কনে বদল পার্ট – ৯

0
2865

কনে বদল
পার্ট – ৯
# Taslima Munni

মাহির অনেক ভেবে বলল
– আমাকে একটু ভাবতে দাও।
মাহির অনেক ভাবলো শিখাকে যেতে দিবে কিনা।কিন্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা।
ওর ইচ্ছে করছে না যেতে দিতে। এদিকে শিখা যাবার জন্য উতলা হয়ে আছে।
শেষ পর্যন্ত মাহির ওর বাবাকে বললো
– বাবা, শিখা ওর মায়ের কাছে থাকতে চাইছে।
– বেশতো,কাউকে পাঠিয়ে ওর মাকে নিয়ে আসো।
– না বাবা,ও ওবাড়িতে থাকতে চাইছে!
– তা কিভাবে সম্ভব? তুমি জানো না সেখানে কি হালে ছিলো?
– জানি বাবা।
– তবে এ কথা বলছো কি করে? তুমি ওকে মেনে নিতে পারোনি ভালো কথা, তাই বলে ওখানে অবহেলায় ছেড়ে দিবে?
– তুমি বুঝতে পারছো না বাবা,আমি যেতে দিতে চাচ্ছি না।
কিন্তু শিখা যাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো।
– হুমম।
আমিও বুঝতে পারছি না কি করা উচিত!
এখানে যে সেবাযত্ন পাবে সেগুলো পাবে কিনা জানি না। কিন্তু তারচেয়ে বড় কথা হলো এই সময় যদি ওর মনে টানে তবে যেতে দেয়াই দরকার। আফসোস রেখে….
– ঠিক আছে বাবা, আমি ওকে আবারও বুঝাতে চেষ্টা করবো যদি মানে তো ভালো আর না মানলে…

আফরোজা বেগমে যখন শুনলেন শিখা ওর বাড়িতে যেতে চাচ্ছে, তখন শিখার কাছে গেলেন। ওর কাছে গিয়ে বসে মাথায় হাত রেখে
– তোমার এখানে অসুবিধা হচ্ছে মা?
– না মা।আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।আপনারা এতো দেখাশোনা করেন, অসুবিধা হবার সুযোগ ই দিচ্ছেন কই?!
– তাহলে বাড়ি যেতে চাচ্ছো কেন?
– মা, কেন জানি মন খুব চাইছে একটা বার যেতে। কিছু দিন থেকেই চলে আসবো।
– সুস্থ হও আগে,তারপর যাবে।
– কিছু দিনের জন্যই তো।আপনি বাবাকে একটু বলেন না মা!
খুব যেতে ইচ্ছে করছে!
– আচ্ছা দেখি, তোমার বাবা কি বলেন!

মাহির শিখাকে আবারও অনেক বুঝালো। কিন্তু শিখা যাবেই বলে ঠিক করেছে। তাই মাহির শেষ পর্যন্ত রাজি হয় শিখাকে যেতে দিতে।
শিখার মা, মামা এসেছে ওকে নিতে।
মাহির শিখার কাছে এসে বললো
– সত্যিই চলে যাচ্ছো?
– হা।
আপনি দেখতে যাবেন আমাকে?
– নাহ!
– কেন?
– দেখতে যাবো কেন?
আমি যাবো নিয়ে আসার জন্য।
– তাই বুঝি?
শিখা হাসে।
– হা তাই।
একটা হাতে শিখার গাল ছুঁয়ে
– ভালো থেকো আর নিজের খেয়াল রেখো।আমি খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমাকে আনার জন্য।
শিখার অজান্তেই চোখ ভিজে গেছে।
মাহিরের সেই হাতেই হাত রেখে বললো
– আপনিও অনেক ভালো থাকবেন। জামাকাপড় এগুলো এলোমেলো করে রাখবেন না।
নিজের খেয়াল রাখবেন।

শিখা অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় নিলো সবার কাছ থেকে।
একদিন অজানা একটা ভয় নিয়ে বউ সেজে এবাড়িতে এসেছিলো। আজ এবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। আর কখনো ফেরা হবে না এবাড়িতে।কখনো এবাড়ির বেলকনিতে বসে শিমুলে আগুন ধরা বিকেল দেখা হবে না।
এ বাড়ি ছেড়ে শিখা চলে যাচ্ছে।

কি আজব! জটিল যায়গা এ দুনিয়া! মানুষ যখন বাঁচতে চায় না, তখন মৃত্যু ধরা দেয় না!
আর যখন বাঁচার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হতে থাকে, বাঁচতে ইচ্ছে করে তখন চারদিক থেকে অন্ধকার হয়ে ঘনিয়ে আসে মৃত্যুর কালো ছায়া।।
শিখার এখন মাঝে মাঝে বাঁচতে ইচ্ছে করে। পাছে এই ইচ্ছেটা তীব্র হয়ে যায়! সেই ভয়ে রীতিমতো পালিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে।
তীব্র হলেও কোনো লাভ নেই জানে,মিছেমিছি মায়া বাড়বে।

ওর প্রতি মাহিরের ভালোবাসা নেই।যা আছে সেটা কেবলই সহানুভূতি।
এতো দিন একসাথে থাকা একটা মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে চলে যাচ্ছে, সেটা,দেখে যেকোনো মানুষের দয়া হবে, খারাপ লাগবে।
মাহিরের ও এমনই হয়েছে।
বড়জোর একটা মায়ায় পড়ে যাবে!!
কিন্তু কি হবে এই মায়ায় জড়িয়ে??
একা যেমন এসেছিলো, সেই একাই চলে যাচ্ছে। না হয় ভালোবাসা নামক অদৃশ্য অনুভূতি টা শিখার জীবনে আসলো না। শিখার জীবনের গল্প না হয় এখানেই থেমে যাবে।
কি ক্ষতি হবে তাতে?
সূর্য পূর্ব দিক বাদ দিয়ে পশ্চিমে উদয় হবে না। ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরবে না।কিছুই থেমে থাকবে না।
সব নিয়মমাফিক চলবে। হয়তো কিছু মানুষের দুঃখ হবে, কষ্ট হবে।
কিন্তু সেটা সাময়িক।
কারণ সময় এমন এক ঔষধ যা ধীরে ধীরে সব কিছু সহজ করে দেয়, ভুলিয়ে দেয়।
শিখার না থাকার দুঃখ ও একটা সময় ভুলে যাবে সবাই।

চলবে….

# টানা ৩৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিলো না ।
বাধ্য ছোট করেই দিলাম। আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে