কাঁটাকম্পাস পর্ব-৫২ এবং শেষ পর্ব

0
436

#কাঁটাকম্পাস_পর্ব৫২

#আরশিয়া_জান্নাত

নাহিয়ান তার বাবা-মায়ের রুম থেকে অনেকটা হতাশ হয়ে নিজের রুমের দিকে গেল। তার বাবা নূর মোহাম্মদ এই ব্যাপারটা সহজে মানবেন না এ তাঁর জানাই ছিল। কিন্তু সুযোগে তিনি তার মনের বিষ এতোটা ছড়াবেন নাহিয়ান বুঝতে পারেনি। নাহিয়ানের মনপ্রাণ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে, নিজেকে খুব অসহায় লাগছে বলা বাহুল্য। তবে সে তার সিদ্ধান্তে অটল। আজ এতো বছর পর সাবার চোখেমুখে যে উচ্ছ্বাস সে দেখেছে তা হারানোর কথা সে ভাবতেও চায় না। মাতৃত্ব আসলেই খুব সুন্দর। সাবাকে দেখে মনেই হচ্ছে না তার কোলের শিশুটার তার ঔরসজাত নয়। বরং মনে হচ্ছে এ তাঁর ই সন্তান। নাহিয়ান দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে সাবা ওকে নিয়ে এ কাত হয়ে শুয়ে আছে। এই সাধারণ দৃশ্যটা দেখার জন্য কত সহস্র কাল অপেক্ষা করেছে সে! সাবা ওকে দেখে খুব সতর্কতার সাথে আলগোছে উঠে আসলো। ফিসফিস করে বললো,”শব্দ করোনা, বহুকষ্টে ঘুম পাড়িয়েছি।”

নাহিয়ান পা টিপে টিপে খাটের সামনে গেল, উপুড় হয়ে ঘুমন্ত পরীর দিকে চেয়ে নরম গলায় বললো,”আমার বাবাইটা ঘুমিয়ে পড়েছে!”

সাবা ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললো,”ওর নাম কি রাখবে ঠিক করেছ?”

“হুম। ওর নাম হবে লিয়ানা আফরিন সানা!”

“সানা! সাবা নাহিয়ান মিক্সড?”

“হুম তবে অর্থ টাও সুন্দর। এর অর্থ পবিত্র ও আমাদের কাছে ভীষণ পবিত্র!”

আরওয়া ঘুমের মাঝেই একটু পরপর নিজের হাত পা ম্যাসাজ করছে। জাওয়াদ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বুঝলো আজ সারাদিন ছোটাছুটি করার দরুন ওর হাত পা ব্যথা করছে। ল্যাপটপ রেখে সে উঠে সে কিচেনে গেল, কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে সরিষার তেল আর রসুন গরম করে একটা বাটিতে নিয়ে রুমে এসে দরজা লক করলো। তেলটা হালকা ঠান্ডা করে আরওয়ার পায়ে ম্যাসাজ করে দিতেই আরওয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

“আল্লাহ! এ কি করছেন আপনি?”

“কথা না বলে চুপচাপ ঘুমাও তো।”

“এই আপনি আমার পায়ে তেল মালিশ করছেন! দেখি রাখুন আমি নিজে করে নিবো।”

“কেন? আমি করে দিলে সমস্যা কী?”

“আপনি আমার বড় না! আপনি আমার পা ছুঁবেন কেন!”

“উফ অহেতুক কথা রাখো। তুমি আরাম করে ঘুমাও। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে ব্যথা একদম গায়েব হয়ে গেছে।”

আরওয়া জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। জাওয়াদ খুব যত্নের সাথে ওর হাতেপায়ে তেল ঘষে দোয়া পড়ে ফুঁ দিচ্ছে ঠিক দাদীজানের মতো।

“এই শুনুন?”

“হুম বলো?”

“ভালোবাসি!”

“জানি…”

“জানলেই হবেনা, জবাব দিতে হবে।”

“ভালোবাসি কি প্রশ্ন নাকি যে জবাব দিতে হবে?”

“আপনি কখনো আমাকে এটা বলেন না কেন? বললে কী ক্ষতি হয়?”

জাওয়াদ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,”তোমার বুঝে নিতে কষ্ট হয়?”

“সবসময় বুঝে নিতে পারবোনা, মাঝেমধ্যে মনের কথা মুখে বলতে হয়।”

“আমার সেটা মনে হয় না, মনের কথা মুখে বলে দায়সারা হওয়ার চেয়ে কাজেকর্মে প্রকাশ করে জিইয়ে রাখাই আমার অধিক প্রিয়।”

“আপনি সবকিছু তে ইউনিক,হাহ!”

রিজভী সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই মুখ গোমড়া করে বসে আছে। মনমেজাজ এতো খারাপ কেন কে জানে! আজ তার বিয়ে কোথায় সে খুশীতে নাচবে তা না নড়তেও মন চাইছে না। এইরকম হবার রহস্য কী?
রিজভী ফোন হাতে নিয়ে পাপিয়া কে কল দিলো।বেশ কয়েকবার রিং হবার পর ও কল রিসিভ হলোনা, এই মেয়েটা করছে টা কী! এমন ভাব ধরছে যেন বিয়ের সব কাজ ও একা করছে কারো কল ধরার পর্যন্ত সময় নেই! যত্তসব ঢং!
আধা ঘন্টা পর পাপিয়া কল ব্যাক করে ব্যস্ত গলায় বললো,” কি রে কেন কল দিয়েছিলি?”

রিজভী নিরস গলায় বললো,”হবু বরের সাথে দু’টো মিষ্টি কথা বলার ফুরসত তোর নেই দেখছি! আমি বলেই বেঁচে গেলি রে, নয়তো পরের ছেলে জীবনেও এমন ভেজিটেবল মনোভাব দেখানো মেয়েকে বিয়ে করতোনা।”

“তোর কথা শুনলে মনে হয় আমাকে তুই বিয়ে করে বড় মেহেরবানী করছিস। তুই ছাড়া অন্য কেউ আমায় বিয়েই করতো না?”

“আমি সেটা বললাম কখন? দেখ অযথা ঝগড়া বাঁধিয়ে আমার বাসর নষ্ট করার পরিকল্পনা করিস না বলে দিচ্ছি। তোর মান অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতে এনার্জি শেষ করতে পারবোনা।”

পাপিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,”রিজভী তোর আজাইরা প্যাঁচাল বন্ধ করবি? কাজের কথা থাকলে বল নাহয় রাখছি। আমি তোর মতো হুদা কাজে বসে নেই।”

“কি বললি তুই আমি আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ি?হুদাই বসে আছি? তুই জানোস আমার কত কাজ আজকে? কি অমানুষিক পরিশ্রম করতে হবে আমার তোর আইডিয়াও নেই! অবশ্য মেয়েরা এসব বুঝবেনা। যাক তোকে একটা জরুরী কথা বলতে ফোন করেছিলাম। ”

“জ্বি বলে উদ্ধার করেন!”

রিজভী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “বেশি কাজকর্ম করে টায়ার্ড হইস না। এনার্জেটিক থাকিস কিন্তু!”

পাপিয়া গালি দিয়ে বলল,”তুই ভালো হবি না!”

“ওরেহ তুই গালিও পারোস! ওয়াও! এই ট্যালেন্টটা এতো দিন দেখি নাই আমি। এই আর কী কী জানিস রে? এমন নয়তো আমি তোকে বোকারাণী ভেবে বসে আছি, কিন্তু তুই ভেতরে ভেতরে ঝুনা নারকেল!”

“নিজেকে অতি চালাক ভাবা বন্ধ কর। বোর লাগলে রুমের বাইরে যা কাজে হাত লাগা। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তোর চারপাশে শয়তান ঘুরতেছে, বি কেয়ারফুল।”

রিজভী হেহে করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বলল,”দোস্ত আমি তোরে অনেক মিস করবো রে। আমাকে গুড লাক উইশ করবি না? আমি যেন এই পৃথিবীর বেস্ট রোমান্টিক বর হতে পারি!”

পাপিয়া খট করে কল কেটে দিলো। এই ছেলের মাথায় আসলেই সিট আছে! কেন যে সে এই বদকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলো কে জানে!

বেশ জমকালো আয়োজনের মাধ্যমেই পাপিয়া আর রিজভীর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। ওকে বিদায় দিয়ে সবাই যখন বাসায় ফিরলো রাত প্রায় ১টা বাজে। রোকেয়া আর জহির সাহেব পাশাপাশি বসে আছেন। কন্যা বিদায় দিয়ে তাদের মন বিষাদে ভরে আছে বৈ কি। মেয়েরা কেন যে দু’দিনের অতিথি হয়ে জন্মায়। আদরের মধ্যমণি হয়ে বুকের মাঝে বড় হয়ে উঠে, তারপর সেই বুকে পাথর বেঁধে তাকে পরের ঘরে পাঠিয়ে দিতে হয়। এই চক্রের উৎপত্তি কেন যে ঘটলো? জহির সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,”মনে আছে রোকেয়া পাপিয়া ছোটবেলায় কী বলতো? ও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতে করতে বলতো, আমাকে যদি বিয়ে দেওয়ার কথা কারো মাথাতেও আসে, এই সংসারে আমি ব্যাপক আগুন লাগিয়ে দিবো! হাহাহা…”

রোকেয়া আর্দ্র চোখে হেসে বললেন,”হ্যাঁ সাপলুডু নাটক টা দেখে দেখে ও তখন এই ডায়লগটা মুখস্থ করেছিল। যাই হতো বলতো ব্যাপক আগুন লাগিয়ে দিবো!”

“আল্লাহ আমার সন্তানদের সুখী করুন, এই কামনাই করি।”

ফুলে ফুলে সাজানো বিছানায় পাপিয়া ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। রিজভী ওর ঘোমটার নীচে উঁকি দিয়ে বললো,”টুকি!”

পাপিয়া ঘোমটা তুলে বললো, “এতোক্ষণ কই ছিলি? ঘুমে আমার চোখ ফেঁটে যাচ্ছে আর জনাব এসে বলে টুকি!”

“ছি ছি পাপিয়া! বরকে কেউ তুই তোকারি করে? কোথায় এসে আমার কদমবুসি করবি, সব বলে বলে শেখাতে হবে দেখছি!”

পাপিয়া আড়মোড়া ভেঙে বললো,”তোর সাথে ফরমালিটি দেখাতে আমার বয়েই গেছে। দেখি সর, আমি চেইঞ্জ করবো।”

“চেইঞ্জ করবি মানে! সুন্দর লাগছে তো,,”

“সুন্দর লাগলে কী করবো? এই ভারী সাজে সারারাত বসে থাকবো?”

“তো থাকবি না? বাসররাত কী জীবনে বারবার আসে নাকি?”

পাপিয়া লাগেজ থেকে কাপড় বের করে বললো, “তোর ইচ্ছে হলে সারারাত শেরওয়ানি আর পাগড়ি পড়ে বসে থাক। মানা করলো কে?”

“এজন্যই বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করতে নেই। এরা এটকুও দাম দেয় না। অন্য মেয়ে বিয়ে করলে এতোক্ষণে এক রাউন্ড হয়ে যেত…..”

পাপিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,”সবসময় বোল্ড কথা বললে কাউকে কুল লাগেনা।”

রিজভী ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে বলল,”আমি শুধু কথায় না কাজেকর্মেও ভীষণ বোল্ড। তোর কী হবে রে এবার?”

পাপিয়া ভেংচি কেটে বললো, “যত্তসব হুমকি ধামকি তোর, এমন ভাব করিস যেন বাঘ না ভাল্লুক!”

রিজভী হেসে তাকে কোলে তুলে বললো,”সে তুই যা ইচ্ছে বলতে পারিস আমি একটুও রাগ করবো না। আজকে রিজভী শুধু ভালোবাসবে, আদর করবে। রাগ করে সময় নষ্ট করবে না….”

পাপিয়া দু’হাতে ওর চোখ ঢেকে বললো,”এমন অদ্ভুত ভাবে তাকানোর মানে কী আজিব!”

“উফফ এটাকে অদ্ভুত তাকানো বলে না বলদি। এটাকে বলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকানো, প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকানো।”

জাওয়াদ আর আরওয়া রেজোর্টের লনে বসা। আরওয়া তার বাহু আঁকড়ে কাঁধে মাথা রেখে সামনের ছোট লেকে হাঁসদের চড়ে বেড়ানো দেখছে। কী সুন্দর তারা চড়ে বেড়াচ্ছে উপর থেকে বোঝা যায় না যে তারা সাঁতার কাটছে।
নিরবতা ভেঙ্গে জাওয়াদ বললো,”বললে না তো হঠাৎ এতো তোড়জোড় করে এখানে আসতে চাইলে কেন?”

“এমনি ইচ্ছে হলো আপনার সঙ্গে সময় কাটানোর তাই।”

“আমার তো সেটা মনে হচ্ছে না। কী চলছে তোমার মনে বলবা?”

আরওয়া ওর গালে চুমু খেয়ে বললো,”আমরা দুজন থেকে ৩জন হতে চলেছি….”

জাওয়াদ স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলো আরওয়ার দিকে। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,” সত্যি বলছো!”

“নাহ মিথ্যে বলছি!”

“আরওয়া! সত্যি আমি বাবা হতে চলেছি? আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না!”

আরওয়া নাক ফুলিয়ে বললো, “অবিশ্বাস হবার কী আছে?আমি অযথা মিথ্যা বলবো কেন হু?”

জাওয়াদ ওকে বুকে জড়িয়ে বললো,”আমি সেটা বলি‌নি পাগলি! আমার এতো আনন্দ হচ্ছে না আমি বলে বোঝাতে পারবোনা…”

আরওয়া ওর বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে হাসতে লাগলো।

🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿

পরিশিষ্ট: সানা হসপিটালের করিডরে বসে একটু পরপর বলছে, বাবাই আমার ভাই কখন আসবে? আর কত অপেক্ষা করবো? নাহিয়ান নিজেও অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। অপেক্ষার সময়টা শেষ হবে কখন কে জানে? সে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,”আল্লাহ আল্লাহ করো মামণি, যেন তোমার আম্মু এবং ভাইয়া দুজনেই সুস্থ থাকে। সানা দু’হাতে মোনাজাত তুলে দোয়া করতে লাগলো।

কুহু বকা দিতে দিতে বললো,”তুমি এতো অবিবেচক কীভাবে? বললাম হসপিটালে আছি সবার জন্য হালকা খাবার নিয়ে আসো। আর তুমি কী না কাচ্চি নিয়ে এলে? এখানে টেনশনের মাঝে সবাই কাচ্চি খাবে?”

ইশরাক ঠোঁট চওড়া করে হেসে বললো, “আরেহ বোঝো না কেন কোনো সেলিব্রেশন কী কাচ্চি ছাড়া হয়? একটু পর তুমি নিজেও আমার প্রশংসা করবে দেখে নিও।”

“তোমার তো শুধু বাহানা চাই কাচ্চি খাওয়ার।”

রিজভী হালকা খাবার সঙ্গে করে এনে বললো,”আপু দুলাভাই কিন্তু ঠিকই বলেছে। আজকে এমন খুশির দিন কাচ্চি ছাড়া জমে নাকি?”

পাপিয়া–“একদম ঠিক!”

জাওয়াদ অফিস থেকে সোজা স্কুলে গেল। আরওয়া বারবার করে বলে দিয়েছে ১১:১৫তে স্কুল ছুটি হবে এক মিনিট ও যেন‌ এদিক সেদিক না হয়। জাওয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, যাক হাতে এখনো ৪মিনিট সময় আছে সে লেট হয় নি। গেইটের কাছে দাঁড়ানোর কিছু ক্ষণ পরেই ছুটির ঘন্টা বেজে উঠে। গুটিগুটি পায়ে জায়রা চারদিক চেয়ে বাবাকে দেখে হাসলো। দৌড়ে এসে বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ই জাওয়াদ ওকে কোলে তুলে আদর করল। জায়রা বাবার ঘড়ির দেখিয়ে বললো,”আজকে তুমি একদম ঠিক সময়ে এসেছ বাবা! আম্মু তোমাকে একটুও বকতে পারবেনা..”

জাওয়াদ হেসে বললো,”হুম প্রিন্সেস। তাড়াতাড়ি বাসায় চলো।”

জায়রা আবদারের ভঙ্গিতে বাবার দিকে তাকাতেই জাওয়াদ আইসক্রিমের গাড়ি দেখে বললো,”উহু আজ নয়। তোমার এমনিতেই সর্দি লেগে আছে আম্মু। সুস্থ হয়ে উঠলে সত্যিই খাওয়াবো..”

“পিংকি প্রমিজ?”

“পিংকি প্রমিজ।”

ঘর ভর্তি মেহমান, এখন আর বাইরের আত্মীয় আসতে হয়না, ঢাকার সবাই এলেই উৎসবমুখর অবস্থা হয়ে যায়। সাবা নাহিয়ানের ছেলে হবার খবর শুনে সবাই সকাল সকাল চলে এসেছে। তাদের খাতিরযত্নে যেন ত্রুটি না হয় সেইদিকে আরওয়ার সতর্ক দৃষ্টি। কোহিনুর বেগম তো একবার বাইরে যাচ্ছেন একবার ভেতরে আসছেন। কখন তার নাতি আসবে কখন তিনি তাদের ঘরে তুলবেন সেই খুশিতে তিনি পাগলপারা। জাওয়াদ জায়রাকে নিয়ে আরওয়ার কাছে যেতেই আরওয়া ওকে রুমে নিয়ে চেইঞ্জ করালো, জাওয়াদ সেই ফাঁকে তাঁকে খাবার খাওয়াতে লাগলো। জায়রা বললো,”আম্মু ছোট্ট ভাইয়া কখন আসবে?আমি তো ভেবেছিলাম এসে দেখবো সবাই চলে এসেছে।”

“একটু পরেই আসবে। তুমি ঠিকমতো সব ব্যাগে রেখেছিলে তো?”

“হুম।”

“গুড। এখন নাস্তা খেয়ে নীচে এসো কেমন? আম্মুর অনেক কাজ বাকি আছে।”

জায়রা বাবার হাতে নাস্তা খেয়ে দাদীর কাছে ছুটলো। আরওয়া ওর জন্য শরবত এনে টেবিলে রাখতেই জাওয়াদ ওর কোমড় জড়িয়ে বললো,”এতো ছুটছো কেন হুম? অন্যরা আছে তো সব দেখার জন্য। স্থির হয়ে বসো তো।”

আরওয়া ওর হাতের উপর হাত রেখে বলল,”বড় ভাবির অবর্তমানে আমাকেই তো সব দেখতে হবে তাই না? আর সত্যি বলতে আমার আনন্দ লাগছে এসব করতে।”

জাওয়াদ ওর কাঁধে চুমু খেয়ে বললো,”আমার আরওয়াটা এখন পুরোদমে গিন্নি বনে গেল বটে!”

আরওয়া ওর গলা জড়িয়ে বললো,”তাই বুঝি!”

“হুম ঠিক তাই…. আচ্ছা তোমাকে কী একটা জরুরী কথা বলেছিলাম?”

“কী কথা?”

“বলিনি এখনো?”

“নাহ তো!”

জাওয়াদ ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,”তোমাকে আমি অনেক ভালবাসি জানো?”

আরওয়ার ঠোঁটে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে। অবশেষে জনাব মুখে বললো তবে…..

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে