কলঙ্কের দাগ পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
5

গল্প #কলঙ্কের_দাগ
অন্তিম পর্ব
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

মহুয়াকে অফিসার জিগ্যেস করলো ” ওরা আপনার মেয়েকে শা”রীরিক হ্যারেজ করেনি?তাহলে খু”নের সিদ্ধান্ত নিলেন কেনো? ”

মহুয়া এখনো চুপ করে রইলো।অফিসার কঠিন স্বরে ” কান্না থামান।এসব দেখিয়ে সহানুভূতি পাবেন ভেবেছেন?মহিলা জন্য ভদ্র ভাবে কথা বলতেছি।এখন দেখছি মাথায় উঠে গেছেন,তিনটা মানুষ খু”ন করেছেন।এতোটাও ভোলাভালা নন ”

মহুয়া চোখের জল মুছে ” আমি নিজের জন্য কাঁদছি না।ছোট্ট মেয়েট মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হলো ”

অফিসার হেসে ” ওই মেয়ে আপনার থেকে কি শিখতো? কি করে স্বামী খু”ন করতে হয়?যাইহোক,প্রথম থেকে শুরু করুন ”

মহুয়া বলতে শুরু করলো ” সে রাতে টুকুর বাবা,মজিত আর নওজান বাইরের আমের গাছটায় বসে তাশ খেলছিলো।আমি এ নিয়ে ওনাকে বারণ করেছি,নে”শাগ্রস্ত হয়ে যেন বাড়ির সামনে আসর না বসায় ”

” আপনার স্বামীর পেশা কি?কি কাজ করে? ”

মহুয়া হেসে ” ও মরোদ কাজ করবে কি!জায়গাজমি সব বেঁচে মদ বিড়ি খায়।বিয়ের পর আমার গহনা,মায়ের পক্ষের জমি সব বিক্রি করে দিয়েছে ”

” মেয়ের বিষয়ে আসুন ”

” দেড় মাসের মতো হলো।ও ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে আসলো।মেয়ের জন্য চুরি,লিপস্টিক,সাজগোছের কি কি যেন আনলো।আমি বিস্মিত হয়ে জিগ্যেস করলাম

” এতোকিছু কে দিলো?”

” কে আবার দিবে।মেয়ের জন্য কিনেছি ”

” টাকা কোথায় পেলে ”

” এতো কথা শুনে তোমার কাজ নাই।মাছ এনেছি,পাতলা করে মাছের ঝোল রাঁধো ”

রাতে খাওয়াদাওয়া করলাম।টাকা কোথায় পেলো সে প্রসঙ্গ তুললাম না।নিশ্চয়ই জুয়ার আসরে লাভ হয়েছে।মাঝেমধ্যে ওর জুয়ায় লাভ হয়।

খাওয়াদাওয়ার পর শরীরটা ভারী হয়ে এলো।ঘুমিয়ে পরলাম।তখনও জানতাম না আমার খাবারে ঘুমের কিছু মেশানো ছিলো।ও আমায় ঘুমিয়ে রেখে মেয়ের ঘরে মজিত আর নওজানকে নিয়ে যায়।

আমি তো বিষয়টা ধরতে পারিনি।কল্পণাও করতে পারিনি ওই কাপুরুষ এতো পাষাণ আর নরপিশাচ।পরেরদিন সকালে টুকু আমায় বলছে ওর নাকি বু”কে,কোম”ড়ে ব্যথা করছে।শুরুতে ভাবলাম শোয়ার বেতিক্রম।

তারপর থেকেই ও মেয়ের জন্য অনেককিছু কিনে আনে।নেশার সামগ্রীও বাড়তে লাগলো।আমি বুঝে উঠতে পারলাম না ব্যাপারটা কি।মেয়ের আর আমার শরীর যেন ঠিক থাকে সেজন্য রোজ আধা কেজি করে দুধের ব্যবস্থা করলো।

দু-তিনদিন পরপরই রাতে খাওয়ার পর শরীর কেমন হালকা হয়ে আসে।সারারাত ঘুমাই,পরেরদিনও সারাদিন ঘুম পায়।বহু কষ্টে জেগে থাকি।মেয়েও দু তিনদিন পরপর বলে গায়ে ব্যথা,কেউ তাকে জ”রিয়ে ধরে।একদিন লক্ষ্য করলাম ওর পিঠে আঁচড়ের দাগ।

কেমন সন্দেহ হলো।মনে হতে লাগলো কিছু একটা সমস্যা আছে।এরপর খাওয়া শেষে মেয়েকেও দুধ দিইনা,আমিও খাইনা।টুকুর বাবা বারবার দুধ খেতে জোরাজুরি করতে লাগলো৷

অফিসার এই পর্যায়ে এসব শুনে বললো ” তাহলে বিষয়টা হলো দুধেই ঝামেলা করে আপনাকে আর টুকুকে ঘুম পাড়িয়ে মজিত আর নওজানকে মেয়ের ঘরে ঢুকিয়ে দিতো ”

মহুয়া কাঁদছে।অফিসার বললো ” বিষয়টা ধরলেন কিভাবে? ”

” সেরাতে দুধ খাইনি।ঘুমের ভান ধরে ছিলাম।টুকুর বাবা বারান্দায় বসে আছে।বুঝলাম কিছু একটা ঝামেলা আছেই।মাঝরাতে ও বারান্দায় বসে থাকবে কেনো!একটুপর ফিসফিসানি আওয়াজ পেলাম।এতো রাতে কে এসছে!তারপর মেয়ের ঘরের ছিটকিনি খোলার শব্দ পেলাম।বিষয় কি বুঝতে চুপিচুপি বিছানা ছেড়ে উঠলাম।মেয়ের ঘর আমাদের ঘর পাশাপাশি।দেখলাম দরজার ছিটকিনি খুলে মজিত ঢুকছে।

আমায় দেখে সমীর,মজিত,নওজান তিনজনই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।”

অফিসার বিষণ্ন চাহনিতে ” সমীর তখন কিছু বলেনি? ”

” ও তখন নেশায় ভুত হয়ে ছিলো।কয়েকটা চ”র দিয়েছিলাম গা”লে। ও বলেছিলো ওরা দুজন শুধু মেয়ের শরীর স্প”র্শ করতো।এর বেশী কিছু না ”

অফিসার ” খু”নের কারণ এটাই ”

” হ্যা ”

” একসাথে তিনজনকে মা”রলেন কিকরে ”

” একসাথে মা”রিনি।সমীরকে প্রথমে ওর পাতানো জালেই ফাঁসিয়েছি।ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়েছি।তারপর মাঝরাতে খাদে ফেলেছি।ঢাকনা দেওয়ার সময় ওরা দু’জন দেখে ফেলে।তারপর…”

” আপনার উচিত ছিলো তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া ”

” তাতে তো বেঁচে থাকতো।ওর একটাই শাস্তি,মৃ”ত্যু ”

” ওরা তো একপ্রকার মুক্তি পেয়ে গেলো।আর আপনি!বাকি জীবনটা জেলে কাটাতে হবে ”

———–সমাপ্ত—————–

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে