#কহিনুর
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩+৪
নিস্তব্ধ বাড়িতে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে। কয়েক জনের দৃষ্টি একজন লোকের দিকে। সেটা হলো জুবায়ের ফারুকী। লোকটা নিজের বাবাকে চিৎকার করে বলছে,
>ওই মেয়েটাকে স্পর্শ করতে আমার ঘৃণা লাগে ড্যাড। তুমি বুঝবে না এই একটা বছর আমি কিভাবে ওর সঙ্গে আছি। তোমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে আমার ভালোবাসাকে আমি ত্যাগ করেছি। মাকে হারিয়েছি। আমি এসব আর পারবো না। জুহিকে আমার এখুনি চাই। ওর ড্যাড ওর বিয়ে ঠিক করেছে। আমি মানতে পারছি না।
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে হাতে থাকা গ্লাসটা ফ্লরে ছুড়ে দিতেই বিকট শব্দে কাচের টুকরো গুলো চারদিকে ছড়িয়ে গেলো। অধরা দোতালায় দাঁড়িয়ে আছে। গতকাল রাতে জ্ঞান হারানোর পরে সকালে জ্ঞান ফিরছে। রাতে দেখা ওটা স্বপ্ন কি বাস্তব এখন আর মনে পড়ছে না। পুরোপুরি রহস্য। এই বাড়িতে এই প্রথমবার উচ্চকণ্ঠে আওয়াজ হচ্ছে। কি নিয়ে ঝগড়া বিষয়টা জানার জন্য ও বাইরে এসেছে। আজ দুদিন ধরে যা হচ্ছে তাঁতে এরকম কিছু হবে অস্বাভাবিক কিছু না তবুও কষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড কষ্ট। লোকটা কত সুন্দর করে এতদিন ওর সঙ্গে অভিনয় করলো। আধরা বুঝতেই পারছে না এদের এই ঝামেলার মধ্যে ও কিভাবে জড়িয়ে পড়লো। জুবায়ের জুহি নামের মেয়েটাকে পছন্দ করে তাহলে ওকে বিয়ে না করে অধরাকে বিয়ে করেছিল কেনো? কহিনুরের জন্য কিন্তু সেতো জুহিকে বিয়ে করলেও হতো। কি এমন দরকার ছিল যার জন্য ওকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হলো? একদিকে রহস্যের মায়াজাল অন্যদিকে জুবায়েরের দেওয়া আঘাত। বিবাহিত স্ত্রীকে স্পর্শ করতে ওর ঘৃণা লাগে। এতদিন যা কিছু হয়েছে লোকটার নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভাবতেই অধরার শরীর শিউরে উঠলো। নিজেকে ছোট লাগছে। শাশুড়ি মায়ের মুখটা এই মুহূর্তে খুব মনে পড়ছে। উনি থাকলে এসব কিছুই হতো না। জুবায়েরর বাবা আরমান ফারুকীর কথা শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো। লোকটা চাপা কন্ঠে বলল,
> উচ্চ শব্দে কথা বলতে মানা করেছিলাম। আজ পযর্ন্ত তোমার কোনো ইচ্ছা আমি অপূর্ণ রেখেছি? রাখিনি তো। আমি জুহির ড্যাডের সঙ্গে কথা বলবো। মাত্র দশটা মাস অপেক্ষা করো। ওই বাচ্চাটাকে পেয়ে গেলে সব আগের মতো হয়ে যাবে। তুমি জুহিকে নিয়ে হ্যাপি থাকবে। আর আমিও হ্যাপি।
জুবায়ের কিছু বললো না। ওর ছোট মা এগিয়ে এসে ছেলেটার হাত ধরে নরম সুরে বললেন,
> বাবা শান্ত রাখো নিজেকে। মম আছে তো সবটা ঠিকঠাক করে দিবে। বিশ্বাস করোনা নিজের মমকে?
জুবায়ের এই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে চোখ মুছলো। দৃশ্যটা অধরার হজম হলো না। নিজের মা মারা গেছে তাঁতে লোকটার সামান্যতম দুঃখের ছিটেফোঁটা নেই অথচ গার্লফ্রেন্ডের জন্য সৎ মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। কিন্তু কেনো? মেয়েরা সৎ মাকে সহজে মেনে নিতে পারলেও ছেলেরা নিতে পারেনা। মনে হচ্ছে এই মহিলাটাই জুবায়েরের আসল মা। বিষয়টা ভেবে ও কান্না ভূলে গেলো। মনে হলো এটাই ঠিক। এতদিন আরমান ফারুকী বাড়িতে আসতেন না।যখন প্রথম স্ত্রী মারা গেলো ঠিক তখনই বাড়িতে আসলেন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে। এই পরিবারটাতে জুবায়ের প্রথম মায়ের কোনো ভূমিকা ছিল না। এই ছেলেমেয়ে সবটা এই মহিলার। তাঁর জন্য এদের কোনো দুঃখ হচ্ছে না। তাই জন্য ভদ্রমহিলা ওকে মৃত্যুর আগে এভাবে সাহায্য করতে চেয়েছে। বিষয়টা ভেবে ও দ্রুত রুমে চলে গেলো। চারদিকে শুধু রহস্য আর রহস্যর গন্ধ। মাথা আউলে যাচ্ছে। হঠাৎ জুহির কথা ভেবেই ও মেজাজ খারাপ হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই জুবায়ের ভেতরে প্রবেশ করলো। অধরা শুধু লোকটার মুখের দিকে তাঁকিয়ে থাকলো। জুবায়ের চুপচাপ ওর পাশে বসে হাতটা ওর কপালে রাখতে যেতেই অধরা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
> প্লিজ স্পর্শ করবেন না।
জুবায়ের ভ্র কুচকে বলল
> কেনো?
> আপনার ছোঁয়া আমার কাছে বিষাক্ত লাগেছে। আমি চাইনা আপনার কখনও আর আমাকে স্পর্শ করেন। তাছাড়া গতকাল আপনি নিজেই বলেছেন আমাকে আর স্পর্শ করবেন না।
জুবায়ের থতমত খেয়ে বসে আছে। ভাবলো বাইরের চেচামেচি কি মেয়েটা শুনতে পেয়েছে? মাথায় ছিল না তখন রাগের জন্য কি না কি বলেছে। এখন আফসোস করতে হচ্ছে। জুবায়ের চোখ বন্ধ করে ভাবলো মেয়েটা কতটুকু জানে ওর বিষয়ে? বুঝতে হবে। ও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
> কেনো এতদিন তো ঠিকই ছিল। শুনো ঝামেলা করোনা। চুপচাপ দেখতে দাও। গতকাল তোমার অনেক জ্বর ছিল। জ্বরের ঘোরে বাইরে চলে গিয়েছিলে। আমি উঠিয়ে এনেছি। মেয়েদের জন্য জিদ মানানসই না।
অধরা চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো কিন্তু হলো না। ওকে ঠকানো হয়েছে। স্বামী নামক লোকটা ওকে শুধু মাত্র ব্যবহার করেছে তাও নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এর চাইতে লজ্জার একজন নারীর কাছে কিবা হতে পারে। রাগে ক্ষোভে অধরার শরীর কাঁপছে চোখে পানি চলে এলো। নিজেকে আজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> একদম নাটক করবেন না। বংশধর চাই সেই জন্যই আমাকে বিয়ে করেছেন তাই না? সুলতান জুবায়ের ফারুকী আপনার বা আপনার বাবার কোনো পরিকল্পনা আমি সফল হতে দিব না। আমার জীবন থাকতে তো না।
আধর থরথর করে কাঁপছে। জুবায়ের বুঝে গেলো মেয়েটা সব শুনেছে। এখন আর লুকিয়ে কোনো লাভ হবে না। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
> অনেক কিছুই জানো দেখি। ভালো হয়েছে আর লুকিয়ে রাখতে হবে না। আর কি জেনো বলছিলে? শুনো স্ত্রীদের কাজ হচ্ছে বংশধর দেওয়া আর স্বামীর মনোরঞ্জন করা। আমি তো তোমার কাছে শুধু এটাই চেয়েছি। আমার বিশাল এই ঐশ্বর্য ভোগ করছো তুমি । না চাইতে দামি দামি গহনা পোশাক পাচ্ছো এটা তো এমনি এমনি না। জুবায়ের ফারুকী ব্যবসায়ী মানুষ। কিভাবে নিজের আখের গোছাতে হয় ভালোভাবে জানে।
অধরা জ্বলে উঠলো লোকটার কথা শুনে। ওর সামনে থাকা এই মানুষটা পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃষ্ট মানব বলে মনে হচ্ছে। ঝাঝালো কন্ঠে উত্তর দিলো,
> এই মূহুর্ত থেকে আপনি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যান। কখনও আপনার মুখ যেনো আমাকে দেখতে না হয়। ছিঃ আপনি সত্যিই মানুষ না। হৃদয়হীন পাষাণ। কিভাবে পারলেন একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে। মুক্তি দিন আমাকে। আমি চাইনা আপনার ধন সম্পদ আর ঐতিহ্য।
জুবায়ের চোখ বন্ধ করলো। কি একটা ভেবে খুব শান্ত হয়ে বলল,
> দশটা মাস সময় দাও আমি তোমাকে মুক্তি দিব। এই বাচ্চাটা আমাদের খুব দরকার। আচ্ছা আমার মতো ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকাটা কি খুব অবাক হওয়ার মতো কঠিন কাজ? যুবক ছেলেদের গার্লফ্রেন্ড থাকতে নেই? আমি কি জানতাম তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে! জুহিকে ভালোবাসতাম। বাবা ওকে মানেনি। বরং কন্ডিশন চাপিয়ে দিলো তোমাকে বিয়ে করতে হবে আর যত তাড়াতাড়ি তোমার বেবি হবে তত তাড়াতাড়ি আমি তোমার থেকে মুক্তি পাবো। বাচ্চাটা পেয়ে গেলে তোমার মুক্তি হবে সঙ্গে আমারও।
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থামলো। বোঝালো সে নিজেও ভুক্তভোগী। কিন্তু অধরা মানতে পারলো না। একটা বাচ্চার জন্য ওকে এই বাড়ির বউ করে আনা হয়েছিল। এই বাচ্চাটার মধ্যে কি আছে? এরা এতটা মরিয়া কেনো? অধরা কুটিল হাসলো। প্রাণ থাকতে ও এই বাচ্চাটা ও এদের হাতে দিবে না। যতদিন বাচ্চাটা না হচ্ছে এরা ওর কোনো ক্ষতি করবে না। অধরা পালাবে। সুযোগ পেলেই পালাবে। পালানোর রাস্তা আর দরকারি জিনিসপত্র সবটা হাতের মুঠোয়। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। শাশুড়ি মায়ের রহস্যটা জানা দরকার। কথাগুলো ভেবে ও উত্তর দিলো,
> বুঝলাম। এতোটাই ভালোবাসেন জুহিকে?যে নিজের মায়ের মৃত্যুতে আপনার কষ্ট হয়নি কিন্তু গার্লফ্রেন্ডের বিয়ের খবর শুনে আপনার কষ্ট হচ্ছে? মায়ের সঙ্গে যে বেইমানি করতে পারে সে স্ত্রীর সঙ্গে করবে তাতে সন্দেহ কিসের? এটা আপনার সঙ্গে মানানসই।
জুবায়ের এবার জ্বলে উঠলো। মেয়েটা না জেনে কথা বলছে। ওর ইচ্ছা হলো ঠাটিয়ে দুটো থাপ্পড় দিতে কিন্তু দিতে পারলো না।। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> আজেবাজে কথা বলবে না। যিনি মারা গেছেন উনি আমার নিজের মা ছিলেন না তবুও আমি উনাকে যথেষ্ট ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি। বাড়িতে যিনি আছেন উনি আমার মা।
অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল। যাকে এতদিন নিজের শাশুড়ি ভেবে আসছিল সে আসলে ওর শাশুড়ি না। কিন্তু কে উনি? আর এতদিন এসব ওর থেকে গোপন রাখা হয়েছিল আরও কতো সত্যি আছে এই বাড়িতে? অধরা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
> উনি কে ছিলেন? আপনার বাবার সঙ্গে উনার কি সম্পর্ক? আর আপনার বোনেরা ওরা কে?
> বাবারা ছিলেন জমজ দুই ভাই।মারা গেছেন উনি আমার চাচিমা ছিলেন। এই বাড়ি আর অর্থসম্পদ সব আমার চাচার ছিল। চাচার মৃত্যু হয়েছিল হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনাতে। পরে চাচির দেখাশোনার দায়িত্ব নিলেন বাবা। যেহেতু বাবা দেখতে চাচার মতোই ছিল তাই সকলে ভাবতো চাচা বেঁচে আছেন। চাচি তো ঘরবন্দি ছিলেন। বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। বাংলাদেশের থেকে একদম খালি হতে এসেছিলেন। তবে বাবা কখনও দরকার ছাড়া এই বাড়িতে আসতেন না। সম্পত্তি চাচির নামে ছিল। উনার কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না। বাবার আমার মায়ের সঙ্গে বিয়ে হলো। যদিও আগে থেকে তাঁরা পরিচিত। আমাদের সব ভাইবোনদের বাবা চাচিমায়ের হাতে তুলে দিলেন। কাগজে কলমে সবটা আমাদের নামে করিয়ে নিলেন। চাচিমাও আমাদের নিজের সন্তানের মতো লালনপানল করেছেন। যাইহোক অনেক জেনে ফেলেছো আর বলতে পারবো না। আপাতত ক্ষমা দাও আর চুপচাপ খাওয়া খেয়ে নাও। প্রমিজ বাচ্চাটা আসলে তোমাকে আর আটকে রাখবো না।
জুবায়ের একদমে নিজের বাবা মায়ের ইতিহাস বর্ণনা করে ফেলল। অধরা চোখ বন্ধ করে বুঝে নিলো এদের বিষয়টা। জুবায়েরকে ওর একদম পছন্দ হচ্ছে না। স্বার্থপর মানুষ একটা। বাচ্চার জন্য কতটা জঘন্য একটা কাজ করেছে তবুও মনে কোনো অনুতাপ নেই। এই লোকটাকে ও ভয়ানক শাস্তি দিবে। গতকাল রাতের দেখা দৃশ্যটার মানে ও এতক্ষণে বুঝতে পারলো। মনে হলো এদের সবাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়নি তো?
☆☆☆☆☆☆
সকালে জুবায়ের বাসা থেকে বেরিয়েছে আর ফিরে আসেনি। বিকেল হতে চলেছে।আজকে হয়তো আসবেও না। জুহির সঙ্গে থাকবেন। এখানে বউ গার্লফ্রেন্ড এসব ডাল ভাতের মতো। একজন ছেলের একাধিক গার্লফ্রেন্ড থাকাটা মনে হয় ফ্যাশান।এতো এতো কাহিনি জানার পরে ও মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছিল। শাশুড়ি মা বলে যাকে জেনে এসেছে তাঁকেই ও শাশুড়ি বলে মানে। জুবায়ের ঠিক নিজের মায়ের মতো। এই বয়সে এসেও ভদ্রমহিলা বাচ্চাদের ড্রেস পরে ঘুরাঘুরি করে। মেয়েগুলোও তাই। কথা বলতে জানলে এরা কি যে করতো আল্লাহ্ ভালো জানেন। হঠাৎ ওর সেই ধাঁধার কথা মনে পড়লো। অধরা চুপচাপ বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই একটা অনাকাঙ্খিত দৃশ্য ওর চোখে পড়লো। বাড়ির গেটের সামনে জুবায়ের এক মেয়ের সঙ্গে গভীর চুম্বনে লিপ্ত। আশেপাশে লোকজন আছে ওরা যেনো ভূলে গেছে। অধরার চোখ ছলছল করে উঠলো। জুবায়েরকে ও ঘৃণা করে তবুও লোকটা ওর স্বামী। ওর গা গুলিয়ে আসলো। দ্রুত বাথরুমে গিয়ে বমি করে দিলো। কয়েকবার বমির পরে শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।। শরীর হঠাৎ করেই দুর্বল হতে শুরু করেছে। ঘুম হচ্ছে ক্ষুধা বেড়েছে। মাতৃত্বকালিন সমস্যা গুলো দেখা দিচ্ছে। অধরা বাথরুম থেকে বাইরে এসে দেখতে পেলে একজন কাজের মেয়ে ফল কাঁটছে। অধরা দ্রুত মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল,
> আপনি চলে জান আমি কাটতে পারবো।
> স্যারের হুকুম না মানলে শাস্তি আছে ম্যাম।
অধরা কিছু একটা ভেবে পাশে বসে পড়লো। এক টুকরো আপেল মুখে পুরে নিয়ে বলল,
> ও আচ্ছা। আমি পানি খেতে চাই!আনতে পারবে নাকি আমি যবো?
> না না ম্যাম আমি যাচ্ছি।
মেয়েটা দ্রুত উঠে গেলো। অধরা অপেক্ষা করলো না। আয়নার দিকে পেছন ঘুরে ছিল তাই ফল কাটার ছুরিটা দ্রুত নিজের কাপড়ের নিচে লুকিয়ে ফেলল। এটাইতো দরকার ওর। এটা দিয়ে ও জুবায়েরকে খু*ন করে নিজেও সুইসাইড করবে। কহিনুর বলে এই পৃথিবীতে কোনো মেয়ের জন্ম নিবে না। পাপের দুনিয়ায় প্রবেশ করে নিজের মায়ের মতো ভূল কখনও সে করবে না। অধরা নিজের পেটে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলল,” মাম্মাকে ক্ষমা করে দিস মা। জুবায়ের জুহিকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল। মায়ের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য বাড়িতে এনেছে কিন্তু বাবার ধমক শুনে ওকে একা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। ও বাবা চেয়েছে এই দশটা মাস ও যেনো অধরার পাশাপাশি থাকে। জুবায়ের মুখ থমথমে করে জুহিকে এগিয়ে দিয়ে অধরার ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। কেনো জানি মেয়েটার সামনে ওর যেতে ইচ্ছা করছে না। অধরা অধীর অগ্রহে বসে আছে। কাছে আছে চকচকে খঞ্জর। সামনে পেলেই লোকটার বুকে ও এটা বসিয়ে দিবে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে সুলতান জুবায়ের ফারুকী। অধরা নয়ন ভরে দেখবে সেই মৃ*ত্যু।
(চলবে )
#কহিনুর
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
পর্ব:৪
দরজা খোলার শব্দ শুনে অধরার হাত কেঁপে উঠলো। ভয় পাচ্ছে। খু*ন করবে বললেই তো হয়না সাহসের দরকার হয়। তবুও চেষ্টার ত্রুটি করবে না অধরা। খঞ্জরটা শক্ত করে চেপে ধরে বসে থাকলো। বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুল সামান্য কেটেও গেলো। জ্বলছে সেই সঙ্গে তরল কিছু গড়িয়ে ফোঁটা ফোঁটা পড়ছে। পেটের বাম দিকে চিনচিন করে ব্যাথা করছে। জুবায়ের রুমে ঢুকলো তবে একা না সঙ্গে এক কাজের মেয়েকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটা পানি আর কিছু খাবার নিয়ে দাড়ালো। অধরার হাসি পেলো এদের ব্যবহার দেখে। আদর যত্ন করে এরা ওকে বলি দিতে চাইছে। জুবায়ের থমথমে মুখে আশেপাশে তাঁকিয়ে বলল,
> খেতে হবে। তুমি খেতে পারবে নাকি আমি সাহায্য করবো?
অধরা নাক মুখ কুচকে ফেলল। কিছুক্ষণ আগের দৃশ্যটা ওর চোখের সামনে ভাসছে। সেই সঙ্গে লোকটার উপরে ওর ঘৃণা কাজ করছে। অধরা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
> দরকার হবে না। জুবায়ের ফারুকীর হাতের খাবার আমার কাছে বিষ সমতুল্য। এই ঘরে আপনি না আসলে আমি খুশী হবো। ল*ম্প*ট চরিত্র*হীন খু*নি আপনাকে আমি ঘৃণা করি।
অধরা হাতের খঞ্জরটা আরও জোরে চেপে ধরলো। এই মূহুর্ত্তে লোকটার বুকে বসিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো কিন্তু তাঁতে কি হবে? লোকটা মরবে না। অধরা ওর শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে নিজের অবস্থা আরও নড়বড়ে করে ফেলবে। আপাতত খু*নের পরিকল্পনা বাদ দিতে হচ্ছে। জুবায়ের ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। ওর কপালে ভাজা পড়েছে। এই মেয়েটাকে যতবার ছুঁয়ে দিয়েছে ততবার মেয়েটা লজ্জায় কুকড়ে গেছে। মাথা তুলে তাঁকানোর সাহস হয়নি। সব সময় মাথা নিচু করে ওষ্ঠে হাসি রেখেছে কিন্তু আজ এর কোন রূপ এটা? আজকের মেয়েটার সঙ্গে তো জুবায়েরের পরিচয় নেই। একদম আলাদা একজন মানবী। জুবায়েরকে চুপচাপ দেখে অধরা আরও জ্বলে উঠলো। ঝাঝালো কন্ঠে বলল,
> আমি কোনো লম্পটের মুখ দর্শন করতে চাইনা জুবায়ের। আপনি এখুনি বের হয়ে জান। আপনাকে দেখলে আমার ঘৃণা করে শুনছেন?
জুবায়ের বিরক্ত হলো। দাঁতে দাঁত চেপে অধরাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরে বলল,
> তোমাকে স্পর্শ করেছি এবার কি করবে? নিজেকে মারবে নাকি আমাকে?
জুবায়ের কথাটা বলে ওকে এক হাতে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতটা অধরার বাম হাতের কব্জি ধরে সামনে তুলে ধরলো। অধরা আগেই খঞ্জর কাপরে মধ্যে ছেড়ে দিয়েছিল। জুবায়ের ওটা পেলো না কিন্তু অধরার কাটা হাতটা দেখতে পেলো। পাশের মেয়েটা এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ের মেয়েটাকে যেতে বলে অধরাকে জোর করে বসিয়ে দিলো। হাতের রক্তটা নিজের হাতে মেখে নিয়ে বলল,
> তুমি মারবে না অধরা। শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো। জানি মৃত্যুতে কারো হাত থাকে না তবুও মন বলছে যতদিন কহিনুর তোমার মধ্যে থাকবে ততদিন তোমার মৃত্যু হবে না। যদি ভেবে থাকো সুইসাইড করবে তবে ভূল করছো। তোমাকে ঘিরে আছে অদৃশ্য মায়াজাল। তুমি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়েছো। এভাবে মুক্তির আশা করা বোকামি। চুপচাপ খাওয়া দাওয়া করো। সুস্থ থাকো ও আসলে তোমাকে ছেড়ে দিব।
অধরা এক ঝটকায় নিজের হাতটা ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলল,
> আপনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেলে খুশী হবো। নিজের খেয়াল রাখতে আমি পারি। জুতা মেরে গরু দান আমার পছন্দ না। অধরা তিল পরিমাণ আঘাত পেলে পাহাড় পরিমাণ ফিরিয়ে দিতে জানে। আমার চোখের প্রতিটা ফোঁটা পানির মূল্য আমি উসুল করে নিবো।
> জিদ করোনা। তুমি কখন থেকে আমাকে নোংরা নোংরা কথা শুনিয়ে যাচ্ছো। আজ পযর্ন্ত তোমাকে আমি কোনো কিছুর জন্য জোরজবরদস্তি করেছি বলো? গায়ে হাত পযর্ন্ত তুলিনি। এখানে অহরহ বিয়ে ডিভোর্স বেবী এসব হয়ে থাকে। এসবে আমি খারাপ কিছু দেখছি না। জুহির আরেকজন বয়ফ্রেন্ড ছিল। আমি জানি তবুও আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
> আপনি আর আপনার জুহি দুজনের চরিত্র হচ্ছে ফুলের মতো পবিত্র। আপনাদের চরিত্র তো সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখার মতো। আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাঙ্গালী বাবা মায়ের রক্ত বইছে। দেশে জন্ম হয়নি তো তাঁতে কি আমার বাবা মা আপনার বাবা মায়ের মতো অমানুষ না। আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছেন। আপনার মতো ঘরে বউ রেখে বাইরের মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করতে না।
অধরা অপেক্ষা করলো না। ধাক্কা দিয়ে জুবায়েরকে পিছিয়ে দিলো। ছেলটা পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো। বাবার হুকুমে এতক্ষণ নিজকে শান্ত রাখতে পারলেও এখন আর পারলো না। ছুটে গিয়ে অধরার কাটা হাতটা এক হাতে চেপে ধরে আরেক হাতে ওর মুখটা চেপে ধরে বলল,
> খুব তেজ হয়েছে না? ভেবেছিলাম দূরে থাকবো কিন্তু না। আজ থেকে আমি তোর সঙ্গেই থাকবো। আমার এই দুহাত হাত অবাধে ঘোরাঘুরি করে তোর শরীর পারলে বাঁধা দিস। খুব ঘৃণা করিস না? এটাই হবে তোর শাস্তি।
অধরার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। জুবায়ের ওর গাল ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। ড্রয়ার থেকে ওষুধ বের করে অধরার হাতটা ব্যান্ডেজ করে বেরিয়ে গেলো। অধরা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলো। রাগে দুঃখে আর অপমানে নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে। পাশে পড়ে থাকা খঞ্জরটা তুলে নিয়ে নিজের পেটে চালিয়ে দিতে গেলো কিন্তু হলো না। অদৃশ্য বাধা পেলে। একবার দুবার করে বহুবার করলো না হলো না। কেউ ওকে থামিয়ে দিচ্ছে। মূহুর্ত্তে অধরার কান্না থেমে গেলো। এমন কেনো হচ্ছে? কেউ বাঁধা দিচ্ছে কিন্তু কেনো আর কে?মনে হলো জ্বীন ভূতের খপ্পরে পড়েনি তো? অধরার কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পেলো। ভাবলো শুধু শুধু জুবায়েরের সঙ্গে আর ঝামেলা করবে না। স্বামী নামের লোকটাকে আজ থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে রহস্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করবে। সত্যিটা জেনে এখান থেকে পালিয়ে যাবে। জুবায়ের নিজের ধ্বংস নিজে ডেকেছে এখানে ওর কিছু বলার নেই। কথাগুলো ভেবে ও ছুরিটা দিয়ে খপ করে হাতের বাঁধনটা কেটে ফেলল। বেইমানের ছোঁয়া ওর পছন্দ হচ্ছে না। নিজের মতো ওষুধ লাগিয়ে নিয়ে বিছানা ঠিকঠাক করে ফেলল। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লো। শরীর প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। এতক্ষণ শুধু মনের জোরে দাঁড়িয়ে থাকলেও আর হচ্ছে না। ক্লান্তিতে চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসলো।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆
আকাশ থেকে নেমে আসা এক টুকরো চাঁদ অধরার কোলে নেমে আসছে। সোনালী কেশ চোখগুলো হালকা বাদামি আর গায়ের রঙ উজ্জল ফর্সা। গোলাকার মুখোমন্ডল। অধরা কোলে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটাক হুহাতে আকড়ে ধরে কপালে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলো।ওর চোখে পানি কিন্তু ঠোঁটে লেগে আছে তৃপ্তির হাসি। অধরা বেশ কয়েকবার মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে ফিসফিস করে উচ্চারণ করলো, কহিনুর আমার কহিনুর। অধরার খুশী বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না কেউ একজন ঝট করে বাচ্চাটাকে নিজের কাছে কেঁড়ে নিলো। অধরা দ্রুত চিৎকার করে দাঁড়িয়ে পড়লো। ভালো করে দেখলো এই লোকটা আর কেউ ওর নিজের স্বামী। জুবায়ের মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। পাশে আছে ওর বাবা মা বোনেরা সবাই। জুবায়েরের বাবা পাশ থেকে একটা ধারালো খঞ্জর ছুড়ে দিয়ে বললেন
> মেরে ফেল ওকে। ওর র*ক্ত দিয়ে মিটে যাবে হাজার বছরের অভিশাপ।
জুবায়ের কাঁপা হাতে ছুরিটা লুফে নিলো। অধরার চোখে পানি। ও অনবরত চিৎকার করছে। বারবার দোহায় দিচ্ছে। নিজের বাচ্চার প্রাণ জুবায়ের নিজে হাতে নিচ্ছে। ধর্মে সইবে না। আল্লাহ্ ঠিক বিচার করবে। জুবায়ের ওর কথায় কান দিলো না। বাচ্চাটাকে সামনে রেখে খঞ্জর শক্ত করে ধরে একটু একটু করে বিধতে গেলো মেয়েটার বুকে কিন্তু পারলো না। হাত কাঁপছে। বারবার অধরার দিকে আর বাচ্চার দিকে তাঁকিয়ে কিছু ভাবছে। শেষ রক্ষা হলো না। পাশ থেকে আরমান ফারুকী ওর হাত থেকে খঞ্জরটা কেড়ে নিয়ে নিজেই হাত চালাতে গেলো। অধরা ছুটে গিয়ে ছুরিটা কেড়ে নিতে চাইলো কিন্তু সেটা বিধলো ওর কোমরে। মূহুর্তে চোখ ঘোলা হয়ে উঠলো। পাশে থাকা ওর সদ্য জন্মানো শিশুর চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। জুবায়ের হতভম্ব হয়ে দেখলো সবটা। আরমান ফারুকী ছুরিটা বের করে আধরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আবারও বাচ্চা মেয়েটাকে এটাক করতে চাইলো তবে এবারও ব্যার্থ পারলো না। সামনে দাঁড়ালো উনার নিজের ছেলে। ছুরিটা দ্বিতীয়বার বিধেছে জুবায়েরের বুকে। আরমান ফারুকী দ্রুত ছুরি ছেড়ে দিয়ে ছেলের মুখটা দুহাতে আঁকড়ে নিয়ে বললেন,
> এটা কি করলে তুমি? এতদিন যার জন্য অপেক্ষা করলাম তুমি সেটা হতে দিলে না। বিষাক্ত খঞ্জরের আঘাতে তোমার মৃত্যু নিশ্চিত। কেনো করলে বলো?
জুবায়ের বাবার হাতটা ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে দুহাতে আকড়ে নিয়ে বলল,
> আমি পৃথিবীর সব চাইতে নিকৃষ্ট স্বামী হতে পারি কিন্তু এই পুতুলের মতো মেয়েটার নিকৃষ্ট বাবা হতে পারিনি ড্যাড। ক্ষমা করে দিও। ওকে তুমি পাবে না। আমি জানি আমার মৃত্যু নিশ্চিত কিন্তু আমার কহিনুরের না। সরি ড্যাড।
জুবায়ের আর সুযোগ দিলো না লাফিয়ে পড়লো পাহাড়ের চূড়া থেকে। অধরা জুবায়ের বলে চিৎকার করে উঠলো। শরীরে মৃদু মৃদু কম্পন হচ্ছে। হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো। শীতের মধ্যেও শরীর ঘেমেঘেটে একাকার অবস্থা। কি ভয়ংকর স্বপ্ন। অধরা চোখ খুঁলে ঝটকা খেলো। ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে এক সুন্দরী রমনী। রমনীর ওষ্ঠে অমায়িক হাসি। মেয়েটাকে চিনতে ওর অসুবিধা হয়নি। ওর ননদ মারিয়া ফারুকী। অধরা মনে মনে ভাবলো এরা সবাই ওকে ঝটকা দিয়ে মেরে ফেলবে। স্বপ্নে পযর্ন্ত ছাড় দিচ্ছে না। আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখছে। জুবায়েরের মতো নিকৃষ্ট মানুষ যে গার্লফ্রেন্ডকে পাওয়ার জন্য বাবার শর্ত মেনে বিয়ে করে সে কিভাবে নিজের জীবন দিবে তাও অধরার মেয়ের জন্য। স্বপ্ন দেখানো শয়তানের কাজকর্ম বড্ড বেশি ফালতু। অধরা বিরক্ত হলো শয়তানের উপরে। এসব ভেবে উঠে বসলো। প্রথমবার ননদকে নিজের রুমে দেখে ঝটকা একটু বেশি লেগেছে। মেয়েটা যত্ন নিয়ে ফলের থালা নিয়ে বসে আছে ওর পাশে। ওর দিকে ইশারা করলো বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসতে। জুবায়ের বাড়িতে আসেনি। দেয়াল ঘড়িতে সময় দুটো বেজে চল্লিশ মিনিট। মানে মধ্যরাত। মেয়েটা এতো রাতে ওকে খাওয়াতে এসেছে, কিন্তু কেনো? অধরা কৌতূহলী হয়ে বলে উঠলো,
> বলির পাঠাকে খাতির যত্ন করে মোটাতাজা করছেন? এতো রাতে কষ্ট করে আসলেন কিন্তু আমার ক্ষুধা পাইনি।
অধরার কথা মেয়েটা শুনলো কি বোঝা গেলো না।তবে শুধু মলিন হেসে অধরার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে তাগিদ দিলো ফ্রেস হওয়ার জন্য। অধরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে দ্রুত উঠে গেলো। ক্ষুধা যে পাইনি এমন না। পেটে রীতিমতো ইদুর দৌড়াচ্ছে। অধরা সময় নষ্ট করলো না। খেয়ে নিলো। মারিয়া ওর হাতটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে নীরবে ওষুধ লাগিয়ে পূনরায় ব্যান্ডেজ করিয়ে দিলো। বিছানা ঠিকঠাক করে চলে গেলো। অধরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। মেয়েটা যদি কথা বলতে পারতো কত ভালোই না হতো। নিজের কষ্ট গুলো শোনানোর মতো এই পৃথিবীতে ওর আপনার কেউ নেই। বাবা মাকে খুব মনে পড়ছে। তাঁরা কি বুঝতে পারছে তাদের আদরের মেয়েটা একদম ভালো নেই। একদম ভালো নেই। কয়েক ফোঁটা পানি অধরার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো।
ল্যাপটপে গভীর দৃষ্টি রেখে বসে আছে জুবায়ের। মেয়েটার প্রতি ওর সহানুভূতি জাগে তবে সেটা সাময়িক। বিয়েটা ওকে জোরজবরদস্তি করে করানো হয়েছে। নিজের উপরে জুলুম করে মেয়েটার সঙ্গে থেকেছে। স্বামীর দ্বায়ীত্ব পালন করেছে। ওর কি দোষ। ও নিজেও তো যন্ত্রণা পাচ্ছে। হুটকরে বিয়ে করিয়ে দিলো। জুহি ছাড়া কাউকে ও সহ্য করতে পারেনা। এই মেয়েটার জন্য ওর জুহিকে কাছে টানতে বিবেকে বাঁধে। জুহির সঙ্গে ওর ক্রমশ দুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। যেটা ওর সহ্য হচ্ছে না। অধরা কাঁদছে জুবায়েরের দেখছে আর ভাবছে,এর চাইতে হাজারগুন দুঃখ জুবায়েরের হৃদয়কে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করছে। ও নিজে যেখানে ভালো নেই সেখানে পৃথিবীর কেউ ভালো থাকতে পারবে না। এই মেয়েটা না থাকলে ওর আর জুহির মিলনে কেউ বাঁধা হয়ে আসবে না। কতদিন সহ্য করতে হবে কে জানে। কথাগুলো ভেবে ও উঠে গেলো।
☆☆☆☆☆☆
ভোরবেলা নামাজ পড়ে বাইরে বের হলো অধরা। বাকীটা রাত ওর ঘুম হয়নি। শরীর পূর্বের চাইতে ভালো। মন খারাপ ছিল ভোরের সূর্যোদয় দেখে সেটা কেটে গেছে। আজ থেকে রহস্যের সমাধান করতে উঠেপড়ে লাগবে। শাশুড়ির রুমে আবারও যাবে। সেখানে হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। খুব আফসোস হলো নিজের কাছে একটা ফোন নেই ভেবে। থাকলে ভালো হতো। বন্ধু বান্ধবী অনেকেই আছে। তাঁদের থেকে সাহায্য নেওয়া যেতো। কথা গুলো ভেবে ও শাশুড়ির রুমের দরজা খুঁলে ভেতরে প্রবেশ করলো। সেদিনের পর থেকে এই রুমটা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। অধরা ভেতরে পা দিয়ে চমকে উঠলো। মেঝেতে র*ক্তা*ক্ত মানুষের মাথার খু*লি পড়ে আছে। অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠলো অধরা। মনে প্রশ্ন জাগলো, এটা কার খু*লি?
চলবে