কাঁটামুকুট পর্ব-০৬

0
5

#কাঁটামুকুট
পর্ব-৬

সিমরান রাগে দুঃখে নাইট ড্রেস বদলে সাধারণ একটা টিশার্ট পরে বিছানার অপর প্রান্তে শুয়ে পড়ল। মনে মনে ঠিক করল এই ড্রেস সে আর কোনোদিনই ইশতিয়াকের সামনে পরবে না। একটা সুন্দর রাত লোকটা তাকে উপহার দিতে পারল না? এটা কোনো বাসর রাত হলো? সিমরানের চোখ দিয়ে পানি গড়াতে থাকল। রাত গভীর হতে হতে ওর চোখে একসময় ঘুম নেমে হলো।

সিমরানের ঘুম ভাঙল সকাল এগারোটায়। ভারী পর্দার ফাঁকফোকর দিয়ে রোদ ঢুকছে ঘরে। সে উঠে পর্দা সরিয়ে দিল। দোতলার জানালা থেকে লন দেখা যাচ্ছে। নানা রঙের চমৎকার সব গোলাপ ফুটেছে। সে ওঠার পরপরই কাজের মেয়ে এসে চা দিয়ে গেল। সিমরান ডিভানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবল এরকম একটা সকালের স্বপ্নই সে দেখত। আরামদায়ক আলস্য ছড়িয়ে আছে ওর শরীর জুড়ে। নিজেকে বড্ড সুখী সুখী লাগছে। গতরাতের দুঃখের কথা আর মনে রইল না তার।

ইশতিয়াক ভোরেই অফিসে চলে গেছে এটা সে শুনল কাজের মেয়েটার কাছ থেকেই। মেয়েটা জানতে চাইল, নাশতা রেডি আছে, এনে দেবে কি না। সিমরান বলল সে নিজেই নিচে গিয়ে খাবে।

সিমরান গোসল করে সুন্দর একটা আকাশী-নীল রঙের জামা পরল। হালকা সাজগোজ করে নিচে নামল৷ নাশতা করতে করতে খেয়াল করল বাড়িটা একেবারে নিরব৷ জানতে চাইল, মুশফিক বাড়িতে নেই?

মেয়েটা জানাল, মুশফিকও সকালেই ক্লাসে চলে গেছে।

সিমরান নাস্তা সেরে সোফায় গা ডুবিয়ে বসে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করতে শুরু করল। গতকালের ছবিগুলো থেকে একটা ছবি সে আপলোডও করে দিল। তার আর ইশতিয়াকের হাতের ছবি। ইশতিয়াকের হাতের ওপরের পিঠটা যাতে দেখা না যায় এমনভাবেই ছবিটা তোলা হয়েছিল। সাথে লিখে দিল, “Finally found my soulmate”.

প্রচুর কমেন্ট আসতে লাগল। ওর ফলোয়ার্স ছেলেগুলোর স্যাড রিয়েক্টে ভরে গেল। ওর বান্ধবীরা অবাক হয়ে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে শুরু করল। ভালোই উপভোগ করতে লাগল সিমরান।

এভাবেই শুয়ে বসে দিনটা কেটে গেল ওর। বিকেলের দিকে মুশফিক ফিরে এলেও সিমরানের সাথে কথা হলো না তার। সে নিজের ঘরে চলে গেল। সিমরানও নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে নিউজফিডে পড়ে রইল। ইশতিয়াক এলো সন্ধ্যার একটু পরে।

সে ঘরে ঢুকে শাহরুখ খানের মতো দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে বলল, “সিমরান! সুইটি! আই মিসড ইউ আ লট!”

সিমরানের রাগ কখন পড়ে গেছে সে নিজেও জানে না। দৌড়ে গিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়ল ইশতিয়াকের ওপর। যেন কতদিন পর দেখা হলো প্রেমিকযুগলের!

ইশতিয়াক সিমরানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখল। এদিকে ইশতিয়াকের গা থেকে ঘামের গন্ধ আর সিগারেটের গন্ধ মিলে বিদঘুটে একটা গন্ধ আসছে। কোথায় সেই চমৎকার পারফিউমের ঘ্রাণ আর কোথায় মাউথ ফ্রেশনারের সুগন্ধ! সিমরানের গা গুলিয়ে এলো। সে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতে লাগল। এদিকে ইশতিয়াক যেন পণ করেছে আজ তাকে ছাড়বে না। সিমরান ছটফট করতে লাগল। তার মনে হলো ঘন্টাখানেক পর ইশতিয়াক তাকে ছাড়ল। যদিও সেটা মাত্র কয়েক মিনিট ছিল।

ইশতিয়াক জিজ্ঞেস করল, “সারাদিন কী করেছ সুইটি?”

“এইতো…” সিমরানের ইচ্ছে ছিল সে বলবে ‘তোমাকে মিস করেছি’। কিন্তু কথাটা ওর ভেতর থেকে আর এলো না। অবশ্য সত্যিটা হলো সে ইশতিয়াককে মোটেও মিস করেনি। আরামে আয়েশে দিনটা তার ভালোই কেটেছে৷

ইশতিয়াক ফ্রেশ হতে চলে গেলে সিমরান কাজের মেয়েটাকে চা দিয়ে যেতে বলল। দুজন চা খেতে খেতে গল্প করল। এর মাঝে সিমরানের গা গোলানো ভাবটা কেটে গেছে। ইশতিয়াকের হাতে হাত রেখে গল্প করতে ভালোই লাগছে।

রাতে খাওয়ার সময় মুশফিকের সাথে দেখা হলো। সে একটু যেন চিন্তিত৷ ইশতিয়াক কারন জিজ্ঞেস করায় বলল, “মুসকান তোমার বিয়ের খবর শুনে বেশ ধাক্কা খেয়েছে। অস্থির হয়ে গেছে একেবারে। মেনে নিতে পারছে না খবরটা৷”

“তোমার মাকে বলো সামলে নিতে।”

“তা তো নিচ্ছেই। তবুও ওর সেন্টিমেন্ট একটু বেশিই। একটু সময় লাগবে স্বাভাবিক হতে।”

“হুম। বেচারি এখনো আমার আর ওর মায়ের সেপারেশনটাই ভালোমতো মেনে নিতে পারেনি।”

সিমরান খেয়াল করল ইশতিয়াকের বেশ মন খারাপ হয়ে গেছে মেয়ের কথা ভেবে। হঠাৎ তার নিজের বাবার কথা মনে পড়ল। একটা কথা মনে পড়লে হুড়মুড়িয়ে অনেক কথাই মনে পড়ে যায়৷ যেমন এখনই মনে পড়ল তার বাবার পছন্দের একটা খাবার হলো কাতল মাছের ঝোল। সে ঠিক এটা দিয়েই এখন ভাত খাচ্ছিল। ক্লাস টেন পর্যন্ত প্রতি রাতে বাবা তাকে খাইয়ে দিতেন নিজের হাতে। নিজের হাতে খেতে শিখতে তার বেশ কষ্ট হয়েছে। কিছুদিন আগেও নিজের খেতে ইচ্ছে না করলে বাবার সামনে গিয়ে বসে গেলেই হতো। বাবা যত্ন করে খাবার মুখে তুলে দিতেন। ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই চোখ আর্দ্র হয়ে উঠল সিমরানের।

মুশফিক খেয়াল করল ব্যাপারটা। সে জিজ্ঞেস করল, “আর ইউ ওকে সিমরান?”

“হুম।” হাসার চেষ্টা করল সে।

“বাড়ির কথা মনে পড়ছে?”

“আরে নাহ।”

ইশতিয়াক হেসে বলল, “ওই জাহান্নাম থেকে বেঁচে ফিরেছে যে এটাই বেশি। আবার ওখানকার কথা মনে পড়বে কেন?”

সিমরানের কথাটা মোটেও পছন্দ হলো না৷ সে খাবার টেবিলে বসে আর কোনো কথাই বলল না।

খাওয়া শেষে একটু লনে একটু হাঁটাহাঁটি করে এলো সিমরান। ইশতিয়াক আগেই ঘরে চলে গেছে৷ তার তক্ষুনি যেতে ইচ্ছে করছিল না৷ তাছাড়া মা বাবার কথা হঠাৎ করেই একটু বেশিই মনে পড়ছে৷

রাত বাড়তে থাকলে সিমরান নিজেদের ঘরের দিকে চলে গেল। যাবার সময় মুশফিকের ঘর পড়ল। দরজা খোলা ছিল। সে দেখল ঘরের দেয়ালে একটা গিটার ঝোলানো। বাহ! গিটার বাজাতে পারে নাকি মুশফিক? তার শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আবার এটাও ইচ্ছে ছিল যে কেউ গিটার বাজিয়ে তাকে প্রপোজ করুক।

নিজের ঘরে ঢুকে সিমরান বিষ্ময়ে ছোটোখাটো চিৎকার দিয়ে উঠল৷ বিছানায় লাল চাদর পাতা, ঘরের সবগুলো ফুলদানিতে লাল গোলাপ সাজানো, সাদা টাইলসের মেঝেতে দরজা থেকে শুরু করে বিছানা পর্যন্ত লাল গোলাপের পাপড়ি বিছানো। ইশতিয়াক দাঁড়িয়ে আছে জানালার পাশে। তার গায়ে সাদা শার্ট৷ শার্টের বুকের কাছে লাল রঙের হৃদয় আঁকা। সে আবারও শাহরুক খানের স্টাইলে দুই হাত ছড়িয়ে দিল। “সিমরান! মাই বেইবী! প্লিজ কাম!”

সিমরানের সন্ধ্যার অভিজ্ঞতা মনে করে একটু সংকোচ হলো। তবে এটাও মনে পড়ল যে ইশতিয়াক এসেই ভালোমতো গোসল করে পারফিউম মেখে নিয়েছিল। তাই দ্বিধা ঝেড়ে সে দৌড়ে গিয়ে সেদিন দ্বিতীয়বারের ঝাঁপিয়ে পড়ল ইশতিয়াকের ওপর। এবার আর খারাপ লাগল না।

ইশতিয়াক তাকে নতুন একটা ড্রেস ধরিয়ে দিল। লাল টকটকে সিল্কের জামা৷ শুধু একটা বোতাম দিয়ে জামাটা শরীরের সাথে আটকানো থাকবে। ড্রেসটা এত পছন্দ হলো সিমরানের যে সে তক্ষুনি ইশতিয়াককে আরো খানিকটা আদর করে দিল।

সেই রাতটা চমৎকার কাটল!

তবে ভোর হতেই ইশতিয়াকের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল সিমরানের। ইশতিয়াকের গায়ে শুধু তোয়ালে। শরীর আধভেজা। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে সে অর্ধেক গোসল করে। সিমরান আতঙ্কিত হয়ে জানতে চাইল, “কী হয়েছে?”

ইশতিয়াক ততক্ষণে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের থুতনি চেপে ধরে কী যেন দেখছে৷ হঠাৎই সে সিমরানের দিকে ঘুরে গিয়ে চিৎকার করে উঠল, “তুমি এটা কী করেছ সিমরান? আমি এখন অফিসে যাব কিভাবে?”

সিমরান দেখল অতিরিক্ত উত্তেজনার ফলে গতরাতে সে ইশতিয়াকের থুতনির কাছে একটা গাঢ় দাগ বানিয়ে দিয়েছে। সেটা স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছে।

ইশতিয়াক চিন্তিত মুখে বলল, “আজ দুটে মিটিং আছে৷ হায় হায়! এই বয়সে এই অবস্থা হলে লোকে কী বলবে? কন্ট্রোল করতে শিখতে হবে সিমরান!”

সিমরান রেগে গিয়ে বলল, “আর তুমি কী কী করেছ দেখাব?”

“তুমি তো আর অফিসে যাবে না।”

সকালবেলা দু’জনের একদফা ঝগড়া হয়ে গেল। ইশতিয়াক থুতনিতে একটা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে চলে গেল। আর সিমরান আবার শুয়ে বসে দিন পার করে দিল। এভাবে ভালোমন্দ মিলিয়ে সপ্তাহখানেক কেটে গেল। পুলিশি ঝামেলা ইশতিয়াক সামলে নিয়েছে। মা বাবাও সিমরানের সাথে যোগাযোগ করে ঝামেলা বাড়াবার চেষ্টা করেনি। বাবাকে নাকি অন্য ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার করে দেয়া হয়েছে, তাই ইশতিয়াকের সাথে তার দেখাও হয় না এখন। দুজনের জন্যই সেটা ভালো হয়েছে। এর মাঝে ইশতিয়াকের ব্যস্ততাও কমে গেল। প্রোজেক্টটা সফলভাবে শেষ হলো। ইশতিয়াক তখনই ঠিক করে ফেলল কিছুদিন ছুটি নিয়ে হানিমুনে যাওয়া হবে। হানিমুনে যাবার সব প্ল্যানও তৈরি করা হয়ে গেল। ইশতিয়াকের ইচ্ছে ছিল সুইজারল্যান্ড নিয়ে যাবার, কিন্তু বিয়েতে বেশ খরচ হয়ে যাওয়ায় বাজেট কমিয়ে আপাতত বালিতে যাওয়া হবে বলে ঠিক হলো৷

সিমরান এটা নিয়েও মহা এক্সাইটেড। সে ফেসবুকে পোস্ট করে সবাইকে জানিয়েও দিল আসন্ন হানিমুনের কথা।

যেদিন ওদের ফ্লাইট, সেদিন সকালে হঠাৎ করেই ইশতিয়াকের ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেল। এত বেড়ে গেল যে স্বয়ং ডাক্তারই চেক করে ঘাবড়ে গেলেন। ইশতিয়াককে কমপ্লিট বেড রেস্ট দিয়ে গেলেন তিনি। আর সিমরানকে বলে গেলেন ইশতিয়াককে বেশি উত্তেজিত না করতে। সে নাকি নতুন বউ পেয়ে বেশি উত্তেজনায় প্রেশার বাড়িয়ে ফেলেছে।

সিমরানের মন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। হানিমুনে তো যাওয়া হলোই না, এদিকে ইশতিয়াকের থেকেও দূরে দূরে থাকতে হচ্ছে বলে সিমরানের মন মেজাজ একেবারে তিরিক্ষি হয়ে রইল।

সিমরানের অনেক ক্লাস মিস হয়ে গেছে। তার ইচ্ছে ছিল এই সেমিস্টার ড্রপ করে পরের সেমিস্টার থেকে কন্টিনিউ করবে। কিন্তু ইশতিয়াক বলল সে ম্যানেজ করে দিতে পারবে। শুধু শুধু গ্যাপ দেবার কোনো দরকার নেই। এতদিন ক্লাস এটেন্ড না করেও ইশতিয়াকের রেফারেন্সে তাকে ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে দেয়া হলো।

ফাইনাল এগিয়ে আসছে, এদিকে ক্লাস না করায় পড়াশুনা কিছুই মাথায় ঢুকছে না সিমরানের। তার হঠাৎ মনে পড়ল মুশফিক তারই সাবজেক্টে পড়ে। তার কাছে গেলে কেমন হয়?

সিমরান এক বিকেলে মুশফিককে ধরে বসল, তাকে পড়া বুঝিয়ে দিতে হবে।

মুশফিক অরাজি হলো না। সুন্দরী সিমরানের সাথে সময় কাটাবার সুযোগ সে পারতপক্ষে ছাড়ে না৷ যতই সে বাবার বউ হোক না কেন, একটা আগুন সুন্দরী মেয়ে সারাদিন চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ালে নজর কার না যায়? তার ওপর মেয়েটা স্লিভলেস, শর্টস পরে এলোমেলোভাবে একেক সময় সোফায় পড়ে থাকে। মুশফিকের তখন নিজেকে সামলানো বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। সেই সিমরানের সাথে পড়াশুনার বদৌলতে সময় কাটাবার সুযোগ ছাড়ার প্রশ্নই আসে না৷ সিমরান আসার পর থেকে তার নিজের প্রেমিকাকে অসহ্য লাগতে শুরু করেছে৷ প্রতিটা ব্যাপারে সিমরানের সাথে তুলনা করে ওকে নিতান্তই সাধারণ মনে হচ্ছে। ওর সাথে সময় কাটাতেও এখন আর ভালো লাগছে না৷ মুশফিক বলে দিল পড়লে আজ থেকেই পড়তে হবে, নয়তো বেশি দেরি হয়ে গেলে আর পড়িয়েও কাজ হবে না।

সিমরান সেদিন থেকেই মুশফিকের কাছে পড়তে শুরু করল। মুশফিকের ঘরেই পড়াশুনা হয়। পড়াশোনা প্রথম প্রথম কয়েকদিন ভালোই হলো, তারপর একটু একটু করে তাতে ফাঁকিবাজি ঢুকে গেল। ওরা গল্প করে, খুনসুটি করে, মুশফিক কখনো গিটার বাজিয়ে শোনায়, কখনো সিমরান গান গেয়ে শোনায়, সময়টা দু’জনেরই ভালো কাটে। সিমরানেরও আস্তে আস্তে মুশফিককে ভীষণ ভালো লাগতে শুরু করে। ইশতিয়াকের সাথে তুলনা করতে শুরু করে ওর। ও হচ্ছে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর একটা ছেলে। আর ইশতিয়াক তো এখন একটু কাছে এলেও বাকি রাতটা ছটফট করে কাটায়৷ সিমরান তাই ভয়ে ওর থেকে দূরে দূরেই থাকে।

দেখতে দেখতে সিমরানের পরীক্ষাগুলো হয়ে গেল। ভালো না হলেও ফেল করার মতো পরীক্ষাও হলো না। পাশ করার মতো পরীক্ষা দিয়ে খুশিতে সিমরান মুশফিককে ট্রিট দিতে চাইল। মুশফিক মজা করে বলল, “যেতে পারি, যদি তুমি সুন্দর করে সেজে আসো। সবাই যেন ভাবে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। ডেট করতে না পারলাম, সবাইকে দেখাতে পারব এত সুন্দর একটা মেয়ে নিয়ে ঘুরছি।”

সিমরানও হাসতে হাসতে উত্তর দিল, “ওকে।”

সেদিন ওরা কাপলের মতোই ম্যাচিং ড্রেস পরে খেতে গেল। খাওয়া শেষে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করল। মুশফিক সিমরানকে ঝিলমিল বেলুন কিনে দিল। সিমরানের কী যে ভালো লাগল ঘোরাঘুরি করতে!

সেই রাতে ওর ভীষণ ইচ্ছে করছিল ইশতিয়াককে কাছে পেতে। সেটা ইশতিয়াককে বলতেই সে করুণ চোখে চেয়ে বলল, “স্যরি সুইটি! আজ শরীরটা একটু বেশিই খারাপ লাগছে।”

ইশতিয়াক ঘুমিয়ে পড়লেও সিমরানের আর ঘুম এলো না। সে কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে পড়ল। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল মুশফিক লনে হাঁটাহাঁটি করছে। হাতে কফি। মুশফিকেরও পরীক্ষা চলছে। আজ তাকে সময় দিতে গিয়ে পড়তে পারেনি। এজন্য হয়তো রাত জেগে আছে। সিমরানের ভীষণ ইচ্ছে হলো মুশফিকের কাছে গিয়ে বলতে, তাকেও যেন এক কাপ কফি করে দেয়।

********

মাস দেড়েক ভুগে ইশতিয়াকের শরীর আস্তে আস্তে ভালো হয়ে এলো। সে সিমরানকে কথা দিয়ে রেখেছে পুরোপুরি সুস্থ হলেই সে তাকে নিয়ে হানিমুনে যাবে। এবার বালি না, সুইজারল্যান্ডেই যাবে, যত খরচ হবে হোক। পৈতৃক সম্পত্তিও তো কম নেই ইশতিয়াকের।

হানিমুনে যাবার কথা শুনেই সিমরান আবার যেন আনন্দে বাক-বাকুম হয়ে গেছে।

এক ঝড়বৃষ্টিময় বিকেলে কিছু করার নেই বলে সে তার ওয়্যারড্রোব থেকে জামাকাপড় বের করে একটা একটা করে ট্রায়াল দিতে শুরু করল। এখনই সিলেক্ট করে ফেলবে কোনটা নেবে আর কোনটা নেবে না।

জামাকাপড়গুলোর মাঝে বিয়ের রাতে পরা সেই গোলাপি নাইট ড্রেসটাও পেয়ে গেল। ভাবল একবার ট্রায়াল দিয়ে ফেললে ক্ষতি কী? ইশতিয়াকের সামনে পরবে না ঠিক করেছে, নিজের সামনে তো পরতেই পারে!

ড্রেসটা পরল সিমরান। বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখল সে। তার স্বাস্থ্য আরো ভালো হয়েছে। রঙ খোলতাই হয়েছে আগের তুলনায়। এত সুন্দর লাগছে তাকে! নিজেই যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। জামার সাথে ম্যাচিং লিপস্টিক আর ব্লাশ দিয়ে আরো কিছুক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রইল সে।

হঠাৎ দরজায় ধাক্কার শব্দ হলো। মুশফিকের গলা পাওয়া গেল, “সিমরান! বিজি নাকি? কফি এনেছি তোমার জন্য। দরজা খুললে একসাথে খেতে পারি।”

“খু্লছি!” বলে তাড়াতাড়ি জামাটা বদলানোর জন্য ফিতা খুঁজতে লাগল সে। তারপর চট করেই মনে হলো, কী দরকার জামা বদলাবার? এভাবে তো তাকে খারাপ লাগছে না। মুশফিকও দেখুক সে ঠিক কতটা সুন্দর।

(চলবে)

সুমাইয়া আমান নিতু

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে