই বিছানা থেকে উঠে এসে আমার হাত থেকে বই নিয়া যথাস্থানে রেখে দেয়। আর আমাকে বিছানায় টেনে নিয়া যায়।
— চুপ করে শোও..
আর পড়া লাগবে না।
— আমি কোথায় ঘুমাব??
— তুমি জাননা খুকি??বিয়ের পর হাসবেন্ড ওয়াইফ কোথায় ঘুমায়?? একদম ন্যাকামি করবানা।
— লিসেন, আমি আপনার সাথে একসাথে ঘুমাতে পারবনা??
— এই শোন তুমি আমাকে যে লেভেলের ছেছড়া মনে করছ, আমি মোটেও তেমন নই। মানছি তুমার সাথে আজকে যা হইছে তা ঠিক হয় নাই। তাই বলে তুমি একটার পর একটার সিনক্রেট করেই চলেছ? আর নাহ প্লিজ ফর গড সেইক। আর শোন আমি প্রমিজ করছি তুমি মন থেকে যতদিন না চাইবে আমি তোমাকে টাচ করব না। এবারতো ঘুমাও প্লিজ..
বলেই আমার হাত ধরল
আমি ঠিক আছে বলে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে বিছানার কিনার ঘেষে শুয়ে পড়লাম।
জানি না কখন যে গভীর ঘুমের তলিয়ে গেলাম…
চলবে
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে