গল্প #কলঙ্কের_দাগ [কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]
পর্ব=৪
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়
দুপুরের দিক বাড়িতে পুলিশ অফিসার হাজির।ভয়ে মহুয়ার মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেলো।অফিসার নির্লিপ্ত স্বরে বললো…
” আপনার কথা হিসেবে আপনার স্বামী,সমীর গত চারদিন আগে শহরে গেছে।অথচ তৃতীয়দিন রাতে সে তার মেয়েকে সাজগোছের সামগ্রী কিনে দিয়েছে।কোন দৈববলে এটা সম্ভব বলতে পারেন মিসেস মহুয়া? ”
মহুয়া আমতা আমতা করে বললো ” ওসব উনি দেননি ”
অফিসার হেসে ” তাই? আপনার মেয়ে তাহলে মিথ্যা বলছে? ”
” ও মিথ্যা বলেনি।আমিই ওকে বলেছি এসব তোমার বাবা কিনে দিয়েছে।সেজন্য বলেছে ”
” আপনার স্বামী না কিনলে কে কিনে দিয়েছে সেসব? ”
” আমি জানিনা।দরজার কাছে রাখা ছিলো ”
” দরজার কাছে রেখে গেলো,আপনি টের পেলেন না? ”
” না ”
” আচ্ছা।গ্লাসটা ফেরত দিতে এলাম।নিন ”
অফিসার গ্লাস এগিয়ে দিলো।মহুয়া কম্পিত হাতে গ্লাসটা নিলো।অফিসার বললো
” আপনার রাতে ঘুম হয়না? ”
মহুয়া বুঝলো অফিসার গ্লাসের অবশিষ্ট অংশ থেকে বেড় করেছে দুধে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিলো।মহুয়া বললো
” টুকুর বাবা খায় ”
” গ্রামের লোকজন যতটুকু বললো,আপনার স্বামী রোজ নেশা করেন।নেশাক্তদের তো ঘুমের ওষুধ প্রয়োজন পরে না ”
” আসলে মাতলামি যখন বেড়ে যায় তখন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিই।ঘরে ছোট মেয়ে আছে।মাতলামি বেড়ে গেলে গায়ে হাত তোলে ”
” আপনি অনেক গুছিয়ে কথা বলতে পারেন।আসি,শীঘ্রই আবার দেখা হবে ”
” গ্লাসটা নিয়ে গিয়েছিলেন কেনো জানতে পারি? ”
অফিসার মৃদু হেসে ” ডিজাইনটা পছন্দ হয়েছিলো।বউকে দেখিয়ে এনেছি। ”
কথাটা বলে সে দুকদম হেঁটে আবার দাঁড়িয়ে বললো ” আপনি কখনো ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন? ”
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে বললো ” না ”
” খেলে কি হয় জানেন? ”
” কি হয়? ”
” ব্রেইন সার্প হয়।পাশেই তিনটা মানুষ খু”ন হয় তবুও টের পাওয়া যায় না ”
অফিসার চলে গেলো।মহুয়ার চোখ মুখ দিয়ে গরম ভাব বের হতে লাগলো।সে কি ধরা পরেছে?ধরা পরলে পুলিশ দেরি কেনো করছে? তারমানে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে!
সমীরের দেওয়া সাজগোছ,জামাকাপড়ের বিষয়টা মহুয়া মিথ্যা বললেও প্রকৃত পক্ষে সত্যিই বলেছে।কারন মহুয়া জানে ওসব তার স্বামী সমীর কিনে আনেনি৷কিনে দিয়েছে নোংরা মানসিকতার মানুষ মজিত আর নওজান।কিনে দেওয়ার কারণও আছে।ভয়ঙ্কর কারণ।এই কারণেই তাদের পৃথিবীতে ঠাঁই দেয়নি মহুয়া।
মহুয়া টুকুর কাছে গেলো।মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।আজ ছুটির দিন।কি নিষ্পাপ মুখ।টুকুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই টুকু জেগে উঠলো।মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।মহুয়া বললো
” টুকু ”
” উু ”
” মাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না? ”
” উঁহু ”
” খুব শীঘ্রই তোমার মাকে সবাই খারাপ ভাববে।এতে আমার কোনো আফসোস নাই।আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি।তুমি একদিন মাকে নিয়ে গর্ব করবে ”
টুকু ঘুমজরিত স্বরে বললো ” উু ”
মহুয়া দেখলো টুকুর চোখ বন্ধ,ঘুমিয়ে পড়েছে।কপালে চু”মু দিয়ে বিছানায় শোয়ালো।
বিকেলে টুকুকে নিয়ে গেলো বাজারে।টুকুর পছন্দের মাছ কিনলো।সময় কম,মহুয়ার ইচ্ছে জেলে যাওয়ার আগে মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবে।
বাজার করে বাসার সামনে আসতেই টুকু ভয়ে মায়ের শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো।হাত চেপে ধরে ভয়ার্ত স্বরে বললো
” মা আমাদের বাড়িতে পুলিশের গাড়ি কেনো? ”
মহুয়া হেসে বললো ” কি করে বলবো? চলো গিয়ে দেখি ”
আঙ্গিনায় অফিসার চেয়ারে বসে আছে।তার সাথে বেশ কয়েকজন পুলিশ সাথে স্যুট পরিহিত তিনজন দাঁড়িয়ে।মহুয়াকে দেখে অফিসার বললো
” ম্যাডাম আপনাকে বিরক্ত করতে চলে এলাম ”
মহুয়া রান্নাঘরে বাজার রাখলো।টুকুকে ঘরে যেতে বললো।অফিসারকে বললো
” বিরক্ত কেনো করবেন! চা করি? চা খান ”
” চা খাবো না।একটা তথ্য দিতে এলাম ”
” কি? ”
” আপনি ঠিকই বলেছেন।ওইরাতে আপনার স্বামী না,অন্যকেউ কিনে দিয়েছিলো।জানতে চান কে? ”
” কে? ”
” নওজান আর মজিত।এ গ্রামে একটা দোকানেই এসব পাওয়া যায়।দোকানে খোঁজ নিয়ে জানলাম ওরা কিনেছে ”
” ও আচ্ছা ”
” মজার ব্যাপার হলো ওরা প্রায়ই সেখান থেকে চকলেট,সাজার জিনিস কিনতো।কিন্তু ওদের দু’জনারই ছেলে সন্তান।মেয়েদের জিনিস কেনো কিনতো বলুন তো? আপনার মেয়েকে দিতে? ”
মহুয়া চুপ করে রইলো।অফিসার বললো ” আপনার স্বামীর সাথে তাদের মিল ছিলো।সেজন্যই বোধহয় দিতো৷এখন আসল কথায় আসি ”
” হু ”
” যে রাত থেকে মজিত,নওজান নিখোঁজ সে রাতে ওরা আপনার বাসায় এসছিলো।দুধের গ্লাস সমীরের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।সে হিসেবে সমীরও সেরাতে বাড়িতে ছিলো ”
মহুয়ার শরীর কাঁপতে লাগলো।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।অফিসার বললো ” মিথ্যা বলার কারণ? ”
” আ..আমি ঝামেলায় জড়াতে চাইনি ”
” সব থেকে অবাক হওয়ার বিষয়টা এখন বলবো ”
” কি? ”
” টয়লেটের মল জমা হওয়ার খাদে আমরা কোনো লা”শ পাইনি ”
মহুয়ার মুখ হা করে গেলো।এটা কি করে সম্ভব,সে নিজে হাত পা বেঁধে তিনজনকেই খাদে ফেলেছে।ওরা কি সেখান থেকে পালিয়েছে? সেটা কিভাবে সম্ভব?মহুয়া ঢাকা দেওয়ার পরও ১০ মিনিট সেখানে বসে ছিলো।লা”শ পাওয়া যায়নি এটা কিভাবে হতে পারে!