#উপন্যাস
#কনে_দেখা_আলো
#পর্ব_বাইশ
শরফুদ্দিনের এসব কথাবার্তা শোনার সময় কিংবা ইচ্ছা কোনোটাই জুলেখার নাই। সে বুঝতে পারছে এই লোকটা সেই ওসি না। যে ওসির কথা সুফিয়া তাকে বলেছিল, জুলেখা তাকে এক নজর ভালোভাবেই দেখেছে। দেখতে শুনতে তাগড়া, লম্বা। এই দুজনকে দেখে তো পুলিশই মনে হয় না! কিন্তু ওসি সাহেবকে দেখলেই মনে শ্রদ্ধা জাগে। জুলেখা নিজেকে সংযত করে গুছিয়ে বলল, ‘আমি ওসি সাহেবের কাছে আইছি। আমার বইনরে…’ কথাটা বলতে গিয়েই থেমে গেল জুলেখা। মনে হলো, সে এই লোকের কাছে কেন বলছে?
‘হ্যাঁ তোমার বইনরে… কী হইছে কথা শেষ করো মাইয়া। কী হইছে তুমার বইনের?’
‘আমি আপনেরে কমু না। ওসি সাহেবরে কমু!’ জুলেখা ঘাড় শক্ত করে কথাটা বলল, একদম সুফিয়ার মতো। নেয়ামত উল্লাহ অবাক চোখে জুলেখার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের সাদাসিধা মেয়েটাকে আজ একেবারেই অপরিচিত লাগছে তার কাছে!
‘ঐ যে আরেকজন আইছে দেখো! এক রামে রক্ষা নাই, তার সুগ্রীব দোসর! সকাল থেইকা এক মাইয়ার শুভ আগমনে আজ অখন অব্দি ঘরে যাইবার পারলাম না। অখন আবার আরেকজন আইসা ওসি সাবেরে খুঁজতাছে। বেবাক কিছু কি ওসি সাবই সামলাইব? আমাগোরেও দুই চারটা কামকাইজ দিয়েন। নইলে তো বইসা বইসা হয়রান হইয়া যামুগা!’ শরফুদ্দিন মনের ক্ষেদ একেবারে গোড়াসহ উপড়ে দিলো!
‘কে বসে বসে হয়রান হয়ে যাচ্ছে শরফুদ্দিন? তুমি? এদিকে আমি তো কাজের চাপে ডেস্ক থেকে মুখই তুলতে পারছি না!’ বলতে বলতে ওসি জামান শিকদার তার পাশের রুমে প্রবেশ করে।
ঘড়িতে বাজে সাড়ে সাতটা। এমন কিছু আহামরি রাত না। কিন্তু গ্রামদেশে এই সময়েই বাইরে শেয়াল ডাকতে শুরু করে। চারপাশে নিশুতি নেমে আসে। এই শুনশান নীরবতায় আশেপাশের অল্প একটু শব্দও বড় করে শোনা যায়। শরফুদ্দিন কোনো একটা মেয়ের সাথে বেশ তেজ দেখিয়ে কথা বলছে, এটা নিজের রুমে বসেই শুনতে পেয়েছে জামান শিকদার। এত রাতে মেয়ে এলো কোথা থেকে?
পাশের রুমে এসে একটু বিস্ময়ের ধাক্কা লাগল জামান শিকদারের। একটা তেইশ চব্বিশ বছর বয়সী তরুণী আর মাঝবয়সী একজন লোক এই সময়ে পুলিশস্টেশনে! মেয়েটার বেশবাস আলুথালু। শাড়িতে ছোপ ছোপ কাদামাটি লেগে আছে। মাথার এক ঢাল চুল খোঁপার বাধনে বাঁধা ছিল হয়ত। সেগুলো খোঁপা খুলে এলোমেলো ছড়িয়ে আছে পিঠময়। কিছু কপালের কাছাকাছি এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। মেয়েটার চোখেমুখে গাঢ় বেদনার ছায়া। দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব ভয়ানক কিছু একটা অঘটন ঘটে গেছে তার জীবনে! লোকটার অবস্থাও বেশি সুবিধার না।
কিন্তু এতকিছুর পরেও যে কথাটা জামান শিকদারের খুব তীব্রভাবে মনে হলো তা হচ্ছে মেয়েটাকে সে যেন কোথায় দেখেছে! ঠিক মনে পড়ছে না। কিন্তু দেখেছে খুব কাছাকাছি সময়েই!
‘কী ব্যাপার? কী হয়েছে? শরফুদ্দিন কী বলছিলে তুমি?’
‘স্যার দেখেন না, আমি এই মেয়েটাকে বলছি তার কমপ্লেইন কী সেটা বলতে। লিখে নিব। কিন্তু সে আমাকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে। বলছে যে…’ শরফুদ্দিন বলতে বলতে থেমে গেল। জুলেখা ওসি সাহেবকে আসতে দেখেই হড়বড়িয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।
‘ওসি সাব, আপনে আমার বইনরে খুঁইজা দ্যান! আমার বইনরে তুইলা নিয়া গ্যাছে ওসি সাব!’ জুলেখা কাঁদতে কাঁদতে বলল।
‘আপনার বোন? কী হয়েছে আপনার বোনের? নাম কী? মিসিং কেস? কাউকে সন্দেহ করছেন?’
‘ওসি সাব ওরে আপনে চেনেন। আইজও সে আপনের লগে দেখা করছিল। আমার বইনের নাম সুফিয়া! ওরে দুইজন মানুষ জোর কইরা নাকের কাছে কী জানি গুইজা দিয়া অজ্ঞান কইরা নিয়া গ্যাছে!’
‘সুফিয়াকে তুলে নিয়ে গেছে? সর্বনাশ! আপনে সুফিয়ার বোন? কখন ঘটল এই ঘটনা?’ জামান শিকদারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সুফিয়া নিজের জীবনের অনেক বড় ঝুঁকি নিয়ে পুলিশকে সাহায্য করেছে। তাকে আরো ভালোমতো নিরাপত্তা দেওয়া উচিত ছিল। নিজের ওপরে ভীষণ রাগ লাগছে জামান শিকদারের।
ওদিকে ঘটনা শুনে তো শরফুদ্দিনের ইচ্ছে করছে এক পাক নেচেই নেয়! একেই বলে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে! খুব হিরোগিরি দেখানোর সাধ হয়েছিল না? দুই টাকার এক ছেমড়ি! পুঁটি মাছ হয়ে রুই কাতলের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে এসেছে!
আর ওসিরও খুব জেমস বন্ড সাজার শখ হইছিল! দ্যাখ এইবার ব্যাটা! কত ধানে কত চাল!
জামান শিকদার শশব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে, ‘আপনারা দুজন আমার রুমে আসেন। রেজা শরফুদ্দিন তোমরা আজ পুলিশ স্টেশন থেকে বের হবে না। দরকার হলে বাসায় জানিয়ে দাও যে আজকে ফিরতে পারবে না। খাওয়া দাওয়া ঘুম সব এখানেই সারতে হবে। আজকে আমাদের রাতেও অপারেশনে যেতে হবে!
এই নতুন হুকুম শুনে শরফুদ্দিনের মুখের ভাবখানা যা হলো, তা দেখার মতো! মনে হচ্ছে কেউ বুঝি তাকে জোর করে নিমপাতার বড়া খাইয়ে দিয়েছে। মনে মনে প্রচণ্ড মুখ খারাপ করে সে জামান শিকদারকে একটা গালি দিলো। সেই গালি শুনলে আশেপাশে মশামাছিও বসতে চাইত না।
জুলেখা আর নেয়ামত উল্লাহকে নিজের রুমে বসিয়ে জামান শিকদার তাদের একটু ধাতস্থ হয়ে নেওয়ার সময় দিলো। মেয়েটাকে সে এবারে চিনতে পেরেছে। সুফিয়াকে সেই প্রথম দিন যখন তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়েছিল, তখন কিছু দূরেই তার এই বোনটি এসে দাঁড়িয়েছিল। লাউয়ের মাচান থেকে লাউ তুলছিল। কিন্তু সেদিনের স্নিগ্ধ মায়াময় মুখটাতে আজ মলিনতার রাজত্ব। দেখে বোঝাই যাচ্ছে অনেক বড় ঝড় বয়ে গেছে মেয়েটার ওপর দিয়ে।
জামান শিকদার কোমল গলায় বলল, ‘আমাকে প্রথম থেকে খুলে বলেন তো কী হয়েছে। কোনো কিছু বাদ দিবেন না। ছোট থেকে ছোট ব্যাপারও উল্লেখ করবেন। বুঝতেই পারছেন সবকিছুই জানা জরুরি।’
জুলেখা বিকেলে সুফিয়ার বাড়িতে ফেরার পর থেকে যা যা ঘটেছে সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলে গেল। ফুলিদের বাড়িতে গিয়ে যা যা ঘটেছে সবকিছু বিস্তারিতভাবে বলল। বলার সময় ইচ্ছে করেই ফুলির স্বামীর কথা বারবার বলল। আর আচার আচরণের বিস্তারিত বর্ণনা দিলো। জুলেখার বাবা নেয়ামত উল্লাহ হাঁ করে সব কিছু শুনছিল। জুলেখার আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ় মনোভাব দেখে আজ অবাক না হয়ে পারছে না নেয়ামত উল্লাহ। তার মেয়েটার মাঝের এত আত্মবিশ্বাস এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল?
জামান শিকদার একটাও কথা না বলে সবকিছু খুব মন দিয়ে শুনল। ফুলির স্বামীর কথা শোনার সময় ভ্রু কুঁচকে দুই একবার জুলেখার মুখের দিকেও তাকাল। জুলেখা যখন তার দুই পায়ে দুই রঙের মোজার কথা বলছিল তখন অবাক না হয়ে পারেনি। মেয়েটা দেখা যাচ্ছে অনেক কিছু খেয়াল করে! বিবরণ শেষ হওয়ার পরে জামান শিকদার জিজ্ঞেস করল, ‘অর্থাৎ দুজন লোকেরই মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। আর কিছু কি খেয়াল করেছেন? কাউকেই চিনতে পারেননি?’
জুলেখা একটু ভেবে নিয়ে শান্তমুখে বলল, ‘চিনছি ওসি সাব। একজনরে চিনবার পারছি!’
‘ভেরি গুড! কে সে? বলুন!’
‘তার দুই পায়ে ছিল দুই রঙের মোজা! এইডাই খেয়াল করছি!’
‘হোয়াট? তার মানে… তার মানে আপনি বলতে চাইছেন ফুলির স্বামী ছিল দুজনের একজন?’
‘জি ওসি সাব। একজন ফুলির স্বামীই ছিল।’
নেয়ামত উল্লাহর মুখ এখন পুরোপুরি হাঁ! জামান শিকদার জুলেখাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কিন্তু আপনি এতটা নিশ্চিত হয়ে কীভাবে বলতে পারছেন? দুই পায়ে দুই রঙের মোজা তো অনেকেই পরে! এটা খুব আনকমন ব্যাপার না। মাঝে মাঝে হাতের কাছে খুঁজে না পেলে আমিও এই কাজ করে ফেলি!
শুধু এটা দেখেই কি একজনকে পুরোপুরি সনাক্ত করা সম্ভব? আর তাছাড়া ঘটনা যখন ঘটেছে তখন চারপাশে অন্ধকার। গ্রামের অন্ধকার মানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঐ অন্ধকারে আপনি এত নিখুঁতভাবে কীভাবে দেখতে পেলেন?’
‘আমি ভুল দেখিনি ওসি সাব। এই গরমের মইধ্যে গেরামের মানুষ মোজা পরে না। ফুলির স্বামীর এক পায়ে ছিল কালা আরেক পায়ে লাল চকরাবকরা মোজা। অন্ধকার ছিল এই কথা ঠিক, কিন্তু একবার বিদ্যুতের আলো চমকাইছিল। আমি সেই আলোতে পরিষ্কার দ্যাখছি। আমার দেখার মইধ্যে এট্টুও ভুল নাই!’
‘হুম… ঠিক আছে। আপনি যখন এত নিশ্চিতভাবে বলছেন… তাহলে এই ক্লু ধরেই আমাদের এগুতে হবে। আপনি চিন্তা করবেন না। সুফিয়াকে আমি খুব স্নেহ করি। ও আমাদের অনেক বড় উপকার করে দিয়েছে। ওকে খুঁজে বের করা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য!’
এবারে নেয়ামত উল্লাহ মুখ খুলল, ‘হুজুর, বেশি দেরি হইয়া গ্যালে আমার মাইয়াটার সর্বনাশ হইয়া যাইব! গাঁও গেরামের মানুষ ভালা না হুজুর!’
জুলেখা আঁচলে মুখ চাপা দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল।
জামান শিকদার ব্যথিতমনে বলল, ‘পুলিশের চাকরি করি। খারাপ মানুষজন নিয়েই কাজ কারবার। শুধু গ্রাম কেন, খারাপ মানুষ সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। তবে আশার কথা হলো, এর মাঝে ভালো মানুষের সংখ্যাও একেবারে কম না!
কিন্তু থাক সেসব কথা। আপনেরা এখন বাড়িতে যান। আপনাদের অনেকটা পথ যেতে হবে। নিরাপত্তা কিন্তু আপনাদেরও দরকার। কারণ সুফিয়াকে যে বা যারা উঠিয়েছে, সুযোগ পেলে তারা আপনাদেরও ক্ষতি করতে পারে। ভ্যান নিয়ে এসেছেন কি? ফেরত পাঠিয়ে দিন। আমি বলে দিচ্ছি। আমার একজন স্টাফ আপনাদের বাড়িতে রেখে আসবে। ভ্যানওয়ালার টাকা দিয়ে দিবে চিন্তা করবেন না। আপনারা না যাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কাজ শুরু করতে পারব না। সুফিয়াকে খোঁজার কাজ শুরু করা দরকার! দেরি করলে বিপদ হতে পারে!’
জুলেখা আর তার বাবাকে পাঠিয়ে দিয়ে জামান শিকদার পাশের রুমে আসে। এসেই দেখতে পায় শরফুদ্দিন কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। সুফিয়াকে তুলে নিয়ে গিয়েছে শোনার পর থেকেই মেজাজটা খিচড়ে ছিল, এটা দেখে ধৈর্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ল। বোঝাই যাচ্ছে, অপরাধীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে শরফুদ্দিন। তবু জামান শিকদার তার কিছুই করতে পারছে না। কারণ প্রমাণ নাই। এই লোকটার ফোন সিজ করলেই অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে সেটাও করা যাচ্ছে না।
জামান শিকদারের অনুমান ভুল না। কনস্টেবল শরফুদ্দিন তখন জায়গামতই ফোন দিয়েছে। হাসিতে উজ্জ্বল মুখখানা সে কিছুতেই গোপন করে রাখতে পারছে না।
‘স্যার, ঘটনা তো ঘইটা গ্যাছে! ওহ যা দেখাইলেন! ঐ বদ ছেমড়িরে ধইরা আচ্ছামতন এখন একটা ডলা দিয়া দ্যান। হিরোগিরি এক ডলানিতেই ছুইটা যাইব!’
‘হ, যেই কাজ আপনের করার কথা ছিল সেইটা আমার লোকজন দিয়া করাইতে হইল। এইটাই আফসোস। তা, ডলা দেওয়ার ভাগ চাও নাকি? আইসা পড়ো মিয়া!’
শরফুদ্দিন লাজুক হাসি দিয়ে বলে, ‘স্যার সেই ইচ্ছা যে একদম করতাছে না এইটা বলবার পারি না! কিন্তু শালার ওসি খুব জ্বালাইতাছে! অখনো বইসা বইসা মশামাছি মারতাছি। এইবার এই ওসির কিছু একটা করোন লাগব স্যার! অধমের আর্জি!’
‘হুম সেই ব্যবস্থাও হইয়া যাইব! আচ্ছা রাখি এখন। যাই গিয়া দেইখা আসি কেমুন মাল ধইরা নিয়া আইলো। ঝিম ধরা মুরগির মাংসে মজা নাই! আইজ তেজি মুরগির ঝাল ঝাল তরকারি খামু! তুমিও আইসা পড়ো মিয়া। একা একা ভাল্লাগে না!’
জামান শিকদার কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শরফুদ্দিনের এই ফুর্তি দেখল। তারপর উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলল, ‘শরফুদ্দিন তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তুমি বরং এক কাজ করো। আজ তুমি তোমার বাড়িতে চলে যাও। আমি আর রেজাই আজকের বাকি কাজ সামলাতে পারব।’
শরফুদ্দিনের চোখেমুখে একটা বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল। ব্যাটা যখন নিজে থেকেই চলে যেতে বলছে তখন সে আর বেশি বেশি কাজ দেখাতে যাবে কোন দুঃখে? মনে মনে ভাবে শরফুদ্দিন… ভালোই হলো! এই চান্সে ঝাল মুরগির মাংস একটু চেখে আসা যাবে!
তবু এত সহজে রাজি হয়ে গেলে আবার সন্দেহ করে বসে যদি? এই ভেবে চেহারায় একটা মলিন ভাব ফুটিয়ে তুলে শরফুদ্দিন বলল, ‘স্যার কী বলেন! এত কাজ আপনে একা সামলাইবার পারবেন? অখন তো আবার সুফিয়ারে খুঁজতে যাওন লাগব! কই না কই নিয়া গ্যাছে মাইয়াটারে!’
জামান শিকদার মনে মনে বলল, ‘হুম সেজন্যই তো তোমাকে একটু ঘুরেফিরে দেখে আসার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছি!’ মুখে বলল, ‘আরে এত চিন্তা করো না। ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তুমি যাও বাড়ি গিয়ে রেস্ট নাও, ঠিক আছে?’
‘আচ্ছা স্যার আপনে যখন এত কইরা বলতাছেন…’ (ক্রমশ)
#উপন্যাস
#কনে_দেখা_আলো
#পর্ব_তেইশ
শরফুদ্দিন বের হয়ে যাওয়ার প্রায় দশ পনের মিনিট পরে জামান শিকদার কনস্টেবল রেজাকে নিজের রুমে ডেকে পাঠাল। তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে দুজনে মিলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলো।
বাইরে আবার বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করেছে। আর বেশি দেরি করলে ঝড় বৃষ্টির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জামান শিকদার রেজাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তাহলে বুঝতে পেরেছ আমাদের প্ল্যানটা কী হবে? কোথা থেকে শুরু করা হবে?’
‘জি স্যার, আমি বুঝছি। আমার পাশে বইসাই সে জোরে জোরে কথা বলতাছিল। পাশাপাশি বসি স্যার। তারে না জানাইয়া আপনার রুমে গেলে সে রাগ করে, প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকে।’
‘তোমাকে দলে ভিড়াইতে চায়নি কখনো? নাকি দলে ভিড়েই আছ? আমি জানি না!’ জামান শিকদার একটু খোঁচা মেরে শেষের কথাটুকু বলল।
‘স্যার, আমি বিয়েশাদী করিনি। মা-বাবা থাকে শহরে। দায়ে পড়ে এইখানে পইড়া আছি। আমার খুব বেশি উঁচুতে ওঠার সাধ নাই স্যার। বাবা আসার আগে মাথায় হাত দিয়ে শপথ করায় নিছিল, নিজের ইমান যাতে বিক্রি না করি। আপনে চিন্তা কইরেন না স্যার। আমি শরফুদ্দিনের রাস্তায় হাঁটিনি।’
‘হুম আচ্ছা বিশ্বাস করলাম। চলো এবারে রওয়ানা দেওয়া যাক!’
জামান শিকদার কনস্টেবল রেজাকে নিয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের বাড়িতেই হাজির হলো।
চেয়ারম্যান সাহেব তখন সবে রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে একটু টেলিভিশন দেখতে বসেছে। এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের অবস্থা একসময় বড়ই বেহাল ছিল। বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে যেত না, মাঝে মাঝে আসত। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ আসার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয়। অনেকের বাসাতেই এখন টেলিভিশন আছে। বর্ডার এলাকা হওয়ায় পাশের দেশের অনেক চ্যানেল ডিশ এণ্টিনা ছাড়াই চলে আসে। ওই দেশে নাকি এই দেশের টিভির চ্যানেল চলতে পারে না। কিন্তু এই দেশের দেশপ্রেমী জনতার সেটাতে কিচ্ছু আসে যায় না।
বাড়ির মহিলারা কেউ ঘরের ভেতরে কেউবা পর্দার আড়াল থেকে টিভিতে চোখ সেঁটে বসে আছে। স্টার জলসাতে চলছে প্রতিদিনের জনপ্রিয় সিরিয়াল। এই সিরিয়াল দেখতে প্রতিদিনই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ঘরের কাজকর্ম সারা হয়ে যায়। কাউকে কিছুই বলার দরকার পড়ে না। আব্দুল লতিফ টিভি ছেড়ে দিয়ে একটা গড়গড়া হাতে নিয়ে বসেছে।
ক্লাইম্যাক্সের জায়গাতে এসে যখন ঘরের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা, একেকজন একেক কথা বলছে এরপরে কাহিনী কোনদিকে যাবে… ঠিক এমন সময়েই বাইরের সদর দরজায় জোরে ধাক্কার আওয়াজ শোনা গেল। সেই সঙ্গে একটা ভারি গলার আওয়াজ, ‘চেয়ারম্যান সাহেব কি বাড়িতে আছেন?’
এমন উত্তেজনাকর মুহূর্তে এই বহিরাগত যন্ত্রণাতে সবাই প্রচণ্ড বিরক্ত হলো। চেয়ারম্যান সাহেবের বউ বিরক্তমুখে বলল, ‘তুমার লোকজনেরা আইজকাল রাইতেও ডাকাডাকি শুরু করছে! কইয়া দাও অখন যাইতে পারবা না! ইস! চিল্লানির জ্বালায় কিছুই শুনবার পারলাম না! দুরু!’
আব্দুল লতিফ কিন্তু আওয়াজ শুনেই সচকিত হয়ে উঠেছে। এটা তো তার লোকজনের হাঁকডাক বলে মনে হচ্ছে না। আর তাদের এত সাহস নেই যে তাকে ‘চেয়ারম্যান সাহেব কি বাড়িত আছেন?’ এই প্রশ্ন করে। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আব্দুল লতিফ মৃদু ধমকের সুরে বলল, ‘না বুইঝা কথা কওয়া তুমাগো মাইয়া মাইনষের একটা স্বভাব! আওয়াজ শুইনা বুঝতাছ না, বাইরের কেউ আইছে? আমার লোকজন এত রাতে এইরম কইরা দরজা ধাক্কায় শুনছ কুনোদিন?’
চেয়ারম্যানের বউ টিভির দিকে চোখ সেঁটে রেখেই চিন্তিত মুখে বলল, ‘তাইলে কেডায় আইল এত রাইতে?’
‘তুমরা ভেতর ঘরে যাও। আইজ টিভি দেখন বন্ধ!’ বলে টিভি অফ করে দিলো আব্দুল লতিফ। এত রাতে কী অজানা বিপদাপদ হলো, এই নিয়ে কারো মাথাব্যথা নাই। কিন্তু সিরিয়ালের বাকি অংশ দেখতে না পারার দুঃখে সবার যেন জান আটকায়ে গেল। বুক ভাঙা কষ্ট নিয়ে সবাই ভেতরের ঘরের দিকে পা বাড়াল।
একটু পরে আব্দুল লতিফের সাগরেদ মোস্তাক এসে খবর দিলো, ‘হুজুর ওসি সাব আইছে!’
আব্দুল লতিফের ভ্রু কুঁচকে গেল। এই অসময়ে ওসি সাহেব তার বাড়িতে কেন? তাকে না জানিয়ে পশ্চিমের জংগলের অভিযানের কথা তার কানে এসেছে। এটা শোনার পর থেকেই সারাদিন হপ হয়ে ছিল মেজাজ। যে ওসি সাহেব তাকে ছাড়া একটা গাছের পাতাতেও হাত দেয় না, তার হঠাৎ এই একা একা অভিযানের খবরে খুশি হওয়ার কোনোই কারণ নাই।
আব্দুল লতিফ বলল, ‘বৈঠকঘরে নিয়া বসা। যাইতাছি আমি। আর শোন… বাবুলরে এট্টু খবর দে!’
‘বাবুল ভাই কনে জানি গ্যাছে। কিছু কইয়া যায়নি!’
‘হারামজাদা এইসময়ে কনে গেল আবার? আচ্ছা ঠিক আছে তুই গিয়া ক, আমি আইতাছি। অপেক্ষা করবার ক!’
ওসি জামান শিকদার ধৈর্য ধরে বৈঠকখানায় অপেক্ষা করছে। অপেক্ষা করার কথা বলার পরেও কুড়ি মিনিট পার হয়ে গেছে। আব্দুল লতিফের দেখা মেলেনি এখনো। অথচ এখন একেকটি মিনিট সোনার চেয়েও দামি। জামান শিকদার বারবার ঘড়ি দেখতে লাগল। একসময় ধৈর্যর বাঁধ পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার পরে সে তার কনস্টেবল সহ বাইরে উঠানে বেরিয়ে এসে ডাকতে শুরু করে, ‘চেয়ারম্যান সাহেব কি ঘুমায়ে পড়লেন নাকি? দেখুন আপনি সহযোগিতা না করলে কিন্তু আমাদের হাতে অন্য উপায়ও আছে!’
এবারে ভেতর ঘর থেকে আব্দুল লতিফ বেরিয়ে আসতে আসতে বলল, ‘কী ব্যাপার ওসি সাব? আপনারে খুব পেরেশান লাগতাছে! কইছি তো এট্টু অপেক্ষা করেন। আপনের দেখি আইজকাল ধৈর্য এক্কেবারে নাই হইয়া গ্যাছে!’
জামান শিকদার খোঁচাটা গায়ে না মেখে বলল, ‘আমার ধৈর্য কমেনি চেয়ারম্যান সাহেব! তবে মনে হচ্ছে আপনি শুধু শুধু আমার ধৈর্যর পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছেন!’
‘আমি আপনার ধৈর্যর পরীক্ষা নিতাছি নাকি আপনে আমার ধৈর্য পরীক্ষা করতাছেন সেই আলাপ তো অখনো তুলিই নাই! যাই হউক, ভ্যাদা প্যাঁচাল না পাইড়া আসল কথা কন। হঠাৎ কী মনে কইরা আমার বাড়িত আপনের পা পড়ল? আপনে তো আমার এলাকার বনে জঙ্গলের বড় বড় খবর একা একাই পাইয়া যাইতাছেন! এলাকার চেয়ারম্যানেরেও জানানের দরকার মনে করতাছেন না!’
চেয়ারম্যানের গলার তীব্র শ্লেষ একেবারেই লুকিয়ে রইল না। জামান শিকদারও আজ একেবারে মরিয়া। এই শ্লেষের কারণ যাই হোক, সে আজ দমবার পাত্র না। স্পষ্ট ভাষাতেই চেয়ারম্যানের শ্লেষভরা উক্তির জবাব দিলো সে।
‘ঘটনা যখন আপনের বাড়ির আশেপাশেই তখন তো রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টাই এইখানে টহল দেওয়ার দরকার ছিল চেয়ারম্যান সাহেব! আমরা তো এতদিন শুধু শুধুই এদিক ওদিকে ঘুরে বেকার সময় নষ্ট করলাম! আর বনে জঙ্গলে কীসের বড় খবর লুকিয়ে ছিল, সেটা কি আমার চাইতে আপনি কম জানতেন নাকি?’
‘কী কইতে চান ওসি সাব, খোলাসা কইরা কন! লন বৈঠকখানায় বইসা আলাপ করি!’
‘আজকে আর বসার ইচ্ছা নাই চেয়ারম্যান সাহেব। সময়ও নাই। আপনি শুধু এটুকু জানিয়ে আমাকে উপকৃত করেন যে আপনার বাড়ির আশ্রিত আপনার শালা মুজিবর এখন কোথায়?’
‘মুজিবর কোথায় এই খবর লইতে বাড়ি চইলা আইছেন? এইটা তো কাউরে পাঠায় দিলেই জানবার পারতেন! একেবারে দলবল নিয়া এইরাম কইরা হুলুস্থুল করোনের কী দরকার আছিল? মুজিবর আইজ ওর শ্বশুরবাড়ি নোয়াহাটি গ্যাছে।’
‘জি সেটা আমি জানি। আমি শুধু জানতে চাচ্ছি, এরপরে সে কোথায় গেছে?’
‘তার মানে? এরপর সে ঐখান থেইকা কই যাইব আমারে কি জানাইয়া গ্যাছে নাকি? কী জিগাইতাছেন এইসব?’
‘সে তো আপনার কথামতোই চলে বলে জানি চেয়ারম্যান সাহেব! আপনি খামাখা এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?’
‘উত্তেজিত হমু না? আরে! রাত বিরাতে আইসা কী শুরু করলেন আপনে?’
‘আপনে বলতে চাচ্ছেন সে এখন কোথায় এটা আপনে জানেন না?’
‘আরে কী আপদ! এক কথা কয়বার কমু?’
এমন সময় কনস্টেবল রেজার নাম্বারে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা ফোন আসে। সে ফোনে কথা বলে জামান শিকদারকে এসে বলে, ‘স্যার সন্ধান মনে হইতাছে পাওয়া গ্যাছে! আমাদের এখন এইখান থেইকা যাইতে হইব!’
‘কীভাবে সন্ধান পেলে?’
‘যাইতে যাইতে বলি স্যার। দেরি না করার জন্য বলতেছে!’
‘আচ্ছা চলো তাহলে!’
চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার মুখে জামান শিকদার একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে খুবই ক্যাজুয়ালি বলল, ‘আপনাদের সিরিয়াল দেখা নষ্ট করার জন্য দুঃখিত চেয়ারম্যান সাহেব। কী করব, যার কাছে যেটা বেশি জরুরি তাকে তো সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়!’
পুলিশ চলে যেতে আব্দুল লতিফ মোস্তাককে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ওসির দ্যাখতাছি খুব চর্বি বাড়ছে! ঐ হারামজাদা বাবুল কই সান্ধাইছে এইসময়? খুঁইজা নিয়া আয়! ফোন দে হারামজাদারে!’
মোস্তাক চিন্তিতমুখে বলে, ‘বাবুল ভাই তো ফোন ধরতাছে না! ফোন মনে হয় বন্ধ কইরা থুইছে!’
‘ফোন বন্ধ কইরা থুইয়া বাইরে ঘুরতে গ্যাছে! হারামজাদার এত সাহস! বেবাকের পাঙ্খা দেখি লম্বা হইয়া গ্যাছে! সব কয়টার পাঙ্খা একলগে কাইটা দেওন লাগব! আসুক আইজগা!’
ওদিকে জঙ্গলের মধ্যে শমসের তখন ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে। খুব কাছেই একটা আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। পায়ের আওয়াজ, এগিয়ে আসছে এই দিকেই।
আজ একটু সকাল সকালই চোখের পাতা বুজে এসেছিল তার। জঙ্গলে থাকতে থাকতে এখন নিজেকে তার বুনোমানব মনে হতে শুরু করেছে। বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বুনো গাছপালা পশুপাখির সাথে জড়ামড়ি করে বাস করতে করতে নিজেকে আর মানুষই মনে হয় না ইদানিং।
শমসের মনস্থির করে ফেলেছে তার শুভাকাঙ্ক্ষী লোকটি এর পরদিন এলেই তাকে বলবে, সে আর লুকিয়ে থাকতে পারবে না। পুলিশের কাছে ধরা দিতে হয় দিবে। বিনাদোষে যদি প্রাণ দিতে হয় সেটাও দিবে! মা নাই বাবা নাই, চালচুলো কিছুই নাই… তার বেঁচে থাকার জন্য কীসের এত দায়? এভাবে মানুষের শরীর নিয়ে বুনোমানব হয়ে বেঁচে থাকতে সে আর পারবে না!
কিন্তু আজ বেশ অনেকদিন হয়ে গেল সেই লোকটা আসছে না। কী ঝামেলা হলো কে জানে! আর দুইদিন দেখবে শমসের। তারপরেই বের হয়ে আসবে!
পায়ের আওয়াজটা এদিকেই এগিয়ে আসছে। শমসের অন্ধকারে পালায়ে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আনেনি। আজ প্রায় তিনমাসের ওপরে সে এই ভাঙা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ তো এদিকটাতে দিনের বেলাতেই আসে না। এই রাতে কে আসছে এদিকে?’
দরজার আছে এসে পায়ের আওয়াজ থেমে গেল। শমসের অন্ধকারে নিজেকে প্রায় মিশিয়ে ফেলেছে। একটা শক্তিশালী আলোর উৎস থেকে তীক্ষ্ণ আলোর রেখা ছুটে আসছে। অন্ধকারে অজানা আতঙ্কের মুখোমুখি হয়ে শমসের বহু কষ্টে সামনে তাকালো। এরপরেই পরিচিত গলার আওয়াজটা শোনা গেল।
‘শমসের আছিস নাকি? ভয় পাইছস নাকি? দুরু ব্যাটা! তুই না বাঘের বাচ্চা! এট্টুকুতেই ডরাই গেলি? বাইর হ!’
শমসেরের জানে যেন পানি এলো। যার কথা ভাবছিল, সেই এসেছে। একেবারে সময়মত এসেছে। আর দুইদিন দেরি হলেই কিছু একটা হয়ে যেত! এতদিনের চাপা ক্ষোভগুলো একবারে উগড়ে দিলো শমসের।
‘আপনে আইছেন? এদ্দিন পরে আইলেন এইবার? দুইদিন দেরি করলেই এইবারে আর আপনের আওন লাগত না। আমিই যাইতাম আপনের কাছে! পুলিশের কাছে গিয়া সব কথা খুইলা কইতাম! তা আপনে দিন থাকতে রাইতে আইছেন ক্যান?’
টর্চটা জ্বালিয়ে রেখেই এগিয়ে আসে লোকটা। শমসেরের বিক্ষুব্ধ ভাবসাব দেখে প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বলে, ‘তর পলাইয়া থাকোনের দিন ফুরাইছে। ল চল এইবার, আমার লগে চল!’
‘কই যামু?’
‘পুলিশ ইস্টেশন!’
‘আপনে কি আমারে পুলিশে ধরাইয়া দিবার আইছেন?’
‘ক্যা? দুইদিন পরে আইলে তুই নিজেই তো গিয়া পুলিশের কাছে ধরা দিতি! এইমাত্র না কইলি!
শমসের অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। লোকটার মুখ হাসি হাসি। শমসেরকে ধোঁকা খাওয়াতে পেরে যেন খুব জিতেছে এমনভাবে বলে, ‘শুইয়া থাকোনের টাইম নাই। উইঠা পড়। পুলিশের কাছে যাওন লাগব। সুফিয়ারে ধইরা নিয়া গ্যাছে!’
হঠাৎ যেন বজ্রপাত হলো সেই ছোট্ট ভাঙা মন্দিরটাতে। শমসের বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলল, ‘সুফিয়ারে ধরছে? কেডায়? ও তো পুলিশের কাজেই সাহায্য করছে! আমিই ওরে আগরগাছের সন্ধান কইয়া দিছি!’
‘হ সেইডা আমি ঠিকই বুঝছি! তর কওন লাগব না! সুফিয়ারে পুলিশ ধরেনি, যারা এই আগরগাছ কাইটা দেশের সম্পদ বাইরে পাচার করতাছে তারাই ধরছে! প্রতিশোধ নিবার চায়! মাইয়াটার রস চিপা ছিবড়া বানাইয়া ফালাইয়া দিব। ব্যস! মাইয়ার জীবন শ্যাষ! প্রতিশোধ নিতে আর কী লাগে?’
শমসেরের গা বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। তার জন্যই সুফিয়া এরকম বিপদে পড়ল! এটা সে কী করল?’
‘কিরে বইয়া থাকবি অহনো নাকি পুলিশের কাছে যাবি?’
‘কিন্তু পুলিশরে গিয়া কী কমু? আমি তো জানি না এই কাম কারা করতাছে। আপনে জানেন, কিন্তু আপনে তো সামনে আইবেন না!’
এত কিছু তরে চিন্তা করবার কইছি? যাইবার কইছি ল চল। একবারে যাইতাছোস। যা যা নেওন লাগব নিয়া নে!’ (ক্রমশ)
#ফাহ্মিদা_বারী