কহিনুর পর্ব-০৭+০৮

0
955

#কহিনুর
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৭+৮

অজানা উত্তেজনাতে কাঁপছে অধরা। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন আর আতঙ্ক। কহিনুর অভিশাপ কি আশির্বাদ আল্লাহ্ ভালো জানে।অধরা একদমে ডাইরির কয়েক পৃষ্ঠা পড়া শেষ করে পরবর্তী পৃষ্ঠা উল্টে সেখান থেকে শুরু করলো,
” অধরার মধ্যে আমি কখনও অদ্ভুত কিছু দেখিনি। স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়। শয়তানের ধোকা ছাড়া কিছু না। আমি সামান্য কারণে আমার বাচ্চা মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে পারিনা। আমার একমাত্র মেয়ে যার মুখ দেখে আমার শুভ সকাল শুরু হয়। পারবোনা তাঁর জীবনটা এভাবে নষ্ট করতে। আমি চাই আমার মেয়েটা পড়াশোনা শিখুক। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের ইচ্ছেতে কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করুক। এতেই আমার শান্তি। কিন্তু এরকম কিছু হলো না। বারবার দাদিজানকে দেখলাম। সেই এক কথা। আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম। এতো বছর পরে বাবার খোঁজ নিলাম। ভেবেছিলাম বাংলাদেশ ফিরে গিয়ে উনার কাছ শুনবো এই পাথরের অভিশাপ কিভাবে কাটানো যাবে। কিন্তু পারলাম না। বাবা মারা গেলেন। আমাদের বিশাল সম্পত্তি ততদিনে সব মামা আর মামাতো ভাইয়ের দখলে। মা ওদের সঙ্গেই থাকেন। বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাকে চিঠি লিখে গেলেন। হাতে পেলাম দুদিন পরে। বাবা চিঠিতে বারবার ক্ষমা চেয়েছেন। যেই সম্পত্তির জন্য উনি নিজের মায়ের প্রান বলি দিলেন সেই সম্পদ এখন পরের মানুষ লুটপাট করছে। মায়ের ভালোবাসা পেয়েও উনি হারিয়েছেন। একমাত্র ছেলে বাড়ি ছাড়া হওয়ার অপরাধে আমার মা,বাবার সঙ্গে কথা বলতেন না। শেষ বয়সে এসে উনি নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত। পাথরটা যে আমার কাছে এটা উনি জানেন। পাথরটার সামনে যেনো আমি কোনো আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ না করি হুশিয়ার করেছেন। কিন্তু আমি যে ভূল করেই ফেলেছি। পাথরটা উনি কোনো নদীতে ফেলে দিতে বলেছিলেন। লোকের হাতে পড়লে ঝামেলা হবে। ওই পাথরটার জন্য অনেকেই মুখিয়ে আছে। বাবার চিঠি পড়ে মেয়ের বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় শুরু করলাম। একদিন ভালো পরিবার পেয়ে বিয়েও দিলাম। কিন্তু স্বপ্নের থেকে রক্ষা পেলাম না। দাদিজানের জায়গাই আমি অধরাকে দেখা শুরু করেছি। মেয়েটা বারবার বলছে বাবা আমাকে বলি হতে দিও না। তুমি না দাদিজানকে কথা দিয়েছিলে আমাকে রক্ষা করবে তবে কেনো করছো না? ওরা আমাকে মেরে ফেলবে বাবা। আমার কহিনুরের র*ক্তে কহিনুরের শক্তি ফিরিয়ে নিবে।
এই পযর্ন্তই লেখা ছিল ডাইরিতে। অধরার চোখে পানির ধাঁরা নেমে আসলো। বাবা ওর জন্য কতটা চিন্তিত ছিল বোঝা যাচ্ছে। এই কাহিনী শুরু হয়েছিল বহুকাল আগে থেকে কিন্তু এই বাড়ির সঙ্গে ওই পাথরের কি সম্পর্ক আছে বুঝতে পারলো না। আরমান ফারুকী জেনে বুঝে ওকে এই বাড়িতে এনেছে এটা পরিস্কার। মস্তিষ্ক কাজ করছে ওর। নিজের সঙ্গে বাচ্চাটার জীবনের ঝুঁকি আছে বুঝতে অসুবিধা হলো না। এই বাচ্চাটাকে ওরা মেরে ফেলবে। অধরার শরীর কাঁপছে। কিভাবে রক্ষা করবে নিজের সন্তানকে? সবাই যে স্বার্থপর। শাশুড়ি মাকে ও হাজারটা ধন্যবাদ দিলো। এই বাড়িতে থাকা ওর চলবে না। এই বাড়ির রহস্য ওর পিছনে ছাড়বে না মনে হচ্ছে। অধরা দ্রুত ডাইরি লুকিয়ে ফেলল। হাতে এখনো সময় আছে। ভাবতে হবে।
☆☆☆☆☆☆
বোবা হিসেবে অটিস্টিক স্কুল কলেজে পড়ার কথা ছিল মারিয়া ফারুকীর কিন্তু জুবায়ের কখনও চায়নি ছোট বোনটাকে এভাবে আলাদাভাবে মানুষ করতে। ও নিজ দ্বায়ীত্বে বোনটাকে নরমাল ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই মানুষ করেছে। বোনটাকে ও খুব স্নেহ করে। সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করে। মেয়েটার বুদ্ধিমত্তাটা সাধারণ মেয়েদের মতো না। সহসা সে রাগে না। রাগলেও কাঁদে না। মন খারাপ বিষয়টা একদম এড়িয়ে চলে। জুবায়ের প্রতিদিন বোনকে ইউনিভার্সিটির গেটে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যায়। ক্লাস শেষে বোনকে নিতে আসে। কখনও এর এদিক ওদিক হয়না। আজও ওর ভুল হয়নি। বোনকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মারিয়া মাথায় মাফলার চাপিয়ে চুপচাপ ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো। ক্লাসের সামনে ওর সহপাঠীরা জড় হয়েছে। ওকে নিয়ে আলোচনা করছে। কেউ জানেনা আধরা কথা বলতে জানেনা। ওরা ভেবেছে মেয়েটা ইচ্ছে করে সবাইকে অপমান করছে। ক্লাসে যাওয়ার আগে সবাই মিলে ওকে আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে দিলো। মারিয়া ঠোঁটে হাসি রেখে সবাইকে দেখেছে। চুপচাপ ক্লাস করে যখন বেরিয়ে আসবে ঠিক তখনই পাশ থেকে একটা ছেলে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। ছেলেটার চোখেমুখে বিস্ময়। মারিয়া ইশারা করলো কি চাই। ছেলেটা ভ্রু কুচকে বলল,
> কথা বলতে পারো না কিন্তু শুনতে নিশ্চয়ই পারো?
মারিয়া চমকে উঠলো। এই সত্যিটা জুবায়ের ছাড়া কেউ জানেনা। কিন্তু এই ছেলেটা জানলো কিভাবে?

মারিয়া থমকে গিয়ে আবারও হাটতে শুরু করলো। ছেলেটা দমে গেলো না। দ্রুত ওর পিছু নিয়ে বলল,
> ভয় পাচ্ছ তুমি? আমি তোমার ক্ষতি করবো না। আমি জানি তুমি শুনতে পাও। আমি দেখেছি কেউ ডাকলে তুমি সেদিকে তাঁকাও। উচ্চ শব্দ হলে কানে হাত রেখে প্রতিরক্ষা করো। ঠিক বলছি না! বলো তুমি?
ছেলেটা হড়বড় করে কথা বলে চলেছে। মারিয়া দৌড়ে গেলো গেটের দিকে। ছেলেটাও কম যায়না ওর পেছনে ছুটছে। জুবায়ের বোনকে নিতে এসেছিল হঠাৎ ওকে দৌড়াতে দেখে হুট করে গাড়ি থেকে নেমে নিজেও এগিয়ে গেলো। বোনের হাত ধরে পেছনে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
> কি চাই!ওকে বিরক্ত করছেন কেনো?
ছেলেটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। কোনো রকমে ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,
> সরি আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। ও অযথাই আমাকে ভয় পাচ্ছে। বন্ধুত্ব করতে চাইলাম। আসলে ওতো একা থাকে।
জুবায়ের মুখটা কঠিন করে বলল,
> ওর থেকে দূরে থাকবেন। নিজের জন্য ভালো হবে। আমার বোন কথা বলতে পারে না। বন্ধুত্ব করতে চাইলে অন‍্যদের সঙ্গে করুন।
জুবায়ের আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত ওকে গাড়িতে তুলে বেরিয়ে আসলো। দিন যাচ্ছে সময়টা কঠিন হচ্ছে। সুলতান বাড়ির মেয়েদের জন্য যে ভালোবাসা বিয়ে বা সংসার করা ভাগ্যে নেই। ওরা যেতেই ছেলেটা চোখ বন্ধ করলো। এই মারিয়া ফারুকীকে ওর চাই। যেভাবেই হোক চাই।
☆☆☆☆☆☆☆
ডাইরি পড়ার পরে অধরার দুবার বমি হয়েছে। অতিরিক্ত টেনশনে পেশার কমে গেছে। অশান্তি লাগছে। শরীর বেশ দুর্বল। খেতে ইচ্ছে না হলেও ও খাওয়া বন্ধ করছে না। এই মূহুর্তে শরীর ঠিক রাখা জরুরি। সারাদিন জুবায়ের এই রুমে আসেনি। যখনই আসে তান্ডব করে যায়। অধরা জানে লোকটা না আসলেও ওর উপরে নজর ঠিকই রাখছে। ওর মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে আয়নাটা লাথি দিয়ে ভেঙে দিতে। এই বাড়ি থেকে যাওয়ার দিন ও এই মহান কাজটা ঠিকই করে যাবে। কথাগুলো ভেবে ও বিছানা থেকে উঠে পড়লো। ঘোমটা টেনে মুখ ঢেকে নিয়ে বের হলো। এই বাড়িতে রাত হলে আধার নেমে আসে। আলোর ব‍্যবহার যদিও এই বাড়িতে খুব কম। এরা কিভাবে এই অবছা আলোতে থাকতে পারে আল্লাহ্ ভালো জানে। অধরা সেদিনের সেই যুবকের খোঁজ করতে নেমেছে। পাশের রুমে জুবায়ের ঘুমিয়ে আছে। অধরা উঁকি দিয়ে দেখে নিলো। ছেলেটা নিচের রুমে ছিল ও সেদিকেই এগিয়ে গেলো। চুপচাপ রুমে ঢুকে পড়লো। কিন্তু আজ এখানে কেউ নেই। নিস্তব্ধ লাগছে। অধরা আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো। মাঝারি রুম মাঝখানে বড়সড় একটা খাট। দেয়ালের সঙ্গে আলমারিটা লটকানো আছে। রুমটাতে কোনো বেলকনি নেই। অধরা হতাশ হয়ে পড়লো। ফিরে আসতে চাইলো কিন্তু হঠাৎ আলমারির মধ্যে খুট করে শব্দ হতেই ফিরে আসলো। দ্রুত আলমারির দরজা খুলে হতবাক। এখানে আরেকটা দরজা আছে। ও দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। নিচের দিকে সিঁড়ি। অধরা চুপিচুপি নেমে পড়লো। বেশ কিছু সিঁড়ি পার করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলো। এখানে উপরের মতো পাশাপাপাশি তিনটা রুম। রুমে কোন জানালা নেই। অধরা একটা রুমে ঢুকে পড়লো। বিশাল বড় রুম। চার‍দিকে দামিদামি আসবাবপত্রের ছড়াছড়ি। এখানে কেউ থাকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। অধরার গা ছমছম করছে। ও আশপাশ যখন গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছিল হঠাৎ ওর কাধে কারো নিশ্বাস পড়লো। অধরা চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে অবাক হলো। সেদিনের সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। অধরা ভয়ে কাঁপছে। ছেলেটার মধ্যে কোনো বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
> এখানে কি তোমার? রুমে যাও।
অধরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
> কে আপনি?
ওর প্রশ্ন শুনে ছেলেটা হয়তো মজা পেলো। ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,
>কেনো চিনতে অসুবিধা হচ্ছে? আমি সুলতান জুবায়ের ফারুকী,তোমার স্বামী।
অধরা বিরক্ত হলো। জুবায়েরের চালচলন ওর খুব ভালো করে রপ্ত আছে। জুবায়ের কখনও এমন শান্ত থাকে না। অধরার কপালে ভাজ পড়লো। মুখটা কঠিন হয়ে আসলো। রাগে দাঁত চেপে বলল,
> মিথ্যা বলার একটা লিমিট থাকে। আমি জানি আপনি জুবায়ের ফারুকী না তাই ভনিতা রেখে নিজের ফর্মে আসুন। বলুন কে আপনি? এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে থাকার মানে কি? চারদিকে এতো রহস্য ছড়িয়ে কি প্রমাণ করছেন আপনারা?

ছেলেটা ঘাবড়ালো না। প্রাণখুলে হাসলো। ওর মধ্যে না আছে উত্তেজনা আর না আছে সত্যি প্রকাশের ভয়। কোনরকম হাসি থামিয়ে অধরার চোখে দৃষ্টি রেখে বলল,
> মনে আছে সেই তুষারপাতের রাতের কথা? তুমি বন্দী হয়ে আটকে ছিলে নির্জন রাস্তায়। তোমার গায়ে ছিল সাদা শুভ্র পোশাক। আধার কালো রাত্রীর বুক চিরে মনে হয়েছিল তুষারের উপরে কোনো পরি নেমে এসেছিল। আমার হার্ট ধুকপুক করছিল। ভেবেছিলাম একটু ছুয়ে দেখি। কিন্তু পারলাম না। মায়ায় জড়ানো যে আমার জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তোমাকে সাহায্য করেছিলাম। মনে আছে?
অধরা এবার ঢোক গিলল। এসেছিল এক রহস্য ঘাটতে এখানে এসে আরেক ঝামেলায় জড়িয়ে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
> কবে কোথায় কি হয়েছে সেসব আমার মনে নেই। দয়াকরে সেসব এখন টানবেন না। আমি শুনতে ইচ্ছুক না। তাছাড়া আমি আপনার ভাইয়ের স্ত্রী। আশাকরি সম্মান করবেন।
অধরার করা শুনলে ছেলেটা আবারও হাসলো। বিড়বিড় করলো” বাঘিনী”। অধরার ভয় করছে কিন্তু প্রকাশ করছে না। নির্জন এই কক্ষে শুধু একটাই ভরসা। আর যাইহোক এই বাড়ির কেউ ওর ক্ষতি করবে না। এখনো সেই সময় আসেনি। ছেলেটা সোফায় গিয়ে বসতে বসতে বলল,
> অনুমতি থাকলে তোমাকে আমার করতে এক সেকেন্ডও লাগতো না। আফসোস তুমি আমারই ভাইয়ের স্ত্রী। বিষয়টা খুব জঘন্য তাই না? একই জঠরে জন্ম নিয়েও ও কতসুন্দর জীবনযাপন করছে অথচ আমি এই অন্ধকারে সঙ্গী বিহীন। সময় আমারও আসবে। আচ্ছা ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ের অনুমতি আছে তো তাই না?
অধরা জ্বলে উঠলো লোকটার এরকম জঘন্য কথাবার্তা শুনে। ছিঃ এটা কি মানুষ। জুবায়ের খারাপ হোক কিন্তু এতটা জঘন্য না। অধরা চোখমুখ কঠিন করে বলল,
> তাঁর আগে জেনো আমার মৃত্যু হয়। দরকার নেই আপনার পরিচয় জানার। আপনি যে কতটা জঘন্য যেটা বুঝতে আমার বাকি নেই। জুবায়েরের দৃষ্টি চনচল,বদ মেজাজী তবে আপনার মতো ঘৃণ্য না।
> তাই নাকি? কিন্তু ও যে তোমার সঙ্গে এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা করলো তাঁর বেলা?
> চোখ বন্ধ করে মানুষ বিষ খেয়ে নিতেও দ্বিধা করে না। আমার তো মনে হচ্ছে ওকে দিয়ে আপনারা করিয়ে নিচ্ছেন। প্রয়োজন শেষে ওকে ছুড়ে ফেলতে সময় নিবেন না। যেমন আপনার বাবা করেছিলেন। উনি জমজ ভাইকে সরিয়ে তাঁর জায়গাই নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। দারুন বুদ্ধি কিন্তু।
ছেলেটা এবার চোখ শক্ত করে নিলো। এই মেয়েটা অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। এতোটা জানার দরকার ছিল না। ও এতক্ষণ মেয়েটাকে মূল বিষয় থেকে সরিয়ে নিতে আজেবাজে বকেছে কিন্তু না মেয়েটার লক্ষ্য ঠিক আছে। ওর চোখ দুটো লাল হয়ে উঠলো। ঝঙ্কার দিয়ে বলল,
> জুবায়ের রুমে অপেক্ষা করছে। সময় মতো না পৌঁছনোর ফল আশাকরি ভালো হবে না। শুনো বড় মায়ের কক্ষে আর কখনও যাবে না। এতো কৌতূহল ভালো না। আমি তোমাকে রক্ষা করবো প্রমিজ করছি। এখন যাও।
অধরা চুপচাপ চলে আসলো। এই লোকটার সামনে ও দ্বিতীয়বার আর পড়তে চাই না। খারাপ অভদ্র লোক। রুমে গিয়ে আবার জুবায়েরের ঝামেলা। অধরা দৌড়ে উপরে আসলো। ভাবলো জুবায়ের যদি জানতে পারে তবে তান্ডব লাগিয়ে দিবে।

চলবে

#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:৮

হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে কক্ষের দিকে ছুটে আসলো অধরা। হাপ পা ঠকঠক করে কাঁপছে। বাইরে থেকে যতটা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সবার মোকাবেলা করে আসলে ওর ভেতরটা ততটাই দুর্বল। মন মর্জি হঠাৎ হঠাৎ পরিবর্তন হচ্ছে। এই ভালো তো এই খারাপ। পেটের ডান সাইডে চিনচিন ব‍্যাথাটাও তীব্রতর হচ্ছে। বাইরে গিয়ে এতক্ষণ যে অঘটন ঘটিয়ে আসলো জুবায়ের জানলে না জানি কি হবে। এরা দুভাই দু’রকমের। একজন ঠান্ডা মাথার আরেকজন উন্মাদ। অধরা কক্ষে প্রবেশ করে হাপিয়ে উঠলো। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় বসতে গেলো কিন্তু পারলো না। জুনায়েদ যে ওর জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে ওর লক্ষ্য ছিল না। জুবায়েরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে। এক টান দিয়ে অধরাকে শক্ত করে ধরে বলল,
> কোথায় গিয়েছিলে?
অধরা ঢোক গিলল। ভয়ে ভয়ে বলল,
> নিচে গিয়েছিলাম। আপনার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে।
কথাটা শুনে জুবায়ের ওকে ছেড়ে দিলো। তাল সামলাতে না পেরে অধরা বিছানার উপরে ঠাস করে পড়ে গেলো। জুবায়েরের চোখে মুখে বিস্ময়। কোনরকম নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

> ওর সঙ্গে কিভাবে কি? তুমি আমাদের পিছনে ষড়যন্ত্র করছো? এই বাড়ির রহস্য ঘাটতে উঠে পড়ে লেগেছো তাইনা? শুনো মেয়ে নিজের ভালো পাগলেও বুঝে। শান্তিতে খাও ঘুমাও বাচ্চা হোক আমি নিজেই তোমাকে ছেড়ে দিব। একবার যদি ঘরের বাইরে পা বাড়িয়েছো খু*ন করে ফেলবো।

> করে ফেলুন খু*ন, কে আটকে রেখেছে? জুবায়ের ফারুকী একটা স্বার্থপর মানুষের নাম। যে স্বার্থের জন্য নিজের বিবাহিত স্ত্রী আর অনাগত সন্তানের রক্ত দিয়ে কালো যাদু পিশাচ সাধনার জন্য বলি দিতে চলেছে।

জুবায়ের নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। থাপ্পড় বসিয়ে দিলো অধরার গালে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

> আজেবাজে কথা বলে আমার রাগিয়ে দিতে তোমার ভালো লাগে তাইনা? কতবার বলেছি রাগিওনা আমার কথা শুনছো না।

অধরা এবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। দ্রুত টেবিলের উপরে রাখা খঞ্জরটা উঠিয়ে নিজের হাতে একটা টান দিয়ে দিলো। ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে। ও সেসব তোয়াক্কা করলো না। জুবায়েরের হাতের মুঠোয় খঞ্জরটা তুলে দিয়ে বলল,
> খু*ন করে ফেলুন এভাবে যন্ত্রণা দিয়ে না মেরে। আমি মারা যাচ্ছি বুঝতে পারছেন? আপনাদের স্বার্থের জন্য আমি কেনো যন্ত্রণা পাবো এতে আমার কি লাভ বলুন? খু*ন করে আমাকে মুক্তি দিন আর পারছিনা আমি। একদিকে আপনার বিশ্বাসঘাতকতা অন‍্যদিকে কহিনুর রহস্য। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।

জুবায়ের প্রতিবাদ করলো না। দ্রুত অধরার হাতটা মুঠোয় নিয়ে বসিয়ে দিলো। অধরা ধস্তাধস্তি করলো হাত ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু পারলো না। জুবায়ের জোর করে ওর হাত ব‍্যান্ডেজ করে চুপচাপ ওর পাশে বসে পড়লো। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> আমি নিরুপায় অধরা। আমি চেয়েও পারছি না তোমাকে মুক্তি দিয়ে। আমি তোমাকে ছেড়ে দিলেও ওরা ছাড়বে না।
অধরা ফুপিয়ে চলেছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলো। হঠাৎ জুবায়েরের কাজে ওর ধ‍্যান ভাঙলো।ছেলেটা চুপচাপ ওর পায়ে সিঁকল দিয়ে আটকে দিচ্ছে। অধরা চমকে উঠে পা ছাড়িয়ে নিলো কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। জুবায়ের পাশে রাখা কাপড় ভিজিয়ে অধরার মুখ মুছিয়ে দিয়ে বলল,
> এটাই তোমার জন্য ঠিক আছে। ভেবেছিলাম তোমার থেকে দূরে থাকবো কিন্তু না তোমার তো সহ‍্য হলো না। স্বামীকে কাছে রাখতে যতসব আজেবাজে কাজকর্ম করছো। আমি আজ থেকে এখানেই থাকবো। আমার নজর তোমার উপরে থাকবে।

জুবায়ের শেষের কথাগুলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল। মেজাজ ওর প্রচণ্ড খারাপ। এই মেয়েটা অতিরিক্ত ঝামেলা করছে। এরকম হলে সব উল্টাপাল্টা হয়ে যাবে। অধরার কান্না থেমে গেছে। নিজের উপরে নিজের প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। কিভাবে এরকম বোকামি করতে পারলো। জুবায়েরের যে এভাবে ওকে আটকে দিবে কখনও ভাবেনি। এতোটা উত্তেজিত হওয়া উচিত হয়নি। একদম ঠিক হলো না। জুবায়ের ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,
> বাঘীনি বিড়াল হয়ে গেলো? দম ফুরিয়ে গেলো? আহারে আমার বউ আমার মতোই হয়েছে। এতো মাথা গরম ভালো না বুঝলে। দেখলে তো কিভাবে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলে?
অধরা জ্বলে উঠলো। যা হওয়ার তো হয়েই গেছে এখন আর চুপ থেকে কি হবে। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> আপনিও যেমন আপনার ভাইও তেমন। ভেবেছিলাম আপনি উনার থেকে ভালো কিন্তু না। উনি ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ের স্বপ্নে আপনার মৃত্যুর দিন গুনছেন। কোন এক তুষারপাতের রাতে আমাকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর শোধ তুলতে চাইছে। চরিত্রের দোষে দুজনেই দুষিত।

জুনায়েদের চোখ জ্বলে উঠলো অধরার কথা শুনে কিন্তু এবার আর প্রতিবাদ করলো না। চুপচাপ ওকে জোর করে শোয়ায়ে দিয়ে ওর পাশে নিজেও শুয়ে পড়লো। শুধু বলল,
> ঘুমাতে দাও আর নিজেও ঘুমাও।
জুবায়ের বালিশে মুখ ঢেকে নিলো। অধরা ভ্রু কুচকে আছে। লোকটার মতিগতি বোঝা মুশকিল। জীবনটা মেগা সিরিয়ালের মতো হয়ে গেছে। প্রতিদিন এক ঘটনা ঘটছে। অধরা বিরক্তি হলো। হাতে যন্ত্রণা করছে। এটা অতিরিক্ত ছিল। খামাখা হাতটা না কাটলেও চলতো। রাগের সময় মাথায় কাজ করছিল না। কথাগুলো ভাবতে ভাতেই ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। ভোরবেলায় চিল্লাচিল্লি আর হৈচৈ শুনে ওর ঘুম ভাঙলো। দ্রুত বসে পড়লো। জুবায়ের এখনো ঘুমিয়ে আছে। অধরা ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
> শুনছেন বাইরে কিছু হচ্ছে?
জুবায়েরে ঘুমঘুম কন্ঠে চোখ বন্ধ করেই বলল,
> হতে দাও। বিরক্ত না করে ঘুমাও।
> কুম্ভকর্ণের মতো না ঘুমিয়ে বাইরে গিয়ে দেখে আসুন। চিৎকার চেচামেচিতে আপনাদের পাপের অট্টালিকা নড়ে উঠছে। ধবংস হলে ঘুমের বারোটা বেজে যাবে। ঘুমানো ঘুচে যাবে জন্মের মতো।

অধরা দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে থামলো। জুবায়ের বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো। এই মেয়েটা সব সময় কথা শোনানোর জন্য মুখিয়ে থাকে। সুযোগ পেলেই ঝাড়ি দিতে সময় নিবে না। কথাগুলো বিড়বিড় করে ও বেরিয়ে আসলো। বাইরে গিয়ে দেখলো বাড়ির দারোয়ান মালি আর কাজের ছেলেটা একটা ছেলের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেছে। বাড়িতে উচ্চ শব্দে চেচামেচি হচ্ছে। ও দ্রুত গিয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> কি হচ্ছে এখানে?
জুবায়েরের কন্ঠ শুনে ছেলেটা এগিয়ে আসলো। জুবায়ের ভ্রু কুচকে গেলো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে। গতকাল এই ছেলেটাকে ও দেখেছিল বোনের সঙ্গে ইউনিভার্সিটির গেটে দেখেছিল। কিন্তু এখানে কেনো এসেছে বুঝতে পারলো না। তাই বিরক্ত হয়ে জিঞ্জাসা করলো,
> বাসা পযর্ন্ত চলে এসেছো? বলেছিলাম না আমার বোন বন্ধুত্ব করবে না তোমার সঙ্গে। তবুও কেনো ঝামেলা করছো?
> দেখুন আমি জানতাম না এটা আপনাদের বাসা। আমি এসেছি অধরা আপুর কাছে। উনার বাবা ছিলেন আমার বাবার বন্ধু। আমি উনার কাছে এসেছি। এর আগেও আমি এসেছিলাম দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এবার অনুমতি না দিলে আমি পুলিশ নিয়ে আসতে বাধ্য হবো।
জুবায়ের মোটেও ঘাবড়ালো না বরং হাসলো। এই মূহুর্তে ছেলেটার মুখে একা শক্তপক্ত ঘুষি দিতে মন চাইছে কিন্তু দেওয়া যাবে না। ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। এমনিতেও রুমে অধরাকে আটকে রাখা হয়েছে। এই ছেলেটা যদি পুলিশ আনে ঘটনা বাজে দিকে মোড় নিবে। কিন্তু ছেলেটা ওকে হুমকি দিয়েছে যেটা ও মানতে পারছে না। জুবায়ের ভ্রু নাচিয়ে বলল,
> পুলিশ আনবে আচ্ছা আমি নিজেই ফোন করে বলছি আমার স্ত্রীর নিজের কোনো আত্মীয় নেই অথচ কে না কে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বারবার আমাদের সবাইকে বিরক্ত করছে। খারাপ উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। মিস্টার…. কি জানি নাম ?
ছেলেটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলল,
> আয়াত ইসলাম। দেখুন আমি কিন্তু আজ এমনি এমনি ফিরবো না। ডাকুন ওকে। এক বছর ওর সঙ্গে দেখা করতে দেননি। এই খুন টুন করে গুম করে দেননি তো? আমি সিউর এটাই করেছেন। পাক্কা শয়তানের হাড্ডি আপনারা। আঙ্কেলকে কতবার বলেছিলাম বিয়েটা ভেঙে দিতে।
আয়াত একদমে কথাগুলো বলে থামলো। জুবায়ের যেতে যেতে বলল,
> আসো দেখা করিয়ে দিচ্ছি।
বিড়বিড় করলো,ফালতু লোকজন। এই দুটোই এক। সামনে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিব।আর কিছু না পারলেও মুখ চালাতে পাররে।
জুবায়ের বিরক্ত হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে আয়াত সেসবে পাত্তা দিচ্ছে না। বাড়ি থেকে আসার সময় বাবা মাকে কথা দিয়ে এসেছে মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরবে। পাশাপাশি বাড়ি ছিল। ওরা এক সঙ্গে বড় হয়েছে। ভাইবোনের মতো মিলমিশ ছিল। হঠাৎ বিয়েটা সব তছনছ করে দিলো। জুবায়ের ওকে নিচে বসিয়ে রেখে উপরে আসলো। অধরা বিছানায় বসে আছে। পায়ে সিঁকলের জন্য ফ্রেস হতে পারছে না। জুবায়ের দ্রুত এসে ওর সিঁকল খুলে দিয়ে গম্ভীর মুখ নিয়ে বলল,
> মুখ খুঁললে কিন্তু খারাপ হবে। তোমাকে কিছু করতে না পারলেও ওকে কিন্তু ছাড়বো না। আমাকে চিনো? মাথা গরম হলে খবর আছে।
অধরা অবাক হলো। সাত সকালে জুবায়ের কাকে মারার হুমকি দিচ্ছে বুঝতে পারলো না। ভ্র কুচকে বলল,
> বুঝতে পারলাম না।
> আয়াত এসেছে তোমার সঙ্গে দেখা করতে। তুমি কয়েকটা ভালো মন্দ কথা বলে ওকে বিদায় করবে। আমি কিন্তু…
> জানি খু*ন করে দিবেন। ওটা ছাড়া তো আর ডাইলগ জানেন না। চলুন দেখা করে আসি।
বুকের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চাপিয়ে রাখা মুশকিল। অধরা বেশ খুশী হয়েছে। মনের মধ্যে একটা পরিকল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে। এখন শুধু বুদ্ধি দিতে কাজ করতে হবে। আল্লাহর উপরে ভরসা করে নিজেকে শান্ত রেখে নিচে নেমে আসলো। আয়াত এতক্ষণ বসে ছিল হঠাৎ অধরাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
> আপু কেমন আছো তুমি? কতদিন দেখা হয়নি। আম্মু তোমার কথা ভেবে কাঁদেন প্রতিদিন। তুমি জানো আম্মু অসুস্থ? তোমাকে দেখতে চেয়েছে। তুমি যাবে না?
অধরার চোখে পানি চলে আসলো। রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও ছেলেটা ওকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে। অধরা ওর মাথায় হাত রেখে বসিয়ে দিয়ে বলল,
> যাবো আয়াত নিশ্চয়ই যাবো। আন্টি অসুস্থ আর আমি যাবোনা এমন হয়নাকি। অনেক ভুল হয়েছে আমার। তোদের খবর নেওয়া হয়নি। আসলে আমার তো ফোন নেই। তোর নাম্বার টাও রাখা হয়নি।

জুবায়ের এদের দুজনের কথোপকথনে বিরক্ত হচ্ছে। এই দুটো বাড়ি থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। আটকাবে কিভাবে? না যেতে দিলে তো আবার কাহিনী করবে। ওর বাবা মা আজ বাড়িতে নেই। একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যেতে মানা করাও যায়না। জুবায়ের পড়ে গেলো বিপদে। যেতে দিবে না বলেও শেষমেশ অধরাকে যেতে দিলো। তবে ওকে একা ছাড়বে না। সঙ্গে ও ছোট বোন আর কাজের মেয়েটাকে সঙ্গে নিলো। ফাঁকি দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। অধরা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এক বছরের বন্দিজীবনের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। ও দ্রুত গিয়ে লাগেজ গুছিয়ে নিলো। লুকিয়ে শাশুড়ির দেওয়া জিনিসপত্রগুলোও সঙ্গে নিয়েছে। ওখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে বাবা মায়ের ঘর তল্লাশি করা। সেখানে নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্লু থাকবে। কহিনুরের কাহিনী জেনে নিয়েছে। এবার জুবায়েরেদের পরিবারের কাহিনীটা জানতে পারলে মোটামুটি পালিয়ে গেলেও শান্তি।

☆☆☆☆☆☆☆
সুলতান আরমান ফারুকী ইচ্ছে মতো বাকবকি করছেন বাড়ির সকলের অপরে। উনি জুবায়েরের উপরে বিরক্ত। এই ছেলের জন্য যে উনার ধ্বংস অনিবার্য হতে চলেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই। কিভাবে সে ভাইবোনদের ভবিষ্যতের কথা ভূলে গিয়ে বউকে নিয়ে শশুর বাড়িতে যেতে পারে এটা উনার মাথায় আসছে না। এই বাড়ির পাঁটা মেয়ে আর একটা ছেলের ভবিষ্যৎ জুবায়েরের উপরে নির্ভর করছে। এই একটা সুযোগ উনি কত চেয়ে পেয়েছেন সেটা শুধুমাত্র উনি জানেন। বড় ছেলেটা আধার রাতের জীব হয়ে গেছে। আলোতে আসতে পারেনা। মেয়েগুলোর বিয়ের কথা ভাবা যাবেনা। বিয়ে মানে কারো তরতাজা রক্তের গন্ধে সুলতান বাড়ি ভরিয়ে তোলা। এভাবে চললে এই বংশ বিলুপ্ত হতে সময় নিবে না। উনি বারবার জুবায়েরের কাছে ফোন দিচ্ছেন। কিন্তু ছেলেটা ধরছে না। আরমান ফারুকী ফোনটা আছাড় দিলেন। চোখমুখ শক্ত করে ভাবলেন, যাকে দিয়ে কাজ হবে না তাঁর উপরে মায়া রেখে কি হবে? এখন জুবায়ের না থাকলেও চলবে।

(চলবে )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে