কনে বদল পার্ট – ৮

0
3003

কনে বদল
পার্ট – ৮
# Taslima Munni

শিমুল বনে আগুন লেগেছে, পুড়ছে কারো মন! আর অন্য কারো মনে শিখা দাউদাউ করে জ্বলছে!!
শিখা দুচোখ ভরে দেখছে।আহ! এতো সুন্দর কেন সবকিছু!!
চোখে জল এসে যায়।
– এতো সুন্দর বসন্ত আগে কখনো দেখিনি।
মাহির কিছু বলে না, শুধু শুনে যাচ্ছে শিখার কথা।

শিখার গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। কালের যাত্রার ধ্বনি শিখা শুনতে পাও??
শিখা হয়তো শুনতে পাচ্ছে।।
লুকোচুরি লুকোচুরি…. সব কিছুতে কেমন একটা লুকোচুরি খেলা….!!
সবাই তার সাথে লুকোচুরি খেলায় মেতেছে!!
শিখাও বাদ যাবে কেন? শিখাও এ খেলায় যুক্ত হয়ে গেছে। এমন ভাবেই থাকে যেন সে কিছুই জানে না!
কিন্তু শিখা সবটা জানে।কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না, যে ও সবকিছু জানে।
কি অদ্ভুত লুকোচুরি!

বেলকনিতে বসেই গোধূলির রঙ গায়ে মাখলো শিখা। শিখা একা নয়,মাহিরও।
জ্বলজ্বল করা সূর্যটা ধীরে ধীরে, নিভু নিভু হয়ে পশ্চিমে ডুবে গেছে, তার সাথে সাথে আধারে ডুবে গেছে সব।
শিখা জানে এই সূর্যটা যেমন নিভু নিভু হয়ে অস্ত গেছে, তেমনি সেও অসীমের পথে যাচ্ছে।
সূর্য অস্ত গেলেও উদয় হয়ে ঝলমলে রোদে হাসবে, কিন্তু শিখার জীবন প্রদীপ নিভে গেলে আর উদয় হবে না।

মানুষের সময় যখন ফুরিয়ে যায় তখন বাঁচার আকুতি আরও তীব্র হতে থাকে। সবকিছু মনে হয় এতো সুন্দর কেন! এতো মায়া কেন!
তবুও কিছু মানুষ মায়া কাটাতে চায়।
শিখার কাছে গোপন করলেও শিখা জেনে গেছে তার লিউকেমিয়া। নিজের অজান্তেই এই রোগ ধীরে ধীরে শেষ করে দিয়েছে তাকে,কখনো গুরুত্ব দেয়নি। অসুস্থ বোধ করলেও কাউকে বলেনি,দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেছে, যার শেষ পরিনতি এই!!
একেবারে লাস্ট স্টেজে আসার পরে ডাক্তার দেখানোর হয়েছে।কিন্তু এখন আর কিছুই করার ছিলো না। তবুও হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।
কিন্তু বাড়িতে আসার জন্য ছটফট করায় ডাক্তার ওকে ছেড়ে দিলো।ডাক্তাররাও মানুষ। দুঃখ, কষ্টের অনুভূতি তাদেরও আছে।
শিখার জন্য কিছু করতে পারবে না, শুধু ধরে বেঁধে কিছু মেডিসিন দিতে পারবেন! এটা ভালো করেই জানেন মেডিসিন দিয়েও কিছু হবার নয়।তারচেয়ে যে ক’টা দিন আছে, সেদিনগুলো মেয়েটার পরিবারের সাথে কাটানোই ভালো। এই ভেবেই ওকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তারা শিখাকে কিছুই জানায়নি। কিন্তু শিখা জেনে গেছে।
হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিভে শুনে ইভা আপত্তি করছিলো।
সারোয়ার সাহেব, ইভা আর মাহির কথা বলছিলো নিচুস্বরে।শিখা ঘুমে ছিলো। কিন্তু যখন ঘুম ভেঙে গেছে তখন শুনতে পারলো ওকে নিয়েই আলোচনা।
কোনো সাড়া না দিয়ে ঘুমের মতো পড়ে রইলো, কারণ শিখা জানতে চেয়েছিলো ওর কি হয়েছে।
– বাড়ি নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে? এখানে তো ট্রিটমেন্ট ভালো চলছে। নিয়ে গেলে যদি আরও সমস্যা হয়??
– লাভ তো তেমন কিছুই হবে না, শুধু শুধু মেয়েটা বন্দী থেকে কষ্ট পেয়ে যাবে।
– কিছুই কি করার নেই বাবা? ডাক্তার কি আশার কোনো কথা বলেনি?
– না গো মা। লিউকেমিয়া একেবারে লাস্ট স্টেজে ডাক্তারের আর কিছু করার নেই।কেমো দিলেও এর ধকল সহ্য করার মতো ক্ষমতা নেই ওর শরীরে। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না।
– বাবা, শিখাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। এখানে ওর কষ্ট হচ্ছে। সারাজীবন কষ্ট পেয়ে গেছে। শেষ ক’টা দিন এভাবে আজাব না দিয়ে ওর ইচ্ছের দাম দেয়া উচিত।
– হা। সেটাই ভালো হবে। সবার সামনে থাকলে মনে কিছুটা শান্তি পাবে।
– তাহলে সেটাই করো ভাই,মেয়েটার এই অবস্থা আর চোখে দেখা যাচ্ছে না।
শিখা সব কথা শুনেছে। ব্লাড ক্যান্সারে শেষ পর্যন্ত শিখা নিভে যাবে এটা জেনে গেছে।

সন্ধ্যা নামায় মাহির শিখাকে রুমে নিয়ে শুয়িয়ে দেয়।
কেমন মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার উপর।
– আমার জন্য এতো কষ্ট করছেন কেন?
– কি কষ্ট করলাম?
– এইযে আমার এতো সেবা-যত্ন করছেন!
– তুমি অসুস্থ তাই।
– হুম।
– আমি আমাদের বাড়িতে যেতে চাই…
..
মাকে বলেছি…… উনি আসবেন আমাকে নিতে।
– বাড়িতে যাবে মানে কি?? এই অবস্থায় যাওয়া অসম্ভব। কোথাও যেতে পারবে না। এখানেই থাকবে।
শিখা মৃদু হাসে।
– যেতে পারবো। আমাদের বাড়িতে যেতে খুব ইচ্ছে করছে।
– তুমি জানোনা ওখানে পরিস্থিতি? সেখানে তোমাকে কিছুতেই যেতে দিবো না।
– যাইহোক,ওটা আমার বাড়ি। জন্মের পর থেকে ওখানেই থেকেছি।এখন কেন জানি মন খুব টানছে সেখানে যেতে। আপনি না করবেন না।
– দেখো শিখা,আমি এই অবস্থায় তোমাকে পাঠাতে পারবো না। তুমি এখানেই থাকবে আমার কাছে।
তোমার মা বোন চাইলেও ঠিক মতো তোমার দেখাশোনা করতে পারবে না।
– ওসব নিয়ে চিন্তা করবেনা না। কিছু দিনেরই তো ব্যাপার!
– কিছু দিনের ব্যাপার মানে?
মাহির চমকে উঠে।
– কিছু দিন পরে তো চলে আসবো।
– হুম।
– আমাকে যেতে দিবেন না? বেশি কিছু চাইনি আপনার কাছে।
– তুমি বুঝতে পারছো না!
– আমি বুঝতে পারছি। আপনি না করবেন না।
আমাকে যেতে দিন।

মাহির গম্ভীর হয়ে গেলো।শিখাকে সে যেতে দিতে চায়না।মাহির চায় শিখা ওর সামনেই থাকুক।
কেন চায় সে নিজেও জানে না। হয়তো মেয়েটার উপর মায়া পড়ে গেছে, তাই।সেখানে গেলে শিখা শান্তি পাবেনা,সেবাযত্ন ও পাবেনা ঠিকঠাক। এসব ভেবেও মাহির ওকে যেতে দিতে চাচ্ছে না।

আর শিখা?
শিখা মনে মনে ভাবছে – আমার জন্য মাহিরের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। মাহিরের জীবনে এক অভিশাপের নাম – ‘ শিখা’। মরেই তো যাবো।কেন অর উপর বোঝা হয়ে থাকবো??
সব দায় থেকে মরার আগেই মুক্তি দিয়ে যাই।
এতো যত্ন, এতো কেয়ার! এসব দেখলে বাঁচার ইচ্ছে হবে।
তারচেয়ে আমি চলে যাবো। সবাই এখানে কত কষ্ট করছে আমার জন্য!.
এইসব কথা ভেবেই শিখা যাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে।
ওদের উপর আর বোঝা হয়ে থাকতে চাইছে না শিখা।

মাহির অনেক ভেবে বললো –
আমাকে একটু ভাবতে দাও।

চলবে…

# প্রচুর বৃষ্টিপাতে বিদ্যুৎ বিহীন থাকায় লিখতে সমস্যা হচ্ছে। ক্ষমাপ্রার্থী। ?
সম্ভব হলে আজ আরও একটা পার্ট দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
একান্তই না পারলে….ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে