#কাঁটাকম্পাস_পর্ব২৫
#আরশিয়া_জান্নাত
আরওয়াকে দেখে পাপিয়া প্রফুল্ল চিত্তে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল, “নতুন ভাবি তোমরা এসে গেছ! তোমাদের অনেক মিস করেছি জানো!”
“আমি তোমাদের কে ৩গুণ বেশি মিস করেছি। একা থাকা কি কঠিন কাজ বাপরে! ”
লাগেজগুলো ভেতরে পাঠিয়ে সাম্য দাঁড়ালো। জাওয়াদ গাড়ি থেকে নেমে বললো, “কাল অফিসে এসো না।”
সাম্য ওর কথায় বিবর্ণ হয়ে গেলো,ভীত স্বরে বলল, “স্যার তবে কি আমার চাকরি গেল?”
জাওয়াদ ওর শার্টের পকেটে একটা খাম রেখে বললো,”এতো কথা না বলে যা বলছি তাই করো।”
বলেই সে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
সাম্য মনখারাপ করে গেইটের দিকে এগোতে লাগলো। পকেটে থাকা খাম টা খুলে দেখে একটা চেক। ওর বুঝতে বাকি রইলো না চাকরিটা গেছে।
তখনই ওর ফোনে একটা মেসেজ আসে,
“তুমি আমার খুব বিশ্বস্ত একজন মানুষ। তোমাকে বাদ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এখন আপাতত দেখছি না। এ ক’দিন অনেক প্রেশার গেছে, কিছু দিন রেস্ট করো।”
সাম্যর খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে। বুকের উপর থেকে অনেক বড় একটা পাথর সরে গেছে যেন।
আরওয়া রুমে না গিয়ে পাপিয়ার সাথে গল্প জুড়ে বসেছে। বাড়ির অন্যরাও ওর গল্প বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনছে। জাওয়াদ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। আর একটু পরপর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আচ্ছা মেয়ে তো, আসার পর ঐ যে বসার ঘরে আসর পেতে বসেছে উঠার কোনো নামগন্ধ নেই। আর সবাইও কেমন কেউ ওকে ফ্রেশ হবার কথাও বলছে না; স্ট্রেইঞ্জ!
রোকেয়া হালকা খাবার নিয়ে জাওয়াদের ঘরে এলো। টেবিলের উপর ট্রে রেখে বললো, “কি রে মুখটা এমন পেঁচার মতো করে রেখেছিস কেন?”
“কই না তো!”
“আমাকে কি তোর অন্ধ মনে হয়? কি হয়েছে তোর আবার কোন গন্ডগোল পাকিয়েছিস বল?”
“আমি আবার কি করলাম, একা ঘরে বসে আছে চুপচাপ থাকবো না তো কি একা একা হেহে হিহি করে হাসবো? চুপ থাকলে সবার মুখই পেঁচার মতো লাগে।”
রোকেয়া বিছানার একপাশে বসে বললেন, “টায়ার্ড লাগছে বেশি? ঘুমাবি কিছুক্ষণ?”
“নাহ আমি ঠিক আছি।”
“আরওয়ার সাথে ঝগড়া করেছিস আবার?”
“নাহ তো! আমি কারো সঙ্গে ঝগড়া করি?”
“তোরা বাপ ছেলে ঝগড়া করিস না তো। তোরা জাস্ট আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়ে বসে থাকিস। বাকি যা হবার এমনিতেই হয়ে যায়…”
“আমার কথা বিশ্বাস না হলে ওকে ডাকো, সরাসরি জিজ্ঞাসা করো। তাহলেই তো আর এতো কষ্ট করে আন্দাজ করতে হচ্ছেনা।”
রোকেয়া মাথা নেড়ে বললেন, “আসলেই ওকে ডাকা উচিত, তোর পেটে বোমা ফেললেও আসল কথা বেরোবে না।”
রোকেয়া ব্যতিব্যস্ত হয়ে দোতলার করিডর থেকে আরওয়াকে ডাকতে লাগলেন। আরওয়া শাশুড়ির ডাক শুনে দৌড়ে উপরে গেল। রোকেয়া তার হাত ধরে রুমে নিয়ে বললো, “সত্যি করে বল তো ফারাজ তোর সাথে আবার ঝগড়া করেছে কি না? ”
আরওয়া বিস্মিত গলায় বললো,”কই না তো। কেন কি হয়েছে?”
“কি আর হবে মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে শুয়ে শুয়ে দুঃখবিলাস করছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল এই পৃথিবীতে ওর মতো দুঃখী আর কেউ নেই!”
জাওয়াদ বিরক্তস্বরে বললো, “আম্মু, তুমি তিলকে তাল বানাচ্ছ কেন? চেহারা দেখে মনের খবর জাজ করা যায় নাকি?”
রোকেয়া বললো,”আমার গর্ভে তুই হয়েছিস নাকি তোর গর্ভে আমি? তোর হাবভাব আমার ভালোই চেনা আছে।”
জহির সাহেবের ডাক শুনে রোকেয়া আর কথা বাড়ালোনা। ” কোথাও গিয়ে যে দু দন্ড বসবো সে ফুরসত নেই। হাঁকডাক চলতেই থাকে ফারাজ খাবারগুলো খেয়ে নিস কিন্তু…” বলতে বলতে তিনি দ্রুতপদে বেরিয়ে গেলেন।
আরওয়া খাটের প্রস্থে গা এলিয়ে বললো, “কি ব্যাপার কি শুনছি এসব হুম?”
জাওয়াদ উঠে টেবিল থেকে ফলের জুসটা নিয়ে বললো, জার্নি করে আসলে ভালোভাবে হাতমুখ অন্তত ধুতে হয়। তুমি তো সেসব ভুলে গল্পে মজেছ!”
আরওয়া একপাশে কাত হয়ে হাতের উপর মাথা রেখে দুষ্টুমি মাখা হাসি দিয়ে বললো,” এই তাহলে জনাবের মুড অফের কারণ? ইশ! এতো চোখে হারান আমাকে, কি লজ্জা কি লজ্জা!”
“আমার বয়েই গেছে তোমাকে চোখে হারাতে।”
আরওয়া উঠে এসে বললো, “ইয়া আল্লাহ আপনার নাকে কি হয়েছে?”
জাওয়াদ নাকে হাত দিয়ে বলল, “কই কি হয়েছে?”
“মিথ্যে বলতেই আপনার নাক ১ইঞ্চি লম্বা হয়ে গেছে! বিশ্বাস না হলে আয়নায় তাকিয়ে দেখুন।”
বলেই আরওয়া হেহে করে হাসতে লাগলো। জাওয়াদ ওর হাসি দেখে বললো, “এই দাঁড়াও তোমার দাঁতে ওটা কি লেগে আছে? সবুজ শাক নাকি?”
আরওয়া ইই করে দাঁত দেখিয়ে বললো, “দেখুন অনেকগুলো লেগে আছে।”
জাওয়াদ তাকে জব্দ করতে না পেরে হতাশ হলো। আরওয়া হেসে বললো, “Well try My dear hubby. কিন্তু আমার হায়া একটু কম। এটা ভুললে চলবে না।”
।
হিয়া বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “জীবনটা আর ভাল্লাগেনা রে। ঘুরেফিরে ঐ একই রুটিন। সো বোরিং!”
“নতুন কি লাগবে তোর? বাচ্চা সামলাতে চাস নাকি বর?”
“দুটোই সামলানোর বয়স চলতেছে, একটা বললে কি হবে?”
পাপিয়া ওর জমানো বাদাম থেকে দুটো মুখে তুলে বলল, ” বিয়ে করে ফেল। অনেক দিন বিয়ের দাওয়াত খাই না।”
“মিথ্যুক কয়দিন আগে না ভাইয়ের বিয়ে খাইলি?”
“ভাইয়ের টা আর বান্ধবির টা কি এক?”
“ছেলে দেখ আমার জন্য। পড়াশোনা নিপাতে যাক। আমি নাচতে নাচতে সংসার করবো, আর শাড়ি গয়নার বায়না ধরবো। আহা আহা কি সুখ!”
“কত স্বপ্ন তোর ওহো ওহো! শাড়ি গয়না লাগলে এখনি তো নিতে পারোস। এর জন্য বিয়ে করা লাগে?”
” দেখ ব্রো, দুনিয়ার সবাই মিলেও যদি শাড়ি গয়না দেয় মন ভরবে না। জামাই একটা দিলে যে আনন্দ টা আসবে তার সামনে অন্যদের টা কিছুই না। আমি তো ঠিক করে রেখেছি সে যখনই নতুন শাড়ি দিবে আমি সাথে সাথে সেটা পড়ে তার সামনে ঘুরঘুর করবো। আর সে বলদার মতো ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।”
পাপিয়া ওর কথা শুনে বলল, “তোর এতো পজেটিভ চিন্তা আসে কেমনে ভাই!”
“যাদের লাইফে পজেটিভ কিছু থাকেনা তারা হয় প্রচুর হোপলেস হয় নাহয় প্রচুর হোপফুল হয়। আমি হোপফুল!”
পাপিয়া ওর কাধে হাত রেখে সান্ত্বনার স্বরে বললো, “আল্লাহ তোর মনের ইচ্ছা পূরণ করুক! দেখবি অনেক সুখী হবি তুই।”
হিয়া হেসে বললো, ” সুখী তো হবোই। এখন হোক সেটা এই দুনিয়ায় নাহয় ঐ দুনিয়ায়….”
রিজভী পাপিয়ার মাথায় টোকা দিয়ে বললো,” তুই এখানে বসে আছিস, “আমি তোকে আরও কই কই খুঁজছি!”
“পৃথিবীতে মোবাইল বলে একটা ডিভাইস আছে। ঐটা ইউজ করা যেত না?”
“ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম মোবাইল নামে একটা ডিভাইস আছে!”
“তোর আসলেই মাথাটা খুব স্লো চলে। হরলিক্স খাবি রোজ বুঝলি।”
“হরলিক্সের কোনো পুষ্টিগুণ নাই। ঐটা ফাউ বিজ্ঞাপন ছিল। যাই হোক কেন খুঁজছিলাম ওটা বলতেই ভুলে যাচ্ছি তোর কথার মারপ্যাঁচে।”
“বল কি বলবি?”
রিজভী একটা ছোট প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, “তোর থেকে অনেক টাকা ধার নিছি। নে সব শোধ করলাম।”
“আরেহ বাহ এবার এক দানেই সব দিলি?”
রিজভী ম্লান হেসে বললো,”এখন তো আর খরচা নেই! তাই একবারেই দিতে পেরেছি।”
হিয়া বলল, “আল্লাহ তোকে সুবুদ্ধি দান করুক। এবার যেন সঠিক মানুষ চিনতে পারিস।”
পাপিয়াও ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
।
নূর মোহাম্মদ ছাদে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রীকে বললেন, “আবেগ দিয়ে কাজ করার বয়স এখন আর নেই।আমাদের একটাই ছেলে ওর থেকেই তো আমার পরিবার আগাবে। ওর যদি সন্তান না হয় কিভাবে চলবে? সমস্যা সাবার ওর তো না। ও কেন নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে? আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, নাহিয়ানের ইনকাম ও ভালো। ও চাইলেই আরেকটা বিয়ে করতে পারে। ইনসাফ করযে পারলে ২স্ত্রী রাখতে তো নিষেধাজ্ঞা নাই। ছেলেকে বোঝাও ও যেন আরেকটা বিয়ে করতে প্রস্তুত হয়”
কোহিনূর স্বামীর কথায় প্রতিবাদ করার সাহস পেলেন না। এমনিতেই কিছুদিন আগে অনেক ছোট হয়েছেন। এখন যদি আবার সেটা টেনে অপমান করে তাই ভয়ে সে নিরবই থাকলো। তাছাড়া সে ভালো করেই জানে নাহিয়ান জীবনেও এসবে মত দিবে না।
চলবে…