কহিনুর পর্ব-১৩+১৪

0
915

#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৩+১৪

সময় চলে যায় কিন্তু হৃদয়ে আঘাতের চিহ্ন গুলো রয়ে যায়। কখনও তা ভোলা যায় না। কথায় বলে বাক‍্য দ্বারা মানুষকে জান্ত দাফন করা যায় কথাটা একদম সত্য। জুবায়েরের ক্ষত জায়গাই ওষুধ লাগাতে গিয়ে ওর পূর্বের করা ব‍্যবহারগুলো বারবার মনে পড়েছে অধরার। লোকটা কারণ অকারণে ওকে আঘাত করেছে। চোখের পানি ঝরিয়েছে। ক্ষমা মহৎ গুণ তবুও হৃদয় কথা শুনছে না। অধরার এখন কাঁদতে মন চাইছে। পরিস্থিতি কখন কিভাবে বদলে গেলো বুঝতে পারেনি। জুবায়েরকে ও ক্ষমা করুক বা না করুক লোকটাকে রক্ষা করা ওর কর্তব্য। যেকোন সময় ওর জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। কিভাবে ওকে সেভ করা যায় মাথায় আসছে না। বাবা হয়ে নিজের সন্তানের ক্ষতি করতে লোকটার বিবেকে বাঁধছে না। কথাগুলো আনমনে ভেবে চলেছে অধরা। জুবায়েরের যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে আছে। ওষুধ লাগানো শেষে অধরা জুবায়েরের পাশে বসতে বসতে বলল,
> জ্বর আসতে পারে ওষুধ খাওয়া জরুরী। স্টোর রুমে আজ না গেলে হয়না? আপনার শরীরের যে অবস্থা কিছুক্ষণ পরে বিছানা নিবেন।
জুবায়ের অধরার মুখের সামনে আসা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলল,
> আমি ঠিক আছি চিন্তা করো না। এইটুকুতে আমার কিছু হবে না। স্টোর রুমের চাবি চুরি করেছি বিষয়টা ধরা পড়ার আগে চেক করে নিতে হবে। আগামীকাল থেকে তুমি দাদুর আশেপাশে ঘুরবে। ভাব জমানোর চেষ্টা করবে।
> আমিও ভেবেছিলাম। তবে লোকটা খুব চতুর সহজে কিছু বলবে বলে মনে হয়না।
> আরে বলবে বলবে,পেটে মাল পানি পড়লে সব বলবে।তুমি এতো ভেবো নাতো। না বললে এমন জিনিস খাওয়াবো না হজম হয়ে যাওয়া বহুকাল আগের খাদ্য পযর্ন্ত বেরিয়ে আসবে।
অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল জুবায়েরের কথা শুনে। কথাবার্তার কি হাল। ওকে অপমান করে সেদিন দু’টাকার মেয়ে বলেছিল অথচ নিজের কথাবার্তা একদম জাত মাতালদের মতো। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> মুরব্বি মানুষের সঙ্গে একদম আজেবাজে কিছু করার চেষ্টাও করবেন না। বেয়ার টেয়ারে কাজ নেই। বন্ধুত্ব করবো। আপনার মাথায় সত্যিই কিছু নেই।

জুবায়ের নিভে যাওয়া মন নিয়ে বলল,
> আমার ধৈর্য্য কম। হুটহাট কাজকর্ম করে অভ‍্যাস। তাছাড়া আমি কিন্তু ভালো বুদ্ধি দিয়েছি। বন্ধুত্ব করে সময় কষ্ট করা হবে। তারচেয়ে এক প‍্যাক সুন্দর মতো পেটে চালান করিয়ে দিবো তখন দেখবে গড়গড় করে সব বেরিয়ে আসছে। শুনো আমি তোমার বয়সে অনেক বড় বুদ্ধিও বেশি আমার উপরে কথা বলবে না।
অধরা চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো। দিনদিন লোকটার বুদ্ধি কমছে নাকি প্রথম থেকেই একরকম কে জানে। আগে ভাবতো জুবায়ের লোকটা খুব বুদ্ধিমান আর গম্ভীর টাইপের কিন্তু না এতো পুরোপুরি তার ছেড়া। অধরা কিছু বলতে চাইলো কিন্তু হলো না তাঁর আগেই আয়াত ভেতরে প্রবেশ করলো। ছেলেটা চোখেমুখে লজ্জা। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছে হয়তো। অধরা বিছানা থেকে নেমে গিয়ে ওকে বসতে দিয়ে বলল,

> ভাই তোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে? সরি ভাই আমি ক্লান্ত ছিলাম তোর খোঁজ নিতে পারিনি। খুব সরি রে।

আয়াত লাজুক হাসলো। ব‍‍্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,
> না না আপু আমি ঠিক আছি। তোমার শশুর বাড়ির লোকজনগুলো সত্যিই চমৎকার। আমি তো সেদিন না জেনেই আজেবাজে কথা বলেছিলাম। জুবায়ের ভাইয়ার কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। রাগের মাথায় সেদিন অনেক খারাপ আচরণ করেছি। আমি সত্যি লজ্জিত।
জুবায়ের বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
> কিছু মনে করিনি এটা স্বাভাবিক ছিল।

কয়েকটা কথা বলে আয়াত বিদায় নিলো। জুবায়ের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেলো। অধরা ওর পাশে বসে আছে। মনের মধ্যে হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। জুবায়েরের উপরে পরপর দুবার হামলা হয়েছে। কতদিন এভাবে বাঁচতে পারবে? একটা সাধারণ ডাইরি করা উচিত ছিল। অধরা দ্রুত উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। ঘরে বসে থেকে কাজ নেই। কিচেনে নিশ্চয়ই রান্না চলছে। অধরা সিদ্ধান্ত নিলো এবার থেকে রান্নাঘর কব্জা করতে হবে। রান্নাঘরে ঢুকতে পারলে বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা বলার সুযোগ পাবে। কিছু না কিছু তো তখন জানতে পারবে। তাছাড়া আরও একটা ঝামেলা আছে। জুবায়েরকে এই বাড়ির কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না। ওকে অধরা নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে।না পারলে বাইরে থেকে অর্ডার করবে। জুবায়েরের আচরণ পরিবর্তন হওয়ার পিছনে খাবারের ভেতরে ওষুধ মেশানো থাকতে পারে। শুধু সন্দেহর বসে কিছু করা উচিত না তবুও অধরা ফেলে দিতে পারছে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও ডাইনিং রুমে এসে থামলো। রান্নাঘরে ফুপি শাশুড়ি কাজের মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে রান্না করছে। অধরাকে দেখে মারিয়া এগিয়ে আসলো। ওর সঙ্গে আছে জুবায়েরের ফুপি লতিফা ফারুকীর মেয়েটা। অধরা মেয়েটার নাম জানেনা। মারিয়া ওকে ইশারা করে বসতে বললো। অধরা ওষ্ঠে হাসি নিয়ে বলল,
> আসলে মারিয়া তোমার ভাইয়ার একটূ জ্বর এসেছে। আমার হাতে তৈরী সুপ খেতে চেয়ছে। আমি ওর জন্য সুপ তৈরী করতে এসেছি। তুমি বসো আমি পরে আসছি।
অধরা মোটামুটি মিথ্যে বলে দিয়ে কেটে পড়লো। ডাইনিং রুমের শব্দ কিচেন পযর্ন্ত অনায়াসে যায়। অধরাকে দেখে লতিফা ফারুকী ব‍্যস্ত হলেন। দুঃখজনক বিষয় উনিও কথা বলতে পারেন না। অধরা উনার আকার ইঙ্গিত দেখেই বুঝে গেলো এই বাড়ির মেয়েরা সব বোবা কিন্তু ছেলেরা সবাই কথা বলতে জানে। কি অদ্ভুত মেয়েদের কথা বলার শক্তি নেই কিন্তু কেনো? শাশুড়ি মায়েরা পরের বাড়ির মেয়ে বলে তাঁরা বলতে পারে। অভিশাপ টা হচ্ছে সুলতান পরিবারের উপরে। যেটা কাটাতে এরা কহিনুরের গল্প ফেদেছে। কিন্তু জুবায়েরেকে মারার পিছনে কি থাকতে পারে? মাথা কাজ করছে না। প্রশ্নের পর প্রশ্ন এসে ভর করছে মাথায়। অধরা কোনরকম নিজেকে স্বাভাবিক করে মলিন হাসলো। হাসিটা বড্ড বেশি দরকার। সহজে ভড়কে গেলে বিপদ ঝপাং করে ঘাড় মটকে ধরবে। স্বাভাবিক থেকে কাজ করতে হবে। অধরা কাজের মেয়েটার সামনে বলল,
> ফুপিকে বল‍ে দিবেন আমি জুবায়েরের জন্য রান্না করতে চাই। ওর জ্বর এসেছে।
মেয়েটা লতিফাকে বুঝিয়ে দিলো। ভদ্রমহিলা বিনিময়ে হাসলো। দরকারী জিনিসপত্র সব ওর সামনে এগিয়ে দিলো। অধরা সময় নষ্ট করলো না। দ্রুত রান্না বসিয়ে দিলো। কাজের মেয়েটা ওকে সাহায্য করছে। অধরা বারবার ফুপিকে দেখছে। ভদ্রমহিলা এক ভাবে ওকে দেখছে কেমন অস্বস্তিকর বিষয়। ওকে এভাবে দেখার কি হলো বুঝতে পারছে না। অধরা দ্রুত চিকেন সুপ করে নিয়ে চলে আসলো। দাদু কোথায় আছে দেখার জন্য আশেপাশের তাকালো, ভদ্রলোক কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে কে জানে। অধরা রুমে আসতেই জুবায়ের চোখ খুলে তাঁকালো। ওর হাতে খাবার দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। অধরা সেসব পাত্তা দিলো না। একেবারে জুবায়েরের সামনে গিয়ে বসে পড়লো। জুবায়ের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল,
> তুমি কেনো খাবার আনতে গেলে! আমি যেতাম, তাছাড়া এটা তুমি কি এনেছো? এতবড় হাতির মতো যুবকের জন্য এইটুকু সুপ?এতো পেটের কোনে পড়ে থাকবে।
অধরা বিরক্ত হলো। যথেষ্ট পরিমাণ খাবার এনেছে তবুও পেটুক লোকটা আরও খাওয়ার বায়না করছে। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> ঢং করবেন না চুপচাপ খাবেন। আজ থেকে আমি যা খেতে দিবো তাই খাবেন। অন‍্য কারো হাতে খাওয়া চলবে না। দ্রুত শেষ করুণ। ওষুধ খেতে হবে। শরীর ঠিকঠাক না হলে স্টোর রুমে আবারও জ্ঞান হারাবেন তখন ঝামেলা।
জুবায়ের মিনমিন করে বলল,
> নিজের হাতেই খেতে হবে নাকি?
> তো আপনাকে হাত ধার দিবে কে? নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে না করলে লোক রাখুন। জুবায়ের ফারুকী আপনাদের বাড়ির মেয়েরা বোবা বিষয়টা কেমন রহস্যজনক না? কারণ জানতে পারলেই রহস্যের অর্ধেক বুঝে যাবো।
জুবায়ের খেতে খেতে বলল,
> বংশগতির ধারা বলতে পারো। আমাদের বংশের মেয়রা কথা বলতে পারেনা। তাপপর আরও একটা বিষয় তুমি জানো না। লতিফা ফুপির জামাইটা কিন্তু স্বাভাবিক না। বছরে একবার এখানে আসেন সাতদিন থাকেন তারপর কোথায় যে গায়েব হয়ে যায় জানিনা। বাড়ির কেউ কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তিত না। ভদ্রলোকের চেহারার কোনো পরিবর্তন নেই। ছোট থেকেই যেমন দেখি বড় হয়েও তেমনি।
> কথা বলেছেন উনার সঙ্গে? নাম কি উনার? বাসা কোথায়?
> এক সঙ্গে এতো প্রশ্ন? আঙ্কেল বেশ গম্ভীর টাইপের, কথাবার্তা বিশেষ হয়নি টুকটাক আলাপ হয়েছে। উনার নাম সুলাইমান হক। দেখবে কয়েকদিনের মধ্যে আসবে। উনার আসার সময় হয়ে গেছে। ভদ্রলোকের বাসা কোথায় জানিনা। কেউ বলেনি আর আমারও আগ্রহ নেই।
> আপনাদের বাড়ির সবাই একটু এলিয়েন টাইপের। বাবা কেনো যে এই ঘরে আমার বিয়ে দিলেন এখন আফসোস করতে হচ্ছে। না পেলাম ভালো বর না পলাম ভালো ঘর। আমি পরের বার এমন ভূল করবো না বুঝলেন? দেখেশুনে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করবো।
অধরার কথা শুনে জুবায়েরের রাগ হলো। হাতের চামুচটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বাটিতে চুমুক দিয়ে সুপের বাটি খালি করে বলল,
> ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসো। বিয়ে বিয়ে করো কেনো? একবারে সখ মিটেনি? যেটুকু খায়েশ আছে আমি পুরণ করে দিবো ইনশাআল্লাহ। দ্রুত চলো।
জুবায়ের তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে পড়লো। ঘরে বেশ সময় পার করে ফেলেছে। বাইরে এতক্ষণে খাওয়া দাও শেষ করে যে যার রুমে নয়তো পার্টির উদ্দেশে বেরিয়ে গেছে। সুযোগ বারবার আসবে না। জুবায়ের অধরার হাতে ধরে কক্ষ ত‍্যাগ করলো। স্টোর রুমটা বাড়ির গোপনীয় জায়গাই। অধরা জুবায়েরের পেছনে পেছনে হাটছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িটা কেমন ভুতুড়ে হয়ে উঠেছে। স্টোর রুম সিঁড়ি রুমের নিচে অবস্থিত। হঠাৎ করে কেউ বুঝতে পারবে না সিঁড়ির নিচে কোনো রুম আছে। বাইরে থেকে দেখে চেনা বা বোঝা বেশ কঠিন। জবাব ওকে নিয়ে দেয়ালে থাকা সামান্য ছিদ্রে চাবি লাগিয়ে দরজা খুঁলে ফেলল। রঙ দিয়ে সব এক রকম করে রাখা হয়েছে। অধরা অবাক নয়নে জুবায়েরের পেছনে পেছনে ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিশালাকার রুমটা বিভিন্ন পুরাতন আসবাবপত্র দিয়ে বোঝাই করা। ধুলাবালি পূর্ণ আলমারির ভেতরে কিছু কাগজপত্র পেলো। ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। জুবায়ের সেসব চেক করছে। অধরা সামনে এগিয়ে গিয়ে হালকা চিৎকার করে উঠলো। জুবায়ের দ্রুত এসে ওর মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
> আরে চিৎকার করছো কেনো?
অধরা উত্তর দিলো না। আঙ্গুল উচু করে সামনে ইশারা করলো। জুবায়ের সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে ঝটিকা খেলো। সামনে একটা মাথার খু*লি পড়ে আছে। খুঁ*লিটা একদম টাটকা। ফোঁটা ফোঁটা র*ক্ত লেগে আছে তাঁতে। অধরা ধরা গলাই বলল,
> এরকম একটা দৃশ্য মায়ের রুমে দেখেছিলাম। জুবায়ের খোঁজ নিন নিকটবর্তী কেউ মা*রা গেছে কিনা। চলুন খু*লিটা উঠিয়ে নিয়ে যায়। ডিএনএ টেস্ট করলে খু*লির মালিককে সন্ধান পাওয়া যাবে।
> একদম না। এটা কি কাজে ব‍্যবহিত হয়েছে না জেনে ঘরে নিলে যদি উল্টোপাল্টা কিছু হয়? কাজটা ঠিক হবে না। একটা ছবি তুলে নিয়ে যেতে পারি।
অধরা কাঁপছে। এই বাড়িতে যা হচ্ছে সেম ওই বাড়িতেও হয়েছিল। হঠাৎ একটা ছায়া আলমারির পেছনে সরতে দেখে অধরা জুবায়েরের হাতটা ধরে ফেলল। বলল,
> আজ চলুন পরে আবার আসবো। আমাদের কেউ ফলো করছে।
জুবায়ের ছায়াটা দেখেছে। ওরা আর সময় নষ্ট করলো না। দ্রুত বেরিয়ে আসলো। রহস্য জানা তো গেলোই না উল্টোপাল্টা দৃশ্য দেখে হয়রানি।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
জুবায়ের হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট। আসার সময় যতটা আগ্রহ নিয়ে এসেছিল যাওয়ার সময় ততটাই কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। কঠিন এক সত্যি ওর সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। হাউমাউ করে কান্না করতে মন চাইছে কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো আর হয়না। এমন কেনো হলো কার জন্য হলো কিছুই মাথায় আসছে না। এতদিনের বিশ্বাস ভরসা ভালোবাসা সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো চোখের নিমিষে। ওর চোখদু’টো জ্বলে উঠলো। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো। বাড়িতে পৌছাতে মিনিট দশেক টাইম লাগলো। অধরা বিছানায় হেলান দিয়ে তখন বই পড়ছিল। জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। অধরা দরজা বন্ধের শব্দ শুনে চমকে উঠলো। ছেলেটার চোখে আগুন। কিছু বুঝে উঠার আগেই ও অধরার গলা চেপে ধরে বলল,
> সব আগে জানতে তাইনা? আমাকে কষ্ট দিতে তোমার মজা লাগে? আমি ম*রে গেলে শান্তি তো? তবে আমি ম*রেই যায়।
অধরা জোরকরে নিজের ছাড়িয়ে নিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
> আজেবাজে বকছেন কেনো? কি হয়েছে না বলে গলা টিপে দিলেন। ম*রে আপনি না আমি যেতাম।
জুবায়ের থম মেরে বসে থেকে হুট করে অধরাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলল,
> তুমি জানতে বলো আরমান ফারুকী আমার কেউ হয়না? ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার ডিএনএ মিলেনি কেন?
অধরা জুবায়েরের পিটে হাত রেখে ওকে সামনে টেনে নিয়ে বিস্মিত হলো। ছেলেটার চোখ লাল হয়ে উঠেছে। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। বোকার মতো বলল,
> উনি তোমার বাবা না?
(চলবে )

#কহিনুর
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৪

কিছু সত্য মেনে নিতে কষ্ট হয় তবুও মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। চোখের পানির সঙ্গে ভাসিয়ে দিতে হয় দুঃখগুলোকে। কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা মানতে পারলেও তাঁকে ক্ষমা করা যায় না। জুবায়ের হঠাৎ থমকে গেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। এতকাল যাকে বাবা মা বলে এসেছে হঠাৎ বুঝতে পারলো সব মিথ্যা। মানতে পারছে না।অধরা ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। নিরবতা কাটিয়ে অধরা মুখ খুঁলল। ভয়ে ভয়ে বলল,
> মাথা ঠান্ডা করুণ। আমিও অনাথ বাবা মা নেই। পৃথিবীতে আপনজন বলতে আপনি আর আমাদের বাচ্চাটা ছাড়া কেউ নেই। আমরা নতুন করে আমাদের পরিবার সাজাবো। পারবেন না আমাদের সঙ্গে চলতে?
জুবায়ের বহুকষ্টে বলল,
> খুব পারবো। সরি অনেক। আর মারবো না।তুমি জানো উনার সঙ্গে আমার ডিএনএ মিলেনি কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে মিলেছে। ভাইয়ের ব্লাডে কোনো অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। ও সুস্থ আছে। জানিনা সূর্যের আলোতে ওর কি সমস্যা। ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়েছে।
অধরা জুবায়েরের হাত দুটো নিজের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,
> আপনাদের পরিবারিক উকিলের সঙ্গে কথা বলুন। সম্পত্তির উত্তরাধিকার কার নামে চেক করে ফেলুন। যা করবেন গোপনে। আমার বিশ্বাস এগুলো সব আপনার নামে। আর আরমান ফারুকী আপনার ছোট চাচা। আপনি উনার বড় ভাইয়ের ছেলে। দ্রুত ব‍‍্যাবস্থা নিন। আপনার নামে যদি কোনো সম্পদ থাকে তবে নতুন করে দলিল করুন। লিখে ফেলুন আপনার কিছু হলে সব অর্থসম্পদ মসজিদ বা সরকারি খাতে চলে যাবে।
জুবায়েরের উত্তর দিলো না। শুয়ে পড়লো। কিছু একটা ভেবে অধরাকে কাছে টেনে নিয়ে ওর গালাতে মুখ ঢুবিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,
> ঘুমাও চিন্তা করো না। আমার কিছু হবে না। যতক্ষণ বেঁচে আছি তোমাদের খেয়াল রাখবো ইনশাআল্লাহ। বাচ্চাটা যেনো আমার মায়ের মতো হয় দোয়া করবে একটু? চোখের সামনে ছিল তাই গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। কেনো এমন হলো বলতে পারো?

অধরা কি বলবে বুঝতে পারলো না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করলো। বাবা মায়ের কথাগুলো আবারও মনে পড়ছে। বছর খানিক আগেও সব ঠিক ছিল। এতো ত‍্যাগ বিসর্জন সব কহিনুরের জন্য। মেয়েটা শুভ নাকি অশুভ কিছুই ওদের জানা নেই। কহিনুরের রহস্য কিভাবে জানতে পারবে মাথায় আসছে না। দাদুর রুমটা যদি একবার চেক করা যেতো ভালো হতো। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে বিছানায় একা পেলো জুবায়ের নেই। অধরা দ্রুত উঠে বসলো। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে ঠিক নেই। জুবায়ের ওকে না বলে বাইরে গেছে ভেবে টেনশন হচ্ছে। অধরা ফ্রেস হয়ে বাইরে যেতে গেলো তখনই জুবায়ের খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির হলো। মুখে হাসির ঝিলিক। মন খারাপের কোনো চিহ্ন নেই। অধরা বেশ অবাক হলো ওর ব‍্যবহার দেখে। কৌতূহল চাপিয়ে রেখে বলল,
> কোথায় ছিলেন? টেনশন করছি।
জুবায়ের ওকে হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর সামনে খাবার নিয়ে বসে পড়লো। প্লেটে খাবার নিয়ে বলল,
> চিন্তা করে ঠিকঠাক খাওয়া হচ্ছে না। বেবীর পুষ্টির দরকার আছে। চুপচাপ খেয়ে আমার উদ্ধার করো। তোমার শশুর মশাইকে জব্দ করার হাতিয়ার পেয়ে গেছি। বিষয়টা যে আমরা জেনে গেছি আরমান ফারুকীকে বুঝতে দিলে চলবে না।
অধরা বিস্মিত হয়ে বলল,

> কি করতে চাইছেন আপনি? শুনুন ভুলভাল কাজের জন্য আপনি আগে থেকেই ফেমাস হয়ে আছেন। নতুন করে নিজের বুদ্ধিতে দুমদাম কিছু করার চেষ্টা করবেন না। আমাকে বলুন সাহায্য করবো।
> তুমি জানো এই সম্পত্তি আমার বাবা সুলতান জাফর ফারুকীর নামে ছিলো। জানিনা কি কারণে উনি সবটা আমার নামে করে দিয়েছিলেন। আমাদের পুরাতন উকিলের সঙ্গে কথা হয়েছে। লোকটা প্রথমে বলতে চাইনি পরে বাধ্য হয়ে বলেছে। আমি লোক দিয়ে উনার ছেলেকে উঠিয়ে এনেছিলাম। সামান্য এইটুকু কাজ, আমি এখানে বসে আধা ঘন্টার মধ্যে শেষ করেছি।
জুবায়ের ভাব নিয়ে কথাগুলো বললো। অধার চোখ কপালে। এই লোকটা যে সরলভাবে কিছুই ভাবতে জানেনা। কি দরকার ছিল কিডন‍্যাপ করার। ঝামেলার শেষ নেই। অধরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> ছেড়ে দিয়েছেন তো? সামান্য কাজের জন্য কিডন‍্যাপ করে ফেললেন? বাচ্চা ছেলেটার যদি কিছু হয়ে যেতো?
> দূর বাচ্চা কোথায় পেলে? দেখো লুকিয়ে চুরিয়ে কয়টা বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে তার ঠিক নেই। ভীষণ দুষ্ট। যাইহোক ছেড়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম তুমি ঘুম থেকে উঠার আগেই কাজটা শেষ করবো। তথ্য জেনেছি এখন আইনি নোটিশ পাঠাবো।আরমান ফারুকী ঝটকা খাবে কেমন বলো?

> আপনার মাথা । একদম ফালতু বুদ্ধি। আপনার কিছু হয়ে গেলে আপনার ভাই এসে সব দখল করবে। এসব বাদ দিয়ে অন‍্য কিছু ভাবুন।

> আচ্ছা আমার নামের সব কিছু আমি যদি আমার স্ত্রী সন্তানের নামে করিয়ে দেয় তাহলে?
অধরা বিরক্ত হলো, ভ্রু কুচকে বলল,
> আপনার বিপদটা আমার বাচ্চার ঘাড়ে স্থানান্তরিত করতে চাইছেন এসব হবে না।
> আরে বাবা কথা তো শেষ করতে দাও। আমি এখানে উল্লেখ করবো যতদিন আমার বাচ্চার বয়স আঠারো হবে না ততদিন এর দ্বায়ীত্ব আমার স্ত্রীর উপরে থাকবে। তারপর মেয়ের বয়স হলে ও নিজেই নিজের সবটা বুঝে নিবে। তাছাড়া আমার তো আর একটা মেয়ে হবে না। আরও হবে আমি উল্লেখ করবো আমার যতগুলো বেবী হবে সবগুলো সমানুপাতিক সম্পত্তির মালিক হবে।
অধরা চরম বিরক্ত জুবায়েরের উপরে। লোকটা মহা ফাজিল। একটা মেয়ের যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাচ্ছে আবার আরও চাইছে। অধরা থমথমে মুখ নিয়ে বলল,
> সবটা আপনি কহিনুরের নামে করে দিন। ঝামেলা মিটে যাবে। মেয়ে যতদিন পযর্ন্ত বিয়ের উপযুক্ত না হবে ততদিন পযর্ন্ত ওটা আপনি দেখাশোনা করবেন। আর যদি কোনো কারণে কহিনুরের কিছু হয়ে যায় তবে এটা সরকারি ফান্ডে চলে যাবে। একটা শব্দও আর উচ্চারণ করবেন না। বহুত বাজে কথা বলেছেন আর না।
জুবায়ের মুখটা করুন করে পকেট থেকে ফোনটা বের করে উকিলের কাছে ফোন দিয়ে সবটা বুঝিয়ে বলে দিলো। দ্রুত দলিত তৈরি করতে হবে। অধরার ওষ্ঠে হাসি ফুঁটে উঠলো। আরমান ফারুকীর বদ বুদ্ধি গুলোকে ছুটিয়ে দিবে। প্রতারণা খু*ন সব কিছুর জন্য কঠিন শাস্তির ব‍্যবস্থা করবে। হঠাৎ বাইরে থেকে শব্দ শুনে ওর ধ‍্যান ভাঙলো। বাইরে কিছু একটা নিয়ে চেচামেচি হচ্ছে। অধরা খাবার শেষ করতে পারলো না। উঠে আসতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের দিলো না। ওকে বসিয়ে দিয়ে ও নিজের বেরিয়ে আসলো। গতদুদিন ধরে বাড়ির দক্ষিণ সাইডে অবস্থিত এক প্রতিবেশির কাজের মেয়েটা নিখোঁজ আছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। জুবায়ের বিষয়টা জেনে রুমে এসে অধরাকে বলে দিলো। অধরার কেনো জানি সন্দেহ হচ্ছে। রাতেই ভেবেছিল কেউ নিখোঁজ থাকবে আর তাঁই হলো। এই বাড়ির কেউ কালো যাদুর সঙ্গে যুক্ত আছে। বাবার ডাইরিতে লেখা ছিল কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। তার মানে পরিস্কার এই বাড়ির ঐশ্বর্যের পেছনে মেয়েদের মুখের ভাষাটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনটা হতেই পারে কিন্তু কে এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত? আরমান ফারুকী নাকি উনার বাবা? অধরার মাথাটা দপদপ করে যন্ত্রণা হচ্ছে। জানালা খোঁলা ছিল বেশ ঠান্ডা বাসাত আসছে। জুবায়ের সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ বাইরের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো,
> অধরা সেই লোকটা!
অধরা চমকে উঠে বিছানা থেকে নেমে আসলো। গতকাল সন্ধ্যায় কাচা মাং*স খেয়েছিল সেই লোকটা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ের ওকে ছেড়ে বাইরে যেতে চাইলো কিন্তু অধরা দিলো না। ওর হাতটা খপ করে ধরে বলল,
> উনার সঙ্গে আমি কথা বলবো আপনি চুপচাপ শুনবেন। হাঙ্গামা করে সত্যি জানা মুশকিল হবে। আমি কথা বলবো আপনি শুনবেন। চলুন বারান্দা দিয়ে পেছনের গেট দিয়ে বাইরে যায়। আপাতত কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।
জুবায়ের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ওর হাতটা ধরে বেরিয়ে আসলো। ডাইনিং রুমে ছোটখাট একটা আড্ডা বসেছে। ফুপির মেয়েগুলো কথা বলতে জানেনা কিন্তু আসর জামাতে উস্তাদ। ইশারা করছে সেটা কাজের মেয়েটা অনুবাদ করছে। অধরা এক নজর সেদিকে দেখে নিলো। দাদু আড্ডার মাঝে বসে আছে। আহা এখনই যদি দাদুর ঘরটা চেক করতে পরতো। অধরার ভাবনার চিরচ্ছেদ হলো সেই লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে। লোকটা ওদেরকে মনে হচ্ছে প্রথমবার দেখেছে। বিস্মিত হচ্ছে আর সরল করে হাসছে। অধরা ভনিতা ছাড়া বলে উঠলো,
> গতকাল সন্ধ্যায় জঙ্গলে কেনো গিয়েছিলেন? কি খেয়েছিলেন উত্তর দিন?
লোকটা ভয় পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> কি বলছেন ম‍্যাম আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি গতকাল বিকেলে চলে গিয়েছিলাম এসেছি সকালে। আপনি ভূল দেখেছেন বোধহয়।
জুবায়ের জ্বলে উঠলো। মুঠো শক্ত করে লোকটার মুখ বরাবর আঘাত করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে নিলো। হাত উঠানোর আগেই অধরা ওর পাঁচ আঙ্গুলের মধ্যে নিজের আঙুল চালান করে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> আমি কথা বলছি তো। চুপচাপ দেখুন।
> মিথ্যা বলছে কেনো? থাপ্পড় দিলে বাপ বাপ করে সব বলে দিবে। হাত ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দেখো।
> আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। চুপ থাকতে বলেছিনা?
জুবায়ের নিভে গেলো। যতবার জ্বলে উঠে অধরা ততবার ওকে নিভিয়ে ছাড়ে। এই জন্য উকিলের বিষয়টা নিজের বুদ্ধিতে করেছে তাও অধরার অনুপস্থিতিতে। বেশ করেছে কাজটা। আধর ওকে এক পলক দেখে নিয়ে সামানের লোকটাকে বলল,
> সমস্যা নেই আসলে দূর থেকে ভালো দেখতে পারিনি। মনের ভূল ছিল তাই আপনাকে বিরক্ত করেছি। আপনি এবার আসুন।
লোকটা মনে হলো হাপ ছেড়ে বাঁচলো।দ্রুত চলে গেলো।অধরা সেদিকে তাঁকিয়ে আছে। জুবায়ের বিস্মিত হয়ে বলল,
> ছেড়ে দিলে? ওরে তো আমি দেখছি। এমন পিটাবো না সারা জীবনের জন্য মিথ্যা ভূলে যাবে। ওর জন্য আমি অজ্ঞান ছিলাম। বউয়ের খোঁটা শুনেছি।

অধরা ওর কথার পাত্তা দিলো না। চাপা কন্ঠে বলল,

> ওই নর খাদকটা স্বাভাবিক মানুষ কিছুতেই ছিল না। আপনি কি জানেন এই বাড়িতে নর বলি হয়? অসংখ্য নরখাদক আপনাদের বাড়িতে বসবাস করছে এটা কি মানেন? জুবায়ের আয়াতকে বাড়ি পাঠানোর ব‍্যবস্থা করুন,সেটা এখুনি। দ্রুত করবেন।

জুবায়েরের কপালে চিন্তার রেখা। বুঝতে পারলো না ওর কথাগুলো। দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। কি সাংঘাতিক কথাবার্তা বলছে মেয়েটা। ও কোনরকম নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
> কি বলছো তোমার মাথা ঠিক আছে?
> একদম ঠিক আছে। আপনাদের বাড়ির কেউ একজন কালো যাদু বা শয়তানের উপাসনা করে। গতকাল যে খু*লিটা দেখেছিলাম ওটা পাশের বাড়ির ওই মেয়েটার। খু*লি নিয়ে লা*শটা এই নরখাদকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রমাণ থাকে না।
> এসব করে কিসের লাভ? বুঝিয়ে বলো।
> এখন সময় নেই। পরে আপনাকে বলো। এখন আপনি আয়াতের জন্য গাড়ি নিয়ে আসুন। লোকদিয়ে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন। এক মিনিট নষ্ট মানে ওর জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি হবে।
জুবায়ের সব কৌতূহল দমিয়ে রেখে ভেতরে চলে গেলো। আয়াত কিছুতেই এই বাড়ি থেকে যেতে চাইছে না কিন্তু অধরা শুনলো না। এটা ওটা বুঝিয়ে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। ছেলেটার জন্য ওর দম বন্ধ লাগছিল। এই মৃত্যু পুরীতে থাকা মানে বিষাক্ত জীবন পার করা। জুবায়েরের দাদু বেশ কষ্ট পেয়েছেন ছেলেটাকে পাঠিয়ে দেওয়াতে। উনি অধরাকে নিজের রুমে ডেকে নিলেন। অধরা প্রথমবার দাদুর রুমে প্রবেশ করলো। জুবায়ের আসতে চেয়েছিল কিন্তু অধরা ওকে উকিলের সঙ্গে কথা বলতে পাঠিয়ে দিয়েছে। হাতে সময় কম। দরজায় পা রাখতেই ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠে আওয়াজ আসলো,
> কোথায় ছিলে দাদুভাই? সারাদিন খোঁজ পাচ্ছি না। এই বুড়ো মানুষটা সারাদিন তোমাকে প্রচণ্ড মিস করেছে এটা কি তুমি জানো?
অধরা ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে চনচল হয়ে উঠলো। ভেতরে গিয়ে একদম দাদুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> দাদু জানেন তো আমার অবস্থা!শরীর হঠাৎ হঠাৎ খারাপ হচ্ছে, ঘুম পাচ্ছে।
> তা বটে এই সময়ে এরকম একটু হয়ে থাকে। তুমি চিন্তা করোনা। তোমার পেটে আমাদের সুলতান পরিবারের বিশেষ একজন অতিথি সে। তাঁর কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা সবাই দোয়া করছি।
> আপনারা ছাড়া কে আছে আমার? বাবা মা পরিবার পরিজন কেউ নেই।
> দুঃখ করো না বাবা মা কারো চিরকাল থাকে না। যেই ছেলেটা এসেছিল ওকে কিছুদিন কাছে রাখতে পারতে। ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিয়ে ঠিক করোনি। শুনেছি এক সঙ্গে বড় হয়েছো। কাছে থাকলে তোমার ভালো লাগতো।
অধরা থমকে গেলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ত্রুটি করলো না। ঢোক গিলে বলল,
> আন্টি অসুস্থ ওকে দরকার ছিল বাড়িতে। কয়েকদিন পরে আবারও আসবে।
ভদ্রলোক বিশ্বাস করলো কি ঠিক বোঝা গেলো না। বিছানা থেকে নেমে আলমারির কাছে গিয়ে একটা লাল পুটলি বের করলো। যেটা খুঁলে ভেতর থেকে একটা পুরাতন ডাইরি নিয়ে অধরার সামনে ধরলেন। আর চাপা কন্ঠে বললেন,
> এই ডাইরীটা তোমার। পড়ে আমাকে ফেরত দিবে। এখানে আমাদের বংশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে।

অধরা আগ্রহ নিয়ে ডাইরিটা দ্রুত নিজের হস্তগত করলো। মনে হলো এখুনি না নিলে আর পাবে না। ওর অস্থিরতা দেখে দাদু মৃদু হাসলো। বলল,
> এটা পড়লে তোমার সব কৌতূহল আশাকরি মিটে যাবে।
অধরা ডাইরীর উপরে হাত বুলিয়ে নিলো। উপরে বেশ গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে “কোহিনুর”। ভেতরে কি লেখা আছে কে জানে। অধরা দাদুর চোখে দৃষ্টি রেখে বলল,
> কক্ষে নিয়ে যেতে চাই, দিবেন?
> নিশ্চয়ই, তবে কাউকে দেখাতে পারবে না। নিয়ে যাও সকাল হলে ফেরত দিতে হবে।
অধরা সম্মতি জানিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসলো। কি আছে এই ডাইরীতে?
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে