কাছে_আসার_গল্প পর্ব- ৩

0
3980

কাছে_আসার_গল্প পর্ব- ৩
লেখা- আশিকা

সকালে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে যায়। ভাবি দরজা ধাক্কাচ্ছে। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সাড়ে ৯ টা বাজে। তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম।
সহসা হিমেলের কথা শোনে আমি পিছন ফিরলাম।

— ওই কই যাও?? প্লিজ আরেকটু থাকো।
এটা বলেই আমার হাত ধরতে আসছে..
হাতটা সরিয়ে দিয়ে আমি এক লাফে বিছানা থেকে নামলাম।
নেমেই দেখি আমার আগে সে নেমে ওয়াশরুমে যাওয়া শুরু করছে।
— আমি কিন্তু ফ্রাস্ট
নিমিষেই দরজা লক করে দিলো।
কেমন অসভ্য!
অন্য কেউ হলে কি করত আমি জানিনা। আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। অযাচিত ভাবে কেউ আমার রুমে ঢুকে আমার উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে এইটা আমি সহজভাবে নিতে পারছি না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



আমি রুমের দরজা খুললাম। খুলতেই ভাবী আর মিলি হাজির। তারা দুজন আমাকে এমনভাবে প্রত্যক্ষ করতে লাগল যেন আমি এলিয়েন।
— কি ননদীনী কালকে কি কি হল?
এই মহিলার মনে হয় খেয়েদেয়ে কোন কাজ নাই। আজাইরা প্রশ্ন!
— কি আবার হবে? কিছুই না। আমি মুখ ভার করে খাটে বসে পড়লো।
মিলি হি হি করে হাসছে।
— থাবড়া দিয়া দাত ফালাই দিবো কালকে থেকে তোরে দেখতেছি…
কিছুই বলছিনা।
এটা বড্ড কাটা কাটা ভাবেই বললাম। কিন্তু অজান্তেই
আমি আমার গালে এক হাত রাখলাম…
— আফা, আফনে আমারে চড় দিবার চাইয়া। নিজের গাল হাতান ক্যা??
— ভাবী ই ই ই??
— কী??
— আমারে চটকানা দিয়া আমার সব দাত ফালাই দিতে
চাইছে???
অ্যা অ্যা অ্যা….
ভাবি আর মিলি হি হি করে হাসতে লাগলো। পিছন থেকেও বজ্জাতটার হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে…
আমি লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমে দৌড় লাগালাম….
— এই আস্তে নইলে পড়ে যাবা…
বলে আবার হাসি…।
–বোঝসেন ভাবি ভাবতেছি বাসার সব লক খুলে ফেলবো, নাইলে আপনার ননদের খালি লুকোচুরি খেলার শখ হয়।
ভাবি হাসতে লাগল…
— ফ্রেশ হয়ে হিয়া কে নিয়া খেতে আসেন। ওর আবার এক্সাম আছে সাড়ে দশটা থেকে…
আমি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি সে রেড়ি হচ্ছে
যাক ভালই হইছে চলে যাবে মনে হচ্ছে।
পিছন দিকে ঘুরে তাকালো।
— এই তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও । না ভয় নাই আমি রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছি।
বলেই চলে গেলো…।
আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম…
গিয়ে দেখি আমার চেয়ারে বসে খাচ্ছে….
মুডটাই খারাপ হয়ে গেছে….
গিয়ে তার পাশের চেয়ারে বসলাম….
একটু পরেই সে আমার পায়ে তার পা দিয়া খামচি দিলো। আমি উঁহু বলে উঠলাম।
মা জিজ্ঞাস করেই ফেললো,
— হিয়া কি হইছে??
— মা ওর মনে হয় ঝাল লাগছে। পানি খাও বলেই আমাকে পানি খাইয়ে দিতে লাগল…
লজ্জায় আমি ভাইয়ার দিকে আরেকবার বাবার দিকে তাকাই…
ভাইয়া ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকায়,
— কিরে কি হল?? পানি খা…
এদিক সেদিক কি দেখছিস? দেখে খা।
অগত্যা হিমেলের দিকে তাকিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের পানি সব খেয়ে ফেললাম।

কোন রকম খেয়ে রুমে চলে আসলাম।
পিছন পিছন বজ্জাতের হাড্ডিটা ও আসছে।
— কই চল? তোমারতো দেরি হয়ে যাচ্ছে…..

— আমি আপনার সাথে যাবনা।
— কি যাবা না ?
তাইলে কি দিবো একটা?
উ্ফ অসহ্য, বুঝেন না কেন আপনার সাথে গেলে আমার বান্ধবীরা আমাকে আজে বাজে কুইশ্চেন করবে? ধুর ভাল্লাগে না।
— এত কিছু শুনতে চাই না। চলতো…
বলেই আমার হাত তার বগলদাবা করে টেনে নিয়ে গেলো সবার সামনে দিয়ে।
আমি লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারি নি…
তারপর সে আমাকে গাড়ি তে বসিয়ে সিট বেল্ট বেধে দিলো।
আমি পুরা রাস্তা মন খারাপ করে ছিলাম।
খালি একবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো, — আচ্ছা মুখে কি হাসি টানা বারণ?
তখনো চুপ করে এড়িয়ে গেলাম।
ইউনিভার্সিটির গেটে এসে বললাম…
— এইবার আপনি যান। আমি এখন যেতে পারব।
বলা শেষ ও মা তার হাত ধরতে দেরি হলো না।
— হাত ছাড়েন? সবাই কি ভাববে??
— আমি আমার বউ এর হাত ধরেছি। কে কি বলবে তাতে আমার কিছু আসবে যাবে না।
এইভাবে সে আমার হাত ধরে ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত নিয়া গেল।
সামনেই আমার বান্ধবি বন্ধু সবাই হা করে তাকিয়ে আছে…
তাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এইরকম দৃশ্য তারা কোনদিনো দেখে নাই…
আমি ইতস্ততভাবে যত হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি তত সে জোরে ধরছে। পারছি না তাই অগত্যা লোক না হাসিয়ে অইভাবেই আছি।
সবার উদ্দেশ্যে তাকিয়ে বললাম,
(যদি হাত ছেড়ে দেয় এই আশায়)
— কি রে তোরা হা করে তাকিয়ে থাকবি না কি আমাকে কনগ্রাচুলেশন জানাবি।
মিশু আমার দিকে এগিয়ে এলো।
— কে তোর সাথে?? চিনলাম নাতো??
— তোদের দুলাভাই।
সবাই একসাথে কি??? বলে উঠল
— কি??
কালকে হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেছে। সরি তোদের জানাতে পারিনি।
মিতুতো মুখ গুমড়া করে বলেই ফেললো,
— অইসব সরি টরি বলে লাভ নাই, আমাদের ট্রিট চাই??
হিমেল বেশি ভাব দেখিয়ে বলেই ফেললো,
— ওকে দেওয়াই যায়। আজকেই দেই এক্সাম শেষ হলে। এবার সবাই খুশি??
সবাই একসাথে থ্যাংক ইউ ভাইয়া বলে উঠলো।
সবাইকে ছ্যাছড়া মনে হচ্ছে সাথে হিমেলকেও।
আমার রাগে শরীর জ্বলতেছে।
— এই যে সবাই শোন আমার বই পাগলিকে কিন্তু কিছুক্ষনের জন্য তোমাদের ধার দিলাম। এসে যেন যেন ঠিকঠাক মতই পাই, কেমন…
আমি লজ্জায় লাল হতে লাগলাম।
সবাই হেসে উঠল…
নিতুও ছেছড়ার মত বলে উঠলো,
— আপনার বউ রে আমরা কেউ নিয়া যাবনা। এত টেনশিত হবেন না।

আমি ও তাকে বাই বললাম সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে।
তারপর আমি হলে ঢুকলাম।

সবাই যেন আমাকে খেয়ে ফেলছ, কালকে কি হইছে? কি হইছে? এইসব জিজ্ঞাস করে করে। আমার মাথা পুরা শেষ।
কোন রকম এক্সাম দিয়ে বের হইলাম। আশে পাশে তাকালাম কিন্তু হিমেল নাই। ভাবলাম চলে গেছে বোধ হয়।
আমি রিক্সায় করে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসেও ওকে দেখলাম না। যাক ভালই হইছে…
আমি ফ্রেশ হয়ে কিছু খেতে গেলাম বাট মায়ের একশত জেরা।
— জামাই কই? তুই একা এলি কেন? তুই নিশ্চয় কিছু করছস? তোরে আমার খুব একটা বিশ্বাস হয় না।
— মা হয়ত বা কোন কাজে গেছে? এইভাবে ওভার রি এক্ট করার কি আছে, ধ্যাত খাবই না।

খাওয়া থেকে উঠেই পড়লাম…
ভাবি এসে মায়ের পাশে দাড়ালো,
— মা আপনি ওকে এতগুলো কথা শুধু শুধুই বললেন। কেমন না খেয়েই চলে গেলো।
— তোমার লাই পেয়েই অমন বিগড়ে গেছে। তুমি চুপ করো।
রুমে এসেই কাঁদতে লাগলাম।
পরে চোখে মুখে পানি দিয়া আসলাম…
হুমায়ুন আহমেদের ” মিসির আলি” সিরিজের বই পড়তে লাগলাম মনটা ভালো করার জন্য।
হঠাৎ মিতুর ফোন..
— হ্যা মিতু বল?
— তুই অইভাবে বাসায় চলে আসলি ক্যান?? ভাইয়া পুরুটা সময় ভার্সিটিতে বসে ছিলো। তোকে অনেক খুজেছে। আমি বলেছি তুই চলে গেছিস। কিন্তু সে বিশ্বাস করতে চায় নাই। পরে দেখে তুই নাই। অনেক মন খারাপ করছিলো রে। মুখটা একদম ছোট হয়ে গেছিলোরে….
আমাদের পরে ট্রিট দিতে চাইছিলো কিন্তু আমরা না করেছি। আমি বলেছি তোর অনেক মাথা ব্যাথা করছিলো তাই তুই বাসায় চলে গেছোস।
ভাইয়া না জানি বাসায় এসে কি করে। দেখ আমার মনে হইছে ভাইয়াটা অনেক ভালোরে তুই আর এরকম কিছু করিস না।

— টেনশন নিস না। আমি দেখছি।
— রাখি বলেই মিতু ফোন কেটে দিলো।
মিতু ফোন কেটে দেয়ার পরই দেখি হিমেল রুমে ঢুকল
আমি চোখের দিকে তাকাই দেখি চোখগুলো লাল…..
চলবে।।।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে