গল্প: কাগজের নৌকা
ছোট্ট এক গ্রামের নাম ছিল শান্তিপুর। সেখানে একটা ছোট্ট নদীর ধারে রোজ বিকেলে কাগজের নৌকা ভাসাতে যেত রিহান। সে শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে এসেছে। তার কাগজের নৌকা বানানোর দৃশ্য একদিন দেখে ফেলল নদীর পাশের বাড়ির মেয়েটি, নীলা।
নীলা এগিয়ে এসে বলল,
“তুমি এখানে কী করো?”
রিহান হেসে বলল, “কাগজের নৌকা ভাসাই। জানো, আমি চাই নৌকাগুলো নদীর সঙ্গে দূরে কোথাও চলে যাক।”
নীলা বলল, “আমারও স্বপ্ন—একদিন আমিও নদীর মতোই দূরে কোথাও চলে যাব।”
তাদের এই ছোট্ট আলাপ থেকেই শুরু হলো এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব। রোজ বিকেলে নীলা আর রিহান একসঙ্গে নৌকা ভাসাতে বসত। একদিন রিহান নীলার দিকে তাকিয়ে বলল,
“নীলা, জানো, আমি চাই তুমি আমার জীবনের অংশ হয়ে থাকো। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
নীলা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
“রিহান, তুমি শহরের মানুষ। তোমার জীবন ব্যস্ততায় ভরা। আমি তো স্রেফ গ্রামের এক সাধারণ মেয়ে। তুমি আমার জন্য কেন এত কিছু ভাবো?”
রিহান মৃদু হেসে বলল,
“তুমি গ্রামের মেয়ে বলে নয়, বরং তোমার সরলতাই আমাকে টানে। তোমার হাসি আমাকে শান্তি দেয়।”
কিন্তু সময় থেমে থাকে না। রিহানকে শহরে ফিরে যেতে হলো। বিদায়ের দিন নদীর ধারে এসে নীলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“তুমি কি ফিরে আসবে?”
রিহান তার হাতে একটি কাগজের নৌকা দিয়ে বলল,
“এই নৌকাটা যতবার দেখবে, আমার কথা মনে করবে। আমি ফিরে আসব, কথা দিচ্ছি।”
বছর ঘুরে গেল। নীলা প্রতিদিন নদীর ধারে এসে অপেক্ষা করত। একদিন বিকেলে হঠাৎ করে রিহানকে নদীর ধারে দেখতে পেল। রিহানের হাতে সেই নৌকা। সে নীলার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“নীলা, আমি ফিরে এসেছি। এবার চলো, আমাদের জীবন একসঙ্গে শুরু করি।”
নীলার চোখে জল, কিন্তু সেই জলে আনন্দের ঝিলিক। কাগজের নৌকা এবার সত্যি তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে গেল।
শেষ।