গল্প #কলঙ্কের_দাগ [কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়
পর্ব=৩
মহুয়া স্বামীর হাত পা বেঁধে খাদে ফেললো।পেছন ফিরে দেখলো দুজন দাঁড়িয়ে!একজন বললো ” মানুষটারে মা”ইরা ফালাইলেন? ”
মহুয়ার সারা শরীর কাঁপছে।ঘামে গা মাখামাখি।চাদর মুড়ি দেওয়া দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে।মহুয়ার পায়ের তল থেকে মাটি সরে গেলো।এরা কখন থেকে তার উপর নজর রাখছিলো? ওরা কি দেখেছে মহুয়া সমীরের হাত পা বেঁধে খাদে ফেলেছে?
তাদের হাতে টর্চের সামান্য আলো।সেই আলোয় একজনের মুখ দেখা গেলো।মাঝবয়সী,চোখের দৃষ্টি ভয়ঙ্কর,ওনার নাম মজিত।নেশা করে পুকুরপাড়ে শুয়ে থাকে।অন্যজন নওজান,মজিতের ডান হাত।একসাথে চোরাচালানের কাজ করে।মহুয়ার স্বর যেন আঁটকে গেছে।কিছুই বলতে পারছে না।
মজিত বললো ” মাইয়া মানুষের এতো সাহস! ”
নওজান বললো ” পালা,পালা,এইহানে থাকোন যাইবো না।গেরামের লোকজনরে খবর দে ”
মহুয়া আকুতির স্বরে ওদের পা জড়িয়ে ধরে ” কাউরে বইলেন না,আপনের পায়ে ধরি ”
” পা ছাড় মা*,ঘরের বউ হইয়া ভাতাররে মা”ইরা ফালাইছোস “।কথাটা বলে মহুয়াকে লাথি মে”রে সরিয়ে দিলো।
তারপর কেটে গেলো দুইদিন।তিনদিনের দিন গ্রামে সোরগোল পরে গেলো।মজিত,নওজানকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।মহুয়া সকালে ভাত রেঁধেছে।আঙ্গিনায় বসে লাউশাক কুটছে।এমন সময় সুরাজির মা এলো।আঙ্গিনায় গালভর্তি পানের পিক ফেলে বললো
” ঘটনা হুনছোস? ”
মহুয়া আগ্রহ ভঙ্গিতে বললো ” কি? ”
” মজিত আর নওজানরে নাকি খুইজ্জা পাওন যাওচে না ”
” দেখো নেশা করে কোন পুকুর পাড়ে পরে আছে ”
” কোত্থাও নাই।হেগো বউঝিরা হায়রে কান্দান!তোগো বাড়িত নাকি আইছিলো,সমীরের লগে কতা কইতে।তুই কিছু জানোস? ”
মহুয়ার চোখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে গেলো।যশসম্ভব নিজেকে সামলে ” কই না তো ”
” সমীররে কইতে হইবো।সমীর কই?ওরেও তো দেখিনা, দোকানেও আহে না ”
মহিলার পানের দোকান।সমীরের আড্ডা সেখানেই।মহুয়া বললো ” কাজে গেছে,শহরে ”
এমন সময় মজিতের বউ ছুটে এলো।হাউমাউ করে কেঁদে ” আপা আপনের ভাইরে দেখছেন? সমীর ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আইছিলো,আর ফিরেনাই ”
” ওনারা তো এখানে আসেনি ”
” সমীর ভাই কই?উনি কইতে পারবো ”
” উনি শহরে গেছেন।কাইন্দো না,ঘরে যাও।ঠিক ফিরবে ”
মহুয়া সতর্কতায় দুজনকেই বিদায় দিলো।ঠান্ডা এক গ্লাস জল খেলো।হাত পা কাঁপছে।মেয়ে স্কুল থেকে ফিরেছে।ভয় ভয় চোখে বললো
” মা,মা,পুলিশের গাড়ি ”
মহুয়া চোখ বড়বড় করে বললো ” পু…পুলিশ! কোথায়? ”
” নওজান চাচার বাড়িতে।নওজান চাচা নাকি হারায় গেছে।এখন আমায় কে চকলেট, জামা কিনে দিবে।বাবাও তো নাই।মা বাবা কোথায় গেছে? ”
মহুয়া মেয়েকে ডেকে নীচু স্বরে বললো ” তোমার বাবা শহরে গেছে।আচ্ছা মা,পুলিশের কথা কিছু শুনেছো? ”
” না। আমি তো ভয়ে দৌড়ে এসছি ”
” আচ্ছা হাত মুখ ধোঁও।আমি ভাত দিচ্ছি ”
বিকেলের দিক মহুয়া তিনজন পুলিশের সামনে বসা।প্রধান একজন,বাকি দুজন কনস্টেবল।মেইন যিনি,টেবিলে রাখা গ্লাসটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।গ্লাসের চারপাশে পিঁপড়া।পিঁপড়ার দল মেঝে বেয়ে গ্লাসের মধ্যে ঘুরপাক পাচ্ছে।মেইন পুলিশ অফিসার বললো
” আপনার স্বামী কোথায়? ”
মহুয়া প্রানপণ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।স্বর তবুও এলোমেলো। বললো ” উনি একটু শহরে গেছেন ”
” কবে গেছে? ”
” চারদিন আগে ”
মহুয়া মিথ্যা বললো।তিনদিন আগে বললে পুলিশ ভাবতো মজিত,নওজান সমীরের সাথে দেখা করতে এসেছিলো।তখন সন্দেহ বাড়বে।মহুয়া খুব কৌশলে নিজেকে প্রস্তুত করেছে।কোনোরকম সন্দেহ হতে দেওয়া যাবে না।পুলিশ বললো ” তিনদিন আগে মজিত আর নওজান আপনার স্বামীর সাথে দেখা করতে এসেছিলো? ”
” ওনারা তো আসেননি।তাছারা সমীর শহরে,দেখা করবে কি করে ”
” তাও ঠিক। আপনার মেয়ে কোথায়? ”
” ওই ঘরে,সাজগোছ করছে ”
” মেয়ে সাজগোছ পছন্দ করে নাকি? ”
” হ্যা ”
” যাদের পাওয়া যাচ্ছে না তারা খারাপ মানুষ। পুলিশের চাকরি নিয়ে বিপদে পরেছি,খারাপ মানুষকে খুঁজতে হয়।তার উপর নে”শাক্ত।কে জানে নেশা করে কোথায় চলে গেছে!ওদের জন্য আপনাকে বিরক্ত করতে চলে এলাম।কিছু মনে করবেন না।চা খাওয়াতে পারেন? ”
” অবশ্যই ”
মহুয়া ঘর থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে গেলো।আতঙ্কে তার শরীর গুলিয়ে উঠছে।কলপাড়ে গিয়ে হাতে মুখে জল দিলো।চা বানিয়ে ঘরে যেতেই দেখলো পুলিশের কেউই নেই৷
মহুয়ার শরীরে কারেন্ট খেলে গেলো!চট করে তাকালো টেবিলে।সেখানে ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধের গ্লাসটা রাখা ছিলো।অন্যসব প্রমান লুকাতে গিয়ে গ্লাসটার দিকে তার খেয়ালই ছিলো না৷তন্নতন্ন করে গ্লাসটা খুঁজলো।কোথাও নেই।তবে কি পুলিশ সেটা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে!
মহুয়া মেঝেতে বসে পরলো।গ্লাসে সমীরের হাতের ছাপ আছে।হাতের ছাপ দেখে কি বেড় করা যায় ছাপটা কতদিন আগের? যদি বেড় করা যায় তাহলে মহুয়া নিশ্চিত ফেঁসে যাবে।মেয়ল ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে মাকে দেখে
” মা কি হয়েছে তোমার? ”
” কি..কিছু না ”
” পুলিশ আঙ্কেল এসছিলো,আমার সাথে গল্প করে চলে গেছে ”
” আচ্ছা টুকু,ওদের হাতে কোনো গ্লাস ছিলো? ”
” দেখিনি তো ”
” ওরা তোমায় কিছু বলেছে? ”
” হ্যা।বলেছে আমি দেখতে নাকি অনেক সুন্দর ”
” আচ্ছা এখন পড়তে বসো যাও ”
সারারাত কাটলো মহুয়া ঘুমাতে পারলো না।বিছানায় শুয়ে এপাশওপাশ করলো শুধু।পরেরদিন পুলিশ বাড়িতে উপস্থিত…
” আপনার কথা হিসেবে সমীর গত চারদিন আগে শহরে গেছে।অথচ তৃতীয়দিন রাতে সে তার মেয়েকে সাজগোছের সামগ্রী কিনে দিয়েছে।কোন দৈববলে এটা সম্ভব বলতে পারেন মিসেস মহুয়া? ”
চলবে?