#কহিনুর
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৯+২০
পসরা ফারুকী হাসপাতালে কি হয়েছে সেটা বলা হচ্ছে না। জুবায়ের মুখটা থমথমে করে বসে আছে। ছোট থেকে যাকে বোন ভেবে এসেছে সে মোটেই ওর নিজের মায়ের পেটের বোন না বরং কাজিন। তাতে কি!কাজিন বলে কি বোন না? । বাড়িতে কেউ কিছু না বললেও জুবায়ের কিছুটা আচ করতে পেরেছে। কি বলবে কোনো ভাষা এখন আর মুখে আসছে না। অধরা ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ছেলেটার মাথায় কি ঘুরছে। পসরা ফারুকী হাসপাতালে সেট ও কিছুক্ষণ আগে জেনেছে। জানার পর থেকে জুবায়েরের জন্য চিন্তা হচ্ছে। লোকটা ওর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তা ঠিক কিন্তু লোকটার সঙ্গে যে বাড়ির প্রতিটা লোক বিশ্বাসঘাতকতা করছে। অধরা মনে মনে বহুবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছে যেনো জুবায়েরের উপরে কোনো অভিশাপ না আসে। ও মন থেকে ছেলেটাকে ক্ষমা করেছে। ভাগ্য ওকে এই বাড়িতে টেনে এনেছে সেখানে জুবায়েরকে দোষ দেওয়া বোকামি। অধরার ধ্যান ভাঙলো জুবায়েরের কথা শুনে। জুবায়ের ঘনঘন চোখের পাতা নাড়িয়ে বলল,
> অধরা তোমার কি ব্লাক কালারের শাড়ি আছে? আজ ব্লাক পরবা একটু? না থাকলে বলো আমি অর্ডার করে দিব। বেশি পারফেক্ট ভাবে সাজতে হবে না মোটামুটি হলেও চলবে। মেকাপ তো করোনা ওটার দরকার নেই।
জুবায়েরের এলোমেলো কথা শুনে অধরা অবাক হলো। বিবাহিত জীবনে প্রথমবার জুবায়ের ওকে সাজতে বলেছে কিন্তু কে? অধরা বিস্মিত হয়ে বলল,
> হঠাৎ শাড়ি?
জুবায়ের ওর কথা এড়িয়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
> এসো অনুষ্ঠান করে আমরা দুজন শোক পালন করি। বাবা মাকে ভীষণ মনে পড়ছে। আপনজনদের বিশ্বাসঘাতকতা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে খুব করে কাঁদতে। আমি তো বিশেষ তাই আমার কাজকর্মগুলোও বিশেষ। এসো দুজনে ব্লাক ড্রেস পরে দিনটাকে শোক দিবসে পরিণত করি। কিছু ভালো লাগছে না। আচ্ছা মৃ*ত্যু কি এর চাইতেও ভয়াবহ? তখন কি বুকের মধ্যে এমনভাবে যন্ত্রণা করে? মেয়ে হলে খুব চিৎকার করে কাঁদতে পারতাম ছেলে বলে হয়তো পারছি না। আচ্ছা তুমি কি আমাকে অভিশাপ দিয়েছিলে? তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইলে কি তুমি আমাকে ক্ষমা করবে? কি করলে যন্ত্রণা কমে যাবে বলতে পারবে?
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থামলো। গতকাল রাতে স্টোর রুমের মুখোশধারী লোকটা পসরা ফারুকী ছিল কথাটা মানতে জুবায়েরের কষ্ট হচ্ছে। বোন এই জঘণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত কিন্তু কেনো? হঠাৎ একটা কথা ভেবে অধরা লাফ দিয়ে উঠলো। বলল,
> এই আপনার বোননা বোবা ছিল কথা বলতে জানেনা? ওটা আপনার বোন হতেই পারে না। নিশ্চয়ই অন্য কেউ আপনার বোনের উপরে দোষ চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। যখন লোকটা আমাকে আঘাত করতে এসেছিল ছিল তখন লোকটা কথা বলেছিল। জানি কিছুটা মেয়েলি কন্ঠ ছিল তবে ওটা মেয়ে ছিল না। পুরুষ ছিল আমি দেখেছি। মুখোশ পরে ছিল কিন্তু তবুও তো বোঝা যায় বলুন? লোকটার বয়স কত এটা ধারণা করতে পারলে মোটামুটি অনুমান করা যেতো। আচ্ছা আপনার ভাই কোথায় বলতে পারেন?
জুবায়েরের কপালে ভাজ পড়লো। অধরা ঠিকই বলেছে। পয়সা কথা বলতে পারেনা। এতক্ষণ খামাখা মন খারাপ করলো। বোনকে হাসপাতালে দেখতে যাবে। অভিমান ছিল সব চলে গিয়ে এখন চিন্তা হচ্ছে। না জানি কি হয়েছে। বাগান থেকে ফেরার সময় খবরটা শুনে কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করেছে। গতকাল রাতে যে মেয়েটাকে আনা হয়েছিল তার সঙ্গেও দেখা করতে পারেনি। জুবায়ের হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। অধরাকে বলল,
> চলো নিচে যায়। এখানে বসে থেকে কাজের চাইতে অকাজ বেশি হচ্ছে।
জুবায়ের ওকে সুযোগ দিলো না হাত ধরে হাঁটা ধরলো। একবারে ডাইনিং রুমে গিয়ে থামলো। কাজের মেয়েদের বলে দিলো গতকাল উদ্ধার করা মেয়েটাকে আনতে। আরও একটা অঘটন ঘটেছে। সকালবেলায় আসা জুহির বোন বলে পরিচয় দেওয়া মেয়েটার খোঁজ মিলছে না। জুবায়ের লোক পাঠিয়েছে ওরা বারবার ফোন করছে। এইটুকু সময়ের মধ্যে মেয়েটা গায়েব কিভাবে হলো মাথায় আসছে না। ওর ভাবনার মধ্যেই কাজের মেয়েরা মেয়েটাকে নিয়ে হাজির হলো। মেয়েটার বয়স কতই বা হবে,খুব বেশি হলেও ষোল সতেরো বা আঠারো। এর চাইতে বেশি না। একদম বাচ্চাদের মতোই ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে।। অধরা মেয়েটার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,
>নাম কি তোমার? বাসার ঠিকানা বলো তোমাকে পৌঁছে দিব আমরা। একটুও ভয় পাবে না ঠিক আছে? পরিচয় বলো।
অধরার কথা শুনে মেয়েটার কান্না থামালো কিন্তু উত্তর দিলো না। সরল চোখে তাঁকিয়ে আছে। জুবায়ের এবার ধমক দিয়ে উঠলো,
> এই মেয়ে কথা বলতে পারো না? দ্রুত ঠিকানা বলো আমি তোমাকে পাঠিয়ে দিব। সময় নষ্ট করো না।
জুবায়েরের ধমক শুনে মেয়েটা পূর্বের ন্যায় আবারও ঠোঁট উল্টে কান্না শুরু করলো। অধরা বিরক্ত হয়ে বলল,
> আপনি ধমক মারামারি ছাড়া কি কিছু বুঝেন না? দেখছেন কথা বলছি তার মধ্যে ঝামেলা শুরু করেছেন। আমি দেখছি তো বিষয়টা।
> কি দেখছো তুমি? এভাবে কথা বলবে বলে তোমার মনে হয়? জীবনে বলবে না। এসব বোবার মুখে কিভাবে কথা ফোঁটাতে হয় সে আমার ভালো করে জানা আছে। চুপচাপ দেখো।
জুবায়ের অধরাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই মেয়েটাকে জেরা শুরু করলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। এই মেয়ের কিছু মনে নেই। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাঁকিয়ে থাকলো। মেয়েটাকে কাজের মেয়েদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়ে জুবায়ের অধরাকে রেডি হয়ে আসতে বলল। পসরাকে দেখতে হাসপাতালে যেতে হবে। অধরা কক্ষে ফিরে গিয়ে মিনিট দশেক পরে ফিরে আসলো। জুবায়েরের কথা অনুযায়ী ও সত্যি সত্যি ব্লাক কালারের শাড়ি পড়ে বেরিয়েছে। জুবায়ের ডাইনিং রুমে বসে ছিল হঠাৎ সিঁড়িতে ওকে দেখে থমকে গেলো। মুগ্ধ হয়ে দেখলো। ওষ্ঠে হাসি এসে আবার সেটা মিলিয়ে গেলো। লজ্জিত হলো পূর্বে নিজের ব্যবহারের কথাগুলো ভেবে। এই লজ্জার হাত থেকে হয়তো ওর জীবনে নিস্তার নেই। অধরা জুবায়ের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,
> আমি চলে এসেছি এবার যাওয়া হোক?
> নিশ্চয়ই কিন্তু আজ শোক দিবস পালন কিন্তু হচ্ছে না। এতো সুন্দরী বউকে নিয়ে শোক পালন করতে আমার বিবেকে বাঁধছে। কি করা যায় বলোতো?
> কিছু করতে হচ্ছে না। আপাতত চলুন সময় নষ্ট করবেন না।
জুবায়েরের উত্তর দিলো না উঠে আসলো। দাদু দোতলায় দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ। ওদের দুজনের কাজকর্ম দেখছে। রুশনারা আজকাল বেশি একটা কক্ষের বাইরে আসেনা। সব সময় চুপচাপ থাকে। আগেও আসতো না তেমন তবে এখন বেশি। অধরা সেটা লক্ষ্য করেছে। হয়তো মেয়েটা জানে যার সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে সেটা কোনো মানুষ না বরং পি*শা*চ শ*য়*তা*ন। গাড়িতে বসে অধরা চিন্তিত হয়ে জুবায়েরকে বলল,
> একটা বিষয় চিন্তা করুন, মানব নিষিদ্ধ মানবি বলতে কি বুঝানো হয়েছে? এই মেয়েদেরকে কি পি*শা*চ শ*য়*তা*নের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে?
জুবায়েরের থমথমে মুখ নিয়ে বলল,
> হতে পারে। তবে নিশ্চিত ডাইরীটা দিয়ে তোমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তুমি ভাবছো ডাইরী পড়ে তুমি রহস্য জেনে গেছো তাই আর কোনো ঝামেলা করবে না। শুনো এসব যা হচ্ছে সব দাদু করছে আমি নিশ্চিত। ড্যাড ও জড়িত। সবাইকে চলো পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে আমরা অন্য যায়গায় চলে যায়।
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থমলো। ওর ধুমধাম কাজকর্ম করতে পছন্দ।কিন্তু সেটা অধরার পছন্দ হলো না। বিরক্তি নিয়ে বলল,
>আপনার মাথা। যতসব বদ বুদ্ধি। আচ্ছা পসরা আপুর না বিয়ে ঠিক হয়েছিল?
> হুম, তুমি জানো ভদ্রলোক হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছিল বিয়ের দুদিন আগে?অনেকেই ভেবেছে উনি মা*রা গেছেন অথচ লা*শ পাওয়া যায়নি। কি জানি কোন রহস্যের অন্তরালে হারিয়ে গেলেন উনি।
জুবায়ের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে অধরাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। কেবিন খুঁজে পেতে বিশেষ অসুবিধা হলো না। বেডে মেয়েটাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। জুবায়ের বোনের পাশে গিয়ে বসলো। ও বসতেই পসরা চোখ খুঁলে ছলছল দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকলো। জুবায়ের বোনের ডান হাতটা দেখে হতবাক হলো। হাতে ব্যান্ডেজ করা আছে। ওর মনে প্রশ্ন জাগলো বোন কি সু*ই*সা*ইড করতে চেয়েছিল? কিন্তু কেনো? জুবায়ের ভ্রু কুচকে বলল,
> আপু তোমার হাতে কি হয়েছে? আমি যেটা সন্দেহ করছি সেটা কি সত্যিই?
পসরা চোখ বন্ধ করলো। ওর চোখের কোনা দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। অধরা চুপচাপ ভাইবোনের ভাবমূর্তি দেখছে। পসরার সঙ্গে ওর তেমন কোনো ভালো খারাপ সম্পর্ক নেই। গত এক বছরে শুধু শাশুড়ির সঙ্গে মেলামেশা করেছে। বাকিরা ওকে এড়িয়ে যেতো। জুবায়ের নিজেইতো রাত ছাড়া ওর কক্ষে কখনও আসতো না। শাশুড়ি যেটুকু বলেছে ও সেটুকুই জানে । এর মধ্যেই হঠাৎ দরজা খুঁলে এক ভদ্রলোক ভেতরে প্রবেশ করলো। অধরা বুঝতে পারলো না ছেলেটিকে দেখে জুবায়ের চমকে উঠলো। ভ্রু কুচকে বলল,
> করণ ব্রো আপনি এখানে? এতদিন কোথায় ছিলেন?
জুবায়েরের প্রশ্ন শুনে ছেলেটার মুখখানাতে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো তবে ভড়কে গেলো না। যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
> আমি সুইজারল্যান্ড গিয়েছিলাম হুটকরে ড্যাড পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কেমন আছো তুমি? পাশের মেয়েটি কে?
জুবায়ের বোনের হাত ছেড়ে উঠে দাড়ালো। অধরা বুঝতে পারলো জুবায়েরের মুখের ভাব পরিবর্তন হচ্ছে। এখুনি লোকটার মুখের উপরে হামলা করে বসতে পারে। তাই দ্রুতগতিতে জুবায়ের হাতটা ধরে বলল,
> মাথা ঠান্ডা করুন। কোনো ঝামেলা করবেন না। লোকজন চলে আসবে। পুলিশের ঝামেলা হবে।
জুবায়ের বিরক্তি নিয়ে বলল,
> এই ভদ্রলোক আমার বোনকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বিয়ে যখন করতেই পারবে না তাহলে অভিনয় করার কি দরকার ছিল। আমার বোন কথা বলতে পারেনা লোকটাকে বলা হয়েছে তবুও এরকম করলো। এখন দরদ দেখিয়ে দেখতে এসেছে। ওকে মে*রে* পু*তে দিতে মন চাইছে। তুমি না থাকলে সত্যি দেখতে কি হাল করতাম।
জুবায়ের বেশ ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বললো। কিন্তু লোকটার ওষ্ঠে হাসি। মজা পাচ্ছে বলে মনে হলো। অধরা বিস্মিত হয়ে বলল,
> আমি অধরা, জুবায়ের ফারুকীর স্ত্রী। উনার হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। কিন্ত আপনি কাজটা ছিল করেননি। আগেই বলে দিতেন।
ভদ্রলোক সামান্য হেসে বলল,
> পালিয়ে গিয়ে ভূল করেছি সেটা অধিক ভালোবাসা দিয়ে সেটা পূরণ করে ফেলবো। আমি ক্ষমা ছেয়েছি কিন্তু।
> আপু যা বলবে যাই হবে। উনি ক্ষমা করলে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে যে একবার ছেড়ে যায় সে যে বারবার যেতে পারে। নিশ্চয়তা নেই তাই ভয় করছে বিশ্বাস করতে।
> আমাকে যে আসতেই হতো। আমি থাকবো নিশ্চয়ই থাকবো।
অধরা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের ওকে থামিয়ে দিলো। চুপ থাকতে বলে বোনের পাশে গিয়ে বসলো। পশরাকে বলল,
> ওকে তুমি ডেকেছো?
পসরা মাথা নাড়িয়ে না বলল। ছটফট করছে। লোকটাকে ভয় পাচ্ছে। বোনের এমন কান্ড দেখে জুবায়ের ডাক্তারকে ডেকে নিলো। ভদ্রলোকের আচরণ অধরার সুবিধা লাগলো না। মোটা একটা সোয়েটার জড়িয়ে রেখেছে গায়ে। জুবায়ের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে বোনের থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। হাসপাতালে কঠোরভাবে বলে আসলো বাইরের লোকজনকে কেবিনে আসার অনুমতি না দিতে। পসরা ভাইয়ের হাত ছাড়ছিল না। অধরা বুঝে গেলো এই করণ নামের ভদ্রলোকের জন্য পসরা ভয় পাচ্ছে।আসার সময় হুট করে একটা অঘটন ঘটে গেলো। দরজা দিয়ে বাইরে আসর সময় ভদ্রলোকের সঙ্গে অধরার জোরে একটা ধাক্কা লেগে গেলো। যদিও সেটা সামান্য ছিল কিন্তু লোকটা চিৎকার করে বুকে হাত দিয়ে হামু হয়ে বসে পড়লো। জুবায়ের দৌড়ে এসে অধরাকে ধরে ফেলল। ভদ্রলোকের দিকে তাঁকিয়ে ওরা বোকা বনে গেলো। সামান্য ধাক্কায় লোকটার অবস্থা নাজেহাল। নিশ্বাস নিচ্ছে টেনে টেনে। একজন সিস্টার দৌড়ে এসে ভদ্রলোককে নিয়ে গেলেন। অধরা পিছু ছুঁটে গেলো। কেবিনে কাচের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো নার্স ভদ্রলোকের বুকের কাছের কাপড়টা সরিয়ে দিচ্ছে। অধরার পেছনে পেছনে জুবায়ের এসে দাঁড়িয়েছে। লোকটার বুকে ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজ র*ক্তে ভিজে উঠেছে। অধরার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসলো। গতকাল স্টোর রুমে এই লোকটা ছিল। কিন্তু পসরা কেনো সুইসাইড করতে গেলো মাথায় ঢুকছে না। অধরা হতাশ হয়ে জুবায়েরের হাত টেনে বেরিয়ে আসলো। এক রহস্য উদ্ধার করতে গিয়ে আরও রহস্য সামনে আসছে। কহিনুর সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা এসেছে কিন্তু এসব ছোটখাট বিষয়গুলোও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।
☆☆☆☆☆☆
স্টোর রুমে পাওয়া মেয়েটার লা*শ পাওয়া গেছে বাড়ির পেছনের জঙ্গলে। ছিন্ন*ভিন্ন ব*ডি দড়িতে ঝু*লি,য়ে রাখা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে এমন একটা দৃশ্য দেখে অবাক হয়েছে অধরা। দিন দুপুরে খু*ন হয়েছে মেয়েটা। পুলিশ এসে লা*শ নিয়ে গেছে। সু*ই*সা*ইড করেছে বলে মনে হচ্ছে। লা*শ পচতে শুরু করেছে। এতো ঠান্ডা আবহাওয়ায় সামান্য কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে লা*শ কিভাবে পচে যাবে বিষয়টা নিয়ে জুবায়ের গভীর চিন্তাভাবনা করছে। বাড়ির পেছনে সিসি ক্যামেরাতে দেখা গেছে মেয়েটা নিজে থেকে গুটি গুটি পায়ে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা আজকের দৃশ্য না দুদিন আগের চিত্র। পুলিশের ধারণা মেয়েটা দুদিন আগেই মা*রা গেছে। অধরা বাড়ির কাজের লোকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলো কিন্তু অদ্ভুতভাবে সবাই অস্বীকার করলো। কেউ কিছুই জানেনা। যখন ও হতাশ হয়ে ফিরছিল তখন দাদুর সঙ্গে দেখা হলো। লোকটার মুখে সব সময় কেমন দুষ্ট দুষ্ট হাসির রেখা দেখা যায়। অধরা শপথ নিলো এই হাসি ও নিজ দ্বায়ীত্বে মুছে দিবে। অধরাকে ভাবতে দেখে উনি বললেন,
> আইনের ঝামেলায় জড়ানো ঠিক হবে না তাই কাজের মেয়েগুলো অস্বীকার করছে তুমিও চুপচাপ থাকো। এসব আমি দেখে নিচ্ছি। কার না কার মেয়ে তাঁর জন্য আমি কোনো ঝামেলা চাইনা বাড়িতে।।
দাদুর কথা শুনে অধরার রাগ হলো। ভেবেছিল কড়া করে দুটো কথা শুনিয়ে দিবে কিন্তু পারলো না। গালিব ওর দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে শকুনের মতো। অধরা দ্রুত নিচ থেকে উপরে উঠে আসলো। সারাদিন এসব ঝামেলায় পার হয়ে গেলো।
****
গভীর রাত জুবায়ের বাড়িতে নেই।একটা দরকারি কাজে অফিসে আছে। অধরা অপেক্ষা করেছিল কিন্তু ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেলো। প্রচণ্ড টেনশন দুর্বল শরীরের জন্য মোটামুটি ভালো ক্লান্ত ছিল। তাছাড়া পেটের আকৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর ঘুমের মধ্যে ও অনুভব করলো মুখের উপরে কারো গরম নিশ্বাস পড়ছে। কেউ এক দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। অধরা ফট করে চোখ খুঁলে ভ্রু কুচকে ফেলল। জুবায়ের ওর দিকে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। অধরা তাঁকাতেই ছেলেটা নিজের হাতটা ওর মুখের উপরে রাখতে গেলো কিন্তু পারলো না অধরা দ্রুত ওর কব্জি ধরে উঠে বসলো। বিরক্ত নিয়ে বলল,
> ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রীর কক্ষে চুপিচুপি এসে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? আপনি চরিত্রহীন নাকি সুযোগ সন্ধানী?
(চলবে )
#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
অন্তিম পর্ব
অধরার চোখেমুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুঁটে উঠেছে। জুবায়েরের ভাই জামসেদ ফারুকী ওর দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা ছেলেটার হাতের কব্জি ছেড়ে দিয়ে রাগে ফুলে উঠলো। যেটা দেখে জামসেদ ঠোঁট চেপে হাসলো। অধরা আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
> কি চাই আপনার? কেনো এসেছেন?
জামসেদ বাঁকা হেসে বলল,
> জুবায়েরের সঙ্গে আমার চেহারার কোনো আমিল নেই তবুও তুমি এক পলক দেখে চিনে ফেলেছো ভেরি নাইচ। সত্যিই তুমি চমৎকার একজন মেয়ে। তোমার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতে হয়। জানো তো আমাদের কেউ সহজে চিনতে পারেনা।
> সবার সঙ্গে আমার তুলনা করা নেহায়েত বোকামি ছাড়া কিছুই না।আমার স্বামীর স্পর্শ তার গায়ের গন্ধ আমার আয়ত্বে বেশ আগে থেকে। আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উনার উপস্থিতি রয়েছে তাহলে ভূল কিভাবে হবে শুনি? আশাকরি আপনি নি*র্বো*ধ না। যথেষ্ট জ্ঞান আছে নয়তো নিজের মায়ের পেটের ভাইকে মা*র*তে দুবার এটাক করতে চাইতেন না।
> বেশ ধা*রা*লো তোমার বাক্য। আমি নিজেকে প্রচুর বোঝানোর চেষ্টা করেছি তোমার থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু বিশ্বাস করো পারিনি। তোমার বাকপটুতা আমাকে বারবার মুগ্ধ করে। রূপের থেকেও যেটা মারাত্মক। জুবায়েরের হাত ছেড়ে দিয়ে আমার হাতটা ধরতে পারো। পাক্কা প্রমিজ জীবন থাকতে ছাড়বো না। কদর করবো।
অধরার রাগে শরীর জ্বলে উঠলো।মনে হলো পিপীলিকার পাখা গজাই মরিবার তরে কথাটা একদম সত্যি। লোকটা কতটা বেহায়া কথাবার্তা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। কি করে এমন জঘন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ওর মাথায় আসছে না। অধরা ঝঙ্কার দিয়ে বলল,
> জুবায়েরের সঙ্গে আমি সুখী তো আপনার সঙ্গে আমি কিসের নেশায় যাবো শুনি? একবার বলেছেন ঠিক আছে আর যেনো না শুনি। এবার আসুন আপনি। আমি একা থাকতে চাই। কোনো ল*ম্প*টের সঙ্গে কথা বলার মুড নেই।
> আমি অশোভনীয় কিছু বলেছি বা করেছি বলে তো মনে হয়না। তুমি অযথা উত্তেজিত হয়ে আমাকে আজেবাজে কথা বলছো আর খারাপ আচরণ করছো। আমার প্রস্তাবটা লুফে নাও আশাকরি ঠকবে না।
লোকটার কথা শুনে অধরার মেজাজ খারাপ হলো। দ্রুত রুমে থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না। ওকে আটকে দেওয়া হলো। জুবায়ের কোনো ফিরছে না অধরা বুঝতে পারছে না। এই লোকটা ওকে ঘরে আটকানোর চেষ্টা করছে। বাইরে নিশ্চয়ই কিছু হচ্ছে। জুবায়েরের জন্য টেনশন হচ্ছে। অধরা এবার নিজের সর্বশক্তি দিয়ে জামসেদকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে আসলো। ডাইনিং রুমে ছোটখাটো জটলা। অধরা দৌঁড়ে দৌঁড়ে নিচে নেমে দেখলো জুবায়ের জুসের গ্লাস নিয়ে মুখে দিচ্ছে। আরমান ফারুকী সোফায় বসে আছে সঙ্গে দাদুও আছে। অধরা দ্রুত গিয়ে জুবায়েরের হাত থেকে গ্লাসটা টেনে নিয়ে ফেলে দিয়ে বলল,
> খেতে নিষেধ করেছিলাম তবুও শুনলেন না? কি কি খেয়েছেন বলেন? আপনারা আমাকে কি পেয়েছেন? আপনার ভাই আমার কক্ষে এসে আমাকে বিরক্ত করছে আর আপনি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শরবত গিলছেন? ছিঃ লজ্জা করে না নিজের স্ত্রীকে আগলে রাখতে জানেন না আবার নিজেকে স্বামী দাবি করেন? এক পেয়ালা বি*ষ আনুন খেয়ে আপনাকে মুক্তি দিয়ে যায়। আপনারাও শান্তি সঙ্গে আমারও।
অধরা একদমে কথাগুলো বলে থামলো। এতদিন চুপচাপ নিজেকে শান্ত করে রেখেছিল কিন্তু এখন আর পারলো না। মুড খারাপ হচ্ছে। কতক্ষণ সহ্য করা যায়। জুবায়ের হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। বিষয়টা বুঝতে ওর কয়েক সেকেন্ড লাগলো। অধরা থামতেই জুবায়ের শুরু করলো। সামনে রাখা ট্রি টেবিলটা লা*থি দিয়ে ফেলে দিয়ে উপরে উঠে গেলো। অধরা এবার বুঝলো কাজটা ঠিক হয়নি। জুবায়েরকে শান্ত করা মুশকিল। ও দ্রুত জুবায়েরের পেছনে ছুটলো। দোতলায় জামসেদ দাঁড়িয়ে ছিল জুবায়ের সোজা গিয়ে ওর সোয়েটার টেনে নাক বরাবর ঘু*ষি বসিয়ে দিলো। দু’ভাইয়ের মধ্যে যথারীতি হা,তা*হাতি শুরু হলো। যে যাকে পারছে সমানে মা*রছে। নিচ থেকে সকলে চিৎকার চেচামেচি করছে কিন্তু কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না। অধরা দ্রুত গিয়ে জুবায়েরকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। জামসেদ ঘু*ষি দিতে গিয়ে থেমে গেলো অধরার গায়ে লাগবে সেই ভয়ে। জুবায়ের হাপাচ্ছে। ওর ঠোঁট কেঁ*টে র*ক্ত ঝরছে। অধরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে নিজেকে দোষারোপ করছে। জামসেদ রা*গ দেখিয়ে গটগট করে নিচে নেমে যেতেই অধরা জুবায়েরকে নিয়ে কক্ষে ফিরে আসলো। পানির গ্লাস জুবায়েরের দিকে এগিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
> সরি খুব সরি আমি আপনাকে দুঃখ দিয়েছি।আপনি আমাকে দুঃখ দিতে শোধ করে নিন তবুও ঝগড়া ঝামেলা করে নিজের ক্ষতি করবেন না।
জুবায়ের অধরার কথা পাত্তা দিলো না। ঢকঢক করে পানি খেয়ে বলল,
> ও তোমাকে কি কি বলেছে?
অধরা ঢোক গিলে বলল,
> বাদ দিন শুনতে হবে না। আপনি শান্ত হোন। আমি আপনার খাবার নিয়ে আসছি একটু অপেক্ষা করুণ
অধরা যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। জুবায়ের ওর হাত ধরে আটকে দিলো। জোর করে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> পালিয়ে যাও আগামীকাল ভোর পাঁচটায় তোমার ফ্লাইট। সোজা বাংলাদেশ ঢুকবে। আমার মেয়েকে নিয়ে খুব ভালো থাকবে। ওরা তোমাকে বাঁ*চ*তে দিবে না। রহস্য রহস্য করে মাথা খারাপ করো না। আমি মোটামুটি সবটা জেনে গেছি। মায়ের হ*ত্যা*কারী কে এটাও জেনেছি। তোমার বাবা মা সঙ্গে আমার বাবা মা সবাইকে ও*রা মেরে ফেলেছে। সুলতান বংশে শুধুমাত্র একটা অভিশাপ না অধরা আরও একটা অভিশাপ ছিল যেটা হয়তো ওই ভদ্রলোক ডাইরীর শেষ পৃষ্ঠাতে লিখেছিলেন যেটা আমাদের অগোচরে ছিল। তোমার একটা কথা মাথায় আসেনি বাবা আমাদের দুভাইকে সমানভাবে সম্পত্তি না দিয়ে শুধুমাত্র আমাকে কেনো দিয়েছিলেন?
অধরা অবাক হয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলল। এরকম প্রশ্ন ওর আগে মাথায় আসেনি এমনটা না। এসেছিল তবে উত্তর মিলেনি। জুবায়ের একটু থেমে বলল,
> সুলতানদের জমজ ছেলেদের একজনকে শ*য়*তা*নের নামে উৎসর্গ করার কথা উল্লেখ ছিল। পঁচিশ বছর পযর্ন্ত তাদেরকে কোনো নারীর স্পর্শে আসা কঠোরভাবে নিষেধ ছিল কিন্তু ড্যাড সেটা মানতে পারেননি। উনি বাবার আগেই মমকে বিয়ে করে নিলেন। যখন আষ্টেপৃষ্ঠে অভিশাপ উনাকে জড়িয়ে ধরে তখন দাদু উনাকে বাঁচার জন্য বিবাহ উপযুক্ত মেয়েকে ব*লি দেওয়ার বুদ্ধি দিলেন। তখন থেকে বাড়িতে এসব খু*ন খারাপি হচ্ছে। জমজ বাচ্চাদের মধ্যে কোন বাচ্চা শ*য়*তানের উপাসক হবে তাঁর নিশান হিসেবে ওরা এই পঁচিশ বছর দিনে না রাতে চলাফেরা করে। রোদের আলো সহ্য হয়না। বাবা এসব জেনে বুঝে সবটা আমার নামে দিয়েছিলেন। আর ভাইকে একটা অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিলেন কিন্তু ড্যাড কৌশলে ওকে ফিরিয়ে আনেন। বাবার বিরুদ্ধে ছোট থেকে আজেবাজে কথা ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। বাবা জানতেন ড্যাড এসব আজেবাজে কাজকর্ম করে। যখন ড্যাডের পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল তারপর একদিন সুযোগ বুঝে উনি আমার বাবাকে হত্যা করে নিজে উনার জায়গা দখল করে নিলেন। কেউ টের পেলো না। গতকাল যে লোকটাকে দেখলে আপুর সঙ্গে উনি আপুকে সত্যিই ভালোবাসেন। আপুর জন্য ড্যাডের কথা অনুযায়ী কা*লো যাদুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। কারণ মেয়েটা ছিল অভি*শপ্ত। মানব নিষিদ্ধ মানবি। কিন্তু কি হলো বলতো এতো এতো ঝামেলা করেও কোনো লাভ হলো না। শেষমেশ কহিনুরের খোঁজ চলল। কহিনুর পাথরটা কিন্তু দুবার হাত বদল হয়েছে । আগে এসেছিল আমাদের পরিবারের একজনের কাছে। তারপর যখন সেটা গহীন অরণ্যে সমাধিত করা হয় তখন পাথরের পেছনে থাকা পি*শা*চ আবারও বেরিয়ে পড়ে নতুন ভিকটিমের খোঁজ করতে। ঠিক তখনই তোমার দাদুকে পেয়েছিল। আর সর্বশেষ তোমার বাবার থেকে পাথর তাঁর শক্তি হারিয়েছে কারণ উনি অর্থসম্পদের পরিবর্তে সন্তান চেয়েছিলেন। উনার লোভ ছিল তবে সেটা অর্থের না একটা মাছুম বাচ্চার। তাছাড়া উনি সত্যি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। পাথর প্রথমবার একটা ভালো উদ্দেশ্যে কাজে লেগেছিল। তারপর উনি সেটা মসজিদের দান বক্সে ফেলে দিলেন। ওটা সাধারন পাথর হিসেবে নিলামে উঠেছিল যার দাম ছিল কয়েক কোটি টাকা। আফসোস সেটা বর্তমানে সুলতান জামসেদ ফারুকীর হাতে। উদ্দেশ্য কহিনুরকে হ*ত্যা করে ওর র*ক্ত দিয়ে পাথরের শক্তি ফিরিয়ে নিজেদের অভিশাপ মোচন করার। তাছাড়া পাথর তখন ওদের সব কথা শুনতে বাধ্য হবে। পৃর্বের শক্তি ফিরে পাবে। পাথরের খোঁজ ড্যাড বহুকাল আগেই করেছে কিন্তু পাইনি। তোমার দাদুর কাছে গিয়েছিলেন সেখানেও পাইনি। যখন পাথরের শক্তি ক্ষয় হয়ে গেলো ঠিক তখন তোমার বাবার সন্ধান পেলেন। পরে উনি টার্গেট নিলেন তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দিবেন। ভাই তোমাকে দেখিছিল সেতো তুমি জানো। আমি জানতাম না কিছু। বোকার মতো ড্যাম আর দাদুর কথা শুনে যা ইচ্ছা করেছি। তাছাড়া আমাকে বিশেষ একটা শরবত দেওয়া হতো যেটা আমার নেশার মতো ছিল। ওটা নিলে কখন কি করতাম কিছু মাথায় আসতো না। পুরোপুরি ড্যাডের হাতের পুতুল। তুমি জানো না মারিয়া কানে শুনতে পারে। কারণ ও টুইন না। ও কাঁদলে পানির না র*ক্ত ঝেরে। আমার বোন গুলো খারাপ না। বড় বোন আমার জন্য ভয় পাচ্ছে কেনো জানো? আমার ভাই আমাকে মা*রা*র সব পরিকল্পনা করে ফেলেছে। ভাই তোমাকে সেভ করতে চাইছে। কিন্তু দাদু আর ড্যাড চেয়েছে তোমাকে আর আমাদের সন্তানকে এখনি মা*র*তে। ওরা ভাবছে বাচ্চাতো বেশ বড় হয়ে গেছে। ওদের বাচ্চার ব্লা*ডের প্রয়োজন সেক্ষেত্রে বাচ্চা ছোট বা বড় মেটার করে না। ভাই চাই বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে জন্ম হলে তোমাকে বাঁ*চা*তে পারবে। তোমাকে ও খুব পছন্দ করে। যদি অসুবিধা না থাকতো তবে ও নিজেই তোমাকে বিয়ে করে নিতো আমার সঙ্গে জড়াতো না। এইযে আজ তোমার কক্ষে কিন্তু ও এমনি এমনি আসেনি। তোমাকে এখানে থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাইছে। তোমার হাতে সময় আছে শুধুমাত্র আজকের রাতটা। মা মা*রা যাওয়ার আগে তোমাকে দু’ লাইনের একটা ধাধা দিয়েছিল ওটার মানে হচ্ছে তুমি এই পি*শাচ পুরি থেকে শুধুমাত্র ভোররাতে বের হতে পারবে যখন ওদের শক্তি কমে আসে। “বধির বোবা বলবে বাক্য ঝরবে তখন লাল র*ক্ত “এটার মানে হচ্ছে কহিনুরের র*ক্ত যখন পাথরের উপরে পড়বে তখন পূণরায় ওর শক্তি ফিরবে তখন আর ওরা কথা বলতে পারবে।
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থামলো। অধরার বিস্ময় কাটছে না। জুবায়ের এতকিছু কিভাবে জানলো বুঝতে পারছে না। জিঞ্জাসা করলো,
> আপনি এতকিছু কিভাবে জানলেন? মায়ের কথা জানতেন?
জুবায়ের দুহাতে অধরার মুখটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কপালে ওষ্ঠাদ্বয় রেখে বলল,
> তোমার কি মনে হয় আমি কিছু বুঝতে পারবো না? প্রথম থেকেই জানি। মায়ের খু*নটা কে করছে জানো? আমার ভাই নিজ হাতে ছাদ থেকে ধা*ক্কা দিয়েছে। ওই যে খু*লি ছিল দেখেছিলে না ওটা মায়ের ছিল। মা আগে থেকেই বুঝেছিল বেশিদিন আর বাঁ*চ*তে পারবেন না। তাই তোমাকে পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি প্রথম দিনকেই বুঝেছিলাম তুমি কিছু লুকিয়ে রেখেছো। তাই ওটা দেখে নিয়েছি পরে। আমার মম সবটা আমাকে বলেছে। প্রথম থেকে সব।মম চায়নি আমার কিছু হোক। উনি আমাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। আমাকে দেখতে কিন্তু মমের মতোই বলো? আমার মেয়েটাও ঠিক বাবার মতো হবে। তুমি ওকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাও। আমার মেয়েকে নিয়ে ভালো থাকবে। নতুনভাবে জীবন শুরু করো। আমি তোমার অনেক ক্ষতি করেছি পারলে ক্ষমা করে দিও। বিশ্বাস ভেঙেছি আমার শাস্তি সামনে অপেক্ষা করছে। তোমাকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে পারলে নিশ্চিন্তে ম*র*তে পারবো কষ্ট থাকবে না। আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। খুব খুব মনে পড়বে তোমাকে। অল্প কয়েক মাসের পথচলা তোমার সঙ্গে খুব লোভ হচ্ছে তোমাকে কাছে রাখতে, ভালোবাসতে। কিন্তু আমি অপারগ। পারছিনা তোমাকে নিজের করে রাখতে। এখনে থাকলে তোমার পরিণতি ঠিক আমার মায়ের মতো হবে। না নিজের স্বামীকে পাবে না নিজের সন্তানকে পাবে। শুধু দুঃখ ছাড়া কিছু পাবে না।
জুবায়েরের চোখ থেকে পানি ঝরছে। অধরা ফুপিয়ে উঠলো। জুবায়েরেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলল,
> আপনি না গেলে আমি কোথাও যাবো না। যা ইচ্ছে হোক কিছু যায় আসে না। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। খুব খুব ভালোবাসি আপনাকে। আপনি না মানলেও আমি প্রথম থেকে আপনাকে মেনে নিয়েছিলাম। ভালোবেসেছি তাহলে কেনো এই দূরুত্ব? চলুন না আমরা পালিয়ে যায়? কি হবে দুজন এক সঙ্গে থাকলে? আমি কোনো বিচ্ছেদ চাইনি।
অধরা এলোমেলো ভাবে বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো। জুবায়েরের চোখে পানি তবে সেটা অধরাকে বুঝতে দিলো না। ওর সামনে আপাতত দুর্বল হতে চাইছে না। বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে আছে দুজন। ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছে যেকোনো মূহুর্তে ও এসে ঝামেলা করতে পারে। জুবায়ের মলিন হেসে বলল,
> সময় কম এখুনি চলো।যদি বেঁ*চে থাকি ইনশাআল্লাহ আমাদের দেখা হবে। আমি চেষ্টা করবো নিজেকে র*ক্ষা করতে। যদি কখনও দেখা না হয় তবুও ভেবো না আমি তোমার থেকে দূরে আছি। তুমি তো আমার তাইনা? প্লিজ আমার হয়ে থেকো। তোমাকে কারো সঙ্গে দেখার সাহস আমার নেই।
জুবায়ের একদম কথাগুলো বলে থামলো। পকেট থেকে একটা লকেট বের করে অধরার গলাতে পরিয়ে দিয়ে বলল,
> আমাকে মনে পড়লে এটা দেখবে। আমার খুব প্রিয় এই লকেট টা। ছোটবেলাতে মা আমাকে দিয়েছিল। মায়ের কাছে এসব কালেকশন থাকতো। এসব দামি দামি লকেট বা পাথর উনি বনেদি বাড়ির মেয়ে আর বনেদি বাড়ির বউ হওয়ার সুবাদে পেয়েছিলেন কি জানিনা। জন্মদিনের উপহার ছিল। আমি তোমাকে দিলাম। আরও একটা জিনিস আছে।
জুবায়েরের একটা মুকুট বের করে অধরার হাতে দিয়ে বলল,
> আমার রাজকন্যার জন্য রাজ মুকুট। তুমি ওকে দিয়ে দিবা।বলবা ওর বাবা ওকে খুব ভালোবাসে। খুব মিস করে। নিজের প্রা*ণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। ভাগ্য বিধাতা আমাদের সহায় নেই তাই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা নিয়ে এই রাতে তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে হচ্ছে। আশা রেখো দেখা হবে একদিন।
জুবায়েরের কন্ঠ ধরে আসছে। চোখের পানি টপটপ করে অধরার মাথার উপরে গিয়ে পড়লো। মেয়েটা কথা বলছে না কিন্তু সমানে ফুপিয়ে যাচ্ছে। ছয় মাসের বাচ্চাটা পেটে নিয়ে কোথায় থাকবে কিভাবে দিন কাঁটবে এসব ওকে কষ্ট দিচ্ছে না। শুধুমাত্র জুবায়েরের জন্য কষ্ট হচ্ছে। লোকটাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবে মাথা কাজ করছে না। জীবন এতো নিষ্ঠুর কেনো। ভাগ্যের উপরে খুব করে দোষারোপ করতে মন চাইছে। চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে। অধরা জুবায়েরকে আকড়ে ধরে আছে। দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হয়েছে। ভোররাত হয়ে এসেছে। এখুনি বের হতে হবে। নয়তো পৌচ্ছাতে পারবে না। কথাটা ভেবে জুবায়েরের ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। অধরার মুখটা মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
> চলো বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছে। আমি যেতে পারবো না তবে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। আমার লোক তোমাকে পৌঁছে দিবে। তুমি কোন দেশের উদ্দেশ্যে ফ্লাই করছো এটা আমি ছাড়া কেউ কখনও জানবে না। হয়তো এটাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। আর কাঁদবে না। তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়। ব্লাক কালার তোমার জন্য নিষিদ্ধ করলাম। এটা কখনও পরবে না। ভয়ানক সুন্দর লাগে তোমাকে। লোকের নজর লেগে যাবে। আমি খুব হিংসুটে স্বামী তাই বউয়ের সৌন্দর্য শুধুমাত্র আমি অবলোকন করবো আর কেউ না।
অধরা শব্দ করে কেঁদে উঠে বলল,
> আমি যাবো না। প্লিজ কোথাও যাবো না। এমন করবেন না। একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
জুবায়ের ওকে আবারও নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
> এই বিচ্ছেদ টা শুধুমাত্র আমাদের জন্য না। বাবা মা সন্তানের জন্য কতকিছু ত্যাগ করেন। আমরা না হয় এইটুকু করলাম। আমার মেয়েটাকে তুমি বাঁ*চ*তে দাও প্লিজ। অনুরোধ করছি। ওকে বাঁ*চা*তে এইটুকু যন্ত্রণা সহ্য করো। আল্লাহ্ চাইলে একদিন এর চেয়েও সুখ তোমার দুয়ারে এসে হাজির হবে।
জুবায়ের দ্রুত ওকে ছেড়ে দিয়ে ড্রয়ার থেকে অধরার ব্যাগটা বের করে অধরার হাতের কব্জি ধরে কঠিন স্বরে বলল,
>চলার পথে পেছন ফিরতে নেই হোচট খাবে। একদম ভেঙে পড়বে না। মন শক্ত করো। বাঘিনীকে এভাবে ভেঙে পড়তে নেই। চলো।
অধরা হাটতে পারছিল না। ওর পা চলছে না। জুবায়েরের কাজকর্ম ওর মাথায় আসছে না। ফাকা ফাকা লাগছে। জুবায়ের ওকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গেলো। সামনের দরজা দিয়ে না গিয়ে বারান্দা ধরে পেছনের গেট দিয়ে ওকে বের করলো। বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ের শেষবারের মতো অধরাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে গাড়িতে একপ্রকার ঠেলে উঠিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করলো। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ছেড়ে দিলো। যতক্ষণ দেখা গেলো ও এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকলো। ঘন্টা খানিকের মধ্যে হয়তো মেয়েটা নিদিষ্ট জায়গাতে পৌঁছে যাবে। ফজরের আযান হচ্ছে। নতুন সূর্য নতুন দিনের সূচনা করবে। সব রহস্য প্রকাশ পেয়েছে কিন্তু সমাধান মেলেনি। কহিনুর পৃথিবীতে ধ্বংস নিয়ে আসবে কি শান্তি নিয়ে আসবে কেউ জানেনা। যার কথা ভেবে অধরা জুবায়েরের বিচ্ছেদ হলো সে কেমন হবে? সুলতান বংশের অভি*শাপ নিয়ে বোবা বধির নাকি সব অভি*শাপ মুছে দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে পৃথিবীতে আসবে? এখানে সবকিছু নিয়তির হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। জুবায়েরের বুঝে নিয়েছে এই বিশাল শক্তির কাছে ও বা অধরা অতি তুচ্ছ মানব মাববি মাত্র। পালিয়ে যাওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। কথাগুলো ভেবে জুবায়ের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। ভেতরে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে এটা ভেবে মোটেও ঘাবড়ে গেলো না। বরং হাসলো। কিছু মৃ*ত্যু সুখের হয়।
সমাপ্ত
story shundor but ending a ki teke holo,naki aro kicu hobe kichui toh bujlam na.!!!!
Nice…porer sezon ta taratari diyen