#কাঁটাকম্পাস_পর্ব৩৭
#আরশিয়া_জান্নাত
“ভাবি শুনো একটা জরুরী কথা আছে।”
“হাতে অনেক কাজ পাপিয়া, পরে শুনি?”
“ভাবি এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। না শুনলে সব কাজ অকাজ হয়ে যাবে!”
পাপিয়ার কথা শুনে সাবা থেমে গেল। জিজ্ঞাসু গলায় বললো, “কি হয়েছে?”
“এখানে না রুমে চলো বলছি।”
পাপিয়া ঘরে ঢুকেই দরজা আটকে বললো,”ভাবি কুহু আপুর মাথায় ভুত চেপেছে। ও এই বিয়ে ভাঙার জন্য কি একটা প্ল্যান করেছে আল্লাহই ভালো জানে। আমার খুব টেনশন লাগছে। দাদাসাহেব রাগলে কি হবে বুঝতে পারছ!”
সাবা হেসে বলল,” ওর যা মন চায় করতে দাও, শেষে পস্তানো টা আমাদের না ওরই হবে।”
“তুমি এভাবে বলছো?”
“শোনো পাপিয়া, কুহুর কিছু বদ অভ্যাস আছে। ওর সেটা শোধরানো উচিত। এমনি এমনি তো কিছু ঠিক হয়না, বিপদে পড়লেই ঠিক হয়।”
পাপিয়া হা হুতাশ করে বলল,”ভাবি তুমি টিপিক্যাল ননদ-ভাবির মধ্যকার সংঘর্ষের মতো কথা বলছো! তোমার থেকে এটা আশা করিনি।”
সাবা চেয়ারে বসে বলল,” ওকে আমি পাত্রের বায়োডাটা দিয়েছি, বলেছি চেক করে দেখতে। কিন্তু ও এসব থোরাই পাত্তা দেয়। সবসময় অবহেলা করা কি ঠিক তুমিই বলো?”
“না কিন্তু বায়োডাটায় কি আছে?আপু তো সবসময় ফেলে দেয় এটা নতুন কী?”
“গুণীজন কহেন, “যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।”
পাপিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বললো,”ভাবি ডোন্ট সে পাত্র সেই ভোজনরসিক- ইশরাক ভাইয়া?”
সাবা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলল,”ইয়েস মাই ডিয়ার ননদী। তোমার ভাইয়া এই প্রোপজাল টা দাদাসাহেবের কাছে রেখেছিল। দাদাসাহেব ও সব দিক বিবেচনা রাজী হয়েছেন।”
“ইয়া আল্লাহ! এখন আপু যদি ব্ল্যান্ডার করে কি হবে বুঝতে পারছো? আমি এখুনি আপুকে গিয়ে বলছি দাঁড়াও।”
সাবা ওকে আঁটকে বললো, “উহু কিছু বলবেনা। দেখি না ওর দৌড় কতদূর অবদি যায়। অনেকদিন এন্টারটেইন হচ্ছিনা।”
পাপিয়া হেসে বললো,” ইশরাক ভাইয়াকে অন্তত এলার্ট করা উচিত না? আমার সত্যিই আপুকে ভয় লাগে, মনে নেই কুলসুম খালামণির বিয়েতে কি কেলেঙ্কারি করেছিল। সেদিন যদি নানাভাই সবটা সমলে না নিতেন বিয়ের আসর থেকে বরযাত্রী চলে যেত।”
“এখানেও আমরা সবাই আছি তো। ডোন্ট ওয়ারি।”
।
জাওয়াদ অফিস থেকে ফিরে হোটেল রুমে বসে আছে। লাস্টবার বিজনেস ট্রিপে আরওয়া সঙ্গী হয়েছিল। তাই এবার একা আসায় একটু বেশিই মিস করছে মেয়েটাকে। আরওয়ার প্রাণোচ্ছলতা, অল্পতেই হেসে গড়িয়ে পড়া, সবকিছুই যেন চোখের সামনে ভাসছে। জাওয়াদ রকিং চেয়ারে দুলে দুলে ভাবছে, এতোক্ষণে নিশ্চয়ই ও বাড়িতে গেস্টরা চলে এসেছে। ওখানে হৈ হৈ রৈ রৈ অবস্থা। আর সে এখানে একা বসে আছে। কাল সকালে আবার সাইট ভিজিটিং এ যেতে হবে।
রাগ করে আসলে মানুষের পরিবার কত ফোন করে, রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে। আর ওর এমন নসীব ও রাগ করলে ভাঙাবে কি কেউ ছায়াও মারায় না। এমন ভাব যেন রাগ ও করে নি, অন্য সবাই করেছে। আরওয়াও সেইম কাজটাই করলো। ওর মান ভাঙানোর বদলে সাম্যকে কল করে খবর নিচ্ছে। কেন ওকে কল করলে কি গায়ে ফোস্কা পড়ে যেত? নাকি ও ওকে চিটাগং থেকে মি*সা* ইল পাঠিয়ে হামলা করতো?
আজ সবাই একত্রিত হবে সেখানে, অথচ ওর অনুপস্থিতি কারোই চোখে পড়বেনা। অবশ্য পড়বেই বা কেন সে কি ও বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ কেউ নাকি! ও তো জাস্ট একটা কামলা, যে যন্ত্রের মতো সকাল ৯থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কামলা খাটবে। দিনশেষে আবার আনকালচার খেতাব পাবে!
এসবকিছু ভাবতেই মনটা কেমন তেতো হয়ে উঠে তার। কফি মেকার থেকে কফি নিয়ে বেলকনীতে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশের দিকে চেয়ে বলে, “গত বছর আর এ বছরের মধ্যে পার্থক্য কি? তখনো এমন মন খারাপ ছিল, এখনো মন খারাপ। অথচ লোকে বলে বিয়ের পর সব স্বপ্নের মতো বদলে যায়….”
পাত্রপক্ষের সামনে যাওয়ার আগে কুহু তাদের কাজের মেয়ে লাকিকে বাজখাই গলায় বকা দিয়ে বলল,”এসবের মানে কি লাকি? এতো সস্তা কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন? তুই কি জানিস না খন্দকার বাড়ির কাজের লোকেরাও নামিদামী পোশাক পড়ে! ইউ ইডিয়ট মানসম্মান সব নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছিস না? ছিঃ কি বিচ্ছরি দেখাচ্ছে তোকে!”
লাকি অপ্রস্তুতভঙ্গিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে রইল। কুহু নিজের শাড়ি সামলে বললো, “আমার চেইঞ্জ করা কাপড়গুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলবি। আমি যেন এখান থেকে ফিরে আমার রুমে ২য় বার সেসব না দেখি।”
“বড় আপা আপনি দুপুরে যে জামা পড়ছেন ঐটা ফেলে দিতাম? ঐটা না কয়দিন আগেই কত দাম দিয়ে কিনলেন?”
কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,”সো হোয়াট? একটা ড্রেস আমি দুবার রিপিট করা পছন্দ করি না। তাছাড়া টাকার হিসাব কুহু খন্দকার কখনোই করেনা।
যা তো কথা বাড়াস না। যত্তসব থার্ড ক্লাস পিপল।”
লাকি দ্রুত সরে গেল। কুহু আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলা একটু দূরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনেছেন এবং দেখেছেন। সে বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে মনে মনে বলল, “আশা করি অর্ধেক কাজ হয়ে গেছে। বাকিটা পাত্রের সঙ্গে কথা বলার সময় করবো।”
ইশরাকের মা শাহিনা মাহবুব মলিন মুখে এসে সোফায় বসলেন। তার ছোট মেয়ে নিসা মায়ের এমন মুখ দেখে বললো,”মা কিছু হয়েছে? তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন?”
শাহিনা মাথা নেড়ে বলল, “নাহ আমি ঠিক আছি। তোর ভাই এসেছে?”
“নাহ, আসছে হয়তো।”
“ওহ আচ্ছা।”
কুহুকে আনার পর যখন পরিচয় করানো হলো কুহু তাকিয়ে দেখলো সেই ভদ্রমহিলা পাত্রের মা। ওর মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। যাক নিশানা একদম জায়গামতো বসেছে।
সাধারণ কথাবার্তার মাঝেই ইশরাক ও তার বন্ধুরা প্রবেশ করে। কুহু ওকে দেখে ভীষণ চমকে যায়। তবে কি ইশরাকের বন্ধুর সাথেই ওর বিয়ের কথা চলছে! এই বলদ নিশ্চয়ই নাচতে নাচতে নিজের এক্স আর বন্ধুর বিয়ের খাওয়া খাবে, আর বলবে মামা এখানে কাবাবের শর্ট, রোস্ট আরেক পিস দেন তো, কাচ্চিটায় লবণ কম হইছে! যত্তসব।
কিন্তু তার ভাবনা যে সম্পূর্ণ ভুল তার প্রমাণ মিলল নাহিয়ানের কথায়। কুহু চোখ বড়বড় করে চেয়ে রইলো নাহিয়ানের দিকে। একদিকে আনন্দ হচ্ছে ইশরাকের সাথে ওর বিয়ে হবে, আবার নিজের কৃতকর্মের জন্য ভয় লাগছে তার মা না আবার তাকে অহংকারী মেয়ে ভেবে বিয়ে ভেঙে দেয়!
।
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে আরওয়া যখন নিজের ঘরে গেল ল্যাপটপে মগ্ন মানুষটাকে না দেখতে পেয়ে মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। একটু আগেও হাসিখুশি ভাব থাকলেও এই মুহূর্তে সব ম্লান হয়ে গেছে বলা বাহুল্য।
আরওয়া শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে লগিন করলো। রাত প্রায় ১২টা বাজে। তার চোখে ঘুম নেই। মানুষটা ওখানে কি অবস্থায় আছে কে জানে। এখনো কি রাগ করে আছে? আরওয়াকে নিশ্চয়ই মনে মনে অনেক বকা দিচ্ছে,না? আরওয়া ফোনটা একপাশে রেখে সিলিং এ তাকায়। মনে মনে ভাবতে থাকে কত কথা, কত স্মৃতি! হঠাৎ ফোনে নোটিফিকেশন আসতেই সে চেক করে দেখে এক বছর আগের মেমোরিজ এসেছে, রুমাইসা ওকে ট্যাগ করে ছবি আপলোড করেছে তার মেমোরিজ, ইমেজ ওপেন হতেই দেখে তার হলুদের ছবি আপলোড করা হয়েছিল। আরওয়া এক ঝটকায় শোয়া থেকে উঠে বসে। ফোনের স্ক্রিন চেক করে দেখে তাদের হলুদের ছিল, তার মানে ১দিন বাদে ওদের ম্যারেজ এনিভার্সেরি! ইয়া আল্লাহ! এটাতোতার মাথাতেই ছিল না।
তাদের ১ম এনিভার্সেরিতে জাওয়াদ ওর পাশে থাকবে না?
আরওয়া বেশকিছুক্ষণ ভেবে বলে, “তবে কি এজন্যই অসময়ে কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান করেছিলেন তিনি? উনার মাথায় ছিল নাকি নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার?”
পরদিন হসপিটালে যাওয়ার পর নাহিয়ানের কেবিনে তারিন এসে বলল, “ডক্টর সাহেব কোন আউটলেটে মিষ্টি অর্ডার করবো বলুন?”
নাহিয়ান ফাইল চেক করতে করতে বলল, বিয়ে কনফার্ম হোক আগে মিষ্টি অর্ডার করতে হবে না সরাসরিই হাতে পাবি।”
তারিন ওর হাত থেকে ফাইল নিয়ে বলল,” আরেহ গাধা আমি কি বিয়ের ব্যাপারে বলেছি? অন্যের ফাইল না ঘেটে নে নিজের মিসেসের ফাইল দেখ।”
নাহিয়ান বিস্মিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সাবার রিপোর্টের দিকে। “সত্যিই কি সে আসতে চলেছে?”
চলবে,,,
#কাঁটাকম্পাস_পর্ব৩৮
#আরশিয়া_জান্নাত
“মা তুমি ভুল বুঝতেছ। কুহু ইচ্ছে করেই হয়তো এমন বিহেভ করেছে। ও মোটেও তেমন মেয়ে না ট্রাস্ট মি!”
” ও কেমন মেয়ে দেখা হয়েছে আমার। ও সামনে এক পেছনে আরেক। আমি নিজে দেখেছি সবার আড়ালে কেমন আচারণ করেছে।তুই ওর প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছিস তাই দেখতে পাচ্ছিস না। দেখ বাবা বিয়েটা ছেলেখেলা না। অনেক ভেবেচিন্তে জীবনসঙ্গী চুজ করতে হয়।এখানে আমার মন মানতেছে না…”
ইশরাক মায়ের হাত ধরে বললো,” মা তোমার কি মনে হয় তোমার ছেলে এতোটাই কাঁচা? ৩২ বছরের জীবনে মানুষ চেনার একটু জ্ঞান ও কি আমার হয়নি? আমি কি এই পর্যন্ত কোনো মেয়ের কথা তোমাকে বলেছি?”
শাহিনা মাথা নেড়ে বলল,” আব্বুরে তোর চোখে এখন ভালোবাসার পট্টি বাঁধা, তুই এখন আমার কথা বুঝবি না। তোর যা ইচ্ছে কর তবে এই বিয়েতে আমি মন থেকে মত দিচ্ছি না। গরীবের নম্র ভদ্র মেয়ে ধনীর অহংকারী মেয়ের চেয়ে হাজারগুণ ভালো।”
ইশরাক হতাশ হয়ে মায়ের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো। আর মনে মনে বলল,”তুমি কেন ঐসব করতে গেলে কুহু! আমাদের বাড়া ভাতে ছাই না ফেললে কি তোমার হতো না?”
আরওয়া দাদীকে ফোন করে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো। করিমুন্নেসা নাতনিকে স্বাভাবিক হতে সময় দিলেন, কান্নার বেগ কমে আসতেই তিনি নরম গলায় বললেন, “ও বু কি হইছে?”
“দাদীজান আমার কিছু ভালো লাগছেনা। আমি উনাকে কষ্ট দিয়েছি দাদীজান, উনি আমার উপর রেগে আছেন হয়তো।”
“ঘটনা কী হুনি আগে?”
আরওয়া পুরো ঘটনা দাদীকে খুলে বলল। করিমুন্নেসা সবটা শুনে বললেন, “আই তো ইয়ানে তোর দোষ দেহিয়ের না। পাঁচজন লই সংসার কইরতে গেলে কতদিক বিবেচনা কইরতে অয় হেতে না বুইজলে কি করন আছে? হেতের ভাবসাব হুনি তো মনে কর হেতে বিবাহবার্ষিকী পালন কইরবার লাই বুলি তোরে সাথে নিতে চাইছিল।”
“হুম উনি অনেক প্ল্যান করেছিল, আমিই গাধা বুঝিনাই।”
“মন বেজার করিচ্চা, দাদীর কথা হুন। তুই এক কাম কর তুই চিটাং যা গই। হেতের সামনে যাই খাড়াইলেই দেইখবি সব গোস্সা ফানি হই গেছে। যাওনের সময় হেতের লাই কিছু কিনি লইস ক্যান? আর কান্দিচ্চা, তোর হোড়িরে কই চিটাং যাওয়ার ব্যবস্থা কর।”
“আমি একা এতো দূর কীভাবে যাবো?”
“আই গাড়ি ফাডাইয়ের, সালাউদ্দীন তোরে দি আইবো।”
আরওয়া চোখ মুছে বলল,” আল্লাহ তোমারে অনেক দিন বাঁচাই রাখুক। তুমি আছ বলেই আমার সমস্যার সমাধান সহজেই হয়ে যায়।”
করিমুন্নেসা হেসে বললেন,”মসিবতে অধৈর্য হবি না, মাথা ঠান্ডা করি আরে ভাইববি। দেখবি আমনেই সমাধান মাথায় আই যাইবো।”
“হু”
আরওয়া শাশুড়ির থেকে অনুমতি নিতে গেলে রোকেয়া শুরুতে না করতে চাইলেও ওর চোখমুখ দেখে রাজী হয়ে গেলেন। আরওয়া শাশুড়ির অনুমতি পেয়ে দ্রুত ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করলো।
।
পাপিয়া অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমে শুয়ে পড়লো। আজ তার শরীর একদম ভালো নেই। তাই সে চোখবন্ধ করে এক কাত হয়ে শুয়ে আছে। রোকেয়া মেয়ের জন্য ফলের জুস এনে তার শিয়রে বসলেন। মাথায় আলতো হাতে বিলি কেটে বললেন, “শরীর খারাপ লাগছে?”
“আমি ঠিক আছি আম্মু। চিন্তা করোনা।”
“আরওয়া আজকে চিটাগং গেছে। বুঝিনা ওদের কি হলো। ছেলেটা রাগ করে চলে গেছে, এখন বউ গেছে রাগ ভাঙ্গাতে। ওদের এসব ঝগড়াঝাটি কবে যে শেষ হবে!”
পাপিয়া চোখ না খুলেই বললো,”যে সম্পর্কে ঝগড়া বেশি ঐটাতে ভালোবাসাও বেশি। ওদের সম্পর্ক এভাবেই গড়ে উঠেছে, দেখবে এটা লাস্টিং করবে অনেকদিন।”
“কিন্তু উল্টোটা হয় যদি! বেশি ঝগড়া করলে মনে তিক্ততা আসে, একে অপরের প্রতি ঘৃণা জন্মায়। ওতেই আমার ভয়।”
পাপিয়া উঠে বসলো। মায়ের গালে হাত রেখে বলল, “সব ঝগড়ায় যেমন ভালোবাসা বাড়েনা, তেমনি সব ঝগড়ায় ক্ষোভ ও জন্মায় না।ওদের এই টকঝাল রাগ অভিমান ওদের সম্পর্ককে মজবুত করবে, চিড় ধরাবেনা ইনশাআল্লাহ!”
পাপিয়া মনে মনে বলল, “আমার সঙ্গে রিজভীর কত ঝগড়া হয়েছিল, কিন্তু ব্যাড এফেক্ট তো পড়েনি। বরং বন্ধুত্ব মজবুত হয়েছে। আশা করি ভাইয়া ভাবিরও তেমনি হবে।”
রোকেয়া চলে যাওয়ার পর পাপিয়া উঠে ডেস্কে বসলো। ফটো এলবাম বের করে দেখতে লাগলো পুরনো মানুষগুলোকে। যাদের অনেকেই বেঁচে আছেন আবার অনেকে কবরবাসী হয়েছেন। পাপিয়া সবার ছবি দেখছে আর ছবির পেছনে কাহিনী স্মরণ করছে। সেই ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবি আছে যেটায় তার কোলে ছিল তাদের অতিপ্রিয় বিড়াল সিম্বা। পাপিয়া ছবিটা স্পর্শ করতেই চোখ ভরে আসে। সিম্বাকে হারানোর স্মৃতি মানসপটে কড়া আঘাত হানে, পুরনো ক্ষত যেন তাজা হয়ে উঠে মুহূর্তেই। ওরা থাকেনা ওদের আদুরে স্মৃতিগুলো থেকে যায় আমৃত্যু কষ্টের বোঝা বইতে। পাপিয়া দ্রুত এলবাম বন্ধ করে টেবিলে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। কেন সব প্রিয়রা তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায়?
জাওয়াদ অফিস শেষ করে শহরের অলিতে গলিতে হাঁটতে লাগলো। সাম্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে চাইলেও তাকে থাকতে দিলো না। এই সময়টা সে একা উপভোগ করতে চায়। আকাশে চতুর্দশী চাঁদ বেশ আলো ছড়াচ্ছে। জাওয়াদ রোড সাইডের বেঞ্চিতে বসে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। ওর কাজ আজ শেষ হয়ে গেছে। সে চাইলেই এখন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পারে। কিন্তু সে যাবেনা। সে এখানে ইচ্ছে করে আরো দু’দিন থাকবে তারপর ফিরবে। এতে অবশ্য কারোই অসুবিধা হবে না। আরওয়ার ও না,যদি অসুবিধা হতো এ কয়দিনে একবার হলেও কল দিতো, কবে ফিরবে খোঁজ নিতো। খোঁজ নিচ্ছেনা তাও বলা যাচ্ছেনা, সাম্যকে নিয়মিত কল দিচ্ছে খোঁজ নিচ্ছে। শুধু ওর ফোনেই কল আসতে যত সমস্যা। জাওয়াদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে, নাহ এখন হোটেলে ফেরা উচিত। সিএনজি ঠিক করে সে ফোন চেক করলো। নাহ কোনো কল বা মেসেজ আসেনি। জাওয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে তাকায়।
“স্যার আপনি এসেছেন। আমি তো টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম…”
“এতো টেনশনের কী আছে? আমি কি এই প্রথম একা বেরিয়েছি নাকি?”
“নাহ স্যার সেটা বলিনি আসলে…”
“এক্সপ্লেইনেশন চাচ্ছি না। আমি আজ ডিনার করবোনা। তুমি ডিনার করে ফেলো। আমাকে কাল সকালে আর্লি ডাকবে না। আমি লেট করে উঠবো।”
লিফটের দরজা বন্ধ হতেই সাম্য বলল,” আজ এমনিতেও আমার সঙ্গে ডিনার করতে পারতেন না স্যার! আই হোপ এখন আপনার মুডটা ঠিক হবে”
রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই জাওয়াদের মনে হয় রুমটা খালি না। এখানে কারো উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। জাওয়াদ সতর্কভাবে ভেতরে ঢুকতে লাগলো। রুমে সব স্বাভাবিক দেখালেও ওয়াশরুমে শাওয়ারের শব্দে ওর আত্মা উড়ে যায়। এতো রাতে ওর ঘরে কে শাওয়ার নিচ্ছে! কেউ ভুল করে ঢুকে যায় নি তো? কিংবা অশরীরি কিছু….. জাওয়াদ আয়াতুল কুরসী আর সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ে গায়ে ফুঁ দিলো। সাথে সাথে পানির শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপারটা ভুতূড়েই ঠেকে! সে চুপচাপ সোফায় গা এলিয়ে বলে, “যাক মানুষ না থাকুক অন্যকিছু হলেও আছে! আ’ম নট এলোন।”
দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই সে সামনে তাকায়,একটা মৃদু সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ঘর জুড়ে। জাওয়াদ উঠে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের ওদিকে। সত্যিই কি কোনো জ্বীনের সাক্ষাৎ মিলবে আজ! আরওয়াকে দেখে জাওয়াদ ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো জ্বীনটা কী তাহলে আরওয়ার বেশে এলো? ও আল্লাহ!
আরওয়া আয়নার সামনে বসে টাওয়ালে চুল মুছতে মুছতে বলল, “এমন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকার কী আছে? আমাকে কী এখন বেশিই সুন্দর লাগছে নাকি?”
জাওয়াদ নিজের চুলে হাত চালিয়ে ঠিক করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। টাই খুলে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে কাভার্ড থেকে টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
।
নাহিয়ান ডিউটি শেষে বাসায় ফিরেই নিজের ঘরে গেল। সাবাকে সরাসরি খুশির সংবাদ দিতেই এতোক্ষণ সে কিছুই জানায়নি। এত বড় গুড নিউজ ফোনে বললে ওর রিয়েকশন দেখা হবেনা। তাই সে দ্রুত নিজের ঘরে গেল। কিন্তু রুমে ঢুকতেই দেখে সাবা ফ্লোরে হাঁটুতে মাথা গুজে বসে আছে। নাহিয়ান ওর কাছে গিয়ে প্রফুল্ল গলায় বলে, “তোমার ধারণা ঠিক ছিল পাখি। সে আসতে চলেছে, সত্যিই আসতে চলেছে দেখো….”
সাবা মাথা তুলে চায় নাহিয়ানের দিকে, ওর অশ্রুসিক্ত নয়ন দেখে নাহিয়ান বিচলিত হয়ে বলে, “কি হয়েছে সাবা কাঁদছো কেন? শরীর খারাপ লাগছে? পেট ব্যথা করছে?”
সাবা ওর বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল, অস্পষ্ট গলায় বলল,” ও নেই নাহিয়ান। ও নেই…..”
চলবে…
#কাঁটাকম্পাস_পর্ব৩৯
#আরশিয়া_জান্নাত
জাওয়াদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আরওয়া খাবার পরিবেশন করছে। দৃশ্যটা খুব সাধারণ হলেও তার ভালো লাগছে। আরওয়া তাকে দেখে বলল, “খেতে আসুন। দুইদিনেই চেহারার যে হাল করেছেন মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আপনার কেউ নেই।”
জাওয়াদ চেয়ারে বসে বলল,”হঠাৎ চিটাগং এলে কেন?”
আরওয়া ওর সামনে প্লেট দিয়ে বলল, “আপনাকে দেখার জন্য।”
জাওয়াদ অবজ্ঞাসূচক হাসি দিয়ে বলল,”নাইস জোক্স”
“থ্যাঙ্ক ইউ।”
“কোল্ড ওয়্যার রাখো। সোজাসাপ্টা জবাব দাও। তুমি তো দায়িত্বব্রতী নারী! সংসার নিয়ে এতো বিজি যে আমি এখানে আসার পর আমায় একবারও কল করে নি, সে হঠাৎ উদয় হলো কেন? তার দায়িত্ব কর্তব্য সব শেষ?”
আরওয়া ওর পিঞ্চ হজম করে বলল, “মানুষের চাওয়া পাওয়া যদি সময়ের সাথে বদলায় আমার কি কিছু বলার থাকে?”
“মানে?”
“মানে খুব সোজা। তবে এই মুহূর্তে আমি সেসব ডিসকাস করে কথা বাড়াতে চাইছি না। আমি লং জার্নি করে এসেছি, ভীষণ ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত। দয়া করে এসব তুলে রাখুন।”
জাওয়াদ কি মনে করে ওর কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচর বোঝার চেষ্টা করলো। তারপর ওর হাত টেনে নিজের কাছে এনে চেক করলো। আরওয়া ওর কার্যকলাপ দেখে বলল, “কিছু করি নি আমি। এতো চেক করার কী আছে?”
“কে চেক করছে, আমি তো এমনিই ধরে দেখছি তুমি মানুষ কি না।”
“কোকোনাট একটা!”
জাওয়াদ চুপচাপ খাওয়ায় মন দিলো। আরওয়া ওর দিকে চেয়ে নিজেও খেতে শুরু করলো।
নাহিয়ান সাবাকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটা দীর্ঘক্ষণ কেঁদেকেটে ঘুমিয়ে পড়েছে। নাহিয়ান এতোক্ষণ পাথর হয়ে থাকলেও এখন দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। কেন সবসময় এমন হয়। স্বপ্ন পূরণ হতে গিয়েও হয় না। আলট্রাসনোগ্রাফীতে দেখা ঐ ছোট্ট প্রাণটা কেন এসেও এলো না? কেন সবসময় ওদের সাথে এমন হচ্ছে? আশার আলো ফুটিয়েও কেন আধার নেমে আসে? নাহিয়ান আলতো হাতে সাবাকে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এখন ওর কান্নার বেগে সাবার না ঘুম ভাঙে!
ছাদে বসে আকাশের দিকে ঝাপসা চোখে চেয়ে বলে, “তুমি কেন এমন করছো? তুমি তো রাহমানুর রাহিম। আমাদের বেলা কেন রহমত দিচ্ছ না? একটা সন্তান ই তো চাইছি তোমার কাছে। দয়া করে এই অধমকে সেটা দিচ্ছো না কেন?”
নাহিয়ানের কান্নার তোপ বাড়তে থাকে। সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেও বিশেষ লাভ হয় না।
।
রিজভী বলেছিল আজ সে কল করবে, তাই পাপিয়া ফোন হাতে বসে আছে। আজকাল রিজভীর সাথে কালেভাদ্রে কথা হয়। লং ডিস্টেন্সে থাকায় টাইমিং ম্যাচ হয় না। দেখা যায় রিজভী যখন অবসরে থাকে পাপিয়া তখন মহাব্যস্ত। আবার পাপিয়া যখন ফ্রি রিজভী তখন বিজি। এভাবেই দুই প্রান্তের মানুষ একে অপরের নাগাল পাচ্ছে না। সময়ের এই টানাপোড়েনে কীবোর্ডের কয়েকটা শব্দ বার্তারূপে পৌঁছে দুজনের মেলবন্ধন টিকিয়ে রেখেছে বলা বাহুল্য। রিজভী লাইনে আসতেই পাপিয়া নড়েচড়ে বসে। আয়নায় নিজেকে আরেকবার দেখে আশা রাখে রিজভী বুঝি ভিডিও কলে আসতে চাইবে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে রিজভী অডিও কল দেয়। পাপিয়া কল রিসিভ করতেই সেই চিরচেনা গলার স্বর শুনতে পায়। ঝরঝরে গলায় রিজভী বলে,” পাপিতা, কেমন আছিস?”
“ভালো আছি। তুই?”
“আছি বেশ! তারপর বল তোর কী খবর? বাসার সবাই ভালো আছে?”
“হুম সবাই ভালো। তোদের বাসার সবাই ভালো তো?”
“সবাই ভালোই তবে মা একটু অসুস্থ।”
“কী হয়েছে আন্টির?”
“বয়স হলে রোগের অভাব আছে? আমার দাদী বলতো, “জয়কালে ক্ষয় নাই, বয়সকালে দাওয়াই নাই।” উনার সাথেও তেমনি ঘটছে। ”
“বুঝেছি।”
“তোর বোনের বিয়ে কনফার্ম হয়েছে?”
“না এখনো হয় নি।”
“কেন? তুই না বললি ওর পছন্দের ছেলের সাথেই কথাবার্তা চলছে? এখন সমস্যা কী?”
“আপু নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে।এখন ইশরাক ভাইয়ার আম্মু মত দিচ্ছেন না।”
“তোর বোন একটা চিজ বটে! এতো নাটক সে করতে জানে। মাঝখানে তোর যত ঝামেলা।”
“আমার ঝামেলা কেন?”
“তো কার ঝামেলা? ওর বিয়ে না হলে তোর হবে? তাও ভাগ্য বুঝলি তোর ভাইয়েরা বিয়ে করে ফেলেছে। নয়তো সব কয়টা চিরকুমার থেকে যেতো।”
“হুম তাও ঠিক।”
“আংকেল আন্টি কী বলে? তোর বিয়ে নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে না?”
“প্রপোজাল তো আসেই, তবে আপুকে বাদ দিয়ে আমারটা কীভাবে দেখবে! তাই আগাচ্ছে না।”
“বুঝেছি। তোর অফিসে কোনো কলিগ নেই? আই মিন যার সঙ্গে রিলেশনে যেতে পারিস। একটা ব্যাকাপ রাখলি আর কি!”
পাপিয়া ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,”রিলেশন করা প্যারা লাগে আমার কাছে। সিঙ্গেল আছি ভালো আছি। বিয়ে ভাগ্যে থাকলে হবে নাহলে নাই। ওসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। আমার কথা বাদ দে, তোর কথা বল তুই কার অপেক্ষায় আছিস? তোর তো কোনো সিরিয়াল নেই, ওখানে ভালো জব করছিস। দেশী না হোক বিদেশী কাউকে চুজ করে সংসার পাতলেই পারিস!”
রিজভী হেসে বলল,” বিয়ে করার হলে দেশীই করবো। বিদেশীর প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই।”
“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ। তুই কি করছিস? ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করা যাবে?”
পাপিয়া মনে মনে বলল,”মেকাপ মোছার পর তোর চেহারা দেখতে মন চাইলো?”
রিজভী ভিডিও কল দিলে পাপিয়া এক্সেপ্ট করলো। রিজভী ওকে দেখেই বললো,” আরেহ তুই তো অনেক সুন্দর হয়ে গেছিস। তোর রূপের রহস্য কী?”
পাপিয়া ওর মিথ্যে প্রশংসা গায়ে মাখলোনা। স্ক্রিনে তাকিয়ে রিজভীকে মন দিয়ে দেখলো। চোখেমুখে সেই দুষ্টুমি মাখা ভাবটা আর নেই, বরং ম্যাচিওরিটি এসেছে মনে হলো। নাকী অনেকদিন বাদে দেখছে বলে এমন মনে হচ্ছে? আগের চেয়ে একটু হেলদী হয়েছে না? সুন্দরই লাগছে। হতাশার ছাপ মুছে একটু প্রানবন্ত হয়েছে এটাই স্বস্তির।
রিজভী তুড়ি বাজিয়ে বললো,” কি রে কোথায় হারালি? কথার উত্তর দিচ্ছিস না যে?”
“অনেক দিন বাদে তোকে দেখছি! দেশে আসবি না?”
“সবেই তো এলাম, আরো কয়েক বছর যাক তারপর আসবো।”
“তুই গেছিস যে ৭মাস চলে না?”
“হুম।”
“অথচ মনে হচ্ছে ৭বছর হয়ে গেছে!”
“হেহেহে,,,তুই দেখি আম্মুর মত কথা বলোস। সেদিন আম্মুও বলতেছিল, কবে ফিরবো। কী একটা অবস্থা!”
“ছেলে দেশের বাইরে গেলে মায়েদের মন নরম হয়ে যায়। তুই চাইলে দেশেই ভালো কিছু করতে পারতি, ওখানে যাওয়ার দরকার ছিল না।”
“সেটা ঠিক, তবে আমি চাইছিলাম না দেশে থাকতে। মাঝেমধ্যে চেনা গন্ডি টপকে অচেনা জায়গায় বসতি গড়তে হয়। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।”
“তুই সামিয়াকে ভুলতে ওখানে গেছিস তাই না?”
রিজভী মাথা চুলকে বলল,” মোটিভ এটাই ছিল, তবে এখানে এসে অন্য একটা রিয়েলাইজেশন হয়েছে। মে বি দেশে থাকলে সেটা আসতো না। তাই আমি মনে করি চলে এসে ভালো করেছি।”
পাপিয়া হেসে বললো,”আমি মন থেকে চাই তুই মুভ অন করে একটা হ্যাপি লাইফ লিড কর।”
“আই নো! পাপিয়া শোন?”
“হুম?”
“মানুষ কি আবার প্রেমে পড়তে পারে? আই মিন লং টাইমের রিলেশন ভাঙার পর সে যদি আবার প্রেমে পড়ে এটা কী খারাপ?”
“আমার সেটা মনে হয় না।”
“তুই হয়তো আমার দিক বিবেচনা করে ফ্রেন্ডলী আনসার দিচ্ছিস। সত্যিটা ভিন্ন!”
পাপিয়া হেসে বলল,”ফ্রেন্ডের কথা খুব কম মানুষই সত্যি বলে মেনে নেয়!”
।
“সাম্য ভাইয়া, এখান থেকে কক্সবাজার কত দূর?”
“ম্যাম,আমাদের লোকেশন থেকে কক্সবাজার যেতে এক দেড় ঘন্টা লাগতে পারে।”
“কাছেই তাহলে। আচ্ছা ওখানে থাকার ব্যবস্থা কেমন? আপনি কি এখন কোনো রুম বুক করতে পারবেন?”
“অবশ্যই পারবো। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি সব ব্যবস্থা করছি।”
“ধন্যবাদ ভাইয়া।”
সাম্য চলে যেতেই জাওয়াদের আগমন ঘটলো। ডাইনিং এর চেয়ারে বসে বললো,”সাম্যর সাথে এতো হেসে হেসে কী কথা বলছিলে?”
“আপনাকে কেন বলবো?”
“না বললে নাই, হু কেয়ার্স!”
“হু কেয়ার্স দেখাই যাচ্ছে! এনিওয়ে আপনার অফিশিয়াল কাজ তো গতকালই শেষ হয়ে গেছে না? আজ তো আপনি ফ্রি বলতে গেলে?”
“পিএ আমার নাকি তোমার? সাম্য সব ইনফরমেশন পাচার করছে না! ওকে আমি…”
আরওয়া ব্রেডে বাটার মাখতে মাখতে বলল,” সবসময় নিরীহ মানুষের উপর রাগ দেখাবেন না। অর্ধাঙ্গিনী মানে বুঝেন? আপনার সবকিছুতে আমার অধিকার অন্যদের চেয়ে বেশি। এটা ভুললে চলবে না।”
“তোমার কাছে আমি বাদে সবাই নিরীহ!”
“মোটেই না, আপনি ওদের সবার চেয়ে বেশি নিরীহ! সহজ ভাষায় যে নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে না তার প্রতি আমার সহানুভূতি আরো বেশি আসে!”
“আমি কি কঠিন ভাষায় বলেছিলাম?”
“নাহ!”
“তাহলে?”
“তাহলে কিছু না।”
“অবশ্যই অনেক কিছু, আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার দাম তোমার কাছে নেই। এখন সেটা সহজ ভাষায় বলি বা কঠিন ভাষায়!”
“রিয়েলি?”
“অফকোর্স! ”
“যা হবার হয়েছে, বাড়ির বউ হবার দায়িত্ব পালন করে এসেছি। এখন স্ত্রী হবার দায়িত্ব পালন করবো। দয়া করে মুখ ভার করে না রেখে হাসিমুখে থাকুন।”
জাওয়াদ ফোন বের করে সাম্যকে টেক্সট করলো, “Restart the plan”
সাম্য মেসেজ পেয়ে মুচকি হাসলো। তার ধারণাই ঠিক ছিল, ভাগ্যিস গতকালই সে সব এরেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছে!
“হ্যালো শুনুন আমি যেভাবে বলেছি সবটা সেভাবেই করবেন। কোনো কিছু যাতে নড়চড় না হয়। আর কেকটা অবশ্যই স্ট্রবেরি ফ্লেভারের হবে…..”
চলবে,,,