কাছে আসার গল্প part – 1
লেখা – আশিকা
সবে মাত্র বিশ্ববদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে উঠলাম। ছোটবেলা থেকেই আমার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহটা একটু বেশীই। বলতে গেলে বইপোকা, সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকি, দুনিয়ার কোনো খেয়াল আমার থাকে না। আমি হোমায়রা হিয়া, দেখতে ফরসা গোলগাল চেহারা, লম্বায় ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, আর হ্যা আমার ব্রাউন চোখে এলওয়েজ চশমা পড়ি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেস এর স্টুডেন্ট ছিলাম। সব সেমিস্টারে ফ্রাস্ট ক্লাস রিজাল্ট ছিলো, সেই হিসেবে স্যাররা খুব সমীহ করত।
প্রেম, ভালবাসা ঘটিত কোন বিষয় আমার ছিল না। তাছাড়া আমার তেমন ফ্রেন্ড ও ছিল না, সোজা কথায় আমি কারো সাথে তেমন মিশতাম না। আড়ালে সবাই আমাকে অহংকারী, চশ্মিশ, বই পাগলি, বিল্ডিং ইস্টুডেন্ট, ইমপোটেন্ট এইসব বলত আমি কান ও দিতাম না। সবচেয়ে মজার আর হাস্যকর বিষয় হলো আমি ওই বয়সে বিয়ে, ভালবাসা, সংসার এই টাইপ জিনিস গুলা বোঝতাম না। ইনফ্যাক্ট কোনও ফিলিংস ও ছিলো না। আমি ঘরের কোনো কাজ ও জানতাম না। এর জন্য মা সবসময় বাবাকে বলত ” তোমার লাই পেয়ে মেয়েটা এমন হইছে, এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে, এই মেয়ের কপালে দুঃখ আছে “।
বাবা বলত,” আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দিবনা। ঘরে খুটি বানাই রাখবো তোমার সমস্যা আছে?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
মা সবসময় মেয়ের বিয়ে দেও দেও করে বাবার মাথা খেয়ে ফেলতো। বাবা তখন কানেও নিতো না কারণ বাবা আমাকে খুব ভালো করে বুঝতো। এমনো হয়েছে আমি কোন কিছু চাওয়ার আগেই বাবা তা আমার সামনে হাজির করতো। আমার পুরো পৃথিবী বলতে ছিলো বাবা।
আসল কাহীনিতে আসি এইবার।
তখন আমার এক্সাম ছিলো। পড়তে পড়তে সেদিন রাত ৯ টার সময় ঘুমিয়ে পড়ি। ভবিকে বলেছিলাম ২ ঘন্টা পর যেন আমাকে ডেকে দেয়। তখন হঠাৎ অনেক শব্দে ঘুম ভেংগে যায়। বুঝতে পারছিলাম বাসায় অনেক মেহমান, কিন্তু এত রাতে মেহমান কোথাথেকে আসল কিছুই মাথায় আসছিলো না। তখন দেখি ভাবী আমায় বেশ জোড়েসোড়ে ডাকছে। আমি হকচকিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসি
— হিয়া উঠ, তাড়াতাড়ি উঠ?
— ভাবি এত মানুষ কেন?
আমার কথার উত্তর না দিয়েই
— শাড়ীটা কেমন দেখতো, আয় তোকে সাজিয়ে দেই…
— নাহ, আমার এক্সাম কালকে, নো চান্স। তোমার কি মাথা খারাপ হইছে?
ভাবী আমার কথা না শুনেই শাড়ি পড়ানো শুরু করল।
— এইগুলা কি হচ্ছে।আমকে এইভাবে বউ এর মত সাজাচ্ছ কেন?
— আজকে তোর বিয়ে। এইবার লক্ষী মেয়ের মত এইখানে বসে থাক।
আমার মাথা পুরা
হ্যাং হয়ে আছে।
কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই বোঝতেছিলাম না। আমি কি স্বপ্নে আছি না বাস্তবে আল্লাহ মালুম। রাগে আমার শরীর জ্বলছে। কি কি হাবিজাবী দিয়ে আমাকে পটের বিবির মত সাজিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো।
একটু পর কাজী আসল সাথে আরো কয়েকজন লোক যাদের আমি আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।কাজী সাহেব সালাম দিয়ে কি কি সব বলল। তারপর মা আর বাবা আমাকে কবুল বলতে বলল। আমি বুঝতে পারছিলাম না রাতদুপুরে কি সব ড্রামা হচ্ছে। আমি একবার বাবার দিকে তাকাই, একবার ভাইয়ার দিকে তাকাই, একবার মায়ের দিকে তাকাই, কোন কুল কিনারা না পেয়ে নিচে তাকাই। সবাই আমাকে কবুল বলার জন্য ইনসিস্ট করতে লাগলো। কোন উপায় না পেয়ে শেষে কবুল বলে দেই। অবশ্য এটা ছাড়া কোন উপায়ও নেই।কিচ্ছু বোঝার আগেই আমার অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়েটা হয়ে যায়, একটা অজানা, অচেনা মানুষের সাথে ইভেন তার নামটা ও জানি না।একটু পর সবাই আসল আমার সাথে পরিচিত হতে। কেউ মা, ভাবি, মামী বলল আমি লজ্জা আর ভয়ে কারো দিকেই তাকাই নাই। সবাই চলে গেল, আমার বরকে রেখে। ভাবী আসল আমার রুমে….
আমি কাদঁতে কাদঁতে বললাম,
–ভাবী এইগুলা কি? তোমারা আমাকে ঘুম থেকে তুলে এইগুলা কি করলা?
— হিয়া দেখ যা হইছে সব তোর কপালে লেখা ছিলো। সব কিছু মেনে নে। আসলে এইভাবে তোর বিয়েটা আমরা দিতে চাইনি, হিমেল তোর বর বাবার বন্ধু আফজাল আংকেলের ছেলে, তুই তো আংকেলকে চিনিস খুব ভাল মানুষ। আজকে হিমেলের বিয়ে হয়ার কথা ছিলো কিন্তু মেয়েটা আজকে পালিয়ে গেছে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে। তো সবাই মিলে বাবাকে ধরেছে। বাবা তার বন্ধুর মান সম্মানের হারানোর ভয়ে আর না করতে পারে নি। তাছাড়া ছেলেটা খুব ভাল আর্মি অফিসার, দেখতে শ্যামলা, লম্বা ৫ ফুট ৯ তোহ হবেই। তোর সাথে খুব মানাবে।
— অদ্ভুততো উদুর পিন্ডি এখন বদুর ঘাড়ে।
–তা ননদীনি আজকে তো তোমার বাসর রাত। কিছু কি শিখাতে হবে নাকি সব জানো হু…
ভাবী আমার সাথে মজা করতে লাগলো। রাগে আমার নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমি কাঁদতেছিলাম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে….
— হিয়া একদম কান্না না। বর এসে একদম কান্না ভুলিয়ে দিবে। আমি তোর বরকে নিয়া আসি কেমন!
বলেই চলে গেল….
আল্লাহ এই মহিলাকে কি দিয়া বানাইছে!
আমার মনে কি দহন চলছে সেটা কেবল আমিই বুঝতেছি।
কিসের বর, ধুর মানি না। আমাকে জোড় করে বিয়ে দেয়া। কিন্তু আমিতো নিজ ইচ্ছেও কবুল বললাম। এটার কি হবে? ধুর কিসের কবুল! দাড়াও মজা দেখাচ্ছি..
আমি দরজা লক করে দিলাম প্রচণ্ড রাগে।
চলবে।।।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/