কনে বদল
পার্ট – ৫
# Taslima Munni
মায়ের উপর অভিযোগ নেই।অভিমান আছে।
আর কিছু না পারলে তিন মা মেয়ে তো এক সাথে মরতে পারতাম!!
শিখার কথা শুনে মাহিরের চোখ কখন ভিজে গেছে টের পায়নি।
বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠলো। কত রঙের দুঃখ আছে মানুষের মনে!!
শিখাকে বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না মাহির। শুধু বললো
– ঘুমিয়ে পড়ো।
শিখা ঠিকই ঘুমিয়ে পড়লো, কিন্তু মাহিরের চোখে ঘুম আসেনি।
মাহির শিখার দুঃখের গল্প শুনে শিখার প্রতি কিছুটা নমনীয় হতে চাইলো।কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মাহিরের মন ঠিক উল্টিয়ে দেয়।
মাহির ঢাকায় এসেছে বউ নিয়ে, এই কথা শোনার পরে মাহিরের এক সাইফ তার বউ নিয়ে আসে মাহিরের বাসায়।
শিখাকে দেখে একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করা মাহিরের চোখ এড়ায়নি।
শিখা অনেক আপ্যায়ন করলো মাহিরের বন্ধু আর বন্ধু-পত্নীকে।
শিখা কিচেনে ব্যস্ত ছিলো। মাহিরও একটু বাহিরে গিয়েছিলো।সাইফ আর সাইফের বউ বেলকনিতে বসে ছিলো।
মাহির ওদের ডাকতে এসে শুনলো সাইফের বউ বলছে
– তুমি দেখো বয়সে অনেক বড় হবে। মাহির ভাইয়ের পাশে একদম মানায়নি। গায়ের রঙ ও ময়লা!
– এটাকে ময়লা বলে না,শ্যামলা বলে।
– অই একই কথা। কেমন যেন!
– খুবই ভদ্র আর অমায়িক। হয়তো এতো সুন্দরী নয়।
– পেহলে দর্শনদারী, ফের গুণ বিচারি!! তোমার কি মনে হয় মাহির ভাই ওর সাথে সুখী হবে? উনার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে একে দেখলে মানুষ বড় বোন ছাড়া কিচ্ছু ভাববে না।
উনি কিভাবে মানিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ ই জানেন!!
– হুমম।।
এসব শুনে মাহিরের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেছে।
কিন্তু ওদেরকে কিছু তো বলা যায় না। আর তারা সত্যি কথাই তো বলেছে। ভুল কিছু বলেনি।
ওরা সেদিন বিদায় নিলেও মাহিরের মনে আরও বিষাদ দিয়ে গেলো।
শিখার প্রতি যতটুকু দুর্বলতা তৈরি হচ্ছিলো সেটাও এখন অসহ্য মনে হতে লাগলো। আগে টুকটাক কথা বললেও এখন সেটাও বলে না।
সারাদিন একা বাসায় শিখার দম বন্ধ হয়ে আসে।মাহির রাতে ফিরে সকালে চলে যায়।শিখার দিকে খেয়াল দেবার প্রয়োজন বোধ করেনি।
এই বন্ধ অবস্থায় থেকে থেকে যেন শিখার প্রাণ হাঁসফাঁস করছে একটু মুক্ত নিঃশ্বাস নিতে।মফস্বলের মেয়ে শিখা।এই বন্দী দশায় ওর শরীরের অবনতি হচ্ছে কেবল।
না খেতে পারছে,না শান্তি পাচ্ছে। অসুস্থ বোধ করছে।কিন্তু কাকে বলবে?
মাহিরের সময় কই ওর দিকে ফিরে দেখার!!
দিন দিন শিখা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
ও কিছু খেতে পারছে না। সারাদিন কিছু খায় কিনা মাহির কখনো জিজ্ঞেস করেও দেখেনি।
রাতে মাহিরের সাথে খেতে বসলেও মাহির খেতে খেতে ফোন ঘাটে।
খাবার শেষ করে উঠে চলে যায়।
শিখা যে কিছুই খেতে পারছেনা সেদিকে ও খেয়াল করেনি।
এরমধ্যে হঠাৎ একদিন শিখা ঘুমিয়ে আছে,মাহির শিখার দিকে খেয়াল করে দেখে মেয়েটা অনেক শুকিয়ে গেছে।
মাহির ভাবলো হয়তো এখানে মানিয়ে নিতে পারছেনা।
পরদিন সকালে মাহির শিখাকে জিজ্ঞেস করলো
– তুমি কি অসুস্থ?
– না তো।আমি ঠিক আছি।
– কিন্তু তোমাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে। অনেক শুকিয়ে গেছো।
– কিছু হয়নি। এখানে কেমন বন্দী বন্দী মনে হয়। ভালো লাগছে না আমার।
– হুম। আর তো দেড় মাস।দেখতে দেখতে চলে যাবে।
তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।
– আচ্ছা বলবো।
দুদিন পরে মাহির খেয়াল করে শিখাকে খুব অসুস্থ লাগছে।চোখে মুখে অস্বাভাবিক কিছু একটা বুঝতে পারছে।মাহির আরও খেয়াল করলো শিখা কিছুই খেতে পারছেন না।
– তুমি যে বললে অসুস্থ না! আমি তো দেখছি তুমি সুস্থ না।কিছু ই তো খাওনি।
কি হয়েছে তোমার? তোমার চোখে কেমন ফুলে গেছে!
– আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন? আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না।
– আচ্ছা সে দেখা যাবে।আগে তোমার ডাক্তার দেখাতে হবে।
দুদিনের মধ্যে মাহিরের সুযোগ হয়নি ডাক্তার দেখানোর।
সেই রাতে শিখার অনেক জ্বর উঠে। মাহির সারারাত জেগে জলপট্টি দেয় মাথায়।
শিখা এক রাতে যেন বিছানার সাথে মিশে গেছে! ঔষধ এনে খাওয়ানোর পরে জ্বর কমলেও শিখা যেন শরীরে কোনো শক্তিই পাচ্ছে না।
মাহির আর দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো।
অনেক ঔষধপত্র নিয়ে তারা ফিরলো।
চার- পাঁচ দিন পরে মাহির ইভাকে ফোন করে বললো
– ভাবি, তুমি একটু ভাইয়া বা বাবাকে নিয়ে একটু ঢাকায় আসো।
– কেন মাহির? কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
– শিখা খুব অসুস্থ। ওকে একা রেখে আমি যেতে হয়।
কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না।
একা রেখে যাবো ভরসা পাচ্ছিনা।তোমরা আজই আসো।
– কি হয়েছে শিখার?
– জানি না ভাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমরা আসো।
– ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না। আজই আসবো।
মাহিরের ভাবি আর বাবা এসে ঢাকা পৌছালো।
তারা এসে শিখাকে দেখে চমকে উঠলো।শিখা ঘুমে।উনারা আসবেন সেটাও শিখা জানে না।
– একি হাল হয়েছে মেয়েটার! একদম চেনাই যাচ্ছে না।
তুমি ওর দিকে খেয়াল রাখোনি? কি অবস্থা হয়েছে ওর! নিশ্চয়ই খাওয়া দাওয়া একদম করেনি।
– ভাবি, আমি সারাদিন বাসায় থাকলে তো! সকালে বের হই সেই রাত হয়ে যায় ফিরতে ফিরতে। আগেই বাবাকে বলে ছিলাম। বাবা তো বুঝেনি।
একা সারাদিন কি করে সেসব তো আমি খেয়াল রাখতে পারিনা।
আর এমনিতেই আমি প্রেশারের মধ্যে থাকি।
– যাই বলো ভাই,তোমার খেয়াল তো ছিলো না সেটা আমি জানি। তার সাথে অবহেলায় ছিলো।
মেয়েটা ভেতরে ভেতরে কেবল কষ্ট পেয়েছে। নিজের দিকে একটু ও খেয়াল করেনি।
মাহির, ইভা কথা বললেও সারোয়ার সাহেব গম্ভীর ভাবে বসে রইলেন।
চলবে….